ছায়া হয়ে থাকবো পাশে পর্ব-০৩

0
1837

#ছায়া_হয়ে_থাকবো_পাশে
#Part_03
#Ariyana_Nur

আশু স্কুল থেকে দু’হাত দিয়ে দুই বেনি ধরে নাচতে নাচতে বাড়িতে ঢুকছে।বাড়ির ভিতরে ঢুকে সামনের দিকে তাকাতেই ওর মাথা গরম হয়ে গেলো।কেননা সামনে নুহা বড় করে ঘোমটা দিয়ে দু’জন লোকের সামনে বসে আছে।সাথে ঘটক সাহেবকে দেখে আশুর আর চিনতে ভুল হলো না এরা কারা।

এই পযর্ন্ত যতবার এই ঘটক সমন্ধ এনেছে সব গুলোই হয় বুড়ো,টাকলা,না হয় মোটা,না হয় চিকন।ওর কাছে একেক জনকে হিরোনচির মত লাগে।আর প্রতি বারই আশু একেকটাকে একেক কৌশলে ভাগায়। দুনিয়াতে কি হ‍্যান্ডসাম ছেলের অভাব পরেছে যে ওর আপির জন‍্যও সব সময় এমন ছেলে নিয়ে এই ঘটক হাজির হয়।ওর আপি কি দেখতে খারাপ নাকি ওদের অবস্থা ভালো না।আর ওর মা ও তাতে রাজি হয়ে যায়।ও বোঝেনা ওদের মা কেনো নুহার সাথে এমন করে।

সবাই উল্টো দিকে বসে কথা বলছে।তাই আশুকে কেউ দেখার আগেই ও আস্তে করে বাড়ির থেকে বের হয়ে বাগানে চলে যায়।আশু বাগানে পায়চারী করছে আর বিরবির করে ঘটককের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করছে।আর বলছে…..

—সেদিন এতো করে ওয়ার্নিং দেওয়ার পরেও আজকে আবার ঘটক মশাই আমার আপিকে দেখার জন‍্য ঐ রকম লোক নিয়ে এসেছেন আপনার খবর আছে।আপনাকে তো পরে দেখে নিব আগে এগুলোকে কিভাবে তাড়াবো তার চিন্তা করতে হবে।ভাব আশু ভাব কিভাবে এগুলোকে তাড়াবি।আশু পায়চারী করছে আর মাথার মধ‍্যে তাদের তাড়ানোর শয়তানী বুদ্ধি পাকাচ্ছে।

ফ্লাসব‍্যাক…..

নুহা বাসায় এসে সবকাজ শেষ করে ফ্রেস হয়ে যেই না একটু ঘুমোতে যাবে তখনি আসফিয়া বেগম এসে বলল….

—এই যে নবাব জাদী।তারাতারি রেডি হয়ে নিচে আয়।ছেলে পক্ষ এসেছে।এবার যদি তারা তোকে পছন্দ না করে তাহলে রিকসা ওয়ালা ধরে এনে তোকে এখান থেকে বিদায় করবো।তোর ঐ কাল মুখ এখন আর আমার দেখতে ইচ্ছে করে না।

কথাটা বলেই সে হনহন করে চলে গেলো।আর নুহা না চাইতেও ওর চোখ থেকে দুফোটা জল গড়িয়ে পরল।
ও যতই নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করুক না কেনো মায়ের মুখে এমন কথা শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না।বার বার দূর্বল হয়ে পরে।

নুহা বড় করে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলিয়ে রেডি হতে লাগল।

__________________________________

নীলাভ সাইফ এর রুম থেকে বের হয়ে সিড়ির সামনে দাড়িয়ে একা একাই হাসছে।এমন সময় মিসেস চৌধুরী ওর সামনে এসে বলল….

—কি রে কি হয়েছে এভাবে হাসছিস কেনো???তুই না পাগলটার রুমে গিয়েছিলি পাগলটা আজ আবার রাগলো কেনো কিছু জানতে পারলি???

নীলাভ মিসেস চৌধুরীকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল….
—তোমার ঐ পাগল ছেলেকে এক পাগলী রাগিয়ে দিয়েছে।

—মানে???(অবাক হয়ে)

—আর মানে মানে করতে হবে না।আগুনে ঘি ঢেলে এসেছি।এখন বেশি কিছু বলার সময় নেই পরে বলব।এখন বল ভাই এসে কিছু খেয়েছে কিনা???

—আরে বাহির থেকে এসেই তো রুমের ভিতরে ঢুকে ভাঙ্গচুর শুরু করেছে।খেলো কখন।

—ঠিক আছে এবার আমার আর ভাই এর খাবারটা দেও।দেখি কিছু খাওয়াতে পারি কিনা।

—তোদের নিয়ে আর পারি না আমি।এতো বড় হয়ে গেছে তার পরেও শান্তি দিবে না আমাকে।

—আমরা বুড়ো হয়ে গেলেও তোমাকে এভাবেই জ্বালাবো।

—তোরা বুড়ো হলে আমাকে কি তখন পাবি।আমি তো তখন মও…..

কথাটা শেষ করতে না দিয়ে নীলাভ তাকে ছেড়ে দিয়ে রেগে বলল….

—মা….
তোমাকে না বলেছি এই কথা মুখে আনবে না।তাহলে কেনো বল।

—আরে আমি তো…..

—থাক তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না।আমি তো অনেক খারাপ তাই সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চায়।আমি তো তোমাদের অনেক জ্বালাই তাই না।ঠিক আছে আর জ্বালাবো না।

কথাটা বলে নীলাভ রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।

এদিকে মিসেস চৌধুরী পিছন থেকে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু নীলাভ তার ডাক শুনেও কোন কথা না বলে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।

মিসেস চৌধুরী অসহায় ফেস করে বলল….

