ছদ্মবেশ পর্ব-৫৫+৫৬+৫৭

0
1025

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৫৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

তুষার চুপচাপ আড়াল থেকে ভিডিও করছে নিরা ও ছেলেটার কথপোকথন।
– তুমি বিষয়টা কেন বুঝতে চাইছো না রাহাত। আজ নিবিড় ধরা পরে তার ফাঁ’সি হয়ে গেলে আমি বাচ্চাটা নিয়ে কোথায় গিয়ে দাড়াবো?
রাহাত একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে,
– সেটা তোমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। তোমার জন্য আমার যতটুকু করার ছিলো আমি ততটুকু করেছি। একটা DNA রিপোর্ট তৈরি করে দিতে বলেছো, তা আমি দিয়েছি। তুমি বলেছো আর কখনো আমার সামনে আসবে না। তাহলে এখন আবার কেন ঝামেলা করছো?
নিরাও প্রতি উত্তরে বলে,
– দেখো রাহাত বাচ্চা তোমারই। তোমার কি একটুও মায়া হচ্ছে না তার জন্য।
রাহাত নিরার হাতটা মাছি তাড়ানোর মতো করে সরিয়ে দিয়ে বলে,
– এসব ফালতু ডায়লগ আমার সামনে দিতে আসবে না। শুধু আল্লাহ্ আল্লাহ্ করো যেন নিবিড় মুক্তি পেয়ে যায়। আর সব ঠিক হয়ে যায়। আর না হলে আমাকে বলবে আমি এ্যাবরশনের টাকা দিয়ে দিবো এ্যাবরশন করিয়ে নিবে।

তুষার এবার ভিডিও অফ করে চুপচাপ বেড়িয়ে গেলো সেখান থেকে। তার মানে নিবিড় ঠিকই বলেছিলো, সে এই বিষয়ে কিছুই জানেনা। বাচ্চাটা নিবিড়ের নয় বরং এই রাহাত নামের ছেলেটার?
আর ঐ DNA রিপোর্টও ছিলো ভুয়া? আর ঐ দিন এই রিপোর্ট দেখিয়ে সবার সামনে এমন ইমোশন দেখিয়েছিলো যেন এসব নাটক নয় বরং তার চেয়ে সত্য আর কিছুই নেই। কি ডেঞ্জারাস মেয়েরে বাবা। আরো একেবারে নীলার ফ্যামিলির সামনে এসব দেখিয়েছিলো, যেন এক ঢিলে ২ পাখি ম’রে।
নিরার মতো কিছু মেয়েরা কি অভিনয় জানেরে ভাই। তাদের অভিনয় দেখে আশেপাশের সবাই ভাবে শুধু মেয়েটাই ঠিক আর বাকি সব মিথ্যে। তবে যাই করো তোমার অভিনয় এবার আমি হাতে ধরে প্রমান সহ সবাইকে দেখাবো। আনমনে এসব ভাবতে ভাবতে। রাস্তার পাশ ধরে হাটছে তুষার।
,
,
শরিরের উন্নতি হলে আজ দুই দিন পর রুশানকে আইসিইউ থেকে বের করে কেবিনে নিয়ে আসে।
সবাই একে একে রুশানকে দেখে এবার কিছুটা চিন্তা মুক্ত হয় তারা।
রিমার বাবা-মা আজ এসেছিলো সেই সকালে। এখন দুপুর পেড়িয়ে বিকেল হয়ে এলে বাসায় চলে যায় তারা। থেকে যায় শুধু রিমা। আরশিকেও বাসায় দিয়ে আসে রিদ। এই কয়েকদিনের তুলনায় আজ ঝামেলা কিছুটা কম আছে।
নিবিড়ের সম্পর্কে রুশানকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য এসেছিলো বাকি কয়েকজন পুলিশ অফিসার।
কিন্তু শারিরিক ভাবে কিছুটা উন্নতি হলেও মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ নয় সে। তাই পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া অব্দি জিজ্ঞাসাবাদ টা পিছিয়ে নিয়েছে তারা। তাদের ধারণা রুশানের কি’ডনাপিং এর সাথে নিবিড়ও জড়িত। কিন্তু এটা সন্দেহজনক বলে রুশান সুস্থ হওয়ার পর তার থেকে বিষয়টা জেনে পুরোপুরি শিউর হবে তারা।
তার আগ পর্যন্ত নিবিড়কে এ’রেস্ট করে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ এসেছিলো। কিন্তু চার পাশে খোজাখুজি করেও নিবিড়ের কোনো হদিস পাচ্ছেনা তারা।

সন্ধার পার হয়ে এলো। রুশানের সেলাইন চলছে। আর সে গভির ঘুমে। ভিড় জমেছে সেখে যেই কয়জন কেবিনে ছিলো তাদের সবাইকে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাথে আছে শুধু রিমা। রুশানের পাশে চুপচাপ বসে আছে সে। রুশান একটু একটু করে চোখ খুলে রিমার দিকে তাকায়। দুপুরে একবার দেখেছিলো। এর পর ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আর কিছু মনে নেই।
মাথাটা বেন্ডেজ করা। ভাড় হয়ে আছে অনেক।
রিমা গালে হাত রেখে বলে,
– এখন কেমন লাগছে? আগের তুলনায় কিছুটা ভালো লাগছে?
রিমার দিকে চেয়ে বলে,
– এখানে বসে আছিস কেন? বাড়ি যাস নি? বাবা আর রাজ নিয়ল এরা তো এখানে আছেই। তুই কেন কষ্ট করে হসপিটালে পরে আছিস? থাকতে অসুবিধা হচ্ছে না?
রিমা রুশানের চোখে দৃষ্টি রেখে বলে,
– বাসায় থাকলে যতটা ভালো থাকতাম, এখানে তার চেয়েও বেশি ভালো আছি। বাসায় থাকলেই বোধ হয় কষ্টটা হতো।
রুশান এবার চার দিকে চোখ বুলিয়ে রিমার দিকে চেয়ে বলে,
– রাজ কোথায়? ওকে একটু ডেকে দে তো।
কথা বলতে বলতে দরজা খোলার শব্দ কানে আসে। রিমা ওদিকে তাকিয়ে দেখে রাজ ভেতরে আসলো। রাজকে দেখে চেয়ার ছেরে উঠে দাড়িয়ে ভদ্র ভাবে বলে,
– বসেন ভাইয়া।

