জল-ফড়িঙের খোঁজে পর্ব-৫+৬

0
632

#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৫
.
রিখিয়া ব্যাংকে বসে লোকেদের টাকা দেওয়ার কাজ করছে। আজ ব্যাংকে তেমন ভীর নেই। রিখিয়া মাথায় এখন অন্যচিন্তা ঘুরছে। বাড়িতে তো প্রয়োজন মত টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু শুধু তুর্বীর বেতন দিয়ে ফ্লাট ভাড়া , বাজার, যাতায়াত ভাড়া আরও বাড়তি সব খরচ চালাতে হবে। সেটুকু হলেও টেনেটুনে চালিয়ে নেওয়া যেত, কিন্তু তুর্বীর চেইন টাও তো ছাড়াতে হবে। তুর্বীর মায়ের শেষ স্মৃতি ঐ চেইনটা। অথচ মেয়েটা নিঃসংকোচে চেইনটা খুলে দিয়ে দিয়েছে। এসব ভেবে টেনশনে রিখিয়ার মাথাটা ফেটে গেলেও তুর্বী দিব্বি হেসে খেলে বেড়াচ্ছে। চিন্তা ভাবনা বলেও যে কিছু আছে সেটা ঐ মেয়েটা হয়ত জানেই না। কিন্তু ওই বা কী করবে? জীবনটা এত জটিল কেন? মধ্যবিত্তদের জীবন সবচেয়ে কঠিন হয়। জীবন সংগ্রাম ঠিক কী সেটা প্রতিমুহূর্তে টের পায় তারা। ছোট্ট শ্বাস ফেলে কাজে মনোযোগ দিল রিখিয়া। এসব ভেবে কাজে গাফিলতি করলে চলবেনা, এই চাকরিটাই তো ওর একমাত্র সম্বল। এটা চাকরিটা চলে গেলে ওর বাবা মার কী হবে? সংসার কীভাবে চলবে?

বিহানও ওর নতুন পেন্টিং প্রেসেন্ট করে পুরষ্কার হিসেবে টাকার চেক পেয়েছে। সেই টাকা টাই ক্যাশ করতে ঐ ব্যাংকেই এসছে। ব্যাংকে এসে রিখিয়াকে দেখেই থমকে দাঁড়াল ও। এটা তো সেই লিফটের মেয়েটা? মেয়েটা এই ব্যাংকেই কাজ করে? মনে মনে কথাগুলো আওরে নিল বিহান। হঠাৎ করেই ঠোঁটে ওর সেই বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। একটা দুষ্টু বুদ্ধি এল ওর মাথায়। মেয়েটা একটু বেশিই সাদামাটা, নম্র, ভদ্র টাইপ। আর এরকম মেয়েদের একটু বিরক্ত করাতে অদ্ভুত মজা পাওয়া যায়। শান্ত শিষ্ঠ মেয়েটা যখন চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে, বা একটু রাগ নিয়ে তাকাবে সেই মুখটা খুব বেশিই উপভোগ করার মত হবে। তাই কিছু একটা ভেবে ওর কাছে থাকা চেকবুকটা থেকে একটা ব্লাঙ্ক চেক ছিড়ে নিয়ে
এগিয়ে গেল। কাউন্টারে গিয়ে একটু কাশি দিতেই রিখিয়া মাথা তুলে তাকাল। বিহান কে দেখে চিনতে একটুও দেরী হয়নি ওর। সেদিন লিফটের কথা মনে পরতেই মেজাজ ভীষণ খারাপ হল। ও বিরক্তি নিয়ে বলল,

” জি?”

বিহান মুখে সেই হাসি রেখেই বলল,

” তুলতে এসছি।”

রিখিয়া একটু হকচকিয়ে গেল। তুলতে এসছে মানে কী? কী মতলব এই ছেলের? ও ইতস্তত করে বলল,

” সরি?”

” টাকা। টাকা তুলতে এসছিলাম।”

বলে মেকি একটা হাসি দিল বিহান। এতক্ষণে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল রিখিয়া। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

” জি অপনার একাউন্ট থেকে টাকা তুলবেন?”

বিহান সঙ্গেসঙ্গেই ডানে বায়ে মাথা নাড়িয়ে বলল,

” নাহ!”

” তাহলে?”

” অন্যের একাউন্ট থেকে টাকা নেব।”

রিখিয়া একটু অবাক হয়ে তাকাল বিহানের দিকে। এই লোকটা কী বলছে আর কী করতে চাইছে কিছুই বুঝতে পারছেনা ও। অন্যের একাউন্ট থেকে টাকা তুলবে মানে কী? রিখিয়া এবার একটু বিরক্ত হয়েই বলল,

” মানে?”

” মানে হল অন্যকেউ আমায় একটা চেক দিয়েছে আমি সেই চেক দিয়ে টাকা তুলব। এটুকু জানেন না আর ব্যাংকে চাকরি করেন?”

