ছদ্মবেশ পর্ব-৭৬+৭৭+৭৮

0
432

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৭৬)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

দোটানায় পরে গিয়ে চুপচাপ হয়ে দাড়িয়ে আছে আরোহি। একবার রাজের দিকে তাকাচ্ছে আরেক বার বাবার দিকে। চার পাশে ভয়াবহ নিরবতা বিরাজ করছে। পাশ থেকে সামির কিছু একটা বলে রাজের দিকে এগিয়ে আসতে চাইলে পাশ থেকে রেজোয়ান আ’ক্রমণাত্বক ভাব নিয়ে এগিয়ে একহাতে কলার চেপে ধরে অন্য হাতে মাথার পি’স্তল ঠেকিয়ে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার উপর।
রেজোানের এমন আ’ক্রমনাত্বক রুপ দেখে নিশ্চুপ হয়ে থেমে গেলো সামির। ঐ অবস্থায় রেজোয়ান রাগী কন্ঠে বলে উঠে,
– বেশি উড়ার চেষ্টা করবি তো, একধম এখানেই পু’তে দিবো। এমনিতেও কয়েকবার ভাইকে রাস্তায় ধরে ফাপর নিয়েছিলি। শুধু ভাই নিষেধ করছে দেখে কিছু বলিনাই তোরে। নিজের ভালো চাইলে এখন যেভাবে আছিস, এভাবেই চুপচাপ দাড়িয়ে থাক।

সামির চুপচাপ চেয়ে আছে রেজোয়ানের দিকে। এই মুহুর্তে মুখের উপর কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। শুধু ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে সে।
রাজের ইশারায় রেজোয়ান এবার তাকে ছেরে শান্ত হয়ে রাজের পাশে এসে দাড়ালো।

রাজ পুনরায় আরোহির দিকে তাকালো আরোহির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। এতোদিন ভালোবাসাকে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা থাকলেও এই মুহুর্তে দুই অপশন থেকে একটা বেছে নেওয়া আরোহির জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ।
মানুষটা যতই খারাপ হোক, বাবা নামক একটা শব্দের টানে হলেও আটকে আছে সে।

আরোহিকে এমন দোটানা পরিস্থতে পরতে দেখে পাশ থেকে তার মা আজ সাহসি ভাব নিয়ে এগিয়ে এসে তার সামনে দাড়িয়ে বলে,
– সময় বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে এতোদিন কেন এমন পাগলামি করেছিলি? সারা জীবন কি এই মানুষত্বহীন পশুদের সাথে অন্ধকারে কাটাতে চাস? সারা জীবন যার সাথে থাকার জন্য এতোদিন এমন পাগলামি করেছিলি, তার সামনে আজ কেন চুপ করে আছিস? বাবা নামক এই মানুষটার জন্য তাই তো? যেই মানুষটা তোর সুখের কথা না ভেবে তোকে তার ব্যবসার অংশ বানাতে চেয়েছিলো, তার জন্য এখনো তোর মনে কোনো টান রয়েছে? যদি রাজকে মন থেকে ভালো নাই বেসে থাকিস তাহলে এখনি বলে দে। আর কখনো এর চেয়ে বেশি পাগলামি করলেও তাকে খুজে পাবি না।

মায়ের কথায় কিছুটা নিজের আবেগের ঘোর কাটলো আরোহির। সত্যিই তো, ছোট বেলা থেকে যেই মানুষটা তাদের এতো কষ্ট দিয়ে এসেছে, এখন নিজের মেয়েকে তার ব্যবসার অংশ বানিয়েছে। অম্তত একজন বাবার থেকে কোনো মেয়ে এমনটা আশা করে না। তবুও তার জন্য এতো মায়া হচ্ছে কেন? আর রাজকেও তো সে সত্যিই ভালোবেসেছিলো। রাজকে ফিরিয়ে দিলেও বাকি জীবনটা এই সামির নামক খারাপ মানুষটার সাথে কাটাতে হবে। যেখানে রাজের জায়গায় অন্য কারো কথা ভাবতেও পারেনা সে।

আবেগ থেকে বেড়িয়ে নিজের মাঝে কিছুটা সাহস জুগিয়ে ভয়ার্ত চেহারায় ভালোবাসার মানুষটার পেছনে গিয়ে দাড়িতে তার এক হাত চেপে ধরে দাড়ালো আরোহি। বাবার প্রতি তার মায়া কাজ করছে নাকি ভয়, এটা সে নিজেও বুঝে উঠতে সক্ষম হচ্ছে না।

আরোহির সম্মতি পেয়ে রাজ কিছুটা মুচকি হেসে আরোহির এক হাত শক্ত করে মুঠো করে ধরে নির্জনের সামনে দিয়ে তাকে নিয়ে হেটে বের হয়ে গেলো। চুপচাপ দাড়িয়ে আছে নির্জন। পাশে সামিরও দাড়িয়ে রইলো চুপচাপ। নির্জন একবার সামিয়ের দিলে তাকালো। হয়তো এই সামিরের জায়গায় আর নিলয়ের মত কেউ থাকলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো। হয়তো খুব ভয়াবহ একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যেত মুহুর্তেই।

রাজ এখানে প্রবেশ করার পর সেখানে থাকা সকল ক্যামেরা নিয়ে নিয়েছিল তার লোকেরা। সিসিটিভি ক্যামেরাও রেজোয়ান কৌশলে আগেই অফ করে রেখেছে। সব কিছুর উদ্দেশ্য একটাই, যেন সময়ের আগে রাজের চেহারা বাইরের কেউ না দেখতে পায়।

রাজের পেছন পেছন তার সব লোক বেড়িয়ে যায় সেখান থেকে। এখনো যেন অবাকের ভঙ্গি নিয়ে কাটাচ্ছে নির্জন।
আচমকাই নিজের ঘোর থেকে বেড়িয়ে উত্তেজিত ভাবে সেখানে থাকা নিজের লোকদের বলে,
– সব জয়গা থেকে দ্রুত সবাইকে সরে যেতে বলো ইমিডিয়েটলি। ছেলেটা মোটেও সুবিধার না। একবারে প্রস্তুতি নিয়েই নেমেছে সে।