রাজ বসতে বসতে রিমার দিকে চেয়ে বলে,
– তুমি একটু বাইরে যাও। কিছুক্ষন পর এসো।
রুশানও ইশারায় একই কথা বুঝালে চুপচাপ কেবিনের বাইরে চলে যায় রিমা।
রাজ রুশানের পাশে বসলে রুশান রাজের দিকে চেয়ে বলে,
– নিবিড় কোথায়?
রুশানকে ধরে একটু আধশোয়া করে বসালো রাজ। শরিরের ব্যাথায় কিছুটা চোখ মুখ খিচে নেয় সে। তারপর সাভাবিক হয়ে রাজের দিকে তাকালে রাজ বলে,
– নিবিড়কে আপাততঃ একটা জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছি। এই কেসে পুরেপুরি ভাবে ফেঁসে গেছে সে। এমনকি তোর কি’ডনাপিং ও এ্যাটেম টু মা’র্ডারের দায় ভাড় ও আপাততঃ নিবিড়ের উপরই আছে। ওখানে ক্যামেরায় ও ছু’রির মাঝে ফিঙ্গারপিন্টও নিবিড়েরই আছে। কিছুই লুকানো যায় নি। তাই এটা বড় হয়ে গেলো।এখন তোর কাছ থেকে নেওয়া জবানবন্দিই নিবিড়ের শাস্থি কতোটা হবে তা নির্ভর করছে।

রুশানের মোটামুটি সবই মনে আছে পরিষ্কার। কিছুক্ষন চুপ থেকে রাজকে বলে,
– আচ্ছা নিবিড় যেভাবে আছে সেভাবেই থাক। বাকিটা আমি বুঝে নিবো। আমাকে একটু শুইয়ে দে তো। শরির ও মাথা দুটুই ব্যাথা করছে খুব।
রাজ আবার রুশানকে ধরে শুয়ে দেয়। রুশান আবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। সারা শরির জুড়ে ক্লান্তি অনুভব হচ্ছে তার। সাথে ব্যাথা তো আছেই।
রাজ কেবিন থেকে বেড়িয়ে রিমার সামনে দাড়িয়ে বলে,
– রুশানের দিকে খেয়াল রাখবে। কোনো প্রব্লেম হলেই আমাকে কল দিবে। আর এখানে আঙ্কেলও আছে। আর রুশানের সাথে বেশি কথা বলো না। ওর এখন রেষ্টের প্রয়োজন। সুস্থ হওয়ার পর না হয় সারাদিন কথা বলো।
বলেই একটা মুচকি হাসে রাজ। রাজের কথায় কিছুটা লজ্জা পেয়ে চুপ থাকে রিমা৷ রাজ আর কিছু না বলে তুষারকে ফোন দিয়ে বেরিয়ে যায় হসপিটাল থেকে।

তুষারকে নিয়ে রাস্তার পাশে দাড়ালে একটা কালো রঙের গাড়ি এসে দাড়াও সেখানে। ড্রাইবার নেমে গাড়ির দরজা খুলে তাদের দিকে তাকালে তুষার বলে,
– ভাই আমরা তো আপনাকে কল করিনি। আমরা একটা সিএনজি’র জন্যই ওয়েট করছিলাম।
রাজ কিছুটা মৃদ হেসে বলে,
– আমি কল দিয়েছিলাম, উঠে পড়ো।
তুষার এবার রাজের এক হাত ধরে টেনে কিছুটা দুরে নিয়ে গিয়ে বলে,
– ভাই এতো সুন্দর গাড়ি, ভাড়া কম করে হলেও ২-৩ হাজার তো হাতিয়ে নিবে। তারচেয়ে ভালো আমরা ২-৩শ টাকা দিয়ে সিএনজি করেই যেতে পারবো।
তুষারের এমন কথায় হাসি পেলো রাজের। তবুও হাসি দমন রেখে বলে,
– সমস্যা নেই আমি আগেই প্রেমেন্ট করে দিয়েছি। এখন না গেলে আমাদেরই লস। তাই আর কথা না বলে চলো।

গাড়ি চলছে নিরিবিলি। তুষার ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– ভাই গাড়িতে মনে হয় এসি আছে তাই না?
ড্রাইভার ড্রাইভ করতে করতে বলে,
– জ্বি স্যার।
তুষার আবার বলে,
– তাহলে এসিটা একটু ছাড়েন।
ড্রাইভার আবার বলে,
– স্যার এসি অন করা আছে।
তুষার এবার পন্ডিতি করতে গিয়ে কিছুটা লজ্জা পেলো। লজ্জা ঢাকতে বলে,
– ওহ্, আমি এটাই বলতে চাইছি যে, এসি অন থাকার কারণে খুব ঠান্ডা লাগছে।
ড্রাইভার আবার বলে,
– তাহলে কি অফ করে দিবো স্যার?
তুষার কোনো মতে হাপ ছেড়ে বাচার মতো বলে,
– না থাক, ভালো লাগছে।
পাশ থেকে রাজ মুখে হাত দিয়ে বাইরের দিকে তাটিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে তাদের কথা শুনে।