এবার একটু রেগে গেল রিখিয়া। লোকটা ইচ্ছে করে ওকে কনফিউসড করছে সেটা নিয়ে তো কোন সন্দেহ নেই ওর মনে। যাই হোক এখন এই লোককে তাড়াতাড়ি বিদায় করতে পারলেই হয়। তাই রিখিয়া নিজেকে শান্ত করে বলল,

” চেক দিন?”

বিহান এবার সেই ব্লাংক চেকটা রিখিয়ার দিকে এগিয়ে দিল। রিখিয়ি চেকটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে ব্লাংক চেক দেখে এবার সত্যিই প্রচন্ড রকমের বিরক্ত হলো। এসব ফাজলামির মানে কী? ওকে দেখে কী সার্কাসের জোকার মনে হচ্ছে লোকটার? তখন থেকে জ্বালিয়ে যাচ্ছে। রিখিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” এটা ব্লাংক চেক।”

বিহান এমন একটা ভাব করল যেন ব্যাপারটায় বেশ অবাক হয়েছে সে। যেন এরকমটা হওয়ার কথাই ছিল না, একদমই না। তাই অবাক হয়ে বলল,

” কী বলছেন কী? ওয়েট! ওয়েট! ও হ্যাঁঅ‍্যাঅ‍্যা। আমি ভুল চেক দিয়ে ফেলেছি আপনাকে। দাঁড়ান আসলটা দিচ্ছি। ”

বলে বিহান চেকটা নিয়ে নিল। রিখিয়া আর কী বলবে? এটুকু সময়েই বিহান ওর মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে। ও বোকার মত তাকিয়ে আছে। বিহান এবার ঐ চেকটা বের করে রিখিয়ার হাতে দিল। রিখিয়া চেকটা নিয়ে সব প্রসেসিং কম্প্লিট করে ক্যাশ বের করে বিহানের দিকে দিল। ভীর নেই তাই ওখানে দাঁড়িয়েই টাকা গুনতে শুরু করল বিহান। এবার বিহানের দিকে একটু ভালো করে তাকাল রিখিয়া। একটা নীল ফুলহাতা টিশার্ট পরেছে, টিশার্ট টা বিহানের সুঠাম দেহে লেগে আছে ; কালো জিন্স, স্পাইক করে রাখা চুলগুলো কিউট ইনোসেন্ট টাইপ চেহারাটার সাথে একটু বেশিই মানানসই। এত ইনোসেন্ট, কিউট টাইপ চেহারার একটা ছেলের পেটে পেটে এতো শয়তানি কীকরে থাকে বুঝতে পারছেনা রিখিয়া। এসব ভাবতে ভাবতেই বিহান টাকা গোনা শেষ করে রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

” থ্যাংক ইউ।”

রিখিয়া কিছু না বলে চোখ সরিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

” যত্তসব, ফাল্তু লোকজন।”

বিড়বিড় করে বললেও বিহান রিখিয়ার কথা স্পষ্টই শুনতে পেল। রিখিয়া বিহানের দিকে তাকাতেই ও মুচকি হেসে চোখ মেরে দিল। রিখিয়া তো হা করে তাকিয়ে আছে। বিহান শিশ বাজাতে বাজাতে বেড়িয়ে গেল। রিখিয়ার পাশে একটু দূরে বসা ওর কলিগ ঋতু বলল,

” কে রে? তোর পরিচিত কেউ নাকি?”

রিখিয়া বিরক্তি নিয়ে বলল,

” আরে না। কোথা থেকে চলে আসে এসব।”

” আজকে স্যারের বার্থ ডে আমাদের ট্রিট দেবে অফির টাইমের পর। যাবিনা?”

” যেতে তো হবেই।”

“হুম।”

বলে ঋতু কাছে মনোযোগ দিল। ধূর! আজকে ব্যাংকে ভীড় থাকলে কত ভালো হতো, এই উদ্ভট লোকটা এতক্ষণ ওকে এত জ্বালাতে পারল। কী আর করবে? তাই এসব ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে আবার কাজে মন দিল রিখিয়া। এসব উদ্ভট, ফালতু, অপ্রয়োজনীয় মানুষের কথা ভেবে নিজের কাজের ক্ষতি করার কোন মানেই হয়না।

বিহান টাকা নিয়ে ঐ বিল্ডিং এর ওপরের ফ্লোরেরই গেল। ওখানেই আপাতত কাজ আছে ওর। আজ ওখানে বসেই নিজের একটা পেন্টিং শেষ করবে ওও। এরপর আবার ওর আরেকজন গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে হবে। তারপর রাতে স‍ৌহার্দ্যের সাথে লং ড্রাইভে যাবে। এটাই ওর সারাদিনের প্লান। বিয়ার খেতে খেতে ড্রাইভ করার মজাই আলাদা। যদিও একপর্যায়ে সৌহার্দ্য ওকে আর ড্রাইভ করতে দেয়না। যখন বিহানের ভালোভাবে নেশা ধরে যায় তখন সৌহার্দ্য জোর করেই ওকে ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে নিজে ড্রাইভ করে। ছেলেটা একটু বেশিই গোছানো, ডিসিপ্লিনড। এসব কথা ভেবেই হালকা হাসতে হাসতে কাঙ্ক্ষিত ফ্লোরের উদ্দেশ্যে রওনা দিল ও।

