জল-ফড়িঙের খোঁজে পর্ব-১৭+১৮

0
561

#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ১৭
.

তুর্বী অবাক হয়ে দেখছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিকে আর ভাবছে এই লোকটা এখানে কীকরে এল? কারণ ওর সামনে সৌহার্দ্য দাঁড়িয়ে আছে। সৌহার্দ্যর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়েই ওর হাত ধরে উঠে দাঁড়াল তুর্বী। ও হা করে তাকিয়ে আছে সৌহার্দ্যর দিকে। সৌহার্দ্য ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল। তুর্বী মুখ এক ইঞ্চি ফাঁক করে হা করে তাকিয়ে আছে। সৌহার্দ্য ওর মুখের সামনে তুরি বাজাতেই তুর্বী হকচকিয়ে গেল। সৌহার্দ্য ভ্রু নাচিয়ে বলল,

” সবসময় এভাবে দৌড়দৌড়ি, লাফালাফি না করে চলতে পারোটা?”

তুর্বী গলা ঝেড়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

” আপনি এখানে? এই কেবিনে কী করছেন? এই আমি যেখানে যাই সেখানেই আপনাকে থাকতে হয়? ফলো করছেন নাকি আমাকে? দেখুন আপনি যদি সেটা চিন্তাও করে থাকেন তো ভুলে যান। কারণ আপনি চেনেন না আমাকে। আমি রেগে গেলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। আপনি জানেন না আমি কী করতে পারি? তো আমার পিছু নেওয়া বন্ধ করুন হ্যাঁ?”

সৌহার্দ্য এতক্ষণ হাত ভাজ করে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে শুনছিল। তুর্বীর কথা শেষ হতেই সৌহার্দ্য নিজের পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

” তোমার বলা শেষ?”

তুর্বী ভ্রু কুচকে তাকাল সৌহার্দ্যর দিকে, এরপর বলল,

” হ্যাঁ শেষ। এবার বলুন আপনি এখানে কেন? আর স্যার কোথায়”

সৌহার্দ্য একটু হাসল। তারপর নিজের নাক স্লাইড করে তুর্বীর দিকে তাকিয়ে বলল,

” তোমার স্যার ব্যাঙ্গালর আছেন আর আমি আজ থেকে আপনার বস, মানে স্যার।”

তুর্বী অবাক হয়ে বলল,

” আমার বসের তো আরো কিছুদিন পর যাওয়ার কথা ছিল। আর আপনি আমার স্যার কীকরে.. মানে আপনিই ওনার ছেলে?”

সৌহার্দ্য মেকি একটা হাসি দিয়ে বলল,

” জি। সৌহার্দ্য রায়হান, সান অফ শফিক রায়হান।”

কথাটা শুনেই তুর্বী একটু ঘাবড়ে গেল। বসের ছেলের সাথে মানে ওর বর্তমান বসের সাথে এভাবে কথা বলল? আর এর আগেও তো যতবার কথা হয়েছে ততবার এমন উট্কো ব্যবহার করেছে। এখন ওর কী হবে? এসবের জন্যে ওকে ফায়ার করে দেবে না তো? এসব ভেবে তুর্বী জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বলল,

” সরি স্যার। আসলে আমি..”

এটুকু বলে মাথা নিচু করে রইল। কী আর বলবে? সৌহার্দ্য কিছুক্ষণ তুর্বীর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

” ইটস ওকে। আসুন জরুরী কথাটা সেড়ে নেই?”

তুর্বী মনে মনে স্বস্তি পেল। যাক কোন ঝামেলা অন্তত হল না। সৌহার্দ্য নিজের চেয়ারে গিয়ে বসল। তুর্বীর মেজাজ ভীষণ খারাপ হল। এই লোকটাকেই ওর বস হতে হল? দুনিয়াতে কী বসের অভাব পরেছিল? এখন কী হবে কে জানে? সৌহার্দ্য বসতে বললেই তুর্বী গিয়ে চেয়ারে গিয়ে বসল। সৌহার্দ্য ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ রেখে বলল,

” আমি কাল রাতে তোমার মেইলটা ভালোভাবে রিড করেছি। ইট ওয়াস গুড! ইন ফ্যাক্ট ভেরী গুড। বেশ নতুনত্ব আছে। অনেক ইম্পর্টেন্ট আর ইউনিক ডিজাইন পেয়েছি। আমার ভালো লাগল তাই এপ্রুভ করলাম। ইউ আর সিলেক্টেড ফর আওয়ার নিউ প্রজেক্ট, ওয়েলকাম টু দা টিম।”

