জলফড়িং পর্ব-০৩

0
340

#জলফড়িং
#রোজা_ইসলাম
#পর্ব ৩

—” কি হলো মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে কী ভাবছিস? ফোনটা এদিকে দে! নিশ্চয়ই তুই কোনও গন্ডগোল পাকাচ্ছিস ইরা! ”

ইরার হঠাৎই কী হলো আদিকে ভয় পাওয়ার বদলে প্রতিবাদী হয়ে উঠলো মন, মস্তিষ্ক৷ নরম কোমল দেহখানা কেঁপে কেঁপে উঠছে৷ কিয়ৎক্ষন চুপ করে থেকে আকস্মিক উচ্চস্বরে শক্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,

—” আমি ছোট্টো বাচ্চা নই তুমি আমার ফোন দেখতে চাইবে৷ তাছাড়া আমি একজন মেয়ে আমার পার্সোনাল বলতে কিছু আছে। আমি কিছুতেই তোমাকে আমার ফোন দেখাবো না! ”

আদি কল্পনাতেও ভাবেনি ইরা ওর সাথে এভাবে কথা বলতে পারে। মাথাটা ধপ করে অগ্নিশিখার মতো জ্বলে উঠেছে ওর।রাগ সংযত করতে পারলো না। রেগে শীতল বলিষ্ঠ হাতে ইরার ডান বাহু চেপে ধরে রাশভারী কণ্ঠে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

—” ভুলেও আমার সঙ্গে চেচিয়ে কথা বলবিনা ইরা। তাহলে খুব একটা ভালো হবে না। আমি সব বুঝি! নিজের ভাইয়ের মতো গন্ডগোল পাকাচ্ছিস না তুই? আমি তোকে মনে করিয়ে দিচ্ছি তোর ভাইকে কিভাবে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এই বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো৷ তোর অবস্থাও ঠিক তেমনি হবে৷ ওয়ার্নিং দিচ্ছি ভালো হয়ে যা। তানা হলে তোর অবস্থাও তোর ভাইয়ের মতো করতে আমি একবার ভাববো না।”

ইরা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ঝারা দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো আদি বলিষ্ঠ হাতের বন্ধনী থেকে। রাগে থরথর করে কাঁপছে ওর শরীর। ভাইয়ের করুণ, কঠিন, তিক্ত সময়ের কথা চিন্তা করে ও হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলল। অতিরিক্ত রাগ, ক্রোধ নাকি মানুষকে পাগল করে তোলে। তেমনটাই সত্যি করে ইরা হুট করে অট্টহাসিতে ফেঁটে পরলো। হাসতে হাসতেই ক্ষীপ্ত কণ্ঠে বলল,

—” আবরার আদিত্য, আপনি তবে শিকার করেই নিলেন আপনি আমার ভাইকে ইচ্ছে করে এই বাড়ি ছাড়া করেছেন! আপনি চাইলে পারতেন বড়বাবা ছোট বাবাকে বুঝাতে। ভাইয়াকে অন্তত এই বাড়িতে রাখতে পারতেন! কিন্তু আপনি আগুনে ঘি ঢেলেছেন। ভালো সেজে…! ”

আদি খানিকটা ভড়খে গেলো, চমকে উঠলো যেন ইরার কথায়। তৎক্ষনাৎ কথার মাঝখানেই ওকে থামিয়ে কণ্ঠ খাদে নামিয়ে নরম গলায় বলল,

—” তুমি ভুল ধারনা নিয়ে বসে আছো ইরা। আমি কথাটা রেগে বলেছি মাত্র। আব্বু, ছোটো বাবার রাগের কাছে তখন আমারো কিছু করার ছিলো না রাহুলের জন্য। এমনতো নয়, আমার কাজিন ভাই, আমার শত্রু যে আমি ওকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবো। ”

