#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ১৫
.
বিহান কিছুক্ষণ নুসরাতের দিকে তাকিয়ে নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে গেমস খেলায় মনোযোগ দিল। নুসরাত বুঝল তার ভাইটার মনে এখনও অনেক অভিমান জমে আছে। নুসরাত গুটিগুটি পায়ে ধীরগতিতে বিহানের পাশে গিয়ে বসল। বিহান অনেক কষ্টে ফোনের দিকে নিজের দৃষ্টি আটকে রেখেছে। ভুল করেও তাকাচ্ছে না নুসরাতের দিকে। চোখ টলমল করে উঠছে, কিন্তু জোর করে সেই জল চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরতে দিচ্ছে না। সৌহার্দ্য এসে সিঙ্গেল সোফার হ্যান্ডেলের ওপর এসে বসল। নুসরাত সৌহার্দ্যর দিকে তাকাতেই সৌহার্দ্য কাঁধ ঝাকালো, অর্থাৎ ‘এবার তুমিই সামলাও’। নুসরাত বিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” পিচ্চু! কথা বলবি না?”
বিহান দাঁতে দাঁত চেপে ফোনের স্ক্রিন দেখছে। নুসরাত আস্তে করে বিহানের কাঁধে হাত রাখতেই বিহান হাত সরিয়ে দিল। নুসরাত ঘাড় বাঁকা করে বিহানের দিকে আরও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
” এখনও রেগে আছিস আমার ওপর?”
বিহান ফোনে স্ক্রিনে চোখজোড়া আবদ্ধ রেখেই বলল,
” রাগ কেন করতে যাব। যারতার ওপর রাগ করা যায়না?”
” আমি যে সে?”
” আমার কাছেতো তাই।”
নুসরাত এবার করুন স্বরে বলল,
” আচ্ছা সরি বলেছিতো কতবার। আমিতো কতবার বলেছি আমি ভুল করেছি। একবছর যাবত সরি বলছি। সেটা যথেষ্ট না?”
বিহান কঠোর স্বরে বলল,
” সরি বলার দরকার নেই আমি রেগে নেই।”
” তাহলে ঠিককরে কথা বল?”
বিহান কিছু বলল না। নুসরাত মুচকি হেসে বলল,
” একটা ভালো খবর দেওয়ার আছে তোকে।”
বিহান ভ্রু কুচকে তাকাল নুসরাতের দিকে। নুসরাত মুচকি হেসে বলল,
” তুই মামা হতে চলেছিস।”
বিহান অবাক চোখে তাকিয়ে রইল নুসরাতের দিকে। সৌহার্দ্যও অবাক হয়ে গেল। খুশি হয়ে প্রায় দৌড়ে এসে নুসরাতের পাশে বসে বলল,
” সিরিয়াসলি?”
নুসরাত মাথা নাড়ল। বিহান এখনও অবাক দৃষ্টিতে দেখছে নুসরাতকে। আস্তে আস্তে ওর মুখেও হাসি ফুটে উঠল। ও খুশি হয়ে কিছু বলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিল। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইল। নুসরাত বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” যেটা পারিস না সেটা করার চেষ্টা না করলে হয়না?”
বিহান এবার আস্তে আস্তে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে হুটি করেই জড়িয়ে ধরল নুসরাতকে। নুসরাতও মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরল ওকে। সৌহার্দ্য বুক থেকে পাথর নামল একপ্রকার। যাক দুজনের মান অভিমান ভাঙলো তাহলে। সৌহার্দ্য হাতভাজ করে দেখছে এদের। বিহান একদম বাচ্চাদের মত করে বলল,
” আমার আগে আর কাউকে জানাস নি তো?”
নুসরাত হেসে বলল
” উমহুম! শুধু তোর ভাইয়াকে বলেছি।”
” তাহলে ঠিকাছে।”
” এখনও আগের মতই হিংসুটে আছিস।”
বিহান নুসরাতকে আরেকটু ভালোভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,
” আপুটা তো আমারই।”
সৌহার্দ্য ভ্রু কুচকে বলল,
” ও হ্যালো? এটা আমারও আপু।”
বিহান নুসরাতকে ছেড়ে একটু হিংসুটে স্টাইলে বলল,
” হ্যাঁ হ্যাঁ জানি সেটা এতবার বলার কী আছে?”
