জৈষ্ঠ্যের প্রেম পর্ব-০৩

0
277

#জৈষ্ঠ্যের_প্রেম (পর্ব-৩)
লেখনীতে– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

৬.
মৌসন্ধ্যা দাঁড়িয়ে আছে ছাদের সিঁড়িঘরে। আপাতত এদিকে বেশি মানুষের সমাগম নেই। দুই একজন আসছে আর যাচ্ছে। বর্ষা মৌসন্ধ্যাকে তখন শাড়ি খুলতে দেখেই ধ’ম’কে ওঠে। এখনও তাদের নাঁচ, গান হলো না সে কেন এত দ্রুত চেঞ্জ করছে? অগত্যা প্রচুর অনিচ্ছা থাকা স্বত্তেও তাকে আসতে হলো। এসেই সে দাঁড়িয়ে আছে এই জায়গায়। ছাদে প্রবেশ করছেনা। তার মনে ভ’য়, স’ঙ্কো’চ, ল’জ্জা। বারবার মনে কু গাইছে ছবিটা হয়তো গ্রীষ্ম দেখে ফেলেছে। তার অবশ্য এই মুহূর্তে ছাদে আসার আরেকটি কারণ রয়েছে। যে কোনো ভাবেই হোক গ্রীষ্মের ফোন থেকে ছবিটা ডিলিট করতে হবে। বর্ষা পুরো ছাদ ঘুরেও গ্রীষ্মের দেখা পেল না। মৌসন্ধ্যার কাছে ফিরে এসে সে অসহায় হয়ে বলল,
-‘গ্রীষ্ম ভাইয়াকে তো খুঁজে পাচ্ছিনা। সাবাব ভাইয়া বলল ভাই নাকি বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে কোথাও গিয়েছে।’
-‘এখন কী হবে!’
মৌসন্ধ্যার চোখের কোণে জল দেখা গেল। বর্ষার ভীষণ খা’রা’প লাগছে তা দেখে। সে তখন এত কিছু ভাবেনি যে গ্রীষ্মের ফোন আর ছবিটা গ্রীষ্ম দেখতে পারে। তাদের দুইজনের দুঃখী মুহূর্তে ছাদে এলো শরৎ। শরৎ হলো মৌসন্ধ্যার সেজো মামার বড় ছেলে। মৌসন্ধ্যার কাজিন ভাই গুলোর মধ্যে সবচেয়ে রা’গী, ব’দ’মে’জা’জী হলো শরৎ। কথায় কথায় ধ’ম’ক দেওয়া তার অভ্যাস। নামের সাথে তার কাজের কোনো মিল নেই। মৌসন্ধ্যা আঁড়ালে তাকে ক্ষ্যা’পা শরৎ বলে ডাকে। ক্ষ্যা’পা শরৎ মৌসন্ধ্যা আর বর্ষাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গর্জে উঠে বলল,
-‘এই ব’দ’মা’ই’শে’র দল! এখানে দাঁড়াই আছিস কী কারণে? রাস্তা ব্লক করে ফেলছস একদম। লোকজনের কী হাঁটাচলা করা লাগেনা! সর সর!’

বর্ষা আর মৌসন্ধ্যা ধ’ম’ক খেয়ে জায়গা থেকে সরে দাঁড়ালো। শরৎ তাদের দিকে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে ছাদে প্রবেশ করল। বর্ষা বলল,
-‘তোর এই ক্ষ্যা’পা শরৎরে আমি কোনদিন মে’রে বসব বলা যায়না!’
মৌসন্ধ্যা চমকে উঠে বলল,
-‘এই কথা ঠিক করে বল। আমার ক্ষ্যা’পা শরৎ আবার কী?’
-‘ওমা! নামটা তুই দিলিনা?’
-‘দিয়েছি কিন্তু তাই বলে আমার কথাটা বললি কেন।’
-‘গালতি সে মিসটেক। ডোন্ট টেইক ইট সিরিয়াসলি জান।’

