জানি তুমি ফিরবে পর্ব-০৪

0
481

#জানি_তুমি_ফিরবে
[৪র্থ পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

ধ্রুব তিশার সাথে তিশার রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে বসতেই ধ্রুবর ফোন হঠাৎ করেই বেজে উঠলো। তাকিয়ে দেখে মিজান সাহেব কল করছে। ধ্রুব আর দেরি না করেই ফোন রিসিভ করতেই মিজান সাহেব বলল — কিরে তোরা কি ওখানে পৌছে গেছিস?

— হুম একটু আগেই আসলাম।

— ঠিক আছে রাখলাম।

তারপর ফোন কেটে দিলো মিজান সাহেব। ধ্রুব খাটের উপরে বসে রইল। তিশা ধ্রুব কে বলল — আপনার জন্য কিছু লাগলে আমাকে বলবেন। আমি আম্মুর কাছে যাচ্ছি একটু।

ধ্রুব ঠিক আছে বলল। তারপর তিশা তার মায়ের কাছে চলে গেলো। ধ্রুব একটা একটা বসে বসে ফোন টিপছে এমন সময় তুহিন রুমে চলে আসে। পার সে ধ্রুবর পাশে এসে একটা সিগারেট ধরিয়ে ধ্রুব কে বলল — জামাই তুমি কি সিগারেট খাও?

ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে না বলল।

তখন তুহিন সিগারেট টানতে টানতে বলল — গুড সিগারেট খাওয়া ভালোনা। এতে অনেক সমস্যা হয়। ধুমপান করলে এতে করে রক্তনালীতে চর্বি জমে গিয়ে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, পায়ে গ্যাংগ্রিন। গবেষণায় দেখা গেছে ধূমপায়ীদের ৪০ বছরের পর হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা ৫ গুন বাড়ে। হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা অধূমপায়ীদের চেয়ে দ্বিগুন। ধূমপানের কারণে হতে পারে সিওপিডি-এমফাইসেমা, ক্রোনিক ব্রোঙ্কাইটিস।

তুহিনের কথা শুনে ধ্রুব হাসবে না কাদবে বুঝতে পারছেনা। ধুমপান করতে করতে এসব বলছে। তখন ধ্রুব বলল — তা মামা আপনি সব কিছু জেনেও কেনো সিগারেট খাচ্ছেনল?

— অনেক আগেই অভ্যাস তো ছাড়তে পারিনি। যাও আজকে থেকে আর খাবোনা এই ফেলে দিলাম।

ধ্রুব একটা মুচকি হাসি দিয়ে আবার ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো। তখন তুহিন বলল — জামাই তোমার আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?

— না মামা কোনো সমস্যা হয়নি আসতে।

— এখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে-না তো? নতুন যায়গা একটু মানিয়ে নিলেই হবে।

— no problems

— কম্বল! এতো গরমে কম্বল দিয়ে কি করবে? তোমার কি শীত লাগছে নাকি?

— মামা আমি কম্বল বলিনি। বলছি কোনো সমস্যা নাই।

— ওহ আচ্ছা।

— হুম।

— আচ্ছা থাকো আমি আসছি।

এই কথা বলে তুহিন চলে গেলো। তুহিন যাওয়ার পরে ধ্রুব একটা নিশ্বাস ফেললো। আর সে মনে মনে ভাবতে থাকে – এআমি কোথায় এসে পড়লাম! বলি একটা শুনে আরেকটা। এখানে কয়েকদিন থাকলে আমি পাগল হয়ে যাবো।

এর মধ্যে তিশা রুমে এসে দেখে ধ্রুব বসে আছে। তিশা ধ্রুবকে বলল আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন।

তিশা ধ্রুব কে ওয়াশরুম দেখিয়ে সে বাহিরে চলে আসে। ধ্রুব ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে বসে থাকে। তারপর তিশা ধ্রুবকে সাথে করে নিয়ে খাবার টেবিলের দিকে চলে গেলো। খাবার দেখে ধ্রুব অবাক হয়ে গেলো। এতরকম খাবার আইটেম। আর সব খাবার ধ্রুবর পছন্দের।

তিশার আম্মু বলল — বাবা তিশা নিজের হাতে সব কিছু তোমার জন্য রান্না করছে।

ধ্রুব তিশার দিকে তাকিয়ে খাবার খেতে বসে গেলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে যায় ধ্রুব। দেখতে দেখতে রাত হয়ে যায়। ধ্রুবর রুমে বসে থাকতে ভালো লাগছে না তাই সে ছাদের উপরে চলে যায়। আকাশে খুব সুন্দর চাঁদ ফুটে আছে। চাঁদ দেখতে পছন্দ করে ধ্রুব। সে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।

অন্যদিকে তিশা রুমে গিয়ে দেখে ধ্রুব নাই। তিশা একটু ভয় পেয়ে গেলো। ধ্রুব আবার কাওকে না বলে চলে যায়নি তো। এসব ভাবতেই তিশা তাড়াতাড়ি করে ধ্রুবকে খুজতে শুরু করে দিলো। পুরো বাড়ি খুঁজে যখন পাচ্ছিলোনা তখন তিশা ছাদের উপরে চলে গেলো। তিশা ছাদের উপরে গিয়ে দেখলো ধ্রুব ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে। ধ্রুবকে দেখা তিশার ভয় একটু কেটে গেলো। তখন তিশা ধ্রুবর কাছে গিয়ে বলল — আপনি এখানে?

