জানি তুমি ফিরবে পর্ব-০৭

0
398

#জানি_তুমি_ফিরবে
[৭ম পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

ডাক্তারের কথা শুনে সবাই ডাক্তারের কাছে চলে আসলো।

মিজান সাহেব ডাক্তার কে বলল — ডাক্তার আমার ছেলের কি অবস্থা এখন?

— দেখুন রোগীর অবস্থা তেমন একটা ভালো না। এক্সিডেন্ট টা গুরুতর ভাবে হয়েছে। মাথায় আঘাত পেয়েছে। আর মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। একটা অপারেশন করতে হবে। পুরো পুরি সুস্থ হবে কিনা আমি জানি না তবে আমি চেষ্টা করবো আমার মতো করে।

— ডাক্তার সাহেব এসব কি বলছেন আপনি?

— আমার যা বলার দরকার আমি সেতাই বলছি। আপনারা বললে আমরা অপারেশন শুরু করবো।
অপারেশন না করালেও রোগীকে বাঁচানো যাবেনা।
এখন আপনারা ঠিক করেন কি করবেন। আমি একটু পরে আসছি।

এই কথা বলে ডাক্তার চলে গেলো। মিজান সাহেব কি করবে বুঝতে পারছেনা। ধ্রুবর আম্মু অনেক কান্না করছে। সবাই তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। আর এই দিকে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে তিশা। মিজান সাহেব তিশার দিকে এগিয়ে এসে তিশার মাথায় হাত রাখতেই তিশার হুস ফিরে আসলো।

তিশা মিজান সাহেবের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলো। মিজান সাহেব তিশার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল — মা চিন্তা করিস না ধ্রুব ঠিক হয়ে যাবে। ওর কোনো কিছুই হবেনা।

এমন সময় তিশার মা বাবা ও চলে আসছে। এসে তারা তিশার কাছে গিয়ে বলল — মা ধ্রুবর কি হয়েছে?

তিশা কিছু না বলে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিজান সাহেব সব কিছু বলল। মিজান সাহেবের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো হেলাল সাহেব। সে কি বলবে বুঝতে পারছেনা। হেলাল সাহেবের স্ত্রী তিশাকে নিয়ে একটা চেয়ারের গিয়ে বসে। তিশা কান্না করতে করতে বলল — আম্মু সব কিছু আমার জন্যই হয়েছে। আমার ভাগ্যটা এমন কে আম্মু? আমি কি দোষ করছি যে আমার সাথেই এমন হবে?

— মা তুই নিজেকে শুধু শুধু দোষী করছিস।

তিশার আম্মু তিশাকে সান্ত্বনা দিতে থাকে। তারপর হেলাল সাহেব তিশার পাশে এসে বসে তিশার আম্মু ধ্রুবর আম্মুরা পাশে গিয়ে বসতেই ধ্রুব আম্মু তিশার আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে। তিশার আম্মু তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকে। একটু পরে ডাক্তার এসে বলল — আপনারা কি কিছু ভেবেছেন?

ডাক্তারের কথা শুনে সবাই এগিয়ে গেলো।

মিজান সাহেব বলল — ডাক্তার আমার ছেলের যেনো কিছু না হয় প্লিজ। আপনি অপারেশন শুরু করুন।

— ওকে তাহলে আমরা আমাদের অপারেশনের কাজ শুরু করছি। আল্লাহর কাছে রোগীর জন্য দোয়া করুন।

— হুম।

— আচ্ছা আপনারা কি কেউ রোগীর সাথে দেখা করতে চান? তাহলে দেখা করতে পারেন তবে একজন একজন করে দেখা কর‍তে পারেন। তবে জোরে কোনো শব্দ করা যাবেনা। মনে রাখবেন জোরে শব্দ করলে রোগীর সমস্যা হতে পারে।

— ঠিক আছে ডাক্তার।

এর পর ডাক্তার চলে গেলো। একজন একজন করে গিয়ে ধ্রুবকে দেখে বেরিয়ে চলে আসলো। এবার মিজান সাহেব তিশার কাছে এসে বলল যা মা ধ্রুবকে দেখে আয়।

এইদিকে ধ্রুবর বন্ধুরা তিশকে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সিয়াম জয়কে জিজ্ঞেস করলো — জয় এই মেয়েটা কে চিনলাম না তো?

— মেয়েটা নাকি ধ্রুবর বাসায় কাজ করে।

— কি বলিস?

— আমি তো সেটাই জানি।

— কিন্তু এই মেয়ের অবস্থা দেখে তো বুঝাই যাচ্ছেনা যে এটা কাজের মেয়ে। আর কাজের মেয়ে হলে এই মেয়েকে এই ভাবে বলতো নাকি আংকেল?