সেখানে থাকা নির্জনের লোক গুলো চারদিকে ফোন করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। কিন্তু দুর্ভাগ্য বসত কেউই ফোন তুলছেনা আজ। অস্থিরতা আরো বেড়ে গেলো নির্জনের মাঝে।
সেই মুহুর্তে গেটের সামনে গাড়ি থামিয়ে একজন ছুটে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
– বস, সব শেষ হয়ে গেছে আমাদের। কোনো সতর্ক ছারাই হুট করে শহর ও আসেপাশের এলাকা গুলোতে পু’লিশ ও রে’ব এর অভিজানে আমাদের সব লোক ও অবৈধ জিনিস পত্র সব আ’টক হয়ে গেছে। যারা এদিক সেদিক করেছিলো, সবাইকে ক্রস ফা’য়ার করে ফেলে দিয়েছে। শুনেছি খুলনা ও চট্টগ্রাম বর্ডার সীমান্ত গুলোতে নাকি এখনো বিজিবি অভিজান চালাচ্ছে। সবাই একসাতে দল বেধে মুহুর্তেই সব এলোমেলো করে ফেলেছে। এবার মনে হয় না সত্যটা আর লুকিয়ে রাখা যাবে।

নির্জন অস্থিরতা নিয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে কিচ্ছুক্ষন নিশ্চুপ রইলো নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে। চোখ খুলে র’ক্তিম চোখে আরোহির মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
– তুমি আগে থেকেই সব জানতে?
,
,
একটা বাড়িতে এসে গাড়ি থামলো রাজের। বাড়ির প্রাচির গুলোর চার পাশে গার্ড দিয়ে ঘেরা।
আরোহিকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে রাজ। একটা বেডরুমে নিয়ে গিয়ে কয়েকটা জামা সামনে রেখে বলে পরিহিত সব চেন্জ করে নিতে। আরোহি এখনো খাটের উপর বসে আছে চুপচাপ। হাত পা কাঁপছে তার। হয়তো অনেকটা ভয়ে আছে এখনো।
আরোহির এমন অবস্থা দেখে রাজ তার পাশে বসে গালে হাত রেখে বলে,
– ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই। এখানে কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তাছারা আজ থেকে সব সময় আমি তো আছি তোমার সাথে।

রাজের কথায় আরোহি শান্ত হওয়ার বিপরিতে রাজের দিকে চেয়ে মাথা নিচু করে কাঁদতে শুরু করলো। গম্ভিরতার মাঝে আচমকাই আরোহিকে এভাবে কাঁদতে দেখে রাজ মায়া ভরা দৃষ্টিতে আরোহির দুই গালে হাত রেখে শান্তনা দিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। এর মাঝে আরোহি কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– মাকে মে’রে ফেলবে বাবা। এর আগে আমার সামনেও অনেকবার মে’রেছিলো। ফ্যামিলির সম্মানের দিকে চেয়ে লজ্জায় এসব বিষয়ে কখনো আপনাকে কিছু বলিনি। কিন্তু বাবা খুব খারাপ, আজ মাকে মে’রেই ফেলবে সে।

বলেই আবার কাঁদতে শুরু করলো আরোহি। এতো অস্থিরতার মাঝে মুহুর্তেই থমকে গেলো রাজ। তবুও আরোহিকে শান্ত করতে সে বলে,
– কিছু হবে না তার। তাকেও এখানে নিয়ে আসছে অন্যরা। তোমার বাবা চাইলেও তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।

আরোহির বুকের উপর পাথরটা যেন কিছুটা হাল্কা অনুভব করলো মুহুর্তেই। কাঁন্না কিছুটা থামিয়ে করুণ ভাবে বলে,
– সত্যি?
রাজ মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যা’ সূচক উত্তর দিলো। তারপর আলতো করে আরোহির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
– এখন চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে মায়ের জন্য অপেক্ষা করো। আমি একটু বাইরে থেকে দেখে আসি, পরিস্থিতি কেমন।

বলেই আর এক মুহুর্ত দেড়ি না করে চলে গেলো রেজোয়ানের কাছে। এখন এক মুহুর্ত সময়ও অপচয় করা বোকামি। এক সময় সবই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। শুধু এখন কিছু হারালে তখন আফসোস টা রয়ে যাবে।
,
,
ফ্রেশ হয়ে রুমে বসে ছিলো আরোহি। দুইটা মেয়ে টেবিলে খাবার সাজিয়ে আরোহির সামনে এসে কয়েকবার ডাকলেও কোনো রেসপন্স নেই তার। নিজের মত এক ধ্যানে বসে সময় পার করছে সে। হতাশ হয়ে রুমের বাইরে হাটাহাটি করছে একটা মেয়ে। আরেক জন গিয়ে টেবিলে খাবার গুলোতে ঢাকনা দিয়ে বসে আছে এক পাশে।

কিছুক্ষন পর আবার ফিরে এলো রাজ। টেবিলে খাবার ঢাকনা দিয়ে রাখা অবস্থায় দেখে কারণটা নিজেই বুঝে নিলো। চুপচাপ রুমে গিয়ে দেখে আরোহি বসে আছে বিষণ্ন মনে। রাজকে দেখেই উঠে তার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
– আম্মু কোথায়? নিয়ে এসেছেন তাকে?
রাজ কিছুটা শান্ত ভাবে বলে,
– এতো ঝড় ঝামেলার মাঝে তার একটা প্রেশারে প্রব্লেম হয়েছিলো। তাই রেজোয়ান এখন হসপিটালে নিয়ে গেছে তাকে। চিন্তা করো না, সব ঠিকঠাক হলেই এখানে নিয়ে আসবে তাকে।
আরোহির অস্থিরতা বেড়ে গেলো আরো। অস্থির হয়ে বলে উঠে,
– কিন্তু আমার আম্মুর তো কোনো প্রেশারে প্রব্লেম ছিলো না। বলুন না কি হয়েছে?
রাজ কিছুটা চুপ থেকে পূনরায় বলে,
– বলেছিনা শান্ত থাকো। সব ঠিকঠাক থাকলে নিয়ে আসবে এখানে।

আরোহি এবার কিছুটা কাঁদু স্বরে বলে,
– বলুন না কি হয়েছে? বাবা কিছু করেছে তাই না? আমি জানতাম এমন কিছুই করবে। বলুন না আমার আম্মু বেচে আছে তো? তার খারাপ কিছু হয়নি তো?
আরোহির চোখে মুখে অস্থিরতার ছাপ। এই মুহুর্তে সত্যটা জানালে হয়তো আরো ভেঙে পরবে সে। তাই যতটা সম্ভব কথা ঘুরিয়ে রাখতে হবে তাকে।