কথার মধ্যেই উপস্থিত হলো মুকিত। কাজিন গ্রুপের সবচেয়ে হাস্য রস্যাত্মক মানুষ। সবার প্রিয়! মুকিত বলল,
-‘বোনেরা আমার! ভেতরে চলো। বড় ভাইয়েরা পদার্পন করিতেছে।’
বর্ষা আর মৌসন্ধ্যা হেসে ফেলল মুকিতের এমন সুর দিয়ে কথা বলার ধরন দেখে। তারপর তাদের নজর মুকিতের পেছনে থাকা গ্রীষ্ম, আহরার আর শ্রাবণের দিকে পড়ে। তারা তিনজন সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতেই কি একটা নিয়ে কথা বলছে আর হাসছে তারা এখনও এদিকে তাকায়নি। দুই বোন একে অপরের মুখ দেখাদেখি করা ছাদে চলে গেল। মৌসন্ধ্যা বর্ষার হাত টেনে ধরে নিয়ে গেল একেবারে কোণায়। সেখানে গিয়ে বর্ষা বলল,
-‘আজব! এতদূর কেন এলি? ওখানে বসার জায়গা আছে। আর একটু পর দেখবি সব ভরে গেছে। চাইলেও বসতে পারবিনা।’
-‘আমি এখানে বসতেও আসিনি। প্লিজ গ্রীষ্ম ভাইয়ার থেকে তার ফোনটা নে! প্লিজ!’
-‘আচ্ছা নিচ্ছি। তবে তুই এইখানে না দাঁড়িয়ে থেকে ওদিকে গিয়ে বসে পড়। আমার জন্য জায়গা দখল কর অন্তত! তুই না বসলেও আমি তো বসব।’
-‘আচ্ছা চল।’

তারা গিয়ে দেখে প্রায় সব চেয়ার বরাদ্দ হয়ে গেছে। সামনের এবং মাঝখানের চেয়ার গুলো ভরাট। এই অল্প সময়ে এরা কখন এসে বসল? হতাশ হয়ে দুইজন আশেপাশে চোখ বুলায়। পেছনের দুই তিন সারির কিছু চেয়ার ফাঁকা। তবে সেগুলোতে বসলেও সামনের স্টেজ আর দেখা যাবেনা। বর্ষা চারপাশে ভালো ভাবে চোখ বুলিয়ে দেখল ছাদের একেবারে কর্ণারের দিকে শরৎ বসে আছে। তার পাশে কয়েকটা চেয়ার খালি পড়ে আছে। সে মৌসন্ধ্যাকে বলল,
-‘এই মৌ! দ্যাখ শরৎ ভাইয়ের পাশে জায়গা আছে।’