গাড়ি সোজা গিয়ে দাড়ালো নিবিড় যেখানে আছে ঐ বাড়িটার সামনে। রাজ আর তুষার ভেতরে যাওয়ার সময় সবাই দেখছে স্যার স্যার বলে সালাম দিচ্ছে। তুষার বুঝতে পারছে না এখানে কাকে সবাই স্যার স্যার করছে।
এর মাঝে ইকবাল সানির গাড়িও এসে থামে বাড়ির সামনে।
এই ইকবাল সানিও দেখছে রাজকে সম্মান দিয়ে কথা বলছে। রাজ তাকে নিয়ে বসলো সোফার মাঝে। পায়ের উপর পা তুলে কথা বলছে।

তুষারের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। চুপচাপ চলে গেলো নিবিড়ের কাছে। নিবিড়ের কাছে গিয়েই বলে,
– এই তোকে এখানে কে নিয়ে এসেছে সত্যি করে বল তো ভাই।
তুষারের কথায় কিছুটা অবাক হয় নিবিড়। তবুও শান্ত ভাবে বলে,
– আমি নিজেও জানিনা। তারা বললো কোন রাজ চৌধুরীর কথায় আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। কিন্তু কোন সেই চৌধুরী তা আমি নিজেও জানিনা।
তুষার অবাক ভঙ্গিতে বলে,
– এটা কিভাবে সম্ভব? রাজ না বললো তার বাবা গ্রামে কাপরের ব্যবসা করে। সেখান থেকে তাকে টাকা পাঠায়। আর কোনো রকম টিউশনি করে চলে।
নিবিড় বলে,
– হুম, বলেছে তো। আর তুই কি ভাবছিস এটা আমাদের রাজের বাড়ি। এটা কখনোই পসিবল না। কারণ রাজ এত বড়লোক হলে কখনোই আমাদের সাথে ওসব ছোট বাসায় আমাদের মতো সাধারণ ভাবে থাকতো না।
নিবিড়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই তুষার আবার বলে,
– কিন্তু রাজকে দেখলাম এখানে সবাই স্যার স্যার করছে। আমার তো মনে হয় এসব কিছু আমাদের রাজেরই। তাই এখানে আমাদের সবাই এতো খাতির যত্ন করে। কিন্তু রাজ এতো ক্ষমতাশীল হলে আমাদের সাথে এমন সাধারণ ভাবে চলে কেন? আমার তো এখন সন্দেহ হচ্ছে ভাই। কে এই রাজ। আর সে কি চায়? এমনিতেই রাজকে দেখতে বয়সে আমাদের থেকে বড় মনে হয়।

এমন সময় রাজ সেখানে এসে বলে,
– কেমন ছিলো সারপ্রাইজ টা?
তুষার ও নিবিড় দুজনই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রাজের দিকে। দুজনই একসাথে বলে উঠে,
– তুমি আসলে কে?
রাজ মুচকি হেসে তাদের সামনে বসে বলে,
– তোমাদের সাথে পরিচিত রাজ আর এখানের রাজ পুরোপুরিই ভিন্ন। তবে কারণটা তোমাদের এখন বলবো না। সময় হলে নিজেরাই সব বুঝতে পারবে। তবে একটা কথা, এই ব্যাপারে যেন তোমরা দুজন ব্যাতিত আর কেউই না জানে।
তুষার বলে,
– নিলয় আর রুশান?
রাজ আবার বলে,
– রুশান আগে থেকেই সব জানে। তবে নিলয় যেন এই ব্যাপারে কিছু আন্দাজ করতে না পারে।
নিবিড় বলে,
– একটা কথা বলো তো,তুমি সব সময় নিলয়কে এড়িয়ে চলো কেন? মানে আমি প্রায়ই লক্ষ করেছি তুমি আমাদের সাথে যেভাবে মিশে চলো। তার তুলনায় নিলয়ের সাথে তেমন চলো না।
রাজ আবারও শান্ত ভাবে বলে,
– সেটা সময় হলে বুঝবে। আমি শুধু সব কিছু পরিস্কার হওয়ার অপেক্ষায় আছি। তোমরা শুধু তোমাদের মুখটা বন্ধ রাখবে আর আমি যা বলবো তাই করবে।

রাজের কথা গুলো খুবই শান্ত স্বভাবের। তার কথার ধরণ দেখে মনে হয় একটু জোড়ে কথা বললে খুব বেশিই ক্ষতি হয়ে যাবে। আর সব সময় কথাও বলে কম। যতটুকু বলে তাও খুব আস্তে আস্তে আর শান্ত ভাবে।
কিছু মানুষ থাকে খুবই ঠান্ডা মাথায় সব হ্যান্ডেল করে। রাজ কিছুটা ঐ রকম স্বভাবেরই।

রাজ এক হাত বাড়িয়ে দিলে নিবিড় কিছুক্ষন চুপ থেকে রাজের হাতে হাত মিলিয়ে বলে,
– তোমার উদ্দেশ্য যাই হোক। যদি তা সৎ হয় তাহলে বন্ধু হিসেবে সব সময় আমাদের পাশে পাবে।
সাথে তুষারও হাত মিলিয়ে বলে,
– আমাকেও।
তিনজনই একই তালে নিশ্চুপ হয়ে আছে। হয়তো এটা সামনের বড় কোনো ঝড়ের আভাস।

To be continue……….