সন্ধ্যা ছয়টায় রিখিয়া আর ওর সব কলিগরা অফিস থেকে বেড়োলো ব্যাংক থেকে। সকলেই রেস্টুরেন্টে যাবে। ব্যাংক ম্যানেজারের আজ জন্মদিন তাই সে আজ সবাইকে খাওয়াবে। সবাই মিলে প্রায় আধঘন্টার পথ অতিক্রম করে ওরা রেস্টুরেন্টে পৌছালো। রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকে বেশ অবাক হল রিখিয়া। অনেক বড় রেস্টুরেন্ট এটা। এরকম রেস্টুরেন্টে সচরাচর আসার মতো ক্ষমতা হয়না রিখিয়ার। সবাইকেই বুক করা টেবিলগুলোতে বসানো হল। রিখিয়াও চুপচাপ বসে আছে আর আশেপাশে সবকিছু দেখছে। হঠাৎ ওর চোখ পরল দূরের কোণের একটা টেবিলে, সেখানে তাকিয়ে রিখিয়ার চোখে মুখে আবার বিরক্তি ফুটে উঠল। কারণ কর্ণারে বিহান বসে আছে। না, সে একা বসে নেই। সাথে একটা মেয়েও বসে আছে। বিহান আর মেয়েটা খুব ক্লোজ হয়ে বসে আছে। কথার তালে তালে বিহান বারবার মেয়েটার সামনের চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছে, মেয়েটাও কখনও বিহানের গাল টেনে দিচ্ছে, কখনও গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, আবার কখনও নাক টেনে দিচ্ছে। তারওপর এই মেয়েটা সেই মেয়েটা না যাকে ও লিফট এ দেখেছিল। রিখিয়া মনে মনে বলল, ‘ঠিকই ভেবেছিলাম প্রথম দিন। এই ছেলের ক্যারেক্টার একদম ঢিলা। আজকে এই মেয়ে, তো কালকে আরেক মেয়ে। প্লে-বয় কোথাকার।’ এসব ভাবতে ভাবতেই খাবার চলে এল। খাবারগুলো দেখে রিখিয়ার মন খারাপ হয়ে গেল। ও এখানে এত ভালো ভালো খাবার খাবে তুর্বীকে ছাড়া? এখন এই দামী সুস্বাদু খাবারগুলোও ওর কাছে স্বাদহীন মনে হবে। ইশ! যদি তুর্বীকে সাথে এনে একসাথে খেতে পারত। কিন্তু কী আর করবে? চাইলেই তো আর সবকিছু হয়না। তাই একপ্রকার জোর করেই সবার সাথে কোনরকমে খাওয়া শেষ করল। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রিখিয়ারা উঠতে যাবে তখনই এনাউস করা হল এখানে পার্টি হবে। বড় এক কম্পানি বুক করে নিয়েছে কয়েক ঘন্টার জন্যে। সবাই যাতে থেকে যায়। কিন্তু এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে তাই রিখিয়া আর থাকবে না। ও যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখনই ঋতু এসে বলল,

” ইয়ার যাস না প্লিজ। দেখ পার্টিতো বেশিক্ষণ চলবে না। ঘন্টাখানেক থাক। এরপর আমরা দুজনে একসাথেই বেড়োবো।'”

রিখিয়া চিন্তিত মুখে একবার সময় দেখে নিয়ে বলল,

” কিন্তু..”

” প্লিজ না করিস না। শোন আমার কথাটা। প্লিজ! প্লিজ! প্লিজ!”

ঋতুর অনেক জোরাজুরিতে আর না করতে পারল না রিখিয়া। ঘন্টাখানেকের জন্যে থেকে গেলে কী বা হবে? কিছুক্ষণ পরেই মিউসিক এর তালে সবাই নাচতে শুরু করল। সবাই নাচলেও রিখিয়া এককোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখ আবারও বিহানের ওপরেই পরল। বিহান ঐ মেয়েটার সাথে নাচ করছে। যেটা ওখানকার সবার কাছে নরমাল হলেও রিখিয়ার কাছে খুবই অস্বস্তিকর। ওর মতে এগুলো দেখাও পাপ। শুধু পাপ না মহাপাপ। তাই ও চোখ মুখ কুচকে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে আর এদিক ওদিক হাটছে।

