জলফড়িং পর্ব-০৪

0
353

#জলফড়িং
#রোজা_ইসলাম
#পার্ট ৪

কাশিশের গাড়িতে পাশাপাশিই বসে ইরা, রাদ। রাদ এক ধ্যানে জানালা ভেদ করে বাহিরে তাকিয়ে নির্মল,ঝলমলে বিকেল দেখতে ব্যস্ত৷ এই তো কিয়ৎক্ষন পর সুর্য টুপ করে ডুবে যাবে আকাশের বুকে। হারিয়ে যাবে, বিলিন হয়ে যাবে কয়েকটি ঘণ্টায় জন্যে। কিছু নাম জানা পাখি ঝলমলে, পরিষ্কার, স্বচ্ছ নীল আকাশে উঁড়ে বেরাচ্ছে৷ রাদ ধ্যান জ্ঞান দিয়ে সেসব দেখতেই ব্যস্ত।

ইরা অসহায় হরিণের ন্যায় রাদের দিকে তাকিয়ে। পাক্কা এক ঘণ্টা হতে চলল তারা চুপচাপ বসে৷ রাদ এমন ভাবেই বিকেল উপভোগ করছে যেন ওর পাশে কেউ নেই এই মুহূর্তে! ইরা ভেবেছিলো রাদ অন্তত পক্ষে ওকে দু’চারটা শুনাবে। কিন্তু না এমন কিছু হচ্ছে না। যা হচ্ছে সব ওর ভাবনার বিপরীতে। ইরার পক্ষে নিরব থাকা একটুকুও সম্ভব হলো না। ব্যথিত গলায় মন্থর গতিতে নিচু স্বরে বলে উঠলো,

—” কথা বলবে না রাদ!”

ইরা’র এমন করুণ স্বর যদিও রাদের কোনও কালেই পছন্দ না। এভাবে কথা বললে রাদ কক্ষনই রাগ করে থাকতে পারেনা ইরা’র উপর৷ কিন্তু আজ মন নরম করলে চলবেনা৷ যদি শক্ত মন থেকে ইরা’কে সারাজীবনের জন্য পাওয়া যায়। রাদ সারাজীবন এভাবেই শক্ত মন নিয়ে ইরার সামনে বসে থাকতে পারবে! স্তম্ভিত রাদ গম্ভীর মুখে বিনা প্রত্যুত্তরে বসে রইলো। ইরা রাদের দূর্বলতার সুযোগ নিবে ভেবেছিলো। রাদকে নিশ্চুপ বসে থাকতে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এবার যে অভিযোগের পাল্লা ভীষণ ভাড়ী বুঝতে পারলো৷ তবে এভাবে হাল ছাড়লে তো চলবেনা! শেষ চেষ্টা করেই যাবে ও৷ চোখ দু’টো জ্বলজ্বল করে উঠে ওর। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে অত্যন্ত করুণ কণ্ঠে বলল,

—” তুমি নাকি বিয়ে করছো? ”

রাদের এবার ভয়ংকর রাগ হলো। এই কথা জানার জন্য ইরা এত প্ল্যান করে ওকে এখানে এনেছে? এই কথা বলার জন্য! মেয়েটা এখনও অবুঝ কেন সাজছে এভাবে? রাদ ভীষণ রেগে গেলো কন্ট্রোলে না আসা রাগ যাকে বলে। অর্থাৎ ওর রুক্ষ কণ্ঠে ত্যাড়া জবাব,

—” যা শুনেছো তাই! বিয়ে করছি আমি তো? কেন ডেকেছো সেটা বলো। এসব তোমার না জানলেও চলবে!”

ইরা’র চক্ষে জ্বলজ্বল করতে থাকা অশ্রুবিন্দু গুলো এবারে বর্ষণের রূপ নিলো। হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে দ্রুত শুধালো,

—” এতো নিষ্ঠুর হইও না প্লিজ! এমন কেন করছো? মানছি আমি.. আমি ভুল করেছি। তাই বলে তুমি…..!”

রাদ ইরাকে সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই গম্ভীর ধাঁরালো স্বরে বলল,

—” ওহ্, তাহলে দু-সাপ্তাহ বাদে তুমি ফিল করতে পেরেছ তুমি ভুল করেছ? ইউ আর সো ফার্স্টার ইরা!”