ইরা হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো আদিকে। আঁখিপল্লব ঝাপটিয়ে কান্না রোধের চেষ্টা করলো। হলো কই? অশ্রুসিক্ত চোখে আদির দিকে কঠিন দৃষ্টি ছুঁড়ে শক্ত কণ্ঠে বলল,

—” আমাকে বোঝাতে হবে না। আমিও বাচ্চা নয়ই সব বুঝি। তুমি শুধু সবার কাছে ভালো সাজতে চাও। আসলে তুমি একটা বাজে ছেলে। আমি তোমাকে কখনও ক্ষমা করবোনা। আমার আম্মুর লুকানো চোখের জলের হিসেব হলেও তোমাকে একদিন দিতে হবে। আর হ্যাঁ তোমাকে ভাই বলতেও আমার ঘৃণা লাগে। তুমি একদম আমার ব্যাপারে নাক গলাবানা। একদম না!”

ইরা আদিকে একটি বাক্য বলার সুযোগ না দিয়ে ধুপ-ধাপ পা ফেলে নিচে চলে গেলো৷ আদি হতভম্ব হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো৷ এতদিনে আদি বুঝতে পারলো ইরা তাকে কেন টলারেট করতে পারেনা৷ ওকে মানতে চায় না। ওর শাসনেও কেন রেগে যায় আদরেও কেন নিজেকে গুটিয়ে রাখে। ইরার মনে ওর জন্য এমন জঘন্য ক্ষোভে, ক্রোধে জর্জরিত ছিলো আদির ধারণার ও বাহিরে! আদি জোরে জোরে কিছুক্ষণ শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো। অন্তস্থল জুড়ে কী যেন পুড়ছে! ধীর পায়ে এগিয়ে রেলিং এর উপর উঠে বসলো৷ কেন যেন এক্ষুণি গিয়ে রাহুলকে ফিরিয়ে আনতে ইচ্ছে করছে৷ তাছাড়া ছোট মাও যে রাহুলেও জন্য লুকিয়ে কাঁদে তার বিন্দু মাত্র ধারণা আদির ছিলো না। কেন না উপর দিয়ে’তো রাহুরের নাম ও কেউ শুনতে চায় না বাড়িতে। ইরার ওকে ভুল বুঝার কারণ খুঁজে না পেলেও। মেয়েটার মুখে ওর জন্য ঘৃণ্য বানী ও সহ্য করতে পারছেনা কেন জানি!

তবে ইরা যদি জানতো রাহুলের প্রতি রাগ ছুঁটে যাওয়ার পর কত খুঁজেছে ও রাহুলকে। তাহলে হয়তো ইরার ওর প্রতি রাগ কিছুটা হলেও কমতো। আদি দীর্ঘশ্বাস ফেলল৷ ইরা যে কিছুতেই বিশ্বাসি করতোনা! আদি রাহুলকে খুজেছে। ইরার আজকের অভিব্যক্তি তাই বলে। তাই এই কথাটা আর ইরাকে বলা হলো না!

আদির রাত নির্ঘুম কেটে গেলো৷ আবারো একটি নতুন সকাল জেগে জেগেই উপহার পেলো। সকাল সকাল যে যার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরলো বাড়িতে৷ আদি রুম থেকেই শুনতে পাচ্ছে। নিচে মা চাচি কিচেনে নাস্তা বানাতে ব্যাস্ত। হাতে হাতে কাজের ফাঁকে কাজের খালার সাথে নানা আলোচনায় মেতে। এ বাড়িতে যে যতই ব্যাস্তই থাকুক না কেন। ব্রেকফাস্ট, ডিনার বাড়ির সবাই এক সাথে বসেই করে। ওরা জয়েন ফ্যামিলি আদির বাবা রাহুলের বাবা দুই ভাই। আদির বাবা বড় রাহুলের বাবা ছোট। দুই জনেই ভাই বলতে অজ্ঞান। তাই তো কখনও সংসার আলাদা হয়ে যাবে সেটা কল্পনাও করেনি। এই যুগেও দিব্বি একবাড়িতে এক হাড়িতে ওদের জীবন সুন্দর ভাবেই চলছে। তবে গোটা বছরই যে ঝামেলা মুক্ত পরিবার থাকবে তার ও কোন ভিত্তি নেই৷ তেমনি এক ঝামেলায় রাহুল হয় বাবা, চাচার রাগের বসে বাড়ি ছাড়া। যদিও ভুলটা রাহুলেরি ছিলো।

