ঝরা পাতা পর্ব-২২+২৩+২৪

0
1148

#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_২২

কথায় আছে মন খারাপের সময় গুলো না কি খুব বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়।তারিফা ভেবেছি হয়তো এই বিয়ের দাওয়াতের উদ্দেশ্য আয়াশদের সব আত্মীয়দের সাথে পরিচিত হতে পারবে। কিন্তু নাহ তার সেই ইচ্ছা আর পূরন হলো না।তারিফা মন খারাপ করে বাড়ির ছাদে চলে আসে।

তারিফা ছাদে এসে অবাক হয়ে যায়।কারণ ছাদর এক কোণায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে নিজের চোখের অশ্রুবিসর্জন দিতে ব্যস্ত অরিন।

চুপচাপ অরিনের পাশে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যাবেলার আকাশের দিকে বলে,”ভোর বেলা পৃথীবির সব অন্ধকার কে দূরে ঠেলে দিয়ে আকাশের বুকে আলোকিত দিনের সূচনা হয়।অন্যদিকে সন্ধ্যাবেলা দিনের আলো গুলোকে কালো আধার গ্রাস করে চারিদিক অন্ধকারে ঢেকে দেয়।”

অরিন চোখের পানি মুছে তারিফা কে উদ্দেশ্য করে বলে,”এসব কথার মানে কি?”

তারিফা আগের মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”আমাদের জীবনটা ঠিক এমন জানো!কখনো সম্পর্ক গুলো মিষ্টি মধুর মতো থাকে।আবার কিছু সময় কালবৈশাখী ঝড়ের হালকা বাতাসে সেই মিষ্টি সম্পর্ক গুলো গাছের পাতার মতো ঝরে পড়ে বিষাক্ত বিষাদের ছোঁয়াতে।”

অরিনের মাথার মধ্যে তারিফার বলা কোনো কথা ঢুকছিল না!তারপর ও সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে তারিফা কথা গুলো মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকে।

তারিফা আবারো বলে,”তোমার সাথে আয়াশের সম্পর্ক মধুর মতো ছিলো! কিন্তু তোমার ভাইয়ের একটা ভুল সিদ্ধান্ত আজ দুই জনের মাঝে বিভেদের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছ আছে।তুমি ইচ্ছা করলে তোমার ভাইয়ের ভুলের কথা ভুলে আগের মতো সম্পর্কটা ঠিক করতে পারো কিন্তু ঐ যে একটা বিষাক্ত বাতাসে ছোঁয়াতে তোমার মনটা বিষাদের ভরে আছে।সময় নাও!তবুও সম্পর্কের মানদণ্ডটা ঠিক রেখো।সব কিছু যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিও।সব সময় এক পক্ষের কথা শুনে অপরজন কে দোষী ভাবা উচিৎ নয়।একবার ভেবে দেখো একটা ভুল আয়াশ করেছে।তার জন্য তুমি কতো ভুল করছো।নিজেকে নিজের মতো তৈরি করো।যাতে অযথা চোখের পানির বন্যা বানিও না।
তারিফা চুপচাপ চলে যায়।

অরিন সামনে থাকা ফুল গাছের টবে পা দিয়ে একটা লাথি মেড়ে বলে,”উফফ এই মেয়েটা খুব ভেজালে!কখন যে কি কথা বলে কিছুই বুঝি না।কখনো খুব আপন মনে হয়! তো কখনো শএু মনে হয়।ধেত এর জন্য নিজের কলিজায় ছ্যাকা দিয়ে লাভ নেই।”

এমন সময় অরিনের হাতে থাকা ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে।অরিন ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে রোহান কল দিয়েছে।

অরিন ফোন রিসিভ করতেই রোহান অপরপাশ থেকে বলে ওঠে,”আমার একটা বড় প্রাইভেট কোম্পানিতে জব হয়ে গেছে।এখন আর আমাকে নিয়ে তোমার বাড়ির মানুষের সাথে কথা কাটাকাটি করতে হবে না।”

অরিনের আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলার সময় ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা ফুটে ওঠে।

রোহান বলে তারপর বলো,”তোমার দিনকাল কেমন যাচ্ছে?”

