#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_১৯
রোহান অরিন কে খান বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে বাড়ির বাহিরে থেকে চলে যেতে লাগে তখন তারিফা এসে রোহান কে বলে,”আজকের রাতটা না হয় এবাড়িতে থেকে যাও!”
অরিন ও মনে মনে খুব করে চাইছিল রোহান আজকের রাতটা না হয় থাকতো শ্বশুরবাড়ি তে।
অরিনের মা জামাই কে এ বাড়িতে থাকার জন্য জোড় করে না।আসলে সে চাইছে না রোহান থাক এখানে।যদি তারিফার কথা শুনে থেকে যায় তাহলে তার আপত্তি নেয়।
রোহান তারিফা কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমার এখন কোনো যোগ্যতা নেই ভাবী এ বাড়িতে থাকার!যেদিন নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত করতে পারবো সেদিন ভেবে দেখবো এবাড়িতে থাকা যায় কি না।তা ছাড়া আমাদের মতো মধ্যবিত্ত দের জন্য বড়লোকদের বাড়ি নয়!”
তারিফা বলে,”এখানে বড়লোক আর মধ্যবিত্তর কি আছে!কোথায় লেখা আছে মধ্যবিত্ত বাড়ির জামাই বড়লোক হতে পারে না?তাহলে বড়লোকের মেয়েরা কেনো মধ্যবিত্ত বাড়ির বউ হবে না।আসলে সবটা ভাগ্য বুঝলে রোহান! ”
রোহান বলে,”জ্বি ভাবী বুঝতে পেরেছি! তবে আকাশের সাথে মাটির মিলন কখনো হয়না।দুজনের মাঝে তফাৎ ঠিকি থেকে যায়।আমাদের সম্পর্কের মাঝেও একটা কিছু ঠিকি থাকবে যা আলাদা কিছু বোঝাবে।”
তারিফা বলে,”এতোকিছু বুঝি না!আজ থাকবে কি না তাই বলো!”
রোহান বলে,”না ভাবী আজ নয়!তবে খুব।
তাড়াতাড়ি চেষ্টা করবো।সামনে ফাইনাল পরিক্ষা!
ভালো রেজাল্ট করার ইচ্ছা আছে!সাথে একটা মোটামুটি নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরী খুঁজতে হবে তো।তাই সামনে ৬ মাস খুব ব্যস্ত আমি!”
তারিফা আর রোহান কে রাতে এ বাড়িতে থাকার জন্য জোড় করে না!
রোহান চলে যায়!এখন তার কাধে অনেক দায়িত্ব! সে এখন আর একা নেই!তার বিয়ে হয়েগেছে! সে একটা মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছে। তাকে সারাজীবন সুখে শান্তিতে রাখতে হবে।সাথে নিজের বাবা মা’র খেয়াল রাখতে হবে।স্বপ্ন দেখা খুব সোজা কিন্তু স্বপ্ন গুলো বাস্তবে রুপান্তরিত করা খুব কষ্টের। এই সমাজে কোনো কিছু সোজা না।সব কিছু কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পাওয়া যায়।কেউ তো সারাজীবন সংগ্রাম করে বোঁচে থাকার লড়াই করে যায়।যার টাকা আছে তার পাওয়ার আছে।যার কিছু নাই তার আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ভরসা নেই।
এদিকে অরিন বাড়ির ভেতরে এসে মায়ের সাথে রাগারাগি শুরু করে দেয়।অরিন তার মা’কে বলে,”তুমি যদি একটু জোড় করতে তাহলে অবশ্যই রোহান আজ রাতে এবাড়িতে থাকতো।”
মমতা খান বলে,”ঐ মেয়ের কথায় যখন থাকে নাই তখন আমি কেনো কথা বাড়াতে যাবো।”
অরিন বলে,”আজব শাশুড়ি তো তুমি!তুমি তোমার জামাই কে থাকাতে বললে সে কখনো না করতে পারতো না।তুমি কেনো জোড় করো নাই তাই বলো!”