সৌহার্দ্য হাসল কিন্তু কিছু বলল না। বিহান নুসরাতের দিকে তাকিয়ে অবুঝদের মত বলল,
” আচ্ছা বেবিটা কবে আসবে?”
নুসরাত অবাক হয়ে বলল,
” তুই কী সত্যি বাচ্চা হয়ে গেছিস পিচ্চু!”
সৌহার্দ্য হেসে দিয়ে বলল,
” ও আবার বড় ছিল কবে?”
বিহান বলল,
” আচ্ছা শোন আপু আজ কিন্তু এখানেই থাকবি। আমি তিনজনের জন্যেই খাবার অর্ডার করছি।”
নুসরাত বলল,
” বসতো।অর্ডার করতে হবেনা। আজ আমি রান্না করছি।”
সৌহার্দ্য উচ্ছসিত কন্ঠে বলল,
” ওয়াও! মাংস ভুনা প্লিজ!”
বিহানও তাল মিলিয়ে বলল,
” হ্যাঁ মাংস ভুনা।”
নুসরাত বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,
” আচ্ছা ঠিকাছে কানের মাথা খাস না তো।”
তিনজনই এই ব্যাপারে একদফা মন খুলে হেসে নিল। এরপর শুরু করল তাদের খুনশুটিময় আড্ডা।
______________
তুর্বী বিরক্তি নিয়ে হাত ভাজ করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। আজ বসের সাথে কথা বলেছিল ওকে ভালো কোন নতুন প্রজেক্টে কাজ করতে দেওয়ার ব্যাপারে কিন্তু ওর বস সেই কমন কিছু ডায়লগ দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। ও এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রিখিয়ার জন্যে ওয়েট করছে। রিখিয়া বলেছে সিএনজি নিয়ে এই রোড দিয়েই আসবে। এসব ভাবতে ভাবতেই একটা সিএনজি ওর সামনে এসে থামল। ভেতরে থেকে রিখিয়া বলে উঠল,
” উঠে এসো?”
তুর্বী মুখ ফুলিয়ে উঠে বসল। সিএনজি আবার চলতে শুরু করল। তুর্বীকে এমন বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিখিয়া বলল,
” কী ব্যপার? মেজাজ এত খারাপ হয়ে আছে কেন?”
তুর্বী বিরক্তি ঝেড়ে বলল,
” আর বলিস না ইয়ার। বসকে বললাম সবটা। কিন্তু সে কী বলল জানিস?”
” কী বলল?”
” তুমি এখনও নতুন। এখনও বড় প্রজেক্টের জন্যে রেডি নও। আরেকটু একপিরিয়েন্স চাই। ব্লা ব্লা ব্লা।”
” হ্যাঁ তো কিছুদিন ওয়েট করো। ঠিক দেবে।”
” আরে তুই বুঝতে পারছিস না আমি বুড়ো হয়ে যাবো সিনিয়র আর্কিটেক্ট হতে হতে।”
রিখিয়া হাসল। মেয়েটা এত ছটফটে কেন? তুর্বী অাবার বলল,
” তারওপর বস আবার ব্যাংকক যাবে কয়েক মাসের জন্যে।”
রিখিয়া অবাক হয়ে বলল,
” তাহলে ওপার জায়গায় কে বসবেন?”
” কী জানি? হয়ত ওনার ছেলে।”
” তাহলেতো ভালোই! ওনার ছেলেকেই বলবে। ইয়াং তো। হয়ত তোমার প্রবলেম টা বুঝবে।”
তুর্বী একটু হেলান দিয়ে বলল,
” আমার প্রবলেম আমি মরার আগে শেষ হবেনা।”
রিখিয়া কিছু বলবে তার আগেই তুর্বীর ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে ওর মা ফোন করেছে। তুর্বী বিরক্ত হয়ে বলল,
” এমনিতেই মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। এখন এই মহিলার ফ্যাচফ্যাচানি শুনতে হবে।”
তুর্বী ফোন রিসিভ করে বলল,
” হ্যাঁ বলো।”
ওপাশ থেকে ওর মা বলল,
” টাকা লাগবে। কালকে হাজার পারেন পাঁচ টাকা পাঠিয়ে দিস।”
তুর্বী দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” হ্যাঁ সেই। আমি তো টাকার ফ্যাক্টরি।”
” ওই এসব ত্যাড়া কথা বলছিহ কেন? টাকা লাগবে তাইতো চাইছি।”
তুর্বী অধৈর্য হয়ে বলল,
” আচ্ছা এত টাকা দিয়ে কী কর বলোতো? মাত্র দুজন মানুষ তোমরা। ভাইয়ের পড়ার খরচ আর তোমাদের দুজনের খেতে এত টাকা লাগে?”