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৫৬)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

নির্জনের যে শুধু একটা ব্লাক সাইড আছে বিষয়টা এমনও না। ভেতরে যেমনই হোক, দেশের সাধারণ মানুষের কাছে মানবতার ফেরিওয়ালা নামে পরিচিত সে। তার দুইটা দুনিয়া, একটা অন্ধকার দুনিয়া আরেকটা বাইরের দুনিয়া।
সেই হিসেবে বাইরের দুনিয়ায় তার অনেক ফ্যানও আছে। অনেক বছর ধরে বাইরে মানবতার সেবায় কাজ করছে সে। ভেতরের খবর টা সকলেরই অজানা। দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় তার নিজস্ব বেশ কয়েকটা বিদ্যাশ্রম রয়েছে।
যেখানে প্রায়ই বৃদ্ধদের সাথে সময় কাটিয়ে খবর, ইউটিউব, ফেসবুক, পত্রিকায় দারুন আলোচনায় রয়েছে সে। সাধারণ মানুষরা নির্জন বলতেই একজন ভালো মনের মানুষকে চিনে।

তেমনই তার অনেক শিশুশ্রম ও আছে। যেখানে পথশিশুদের নিয়ে তাদের লালন পালন করা হয়। নিজ দায়িত্বে সব পথশিশুকে বড় করার উদ্যোগ নিয়েছে সে।
সেখানে সকলের কাছে বিষয়টা প্রশংসনিয় হলেও তার উদ্দেশ্য টা ছিলো ভিন্ন।
শিশুশ্রম থেকে সাহসি ছেলেগুলো বাছাই করে একে একে তাদের আলাদা করে তাদের ছোট থেকে অল্প অল্প করে এসব বিষয়ে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। তবে তা সকলের অজান্তে।

এসব ছারাও তার অনেক গুন রয়েছে। যেমন মানব কল্যানে তার আলাদা একটা সংস্থা কাজ করে চলে। ঘর হারা মানুষদের ঘর নির্মান করে দেওয়া। নিঃস্ব মানুষদের বাচার একটা লাইন ধরিয়ে দেওয়া। বিপদে আপদে তাদের পাশে থাকা।
বাইরের দুনিয়ায় এসব নিয়ে এখন দারুন আলোচনায় রয়েছে সে। তবে ভেতরের দুনিয়ায় তার অবস্থানটা কোথায় সেটা টোটালি সবার অজানা।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে নির্জনের সম্পর্কে পজেটিভ নিউজ দেখে মাঝে মাঝে গর্বে আরোহির বুকটা ভরে যায়। কিন্তু গম্ভির হয়ে থাকে শুধু আরোহির মা। আরোহি বড় হওয়ার পর কখনো হাসতে দেখেনি তার মাকে। তার মনের ভেতর কি চলে সেটা আরোহি অনেকবার জানার চেষ্টা করলেও ব্যার্থ হয়৷
,
,
রুশানের শরিরের অবস্থা মোটামুটি উন্নতি হয়েছে এখন। আধ শোয়া হয়ে বসে আছে সে। শক্ত জিনিস খেতে কষ্ট হয় দেখে রিমা একটা পাত্রে দুধ নিয়ে তার মাঝে পাউরুটি ভিজিয়ে রুশানের মুখে খুব যত্ন করে তুলে দিচ্ছে এক এক করে।
রুশানের খাওয়া শেষ হলে ওড়না দিয়ে রুশানের মুখ মুছে দিচ্চিলো সে। এমন সময় দরজায় টক টক আওয়াজ আসলে ওখানে সবকিছু গুছিয়ে রেখে ভেতরে আসার অনুমতি দিলো তাকে।
একজন ডাক্তার ভেতরে এসে রুশানের দিকে চেয়ে বলে,
– আপনি যদি এখন শারিরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকেন। আর সুস্থ ভাবে কথা বলতে সক্ষম হন তাহলে দুজন অফিসার আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে। হয়তো জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে তারা।

রুশান মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যা’ সূচক সম্মতি জানিয়ে বলে,
– জ্বি তাদের আসতে বলুন।
ডাক্তার কেবিন থেকে বেড়িয়ে চলে গেলে তার পেছনে রাজ ভেতরে আসে। রুশানের পাশে বসে রিমার দিকে চেয়ে বলে,
– খাইয়েছো সবটা?
রিমা বলে,
– না ভাইয়া অর্ধেকটা খেয়েছে বাকিটা রেখে দিয়েছে।
রাজ আর কিছু না বলে রুশানের দিকে তাকালে রুশান বলে,
– মাস্ক পরে নাও। দুজন অফিসার আসবে। আর তোমরা যাই জানো, কেউ কিছু বলবে না। যা বলার আমিই বলবো তাদের।

একটু পর দুজন অফিসার এসে কেবিনে প্রবেশ করলো। রাজ আর রিমা চুপচাপ এক পাশে গিয়ে দাড়ালো।
জিজ্ঞাসাবাদের মাঝে তারা রুশানকে বলে,
– তোমার মনে আছে রুশান, যে কারা তোমার সাথে এমনটা করেছে?
রুশান স্বাভাবিক ভাবে বলে,
– জ্বি আমার মনে আছে সবটা। গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলাম সাথে আজিমও ছিলো। হুট করে গাড়ির মাঝে স্প্রে করার পর আর কিছু মনে নেই। হুট করে চোখ খুলে দেখি কারো জালে ফেসে গেলাম আমরা দুজন। আজিমকে ওখানেই মে’রে ফেলেছে তারা।
এর মাঝে সিনিয়র অফিসার আহাদ বলে,
– তুমি কি চিনতে পেরেছিলে তারা কে বা কোন দলের লোক?
রুশান দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
– ছেলেটাকে এর আগে কখনো দেখিনি। তবে এটা শিউর যে ছেলেটা ঐ নির্জনেরই দলের লোক। এই বিষয়ে সেখানে কিছুটা বলেছিলো আমাকে। আর ছেলেটার নাম ছিলো পিন্টু।