রাজ নিজের মাঝে একটু হাসিখুশি ভাব আনার চেষ্টা করে আরোহির আরো কাছে এগিয়ে যায়। রাজ সামনে এসে দাড়ালে অস্থিরতা ভাব কিছুটা বিলিন হয়ে মাথা তুলে রাজের মুখের দিকে তাকায় সে।
রাজ একটু মুচকি হেসে আরোহির মুখের এক পাশে এলোমেলো চুল গুলো আলতো করে কানের পেছনে গুজে দিয়ে বলে,
– কিচ্ছু হয়নি। সব ঠিকঠাকই আছে। আর আমি যাওয়ার পর থেকে তুমি কি এখানেই বসে ছিলে শুধু? সন্ধা থেকে তো কিছুই খাওনি। মায়ের সাথে কথা বলতে হলেও তো তোমাকে সুস্থ থাকতে হয়ে তাই না। আর না খেয়ে যদি শুধু টেনশন করো তাহলে সেই সুস্থতা কোথা থেকে আসবে বলো?
আরোহি রাজের দিকে চেয়ে শান্ত গলায় বলে,
– এই মুহুর্তে আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।

এভাবে মুখের দিকে চেয়ে আরোহির কথাটা যেন একধম বাচ্চাদের মতো মনে হলো রাজের। আচমকাই একটা মৃদু হাসি বেড়িয়ে আসে মুখ দিয়ে। মুখের দিকে চেয়ে রাজকে এভাবে হেসে উঠতে দেখে ভেতর ভেতর কিছুটা লজ্জা জাগ্রত হয় তার। আর কিছু বলতে না পেরে নিচের দিকে চোখ সরিয়ে নিলো।
রাজ আবার কিছুটা স্বাভাবিক ভাব এনে বলে,
– সুস্থ থাকতে হলে তো খাওয়া আর ঘুমটা ঠিক রাখতে হবে তাই না? চলো এখন খেয়ে তারপর চুপচাপ বিশ্রাম নিবে। সকালে উঠে মায়ের সাথে কথা বলবে। আর চিন্তা করো না, ওনি এখন একদম ভালো আছে।

আর কিছু বললো না আরোহি। চুপচাপ রাজের সাথে খাবার টেবিলের উদ্দেশ্য বের হয়ে গেলো রুম থেকে। রাজ মেয়ে একটাকে ডেকে বললো, আরোহির রুমটা রেডি করে রাখতে। আর অন্যজন খাবার টেবিলের সামনে আছে খাবার সার্ভ করে দিবে বলে।

খাওয়া শেষে রেজোয়ানকে ফোন দিয়ে আরোহির মায়ের সম্পর্কে জানতে চাইলো রাজ। সব সিকিউরিটি ঠিকঠাক রেখে কিছুটা সাইডে এসে রেজোয়ান বলে,
– এখন আই’সি’ইউ তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাকে। অবস্থা তেমন একটা ভালো না। একটা মানুষ কোনো মানুষকে এতো পিটায়না। হয়তো এর চেয়ে কম মা’রে নয়তো মে’রে ফেলে। ডাক্তাররাও শিউর হয়ে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। এখন দেখা যাক ভাগ্য কোন দিকে যায়।
রাজ কিছুটা শান্ত থেকে বলে,
– আচ্ছা ঠিক আছে, চারপাশ টা দেখে রেখো।

তখন রেজোয়ান ঐ বাসায় যাওয়ার পর দেখে সেখানে কেউ নেই। নির্জন ও তার লোকটা হয়তো বেড়িয়ে গেছে সেখান থেকে। আরোহির মা তখন র’ক্তাক্ত হয়ে মেঝেতে পরেছিলো শুধু। নির্জন নিজের সবটা শক্তি দিয়ে মে’রে শেষে কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে ম’রে গেছে ভেবে সেভাবেই রেখে দিয়ে দলবল নিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে।

আরোহির মাকে এভাবে দেখে তারা প্রথমে ভেবেছিলো ম’রে গেছে। পরে পালস চলছে দেখে হসপিটালে নিয়ে গেলো তাকে।

দেখতে দেখতে রাত তখন ১১ টা। আরোহিকে রুমে নিয়ে গিয়ে বিশ্রাম নিতে বলে রাজ। এখনো কিছুটা অস্থিরতা রয়ে গেছে আরোহির মনে। রাজ তাকে শুইয়ে দিয়ে বিছানার পাশে হাটু-গড়ে বসে বলে,
– মাত্র রেজোয়ানের সাথে কথা হয়েছে। তোমার মা একধম সুস্থ আছে। এখন রাত হয়ে গেছে দেখে হসপিটালে এতো ঝামেলা করে এখানে নিয়ে আসতে বলিনি। কাল সকালে নিয়ে আসবে। এখন চিন্তা না করে চুপচাপ ঘুমিয়ে পরো। আর ভয় পাবেনা একদম। আমি পাশের রুমেই আছি।

To be continue…………

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৭৭)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

স’ন্ত্রাসীদের লা’শ গুলো একে একে নিয়ে গিয়ে লাইন করে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। যারা বেচে আছে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে জবানবন্দীর জন্য।
সেই সাথে উদ্ধার করা হয়েছে তাদের হাতে আটকে থাকা প্রায় দুই শতাধিক ছেলে মেয়ে। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে পরিবারের লোকদের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছে একে একে।

দেশে চলমান এতো বছরের অপরাধ, চলাফেরা করার সময় মানুষের মনে জমে থাকা আতঙ্কের মাঝে সেই অপরাধি চক্রের লোকগুলো বের হচ্ছে একে একে। যা নিয়ে সারা দেশ জুড়ে বয়ে যাচ্ছে তুমুল আলোচনা।
সেই সাথে একদিনেই সারা দেশের মানুষেের কাছে ছড়িয়ে পরেছে রুশানের পরিচিতি। দেশের বেশির ভাগ চ্যানেলই তাকে নিয়ে নিউজ ছাপাচ্ছে একের পর এক।

বড় বড় সিনিয়র অফিসাররা যা পারেনি, জুনিয়র হয়ে তা করে দেখিয়েছে সে। এর আগেও অনেক সিনিয়র অফিসার এই অপরাধী চক্রের কাছ অব্দি পৌছাতে পারেনি। তার আগেই হারিয়ে গেছে সকলে। কারো খোজ পাওয়া যায়নি এরপর।

সোশাল মিডিয়ায় রুশানকে নিয়ে এমন আলোচনা হতে দেখে তার ভার্সিটির সকল ছেলেদের চক্ষু কোটা থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। কারোরই যেন বিশ্বাস হতে চাইছেনা, এই ছেলেটা এতোদিন তাদের সাথেই মিলে-মিশে ছদ্মবেশে চলাফেরা করেছিলো।