নাচতে নাচতেই বিহানের চোখ রিখিয়ার দিকে গিয়ে পরল। সবাই নিজের মত নাচ-গান করে মজা করছে তার মধ্যে কীভাবে বিরক্তি নিয়ে চুপচাপ এদিক ওদিক হেটে যাচ্ছে। এটা হয়ত এরকম ভালো মেয়েদের পক্ষেই সম্ভব। হ্যাঁ মেয়েটা ভালো, একটু বেশিই ভালো। সেটা বিহান জানে আর মানেও। কিন্তু ও তো ভালো না, একদমই ভালো না। লাগামহীন, লক্ষহীন, নিকৃষ্ট, খারাপ, নষ্ট হয়ে যাওয়া একটা ছেলে। এইদুই দিন মেয়েটার সাথে মজা করলেও এখন আর মেয়েটার কাছে যাবেনা বলে ঠিক করে নিয়েছে বিহান। ও চায়না ওর মত খারাপ একটা ছেলের প্রভাব ওরকম ভালো ভদ্র মেয়ের ওপর পরুক। ডান্স করতে করতে রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে এটাই ভাবছিল ও কিন্তু হঠাৎ কিছু একটা চোখে পরতেই ওর ভ্রু কুচকে গেল। কিছু একটা ভেবে এগিয়ে গেল রিখিয়ার দিকে।বিহান রিখিয়ার পেছনে দাঁড়িয়ে কিছু বলল কিন্তু মিউসিক এত লাউডে ছিল রিখিয়া বিহানের কন্ঠস্বর শুনতে পেলেও কী বলেছে সেটা শুনতে পায়নি। তবে এরকম ছেলে ভালো কিছু বলতেই পারেনা সেটা নিশ্চিত ও। তাই ও দ্রুত সরে দাঁড়ালো। বিহান আবার ওর পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কিছু বলবে তার আগেই রিখিয়া ঘাবড়ে আবারও সরে গেল। বিহান সম্পর্কে রিখিয়ার যা ধারণা হয়েছে তাতে এটাই স্বাভাবিক। হঠাৎ করে রিখিয়া ওর পিঠে কারো হাতের ছোঁয়া পেয়েও কেঁপে উঠল। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে বিহানের হাত ওর জামার জিপে আর ওর জিপ অর্ধেক খোলা অবস্থায় আছে। রিখিয়ার শান্ত মস্তিষ্কে জেনো মুহূর্তেই আগুন জ্বলে উঠল। চোখ ছলছল করে উঠল ওর। বিহান ওর সেই বাঁকা হাসি কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিখিয়া ওর সর্বশক্তি দিয়ে চড় মেরে দিল বিহানকে। বিহান গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকাল রিখিয়ার দিকে। আস্তে আস্তে সবার চোখে পরল ব্যপারটা। ধীরে ধীরে মিউসিক থেমে গেল। রিখিয়া হুট করে এতটাই রেগে গেছে যে ও কী করছে বা বলতে তার জ্ঞান নেই ওর। কথায় আছে শান্ত নদী যদি হঠাৎ অশান্ত হয়ে যায় তখন সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সেরকমই কিছু হয়েছে। ও রেগে চেঁচিয়ে বলল,

” ক্যারেক্টার লেস ছেলে একটা। আমাকে আপনার ওসব গার্লফ্রেন্ডদের মত মনে হয়? হ্যাঁ? যেখানে যা খুশি করবেন আমার সাথে? আমার গায়ে হাত দেবেন? আমার জামার চেইন..”

এটুকু বলে থেমে গেল ও। চোখে জমে থাকা জলটা গড়িয়ে পরল গাল বেয়ে। চারপাশে কানাঘুষা শুরু হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই সবাই বিহানকেই খারাপ বলছে। পার্টিতে থাকা কিছু জার্নালিস্ট এর ক্যামেরা বিহানের দিকেই। বিহান শুধু শক্ত চোখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিখিয়ার দিকে। রিখিয়া নিজেও জানেনা আজ ও এক ভয়ংকর কাজ করে ফেলেছে। কারো পুরোনো ক্ষতকে খুচিয়ে রক্তাক্ত করে দিয়েছে।

#চলবে…

#জল-ফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৬
.
ঋতু তাড়াতাড়ি এসে রিখিয়ার জামার চেইনটা পুরোটা লাগিয়ে দিল। রিখিয়া যখন দেখল সব ক্যামেরা, সবার দৃষ্টি ওদের দিকে তখন ওর রাগটা আরও বেড়ে গেলো। চোখ মুছে ভাঙা গলায় বলল,

” আপনাদের মত চরিত্রহীন ছেলেদের কাছে এর থেকে কী আশা করা যায়। আপনাদের কাছে তো সব মেয়েই সমান। মেয়েদের নিজের খেলনা মনে করেন হ্যাঁ? আমিও কাকে কী বলছি? মেয়েদের মন নিয়ে খেলা তো আপনাদের বৈশিষ্ট্য। তাইতো এরকম পাবলিক প্লেসে একটা মেয়েকে অপমান করতেও আপনার বিবেকে বাঁধলো না।”

বিহান এখনও একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে রিখিয়ার দিকে। এটুকু বলে একবার দৌড়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে গেল রিখিয়া। জার্নালিস্টরা যাওয়ার পথে রিখিয়াকে অনেক প্রশ্ন করলেই ও কিছু না বলে দৌড়ে বেড়িয়ে গেল। ঋতুও রিখিয়ার পেছন পেছন গেল। এরপরেই জার্নালিস্টরা সবাই মিলে বিহানকে চেপে ধরল। বিহান কারো প্রশ্নের কোন উত্তর দিল না ওখান থেকে নরলোও না। শুধু চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। সিকিউরিটির জন্যে পুলিশ এনেছিল কম্পানির এম.ডি তারা এগিয়ে এল।