অরিন বলে,”ভাইয়ের সাথে নতুন কিছুই না!তবে এই ভাবী কে আমার কেনো জানি ঠিক হজম হয় না।গোলমেলে লাগে।”

রোহান এবার বলে,”কেনো সে কি করেছে?”

অরিন বলে,”কেমন জানি সব কথা বলে যার আগা মাথা কিচ্ছু বুঝি না।”

রোহান বলে,”আরে বাদ দাও ওর কথা! তুমি ঠিকমত লেখাপড়া করো তাতে হবে।তারিফা কে নিয়ে অযথা চিন্তার কিছু নাই।যে যেমন তাকে তেমন থাকাতে দেওয়া উওম।”

_এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়!
হঠাৎ একদিন সকালে আরিফুল খান বাড়ির সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”সবাই নিজেদের লাগেজ গুছিয়ে রাখবে! আমরা বিকালে আমাদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিবো।”

অরিন বলে ওঠে,”বাবা হঠাৎ গ্রামের বাড়িতে কেনো?সেখানে তো দাদীমা ছাড়া আর কেউ থাকে না।আর তাছাড়া ঐ গ্রামের বাড়িতে যেতে মোটেই ইচ্ছা করে না।”

আরিফুল খান বলে,”রোহানের সাথে কথা হয়েছে সেও যাচ্ছে আমাদের সাথে!এরপরেও যদি অরিন তোমার সমস্যা থাকে তাহলে তুমি এখানে থেকে যেতে পারো।”

রোহানের যাবার কথা শোনার পর অরিনের চেহারার মধ্যে খুশির একটা অন্য রকম আভা প্রকাশ পায়।অরিন কি এতো বোকা যে আর গ্রামের বাড়িতে যাওয়াতে নিষেধ করবে।কতোদিন পর সে সুযোগ পাচ্ছে রোহানের সাথে থাকার।এই সুযোগ মোটেও অরিন হাত ছাড়া করতে চাইছে না।নিজের মনের মানুষের সাথে সময় কাটাতে সবাই ভালোবাসে।অরিন এবার চাইছে সবাই যেনো গ্রামের বাড়িতে যায় এটা।

মমতা খান বলে,”হঠাৎ করে এতো ঐ বাড়িতে যাবার কি দরকার? ”

আরিফুল খান বলে,”আমি সবার কাছে এতো কৈফিয়ত দিতে রাজী না।যখন যেতে বলেছি তখন ইচ্ছা হলে যাবে নয়তো থেকে যাবে।এরপর আর কোনো তর্ক চাইনা।”

তারিফা খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,”আব্বাজান আর কেউ না গেলে সমস্যা নেই!আমি আপনার সাথে গ্রামের বাড়িতে যেতে রাজী।”

আয়াশ তারিফার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, “আমাদের গ্রামের বাড়িতে ভুল আছে।তারা তোমার মতো সুন্দরি মেয়েদের ঘাড় মটকে মেরে দেয়।তুমি কি চাইছো তোমার প্রাণটা বেঘোরে হারাতে?”

তারিফা জোরেশোরে বলে ওঠে,”ভুত বলে কিছু হয় না!আমি মোটেই ভুতে ভয় করিনা! তাই আমাকে বাচ্চা ভেবে এতো ভয় দেখানোর দরকার নেই।”

আয়াশ বলে, “তোমার ইচ্ছা! এরপর ওখানে যাবার পর বলিও না কিন্তু যে আসবাব আগে সাবধান কেনো করি নাই তোমাকে। ”

তারিফা বলে,”পরের কথা পড়ে দেখা যাবে!
এখন আপনার গুজবের গল্প বাদ দিন।”

এরপরে আর কি!সবাই নিজের রুমে চলে যায় ড্রেস গুছিয়ে লাগেজে ঢুকাইতে। অরিন নিজের রুমে এসে আলমারির দরজা খুলে চিন্তায় পড়ে যায়।কোন ড্রেস গুলো সে নিয়ে যাবে।আর গ্রামের বাড়িতে তো যে কোনো ড্রেস পড়ে ঘুরাঘুরি করা যায় না।মার্জিত পোশাক পরতে হবে তাকে।কয়েকটা শাড়ি,কিছু স্টাইলিশ ড্রেস আর নরমাল ব্যবহারের জন্য কয়েকটা থ্রিপিস নিয়ে নেয়।সব কিছুই সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি, জুতা,মেকআপ সব কিছু নিয়ে নেয়।