কয়দিন আগের সেই শতাধিক লা’শ নদীতে ফেলে দেওয়ার সেই ভিডিও ফুটেজে এই গ্রেপ্তার হওয়া ও খু’ন হওয়া লোক গুলোর চেহারা দেখে পরিস্থিতি আরো উত্তাল হয়ে উঠে। কার আন্ডারে এই স’ন্ত্রাসী গুলো এতোবছর ধরে ধাপট দেখিয়ে বেড়িয়েছে তা জানার তীব্র আকাঙ্খা জন্ম নেয় সবার মাঝে।
দেশবাসী হয়তো এখনো বুঝতে পারছে না যে, তাদের জন্য খুব বড় একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।

রি’মান্ডে সেসব লোকদের থেকে যখন সত্যটা বেড়িয়ে এলো তখন সকলের চক্ষু ছড়কগাছ। সকলের চিরচেনা নির্জনের ভালো মানুষির মুখটা যখন সবার সামনে ভেষে উঠলো, চার পাশের উত্তেজনা যেন কিছু সময়ের জন্য নিরব হয়ে গেলো। কারো যেন বিশ্বাসই হতে চাইছেনা নির্জনের মতো একজন মানুষ এতো বছর ধরে এসব করে এসেছিলো। যাকে পুরো দেশবাসী মানবতার ফেরিওয়ালা নামে উপাধি দিয়েছিলো।

পরপরই শুরু হয় নির্জন, সামি এদের গ্রে’প্তার করার আন্দোলন। যারা এতোদিন নির্জনকে মাথায় তুলে রেখেছিলো, তারাই এখন তার ছবিতে জু’তার মালা পরিয়ে রাস্তায় নেমেছে। যাদের জন্য এক এতগুলো বছরের মাঝে অনেকে নিজেদের সন্তান হারিয়েছে, অনেকে হারিয়েছে তাদের বাবা মাকে, হারিয়েছে প্রিয় মানুষ গুলোকে। যাদের জন্য এতগুলো বছর দেশবাসী আতঙ্কের মাঝে ছিলো, তাদের সবার দাবি এখন সেই মানুষ গুলোর যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়। আর এই সমস্যা যেন গোড়া থেকে উপড়ে ফেলা হয়। এদের শাস্তি দেখে যেন ওসব কাজ দ্বিতীয় কেউ করার কথা না ভাবে।
,
,
ওদিকে মাকে আইসিইউ’তে দেখে নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে আরোহি। এতোদিন সব সহ্য করলেও আজ এক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছে বাবা নামক মানুষটাকে সামনে পেলে কে’টে নিজের ভেতর জ্বলতে থাকা আগুনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে। সেই সাথে তার সব সত্য বেড়িয়ে আসার পর তীব্র ঘৃনাই শুধু জন্ম নিচ্ছে তার জন্য।
এতো কিছুর মধ্যেও মাঝে মাঝে বারংবার চোখ বন্ধ করে সৃষ্টিকর্তার কাছে পার্থনা করছে সব যেন তার মা সুস্থ হয়ে যায়। ছোট থেকে একমাত্র তার মা’ই তার সাপোর্টার ছিলো।

রাজ তার পাশে এসে বসলে কাঁন্নাটা থামিয়ে নিশ্চুপ হয়ে থাকে আরোহি। রাজের থেকে সরে কিছুটা দুরে গিয়ে বসে সে।
রাজ কারণটা বুঝতে পেরে অবাক হলো না। রাজ শান্তনা সহিত আরোহির কাঁধে হাত রাখলে তা সরিয়ে দেয় আরোহি। কিছুটা রাগি দৃষ্টিতে রাজের দিকে চেয়ে বলে,
– কেন মিথ্যা বলেছিলেন আমায়? আমার আম্মু মৃ’ত্যুর সাথে লড়ছে আর আপনি বলেছিলেন কিছুই হয়নি। যদি কিছুই না হয় তাহলে আমার আম্মু এখানে কেন? বলুন আমাকে, কেন আম্মু মৃ’ত্যুর সাথে লড়ছে? উদ্দেশ্য কি আপনার?
রাজ কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
– এমন পরিস্থিতিতে আমি চাইনি তোমার মাঝে আরো বেশি চাপ সৃষ্টি হোক। তাই কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর নিয়ে এসেছি তোমায়। তাছারা ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য নেই।
আরোহি উত্তেজনা বসত আবার বলে,
– কোনটা বিশ্বাস করবো আমি। আমার আম্মুর সুস্থ হওয়ার মিথ্যা শান্তনাটা, নাকি আপনার হুট করে রুপ বদলানো টা। এসব দেখতে দেখতে নিজেকেই এখন বিশ্বাস হচ্ছেনা আমার।

আরোহিকে এমন উত্তেজিত হতে দেখে রাজ তার দুই বাহু চেপে ধরে বলে,
– সবকিছু ঠিকঠাক হোক। সময় হলে তোমাকে সব বলবো আমি। এখন শুধু নিজেকে শান্ত রেখে মায়ের জন্য দোয়া করো যাতে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি।
আরোহি বড় বড় কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে বলে,
– আমার একটা কথা রাখতে পারবেন? বাবা নামক ঐ মানুষটার লা’শ উপহার দিতে পারবেন আমায়?

আরোহির মুখে এমন একটা কঠিন কথা শুনবে তা হয়তো কখনো কল্পনাতেও আনতে পারেনি রাজ। ভালোই বুঝতে পারছে আরোহি এখন নিজের অবস্থান থেকে কিছুই বলছে না। হয়তো হুট করে জীবনে এতোকিছু ঘটে যাওয়ায় যা ভেবে পাচ্ছে, তা না বুঝে তাই বলে যাচ্ছে সে।

তাই এই বিষয়ে আর কথা না বাড়িয়ে আরোহিকে সেখানে বসিয়ে পাশে সে নিজেও বসলো। কিছুটা শান্ত হতে দেখে পাশ থেকে আরোহির মাথাটা নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলো রাজ। কিছুক্ষণের নিরবতায় ছোট বাচ্চাদের মতো একদম শান্ত হয়ে গেলো আরোহি। নিজের মাঝে কিছুটা অনু সূচনা নিয়ে শান্ত গলায় বলে,
– সবকিছু আমার জন্য হয়েছে তাই না?