” এখন তুই কী আমার কাছে হিসেব চাইবি নাকি? কটা টাকা দিস বলে এখন খোটাও শুনতে হবে?”
তুর্বী চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলল,
” খোটা কখন দিলাম আজব! আচ্ছা পাঁচ হাজার তো? পাঠিয়ে দেব শান্তি?”
” হ্যাঁ একটু তাড়াতাড়ি।”
বলে ফোনটা রেখে দিল। তুর্বী বিরক্তি নিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। নাকের ডগা লাল হয়ে উঠেছে ওর। রিখিয়া বুঝতে পারছে যে তুর্বী কান্না আটকানোর চেষ্টায় আছে। রিখিয়া তুর্বীর কাঁধে হাত রেখে বলল,
” তুমি তো জানো উনি এমনই কষ্ট কেন পাচ্ছো?”
তুর্বী নাকটা একটু টেনে হেসে দিয়ে বলল,
” ছাড়তো! ওই মহিলার কথা কে শোনে।”
রিখিয়াও আর কিছু বলল না। দুজনেই চুপচাপ রইল। ফ্লাটে পৌছে তুর্বী আগে ওয়াসরুমে গেল। রিখিয়া দুজনের ব্যাগই গুছিয়ে রাখতে গিয়ে ওর ব্যাগের চেইন খোলা থাকায় কিছু জিনিস নিচে পরে গেল। রিখিয়া ওগুলো ওঠাতে গিয়ে বিহানের সেই কার্ডটা চোখে পরল। আর মনে পরল বিহানের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো। বিহানের বলা শেষ কথাটা। আচ্ছা লোকটা ওকে এত সাহায্য করল, তারওপর ওর জন্যে লোকটার অপমানও হয়েছে। তাই ও যদি বিহানের সাথে একটা দিন একটু কফি খেতে গেলে কী এমন হবে? শুধু যাবে, কফি খাবে, কিছক্ষণ থাকবে এরপর চলে আসবে। এটুকুই তো। এটুকুর জন্যে যাওয়াই যায়।
______________
বিহানের ফ্লাট থেকে ওর সাথে ব্রেকফাস্ট করে একবারেই নিজেদের বাড়িতে এল সৌহার্দ্য আর নুসরাত। ওদের দুজনকে একসঙ্গে বাড়িতে ঢুকতে দেখে মিসেস নাহার এগিয়ে এসে বললেন,
” কীরে নুসু? কাল বাড়িতে এসে একটু পরেই বেড়িয়ে গেলি? এমন করে কেউ? কত চিন্তা হচ্ছিল জানিস?”
নুসরাত হেসে বলল,
” ঠিক আছিতো মা। আর তোমার জামাইও চলে আসবে দুপুরে।”
সোফায় বসে থাকা শফিক রায়হান বললেন,
” কাল সারারাত বিহানের বাড়িতে ছিলে দুজন?”
নুসরাত কিছু বলার আগেই সৌহার্দ্য বলল,
” হ্যাঁ ছিলাম। ভাই হয় ও আমাদের। তাই একরাত ওর কাছে থেকে আসাটা অন্যায় নাকি?”
নুসরাত ওর বাবার পাশে বসে বলল,
” বাবা পিচ্চুটার কথা খুব ভালো মনে পরছিল। তাই ওর কাছে একটু থেকে এলাম।”
শফিক রায়হান কঠিন কন্ঠে বললেন,
” তোমরা কী বুঝতে পারছ না ওকে এভাবে সাপোর্ট করে, তোমরা ওকে আরও বিগড়ে দিচ্ছো? তোমাদের এসব আল্লাদে ও বুঝতেই পারেনা যে ও ভুল করছে।”
সৌহার্দ্য বলল,
” এখন কী করছে জানিনা। কিন্তু আগে ও কোন ভুল করেনি।”
” আচ্ছা? এত নিশ্চিত কীকরে তুমি?”