পাশ থেকে রাজ কিছুটা চমকে উঠার মতো অবস্থা হলো। পিন্টু নামটা কেমন পরিচিত মনে হচ্ছে তার। কিছুটা ভাবার পর মনে পরলো এক পিন্টুর কথা। যার ডিটেল্স তার কাছে এসেছিলো। তবে কি সেই রুশানের এমন অবস্থা করেছে? বিষয়টা পুরোপুরিও শিউর নয়। কারণ ছেলেটা নিলয়ের রিলেটিভ ছিলো। এমটা হলে নিলয় জানার কথা।

আহাদ আবার বলে,
– আর নিবিড় নামের ছেলেটা এর সাথে কতটুকু জড়িতো? সবার সন্দেহের তীর ঐ ছেলেটার দিকেই যাচ্ছে।
রুশান এবারও স্বাভাবিক ভাবে বলে,
– নিবির আমার ফ্রেন্ড। সে কিছু করেনি। বরং আমাকে বাচাতে ঐ জায়গাটায় গিয়েছিলো।
আহাদ আবার বলে,
– ছেলেটার নামে একটা মা’র্ডারের অভিযোগ আছে। মাথা কে’টে ফেলা হয়েছিলো। আর সেখানে থাকা ছু’রিতেও নিবিড়ের ফিঙ্গারপিন্ট ছিলো।
রুশান আবারও বলে,
– অভিযোগটা মিথ্যা। নিবিড় কোনো মা’র্ডার করেনি। আমি নিজে আমার জীবন বাচাতে মা’র্ডারটা করেছিলাম। তারপর নিবিড় আমার থেকে ছু’রিটা নিয়ে ফেলে দিয়েছিলো। হয়তো তাই ওখানে তার ফিঙ্গারপিন্ট লেগে ছিলো। সে আমার ফ্রেন্ড, আমার ক্ষতি করতে চায় নি সে। বরং আমাকে সেভ করে সেখান থেকে হসপিটাল অব্দি নিয়ে এসেছিলো।
– তার মানে বলতে চাইছো নিবিড় এসবে জড়িত না। বরং তুমি নিজেকে সেভ করতে মা’র্ডারটা করেছিলে? আর নিবিড় সেখান থেকে তোমায় সেভ করে নিয়ে এসেছিলো?
রুশান ছোট্ট করে বলে,
– জ্বি।

সিনিয়র অফিসার আহাদ জিজ্ঞাসাবাদের সবটা শেষ করে রুশানের দিকে চেয়ে বলে,
– দেখো রুশান হাজার হলেও তুমি আমাদের অনেক জুনিয়র। জুনিয়র অফিসার হিসেবে জয়েন করেছো মাত্র কয়েক বছর হলো। এখনো পুরোপুরি ভাবে তুমি সব বিষয়ে পাকা নও৷ তবুও যেই মিশন তুমি নিয়েছো, তাকে তোমার আরো কেয়ারফুলি চলাফেরা করা উচিৎ। ভুলে যেও না এর আগে অনেক অফিসার এই মিশনে নেমে তাদের আর খুজে পাওয়া যায়নি। নির্জনের ব্যাপারে আমরা যাই তথ্য পাই তা কোনোটাই প্রমান যোগ্য নয়। তার সম্পর্কে এখনো কেউই কোনো ন্যাগেটিং প্রমান বের করতে পারেনি। সো যা করবে খুব সাবধানতার সাথে করবে। আর এখন থেকে তোমার সিকিউরিটি আরো স্ট্রং করে দেওয়া হবে। ঠান্ডা মাথায় করবে সব। আপাতত আমরা আসি। আশা করি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে তুমি।

সিনিয়র অফিসার গুলো সেখান থেকে চলে গেলে রিমা তার পাশে এসে বসে বলে,
– ওরা আপনাকে কিসের জুনিয়র অফিসার বলছে? আর কিসের মিশনের কথা বলছে? আপনি না বলেছিলেন আপনি জব করেণ? তাহলে এসব অদ্ভুত প্রশ্ন কেন? আর আপনারই বা এতো শত্রু কোথায় থেকে আসলো? কি হচ্ছে এসব?
রুশান চুপচাপ রিমার দিকে চেয়ে শান্ত ভাবে বলে,
– দেখ, আমার সম্পর্কে সবটা জানার অধিকার তোর আছে। তোকে সবই বলবো আমি। আর তা সময় হলে।
রিমা আবারও নাছোরান্দার মত বলে,
– না আমি এখনই শুনতে চাই সব।
এর মাঝে পাশ থেকে রাজ বলে,
– রিমা শান্ত হও তুমি। রুশান যেখানে জব করে, সেখানে অফিসার পদের একটা ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে পিন্টু নামের একটা ছেলের সাথে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিলো। তাই এমনটা করে ফেলেছে পিন্টু। এটাই হলো মুল কারণ টা।