রাজও তার সাথে তাল মিলিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
– ভাগ্যের লিখন কেউ পরিবর্তন করতে পারেনা। হয়তো কোনো না কোনো ভাবে এমনটাই হওয়ার ছিলো। অতএব, তোমার জন্য কিছুই হয়নি। তাই কোনো কিছুর জন্য নিজেকে দোষারোপ করে কষ্ট পাওয়াটা শুধুই বোকামি মাত্র।
আর কিছু না বলে চুপচাপ চোখ দুটু বুজে নিয়ে নিস্তেজ হয়ে গেলো আরোহি। যেন হুট হয়ে শরিরের সব অস্থিরতা নিমেশেই হারিয়ে গেছে।
,
,
দাড়ি ও গোঁফ লাগিয়ে নিজের চেহারা পরিবর্তন করে বিমান বন্দরে পা রাখে সামির। উদ্দেশ্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশ ত্যাগ করা। সব কিছু প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পরই পাসপোর্ট নিয়ে বেড়িয়ে গেলো সে। হাতে সময় খুবই কম। কোনো মত বিমানবন্দর ক্রস করাটাই এখন সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য। অন্য কিছু নিয়ে ভাবার সময় নেই তার।
পাসপোর্ট জমা দিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করছে সে। বিপরীত লোকটা পাসপোর্ট দেখেন আড়চোখে সামিরের দিকে তাকিয়ে ফোন কলে কার সাথে যেন কথা বললো।

কিছুক্ষনের মাঝে পুলিশ ঘিরে ধরলো তাকে। অবাক হয়ে চার পাশে একবার চোখ বুলিয়ে নেয় সামির। শোনার সাথে সাথেই বের হয়ে গিয়েছিলো সামির। এতো দ্রুত সব কিছু ওয়ার্নিং-এ পরে যাবে তা হয়তো ভেবে উঠতে পারেনি সে।

দেশের পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে গেলে খুব দ্রুত নির্জনের চুরান্ত এ্যা’রেস্ট ওয়ারেন্ট আসে। দেশের সব জায়গায় অভিজান চলতে থাকলেও কোথায় নির্জনের কোনো হদিস পাচ্ছেনা তারা। অনেকের ধারণা সুজুগ বুঝে দেশের বাইরে চলে গিয়েছে সে। দেশে থাকলে এমন অভিজানে নিশ্চই বেড়িয়ে আসতো সে।
এসব মানুষের দেশ ত্যাগ করতে খুব একটা সময় লাগেনা, এটা সহলেরই জানা।

রুশানের দায়িত্ব বেড়ে গেলো আগের তুলনায়। নির্জনের এ্যা’রেস্ট ওয়ারেন্ট হাতে পাওয়ার পরই দল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে সে।
দেশ ত্যাগ করার ইসু উঠলে খোজ নিয়ে দেখে এই কয়েক দিনের মাঝে আদ্রিয়ান মাহমুদ নির্জন কোনো বিমানে দেশ ত্যাগ করেনি। তবুও ধারণা করা হচ্ছে ধরা পরার বিষয়টা মাথায় রেখে সমুদ্র পথে অন্য দেশে পালিয়েছে সে।

এতো কিছুর মাঝে রাজ রুশানের সাথে যোগাযোগ করে একান্তে তাকে নিয়ে গেলো একটা গোপন জায়গায়।
রাজের সাথে সেখানে যাওয়ার পর দেখতে পায়। রেজোয়ান আগে থেকেই দলবল নিয়ে সেখানে উপস্থিত আছে। তার কেন্দ্রবিন্দু হলো নির্জন। রাজের কথায় গত দুই দিন ধরে রেজোয়ানের কাছেই আছে সে। এসব কাজে বিপদের সময় দলের লোকরা নিজেদের জীবন বাচাতে ব্যস্ত হয়ে পরে। আর সেটারই সুজুগ নিয়েছে রাজ। সময় মত দলবল নিয়ে নির্জনকে নিজেদের আয়ত্বে এনে বন্ধি করে রাখলো এই দুইদিন।

রুশান প্রথমেই কিছুটা অনুমান করেছিলো। রাজ যেহেতু বলেছিলো নির্জনের বিষয়টা সে হেন্ডেল করবে, তাই হয়তো রাজের কাছেই আছে। তাই তো এতোজনে এতো কথায় কান না দিয়ে নিজের লক্ষে স্থির ছিলো রুশান।

একটা চেয়ার টেনে নির্জনের মুখোমুখি বসলো রুশান। চোখ দুটু রক্তিম হয়ে আছে তার।
এক হাতে নির্জনের গাল টিপে ধরে তার মুখোমুখি করে নিয়ে বলে,
– এই দিনটারই অপেক্ষায় ছিলাম শু’য়রের বাচ্চা। মনে পরে আজ থেকে ২৬ বছর আগের কথা? বাবা মায়ের মত যেই মানুষ গুলো তোকে বড় করেছিলো, দিন শেষে সেই মানুষ গুলোর পেছনেই ছু’রি মে’রেছিলি? একটা ফ্যামিলির মতোই তো ছিলি তোরা। সেদিনের সেই রুদ্র চৌধুরী নামের মানুষটার একটা ছেলে ছিলো রিদ। তবুও সে সব সময় বলতো তার দুইটা ছেলে। একটা রিদ আর অন্যটা তোর মত এই সুজুগবাদি বিশ্বাসঘাতক।

রুশানের কথায় চোখ বড় বড় করে তাকায় নির্জন। সময় হিসেব করলে রুশান হয়তো সেই সময়টায় খুব ছোট ছিলো, নয়তো জন্মই হয়নি তার। তাহলে এই ছেলে সেই পুরোনো ফ্যামিলি হিস্টোরি জানে কিভাবে?
নির্জনের ভাব বুঝতে পেরে। রুশান বলে,
– একটা অন্তঃসত্ত্বা নারীও ছিলো সেই দিনটায়। তাকেও দয়া দেখাসনি তুই। নিজের বাবার মত মানুষটাকে স্বার্থের দিকে চেয়ে মুহুর্তেই হারিয়ে ফেলেছিলি সকলের থেকে। আমি দাদা নামক মানুষটার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছি শুধু তোর জন্য। আমার দাদিকে বছরের পর বছর কাঁদতে দেখেছি তোর জন্য। একটা ফ্যামিলি তার হ্যাপিনেস মুহুর্তেই হারিয়েছে শুধু তোর জন্য। এতটুকুতেই শেষ নয়। এমন শত শত পরিবার তাদের প্রিয় মানুষগুলোকে হাড়ালো একমাত্র তোর জন্য। হাজারো মেয়ের স্বপ্ন ভেঙে, ভালো ঘরের মেয়েদেরও নোংরা কাজের জন্য তাদের ভিন্ন দেশে পা’চার করা হয়েছে সেটাও তোর জন্য।
সেদিন লা’থির আঘাতে নিলয়ের পোস-মার্টাম রিপোর্টে বুকের বা-পাশের তিনটা হা’র ভা’ঙা পাওয়া গিয়েছিলো। ছয়টা বুলেট বুকের ভেতর গেথে ছিলো। যেই ছেলেটা সব পাপ কাজ ছেরে একটা সুন্দর জীবনে পা রাখতে চেয়েছিলো, সেও সেই স্বপ্নটা পুরণ করতে পারেনি তোর জন্য। নিজ হাতে বন্ধুর লাশ দাপন করে এসেছি শুধু তোর জন্য। এতো অল্পতেই সব শেষ হয়ে যাবে না। এই সব কিছুর হিসেব চুকাতে হবে তোকে।