________________

বড় সোফায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে টিভি দেখছে আর চকলেট কাচ্ছে তুর্বী। একা একাই বকবক করে যাচ্ছে তখন থেকে কিন্তু রিখিয়া কোন উত্তর দিচ্ছে নাহ সোফার সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে হাটু গুটিয়ে বসে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে আর কফি খাচ্ছে, কিন্তু ও অন্যভাবনায় মগ্ন। রিখিয়া অফিস থেকে এসে কোন কথা বলেনি। চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে,চেঞ্জ করে সোজা কিচেনে চলে গেছে। তুর্বী তখন ল্যাপটপে কাজ করছিল। ল্যাপটপটা তুর্বীকে ওর অফিস থেকেই দিয়েছে। নিজের টাকায় কেনার মত অত টাকা নেই ওর। প্রথমে ভেবেছিল ব্যাংকে কোন ঝামেলা হয়েছে তাই কিছু বলেনি তুর্বী। এমন সময় প্রশ্ন করলে মন আরও খারাপ হয়। তাই পরে জিজ্ঞেস করবে ভেবেই চুপ ছিল ও। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে যে ব্যাপারটা সিরিয়াস, নইলে ও এত বকবক করে যাচ্ছে কিন্তু রিখিয়া ‘হ্যাঁ’, ‘না’ কিছুই বলছে না? তুর্বী এবার ঠিক হয়ে উঠে রিখিয়ার পাশে ফ্রোরে বসল। রিখিয়ার দৃষ্টি এখনও টিভির দিকে। তুর্বী রিখিয়াকে ওর হাতের কনুই দিয়ে একটা খোঁচা মারল। রিখিয়া তাকাতেই তুর্বী ভ্রু নাচিয়ে বলল,

” কী হয়েছে বলতো?”

রিখিয়া একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে তুর্বীর হাত জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে মাথা রাখল। তুর্বী রিখিয়ার গালে হাত রেখে বলল,

” কী হয়েছে বলবি তো? এভাবে চুপ থাকলে কীকরে বুঝবো?”

রিখিয়া এবার আস্তে আস্তে ঐ রেস্টুরেন্টে ঘটা সব কথা খুলে বলল। তুর্বীতো রেগে আগুন হয়ে গেল। ও রাগে গজগজ করে বলল,

” কী? এত বড় সাহস ঐ ছেলের? তোর শরীরে হাত দিয়েছে। একেতো আমি..। এই তুই পুলিশকে জানাস নি? পুলিশে দিস নি ওকে? এটা তো একটা ক্রাইম।”

রিখিয়া অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল তুর্বীর দিকে। তুর্বী রিখিয়ার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,

” দেখ এটা একপ্রকার সেক্সুয়াল এসল্ট এর মধ্যে পরে। কোন মেয়েকে ইচ্ছাকৃতভাবে শরীরের যেকোন জায়গায় অস্বস্তিকরভাবে ছোঁয়াকেই সেক্সুয়াল এসল্ট এর মধ্যে পরে। আর এটা আইনত অপরাধ। তুই এভাবে ছেড়ে কীকরে দিতে পারিস? ইনফ্যাক্ট ছাড়বিই বা কেন? এদের চর জন্যে শুধু চড় থাপ্পড় যথেষ্ট না। সোজা জেলের ঘানি টানাতে হয়। এরপর থেকে যদি কখনও এমন হয় বা হতে দেখিস সাথে সাথেই ‘ ৯৯৯’ তে ফোন করবি। এত যত ছাড়বি এরা ততই পেয়ে বসবে।।”

হঠাৎ করেই রিখিয়ার সেই মিডিয়ার লোকেদের কথা মনে পরল এনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে নিউস করে ফেলেছে। এসব ভেবে রিখিয়া কিছু বলবে তার আগেই ওর ফোনে ফোন এল। ওর ব্যাংকের ম্যানেজার ফোন করেছে। ও তাড়াতাড়ি রিসিভ করে কথা বলল। ফোন রেখে দেওয়ার পর তুর্বী বলল,

” কী রে কে ফোন করেছে?”

তুর্বী একবার ফোনের দিকে একবার তুর্বীর দিকে তাকিয়ে বলল,

” স্যার ফোন করেছিল আমায় যেতে বললেন ঐ রেস্টুরেন্টে। এসছি তো ঘন্টা দুই হয়ে গেছে এখনও ওখানের ঝামেলা মেটে নি নাকি?”