রুশান আড়চোখে রাজের দিকে তাকালো। কত সুন্দরে একটা মিথ্যা গল্প সাজিয়ে রিমাকে বুঝিয়ে দিলো সে।
,
,
আজ বেশ কিছুদিন পর আরোহিকে পড়াতে গেলো রাজ। দেখে আরোহি চুপচাপ বসে আছে মুখ গোমড়া করে। রাজকে দেখেও তার দিকে তাকাচ্ছে না।
রাজ নিজের মত করে আরোহিকে বুঝানোর চেষ্টা করলে আরোহি হুট করে বলে,
– এটা কি আপনার শশুর বাড়ি? যে যখন ইচ্ছে আসলেন আর যখন ইচ্ছে আসলেন না? এটা আপনার টিউশন, সো টাইম টু টাইম আসা আপনার কর্তব্য।
আরোহির মুখে এমন কথা শুনে কিছুক্ষন অবাক হয়ে আরোহির দিকে চেয়ে থাকে রাজ। হুট করে আরোহি খুব নরম হয়ে গিয়ে বলে,
– স্যরি স্যরি, আমার এভাবে বলা উচিৎ হয় নি। আ’ম রিয়েলি স্যরি। বাট, আপনি কেন বোঝেন না। আপনাকে না দেখে আমি থাকতে পারিনা। প্রতিদিন আসা, দেখা হওয়া, কথা বলা মানুষটা হুট করে উধাও হয়ে গেলে কতোটা কষ্ট হয় তা কেন বোঝেন না?
রাজ শান্ত ভাবে বলে,
– এসব অপ্রসঙ্গিক কথা আরোহি। আর আমি আগেই বলেছি পড়া ছারা অন্য কোনো টপিক নিয়ে কোনো কথা হবে না।
আরোহি আবার বলে,
– আমি আপনাকে কথা দিয়েছিলাম যে, এসব আর বলবো না। তবুও আমি কোন পরিস্থিতিতে থাকবে এমনটা বলতে বাধ্য হই তা কি একটুও বুঝেন না? আচ্ছা স্যরি আর বলবো না। কষ্ট হলেও চুপ থাকবো। তবুও আপনি কথা দেন যে হুট করে এভাবে হারিয়ে যাবেন না। দেখেন আপনাকে কিছুই করতে হবে না। আমাকেও ভালোবাসতে হবে না আপনার। আমি শুধু আপনাকে একবার দেখবো। তবুও আপনি আসবেন। ব্যাস এর বাইরে আর কোনো অভিযোগ থাকবে না আমার। এই প্রমিস,,,,,,

রাজ কি করবে তা নিজেই বুজে উঠতে পারছে না এক মুহুর্তের জন্য। কিছুক্ষন দুই হাত মাথায় রেখে নিশ্চুপ হয়ে বসে থেকে আরোহির দিকে চেয়ে বলে,
– আচ্ছা ঠিক আছে। এবার চোখের পানি মুছে বই বের করো। আর হ্যা, বাচ্চাদের মতো যখন তখন কেঁদে দিবে না। নাহলে সত্যিই চলে যাবো কিন্তু।
মুহুর্তেই যেন নিজের মাঝে অদ্ভুত এক প্রশান্তুি অনুভব হয় আরোহির। অশ্রু ভেজা চোখ গুলো যেন মুহুর্তেই ঝিলিক দিয়ে উঠে। যেন এতটুকুতেই সে অনেক হ্যাপি।
,
,
রাস্তার এক পাশে অনেক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছে তুষার। হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষন ওভাবে সময় পার করলে একটা লোক এসে তার সামনে দাড়ায়।
চার দিকে তাকিয়ে কাগজে মোড়ানো ছোট কিছু একটা তুষারের হাতে দেয়। তাষার খুলতে গিয়েও না খুলে পকেটে নিয়ে বলে,
– কাজে দিবে তো?
লোকটা বলে,
– কোনো সন্ধেহ নেই। আপনি শুধু অল্প একটু একটা রুমালে লাগিয়ে মুখে চে’পে ধরবেন ব্যাস।
তুষার আবার বলে,
– একবার অ’জ্ঞান করলে কতোক্ষন ওভাবে থাকবে?
লোকটা কনফিডেন্স নিয়ে বলে,
– কম করে ৫-৬ ঘন্টার আগে জ্ঞান ফিরে আসার কোনো চান্স নেই। তবে সাবধান এটা সাথে নিয়ে ধরা পরলে কিন্তু জে’লও খাটা লাগতে পারে। সাবধানে যাবেন। আসি আমি, ভালো থাকবেন।

To be continue…………..

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৫৭)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

দিন যতই যাচ্ছে এদিকে নীলার বিয়ের কথাবার্তা ততই এগিয়ে যাচ্ছে। নিবিড় ও নীলার মধ্যিখানে এখন দুইটা প্রব্লেম প্রাচির হয়ে দাড়ালো। প্রথমটা হলো নিরা৷ আর দ্বিতীয় টা হলো তার উপর থাকা পুলিশি অভিযোগ টা।

সেদিন তুষার নীলার বিয়ের খবরটা দিলে, সেদিনের পর থেকেই মনের ভেতর যেন কেমন একটা অন্যরকম অনুভূতি হতে শুরু করলো তার।
এই যেন মনটা সমুদ্রের কিছু ঢেউয়ের ন্যায় উত্তাল হয়ে থাকে। আবার নিরা ও তার বাচ্চা এটা ভাবতেই পুকুরে আবদ্ধ হওয়া পানির ন্যায় শান্ত হয়ে যায় মনটা।

সব কিছুর ভিড়ে আরেকটা ভাবনা তাকে বার বার আফসোসের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। বন্ধুকে বাচাতে পুলিশের কপ্পরে পরার কারণে তার কোনো বিন্দু মাত্র আপসোস নেই। বন্ধুকে বাচাতে পেরেছে এটাই অনেক।
তবুও ছোট আফসোসটা হলো ফারিহা ও তার বাবা-মা, আর তার ফোনে দেখা সেই চোট্ট ফাহাদের ছবি। মনটা ছটপট করছে যেন পুলিশি অবিযোগটা দুর হলে পরতমেই ছুটে সেই বাড়িতে চলে যাবে সে। কিন্তু বাড়িটা কোথায়? ঠিকানা তো জানেনা সে? তাহলে কোথায় যাবে সে?
আর অপরিচিত ঐ মানুষ গুলোর জন্য বুকটা এমন খাঁ খাঁ করছে কেন? চুটে যাওয়ার ইচ্ছে, আর এই আকর্ষণ যেন চম্বুকের চেয়েও শক্তিশালী।
এ যেন একটা গান মনে করিয়ে দেয় বার বার,

‘এতো রক্তের সাথে রক্তের টান, সার্থের অনেক উর্ধে,
হটাৎ অজানা ঝড়ে তোমায় হারালাম, মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।
বাবা কতদিন কতদিন দেখিনা তোমায়,,,,,,,,’