বলেই উঠে দাড়িয়ে কোমর থেকে পি’স্তল বের করে নেয় রুশান। ডান হাতে পি’স্তল ধরে, নিজের বাম হাতের বাহুতে গু’লি চালিয়ে দেয় সে। কিছুক্ষণের মধ্যেই র’ক্তে সারা হাত ভেসে গেলো রুশানের। পাশ থেকে রাজ উত্তেজিত ভাবে এসে রুশানের হাত চেপে ধরতে চাইলে রুশান তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
– তাকে এ্যা’রেষ্ট করে আইনের হাতে তুলে দিতে চাইনা আমি। আইনের হাত তুলে দিই, তারপর তার ফাঁ’সি। এতো সহজ মৃ’ত্যু ওর জন্য সত্যিই কম হয়ে যাবে। এখনো অনেক হিসেব বাকি আছে তার সাথে।

বলেই ভেতর থেকে টি-শার্ট টা খুলে রাজের সাহাজ্য নিয়ে হাতটা শক্ত করে বেধে নিলো রুশান। রাজ এবার হয়তো কিছুটা বুঝতে পারছে রুশানের হুট করে এমন করার পেছনে কারণ কি?
হয়তো আগামি কাল হেডলাইনে আসবে,
এ্যা’রেস্ট করার মুহুর্তে পুলিশ অফিসারের উপর আ’ক্রমন করে, তার উপর গু’লি চালিয়ে পুনরায় পালিয়েছে নির্জন।

আর সেই নিউজ বার বার ট্যালিকাস্ট করে দেশ জুড়ে আবারো উত্তেজনাময় পরিস্থিতি তৈরি হবে। সব কিছু মিলিয়ে এ্যা’রেস্ট ওয়ারেন্টের বিপরিতে হয়তো নির্জনের উপর ক্রস ফা’য়ারের নির্দেশ আসতে পারে। আর সেই সুজুগটা নিতেই হয়তো নিজের উপর নিজে গু’লি চালিয়ে আ’হত হয়েছে রুশান।

To be continue…………..

#ছদ্মবেশ (পর্ব ৭৮)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

হাতে বেন্ডেজ করা অবস্থায় সাক্ষাৎকার দিচ্ছে রুশান। মিডিয়ার লোকগুলো ভিড় জমিয়ে আছে সামনে। কোন চ্যানেল সবার আগে আপডেট নিউজ ছাপাবে তা নিয়ে যেন কম্পিটিশন লেগেছে নিজেদের মাঝে।
নির্জন তার উপর কিভাবে এ্যা’টাক করেছে সেই বিষয়ে ক্যামেরার সামনে রেখে শান্ত ভাবে সাজিয়ে উপস্থাপন করছে রুশান। সব কিছু আগেই সাজিয়ে রেখেছে সে।

“গতকাল রাতে গোয়েন্দা টিম থেকে নির্জনের খবর পেয়ে পেয়ে পোর্স নিয়ে সেখানে চলে গেলাম আমি। আন্ডারগ্রাউন্ডে একটা গোপন জায়গা ছিলো তার। যার কথা বাইরের কেউ জানে না।
নির্জনের সেখানে থাকার তথ্যটা গোয়েন্দা টিমের কাছে এসেছিলো তার স্ত্রী হতে। যার কারণে স্ত্রীকে মে’রে আহত করেছিলো সে।
আমরা সেখানো পৌছে সব কিছু আয়ত্বে নিয়ে আসার আগেই তারা আমাদের উপর আ’ক্রমন করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। আমাদের পুরো টিম নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও তাকে আয়ত্বের মাঝে আনতে পারিনি। যতবারই আমরা প্ল্যান অনুযায়ী এগিয়ে গিয়েছি ততবারই তারা আ’ক্রমাত্বক হয়ে উঠেছে। অনুমতি না থাকায় তার দিকে পাল্টো গু’লি ছুরতে পারিনি আমরা। তাদের আ’ক্রমনে একটা গু’লি এসে আমার বাম হাতে আ’ঘাত করে।

শেষে তাদের এই আ’ক্রমনের চাপে পরে সবটা আয়ত্বের বাইরে চলে গেলো আমাদের। আমাদের টিম সেখান থেকে আহত হওয়া নির্জনের স্ত্রী কে নিয়ে হসপিটাকে নিয়ে গেলো। তিনিও অন্যায়ের বিরোদ্ধে লরতে গিয়ে এখন আইসিইউতে আছে। ‘আদ্রিয়ান মাহমুদ নির্জন’ এর মেয়ে ‘মিস. আদ্রিতা আরোহি’ মিডিয়া বা ক্যামেরার সামনে আসতে চাইছে না। তবে তিনিও তার বাবার কর্মকান্ডে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছে। তার পক্ষ হতেও অপরাধীর উপযুক্ত শাস্থির দাবি উপস্থাপন করেছে তিনি। এখন সব মিলিয়ে নির্জনের এই কর্ম-কান্ডের জন্য আমাদের নেক্সট পদক্ষেপ উপর মহলের অনুমতির উপর নির্ভর করছে।”

সকলের মতো রাজও স্রোতার ভূমিকা পালন করে চুপচাপ রুশানের কথা শুনলো। রাজের মুখে না চাইতেও একটা অদ্ভুত হাসির আভাস দেখা দেয়। কি সুন্দর ভাবেই একটা মিথ্যা গল্প সাজিয়েছে রুশান। যার মাঝে আরোহির মা ও আরোহির বিষয়টাও সহজ ভাবে ঐ সাজানো ঘটনার উপর ঘুরিয়ে নিয়েছে।
যেন এক ঢিলে ২ পাখি শিকারের মতোই হয়েছে সবটা। এবার হয়তো রুশানের প্ল্যানটা খুব শীগ্রই বাস্তবায়ন হতে চলছে।
,
,
নির্জনের ভালো বিজনেস গুলো সব ছিলো সামিরের হাতে। আর খারাপ গুলো নিলয়ের হাতে।
সেদিন সামিরকে বিমানবন্দর থেকে এ্যা’রেস্ট এর পর কোর্টে তোলা হয় তাকে। সেখান থেকে তার ৩ দিনের রিমান্ডের আদেশ আসলো।
এই ৩ দিনে এই অবৈধ ব্যাবসার বাইরেও অনেক নতুন তথ্য সামনে আসে সকলের।
এতোদিন তার আন্ডারে থাকা সব ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি মালিক সে বা নির্জন তারা কেউই নয়।
সামিরের জবানবন্দি অনুযায়ি এর সঠিক তদন্তের মাঝে বেড়িয়ে আসে সবটা। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের সাথেই তাদের সাথে ভিন্ন কারো নাম জড়িয়ে আছে।