মমতা খান বলে,”রোহান কে জোড় করে এবাড়িতে আটকে রাখতে হবে এমন যোগ্যতা সে এখনো অর্জন করে নাই।যেদিন সে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করবে সেদিন তাকে সাদরে গ্রহণ করবো।”
অরিন বলে,”আজ যাকে আপন করতে পারলে না!দুদিন পর তার যোগ্যতা দেখে তুমি তাকে মেনে নিলেও আমি সবটা ভুলবো না এটা মনে রেখো!বলে নিজের রুমে চলে যায়।”
তারিফা শাশুড়ি মা কে উদ্দেশ্য করে বলে,”মানুষ কে তার যোগ্যতা দিয়ে নয় তার স্বভাব চরিএ দিয়ে বিচার করা উচিৎ।টাকা বড়লোকের ও থাকে টাকা ফকিরের ও থাকে কথাটা মন রাখবেন। ”
মমতা খান কিছু বলবে তার আগেই তারিফা চলে যায়।
এদিকে আয়াশ বাড়িতে ফিরে অরিন কে দেখে খুব খুশি হয়!আয়াশ অরিনের সাথে কথা বলতে যায় অরিন তার ভাইকে এড়িয়ে চলে যায়।এটা তারিফার নজর এড়িয়ে যায় না।
রাতে খাবার টেবিলের পুরো পরিবার একসাথে খেতে বসে!আয়াশ অরিনের সাথে কথা বলতে চাইলে অরিন টেবিলের উপর থেকে উঠে বলে,”মা আমার খেতে ইচ্ছা করছে না!আমার জন্য হালকা কিছু রুমে পাঠিয়ে দিও!”
আয়াশ বুঝতে পারে তার বোন তাকে এড়িয়ে চলতে চাইছে।কিন্তু কলিজার টুকরো বোন সামনে থেকেও দূরে থাকবে এটা ভাবতেই আয়াশের দম বন্ধ হয়ে আমার অবস্থা হয়।
আয়াশ ও কিছু না খেয়ে প্লেট রেখে উঠে চলে যায়!তারিফা চুপচাপ খাবার খেয়ে নেয়।
তারিফা মনে মনে বলে,”ওরা দুই ভাই বোন কুরুক ঝগড়া তাতে আমার কি?দু দিন পর আমে দুধে মিশে যাবে আমি সালা আঁটি পর হয়ে যাবো।”
সব কাজ কমপ্লিট করে অরিনের জন্য একগ্লাস দুধ নিয়ে ওর রুমে গিয়ে বলে,”ননদিনী আপনার জন্য দুধ এনেছি! রাতে একদম খালি পেটে ঘুমাতে নেই!
এটা খেয়ে তারপর না হয় ঘুম দিও!”
অরিন তারিফার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে বেডের পাশে বেডটেবিলের উপর রেখে দিয়ে তারিফার দুটো হাত ধরে বলে,,”আমাকে মাফ করে দিও ভাবী!আমার জন্য তোমার জীবনটা এভাবে নষ্ট হয়ে গেলো!সত্যি বলছি আমি কোনোদিন ও স্বপ্নের মাঝেও কোনো মেয়ের খারাপ চাইনি। তবে কি করে যে আমার জন্য তোমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ”
তারিফা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অরিনের উদ্দেশ্যে বলে,”দেখো এই বিয়েটা হয়তো এভাবে লিখা ছিলো তাই হয়ছে।তবে আমি সবটা মেনে নিয়েছি! এখন তোমার ভাইয়ের যে কী সমস্যা তা জানি না!সে আমাকে মেনে নিতে রাজী না!তবে আমি চেষ্টা করবো সবটা ঠিক করার।বলে মাথা নিচু করে রাখে।”
অরিন কোথার মোড় ঘুরিয়ে দেয় পরিস্থিতি বদলাতে বলে,”ভাবী কাল সকালে রেডি থেকো!আমরা দুজনে কাল থেকে এক সাথে ভার্সিটিতে যাবো।”
তারিফা বলে,”বাড়ির মানুষেরা রাজী হবে?”
অরিন বলে,”সেই চিন্তা আমার আপনার নয় ম্যাডাম!”
তারিফা বলে,”আচ্ছা তাহলে কাল সকালে দেখা হবে!”
এবার তারিফা আয়াশের জন্য গ্লাসে করে দুধের গ্লাস নিয়ে নিজের রুমে এসে দেখে আয়াশ চুপচাপ লেপটপ সামনে নিয়ে বসে আছে।
তারিফা দুধের গ্লাস টা আয়াশের সামনে রেখে দেয়।আয়াশ গ্লাসটা নিয়ে দুধ খেয়ে চুপচাপ আগের মতো বসে থাকে।
তারিফা রাতে ঘুমানোর জন্য বিছানা ঠিকঠাক করতে করতে বলে,”বেশি চিন্তা করেন না!বোনের সাথে একটু মনোমালিন্য হয়েছে তা দুদিনে ঠিক হয়ে যাবে।অরিন কতো দিন থাকবে তার ভাইয়ের থেকে দূরে!”