বাড়ির সবাই ৮ টার মধ্যেই ডাইনিং এ উপস্থিত। তবে রোজকার রুটিন অনুযায়ী ইরা সব সময়কার মতো লেট। যদিও আগে এমন ছিলো নাই। বড় ভাই বাড়ি ছাড়া হওয়ার পর থেকেই কিছুটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মেয়েটা। সারা রাত কেঁদে কুঁটে যাচ্ছে তাই অবস্থা হয়ে গিয়েছে ওর এলার্মের তীব্র শব্দে কোন রকম চোখে মুখে পানি দিয়ে ডাইনিং এ হাজিরা দিতে এসেছে এমন ভাবে এসে চেয়ার টেনে ধপ করে বসলো মীতির পাশে৷ এদিকে মীতি তখন কলেজের জন্য একদম পরিপাটি হয়ে তৈরী।

ইরা চলে আসায় পত্রিকা ছেড়ে আদি, আজমল, আজিম তিন পুরুষ খানায় হাত দিলেন৷ তবে ইরার বাবা আজিমের চোখে মুখে তীব্র অসুন্তুষ্টি। স্ত্রীর দিকে রাগি চক্ষু মেলে চাইলেন৷ স্বামীর রাগ দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়ের দিকে চাইলেন নীলা। মেয়ের চোখে মুখের অবস্থা নাজেহাল। আগ্রহহীন হাতে সামান্য রুটি ছিড়েখুঁড়ে একটু একটু মুখে তুলছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে খানায় তার তীব্র অনিহা, অনিচ্ছা!

ইরা ঘুম থেকে উঠেই তেমন খেতে পারেনা। তবুও বাড়ির সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করে এবং এটাই এক প্রকার বাড়ির নিয়ম বলেই মূলত ওর খেতে হয়। সেটা ওর বাবা কখনওই বুঝতে পারেনা। বরং ওর খামখেয়ালিপূর্ণ আচরণের জন্য রাগ দেখান স্ত্রীর সাথে। ইরা সেটা জানে বুঝে তবে পাত্তা দেয়না৷ বাবা যেহেতু ওকে বুঝেনা। ও নিজেও বুঝতে চায়না বাবাকে। এদিকে দুদিকের বেড়াজালে পিষ্ঠ হোন এক অসহায় মা, নিরীহ স্ত্রী!

আজমল খাঁন ইরার বাবার দিকে একবার চেয়ে। ইরার ফুলে যাওয়া চোখে মুখে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে নজর বুলিয়ে। মোলায়েম আদুরে কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” মন ভালো না আম্মুর? ”

ইরা বড়বাবার কণ্ঠে প্রথমে চমকে উঠলেও পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলাতে মিষ্টি হেসে ঘুম ঘুম সুরে বলল,

—” না-তো বড়বাবা৷ কাল এসাইনমেন্টের চাপে একটু ঘুমুতে দেড়ি হয়ে গিয়েছিলো এই যা। ”

আজমল খাঁন পুনরায় আদুরে কণ্ঠে বললেন,

—” ঘুম বাদ দিয়ে একদম পড়াশোনার প্রয়োজন নেই। আগে শরীরের প্রতি যত্নশীল হয়ে পরে সব করবে! মনে থাকবে? ”

ইরা ম্লানমুখে হেসে বলল,

—” একদম মনে থাকবে বাবা।”