তুর্বী বলল,

” আরে যেতে যখন বলেছে নিশ্চয়ই কোন না কোন কারণ আছে। আগেতো চল গিয়ে দেখি কেসটা কী হল।”

এদিকে সৌহার্দ্য হঠাৎ করেই কাজ পরে যাওয়াতে সিলেট এসছিল। ওর আজ বিকেলের মধ্যেই ঢাকায় চলে আসার কথা ছিল কিন্তু একটা দরকারি কাজ পরে গেছিল যেটা বিহান জানে না। ও ভেবেছিল কাজ সেড়ে হোটেলে ফিরে বিহানকে জানাবে কিন্তু সোসাল মিডিয়াতে ঢুকে এসব দেখে ও অবাক হয়ে গেল। এসব কী হচ্ছে? ও জানে বিহান একটু অন্যরকম। কিন্তু ও কখনও কোন মেয়েকে এভাবে অসম্মান করবেনা এটা ও জানে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে সৌহার্দ্যর। কেন? এই ছেলেটাকেই কেন? কেন এই ছেলেটাকে বারবার এরকম জঘন্য পরিস্থিতির মুখে পরতে হয়। সৌহার্দ্য আর কিছু না ভেবে সব কাজ ফেলে ঐ মুহূর্তেই বেড়িয়ে পরল ঢাকার উদ্দেশ্যে।

দুজনেই গেল সেই রেস্টুরেন্টে ওখানে গিয়ে তো অবাক। মারাত্মক ভীর হয়ে গেছে। মিডিয়ার লোকেরা তো যথারীতি তাদের কাজ করেই যাচ্ছে। ওরা ভীর ঠেলে ভেতরে গিয়ে দেখে ওখানে কয়েকজন পুলিশ, রিখিয়াদের ব্যাংকের ম্যানেজার, আরো দুজন ভদ্রলোক আছেন। আর বিহান একটা চেয়ারে শক্ত হয়ে বসে আছে। ওই মুহূর্তের পর এখনও অবধি একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি ও। রিখিয়া যেতেই ম্যানেজার পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলল,

” হ্যাঁ এই সেই মেয়ে।”

পুলিশ অফিসার রিখিয়ার সামনে এসে ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করল। আর রিখিয়া সেটাই বলল অফিসারকে সেটা ওর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সত্যি। এবার অফিসার বিহানের দিকে তাকিয়ে বললেন,

” উনি যা বলছেন সেটা সত্যি? আপনি সত্যি এসব করেছেন?”

বিহান রিখিয়ার দিকে শুধু শক্ত চোখে একপলক তাকালো তারপর আবারও নিচের দিকে তাকিয়ে রইল কিন্তু কিছুই বলল না। যেহেতু ভিকটিম আর আশেপাশের সাক্ষী একই কথা বলছে আর অভিযুক্ত নিজেই চুপ হয়ে আছে নিজের পক্ষে কিছুই বলছে না। তাই অফিসার রা বিহানকে নিয়ে চলে গেল। আর রিখিয়ার স্টেটমেন্ট ও নিয়ে নিল। তুর্বী সুক্ষ দৃষ্টিতে দেখছিল এতক্ষণ বিহানকে। ওর ইচ্ছে ছিল যে এসেই বিহানকে আচ্ছামত ঝেড়ে দেবে। কিন্তু বিহানকে দেখে ওর কেন যেন মনে খটকা লেগে গেল। সেই খটকার কারণ হচ্ছে বিহানের অতি শান্ত আর শক্ত রূপটা। রিখিয়া ওকে বলল,

” কী রে? কী ভাবছো?”

” তুই শিওর? এই ছেলেটাই ছিল?”

” মানে?”

” নাহ। কিছুনা চল।”

_________________

রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেছে। এতক্ষণে সোসাল মিডিয়া, নিউজে এটা নিয়ে তোলপাড় হয়ে গেছে। আসলে ব্যাপারটা এতটা বাড়াবাড়ি হতোনা যদি এটা বাসে, অন্য কোন ভীড়-টীড় বা কিছতে হতো। কিন্তু এটা একটা বড় বিজনেসম্যানের পার্টিতে, এতো মিডিয়া আর পুলিশদের উপস্থিতিতে ঘটেছে। আর মানুষ তো একটা ইস্যু পেলে সেটা না চটকে ছাড়েনা সেইজন্যই এতটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো।

বিহান চুপচাপ বসে আছে। একরাতেই ওর চোখ মুখ সব লাল হয়ে গেছে। সৌহার্দ্য ওর পাশে বসে আছে গম্ভীর হয়ে। দুজনেই থানাতে বসে আছে। সারারাত বিহানকে থানাতেই থাকতে হয়েছে। অথচ ওর পরিবারের কেউ আসেনি ওর কাছে। স্পেশাল রিকোয়েস্টেই লকাপের ভেতরে গিয়ে বিহানের পাশে বসেছে সৌহার্দ্য। ঘন্টাখানেক আগে সৌহার্দ্য এসে পৌছেছে এখানে। এসেই পুলিশ অফিসারকে বলে আবার সবাইকে ডেকে পাঠিয়েছে। স‍ৌহার্দ্য বিহানের কাধে হাত রেখে বলল,

” এভাবে চুপ করে থাকলে কিচ্ছু হবেনা। কেন কিছু বলছিস না? বল যে কী হয়েছিল।”

“চলে যা।”

দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা পর এটুকুই বলল বিহান। সৌহার্দ্য এবার রেগে গিয়ে বলল,

” দেখ এবার কিন্তু মার খাবি কী শুরু করেছিস কী তুই? আমাকে তো বলবি?”