মৌসন্ধ্যা সেদিকে তাকালো। দেখতে পেল শরৎকে। শরৎ চুপচাপ বসে আছে দুই হাত বুকে ভাজ করে, আর তার চোখ সামনের দিকে নিবদ্ধ। এবং তার মুখের ঐ বিরক্তি ভাবটাও স্পষ্ট লক্ষ্য করতে পারল মৌসন্ধ্যা। শরৎ এর পাশে কেউ নেই, সে একা। অবশ্য এটা অস্বাভাবিক কিছু না। সে একাই থাকতে ভালোবাসে। মৌসন্ধ্যা তো এটা ভেবেই অবাক হচ্ছে শরৎ এখানে বসে আছে কীভাবে! যে লোককে সচরাচর বিয়ের দাওয়াতেই নেওয়া যায়না সে একটা হলুদ ফাংশন এটেন্ড করছে। তার এখনও মনে আছে তার খালাতো বোন অর্থাৎ শরৎ এর ফুফাতো বোন তৃণার যখন বিয়ে হচ্ছিল তখন এই ব্যাটাকে শত বলেও কেউ নিতে পারেনি। অবশ্য গ্রীষ্মও যায়নি তবে তারটা মানা যায় সে তো ঢাকা ছিল আর শরৎ! সে তো বাড়িতে ছিল। তাদের বাড়ি থেকে তৃণাদের বাড়ির দূরত্ব রিকশায় গেলে দশ মিনিট। সবাই যখন অনুষ্ঠানে আমোদ করছিল তখন সে ব্যস্ত ছিল কোনো বইয়ের পাতায়। তাছাড়া বরাবরই সে এসব এড়িয়ে চলে। কেননা, এই অত্যন্ত ব’দমে’জাজী ছেলেটি একজন মেধাবী ছাত্র। বর্তমানে এমবিবিএস শেষ বর্ষের ছাত্র। ছোট থেকেই তার বইয়ে মুখ ডুবিয়ে রাখার অভ্যাস। পড়াশোনায় কাজিন গ্রুপে সে গ্রীষ্মের মতোই সেরা। এবং বাহ্যিক সৌন্দর্য যদি ধরা হয় তাহলেও সে জিতে যায়। মৌসন্ধ্যার মাঝে মাঝে মনে হয় এই শরৎ এর মগজ কিছুটা তুলে নিয়ে আসতে। শরৎকে অবশ্য মৌসন্ধ্যা একটা কাজে বেশ পছন্দ করে। যতই রা’গী হোক মানুষটা মাঝে মাঝে কী সুন্দর রা’গ নিয়ন্ত্রণ করে ফেলতে পারে। তারপর কারো কোনো দরকারে সবসময় সাহায্য করে। হয়তো তার প্রফেশনটার জন্যই সে এমন নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা লাভ করেছে। কেননা ডাক্তারদের হতে হয় নম্র, ভদ্র। আগে অবশ্য ভদ্রতা থাকলেও এই নম্রতা ছিল না। মেডিকেলে পড়ার পর থেকেই তার মধ্যে এই নম্রতা দেখা গেছে।

বর্ষার অনুরোধে আর নিজেরও প্রয়োজন থাকায় মৌসন্ধ্যা গিয়ে বসল শরৎ এর পাশে। অবশ্য মাঝখানে একটা চেয়ার গ্যাপ রেখে বসেছিল। মৌসন্ধ্যাকে দেখে শরৎ এমন ভাবে তাকালো মৌসন্ধ্যার ইচ্ছা করছিল দৌঁড়ে চলে যেতে। তারপরেও নিজেকে সামলে নিয়ে সে শরৎ এর দিকে তাকিয়ে সৌজন্যতার হাসি হাসে। শরৎ মুখ ফিরিয়ে নিল। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ব্যাটা এতক্ষণ যা বিরক্ত ছিল এখন তার চেয়েও বেশি বিরক্ত হয়ে হয়ে গেছে। মৌসন্ধ্যা অসহায় তাই চুপ করে বসে রইল। মিনিট গড়াতেই বর্ষা এলো। তবে তার হাতে গ্রীষ্মের ফোনটা দেখা গেল না। বর্ষা এসে শরৎ আর মৌসন্ধ্যার মাঝখানে ধপ করে বসে পড়ল। শরৎ বর্ষাকে ধ’ম’কে বলল,
-‘ভদ্রভাবে বসতে জানিস না? ধুপধাপ করে সব কিছু করা লাগে তোর! বে’য়া’দব! ধরে থাবড়ানো উচিত।’

তারপর সে পুনরায় আগের জায়গায় মননিবেশ করে। আর এদিকে বকা শুনে বর্ষার ছোট মুখটা আরো ছোট হয়ে গেল। মৌসন্ধ্যার তা দেখে মায়া হলো। সে বর্ষার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
-‘আরে এটা তো ক্ষ্যা’পা! এটার কথা ধরতে আছে নাকি? তুই বল, ফোন এনেছিস?’
বর্ষা মিনমিন করে বলল,
-‘গ্রীষ্ম ভাইয়া বলল এখন তো ফোনটা লাগবে একটু পরে দিবে।’
-‘ইশ! কী মুসিবতে পড়লাম।’

