#জান্নাতের_খুশবু
#পর্ব_০২
#Mst_Liza
রাজ শিক্ষার্থীদের ওয়াশরুমে গিয়ে ছাত্রী টয়লেটের সাইনবোর্ড খুলে ছাত্রের টয়লেটের সাইবোর্ডের সাথে অদলা বদলি করে দেয়।খুশবু সাইনবোর্ড দেখে ভুল করে ছাত্রদের টয়লেটে ঢুকে পরে।গিয়ে দেখে রাজ একটা ছেলেকে বলছে, দেয়ালে হিসু করা ঠিক না।কারণ দেয়ালেরও কান আছে। কানে পানি ঢুকে যাবে।
রাজের এমন কথা শুনে খুশবু আর এক মুহূর্তও না দাড়িয়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসে।বাইরে বের হতেই রিয়া আর তার সান্ডপান্ডরা খুশবুকে ঘিরে ধরে।আর ফ্যাল ফেলিয়ে হাসে।হাসতে হাসতে বলে, এ দেখ দেখ খালাম্মা ছাত্রদের টয়লেট থেকে বের হচ্ছে। হা হা হা।
খুশবু পিছনে ঘুরে সাইনবোর্ডটা দেখে থম খেয়ে যায়।ভাবে, এই রকম তো ছিলো না। সামনে তাকিয়ে রিয়াদের সামনে খুশবু খুব লজ্জায় পরে যায়। আর সেখান থেকে চলে যেতে লাগে। রিয়া খুশবুর হাতটা টেনে ধরে।
তো খালাম্মা ছেলেদের টয়লেটে যাওয়ার জন্য সাইনবোর্ড চেঞ্জ করেছিলেন বুঝি?
খুশবু কিছু বলে না।টয়লেট থেকে রাজ বেড়িয়ে আসে। দেখে রিয়া এখন আবার সেইভাবেই তার সান্ডপান্ডদের নিয়ে খুশবুকে হেনস্তা করছে।রাজ কিছু বলতে যাবে শাওন, রোজ, টোমি রাজকে টেনে দেয়ালের সাথে নিয়ে চেপে ধরে।আর শাওন বলে, সকালে আমাদেরকে বোকা বানিয়েছিস তুই।তোর জন্য আজকের মজাটাই বেসতে গেলো।তোকে এর শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো। এ সবাই ওকে বাঁধতো।
সবাই রাজকে বাঁধতে থাকে আর রাজ ছুটে দুই হাত মেলিয়ে শক্ত করে হাতদুটো মুঠো বন্দী করে নিয়ে জোড়ে গোল গোল ঘুরতে থাকে।আর যেই রাজের দিকে আগাতে যায় সেই রাজের মুঠো হাতের ঘাঁ খাই।
কেউ না পেরে রাজের দূরেই থাকে।আর রাজ খুব ভাব নিয়ে রিয়ার সামনে গিয়ে বলে, আমার মতোন এতো হ্যান্ডসাম, এতো বুদ্ধি আর শক্তিশালী কেউ আছে এই ভার্সিটিতে?
রিয়া কোনো কথা না বললে রাজ ধমক দেয় রিয়াকে।ধমকের স্বরে বলে, বলো আছে?
রিয়া ভয়ে ভয়ে বলে, না না কেউ নেই।
হুমমম।সেটাই তো।দেখলা না তোমার সান্ডপান্ডরাও আমার সাথে পারে না।কথাটা বলে, রিয়ার হাত থেকে চিপসের প্যাকেটটা কেড়ে নিয়ে ছিড়ে ফেলে।তারপর চিপস খেতে খেতে বলে, এই ভার্সিটি এখন থেকে আমার।এখানে আমার রাজত্বই চলবে।
খুশবু হা হয়ে আছে রাজের কাজ কারবার দেখে।রাজ ঘুরে খুশবুর দিকে তাকানোর আগেই খুশবু সেখান থেকে চলে আসে।
গাড়িতে বসে খুশবু তার দাদুকে আজকের সব ঘটনা খুলে বলে।খুশবুর দাদু সব শুনে হো হো করে হাসতে থাকে।
একি দাদু তুমি হাসছো?