কিন্তু বিহান এখনও চুপ করে আছে। সৌহার্দ্য এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

“ঠিকাছে কিচ্ছু বলিস না। যা করার আমিই করছি। পাঁচ বছর আগে যেটা করতে পারিনি সেটাযে আজও পারব না সেটা ভাবার কোন কারণ নেই।”

বলে লকাপ থেকে বেড়িয়ে কাউকে ফোন করে কথা বলল। এরমধ্যে চেচামেচি করতে করতে থানায় এলো তুর্বী আর ওকে শান্ত করতে করতে রিখিয়া আসছো। তুর্বী চেঁচিয়ে বলল,

” কী পেয়েছেন কী আপনারা হ্যাঁ? কখনও রাতে ডাকছেন আবার সকালে। এগুলোর মানে..”

এটুকু বলতে বলতেই সৌহার্দ্যর দিকে চোখ পরতেই অবাক হল তুর্বী সৌহার্দ্যও বেশ অবাক হয়েছে। তুর্বী বলল,

” আপনি এখানে?”

সৌহার্দ্য বলল,

” আমারও একই প্রশ্ন।”

” আমার ফ্রেন্ডের সাথে এসছি। কালকে এমনিতেই একটা ছেলে ওকে হ্যারাজ করল তারওপর কখনও এখানে ডাকে তো কখনও ওখানে।”

” আমিই ডেকেছি আপনাদের। আর যার বিরুদ্ধে আপনাদের অভিযোগ সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এবং ভাই।”

তুর্বী এবার কোমরে হাত দিয়ে বলল,

” ওওও। তারমানে নিজের ক্যারেক্টারলেস বন্ধু প্লাস ভাইয়ের হয়ে ওকালতি করতে এসছেন?”

এটুকু বলতেই সৌহার্দ্য থানা কাঁপিয়ে ধমক দিয়ে উঠল তুর্বীকে। তুর্বী হালকা কেঁপে উঠল। সৌহার্দ্য তুর্বীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,

” একদম চুপ! বিহানের সম্পর্কে একটা শব্দও না গট ইট? ও এমন কিচ্ছু করেনি।”

তুর্বী একটু সাহস জুগিয়ে বলল,

” তো আমার বান্ধবী মিথ্যা বলছে?”

” আমি সেটা বলিনি। কালকে সোসিয়াল মিডিয়াতে আপনার বান্ধবীর ওসব কথার ভিডিওগুলো দেখেই বুঝেছি ও যথেষ্ট ভদ্র মেয়ে। তাই ও মিথ্যা বলেনি। কিন্তু আমার ভাইও কিচ্ছু করেনি।”

তুর্বী হাত ভাজ করে বলল,

” প্রমাণ করুন?”

সৌহার্দ্য হেসে বলল,

” প্রমাণ করতেই সবাইকে ডেকেছি। ওয়েট!”

এরমধ্যেই মিডিয়া লোকেরাও চলে এল। অফিসার অবাক হয়ে বললেন,

” এরা কেন?”

সৌহার্দ্য বলল,

” বিহানের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ যখন ওনারাই পাবলিক করেছেন তখন ওর নির্দোষ হওয়ার খবরটাও ওনারাই সবাইকে দেবে।”

এরমধ্যে বিহানকেও এখানে নিয়ে আসা হলো। বিহান এখনও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সবাই অপেক্ষায় আছে যে সৌহার্দ্য কী করতে চাইছে সেটা দেখার জন্যে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই রেস্টুরেন্টে লোকেরা চলে এলো। সৌহার্দ্য এগিয়ে গিয়ে বলল,

” এনেছেন?”

উত্তরে তারা হ্যাঁ বলল। সৌহার্দ্য এবার সবার উদ্দেশ্যে বলল,

” কালকে রাতের ঐ পার্টির সিসি টিভি ফুটেজ আছে ওনাদের কাছে। তাই এখন এটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে যে কী হয়েছিল আসলে।”

সবাই চমকে উঠল। এটাতো কারো মাথাতেই আসেনি। তুর্বী আর রিখিয়া দুজনেই এবার একটু নড়েচড়ে দাঁড়াল। আসল ঘটনাটা ওরাও দেখতে চায়। সৌহার্দ্য পূলিশদের সাহায্যে ফূটেজটা সবাইকে দেখাতে শুরু করল। সবাই কৌতূহলী চোখে দেখছে। ওই জায়গাতে এসেই সবাই দেখল যে রিখিয়ার ড্রেসের চেইনটা প্রায় পুরোটাই খোলা। আর বিহান রিখিয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রিখিয়ার কাছে গিয়ে বিহান রিখিয়াকে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু রিখিয়া শুনতে পাচ্ছেনা আবার ভয় পেয়ে সরেও যাচ্ছে। বিহান এবার রিখিয়ার পেছন গিয়ে নিজেই চেইনটা অর্ধেকের মত লাগাতেই রিখিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল আর থাপ্পড় মেরে দিল ওর গালে। এটুকুতেই পজ করল ফুটেজটা। সবাই অবাক। কী ভেবেছিল আর কী হল? রিখিয়াতো শকড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর ভালো করতে এসে ছেলেটাকে এভাবে চরম হেনস্তা হতে হল ভাবতেই এখন কান্না পাচ্ছে ওর। অসহায় চোখে তাকাল বিহানের দিকে। বিহান দেয়ালে হেলান দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, ফূটেজ চলাকালীন সময়েও একবারও তাকায়নি ফুটেজের দিকে। তুর্বী তো দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বলল, ‘লে কলা’। সৌহার্দ্য স্বস্তির শ্বাস ফেলল ও জানত বিহান এত খারাপ কাজ করতেই পারেনা। ও এবার অফিসারের দিকে তাকিয়ে রেগে বলল,