৭.
বর্ষারা যারা যারা নাঁচ দিবে ঠিক করেছে তারা সবাই একে একে পারফর্ম করল। মৌসন্ধ্যা সবটা বসে বসে দেখছিল আর উপভোগ করছিল। আর বর্ষার নাঁচ আসতেই বর্ষার ফোনে নাঁচটা ভিডিও করে। শরৎ এইজন্য তাকে একবার ধ’ম’কেও দিয়েছে। মৌসন্ধ্যা আর পাত্তা দিল না। তার মাথায় এক কথা সেট আছে আপাতত ‘ক্ষ্যাপার কথা ধরতে নেই।’ বর্ষা নাঁচ শেষ করে আগের জায়গায় অর্থাৎ মৌসন্ধ্যার পাশে বসে। তারপর দুজন বেশ কিছুক্ষণ মৌসন্ধ্যার তোলা ছবি এবং ভিডিও গুলো দেখতে থাকে। একটু পরেই গান বেজে উঠল। সানি লিওনের একটা গান বেরিয়েছিল। গানটি হলো ‘আজ আন্টিয়া ড্যান্স কারেঙ্গে’। মৌসন্ধ্যা আর বর্ষা চমকে সামনে তাকাতেই দেখতে পেল জুনের মা মানে বড় মামানির বান্ধবীরা স্টেজে উঠে এই গানে নাঁচছে। আকস্মিক এমন দৃশ্য দেখে সবাই হাসতে হাসতে পাগল হয়ে যাচ্ছে। বর্ষা আর মৌসন্ধ্যাও হাসছে। তবে তাদের হাসি যে কারণে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে সেটা হলো আন্টিদের নাঁচ দেখে সাউন্ড বক্সের পাশে থাকা শ্রাবণ, মুকিত আর সাবাব হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। শ্রাবণ অলরেডি হাসতে হাসতে সাউন্ড বক্সের সাথেই কয়েকবার ধা’ক্কা খায়। আন্টিদের সেদিকে খেয়াল নেই। মামারা এবং বয়স্ক পুরুষ যারা ছাদে ছিলেন তারা একে একে ছাদ ছাড়তে লাগল। উপস্থিত কিছু মানুষ ছাড়া আর বাকিরা কেবল হাসছে। যেন মস্ত বড় কমেডি হচ্ছে। অবশ্য কমেডির থেকে কম কীসে! তারা নাঁচতে নাঁচতেই একজন আরেকজনের সাথে চুলোচুলি করছে। এ ওকে ভুলবশত ধা’ক্কা মা’র’ছে তো ও নাঁচ ছেড়ে একে প্রতিশো’ধ নিতে ধা’ক্কা মা’র’ছে। জুনের ও হাসি এসে গেল এসব দেখে। জুনের মা চন্দনা খানম নিজেও এসব দেখে হা হয়ে গেছেন। তার সঙ্গী সাথীরা যে আজ এমন কিছু করবে তা তিনি জানতেন না। এদিকে জুনের দাদু তাদের নাঁচ দেখে নিজেও সোফায় বসে কোমর দোলাচ্ছে। মৌসন্ধ্যার মা সেটা দেখে বললেন,
-‘আহ আম্মা! আপনি আবার এমন করছেন কেন?’
দাদু রে’গে গিয়ে বলল,
-‘একবারে থাবড়া দিমু কান বরাবর। যা সর! আমার নাতিনের বিয়া, আমি নাঁচি। তুই যা!’
দূর থেকে গ্রীষ্ম নিজের দাদিকে এমন করতে দেখে আর হাসি আটকে রাখতে পারল না। সেও নিজ অবস্থানে হেসে দিল। আর আহরার এই সমস্ত কিছু নিজের ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করতে থাকল। তার মতে, থাক না এমন হাসি মুখর মুহূর্তগুলো বন্দী হয়ে স্মৃতির পাতায়!