তুর্বী খুশি হয়ে হেসে দিয়ে বলল,

” থ্যাংকিউ স্যার। থ্যাংকস আ লট।”

” খুব তাড়াতাড়ি এই প্রজেক্ট নিয়ে মিটিং হবে। গ্রুপের সবাই যার যার প্লান বলবে। নেক্সট বিল্ডিং টা একটা অফিস রুমের জন্যে হবে। বিজনেস অফিস হবে। একটা ফাইল পাঠাচ্ছি তোমাকে ওটা পড়ে নিয়ে নিজের মত করে ডিজাইন করে নাও। ”

” ওকে স্যার।”

” হুম। বাট তোমার মেইল কোয়ালিটিতে বেশ গন্ডগোল আছে।”

তুর্বীর মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। ও ভয়ে ভয়ে বলল,

” কেন স্যার? কোন কিছু ভুল লিখেছি? আই মিন উল্টোপাল্টা কিছু?”

সৌহার্দ্য মাথা নেড়ে বলল,

” নাহ তেমন কিছুই না। কিন্তু লেখাগুলো বেশ ইনফরমাল ছিল। এটা তোমাকে মাথায় রাখতে হবে যে তুমি অফিসে তোমার সিনিয়রদের কাছে মেইল পাঠাচ্ছো, তোমার কোন বন্ধুকে হোয়াটসঅ‍্যাপে মেসেজ না। সো এতো ইনফরমাল। তাই ওয়ার্ড সিলেকশনে একটু সতর্ক হবে। ল্যাঙ্গুয়েজ এতো কুল টাইপেরনা করে যথেষ্ট ফরমাল করবে। ক্লিয়ার?”

তুর্বী মাথা নেড়ে বলল,

” ওকে স্যার!”

” এন্ড ইয়েস! নট অনলি ওয়ার্ড সিলিকশন।”

কথাটা বলে সৌহার্দ্য তুর্বীর টিশার্টের দিকে তাকাল যেটাতে একটা কার্টুন দেওয়া। সৌহার্দ্যর দৃষ্টি অনুসরণ করে তুর্বীও তাকাল তাকিয়ে দেখল কার্টুনটা। ও বুঝে গেল সৌহার্দ্য কী বলতে চাইছে। ও অসহায় দৃষ্টিতে সৌহার্দ্যর দিকে তাকাতেই সৌহার্দ্য মুচকি হেসে বলল,

” দিস ইজ আ ওয়ার্কপ্লেস। লেটস রেসপেক্ট দ্যা ওয়ার্ক প্লেস।”

তুর্বী জোরপূর্বক এক হাসি দিয়ে বলল,

” ওকে স্যার।”

বলে কোনরকমে কেবিন থেকে দৌড়ে পালাল তুর্বী। সৌহার্দ্য তুর্বীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল আর মনে মনে ভাবল, ‘ অবশেষে ভাগ্য আমাদের আবার দেখা করালো, কালকে মেইল চেইক করতে গিয়ে তোমার মেইল পরেই তোমাকে চিনে ফেলেছিলাম। আর তোমাকে সোজা করতে একমাত্র আমিই পারব। নাও জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।’

_____________

বিহান আর রিখিয়া একে ওপরে মুখোমুখি বসে আছে একটা কফিশপে। রিখিয়া দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে আর বিহান গালে হাত দিয়ে দেখছে রিখিয়াকে। মেয়েটা একটু বেশিই লাজুক। অথচ এই লাজুকতাতেই বিহান না চাইতেই বারবার ঘায়েল হয়ে চলেছে। কিছুতেই বেড়োতে পারছেনা এই অনুভূতির জ্বাল থেকে। এদিকে রিখিয়া মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে, কেমন একটা লাগছে ওর। নিরবতা ভেঙ্গে বিহান বলল,

” তো মিস, কফিতো অর্ডার করো? কোনটা খাবে?”

রিখিয়া নিচু কন্ঠে বলল,

” আপনি যেটা অর্ডার করেন।”

” এটা কোন কথা? তোমার তো পছন্দ আছে নাকি? ”

রিখিয়া আর কোন উপায় দেখতে না পেয়ে বলল,

” নরমাল মিল্ক কফি হলেই হবে।”

” শিওর তুমি?”