” এটা কী আপনাদের কালকে দেখার কথা ছিল না? সিসি ক্যামেরা থাকে কেন?”

অফিসার ইতস্তত করে বলল,

” আসলে অনেকে সাক্ষী ছিল আর উনিও নিজের হয়ে কিছু বলছিলেন না। উনি যদি তখন সব বলতেন তাহলে আমরা চেক করতাম।”

সৌহার্দ্য কিছু বলল না আর। কারণ এখন তর্ক করে লাভ নেই। মিডিয়ার লোকেরা প্রশ্ন করতে চেয়েছিল কিন্তু এটুকু বিনোদন দিয়েই তাদের বিদায় দেওয়া হল। এরপর বিহানকেও ছেড়ে দেওয়া হল। রিখিয়ার চেহারা পুরো কাঁদোকাঁদো হয়ে গেছে। তুর্বী খোঁচা মেরে চোখের ইশারা করতেই ও এগিয়ে গিয়ে বিহানকে বলল,

” দেখুন আ’ম..”

আর কিছু না শুনেই হনহনে পায়ে থানা থেকে বেড়িয়ে গেল বিহান। রিখিয়াতো কেঁদেই দিল। সৌহার্দ্য ওকে কাঁদতে দেখে বলল,

” আরেহ। কাঁদছেন কেন? দেখুন আপনার দোষ নেই এখানে। আপনার জায়গায় যে কেউ থাকলে এটাই করত।”

রিখিয়াতো কেঁদেই যাচ্ছে। সৌহার্দ্য তুর্বীর দিকে তাকিয়ে বলল,

” এইযে মিস বান্ধবীকে সামলান। আমি যাই আমার পাগলকে সামলাই গিয়ে।”

বলে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে গেল সৌহার্দ্য। নিজের ফ্লাটে ঢুকে নিজের রুমে গিয়ে সৌহার্দ্য রুমে আসার আগেই দরজা বন্ধ করে দিল বিহান। রাগে কষ্টে ফুসতে শুরু করল ও। টেবিলে রঙের টিউব রাখা ছিল অনেকগুলো, এক ধাক্কায় সব ফেলে দিল। সারারুম জুড়ে রঙ ছড়িয়ে গেছে। আসলে যখন বিহান খেয়াল করল রিখিয়ার ড্রেসের চেইন খোলা তখন এটাও খেয়াল করেছে কতগুলো ছেলে ওকে চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে আর ওর দিকেই আসছে। তাই ও তাড়াতাড়ি গেছিল রিখিয়ার কাছে। ওর পেছনে দাঁড়িয়ে ওকে প্রটেক্ট করছিল আর বারবার বলছিল ‘ আপনার ড্রেসের জিপ খোলা আছে।’ কিন্তু মেয়েটা শুনতে পায়নি মিউসিকের জন্যে। আর ও কাউকে ডাকতে গেলেও ওকে সরতে হবে ওর কাছ থেকে আর সেটা করলে আবার ঐ ছেলেগুলো চোখ দিয়ে তো গিলবেই তারওপর উল্টাপাল্টা কিছু করতেও পারে তাই নিজেই লাগাচ্ছিল কিন্তু অসাবধানতাবশত ওর হাত রিখিয়ার পিঠে লেখে যায়। আর রিখিয়া ঘুরে তাকানোর পর ও হেসে বলতে যাচ্ছিল যে, ” মিস আগে নিজেকে তো সামলাতে শিখুন?” কিন্তু তারআগেই এসব হল। বিহান রাগে চিৎকার করে বসে পরল। জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলল, ” সব মেয়েই একরকম, সবাই এক। তোমাকে ভালো ভেবেছিলাম অন্যরকম ভেবেছিলাম। ভেবেছিলাম হয়ত সব মেয়েই ‘মায়া’ হয়না। কিন্তু না, আজ আমাকে বিশ্বাস করিয়ে ছাড়লে সব মেয়ে জাতটাই এরকম হয়। আই হেইট গার্লস এন্ড আই হেইট ইউ। আমি মেয়েদের মন নিয়ে গেলি এটাই বলেছিলে তাইনা? মন নিয়ে খেলা ঠিক কেমন হয় এবার আমি তোমাকে বোঝাবো মিস রিখিয়া ইসলাম।

#চলবে…