গানটা অনেক প্রিয় তার। কারণ সেও তার বাবাকে দেখেনি।
লাইফে ডিপ্রেশন যখন চেপে ধরে তখন সব দিক থেকেই আসে। নিবিড়ের ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম নয়। পুলিশের ভয়, নীলার বিয়ে হয়ে যাওয়ার ভয়, বাবা মাকে কি খুজে পারে এই চিন্তা। সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহ যেমন ঘুরে তেমনই সব যেন মাথার উপর দিয়ে গুরছে নিবিড়ের।
,
,
রুশান এখন মোটামুটি ভালোর দিকে। আর কয়েকদিন হসপিটালে রেখে পুরোপুরি সুস্থ হলে তাকে রিলিজ দেওয়া হবে।
সেই সুবাধে সেখানে রাজ থেকে আর বাকি সবাইকে পাঠিয়ে গিলো বাসায়। আর রিদ তো এমনিতেও আছে সেখানে।
রিমা প্রথমে আপত্তি করলেও পরে বুঝিয়ে বললে বিষণ্ন মনে যেতে রাজি হয়।

রুশানকে খাইয়ে দিয়ে বাইরের দিকে গেলো রাজ। রুশান খাওয়া শেষে বিশ্রাম নিচ্ছিলো। এই কয়দিন রিমা তার পাশেই বসে থাকতো। আজ না দেখায় ব্যাপারটা একটু চোখে হারানোর মতো ফিল তৈরি করছে। তবুও নিজেকে এতোটা দুর্বল ভাবা ঠিক না। চোখের আড়াল মানেই তো আর দৃষ্টির আড়াল নয়। মনের তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে চোখ বন্ধ করলে প্রিয় মানুষটাকে অনুভব করা যায়।

কিছুক্ষন পর বাইরে থেকে এসে রুশানের পাশে বসে রাজ। টিসু দিয়ে কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে নিলো সে।
রুশান চোখ খুলে রাজের দিকে তাকালো। রাজ ফোন বের করে একটু কৌতহল নিয়ে রুশানের দিকে একটা ছবি দেখিয়ে বলে,
– চিনতে পারিস তাকে?
রুশান কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বলে,
– তার সম্পর্কে তো ডিটেইলস কিছু বলিনি। বের করলি কিভাবে?
রাজ ফোন আবার পকেটে নিয়ে হেসে বলে,
– ওর সম্পর্কে আমার কাছে তোর কিছু ডিটেইলস জানার থাকলে বলতে পারিস।
,
,
এদিকে লোকটার থেকে অ’জ্ঞান করার ঔষধ টা আনার পর সারা রাত ধরে প্লেন করলো তুষার। সব কিছু প্লেনিং শেষে পরদিন সকালে তার এক পরিচিত ডাক্তারকে সবকিছু খুলে বলে ম্যানেজ করে নিলো।

বিকেলে নিরার কাছে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় তুষার। বাড়ির সামনে এসে গাড়িটা বাইরে দাড় করিয়ে ভেতরে চলে গেলো তুষার।
সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে দরজার সামনে দারিয়ে চারপাশে একবার শেয়ে নিলো তুষার। তারপর একটা কাপর দিয়ে নিজের মুখটা পেচিয়ে নিলো যাতে নিরা চিনতে না পারে।
সব ঠিকঠাক থাকলে দরজায় টোকা দেয় সে। একটু পর নিরা ক্লান্তি নিয়ে এসে দরজা খুলে দেয়। হয়তো বিকেলে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলো।

হুট করে দরজা খুলে বাইরে মুখ বাধা কাউকে দেখলে ‘কে’ সূচক শব্দটা মুখ থেকে উচ্চারিত হওয়ার আগেই তুষার রুমাল চেপে ধরলো মুখে। কিছুক্ষনের মাঝেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে নিরা।
তুষার তাকে নিয়ে সোজা গাড়িতে তুলে নিলো। দাড়োয়ান কারণ জানতে চাইলে তুষার বলে,
– হুট করে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো। তাই হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি।

লেকটা বলেছিলো একবার ব্যাবহার করলে ৫-৬ ঘন্টার মতো কাজ করে। এই ৫-৬ ঘন্টার মাঝেই সব কমপ্লিট করতে হবে। সময় যথেষ্ট আছে আবার বেশিও নেই।

নিরাকে নিয়ে তার DNA টেষ্ট করে বাসায় ফিরতে মোটামুটি ৪ ঘন্টার মতো লেগেছে। তবুও জেগে যাবে ভেবে ডাক্তার একটা ইনজেকশান পুষ করে দিয়েছিলো। এবার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জ্ঞান ফিরার কোনো চান্স নেই।

বাসায় এনে নিরাকে তার রুমে শুইয়ে দিয়ে বের হয়ে গেলো তুষার। সব কিছু শেষ হতে প্রায় রাত নেমে এলো। এখনো অনেক কাজ বাকি। আজকের মাঝে সব করতে হবে। হাতে সময় খুবই কম।

রাহাত নামের ছেলেটার সম্পর্কে সেদিনই খোজ নিয়েছিলো তুষার। কোথায় থাকে কোথায় আড্ডা দেয়। এভ্রিথিং অল।
বাইরে কিছুক্ষন আড্ডা শেষে বাসায় ফিরছিলো রাহাত। তুষার পেছন পেছর গিয়ে রুমাল চেপে ধরলো ছেলেটার মুখে।
একই ভাবে তাকেও হয়সপিটালে কিয়ে গিয়ে DNA টেষ্ট করে পুনরায় রাহাতের বাড়ির গেটের সামনে রেখে যায় তাকে।