” হুম শিওর।”

বিহান ওয়েটারকে ডেকে নিজের জন্যে ব্লাক কফি আর রিখিয়ার জন্যে মিল্ক কফি ওর্ডার করে নিল। এরপর রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে ওর হাতের ওপর হাত রাখল। সাথেসাথেই একটু নড়ে উঠল রিখিয়া, অবাক দৃষ্টিতে তাকাল বিহানের দিকে। বিহান মুচকি হেসে বলল,

” তুমি কী আনইজি ফিল করছ?”

রিখিয়া কী বলবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেনা। ওর সত্যিই এবার অস্বস্তি হচ্ছে একটু কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা। বিহান রিখিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,

” দেখ আমার সামনে এত হেজিটেশনের কিছু নেই। আমাকে নিজের বন্ধু ভাবতে পারো।”

রিখিয়া এবার চোখ তুলে ভালোভাবে তাকালো বিহানের দিকে। বিহান আবারও বলল,

” আমি এতোটাও খারাপ নই যে আমার সাথে বন্ধুত্ব করা যাবেনা। কী বল?”

রিখিয়া এখনও কিছু বলছেনা শুধু হাত কচলে যাচ্ছে। কী বলবে কী করবে বুঝতে পারছেনা। বিহান বলল,

” তুমি কী এখনও ভাবছ যে আমি ঐরকম ক্যারেক্টারলেস, বাজে টাইপের ছেলে।”

রিখিয়া হকচকিয়ে গিয়ে বলল,

” এ মা ন্ না। আমি এরকম কিছুই ভাবছি না। আসলে..”

বিহান ভ্রু কুচকে বলল,

” আসলে?”

” আসলে আমি এর আগে তুর ছাড়া কারো সাথেই এরকমভাবে ফ্রি হয়ে মিশিনি তো তাই।”

বিহান দুইহাতের ওপর থুতনি রেখে বলল,

” হুম তো কী হয়েছে? আজ থেকে আমার সাথে মিশবে?”

রিখিয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকাল। এরমধ্যেই কফী চলে এল। বিহান আবার বলল,

” আচ্ছা সমস্যা নেই। কফি চলে এসছে। এবার তুমি কফি খেতে খেতে ভাবো যে আমার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করা যায় কি-না। কফি শেষ হলে ডিসিশন জানিও।”

কথাটা বলে বিহান কফি খাওয়ায় মনোযোগ দিল। রিখিয়া মগ হতে নিয়ে ভাবছে বিহানের কথা। কী করা উচিতওর সেটাই ভাবছে। ছেলেটাযে খারাপ না সেটি ও একদিনে বুঝে গেছে। এখন প্রশ্ন হল ফ্রেন্ডশীপ করবে কী না? এসব ভাবতে ভাবতে কফি খাওয়া শেষ হয়ে গেল। রিখিয়া বিহানের দিকে তাকাল। বিহান মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

” ফ্রেন্ডস?”

রিখিয়া ভাবছে ও কী করবে? হাত বাড়াবে? না-কি না? কোনটা ঠিক হবে?

#চলবে..

#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ১৮
.

রিখিয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে রিখিয়া। বিহানকে যতদিন রিখিয়া দেখেছে আর যতটুকু চিনেছে তাতে ওর কাছে খারাপ মনে হয়নি। তাহলে বন্ধুত্ব করতে তো কোন আপত্তি নেই। বরং এখন যদি রিখিয়া হাত না বাড়ায় সেটাই প্রচন্ড খারাপ হবে। বিহান ইনোসেন্ট চেহারা করে বলল,

” আরে কিছু তো বলো? আমার হাত তো ব্যাথা হয়ে গেল। ফ্রেন্ডশীপ করতে এরকম ভাবনায় মগ্ন হতে এই প্রথম কাউকে দেখলাম।”

রিখিয়া হেসে দিয়ে হাত বাড়িয়ে বিহানের সাথে হাত মিলিয়ে বলল,

” ফ্রেন্ডস।”

বিহান উচ্ছাসিত কন্ঠে বলল,

” দ্যাটস লাইক আ গুড গার্ল।”

রিখিয়া মুচকি হাসল। দুজনেই বেশ অনেকটা সময় চুপ ছিল। ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে রিখিয়া বলল,

” তাহলে আজ ঊঠি আমি?”