ইরা মাথা নিচু চক্ষুদ্বয় বেয়ে মুক্তদানার ন্যায় অশ্রুজল গুলো মুছে নিলো। বড় বড় শ্বাস ফেলে তৎক্ষনাৎ মাথা ঘুরিয়ে বাহিরে তাকালো৷ ভীষণ কষ্ট হচ্ছে বক্ষস্থলে। ইরা’র কান্না সহ্য করতে না পেরে রাদ নিজেও আর কিছু বলল না। দাঁতে দাঁত চেপে নিস্তব্ধ গাড়িতে বসে রইলো দুজন মানব-মানবী! কিয়ৎক্ষন নিরবতার ভগ্ন করে আচমকা ইরা মুখ খুললো। চেপে রাখা কান্নাটা সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে এলো! ফুঁপিয়ে উঠে ক্রন্দনতর কণ্ঠে বলল,

—” রাদ আমি কিছুতেই তোমার কথা বাসায় বলতে পারবো না। আমার মধ্যে এতোটুকু সাহস নেই বাবা অথবা মা’কে তোমার কথা বলতে পারবো। প্লিজ আমাকে একটু বুঝো…!”

বাক্যটি সম্পূর্ণ বলতে পারলো না ইরা দু’হাত মুখ চেপে হু হু করে কেঁদে উঠলো। রাদের যেন আর কিচ্ছুটি বলার ভাষাই রইলো না। বিলপার থেকে ড্রাইভ করতে শুরু করলো উদ্দেশ্যে ইরা’র বাড়ির তিন রাস্তার মোড়৷ প্রায় আধ ঘণ্টা ইরা এখনও কেঁদেই যাচ্ছে। ইতিমধ্যে মুখশ্রী রক্তিম আস্তরণে ঢেকে গেছে। চোখ দু’টো কিঞ্চিৎ ফুলে গেছে। রাদ ইরা’র বাড়ি থেকে একটু দূরে গাড়ি থামিয়ে। শীতল, শান্ত কিন্তু অত্যন্ত গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

—” তোমাকে আমার বার বার বলা একটাই কথা! বাসায় আমাদের কথা জানাও ইরা! ইরা! ইরা! কিন্তু বরাবরই বিষয়টা এড়িয়ে যেতে তুমি৷ শেষে রেগে গিয়েছিলাম আমি। দুসাপ্তাহের সাময়িক বিচ্ছেদ৷ আমার বিয়েতে রাজি হওয়া। এসবের পরেও আজ আচমকা তোমাকে দেখে আমি কী ভেবেছিলাম তুমি জানো ইরা? তোমার সেই করুণ, মিষ্টি কণ্ঠে বলবে রাদ আমি ভয় পেতাম তখন তোমার কথা শুনে। কিন্তু আমি চেষ্টা করবো। আমি চেষ্টা করবো আমাদের কথা বাসায় বলার।
তুমি জানো ইরা, অন্ততপক্ষে তোমার মুখে এটুকু কথা শোনার পর তোমাকে সারাজীবনের জন্য না পেলেও আমার কোনও আফসোস থাকতো না। কিন্তু আজ ইরা! আজ থেকে আমার বড্ড আফসাস থাকবে ইরা আমি তোমার মতো একটা ভীতু মেয়েকে নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবেসেছি। যার মধ্যে এতটুকু শক্তি নেই নিজের ভালোবাসার সীকারোক্তি করার৷ তুমি একবার চেষ্টা টুকুও করে দেখেনি ইরা! আই জাস্ট কান্ট বিলিভ….!”

রাদ বাক্য সম্পূর্ণ করতে পারলো না, যেন ইরার প্রতি নিজের ঘৃণা প্রকাশ করার মতো আর কোনও ভাষা ওর মস্তিষ্ক, মনে কোথাও নেই। ইরা পুরোটা সময় শব্দ করে কাঁদছিল। রাদের কথা গুলো ওকে আরও নড়েবড়ে করে দিলো৷ দিশেহারা হয়ে পরলো ও। ভিতর বাহিরে এলোমেলো ইরা রাদের ডান বাহু আচমকা খামচে ধরে কিছু বলার নিমিত্তে তবে ভাগ্য সায় দিলেন না। রাদ আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো,

—” গেট আউট!”