—যা বাবা না খেয়েই চলে গেলো।আমার কথাটা একটু শুনলও না।আমি আর পারিনা এই দুটোকে নিয়ে।রাগ যেন তাদের রক্তে মিশে গেছে।পান থেকে চুন খসলেই তাদের রাগ।আল্লাহ্ এদের রাগ ভাঙ্গাতে ভাঙ্গাতে আমি পাগল হয়ে যাবো।

__________________________

এদিকে ছেলে পক্ষ নুহাকে দেখে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেডের সামনে আসতেই আশু এসে তাদের পথ আটকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ঘটক সাহেবের দিকে তাকিয়ে ৩২টা দাত বের করে বলল….

—আরে ঘটক মশাই যে।তা আজও কি এদের নিয়ে আমাদের বাড়ির পাগল মেয়েটাকে দেখতে এসেছিলেন???

ঘটক সাহেব আশুর কথা শুনে শুকনো ঢোক গিলে পালানোর রাস্তা খুজছে।এমনিই আশুর ভয়ে এখানে আসতে চায়নি।কিন্তু আসফিয়া বেগম বলল ও বাড়িতে নেই তাই র্নিভয়ে চলে এসেছিলো।আর ওর আসার আগেই মানে মানে কেটে পরতে চাইছিলো।কিন্তু কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ‍্যা হয়।ঘটক সাহেবের বেলাও তাই হলো।ঘটক সাহেব আমতা আমতা করে কিছু বলবে তার আগেই ছেলে পক্ষের একজন অবাক হয়ে বলল….
—পাগল মেয়ে মানে???

আশু অবাক হওয়ার ভান করে বলল….

—ওমা…ঘটক সাহেব আপনাদের কে বলেনি যে মেয়ের মাথায় সমস‍্যা আছে।ঘটক সাহেব এটা কিন্তু আপনি ঠিক করেননি।অন্তত‍্য ছেলেকে তো বলবেন মেয়ের মাথায় সমস‍্যা আছে।আচ্ছা আপনাদের এখানে পাএ কে???

ছেলের সাথের জন ছেলেকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল…..

—কি বলছো তুমি এসব???ঘটক সাহেব এই মেয়ে যা বলছে তা কি সত‍্যি???

আশু ঘটক সাহেবের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতেই ঘটক সাহেব ঘাবরে গিয়ে শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল….

—ইয়ে…মানে…আসলে হয়েছে কি….

আশুঃআরে রাখেন আপনার আসলে নকলে।সত‍্যি কথাটা বলছেন না কেন???ও বলতে পারছেন না তাই তো…আসলে হয়েছে কি,ঘটক সাহেব না ঐ মেয়েকে নিজের মেয়ের মত মন করে তাই আর কি সমস‍্যার কথাটা কাউকে বলে না।আর তাছাড়া যদি মেয়েটির সমস‍্যা নাই থাকতো তাহলে কি অতো সুন্দর বড় ঘরের একটা মেয়েকে কেউ এমন ছেলের সাথে বিয়ে দেবার জন‍্য প্রস্তাব আনায়???

আশুর কথাটা শুনে ছেলে মুখটা কালো করে ফেলল।আর সাথের জন বলল….

—হতে পারে আমাদের ছেলে দেখতে বেশি সুন্দর না।কিন্তু কোন পাগল না।আর না কোন সমস‍্যা আছে।ঘটক সাহেব আপনাকে দিয়ে এটা আশা করিনি।

ঘটকঃদেখুন আপনারা আমাকে ভুল বুঝছেন।আসলে হয়েছে কি…..

—হয়েছে আপনাকে আর কিছু বলতে হবে না।আপনাকে পরে দেখে নিব।

কথাটা বলেই তারা গটগট করে হেটে চলে গেলো।

লোকেরা চলে যেতেই আশু চোখ রাঙ্গিয়ে দাতে দাত চেপে বলল…..

—আপনাকে কি বলেছিলাম মনে নেই???বলেছিনা আমাদের বাড়ির আশেপাশে যেন আপনার ছায়াটা কেও না দেখতে পাই???

—আসলে তোমার মা নুহা মার জন‍্য ছেলে দেখতে বলেছিলো তাই আর কি।হে…হে….

—রাখেন আপনার ছেলে।ঐ বারের কথা ভুলে গিয়েছেন কি অবস্থা করেছিলাম আপনার।নাকি মনে করিয়ে দিব???

—এই না না….
আমার ঘাট হয়েছে আর কখনো ভুলেও তোমাদের এখানে আসবো না।

—কথাটা মাথায় রাখবেন।আর একটা কথা,আমার কথা যদি মাকে বলেছেন তাহলে জানেনি তো কি হবে….(শয়তানী হাসি দিয়ে)

—এই না না…আর বলতে হবে না।আমি বুঝে গেছি।

—তাহলে এখানে দাড়িয়ে আছেন কেনো কেটে পরুন।

ঘটক সাহেব আর কোন কথা না বলে কেটে পরলো আর আশু হাসতে হাসতে বাড়িতে চলে গেলো।

ঘটক সাহেব আশুদের বাড়ির থেকে একটু দূরে এসে বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল…

—কি বিচ্ছু মেয়েরে বাবা।জীবনে আর এই বাড়িতে পা দিব না।গতবার যা করেছিলো।ভাবতেই ঘটকের শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো।

(আশু ঘটকের সাথে কি করেছিলো সেটা পরে জানতে পারবেন)

#চলবে

(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।গল্পটা আপনাদের কেমন লাগছে জানাতে ভুলবেন না।ধন‍্যবাদ)