বিহান ভ্রু কুচকে বলল,

” উঠবে মানে কী হ্যাঁ? কোথায় উঠবে? এখনতো সবে অল্প কিছুক্ষণ হল। ফ্রেন্ডশীপ যখন করেছ তখন আজ লাঞ্চ অবধি আমার কাছে থাকতে হবে।”

” কিন্তু..”

” নো মোর কিন্তু। চলো এখন আপাতত বাইরে থেকে কিছুক্ষণ ঘুরে আসি।”

বলে রিখিয়ার হাত ধরে উঠিয়ে হাটা দিল। রিখিয়ার বিহানের ওর ধরে রাখা হাতটার দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন একটা লাগছে ওর। যেরকম টা এর আগে কোনদিন হয়নি।

বিহান গাড়ি চালাচ্ছে আর মাঝেমাঝে শিশ বাজিয়ে যাচ্ছে। রিখিয়া জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে আর কিছুক্ষণ পরপর আড়চোখে বিহানকে দেখছে। বিহান গাড়িটা একটা শপিং মলের সামনে থামালো। রিখিয়া আশেপাশে তাকিয়ে বলল,

” এখানে থামালেন কেন?”

বিহান সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বলল,

” না নামলে বুঝব কীকরে?”

রিখিয়া কোন কথা না বাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেল। বিহান আবারও রিখিয়ার হাত ধরেই হাটতে হাটতে মলের ভেতরে নিয়ে গেল। বিহান রিখিয়াকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে একটা জুয়েলারির দোকানে গেল। সেখানে গিয়ে একটা এটা ওটা দেখতে শুরু করল। রিখিয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে বিহানের দিকে। বিহান কী করতে চাইছে বুঝতে পারছেনা ও। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে বিহান একটা হালকার ওপর পেন্ডেন্ট খুঁজে নিল। এরপর রিখিয়া অবাক হয়ে বলল,

” এটা কার জন্য?”

বিহান মুখে হালকা হাসি রেখে রিখিয়াকে ধরে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে নিল। রিখিয়া অবাক হয়ে ঘুরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর গলায় পেন্ডেন্টটা পরিয়ে দিল বিহান। রিখিয়া চরমভাবে অবাক হল। পেন্ডেন্টটা পরানো শেষ হওয়ার পরেই রিখিয়া অবাক হয়ে ঘুরে বিহানের দিকে ঘুরে বলল,

” এটা..”

” আমাদের বন্ধুত্বের প্রথম দিন এটা তাই আমার পক্ষ থেকে ছোট্ট গিফট।”

” এটার কী দরকার ছিল?”

” আমার বন্ধুকে আমি গিফট করছি। সেটা নিশ্চয়ই তোম কাছে পার্মিশন নিয়ে করব না।”

রিখিয়া মুচকি হাসল। কিছু একটা ভেবে বলল,

” কিন্তু আমি তো আপনার জন্যে কিছুই…”

” আরে ছাড়োতো। সময় আর সুযোগ মত দিয়ে দিও। তাহলেই হবে। এবার চলো তোমার এখানের কাজ আপাতত শেষ।”

বলে অাবারও রিখিয়ার হাত ধরে বাইরের দিকে হাটা দিল। রিখিয়া বারবার নিজের গলায় হাত দিচ্ছে। আর বিহানের দিকে তাকাচ্ছে। ছেলেটাকে একেবারে নতুন করে আবিস্কার করছে ও। এরপর বিহান রিখিয়াকে নিয়ে বেশ অনেক্ষণ ঘুরলো। ফাঁকা রাস্তা দিয়ে পায়ে হেটেই ঘুরেছে ও। হাটতে হাটতে রাস্তায় বিক্রি হওয়া খাবারও হাটতে হাটতে খেয়েছে দুজনে। আর এই কয়েকঘন্টাতে বিহান এমনভাবে মিশেছে আর কথা বলেছে যে রিখিয়াও এখন অনেকটাই ফ্রি হয়ে গেছে বিহানের সাথে। লাঞ্চ করে রিখিয়াকে ওর ফ্লাটের সামনে ড্রপ করে দিল বিহান। রিখিয়া ‘বাই’ বলে না মতে গেলেই বিহান বলল,

” আবার কবে দেখা হচ্ছে?”