রাদের খামচে ধরা বাহু। রাদের চিৎকারের শব্দে ভয়ে ততক্ষনাৎ ছেড়ে দিলো ইরা৷ রীতিমতো মতো ভয়ে লাফিয়ে উঠেছে আচমকা ধমকে! থমকে গেছে ও, স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো রাদের অত্যন্ত গম্ভীর মুখশ্রীর দিক। এই প্রথম রাদ চেঁচিয়ে কথা বলছে ইরার সাথে। আন্দাজ করা যায় কতটা কষ্ট পেয়েছে আজ রাদ৷ যেই ছেলে ওর করুণ কণ্ঠ শুনতে নারাজ সেই ছেলে আজ চেঁচাচ্ছে ওর উপর! ভাবতেই ইরার কষ্ট হাজার গুণ বাড়লো। বক্ষস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে গেলো! রাদ কিয়ৎক্ষন চুপ থেকে আবারো চিৎকার করে উঠলো,

—” আই সেইড গেট আউট ইরা!”

ইরা ক্রন্দনরত মলিন স্বরে পুনরায় ক্ষীন আওয়াজে বলল ,

—” তুমি এভাবে আমাকে কাঁদাতে পারো না রাদ। এত নিষ্ঠুর হইও না রাদ আমি আর পারছিনা। ”

রাগে রাদের চক্ষুদ্বয়ের শিড়া গুলো ইতিমধ্যে রক্তিম আবিরে ছেঁয়ে গেছে। সেই রোষানল দৃষ্টিতে ইরার ক্রন্দনরত মলিন চক্ষুদ্বয়ে চোখ রেখে। রাগে এক প্রকার কাঁপতে কাঁপতেই গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

—” যাকে সারাজীবন হাসানোর অধিকার আমাকে দেওয়া হয়নি। অন্তত চেষ্টা টুকুও করা হয়নি। তাকে কাঁদানোই উচিৎ। তুমি কাঁদো ইরা তুমি কাঁদলেও বরং আমার শান্তি৷ অন্তত এটুকু কান্না আমার জন্য এটা ভেবেও আমি সারাজীবন সুখ খুঁজে নিব! ”

_____________

রাত ১০টা, রাদ বাড়ি ফিরে ইচ্ছে মতো কলিংবেল চাপছে। যেন এতটুকুও ধৈর্য্য ওর মধ্যে অবশিষ্ট নেই।

কলিংবেলের তীব্র শব্দে নিস্তব্ধ ফ্ল্যাটে যেন মুহূর্তে ঝড় উঠে গেলো। জুহা কিচেনে কাজ করছিলো গুরুত্বপূর্ণ৷ এমন ধৈর্য্যহীন ভাবে কলিংবেলের শব্দে দ্রুত নোংরা হাত আঁচলে মুছতে মুছতেই ছুটলো দরজার দিক৷ দরজার নব ঘুরাতেই রাদ দরজা ঠেলে বেতরে প্রবেশ করলো। জুহা দরজার কল্পনাতেও আশা করেনি কেননা এভাবে কলিংবেল বাজানোর অভ্যাস ভুলেও ওর নেই। জুহা হতভম্ব ছেলের আকস্মিক এহেন আচরণে৷ রাদ তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে উঠলো,

—” কাশিশ কই মা? কই ও! দ্রুত উত্তর দাও না কেন!”

জুহা নিজের শান্ত গম্ভীর ছেলেকে এমন অশান্ত, অস্থির, অধৈর্য্য রূপ দেখে দ্রুত উত্তর দিতে পারলেন না। এমন রাদকে জুহা আগে কখনও দেখেননি৷ যার চোখে মুখে রোষাগ্নি, হিংস্রতার আভাস। অবশ্য রাদ উনার জবাবের অপেক্ষাতেও নেই। সে ছুটে তেড়েমেড়ে তখনি কাশিশের রুমে চলে গিয়েছে৷ জুহা তখনও দরজার সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে! উনি এখনো ছেলের এহেন আচরণ মেনে নিতে পারেননি! কিছুক্ষণ পর জুহা হুঁশ ফিরে পায়। কাশিশের রুম থেকে ভেসে আসা চিৎকারের শব্দে। ছুটে রুমে গিয়ে দেখেন রাদ কাশিশের নাক বরাবরই হয়তো ঘুষি বসিয়ে দিয়েছে। কাশিশে নাক বেয়ে র/ক্ত গরিয়ে পরছে। তাজা রক্তে ওর হাত, শার্ট ভিজে চিপচিপে গেছে মুহূর্তে! সেদিকে কোনও ধ্যান জ্ঞান কিছুই নেই রাদের সে রাশভারী কণ্ঠে চেঁচিয়ে একনাগারে বলে যাচ্ছে,