তো কি করবো দাদু ভাই? এমন ছেলে আরও একপিচ দুনিয়ায় আছে সেটা ভেবে না হেসে পারলাম না।আগে তো ভাবতাম শুধু তোমার বাবাই এমন।কিন্তু না এখন আরও একজনের সন্ধান পেলাম।জানো দাদুভাই,, ছোটবেলা যখন তোমার বাবাকে স্কুলের টিচার্সরা বকা দিতো তখন তোমার বাবা রেগে তাদের গালে চর মেরে বসতো।মারার জন্য ক্লাস রুমে যখন বেত আনতো টিচারর্সদের হাত থেকে বেত কেড়ে নিয়ে ভেঙে জানালা দিয়ে ফেলে দিতো।এত্ত বিজাত আর ফাজিল ছিলো কি বলবো।এর জন্য যে কত স্কুল চেঞ্জ করালাম।শেষে গিয়ে আর লেখাপড়াটায় করলো না।এখনো দেখো অলসের মতো পরে আছে।সারাদিন খাই আর ঘুমায়।বুড়ো বয়সে আমাকেই ব্যাবসায় বাণিজ্যর যতো ঝামেলা সব পোহাতে হয়।
মন খারাপ করো না দাদু।এখন আর কি করবা বলো? ছোটবেলা থেকেই বাবাকে তোমাদের কড়া শাসন দেওয়া উচিৎ ছিলো। ভালোবাসা দিয়ে বোঝানোর দরকার ছিলো।এতো আহ্লাদ দেওয়া উচিৎ হয় নি।
,
,
,
খুশবু বাড়ি ফিরে দেখে, তার বাবা তার মায়ের সাথে বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে।খুশবুকে দেখে তার বাবা সোফায় নিয়ে বসায় আর বলে, তোর জন্য ছেলে দেখেছি মা খুশবু।কটি পটি বাপের একমাত্র সন্তান।তোকে আর লেখাপড়া করতে হবে না।বিয়ে করে পায়ের উপরে পা তুলে সংসার করবি।
খুশবু কিছু বলতে যাবে খুশবুর দাদু এগিয়ে এসে বলে, ছেলে কি করে? তোমার মতোই অলস নাকি কিছু করে? বলেই হেসে দেয়।
খুশবুর বাবা মুখ ফুলিয়ে বলে, বাবা মজা নিচ্ছো তুমি? শুনো, আজকের দিনে এমন ধনী ছেলে পাওয়া মুশকিল।বাপের যা আছে তাই বসে বসে খেলেও শেষ হবে না।নিজের কিছু করার কি দরকার?
বাবা তবুও একটা কর্মহীন ছেলের সাথে বিয়ে দিবা আমাকে? কথাটা খুশবু তার বাবাকে বলে।
খুশবুর বাবা বলে, না না মা ছেলে অনেক কাজ করে।ঘটক তো বলেছেই ছেলে খুব বিজি থাকে সারাদিন।তার কাজের কোনো শেষ নেই।
ওহহ তাহলে আমার বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই। তবে বাবা কথা বলে নিও আমার লেখাপড়াটা আমি বিয়ের পরও চালিয়ে যেতে চায়।
কথাটা শুনে খুশবুর বাবা হো হো করে হেসে উঠে বললো, এতো বড় বাড়ির বউকে কখনোই জব করতে দেবে না সেই ছেলে।তাছাড়াও তুই লেখাপড়া শেষে কি করবি? এমনিতেই তো পর্দা করিস।পর্দায় থেকে লেখাপড়া শেষ করে কোনো মেয়েকে দেখেছিস জব করতে?
খুশবু বলল, তোমার ধারণা ভুল বাবা।পর্দা ইসলামের নির্দেশ।আর লেখাপড়াটা জীবন নির্বাহের জন্য অতিব প্রয়োজন।যে কোনো ক্ষেত্রে যে কোনো পেশায় লেখাপড়ার দরকার আছে।ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার , পুলিশ, উকিল প্রত্যেকটা জায়গাতেই পুরুষের পাশাপাশি মেয়েদেরও প্রয়োজন।যদিও আমাদের সমাজে মেয়েদেরকে পেশার সাথে পর্দার সঠিক ব্যাবহারে দেখা যায় না।অনেক আলেম মুফতিও বলে মেয়েদের লেখাপড়া করানোর দরকার নেই প্রেম করবে বিয়ে দিয়ে দিন।বিয়ের পর বলে স্বামীর ইচ্ছা না থাকলে জব করতে পারবে না।কিন্তু একটু যদি বিয়ের আগে অভিভাবকরা মেয়ের সিদ্ধান্ত মেনে বিয়ে দেয় তাহলে এমনটা হয় না।আর যদিও বিয়ে হয়ে যায় তখন অন্য কথা।এখন তোমরা আমার অভিভাবক।আমার মতামত আমি জানিয়েছি।বাকিটা তোমরা যা ভালো মনে করো তাই হবে।আমি মেনে নেবো তোমাদের সব সিদ্ধান্ত। কথাটা বলে খুশবু নিজের রুমে চলে যায়। টেবিলের উপরে রাখা বইয়ের মলাটে আলতো হাত ছুঁইয়ে অনুভব করে এই লেখাপড়া তাকে ছেড়ে দিতে হবে।