আয়াশ উঠে বলে,”সব কিছু হয়েছে ঐ বেয়াদব মেয়েটার জন্য!”
তারিফা বলে,”আজব প্রাণী তো আপনি মহাশয়!যে মেয়েটা মরে গেছে তাকে কেনো বার বার কবর থেকে টেনে আনেন আমাদের মাঝে?”
আয়াশ বলে,”আমি অর্ণার নাম নিয়েছি একেবারে জন্য?তাহলে আপনি অর্ণার কথা বলছেন কেনো?”
তারিফা বলে,”আমি ভাবলাম আপনি হয়তো প্রথম বউকে গালি দিচ্ছেন তাই আর কি!”
আয়াশ বলে,”অর্ণা নিজে মরে তো বেঁচে গেছে!
আমার জীবনটা কে ত্যানাত্যানা করে দিয়ে গেছে।
এই সুমাইয়া সেদিন কেনো যে আসছিল আল্লাহ জানে।এসে কি সব অরিন কে বলছে এরপর থেকে বোনটা আমাকে পর করে দিছে।”
তারিফা বলে,”কি আর বলবে যা সত্যি তাই বলেছে হয়তো!”
আয়াশ বলে,”সুমাইয়া কে শয়তান বিশ্বাস করতে পারে আমি বিশ্বাস করি না।নিশ্চয় অরিনের কাছে মিথ্যা কিছু বলছে।সব সত্যি বললে তো এমন ব্যবহার করার কথা না।”
তারিফা বলে,”আচ্ছা তাই না কি!তা কি এমন সত্যি আপনাদের আমি জানতে পারি?”
আয়াশ তারিফার দিকে তাকিয়ে বলে,”থাক দরকার নেই আপনার জানার!আপনি জেনে আমার কোনো সাহায্য করতে পারবেন না।”
তারিফা বলে,”হ্যাঁ আমাকে কেনো বলবেন! বলবেন তো ঐ অর্ণা কে ভাগ্যিস মেয়েটা মরে গেছে নয়তো আপনাকে সহ্য করতে হতো।”
আয়াশ বলে,”এই দেখুন! পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে আসবেন না প্লিজ! ”
তারিফা বিছানার উপর শুয়ে নিজের গায়ে চাদর দিয়ে নিজেকে ঢেকে বলে,”আপনার সাথে অযথা কথা বলার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।তারপর ও কেনো যে আগবাড়িয়ে কথা বলেন বুঝিনা। ”
আয়াশ তারিফার মুখে এমন কথা শুনে একদম চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে।
তারিফা বলে,”চোখ গুলো বাহিরে চলে আসবে।নিজে দায়িত্ব নিয়ে ঘুমিয়ে যান বুঝলেন। আমার সাকালে অনেক কাজ আছে।আমি আপনার মতো ফ্রি না।”
আয়াশ কিছু না বলে নিজের মাথার চুল গুলো টানতে টানতে শোফার উপর শুয়ে পড়ে।
‘
‘
‘
চলবে….
#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_২০
পরেরদিন সকালে,,
তারিফা বাড়ির সবার জন্য নাস্তা রেডি করে টেবিলের উপর সাজিয়ে রেখে রুমে চলে যায় রেডি হতে।
সবাই বসে নাস্তা করছিল তখন তারিফা রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলের সামনে আসে।
মমতা খান বলে,”সাত সকালে মহারাণী রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছেন?”
তারিফা কথার উওর না দিয়ে চুপচাপ নাস্তা করায় মন দেয়।
মমতা খান অরিন কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আজ থেকে ভার্সিটি যাওয়া শুরু করে দিবি মা?”
অরিন বলে,”হ্যাঁ!লেখাপড়া যখন করতে হবে তখন দেড়ি করলে আমার লস!তাই অযথা সময় নষ্ট না করে লেখাপড়াতে মন দেওয়া উওম।”
মমতা খান বলে,”আলহামদুলিল্লাহ্ আমার মেয়ের তাহলে বুদ্ধি হয়ছে। ”
নাস্তার শেষে অরিন তারিফা কে বলে,”ভাবী তাড়াতাড়ি চলেন আমাদের নয়তো দেড়ি হয়ে যাবে।”
মমতা খান বলে,”ঐ মেয়েটা আবার কোথায় যাবে!”