—” তুই কেন আমাকে মিথ্যে বলে ওখানে পাঠালি। তুই কেন ইরার সাথে আমার দেখা করালি। নিষ্ঠুর মেয়েটা আমার শেষ আশাটুকু ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে এসেছিলো। তুই কেন ওর কথা শুনলি। আজ আমি তো/কে মে/রেই ফেলবো। ”

কথা গুলো বলার সময় হাত চালাচ্ছে রাদ এলোপাতাড়ি আঘাত করছে কাশিশকে৷ জুহা দৌড়ে ছেলেকে ছাড়াতে পেছন থেকে ওকে টানছে৷ কিন্তু রাদ থামছে না। অবাক করার বিষয় কাশিশ নিজেও নিজেকে সেইফ করতে রাদের থেকে দূরে যাচ্ছেনা৷ এসব দেখে হাঁপিয়ে জুহা চিৎকার করে রাদের পিঠে চড় বসিয়ে দিলেন!

—‘ রাদ থাম তুই। মেরে ফেলবি ছেলেটাকে? ”

মায়ের গলা এতক্ষণে যেন রাদের কানে পৌঁছাতে সক্ষম হলো। রাদ থেমে গেলো। রীতিমত হাঁপাচ্ছে রাদ। রাদের আক্রমনাত্মক হাত থেকে ছাড়া পেতেই কাশিশ ফ্লোরে ধপ করে বসে গেলো৷ রাদকে থামতে দেখে জুহা রুমের বাহিরে চলে গেলো৷ রাদ সেদিকে একবার তাকিয়ে৷ নিজেও ফ্লোরে বসে পরলো৷ আড়চোখে কাশিশের দিকে এক নজর তাকিয়ে ভীষন অপরাধবোধে, দ্বিধাদ্বন্দ্বে পরে গেলো৷ কাশিশকে ধরবে কী না। যদি ওকে ধরতে না দেয়! না ধরেও উপায় নেই কেননা ওর নাক মুখ বেয়ে রক্ত পরছে৷ অথচ কাশিশ চুপচাপ বসে এতে যেন রাদের অপরাধবোধ দ্বীগুণ হলো। শেষে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে আস্তে করে কাশিশের কাধে হাত রেখে ধীরে ফিসফিস করে কাতর কণ্ঠে বলল,

—” বেশি ব্যথা করছে?”

রাদের কথাটা কেমন বাচ্চাসুলভ শুনালো। যদিও এই মুহূর্তে রাগ করা উচিৎ কিন্তু কেন যেন কাশিশের ভীষন হাসি পেল৷ তবে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখালো না। চুপচাপ বসে রইলো। এতে উদ্বিগ্নতা বেরে গেলো রাদের অস্থির কণ্ঠে বলল,

—” চল হসপিটাল যাই অনেক রক্ত পরছে। ”

জুহা প্রাথমিক চিকিৎসার যা যা বাসায় ছিলো সব নিয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতে রাদের কথা শুনে কক্ষাট্ট করে গম্ভীরমুখে বলল,

—” এত দয়া দেখাতে হবে না। একটা মেয়ের জন্য যে কিনা বেষ্টফ্রেন্ডের গায়ে হাত তুলতে পারে এমন ছেলে আমার চাইনা৷ বেরিয়ে যা এই রুম থেকে৷ এক্ষুণি যা। আমার ছেলের আশেপাশেও যেন তোকে না দেখি৷ ”

রাদকে প্রায় ঠেলে জুহা উঠানোর চেষ্টা করলো কাশিশের পাশ থেকে কিন্তু পারলো না। সে শক্ত হয়ে বসে৷ অতঃপর না পেরে রাদ’কে ফেলেই কাশিশের রক্ত পরিষ্কারে ব্যাস্ত হলেন জুহা। কাশিশের তাতে ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে যাচ্ছে।