” আমার নিজের ভাইয়ের ওপর বিশ্বাস ছিল। আর এখনও আছে। আর তাছাড়াও তোমরা কেউই নিজের চোখে দেখনি কিছু।”
শফিক রায়হান হাত ভাজ করে বলল,
” আচ্ছা? এত বড় বড় কথা বলছ? তাহলে সত্যি যদি কোনদিন তুমি নিজেই ওকে কোন অন্যায় করতে দেখ? যদি সত্যি ভবিষ্যতে যদি প্রমাণসহ ওর কোন অপরাধ তোমার চোখে পরে তাহলে?”
সৌহার্দ্য শক্ত কন্ঠে বলল,
” সেদিন আমি নিজে ওকে ত্যাগ করব।”
#চলবে…
#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ১৬
.
সৌহার্দ্যর কথা শুনে উপস্থিত সবাই চমকে উঠল। কেউ ভাবতেও পারেনি সৌহার্দ্য এতটা আত্মবিশ্বাসের সাথে এরকম একটা কথা বলে ফেলবে। সৌহার্দ্যর কথা শুনে নুসরাত অবাক হয়ে গেল। অবাক কন্ঠে বলল,
” তুই এসব কী বলছিস ভাই?”
” ঠিকই বলছি। আর আমি জানি বিহান এমন কিছুই করবে না।”
বলে ওপরে যেতে নিলেই শফিক রায়হান বলে উঠলেন,
” দাঁড়াও! কথা আছে তোমার সাথে।”
সৌহার্দ্য দাঁড়িয়ে গেল। তারপর সোফায় গিয়ে বসল। কারণ ও ওর বাবাকে যথেষ্ট সম্মান করে। বিহানের ব্যপারটা সাইডে রাখলে শফিক রায়হানের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক সৌহার্দ্যর। সৌহার্দ্য বসতেই শফিক রায়হান বললেন,
” তোমাকে আগেও বলেছিলাম আমার অফিসে বসতে কিন্তু তুমি বসোনি। কী কর সেটাও জানিনা। আপাতত কী খুব ব্যস্ত?”
সৌহার্দ্য ব্যপারটা বুঝতে না পেরে বলল,
” নাহ তেমন না। কেন?”
” আমাকে কয়েক মাসের জন্যে ব্যাংকক যেতে হবে। কদিন পর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কালকেই যেতে হচ্ছে। তাই তোমাকে ততদিন অফিসটা সামলাতে হবে। পারবেতো?”
সৌহার্দ্য চুপ করে কিছুক্ষণ বসে রইল। বাবা যদি চেয়ারে না বসে তাহলেতো ওকেই বসতে হবে কিছু করার নেই। ইচ্ছে না থাকলেও মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলল,
” হুম পারব। তুমি নিশ্চিন্তে যেতে পারো।”
শফিক রায়হান বললে,
” ভালো করে ভেবে বল। সবটা সামলাতে পারবে তো?”
” চিন্তা করোনা আমি সবটা সামলে নেব। তুমি শুধু রাতে আমাকে একবার সবটা বুঝিয়ে দিও তাহলেই হবে।”
” সন্ধ্যায় রুমে চলে এসো।”
বলে শফিক রায়হান রুমে চলে গেলেন। নিজের বাবার যাওয়ার দিকে কিছুদিন তাকিয়ে থেকে নুসরাত সৌহার্দ্যকে বলল,
” একটা কথা কিন্তু বাবা ঠিকই বলেছে ভাই। তুই অফিসে কেন বসিস না? বাবার কাছে টাকাও চাস না। তাহলে টাকাগুলো কোথায় পাস?”
মিসেস নাহারও চিন্তিত কন্ঠে বলল,
” সত্যিই তো, করিস টা কী তুই?”
সৌহার্দ্য কিছু না বলে হাসল। নুসরাত বা মিসেস নাহারও কিছুই বুঝলনা। এমন কী বলল সৌহার্দ্য যার কারণে ওরা হাসল? কিন্তু সৌহার্দ্যর কাছে কিছু জানতেও চাইল না কারণ ওনারা জানেন সৌহার্দ্য কিছু বলবে না। তাই আপাতত আর কিছুই জিজ্ঞেস করলোনা।
_____________
রাতে ডিনার করতে রিখিয়া কিছু একটা ভেবে চলেছে। তুর্বী প্রথমে খেয়াল না করলেও এখান খেয়াল করছে। তাই খাবার চিবুতে চিবুতে বলল,
” কীরে? কী ভাবছিস?”