এদিকে ওদের কথপোকথনে ভ্রু কুঁচকে চাইলো আদি৷ কী দারুন মিথ্যে বলে যাচ্ছে মেয়েটা। আদি শীতল চোখে মুখে একবার ইরার দিকে চাইলো। দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো, তাতে ভীষণ রকম ভরখে গেলো ইরা। দ্রুত চোখ নামিয়ে খানায় ব্যাস্ত হলো! এবার ভয়ে ঘপাঘপ খাচ্ছে ও। মুখভঙ্গির সাথে হাত-পাও চঞ্চল হলো! এতো সময়ের খামখেয়ালীপনা আর নেই শরীরে মনে!

ওর এহেন নাস্তানাবুদ অবস্থা দেখে মনে মনে বেজায় হাসলো আদি। মেয়ে মানুষ আসলেই ন্যাকা। আদর পেলে একদম গদগদ! সত্যি মিথ্যে দিয়ে পার পেয়ে যায় কী সুন্দর। এবাড়িতে আজমল খাঁন বাড়ির বড় কর্তা সব থেকে বেশি আদর করে ইরাকে! হ্যাঁ সেটা নিজের মেয়ের থেকেও বেশি বললে ভুল হবেনা। ইরার জন্য এটা ওর প্লাস পয়েন্ট। অন্য দিকে মীতিকে আদর করে ইরার থেকেও বেশি ইরার বাবা। এ নিয়ে হিংসের শেষ নেই ইরা, মীতির মধ্যে। তবে সেটা নিতান্তই খনিকের জন্যে, এমনিতে বোনের জন্য জান দিয়ে দিবে একে অপরের। মীতি’তো রীতিমতো ইরা বলতে অজ্ঞান। আদি এ বাড়ির সবারি কলিজা শুধু মাত্র ইরা বাদ দিয়ে। আদির মতো রাহুল ও এবাড়ির সবার পছন্দের চাঁদ ছিলো। এবাড়ির সব থেকে প্রাণবন্ত, হাস্যোজ্জ্বল সন্তান রাহুল। যেখানে আদি বেজায় গম্ভীরমুখ নম্র ভদ্র ছেলে। ইরা মীতিও তেমন দুষ্টু প্রকৃতির ছিলো না। তবে ইরা মোটামুটি মিশুক হলেও, মীতি একদম চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে৷ মোটেও সবার সাথে মিশুক নয়। তবে যাদের সাথে ওর সখ্যতা তাদের সাথে বক বক করে দিন পার করে দিতে পারবে। ওদের সবার বিপরীতে ছিলো শুধু রাহুল। চঞ্চলতার বাধভাঙ্গা ছেলেটা সর্বদা বাড়ি মাতিয়ে রাখতো। যেমন দুষ্ট প্রকৃতির ছিলো, তেমন মানুষকে সহায্য, প্রয়োজনে আসতে ভীষণ পছন্দ করতো। এর জন্যে এলাকায় ওর নাম ডাক ও ছিলো বেশ। কিন্তু ওর একটা ভুল সব কেড়ে নিলো। এ নিয়ে সবার মনে দুঃখ, আফসোসের শেষ নেই তবে সেটা কেউ মুখে প্রকাশ করে না।

খাওয়া দাওয়া শেষে। মীতিকে নিয়ে বেরিয়ে যায় আদি। যেহেতু ইরা রেডি হয়নি এখনো তাই ওকে নিয়ে যেতে পারেনি। কলেজ ভার্সিটি এক সাথে হওয়ার পরেও, ব্যাপারটায় আজিম ভীষণ অসুন্তুষ্ট। ক্ষীপ্র মেজাজে মেয়েকে সামান্য বোকাঝোকা করতে নিলেই থামিয়ে দিলেন আজমল৷ ইরা পরিস্থিতি বুঝে কোনও রমক মুখ লুকিয়ে চলে এলো রুমে দ্রুত রেডি হয়ে নিলো হাত চালিয়ে! ফোনে যোগাযোগ করে নিলো নিজের ফ্রেন্ডেদের সাথে। তন্মমধ্যে একজন ওকে নিতে এসেছে যে কিনা এখন ওর বাড়ির সামনে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ওকে নিয়ে যাবে বলে৷ ইরা দ্রুত মায়েদের থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