এবার তারিফা তার শাশুড়ি মা কে উদ্দেশ্য করে বলে,”শাশুড়ি মা আমিও আপনার মেয়ের সাথে ভার্সিটি তে যাচ্ছি আমার মাস্টার্স কমপ্লিট করার জন্য।”
মমতা খান বলে,”ফন্দি করে তো আমার ছেলের ঘাড়েচাপে বসেছ।তাহলে এখন এতো লেখাপড়ার নাটকের কি দরকার? ”
তারিফা বলে,”আপনার নাতি-নাতনিদের শিক্ষিত করতে আমাকে শিক্ষিত হতেই হবে! তাই নিজের জন্য নিজে শিক্ষিত হতে যাচ্ছি। ”
আয়াশ ওদের দু জনকে নামিয়ে দিয়ে আসতে চাই।কিন্তু অরিন নিষেধ করে দেয়।বলে”তোমার মতো মানুষের সাথে আমার কোথাও যেতে রুচিতে বাধে।তাই আমি চাইনা আমাদের নামিয়ে দিতে তুমি সাথে আসো।”
তারিফা আর অরিন বাড়ির বাহিরের সাধারণ মানুষের মতো রিক্সা করে যায়।
আয়াশ নিজেকে বলে,”কিছু না করেও আজ অপরাধী হয়ে আছি।এটাও আমার ভাগ্যের দোষ হয়তো।”
এদিকে তারিফা আর অরিন ভার্সিটির গেট দিয়ে প্রবেশ করার সময় দেখে কয়েকটা মেয়ে রোহানের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।
অরিনের তো এমন অবস্থা দেখে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছিল।তখন বলে,”ভাবী তুমি এখানে দাঁড়াও!
আমি ঐ মেয়ে গুলোকে জব্দ করে আসছি।”
তারিফা অরিনের হাত ধরে বলে,”আরে কি যে বলো না!ওরা নতুন স্টুডেন্ট! বড়দের সাথে যদি ফ্রি হয়ে কথা না বলতে পারে তাহলে কাদের সাথে কথা বলবে বলো!”
অরিন বলে,”ওদের যার সাথে ইচ্ছা কথা বলতে যাক আমার সমস্যা নেই।কিন্তু কোনো শাঁকচুন্নি যদি রোহান সাথে কথা বলতে আসে তাহলে তাদের খবর আছে না।রোহানের আশেপাশে কোনো মেয়ের ছায়াও আমি সহ্য করতে পারি না।”
তারিফা বলে,”কেনো সহ্য করতে পারো না বলবে?”
অরিন বলতে শুরু করে,” ভার্সিটি তে প্রথম যেদিন প্রবেশ করি তখন রোহানের সাথে দেখা হয়।প্রথম দেখাতে আমার মনটা রোহানের কাছে হারিয়ে ফেলি।কিন্তু নিজের একটা জিদ ছিলো আমি রোহান কে কখনো মনের কথা মুখে প্রকাশ করতে যাবো না।কারণ কাউকে যদি ভালো লাগে সে কথা যদি তার কাছে প্রকাশ করে দাও তাহলে সে সুযোগ পেয়ে যাবে তোমার অনুভূতি নিয়ে খেলার।আমি জানি আমাদের সমাজের এখন ছেলেমেয়েরা ইচ্ছা মতো চুটিয়ে প্রেম করে।আর সবাই প্রেমের সাগরে ঢুবে আছে।তবে আমি আমার ভালোবাসার অনুভূতি কে পবিত্র রাখতে নিজের কাছে সীমাবদ্ধ রেখেছি। আমি কখনো রোহানের সাথে ভালো ব্যবহার করতাম না।যখনি দেখা হতো খারাপ আর কর্কশ কন্ঠে কথা বলতাম। সে অনার্স তৃতীয় বর্ষে ছিলো আর আমি প্রথম বর্ষে।তাই আমি জানতাম আমার অনেকদিন ধৈর্য ধরে রাখতে হবে।রোহান যদি স্টাবলিশ হয় তখন না হয় যে কোনো ভাবে ওকে নিজের করে নিবো।মনের ভাব প্রকাশ করার পর যদি বিয়ে করে তাহলে ভালো নয়তো জোর করে হলেও আমি রোহানের বউ হবো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মনে মনে।তারপর থেকে তো রোহানের আশেপাশে যে মেয়েকে দেখতাম তাকে আড়ালে নিয়ে এমন থ্রেড দিতাম যেনো সে ভুলেও আর রোহানের সামনে না আসে।আর যদি সামনে আসে তাহলে কথা বলতো না।আমি নিজের ভালবাসা কে বিয়ের পবিএ বন্ধনে বাধতে এতো কাঠ খড় পুড়িয়েছ। ”
তারিফা অরিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”ওরে আল্লাহ গো!এই মেয়েটা সত্যি আমার ননদী! আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।নিজে রোহান কে পছন্দ করে ঠিক আছে।কিন্তু রোহান যদি অন্য কাউকে পছন্দ করতো তখন কি করতে?”