— হয়তো অনেক আগে থেকে কাজ করে তাই হয়তো।

— ওহ।

অন্যদিকে তিশা আইসিইউর ভিতরে চলে গেলো। ধিরে ধিরে ধ্রুবর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ধ্রুবর এমন অবস্থা দেখে তিশার চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়তে শুরু করলো। তিশার শরীরের অনেক যায়গায় ব্যান্ডেজ করা। মুখের উপরে অক্সিজেন মাস্ক দেওয়া। আর চোখের কোণে পানি।

ধ্রুবর এমন অবস্থা দেখে তিশা নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলোনা। তিশা মনে মনে ধ্রুবকে অনেক আগেই ভালোবেসে ফেলছে। তিশা ধ্রুবর মাথায় হাত রাখতে গিয়ে আবার হাত সরিয়ে ফেললো। হঠাৎ করেই ধ্রুবর বলা কথা গুলো মনে পড়ে গেলো তিশার।

তিশা তার চোখের পানি মুছে আইসিইউ থেকে বেরিয়ে চলে আসে।

একটু পরে ধ্রুবকে নিয়ে অপারেশন রুমে চলে যায় ডাক্তার। কিছুক্ষণের মধ্যে অপারেশন শুরু করে দিলো। আর সবাই বাহিরে অপেক্ষা করছে কখন অপারেশন শেষ করে ডাক্তার বেরিয়ে আসবে। সবাই অপেক্ষার প্রহর গুনছে। তিশার আম্মু তিশাকে বুকের সাথে নিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে। আর তিশা তার মাকে জড়িয়ে ধরে আছে।

ডাক্তার বের হয়ে আসলো অপারেশন রুম থেকে।

ডাক্তার কে দেখে সবাই ছুটে চলে গেলো ডাক্তারের কাছে তিশাও গেলো সাথে।

মিজান সাহেব বলল — ডাক্তার আমার ছেলের কি অবস্থা?

ডাক্তার মাথা নিচু করে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিজান সাহেব আবার বলল কি হয়েছে আপনি চুপচাপ কেন? আমার ছেলে ঠিক আছে তো ডাক্তার?

ডাক্তার তার চোখ থেকে চশমা সরিয়ে বলল -Sorry we couldn’t save him. he is dead.

ডাক্তারের কথা শুনে সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হয়ে গেলো। মিজান সাহেব বলল — কি বলছেন এসব ডাক্তার?

— আমি দুঃখিত অনেক চেষ্টা করেও আপনারা ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না। নিজেকে শক্ত করুন মিজান সাহেব। I’m sorry.

এই কথা বলে ডাক্তার চলে গেলো। ধ্রুব মৃত্যুর কথা শুনে ধ্রুবর আম্মু অজ্ঞান হয়ে গেছে। তিশা একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো। হেলাল সাহেব তাড়াতাড়ি করে তিশার কাছে চলে আসছে।

তিশা তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে – বাবা সব সময় কেন আমার সাথে এমন হয়? কেন সব সময় আমাকে কষ্ট পেতে হয়? কেন সবসময় আমাকে আমার প্রিয় মানুষদের হারাতে হয়? আমি কি দোষ করছি যে সব সময় আমার সাথে এমন হয়?

— মারে এই ভাবে বলিস না।

— আমি আর এসব নিতে পারছিনা বাবা। আমি আর বাচতে চাইনা।

— কি বলছিস এসব মা তুই? তুই নিজেকে শক্ত কর।

একটু পরে ধ্রুবর মৃত লাশ নিয়ে আসলো সাদা কাপড় দিয়ে ডেকে। ধ্রুবর লাশের সামনে সবাই কান্না কাটি শুরু করলো। ধ্রুবর আম্মু একটু পর পর অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। বাকি সবাই কান্নাকাটি করছে।তিশা দৌড়ে ধ্রুবর লাশের সামনে গিয়ে ধ্রুবর মুখ থেকে সাদা কাপড় সরিয়ে চিৎকার দিয়ে কান্না করতে করতে বলল — আপনি আমাকে এই ভাবে একা রেখে যেতে পারেন না। দেখুন আমি আপনাকে স্পর্শ করেছি আমাকে বোকা দিন। প্লিজ উঠুন আপনি। আপনি না থাকলে আমাকে বোকা দিবে কে? আমার সাথে কে রাগ দেখাবে? কার রাগী মুখ দেখে আমার ঘুম ভাঙবে? আপনি এই ভাবে চলে যেতে পারেন না।

মিজান সাহেব তিশার মাথায় হাত রাখতেই তিশা মিজান সাহেবকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে — বাবা উনি কথা বলছেন না কেন? আগে তো আমি ওনাকে স্পর্শ করলেই রেগে যেতেন আজ কেন কোনো কথা বলছেন না? ওনাকে কথা বলতে বলুন বাবা।

— মারে ও আর কোনো দিন ও কথা বলবেনা আমাদের সাথে।

— না ওনাকে তো কথা বলতেই হবে। আপনি এবাবে চুপ করে থাকবেন না প্লিজ দেখুন সবাই আপনার জন্য কান্না করছে। আপনি একটু কথা বলেন প্লিজ। উঠুন না প্লিজ। এসব বলতে বুলতে তিশা ফ্লোরের উপর বসে পড়লো।

তিশাকে অনেক কষ্ট করে ধ্রুবর লাশের পাশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো। কিছুক্ষন পরেই ধ্রুবর লাশ নিয়ে বাসায় চলে গেলো সবাই। ধ্রুবকে শেষ গোসলের জন্য নিয়ে যাওয়া হলো।

চলবে??