রিখিয়া আনমনেই খেতে খেতে বলল,
” বিহানের কথা।”
তুর্বী পুরো বিষম খেয়ে গেল। কোনরকমে কাশি থামিয়ে বলল,
” বাপড়ে! খেতে বসেও ওর কথাই ভাবছিস? কেস এতদূর এগিয়ে গেছে?”
রিখিয়া ভ্রু কুচকে তুর্বীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” সবসময় উল্টোপাল্টা কথা। আসলে কফি খেতে যাব কী-না ভাবছিলাম।”
” চলে যা না। কফিই তো খাবি সমস্যা কোথায়?”
রিখিয়া বিভ্রান্তি নিয়ে বলল,
” বলছ?”
তুর্বী মুখে খাবার পুরতে পুরতে বলল,
” হ্যাঁ বলছিতো চলে যা।”
তুর্বীর কথায় রিখিয়াও এবার একটু ভরসা পেল। ঠিক করল যে খেয়েই বিহানকে একটা ফোন করবে। তুর্বী বিরক্তি নিয়ে খাচ্ছে, সেটা দেখে রিখিয়া বলল,
” তুমি আবার কী নিয়ে বিরক্ত?”
তুর্বী বিরক্তি নিয়ে বলল,
” আর বলিস না। কদিন পর থেকে অফিসে বসের ছেলে বসবে। এমনিতেই এত প্যারায় আছি। এখন আবার এই নতুন বস কেমন হবে কে জানে?”
” এত চিন্তা করোনা তো। এমনও তো হতে পারে ওনার ছেলে খুব ফ্রেন্ডলি হল। আর তোমারও কাজে সুবিধা হল।”
তুর্বী হতাশার একটা শ্বাস ফেলে বলল,
” আমার কপাল কোনদিন এত ভালো হয় না রে।”
রিখিয়া হেসে দিয়ে বলল,
” তোমার ভাগ্য কী তুমি দেখে বসে আছ?”
” আরে বুঝি, বুঝি।”
” কচু বোঝ।”
_____________
বিহান ব্যালকনির ফ্লোরে বসে বিয়ারের বোতলে চুমুক দিচ্ছে আর খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সৌহার্দ্য থাকলে ভালোই হত। কিন্তু ওর মামু পছন্দ করে না তাই ও কখনও সৌহার্দ্যকে নিজে থেকে ডাকেনা ওর কাছে, সৌহার্দ্য নিজে থেকেই আসে। কিন্তু এই সময়গুলো বিহানের একা লাগে, খুব বেশি একা লাগে। বারবার নিজের মনকে জিজ্ঞেস করে ওর সাথেই কেন হল এরকম? ওরও তো একটা সুন্দর পরিবার আছে, সেই পরিবারে সবার সাথে হেসেখেলে কত সুখী ছিল ও, কত আনন্দের ছিল দিনগুলো। কিন্তু এখন ও নিঃস্ব, একেবারেই নিঃস্ব। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবারও বিয়ারের বোতলে লম্বা করে একটা চুমুক দিল। এরমধ্যেই বিহানের ফোন বেজে উঠল। ফোনের আওয়াজে চমকে উঠল বিহান। এইসময়ে কে ওকে ফোন করবে? সৌহার্দ্য? ও স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল আননোন নম্বর। ও নম্বরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রিসিভ করে বলল,
” কে?”
” আমি রিখিয়া।”
রিখিয়া নামটা শুনে অবাক হল বিহান। এরপরেই মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। ও মুখে হাসি রেখেই বলল,
” যাক, অবশেষে ফোন এল তাহলে? কেমন আছো?”
রিখিয়ার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
” জি আলহামদুলিল্লাহ্। আপনি ভালো আছেন?”
” এতক্ষণ ছিলাম না। এখন আছি। তো কী ভাবলে? আসবে?”
রিখিয়া নিজের সব সংকোচ কাটিয়ে উঠে বলল,
” হ্যাঁ আসব। কবে আর কোথায় আসতে হবে?”
বিহান নিঃশব্দে হাসল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
” কালকেই করছি। আমি এড্রেস তোমাকে পাঠিয়ে টেক্সট করে দেব? নাকি ফ্লাটের সামনে থেকে পিক করব?-
রিখিয়া দ্রুত বলল,
” ন্ না। আমায় এড্রেস দিয়ে দিলেঈ আমি পৌছে যেতে পারব সমস্যা নেই।”
বিহান ভ্রু কুচকে বলল,
” আর ইউ শিউর?”