অরিন বলে,”সেই চান্স ছিলো না।রোহানের আশেপাশে তো আমার বিচরণ ছিলো সব সময়!খারাপ লাগলেও আমি ভালো লাগলেও আমি ছিলার ওর চারিধারে।”
তারিফা বলে,”এই জন্য প্রথমদিন রোহানের সাথে আমাকে দেখে তুমি এমন রিয়াক্ট করেছিলে তাই না?আর এই কারণে তুমি আমার সাথে গায়ে পড়ে এসে ঝগড়া করেছিলে।এখন বুঝলাম কাহিনী কি।
ম্যাডাম এতো লেকচার দিতো শুধু নিজের স্বার্থের জন্য।
আহারে বেচারা রোহান! সে তো জানেই না এতোবছর কেনো সে গার্লফ্রেন্ড ছাড়া ছিলো! ”
অরিন বলে,”থাক রোহানের আর জেনে কাজ নেই।এখন বিয়ে করছে বউ বাচ্চা নিয়ে সুখে সংসারের চিন্তা করলেই হবে।”
তারিফা বলে,”বাব্বাহ! কতো দূরের চিন্তা এ মেয়ের ভাবা যায়!আগে থেকে তার মানে তুমি মানুষিক ভাবে পিপারেশন নিয়েছিলে মধ্যবিত্ত ছেলের বউ হবে তাই না!”
অরিন বলে,”হুম!রোহান জন্য আমি রাস্তা ধারে গাছের নিচে কুঁড়েঘর বাঁধতেও রাজী আছে।শুধু পাশে রোহান কে চাই!”
তারিফা বলে,”হুম বুঝতে পেরেছি তো!ভাইয়ের আদুরী বোনটা অনেক দুষ্টু মেয়ে!”
অরিন বলে,”প্লিজ ভাবী এতো সুন্দর সময় ঐ খচ্চর ভাইয়ের নাম নিও না।”
তারিফা বলে,”আচ্ছা হঠাৎ করে তুমি তোমার ভাইকে এতো ঘৃণা করো কেনো?”
অরিন বলে,”তোমার থেকে আর কী আড়ালে রাখবো বলো!তোমাকে তাহলে সব কিছু ক্লিয়ার করে বলছি আমি।আমাদের বউভাতের অনুষ্ঠানের দিন সুমু আপু এসে ভাইয়া আর অর্ণা ভাবীর কথা বলে।জানো আমার ভাই কতো খারাপ! সে অর্ণা নামের মেয়েটা কে পটিয়ে বিয়ে করে।তাকে ভোগ করে মরার জন্য গ্রামের বাড়িতে রেখে চলে আসে।পরে মেয়েটা সুইসাইড করে।”
তারিফা বলে,”অর্ণার সাথে তোমার ভাই এমন খারাপ কাজ করেছে?সত্যি!তোমার ভাই কি সব কিছু নিজের মুখে স্বীকার করেছে?”
অরিন বলে,”হ্যাঁ! সে নিজে বলেছে সুমু আপুর বলা কথা গুলো সত্যি। ”
তারিফা বলে,”তাহলে তো আর কিছু বলার নেই।তবে সত্যি তোমার ভাইকে কিন্তু এতো খারাপ মনে হয় না।”
অরিন বলে,”ভাবী মাখাল ফল কিন্তু বাহিরে দেখতে খুব সুন্দর।কিন্তু ওর ভেতরটা পুরো বিচ্ছিরি।আমার ভাইয়ের বাহিরেও ঠিক তেমন সুন্দর অন্তরের ভেতর ময়লা।”
তারিফা বলে,”তুমি বোন হয়ে যদি নিজের ভাইয়ের নামে এমন কথা বলো!তাহলে আমি আর কি বলবো বলো!”