রাদ এসব চেয়ে চেয়ে কিছুক্ষণ দেখে বুঝলো হসপিটাল যেতেই হবে রক্তপরা কমছেই না। তড়াক করে উঠে দাঁড়ালো ও। এবং কাশিশের হাত টেনে উঠিয়ে৷ টানতে টানতে নিয়ে বের হলো ফ্ল্যাট থেকে। জুহা আর কিছু বলল না। বুঝতে পারলো হসপিটাল যাচ্ছে। উনি এবার খালি রুমে শব্দ করে কেঁদে ফেললেন৷ আজ তিনি বুঝতে পারলেন তার ছেলের চাপা কষ্টের কারণ।

_________

কাশিশ কাল সেই ম্যাসেজ করায়। ইরা দ্রুত তার সাথে যোগাযোগ করে৷ কাশিশ একমাত্র ব্যাক্তি যে ওদের সম্পর্কের বিষয়ে অবগত৷ ওদের সম্পর্কের কথা এই তিনজন বাদে কেউ জানে৷ বিয়ের বিষয়টা ইরা কিছুতেই মানতে পারছিলো না। কান্নাকাটি করে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছিলো৷ কাশিশ এসব দেখে ভেবেছিলো কথা বলা উচিৎ দুজনের৷ সেজ্যেই তো ও আজ ভুংভাং বুঝিয়ে গাড়ি নিয়ে রাদকে বিলপার পাঠায়। এবং ইরা’কে আসতে বলে। কিন্তু গাড়িতে ওদের মধ্যে কী কথা হয়েছে আর কেন তার নাক ফাঁটালো রাদ সেটা আল্লাহ মাবুদ জানেন৷ কাশিশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাদের বিধ্বস্ত মুখশ্রীতে চাইলো৷ রাদ ড্রাইভ করতে ব্যাস্ত। ফর্সা মুখে বিষন্নতার ছাপ সাথে নিদারুন কষ্ট যা অপ্রকাশ্য। চোখের নিচে লালচে আস্তরণ পরে গেছে। সরুনাকটা লাল হয়ে গেছে হয়তো গরমে। সিল্কি চুপ গুলো এলোমেলো হয়ে কপলে পরে আছে। কাশিশ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সব ঠিক করতে গিয়ে যে বিগড়ে দিয়েছে বুঝতে একটুও বাকি নেই। এবং নিজের নাকটাও ফাঁটালো মাঝখান দিয়ে৷ নাকে আপাদত ব্যান্ডেজ করা৷ থেতলে গিয়েছে৷ নাকে একটু হাত ছুইয়ে ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো৷ না পেরে কাশিশ অসহায়, ব্যাথিত কণ্ঠে বলল,

—” শালা শরীরে এতো জোর নিয়ে ঘুমাস কেমনে! ”

রাদ শান্ত,মলিন কণ্ঠে বলল,

—” স্যরি!”

—” আমাকে স্যরি বলে পার পেয়ে গেলেও। আন্টি তোকে ক্ষমা করবে না।”

মা যে অন্তত কিছুদিন তার সাথে কথাই বলবে না বেশ ভালো করেই জানা রাদের৷ সব কিছুর মূল ওর প্রেয়সী ইরা। বিরবিরিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

—” সব তোমার জন্যে হয়েছে ইরা। শুধু মাত্র তোমার জন্য। তোমার সার নেইম চেঞ্জ করে মিসেস চৌধুরী না করা পর্যন্ত আমি শান্তি পাবো না। ভালোবাসি বলে সব তোমার ফ্যামিলি তোমার উপর ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সোজা আঙুলে ‘ঘি’ না উঠলে আঙুল বাকাতে হয়। তোমাকে এবং তোমার ভয় পাওয়া সেই ভাই এবং পরিবারকে দেখে নিব আমি। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ! ”

কথাগুলো বলতে বলতে রাদের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। রাগ সংযত করতে নিজের সিল্কি চুলের ফাঁকে কয়েক ঘণ্টা বাদে আঙুল চালালো। বারবার পেছনে ঠেলতে লাগলো৷ কাশিশ বুঝতে পারলো রাদের অবস্থা ৷ তাই ওর কাধে ভরসার হাত রাখলো। প্রিয় বন্ধু আস্বস্ত করায় কিছুটা শান্ত হলো রাদ।

চলবে!