” ইয়া।”
” আচ্ছা রাখছি তাহলে?”
” হুম বাই।”
ফোনটা রেখে বিহান রিখিয়ার ফোনে এড্রেস পাঠিয়ে দিয়ে আবারও বাঁকা হাসি দিল। ও জানতো রিখিয়া ফোন করবেই। আর হলোও সেটাই। দেয়ালে হেলান দিয়ে বোতলে চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইল।
এদিকে রিখিয়ার ফোনটা রেখে নিজেই লজ্জা পাচ্ছে। এর আগে কোন ছেলের সাথে এভাবে একা দেখা করতে বা সময় কাটাতে যায় নি। কিন্তু কাল যাবে ভাবলেই কেমন যেন লাগছে ওর। আচ্ছা এমন কেন লাগছে? শুধু তো কফি খেতেই যাবে এত টেনশন আর উত্তেজনার কী আছে? এটা কেমন অস্বস্তি?
হঠাৎ করেই তুর্বীর চিৎকারে চমকে উঠল রিখিয়া। বুকে থু থু দিয়ে হাফানো কন্ঠে বলল,
” তুর! এভাবে চেঁচায় কেউ?”
তুর্বী খুশিতে রিখিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
” রিখু! আ’ম সো হ্যাপি।”
রিখিয়া তুর্বীকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
” কী হয়েছে সেটা বলবে?”
তুর্বী উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
” আমি আমার টোটাল ডিজাইন প্লান বলে বসকে একটা মেইল পাঠিয়েছিলাম মনে আছে?”
” হ্যাঁ তারপর?”
” সেটা এপ্রুভ হয়েছে এন্ড কাল আমার সাথে কথা বলতে চাইছেন উনি।”
রিখিয়া অবাক হয়ে বলল,
” কিন্তু তুমিতো বলেছিলে তোমার বস তোমাকে আরও একটু সময় নিয়ে আরও অভিজ্ঞ হতে বলেছে?”
” হ্যাঁ কিন্তু হয়তো ওনার এই মেইলটা পরে ভালো লেখেছে?”
” হুম। যাক, যাওয়ার আগে একটা ভালো কাজ করে দিয়ে যাবে তাহলে।”
তুর্বী খুশিতে ছটফট করে যাচ্ছে। রিখিয়া গালে হাত দিয়ে বলল,
” শান্ত হও। আর নিজের প্লানটা রি-চেক করে নাও। ভালো হবে।”
তুর্বী একটু জোরে চেঁচিয়ে বলল,
” কারেক্ট আছে!”
বলে দৌড়ে গিয়ে ল্যাপটপ আনতে গেল। রিখিয়া তুর্বীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।
_____________
তুর্বী আর রিখিয়া দুজনেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। তুর্বী তো অফিস যাচ্ছে তাই সাজবেনা। ও নিজে রেডি হয়ে রিখিয়াকে রেডি হতে হেল্প করল। রিখিয়া বিরক্তি নিয়ে বলল,
” আরে এত সাজানোর কী ছিল?”
” চুপ কর তো। নে চল! লেট হয়ে যাবে।”
বলে তুর্বী রিখিয়াকে নিয়ে বেড়িয়ে গেল। রিখিয়া ওর গন্তব্যে পৌছে গেল। তুর্বী নিজের অফিসে ঢুকে একপ্রকার দৌড়ে যাচ্ছে বসে কেবিনে প্রচন্ড এক্সাইটেড ও। যেতে যেতে অনেকের সাথে ধাক্কাও লাগে। বসের কেবিনের দরজার কাছে গিয়ে বলে,
” মে আই কাম ইন স্যার?”
” কাম ইন।”
ভেতরে থেকে আওয়াজ আসতেই তুর্বী দ্রুতপদে ভেতরে ঢুকে এগুতে গিয়ে কার্পেটে আটকে পরে গেল। ব্যাথা পেয়ে চোখ মুখ খিচে বসে আছে ও। নিজেই নিজেকে মনে মনে বকাও দিল। হঠাৎ কেউ ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। লোকটার দিকে তাকিয়ে তুর্বী অবাক হয়ে গেল।
#চলবে…