সব তথ্য সামনে আসার পর ঐসব প্রতিষ্ঠান গুলোর পূর্ব মালিকের ডিটেইলস বের করে তারা। সেই সাথে সামনে আসে এতোদিন গোপনে থাকা রুশানের দাদা রুদ্র চৌধুী ও ফরিদা আন্টির স্বামির সেই প্রতিষ্ঠান গুলো। সব মিলিয়ে এমন বেশ কয়েকজনের নাম সামনে আসে। সম্পূর্ণ তদন্ত শেষ হলে আসল মালিক পক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে সব।

পরিস্থিতি শান্ত হচ্ছেনা কিছুতেই। স্বজন হারানো মানুষ গুলো যেন আরো ক্ষেপে উঠেছে। এতোদিন হয়ে গেলো সব কিছু প্রমানিত হওয়ার এখনো কেন নির্জনকে আটক করা হচ্ছে না। বা তার কোনো ব্যাবস্থা করা হচ্ছে না।
কেন এই কয়দিন তাকে এবাবে সময় দিয়ে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার সুজুগ দেওয়া হচ্ছে। নাকি প্রশাসন তার তেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে চুপ করে আছে? এমন নানার প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে বিক্ষোপ্ত জনতা।

উত্তেজনা বাড়তেই থাকলে এ্যা’রেস্ট ওয়ারেন্ট এর বিপরিতে নির্দেশ আসে, নির্জনকে যেখানে পাবে সেখানেই মে’রে ফেলার।

রুশান যেন এই সময়টারই অপেক্ষায় ছিলো। এখন সময় এসেছে বদলা নেওয়ার। প্রিয়জন হারানোর শোকটা র’ক্তের বদলে কাটিয়ে তোলার। বুকের ভেতর জ্বলতে থাকা দহনকে শান্ত করার।
,
,
গাড়ির হর্ণ বেজে উঠলে গেট খুলে দেয় দাড়োয়ান। তার তখন প্রায় সাড়ে দশটা। বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থেকে নামে রুশান। আশার সময় বাড়ির কাউকেই জানিয়ে আসেনি সে।
কলিং বেলটা বেজে উঠলে কাজের মেয়েটা এসে দরজা খোলে। রুশান ভেতরে প্রবেশ করে দেখে সকলেই খাবার টেবিলে। আরিশা আন্টি ও রিমাও আছে তাদের মাঝে।
রুশান কে নিয়ে মিডিয়ায় এতো আলোচনা হতে শুরু করলে কম বেশ সকলেই অবাক হয়েছিলো। অবাক হয়নি শুধু রিদ, আরশি ও রুশানের দাদি। কারণ তারা ঠিকই জানতো ছেলে একদিন এমন কিছু একটাই করে দেখাবে। এর সাথে যে তার ফ্যামিলির ভয়ঙ্কর স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

হুট করে খাওয়ার মুহুর্তে রুশানকে দেখে সকলেই যেন অবাক হয়ে চেয়ে আছে তার দিকে। শুধু রিমা সেদিকে না তাকিয়ে এক মনে বসে আছে চুপচাপ। তারা গতকালই এসেছিলো এখানে।
সকলের চাহুনিতে একটু হেসে ছয় সীটের মাঝে খালি থাকা সীটেই গিয়ে বসে রুশান। পাশ থেকে আরশি কিছুটা অবাক হলেও মুহুর্তেই তা স্বাভাবিক করে বলে,
– আসবি যখন একটা ফোন দিয়ে এলেই পারতি।
রুশান চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে,
– বলে আসলে কি সবাইকে এমন চমকাতে দেখতাম?
এর মাঝে হটাৎ খেয়াল করলো রিমা খাবার ছেরে উঠে চলে গেলো সেখান থেকে। পাশ থেকে রুশানের দাদি খাওয়া বন্ধ করে বলে,
– এই ছ্যামরির আবার কি হলো?

রুশান একবার এ দিকে চেয়ে বলে,
– বাদ দাও, এখন ওসব ঢং দেখার সময় নেই। এসেছি একটা কাজে। ডিনার শেষে এখন আবার বাবাকে নিয়ে বের হয়ে যেতে হবে।

সবার খাবার একটা হলেও রিদের খাওয়া ভিন্ন। এই বয়সে রাতের বেলায় ভাতের বদলে রুটি বেছে নিয়েছে সে। এর মাঝে ছেলের কথা শুনে পাশ থেকে রিদ খেতে খেতে বলে,
– আমাকে আবার কোথায় যেতে হবে তোর সাথে?
রুশান বাবার দিকে চেয়ে বলে,
– গেলেই দেখতে পাবে বাবা। ২৬ বছরের হিসেবের যোগফল মিলছেনা তুমি ছারা।

ছেলের কথা এবার কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো রিদ। চুপচাপ পুনরায় খাওয়ায় মন দেয় সে।
,
,
রাত তখন ৩ টা। ঘড়ির কাটার প্রতিটা সেকেন্ড যেন নির্জনের মৃ’ত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সময় গুলো যেন মৃ’ত্যু হয়ে ধেয়ে আসছে তার দিকে। আর তার পেছনে ও ডানে বামে দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। পালানোর জায়গা টুকু অবশিষ্ট নেই আর।

নির্জনের সামনে বসে আছে রিদ। শরিরের অনেক জায়গায় র’ক্ত গড়িয়ে পরছে তার। রেজোয়ান হাতের লা’ঠিটা ফেলে পাশের একটা কাঠের টেবিলের উপর রাখা জগ থেকে পর পর দুই গ্লাস পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টায় আছে।