অরিন বলে,”থাক ভাবী এসব কথা ভেবে মন খারাপ করে লাভ নেই।আমরা যে কাজে ভার্সিটি তে এসেছি সেই কাজ করাতে মন দেই।”
এরপর তারিফা নিজের ক্লাসে চলে যায়।আর অরিন রোহানের সামনে গিয়ে কর্কশ কন্ঠে বলে,”এখন তোমার ঘরে বউ আছে।তাই পরোনারীর সাথে হাসাহাসি কম করবা।নয়তো তোমার গুনাহ হবে।”
রোহান বলে,”আমার বউ তো তার বাবার বাড়িতে আছে।আমার ঘরে নেই!ততোদিন না হয় একটু গুনাহ করলাম।”
অরিন বলে,”বউয়ের বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুরের বাড়িতে যেতে সময় লাগবে না।এরপরেও যদি বর ভদ্র না হয় তবে তার ব্যবস্থা অরিন করতে জানে।”
রোহান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,” কি করবে তুমি?”
অরিন বলে,”বর যতোটা পানিতে নামে তার বউ ততোটা পানিতে নামে।তাই সে পথের পথিক হবো ভেবেছি। ”
রোহান বলে,”আজব কথা তো!কেউ যদি এখন কথা বলতে আসে তার সাথে কি কথা বলা যাবে না?আর শোনো আমাদের সামাজ ব্যবস্থা একদম কঠোর নয়।এখানে সামাজিক বলেও কথা আছে।এখানে একজনের সাথে আরেকজন কথা বলতেই পারে।তবে আমি জানি আমার লিমিট কতোটা।এটা বিশ্বাস রাখতে পারো তোমার স্বামী নিজের লিমিট জানে।”
অরিন আর কোনো কথা না বলে স্থাল ত্যাগ করে চলে যায়।রোহান সেখানে দাঁড়িয়ে নিজেকে বলে,”বিয়ের পর স্বামীরা সত্যি বেচারা হয়ে যায়।আল্লাহ বউ কতো জ্বলে।এমন চলতে থাকলে ওর জেলাসির আগুনে আমাকে কাবাব বানিয়ে খাবে।”
এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়।এসবের মাঝে আয়াশের সাথে তারিফার সম্পর্কটা একটু নরম হয়েছে তবে একদম নরমাল নয়।রোহানের সাথে অরিনের বেশ ভালোই প্রেম চলছে বিয়ের পর।এদিকে রোহান তারিফার ফাইনাল পরিক্ষা শেষ।রেজাল্ট দিয়েছে।ওরা দু জনে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে।
কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয় নতুন করে!
‘
‘
‘
চলবে…..
#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_২১
রোহান কে নিয়ে নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে খান বাড়িতে।অরিনের পরিবার চাই রোহান তাদের কোম্পানিতে জয়েন কুরুক।আর রোহান চাইছে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী কোনো প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করতে।এদিকে অরিন বেচারি পড়েছে মহা বিপদে। না পারছে কিছু বলতে না পারছে সইতে।
অরিন রোহান কে ফোন করে বলে,”দেখো তুমি প্রাইভেট কোম্পানি তে যখন জব করবে তখন আমার বাবার কোম্পানি তে জব করলে সমস্যা কোথায়? ”
রোহান অপরপাশ থেকে বলে,”সমস্যা একটাই!আমি চাইনা শ্বশুরের কোম্পানিতে জব করতে।আমি যতোই তোমাদের কোম্পানিতে জব করি না কেনো!তখন আমার পিছনের মানুষেরা কানাঘুষা নানারকম কথা বলবে।যা আমি একদম শুনতে পারবো না।”..
অরিন বলে, ”লোকেদের তো কাজ একটাই পড়ের পিছনে কথা বলা।তাদের কথায় কান না দিলেই তো পারো তুমি।”
রোহান বলে,”দেখো অরিন আমি কষ্ট করে খেটে খাবো। তখন লোকেরা বলবে দেখো দেখো ঐ জামাই এর মুরোদ নেই তাই শ্বশুরের কোম্পানিতে এসে জুটেছে।কষ্ট করে অন্য কোথাও জব করলে শ্বশুরবাড়ি তে মাথা উচুঁ করে যেতে পারবে।দরকার হলে তুমি লেখাপড়া কমপ্লিট করে তোমাদের কোম্পানিতে জয়েন করিও।আর এই চাকুরী নিয়ে প্লিজ আমার সাথে কথা বলতে এসো না।আমি কখনো শ্বশুরের কোম্পানিতে জব করে টাকা নিতে পারবো না!”