এবার শুধু রিপোর্ট হাতে পাওয়ার অপেক্ষা।
,
,
গভির রাত। আকাশে গুরুম গুরুম শব্দ হচ্ছে। হয়তো একটু পর বৃষ্টি ফোটা আছড়ে পরতে শুরু করবে ধারার বুকে। অন্ধকারে পিন্টুদের গোপন আস্তানার সামনে এসে দাড়ালো রাজ। মাথায় হুডি পরা মুখে মাস্ক। চিকচিক করা ধারালো ছু’রিটায় একবার আঙুল দিয়ে পরিক্ষা করে নিলো সে। একটু মুচকি হেসে সামনের দিয়ে পা বাড়ালো।
দেখে সেখানে কয়েকজন ছেলে বাইরে হাটাহাটি করছে। আর ভেতর থেকে কয়েকটা মেয়ের চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসছে রাজের কানে।

বাইরে থাকা ৭ জন ছেলের মাঝে কিছুক্ষন দৃষ্টি রেখে সমিকরণ মিলিয়ে নিলো রাজ। ধাড়ালো ছুড়িটা ডান হাতে শক্ত করে ধরে ভেতরে চলে গেলো রাজ।
হাতে থাকা ধারালো ছু’রিটা ও নিজের তেজস্ব শক্তি দিয়ে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে ওখানে থাকা চারজন ছেলের মাতা আলাদা করে ফেললো সে।
ভেতরে থাকা ছেলেগুলো মেয়ে নিয়ে ফূর্তিতে মেতে উঠায় বাইরের দিকে খেয়াল নেই তাদের।

বাইরে থাকা বাকি তিনজন ছেলে ভেতরে থাকা লোকদের ডাকার চেষ্টা করে আবার রাজের দিকে তেড়ে আসলে তাদেরও বাকি চারজনের মত একই অবস্থা হলো।
সেই তিনজনের বিপদ সংকেত ভেতরের কয়েকজনের কানে গেলে তাদের মাঝে দুজন বেড়িয়ে আসার মুহুর্তে দরজা ক্রশ করতেই গলায় হাত চলে যায় তাদের। নিজেদের র’ক্ত-স্রোত আটকানোর আপ্রান চেষ্টা করছে তারা। কিন্তু কিছু সেকেন্ডের মঝেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো তারা।

তাদের ধাপ’ড়ানো গায়ের উপর দিয়ে পা বাড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে রাজ। সেখানে একেক রুমে ছিলো মোট মিলে ৬ জন লোক। এক এক করে দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে লোক গুলোর মা’থা আলাদা করে দিয়ে মেয়েগুলো থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো রাজ। মেয়ে গুলোর মাঝে কেউ এতোক্ষন ঐ নরপশুদের হাত থেকে বাচার জন্য আকুতি মিনতি করছিলো। আর কাউকে চিড়ে খাওয়ারা মতো প’শুর মতো ঐ লোক গুলো ঝাপিয়ে পরেছিলো। আর দুজন তাদের থেকে রেহাই পায়নি। রাজ আসার আগেই নিজেদের সব হারালো না চাইতেও।

ফ্লোর খামছে ধরার মতো করে কাঁদছে মেয়ে গুলো। আবার কেও এমন পরিস্থিতিতে ভয়ে জড়সড় হয়ে এক কোনে দেওয়ালের সাথে মিশে আছে।
সেখানে মেয়ে ছিলো টোটাল আট জন। সবাইকে এক জায়গায় হতে বলে রাজ অন্যদিকে ফিরে সবাইকে অভয় দিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।
তারপর সবাইকে সেখান থেকে বের করে বলে, সময় নষ্ট না করে যত তারাতারি পারে এখান থেকে চলে যেতে। ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। আফসোসেরও কিছু নেই। ভেবে নিবেন এটা ভাগ্যেরই লিখন ছিলো।

ততোক্ষণে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো বাইরে থাকা শরির গুলো এতোক্ষনে নিস্তেজ হয়ে গেছে। তাদের ছিটকে পড়া র’ক্ত গুলোয় রাজের শরির লাল হয়ে আছে অনেক জায়গায়।
মেয়ে গুলো এমন পরিস্থিতিতে ভয়ে দৌড়ে চলে গেলো একসাথে। কেও দাড়িয়ে থাকলেও বাকিদের দেখাদেখি ওদের পিছু পিছু তারাও চলে গেলো। হয়তো কোনো না কোনো ভাবে তারা তাদের বাসা খুজে পাবে। তবে আজ হারানো কিছুই ফিরে পেতো না আর। হয়তো এখান তেকে মেয়ে গুলোকে চা’লান করে দেওয়া হতো অন্য কোথাও। সেখান থেকে এমন আরো অনেক মেয়ের সাথে পা’চার হয়ে যেত কোনো ভিন দেশে। হারাতো সব। ভে’ঙে যেত পরিবারকে নিয়ে গড়া বিন্দু বিন্দু স্বপ্ন গুলো।

ভেতর থেকে বেড়িয়ে বৃষ্টির মাঝে দাড়ালো রাজ। শরির ভিজে রক্তগুলো ধুয়ে ফোটা ফোটা টপ টপ করে আছড়ে পরছে নিছে। হাতে থাকা ছু’রিটা র’ক্তে লাল হয়ে থাকলেও এখন সেই র’ক্তও একটু একটু করে ধুয়ে দিতে লাগলো সেই বৃষ্টি ফোটা।
ঝুম জুম বৃষ্টির মাঝে মা’থা কা’টা লাশ গু’লো ভিজতে লাগলো। র’ক্ত গুলো মিশে যেতে লাগলো রাজ মাস্কের আড়ালে ঠোঁটের কোনে একটা বাকা হাসি দিয়ে, ছু’রি দিয়ে রং করা দেওয়ালে ছোট্ট একটা মেসেজ লিখে দিলো,

‘ফাষ্ট ওয়া’র্নিং’

To be continue………