— কেনো এখানে আশা কি বারন নাকি আমার?

— না আসলে আপনাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। রুমে গেলাম ওখানে গিয়ে দেখি আপনি নাই। তাই বললাম।

— রুমের ভিতরে ভালো লাগছে না। তাই এখানে চলে আসছি। আকাশের চাঁদটা আজকে খুব সুন্দর লাগছে। আর এখানে ভালোও লাগছে খুব।

— চা,খাবেন? চা নিয়ে আশি?

— না, লাগবে না।

— চা খেতে খেতে চাঁদ দেখলে আরো ভালো লাগবে।

— আপনি বেশি কথা বলেন কেন? একটু ভালো ভাবে কথা বলছি তা কি ভালো লাগছেনা? আমার কাছে কি ভালো লাগবে সেটা আমি বুঝব। আমার ভালো লাগা খারাপ লাগা নিয়ে কাওকে ভাবতে বলিনি। আপনি এখান থেকে চলে যান। আমি একটা থাকতে চাই। আর আমার একা থাকতে বেশি ভালো লাগে।

তিশা আর কোনো কথা না বলে মন খারাপ করে রুমের ভিতরে চলে গেলো। রুমে গিয়ে বিছানা ঠিক করতে থাকে আর বিরবির করে বলতে থাকে – মানুষটা কেমন জানি বুঝতেই পারিনা। কখন রেগে যায় বুঝাই যায়না। পুরো আন রোমান্টিক একটা মানুষ। রোমান্টিক বলতে কিছুই বুঝে-না। এমন রাগী ছেলে আমি আর দেখিনি। রাক্ষস একটা ছেলে।

এমন সময় ধ্রুব রুমে চলে আসে। তিশা ধ্রুবকে খেয়াল করেনি এখনো। তিশা বিছানা গুছিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে হেটে যেতেই ধ্রুবর সাথে একটা ধাক্কা খেয়ে খাটের উপরে পড়ে গেলো।

তিশা খাটের উপরে শুয়ে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে। এটা কেমন মানুষ ধাক্কা খেলাম আমাকে একটু ধরার ও চেষ্টা করলোনা।

আর ধ্রুব তিশার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল — কি সমস্যা চোখ কোথায় থাকে? দেখে চলাফেরা করা যায়না?

তিশা ধ্রুবর রাগী মুখ দেখে মাথা নিচু করে ফেললো। তারপর সে নিচে বিছানা করে ঘুমিয়ে পড়লো। ধ্রুব খাটের উপরে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকাল সকাল তিশার ঘুম ভেঙে গেলো দরজার শব্দে। তিশা তাড়াতাড়ি নিচের বিছানা সরিয়ে বালিশ টা ধ্রুবর পাশে রেখে দরজা খুলে দেখে তিশার আম্মু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

তিশা তার আম্মুকে দেখে বলল –কি হয়েছে আম্মু? এতো সকাল সকাল ডাকছ কেন?

— জামাই সকালে কি খাবে? কি রান্না করব তার জন্য তোর কাছে আসলাম।

–আচ্ছা তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

–আচ্ছা ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি আয়।

এই কথা বলে তিশার আম্মু চলে গেলো। তিশা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা রেডি করতে চলে যায়। আর ধ্রুবর পছন্দের রান্না করতে থাকে। আসলে তিশা এখানে আশার আগে তার শ্বাশুড়ির থেকে ধ্রুবর সব পছন্দের খাবারের নাম।

রান্না শেষ করে তিশা রুমে এসে দেখে ধ্রুব এখনো ঘুমিয়ে আছে। তিশা ধ্রুবকে ডাকতে ভয় পাচ্ছে। তিশা ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে রইলো। মানুষটাকে ঘুমন্ত অবস্থায় কেউ দেখলে বলবেনা যে এতো রাগী সে। হঠাৎ করেই ধ্রুবর ঘুম ভেঙে যায়। আর সে তাকিয়ে দেখে তিশা তার দিকে তাকিয়ে আছে।

ধ্রুব তিশার দিকে তাকিয়ে বলল — কি সমস্যা আপনার? এই ভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

তিশার এখনো হুস নেই। সে ধ্রুবর দিকে তাকিয়েই আছে। এবার ধ্রুব তিশাকে ধমক দিয়ে বলল – কি সমস্যা?

ধ্রুবর ধমক শুনে তিশার হুস ফিরে আসলো। তিশা আমতা আমতা করতে শুরু করলো।

তখন ধ্রুব বলল – কিছু বলবেন?

— হুম ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আসেন। সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে।

–ঠিক আছে আসছি আপনি যান।

তারপর তিশা দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। একটু পরে ধ্রুব ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গিয়ে সে চেয়ারের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো।

চলবে?