অরিন ফোনটা রেখে মুখে হাত দিয়ে বসে চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায়।সত্যি কথায় বলে রোহান! আমাদের কোম্পানিতে জয়েন করলে তাকে পেছনে নানারকম কথা শুনতে হবে।সে বাড়ির জামাই হয়ে কেনো এতো অপমান সহ্য করবে।তার থেকে বরং রোহানের রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহ যেখানে করে রেখেছে সেখানে হবে।আমি কেনো রোহান কে জোড় করে বাবার সম্পত্তিতে ভাগিদার না করি।
তারিফা এসে অরিনের পাশে বসে বলে,”রোহানের রিজিকের ব্যবস্থা যেখানে আল্লাহ করেছেন সেখানে ওর চাকুরী হবে।তুমি আমি চিন্তা করে পেশার হাই না করি।”
অরিন তারিফা কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আচ্ছা তুমি সব সময় এতো টেনশন ফ্রি থাকাে কি করে বলবে?তোমাকে এতোদিন ধরে দেখছি তুমি তোমার বাড়ির মানুষের সম্পর্কে কিছুই তো বলো না।তুমি মানুষ না কি কোনো পরি?”
তারিফা একটা অট্টহাসি দিয়ে বলে,”আরে পাগল মেয়ে আমি যদি কোনো পরী হতাম তাহলে কোনোদিন ও তোমার এই ফাজিল ভাইয়ে দ্বিতীয় বিয়ের বউ হাতাম না।তবে আমার পরিবার সম্পর্কে আমি কথা বলতে চাই না।”
অরিন বলে,”কেনো ভাবী!প্রতিটা বাবা মায়ের চিন্তা হয় নিজেদের সন্তানদের নিয়ে।সেখানে তোমার বিয়ে হয়েগেছে তারা কি জানে এই কথা?”
তারিফা রেগে অরিনের উদ্দেশ্যে বলে,”আমার পরিবারে এমন কেউ নেই যে আমাকে নিয়ে চিন্তা করবে।বাবা মা দু জন স্বার্থপর। তাই তো আজ আমি একলা এপৃথীবতে।কাউকে দরকার নেই এই মেয়ের!এই ঝরা পাতা একাই নিজের পৃথীবি সৃষ্টি করতে পারে।স্বার্থপর পৃথীবিতে আজ আমিও স্বার্থপর।বলে কান্না করতে করতে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে যায়।”
তারিফাকে এমন কান্নারত অবস্থায় দেখে আয়াশ অরিনের রুমে এসে বলে,”অরিন তোর সমস্যা আমার সাথে! আমার সাথে যতো খারাপ ব্যবহার করতে ইচ্ছা করে কর না করবো না।তবে তারিফার সাথে কেনো খারাপ ব্যবহার করিশ?আমার ভুলের জন্য ওর সাথে এমন ব্যবহার করিশ না যাতে বেচারি কে কান্নার সাগরে ভাসতে হয়।অর্ণার সাথে বিয়েটা মাএ একটা দূর্ঘটনা ছিলো তার শাস্তি আর কতো কাল ভোগ করবো”
অরিন আয়াশ কে থামিয়ে দিয়ে বলে,”প্লিজ ভাই এতো লেকচার দিও না!ভাবী কে এমন কিছুই বলি নাই যে সে কষ্ট পাবে।আর আমি এতোটা গাধা নয় যে তোমার পাপের শাস্তি তারিফা ভাবী কে দিবো।”
আয়াশ বলে,”তাহলে তারিফার চোখে পানি কেনে?”