রিকশায় বসে অপেক্ষায় দিয়া ইরার বাড়ির দিকে চেয়ে খানিক উঁকিঝুকি মারলো। ইরা রিকশায় উঠতেই দিয়ার কৌতুহলী সুরে প্রথম প্রশ্ন,

—” কিরে আদিত্য ভাইয়া কইরে অনেক দিন দেখিনা!”

ইরা ব্যঙ্গ করে চেঁচিয়ে বলল,

—” আহারেইই.. অনেক দিন দেখিনা। এই! এই তুই ঐ খবিশরে দেখে কী করবি। আর যদি দেখছি না আমি আদির নাম তোর মুখেও আনতে খবর আছে! একদম খুন কইরা লামু। কিছুতেই তোরে আমি ঔ লেঙু ইঁদুরের প্রেমে পরতে দিমু না।”

রেগে-মেগে দিয়ার মাথায় গাট্টা মেরে ক্ষ্যান্ত হলো ইরা। দিয়া ভুল করেও আর কিছু বলার সাহস করলো না। ইরার ভাষ্যমতে ও কিছুতেই দিবে না নিজের বেষ্টফ্রেন্ডকে এমন খবিশের প্রেমে পরতে। চেহারা সুইট হলে কী হবে৷ আদিযে কয় নাম্বার খবিশ সেটা ইরার থেকে ভালো কে জানে?

____________

কাল সামান্য ব্যাস্ত দিন পার করেছে রাদ। তাছাড়া ইরাকে বেশকিছু দিন পর এক নজর দেখতে পেয়ে রাতে ক্লান্ত, অবিশ্রান্ত শরীরে বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে পরেছে ও। বড্ড ভালো ঘুম হয়েছে ওর আজ। কিন্তু সকাল সকাল ফোন হাতে নিতেই মাথায় বজ্রপাত হলো ওর ইরার টেক্সট দেখে। ইরার ব্রেকআপ মার্কা বার্তা দেখে থমকে রইলো রাদ কিয়ৎক্ষন! মনের ভেতর থাকা তীব্র অভিমান গাঢ় থেকে গাঢ় হতে থাকলো। রাগে ওর চোখে পানি চিকচিক করতে লাগলো৷ তবে রাদ রাগের বহিঃপ্রকাশ করতে বরাবরের মতোই ব্যার্থ। অন্যকেউ হলে হয়তো ফোন দিয়ে কিছু উল্টো পালটা কথা শুনিয়ে ক্ষ্যান্ত হতো এতক্ষণে। কিন্তু এটা ইরা। ও কখনও পারে ইরাকে একটা ধমক দিয়ে কথা বলতে আজও পারবেনা। দাঁতে দাঁত চেপে একদম শান্ত, নির্লিপ্ত, নিশ্চুপ, নির্বিকার হয়ে বসে রইলো।

কিছু প্রহর অতিবাহিত হলো নিরবে।একটা দীঘশ্বাস ফেলে রাদ আস্তে করে ফোনটা সাইড টেবিলে রেখে। ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বাহিরে বের হলো৷ দেখলো কাশিশ আর ওর মা জননী মিলে খোশগল্পে মেতে।