মৌসন্ধ্যা আর বর্ষা অবাক নয়নে শরৎ এর দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের বিশ্বাস হচ্ছেনা সবার মতো ক্ষ্যা’পা শরৎ ও হাসছে। তাও আবার স্বাভাবিক হাসি না শ্রাবণের মতো গগন কাঁপানো হাসি বলে যাকে সেই হাসি। চন্দনা খানম বান্ধবীদের ডেকে নিয়ে ছাদ থেকে নেমে গেলেন। পরিস্থিতি এবার একটু ঠান্ডা। শরৎ এর ও হাসি থেমেছে। তখনিই তৃণা এলো সেখানে নিজের সাত মাসের ছেলেকে কোলে নিয়ে। শরৎ এর সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। শরৎ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চাইতেই তৃণা শক্ত মুখ করে বলল,
-‘আমার বিয়েতে তো ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করলিনা এবার একটু না হয় মামার দায়িত্বটা পালন কর!’
কথাটা বলতে দেরি কোল থেকে নিজের ছেলেকে নামাতে দেরি নেই। দ্রুত শরৎ এর কোলে দিয়ে সে চলে গেল। আর শরৎ স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। তারপরই একটা বিরাট কা’ন্ড ঘটে গেল। তৃণার ছেলেটা শরৎ এর গায়ে মূত্র ত্যাগ করে দিল। আর শরৎ তা টের পেয়ে বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। বাচ্চাটি এক নাগাড়ে কেঁদেই চলছে। ওদিকে মুকিত এসে ব্যাপারটা খেয়াল করল আর চেঁচিয়ে বলতে লাগল,
-‘আরে, আদরের মামার কোলে আদরের ভাইগ্না তো মূত্র বিসর্জন দিয়া দিল!’

বর্ষা আর মৌসন্ধ্যা তখন নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। মুকিতের কথা শুনে তারাও শরৎ এর দিকে তাকালো। তারপরে এমন একটা দৃশ্য দেখে দুজনেই হেসে ফেলে। শরৎ তাদের দিকে অ’গ্নিদৃষ্টিতে তাকালো। লাভের লাভ কিছু হলো না। দুই বোন হাসতে হাসতে জায়গা ত্যাগ করল। তারপর বাতাসের গতিতে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল। একটু পর তার দাদু ছুটে এলেন। আদরের নাতি শরৎকে দেখে বলল,
-‘ও আমার শরৎকাল! তোর কোলে নাকি তিণুর পোলা মুইত্তা দিসে?’

শরৎ অসহায় চোখে দাদির দিকে তাকায়। তারপর বাচ্চাটাকে মুকিতের হাতে দিয়েই নিচে নেমে গেল। এখন এই রাতে তাকে শাওয়ার নিতে হবে। অস’হ্য!

———————
গ্রীষ্মের রুমের সামনে বর্ষা আর মৌসন্ধ্যা পায়চারি করছে। এখন বাজে দুইটা। সবাই যে যার রুমে গভীর ঘুমে। তারা দুইজন ঘুমাচ্ছেনা কারণ এখনও গ্রীষ্মের থেকে মোবাইলটা নেওয়া হয়নি। বর্ষা বলল,
-‘মৌ! শোন, ভাইয়া আমাকে হয়তো এত রাতে ফোন চাইতে এখানে আসায় বকা দিবে। তাই তুই যা। নক কর।’
-‘অসম্ভব! আমি পারব না।’
-‘বোঝার চেষ্টা কর। দরকারটা তোরই তো। পারবি না কেন?’
-‘আমি এত রাতে তার কাছে ফোন চাইব? যদি আমাকে নিয়ে আজেবাজে কিছু ভাবে!’
-‘আরে ভাববে না। গ্রীষ্ম ভাই এমন স্বভাবের না। সে বেশ ভালো।’
-‘তবে তুই যা। সে যখন এতই ভালো ভ’য় পাচ্ছিস কেন?’
-‘আমি সত্যি বলছি ভাইয়া আমাকে দিবেনা। তুই গেলে তোকে দিবে। আমার মন বলছে।’