” যেদিন আপনি চাইবেন।”

” নাম্বারটা সেভ করে রেখ।”

রিখিয়া মাথা নেড়ে গাড়ি থেকে নেমে চলে গেল। বিহান রিখিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসল। এরপর গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেল নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

_____________

সৌহার্দ্য আজ অফিস থেকে ফিরে সোজা বিহানের ফ্লাটেই গেল। কারণ ওর মন যখন সবচেয়ে বেশি খারাপ হয় বা সবচেয়ে বেশি ভালো হয় তখন ও বিহানের কাছেই আসে। আজ ওর মনটা খুব ভালো। কারণ হয়ত তুর্বীকে পেয়েছে তাই। তুর্বীর সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে ও ভাবতেও পারেনি। তবে যা হয়েছে ভালোই হয়েছে মেয়েটাকে পাওয়ার ইচ্ছা ছিল ওর। ও চাইলেও এটা অস্বীকার করতে পারছেনা যে ঐ একটা রাতে ও মেয়েটার প্রতি যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পরেছে। বিহানের ফ্লাটে ঢুকে সৌহার্দ্য দেখল বিহান সোফায় হেলান দিয়ে বসে আরামে পপকর্ণ খেতে খেতে মুভি দেখছে। সৌহার্দ্য বুঝতে পারল আজ বিহানও বেশ আনন্দে আছে। কিন্তু ওর আনন্দের কারণটা কী? সৌহার্দ্য ভেতরে গিয়ে ব্যাগটা রেগে বিহানের পাশে বসে টাই খুলতে খুলতে বলল,

” কী ব্যাপার এতো খুশি যে?”

বিহান হেসে পপকর্ণ মুখে নিয়ে চিবুতে চিবুতে বলল,

” আমিতো নতুন কোন মেয়ে পেলেও খুশি হয়ে যাই। তোর মন ভালো কেন সেটা বল। তুইতো মামুর অফিসে বসতেই চাইতি না। আজকে বসলি তাও এত ভালো মন নিয়ে ফেরত আসলি?”

সৌহার্দ্য পপকর্ণ হাতে নিয়ে বলল,

” তুর্বী আমার একজন এম্লয়ী।”

বিহান অবাক হয়ে সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে বলল,

” লাইক রিয়েলি।”

” আমিও অবাক হয়েছিলাম। একটা সুযোগ খুঁজছিলাম ওর সাথে দেখা করার কিন্তু এভাবে পেয়ে যাবো সেটা ভাবিনি।”

” ওয়াও ব্রো। কিন্তু তুই মেয়েটাকে কেন খুজছিলি কেন সেটা বলত?”

সৌহার্দ্য সোফায় হেলান দিয়ে হতাশ নিশ্বাস ত্যাগ করে বলল,

” সেটাইতো এখনও জানিনা ভাই!”

বিহান হালকা বাঁকা হেসে আবারও পপকর্ণ মুখে ঢুকিয়ে বলল,

“জেনে যাবে, জেনে যাবে। কী হল সেটা বল।”

সৌহার্দ্য বিহানকে সবটা বলল অফিসে ঠিক কী কী হয়েছে, সবটা শুনে বিহান হাসতে হাসতে সোফা থেকে পরে যাবে এমন অবস্থা। সৌহার্দ্যও মুচকি মুচকি হাসছে। হাসতে হাসতে বিহান বলল,

” তুই তো এক সপ্তাহে মেয়েটাকে সোজা করে দিবি।”

” সোজা করার জন্যেই তো এতকিছু।”

” দেখ, ওকে সোজা হতে দেখে তুমি না বাঁকা হয়ে যাও।”

সৌহার্দ্য বিহানের পিঠে থাপ্পড় মেরে বলল,

” চুপ যাহ।”

” আপু চলে গেছে?”

” হ্যাঁ আজ সকালেই গেছে। রাতে ফোন করবে।”

” আজ থাকবি এখানে?”

” হুম।”

” চল আজ আজ আবার তাহলে রান্নার এক্সপিরিমেন্ট করা যাক?”

” চলো ভাই!”

এরপর দুই ভাই মিলে আবার ছুটল রান্নাঘর ওলোটপালট করতে।

_____________

তুর্বী আলমারি খুলে সব জামাকাপড় গুলো বার করছে আর ছুড়ে ছুড়ে এদিক ওদিক ছড়াচ্ছে। রিখিয়া ভ্রু দেখছে ওকে। তুর্বী সব এলোমেলো করেই যাচ্ছে। রিখিয়া এবার বিরক্ত হয়ে বলল,

” কী করছ বলোতো?”