তিন দিন খুশবু ভার্সিটি যায় না।খুব ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করা হয়। আজ গায়ের হলুদের পর্ব শেষ হলো।অনেক বড় সড় ভাবে আয়োজন করা হয়েছিলো।পাত্র পক্ষের লোকজন এসেছিলো কিন্তু স্টেজে খুশবু যায় নি।খুশবুর অনেক কান্না আর জোড়া জড়ি মিনতির পর শুধু মহিলারা আলাদা ভাবে গায়ের হলুদের অনুষ্ঠানটা সম্পূর্ণ করে।
খুশবুর খুব কস্ট হচ্ছে।কালই তো বিয়ে।খুশবু ভাবছে বিয়ের পর কি সে আগের মতোন পর্দা করতে পারবে? হাত পায়ে মোজা।বোরখা খিমার নিকাব এগুলো তো খুশবুরই সাজ।
বিয়ের দিন খুশবু বিয়ের সাজের উপরে নিজের বোরখা আর নিকাবটা পরে নেয়।বিয়ে পরানো শেষ।বিদায়ের সময় অনেক কান্না করে খুশবু।তার দাদা-দাদি, বাবা-মা সবাইকে ছেড়ে আসতে খুব কস্ট হচ্ছিলো।শুধু তার প্রিয় কিতাব পবিত্র আল-কোরআনকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠে পরে।যার সাথে বিয়ে হয়েছে এখনও তার মুখটা খুশবু দেখি নি।সেও খুশবুকে দেখে নি।তার ইচ্ছা ছিলো একজন ফরহেজগার আর পর্দাশীল মেয়েকে বিয়ে করবে তাই করেছে।অন্য কিছু জানার প্রয়োজন বোধ করে নি সে।খুশবুও তার স্বামীর সম্পর্কে কিচ্ছু জানে না।
শ্বশুরবাড়িতে এসে ভীর ভাট্টা থেকে খুশবু দূরত্ব বজায় রাখে।কোনো পর পুরুষের সামনে খুশবু যায় নি।অনেকেই নতুন বউ দেখতে এসেছিলো।মুরুব্বিদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম না করায় অনেকেই হয়তো মনে মনে অহংকারী ভেবেছে খুশবুকে।কিন্তু তাতেও খুশবুর কোনো আফসোস নেই।কারণ খুশবু শুধু তার স্রস্টাকে খুশি করবে।
বিছানায় বসে আছে খুশবু। আজ তার বাসর রাত।সারাদিনের দখলে চোখে ঘুম লেগে যায়।খুশবু বসা অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পরে।এমন সময় তার স্বামী রুমে আসে।আস্তে করে খুশবুর পাশে গিয়ে বসে।খুশবুর মুখ থেকে ঘোমটা তুলেই সে অবাক।এ যেন জান্নাতের কোন হুর নেমে এসেছে তার ঘড়ে।এতো সুন্দর অপ্সরী তার স্ত্রী ভাবলেই মনটা ভরে উঠছে।সে খুশবুকে ডাকছে, বউ ও বউ আজকের রাতটা কি ঘুমিয়ে পরবে? আমার কত্ত স্বপ্ন ছিলো আজকের রাতটা নিয়ে।
তার ঝাঁকুনি খেয়ে খুশবুর ঘুম ভেঙে যায়।মাথা তুলে নিজের স্বামীকে দেখেই অবাক।একদম হা হয়ে আছে।
কি হলো বউ ওভাবে মুখটা হা করে তাকিয়ে আছো কেন আমার দিকে?
আপনিই কি আমার স্বামী?
হ্যাঁ, কোনো সন্দেহ?
কি বলবে খুশবু।খুশবুর শুধুই এখন কান্না পাচ্ছে। কারণ তার স্বামী আর কেউ নয় রাজ।খুশবু ভাবছে পৃথিবীতে এতো ছেলে থাকতে রাজকেই তার স্বামী হতে হলো।খুশবু মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে।ইয়া আল্লাহ! এটাই কি তোমার নির্ধারণ করা ছিলো?
রাজ খপ করে খুশবুর হাত ধরে বসে। খুশবু ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে খুশবুর মনে পরে স্বামীকে এখনও সালাম দেওয়া হয় নি।খুশবু রাজকে আসসালামু আলাইকুম বলে সালাম দিতেই। রাজ খুব সুন্দর আর শুদ্ধ কন্ঠে বলে উঠলো ওয়া আলাইকুমুশ সালাম।
খুশবুর হাত মেলে ধরে রাজ খুশবুর হাতে দেনমোহরের ২০ লক্ষ টাকার ব্যাগ ধরিয়ে দেয়। তারপর বলে, এখন কি আমি আমার বউকে স্পর্শ করতে পারবো?
চলবে,,,,,,