অবশেষে মৌসন্ধ্যাকেই যেতে হলো। বর্ষা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। মৌসন্ধ্যা দরজায় নক করল। একবার করল সাড়া পাওয়া গেল না, দ্বিতীয়বার নক করতেই দরজা খুলে গ্রীষ্ম উঁকি দিল। মৌসন্ধ্যাকে দেখে সে বেশ চমকে গেছে তা তার মুখ দেখলেই বোঝা যায়। আর তার চমকে যাওয়া দেখে মৌসন্ধ্যাও অস্বস্তিতে পড়ে গেল। আবারও সে কথা বলা ভুলে গেল। গ্রীষ্ম-ই নিরবতা ভাঙে,
-‘কিছু দরকার তোমার?’
মৌসন্ধ্যা কী বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। সে মাথা নাড়ায়। যার অর্থ হ্যাঁ।
-‘কী লাগবে বলো!’
মৌসন্ধ্যা বেশ ইতস্তত করেই বলল,
-‘আপনার ফোনটা একটু দেওয়া যাবে?’
গ্রীষ্ম এক ঝলক মৌসন্ধ্যার সেই চুপসে যাওয়া মুখটা পরখ করে নিল। তারপর রুমের ভেতরে গিয়ে ফোনটা এনে মৌসন্ধ্যার দিকে বাড়িয়ে দিল। বেশ নম্র ভাবে বলল,
-‘ফোনটা কী বেশি সময়ের জন্য দরকার? যদি তা হয়ে থাকে তবে রেখে দিও। আমাকে সকালে দিয়ে দিলেই চলবে।’
মৌসন্ধ্যার গলায় যেন কথা ফিরে এলো। সে সাথে সাথেই জবাব দিল,
-‘না না! এইতো এখনই হয়ে যাবে। আপনি একটু অপেক্ষা করুন।’

সে একটু হেঁটে সামনে গেল। গ্রীষ্ম লক খুলে দিয়েছিল। তাই সে ঝটফট গ্যালারিতে ঢুকে পড়ে। তবে খুব খুঁজেও সে ছবিটা পেল না। দূর থেকে বর্ষা ইশারা করল পেয়েছে কীনা। মৌসন্ধ্যা মাথা নাড়ায়। একটু সময় লাগবে বললেও বেশ সময় লাগিয়ে দিল সে। কিন্তু ছবিটা আর খুঁজে পেল না। তারপর হতাশ হয়ে ফোনটা গ্রীষ্মকে ফিরিয়ে দিল। গ্রীষ্ম তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘আর কিছু লাগবে?’
-‘না।’
-‘আচ্ছা। তবে রুমে যাও। অনেক রাত হয়েছে। কালকে সকাল সকালও তো উঠতে হবে আবার। গুড নাইট। হ্যাভ আ সুইট ড্রিম।’
মৌসন্ধ্যা মাথা নাড়িয়ে সামান্য হাসে। তারপর সে ও গ্রীষ্মকে গুড নাইট বলে চলে আসে।

রুমে এসে মৌসন্ধ্যা বলল সে ছবিটা খুঁজে পায়নি। তখন বর্ষা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
-‘এইরে! আমি তো মনে হয় ছবিটা তখন ডিলিট দিয়েছিলাম।’
মৌসন্ধ্যা হা করে তাকিয়ে থাকল বর্ষার দিকে। বর্ষা জোরপূর্বক হেসে বলল,
-‘মনেই থাকেনা আজকাল কোনো কিছু!’
মৌসন্ধ্যা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-‘তুই কী মানুষ! আমি এই এত রাত করে ওনার কাছে গেলাম কেবল তোর এই নির্বুদ্ধিতার জন্য।’
-‘স্যরি। ভুল করে ভুল হয়ে গেছে। রা’গ করিস না জানেমান।’

#চলবে।