তুর্বী ড্রেস দেখতে দেখতে বলল,

” আরে কাল অফিসে যাওয়ার জন্যে ড্রেস লাগবেতো না কী?”

” হ্যাঁ তো সব এলোমেলো করার কী আছে?”

” তোকে তো বললাম তুর। আমার বস মানে বিহানের বন্ধু ঐ সৌহার্দ্য রায়হান কী কী বলেছে।”

রিখিয়া হাসল। ও তুর্বীকে আগেও বলেছিল যাতে অফিসে এসব কার্টুন-ফার্টুন, বাচ্চাটাইপ, ইনফরমাল পোশাক পরে না যায়। কিন্তু তুর্বী শুনতোনা। কিন্তু সৌহার্দ্য একদিনেই শুনিয়ে ছেড়েছে। রিখিয়া এসব ভাবতে ভাবতে তুর্বী সৌহার্দ্যকে অনুকরণ করে বলল,

” ইট’স আ ওয়ার্কপ্লেস, লেটস রেসপেক্ট দা ওয়ার্কপ্লেস। হুহ, আরে ভাই কাজের সাথে পোশাকের কী কানেকশন কেউ আমাকে বোঝাবে প্লিজ!”

রিখিয়া ফিক করে হেসে দিল। তুর্বী বিরক্ত হয়ে বলল,

” হাসিস না রিখু। হেল্প মি ইয়ার।”

রিখিয়া হাসতে হাসতেই বলল,

” আচ্ছা সরো দেখছি।”

রিখিয়া অনেক্ষণ খুঁজে একটা একটা ফর্মাল ড্রেস বের করে তুর্বীর হাতে দিয়ে বলল,

” নাও এটা পরো তাহলেই হবে।”

তুর্বী নাক কুঁচকে বলল,

” দূর! এখন এসব পরে যেতে হবে অফিসে। ওই লোকটার জীবনে ভালো হবেনা, দেখে নিস।”

রিখিয়া বিছানায় বসে বলল,

” হ্যাঁ হ্যাঁ আমার মহামানবী, আপনার বাক্য তো বক্ষ্মবাক্য তাইনা?”

তুর্বী জোরে জোরে দুটো শ্বাস নিয়ে বলল,

” হ্যাঁ সেটাই হবে। এবার বলত বিহানের সাথে ডেট কেমন গেল?”

রিখিয়া ভ্রু কুচকে বলল,

” ডেট?”

” না মানে দিনটা কেমন ছিল?”

” ভালোই। লোকটাকে আজ অন্যরকমভাবে আবিষ্কার করলাম জানিস। বাইরে দিয়ে একটু অন্যরকম ঠিকই কিন্তু মন বেশ ভালো।”

” হুমম, বুঝলাম যে তুই..”

বলতে বলতে তুর্বীর চোখ রিখিয়ার গলায় যেতেই তুর্বী বলল,

” এই এটাতো তোর পেন্ডেন্ট টা কে দিল?”

রিখিয়া পেন্ডেন্টটায় হাত দিয়ে একটা লাজুক হাসি দিয়ে কিছুটা ইতস্তত করে বলল,

” বিহান দিয়েছে।”

তুর্বী হেসে দিয়ে রিখিয়ার থুতনি ধরে বলল,

” ওলে আমার লজ্জাবতীরে। এখনই এত লজ্জা হুম?”

এটুকু বলে হাসতে হাসতে হঠাৎই রিখিয়া মুখটা গোমড়া করে ফেলল। গোমড়া মুখ নিয়েই বলল,

” আমারই কপালে কিছু জুটছেনা। দুনিয়াতে কী একটা জিনিস নেই যে আমার শর্তে রাজি হয়ে রিলেশনে আসবে!”

রিখিয়া মজা করে বলল,

” কেন? তোমার বস আছেতো। তাকেই বেছে নাও।”

তুর্বী বিস্ফোরিত চোখে তাকাল রিখিয়ার দিকে। অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,

” নট আ ব্যাড আইডিয়া! এটাতো ভাবিই নি আমি। মাঝেমাঝে মজার ছলে কাজের কথা বলিস তুই। ইয়াপ!”

রিখিয়া অবাক হয়ে তাকাল তুর্বীর দিকে। ও তো মজা করেছিল তুর্বীর সাথে মেয়েটাতো সিরিয়াসলি নিয়ে নিল।

#চলবে…