অরিন বলে,”বাব্বাহ বউয়ের জন্য দেখি দরদ উতলে পড়ছে।তার পরিবারের কথা জিজ্ঞাস করায় সে ইমোশনাল হয়ে গেছে।আর এতো নাটকের কিছু নেই ভাই!অর্ণা নামের মেয়েটা কে জোড় করে বিয়ে করে এখন বলছো ওটা একটা দূর্ঘটনা ছিলো!তোমার জীবনে তো দেখছি দূর্ঘটনার অভাব নেই।”
আয়াশ রেগে বলে,”অরিন অর্ণার সাথে এমন কোনো অন্যায় কখনো আমি করি নাই।আফসোস আজ যদি অর্ণা বেঁচে থাকতো তাহলে ওকে সবার সামনে এনে আমিই জিজ্ঞাস করতাম কেনো সে আত্মহত্যা করে আমাকে ওর গুনাগার বানিয়ে দিয়েছে।”
অরিন বলে,”ভাই এতো চিৎকার করলেই সত্যি বদলে যাবে না।সত্যি সব সময় আগুনের মতো উত্তপ্ত।সত্যির জয় হবেই একদিন। তুমি তোমার ভুলের শাস্তি ঠিকি পাবে।”
আয়াশ চিৎকার করে ওঠে অর্ণা বলে।আয়াশের চিৎকারে পুরো বাড়ি কেঁপে ওঠে।অরিন ভয়ে কাঁপতে থাকে।তার ভাইয়ের পুরো চেহারা ভয়ঙ্কর রুপে আলোকিত হয়ে আছে।
তারিফা অরিনের রুমে এসে দেখে আয়াশ ভয়ঙ্কর ভাবে রেগে অরিনের দিকে তাকিয়ে আছে।তারিফা তাড়াতাড়ি অরিনের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”ছোটবোনের সাথে এমন ব্যবহার কখনো গ্রহণ যোগ্য নয়।”
আয়াশ রাগি কন্ঠে বলে,”আজকের পর যদি ভুল করেও ঐ অর্ণার নাম কেউ আমার সামনে নিয়েছে তো তার সাথে আমার সব সম্পর্ক সেখানে সমাপ্ত হয়ে যাবে।কথাটা যেনো কিছু মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে রাখে।”
আয়াশ অরিনের রুম থেকে চলে যায়।তারিফা অরিন কে বলে,”যে মেয়ে এপৃথীবতে নেই তার জন্য জীবিত সম্পর্ক গুলো কেনো নষ্ট করছো?তাছাড়া তাকে তুমি দেখো নাই!চেনো না!তাহলে তার জন্য কেনো এতো প্রতিবাদ করো তুমি।”
অরিন কান্না মাখা কন্ঠে বলে,”অর্ণা নামের মেয়েটা তো একটা মেয়ে।আর আমি একটা মেয়ে হয়ে কি ভাবে মেনে নেই এতোবড় অন্যায়। আমি কোনোদিক ও আমার ভাইকে মাফ করতে পারবো না।”
তারিফা আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে যায়।আয়াশ গোছস করে এসে সোফাসেটের উপর বসে চুল মুছতে থাকে।এমন সময় তারিফা এসে আয়াশের পাশে বসে বলে,”আচ্ছা অরিন তো ছোট মানুষ! ওর সাথে কি এমন ব্যবহার করা উচিৎ হয়েছে আপনার?”
আয়াশ বলে,”একদম অরিনের হয়ে কথা বলতে আসবেন না!আমি এই মূর্হত্বে আর রাগতে চাইছি না।সো প্লিজ এখন আর কোনো কথা বলবেন না।”
তারিফা বুঝতেই পারছে ঝড়ের গতিবেগ তার অনুকূলে নয়।হঠাৎ করে তারিফা টেবিলের উপর একটা বিয়ের কার্ড দেখতে পায়।আয়াশ কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনাদের কোনো আত্মীয়ার বিয়ে বুঝি?”
আয়াশ বলে,”হ্যাঁ কেনো!”
তারিফা বলে,”স্ব-পরিবারে দাওয়া আছে বুঝি?”
আয়াশ এবারো হ্যা বলে।
তারিফা বলে,”আলহামদুলিল্লাহ্! যাক তাহলে বিয়ের পর প্রথম কোনো বিয়ের দাওয়াত খেতে যাবো।”
আয়াশ তারিফার খুশিতে জল ঢেলে দিয়ে বলে,”এই বিয়েতে বাড়ির কেউ যাবে না।তাই এতো খুশি হবার কিছু নাই।”
মূর্হত্বের মধ্যেই তারিফার মুখের হাসিটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়।তারিফা বলে,”কেনো যাবেন না?”
আয়াশ বলে,”পারিবারিক সমস্যা তোমার এতো জানবার দরকার নাই।নিজের কাজে মন দাও।”
তারিফা আর কিছু না বলে মুখটা গোমরা করে উঠে রুমের বাহিরে চলে যায়।
আয়াশ বসে বসে মুচকি হাসতে থাকে।
আয়াশের হাসির মাঝে গভীর রহস্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
আয়াশের হাসির রহস্য আয়াশ নিজেই জানে।
(গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো)
‘
‘
‘
চলবে……