এতোক্ষনের মা’রের আঘাতে মাথা তুলে তাকাতে যেন কষ্ট হচ্ছে নির্জনের। তবুও তাকিয়ে আছে ২৬ বছর আগের সেই চেনা মুখটার দিকে। দুজনেরই চুল দাড়ি পাকা ধরেছে। তবুও আজকের এই দিনটা যেন সেই ২৬ বছর আগের ভয়ঙ্কর দিনেই নিয়ে গেলো তাদের। যেখানে নির্জনের জায়গায় ছিলো রিদের ফ্যামিলি। বিশ্বাস ঘাতকতার তীব্র আঘাত খুব ভালো ভাবেই উপলব্ধি করেছিলো সেদিন।
এতো বছরের বোঝাপড়া শেষ হয়ে কেটে গেলো বেশ কিছুটা সময়।

ভোর চারটার দিকে সেখানে আসে রাজ। সকলের বোঝাপড়া শেষ হলে নির্জনের ডান পায়ের হাটুতে শু’ট করলো সে। চোখের সামনে কত মানুষের আর্তনাত দেখেছিলো সে। স্বজন হারানোর সে কি কাঁন্না। নিলয়কে নিজ হাতে দাফন করে আসা সেই মুহুর্তটা যেন এখনো পিড়া দিচ্ছে তাকে। চাইলেও শান্ত হতে পারছেনা সে।

পা ধরে ব্যাথায় ফ্লোরে ছটপট করছে নির্জন। মৃত্যু কতোটা ভয়ঙ্কর তা যেন খুব কাছ থেকেই উপলব্ধি করতে পারছে সে। জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার সাথে ক্রমশ বেড়েই চলছে যন্ত্রনা টা।
দ্বিতীয় গুলি চালানোর আগে রুশান থামিয়ে দেয় তাকে। রাজকে থামিয়ে নির্জনের দিকে চেয়ে বলে,
– এভাবে মা’রলে তো সে ম’রেই যাবে। তাহলে কাকে আইনের হাতে তুলে দিবো আমরা?

রুশানের কথাটা শুনে যেন কিছুটা আশার আলো দেখতে পায় নির্জন। এখান থেকে একবার সুজুগ পেলে নিজের সব টুকু ক্ষমতা দিয়ে হলেও চেষ্টা করবে নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার।
তার ভাবনার মাঝে রুশান আবার বলে,
– তাকে এখন দ্রুত ঔষধ খাইয়ে সুস্থ করে তুলতে হবে। এর পর না হয় সুস্থ ভাবে আইনের হাতে তুলে দিবো তাকে।

বলেই একটা ছোট কাঁচের শিশি বের করে সে। ছোট শিসি, ভেতরে হয়তো মাত্র কয়েক ফোটা মেডিসিন আছে। নির্জনের সামনে গিয়ে এক হাতে তার গাল চেপে ধরে অন্য হাতে সেই শিসির সবটা খাইয়ে গিলো তাকে।

কিছুক্ষনের মাঝেই যেন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলো নির্জন। শরিরের ব্যাথাও যেন সব হাওয়া হয়ে গিয়েছে মুহুর্তেই। নিজেকে পুরোপুরি একটা সুস্থ মানুষ মনে হচ্ছে তার। এতোক্ষন ব্যাথায় কাতরাতে থাকা নির্জন এখন উঠে দাড়িয়ে নিজের দিকে চেয়ে একটা মৃদ হাসি দিলো।

এর মাঝে রুশান ফোন বের করে কাকে যেন স্বাভাবিক ভাবেই বললো, নির্জন ‘মারা গেছে, এসে নির্জনের লা’শ নিয়ে যেতে।
পাশ থেকে নির্জন হা করে চেয়ে থাকে রুশানের দিকে৷ একজন সুস্থ মানুষকে মৃত বলে গোষনা করার কিছুটা অবাক হলো সে। পুনরায় আবার নিজের শরিরের দিকে তাকালো সে।
আরো কিছুটা সময় পার হলে ধীরে ধীরে শরির গরম হতে থাকে নির্জনের। গা দিয়ে চিকন ঘাম দিয়ে শারা শরির ভিজিয়ে দিচ্ছে তার। ভেতরটায় যেন তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেলো। যন্ত্রণায় শারা শরির কাঁপছে তার। ফ্লোরে লুটিয়ে পরলো কিছু সময়ের মাঝে। গায়ের চামড়া ফাটতে শুরু করলো তার। যন্ত্রণা আরো তীব্র হয়ে উঠলো। একে একে শরিরের ভিভিন্ন জায়গায় চামড়া ফেটে পানির মতো হয়ে যাওয়া র’ক্ত ছিটকে কিছুটা দুরে গিয়ে পরছে। যন্ত্রনায় বার বার ফ্লোর খামছে ধরতে চাইছে সে।

এমন ভয়ঙ্কর যন্ত্রনা যেন রিদের মতো অনুভূতিহীন মানুষেরও সহ্যের বাইরে চলে গেলো। সেখানে আর দাড়িয়ে থাকতে না পেরে, চোখ মুখ বন্ধ করে সরে গেলো সেখান থেকে।

মৃ’ত্যুর শেষ স্ট্যাপে পৌছে নিজের শরিরের সব শক্তি টুকু শক্তি হারিয়ে ফেললো সে। ছটপট করার শক্তি টুকু শেষ হওয়ার পর ধীরে ধীরে নিস্তের হতে শুরু করলো সে। কিছুক্ষনের মাঝে নিস্তেজ হয়ে গেলো পুরো শরির। এখন এই শরিরের নাম পরিবর্তন হয়ে নতুন একটা নাম নিয়েছে ‘লা’শ’।

ভোর হলে চারদিকে ফজরের আজানের ধ্বনি বেজে উঠলো। নির্জনের লাশ প্যাকেট করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভোরের আলো ফুটে উঠার সাথে রাস্তা জুড়ে গাড়ির ভির।

সব শেষে এক নতুন সকালের আগমন। এই নতুন সকালের সাথে যেন নির্জন নামক এক ভয়ঙ্কর ভাইরাসের থেকে মুক্তি পেলো দেশের মানুষ। আতঙ্ক শেষে জেগে উঠলো এক নতুন প্রভাত। নতুন প্রভাতকে নতুন ভাবে উপভোগ করছে রাজ ও রুশান। বুক ভরা প্রশান্তির নিশ্বাস তাদের। ভোরের এই ঠান্ডা আবহাওয়ার মাঝে দুই কাপ চায়ে চুমুক দিয়ে পাশাপাশি দারিয়ে আছে তারা। আজ তাদের উদ্দেশ্য সফল। আধার শেষে আলোর দেখা মিললো আজ। প্রিয় মানুষদের নিয়ে শুরু হয়ে নতুন একটা জীবন।

To be continue………….