কাশিশ ওর সাথেই থাকে৷ কাশিশের বাড়ি মূলত ঢাকায়। অন্যদিকে রাদের জন্মস্থান রাজশাহী। রাদের বাবা নেই। মা ওর সব৷ এই ফ্ল্যাটটা ও ইরা এবং মায়ের সাথে দেখা ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়েই কিনেছিলো দুবছর আগে। ফ্ল্যাটটা যথেষ্ট বড় হওয়ায়। কজেল, ভার্সিটি থেকে শুরু হওয়া বেষ্ট ফ্রেন্ডকে কিছুটা জোর করেই এই ফ্ল্যাটে তুলে রাদ৷ কেননা বছর খানেক আগে কাশিশের একটা সরকারি জব হয়েছিলো হুট করেই রাজশাহীতে।

অতঃপর দুইবছর যাবত কাশিশ এখানেই থাকে। ওর মার জুহার আরেক ছেলে এবং ওর ভাইয়ের মতো। জুহা কাশিশ দুজনের কড়া সম্পর্ক। যেন সত্যি সত্যি মা-ছেলের সম্পর্ক ওদের৷ কেউ সত্যি না জানলে বলবেই না ওদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক নেই।

রাদ নিঃশব্দে গিয়ে দুজনের পাশে বসলো। কেউ ওকে পাত্তা দিলো না। তবে ওদের মাথা বজ্রপাত ফেলে রাদ আচমকা বলল,

—” মা আমি আর সময় নিবো না। তুমি যার সাথে খুশি আমার বিয়ের কথা ভাবতে পারো৷ আমি আপত্তি করবো না। ”

ওরা নিজেদের গল্পে মেতে ছিলো। কিন্তু হুট করে বলা রাদের কথায় দুইজন বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে চাইলো। জুহাদ চোখে মুখে অবাকের চিহ্ন হলেও সেটা খুশির বুঝা গেলো। কিন্তু কাশিশ ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলো রাদের গম্ভীর অনুভূতিশূন্য মুখে। এটা যে ওর মনের কথা নয় আর কেউ না জানুক কাশিশ ভালো জানে। তবে রাদের এই সিদ্ধান্তের কারণ কী হুট করে? যে ছেলে ইরার জন্য তিন বছর ধরে মায়ের থেকে সময় চাইছে মুখ ফুটে কিছু বলেনি। সে কেন এত সহজে ইরাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ের কথা বলছে।

কাশিশ বুঝলো ইরা কোনও গণ্ডগোল নিশ্চয়ই করেছে। এদিকে জুহা খুশিতে আপ্লুত, ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে চুমু খাওয়া শেষ৷ জুহার এহেন খুশি দেখে কাশিশ মেকি হেসে নিজেও খুশি হয়েছে তাই বুঝালো৷ রাদ সকাল সকাল বোম ফাটিয়ে এখন বোবা মূর্তি!

__________

ক্লাস শেষে ইরা তখন রিকশায় করে বাড়ি ফিরছিলো। ফোনে টুংটাং শব্দে হাতে থাকা ফোনটার লক লুখে ম্যাসেজ চেক করতেই শ্বাসপ্রশ্বাস দীগুণ হয়ে গেলো, অন্তস্থল কেঁপে উঠল, ধীরে ধীরে সর্বাঙ্গে কাঁপন সৃষ্টি হয় ওর। পরপর পুরো ম্যাসেজ পরে ও বিমূঢ়!

ম্যাসেজে সুন্দর ভাষায় ব্যঙ্গ করে লিখা!

—” ইরা ম্যাডাম ভালো আছেন? আমি জানি ভালো আছেন। আরও ভালো থাকতে আপনার বাসার ঠিকানাটা দিবেন প্লিজ ম্যাডাম কেমন? আপনার বয়ফ্রেন্ডর বিয়ে ঠিক হয়েছে ম্যাডাম দাওয়াত দিব আর কী আপনাকে৷ বিরিয়ানি খেতে চলে আসবেন ম্যাডাম। মন মেজাজ আরও ভালো হয়ে যাবে তাতে। ঠিক বলছি না ম্যাডাম? ”

চলবে!