তারিফা রুমে এসে চুপচাপ নিজের অল্প কয়েকটা ড্রেস বাহির করছিল। তখন আয়াশ রুমে ঢুকে বলে,”খান বাড়ির নতুন বউ গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে! তার নিজের স্ট্যাটাস অনুযায়ী ড্রেস প্যাকিং করা উচিৎ! গ্রামের বাড়িতে নতুন বউ প্রথম আসলে সারা গ্রামের মানুষেরা বউ দেখতে আসে।নতুন বউকে যদি নতুন না মনে হয় সম্মান তোমার যাবে না।সম্মান যাবে খান বাড়ির।তাই সব কিছু গোছগাছ করার সময় বাড়ির বউ একথা মাথায় রাখবেন ম্যাডাম বলে তাড়াতাড়ি রুমের বাহিরে বেড়িয়ে যায়।”

আয়াশের কথা গুলো মোটেই ফেলে দেওয়ার মতো নয়।তাই তো আবারো নতুন করে নিজের ড্রেস গুলোর পরিবর্তন করে প্যাকিং করে।

তারিফার তো সেই খুশি খুশি লাগছে।সে বিয়ের দাওয়াত খেতে পারে নাই তাতে কি হয়েছে। তার থেকে বড় কিছুর সন্ধান পেয়েছে। সে আয়াশের গ্রামের বাড়িতে যেতে পারছে এটাই বা কম কোন দিক দিয়ে?গ্রামের বাড়িতে আয়াশের দাদীমার সাথে দেখা হবে।গ্রামের সব সহজ সরল মানুষের সাথে মিশতে পারবে।উফফ সব কিছু ভেবেই তারিফা খুব এক্সাইটেড।

আর অন্যদিকে অরিন খুব এক্সাইটেড কারণ সে রোহানের সাথে কিছু পারসোনাল টাইম স্পেন্ড করতে পারবে।

অবশেষে তারা বিকালে একসাথে রওনা দেয়।আয়াশের বাবা মা একটা গাড়িতে যায়।আর একটা গাড়িতে রোহান, অরিন, আয়াশ, তারিফা চারজন একসাথে যায়।সারাপথ রোহান, তারিফা অরিন বকবক করতে থাকে আয়াশ একটা কথাও বলে না!কারণ অরিন আয়াশের গাড়িতে যেতে নারাজ ছিলো!কিন্তু রোহান এসে অরিন কে বোঝায় যে চারজন একসাথে গেলে বেশি মজা হবে।অযথা আলাদা ভাবে যাবার কোনো মানে হয় না।

তাদের সবার যেতে যেতে অনেক রাত হয়ে যায়।রাত প্রায় সারারাত জার্নি করে ভোর রাতে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।এতো রাত হবার কারণ আশেপাশে কোনো কিছু কেউ দেখতে পারে না।গ্রামের বাড়িতে আসার পর কাজের মানুষেরা তাদের সবাই কে রুম দেখিয়ে দেয়।তারা নিজেদের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে।কারণ সবাই খুব টায়ার্ড। কাজের মানুষেরা বলে বুড়িমা এখন ঘুমাচ্ছে। আপনাদের সাথে কাল সকালে তার একবারে কথা হবে রাতে আর দেখা হবে না।পুরোবাড়ি এতোটা অন্ধকার বলার বাহিরে।বাড়ির চারিধারে কোনো আলোর চিহ্ন নেই।কেমন একটা ভুতুড়ে পরিবেশ।
সবাই এতোটা টায়ার্ড যে কোনো কিছুর খেয়াল ছিলো না।চুপচাপ যে যার রুমের দিকে চলে যায়।
যা হবার কাল সকালে হবে,যা দেখার তারা সকালে দেখবে।

অরিনের এতো ক্লান্তির মাঝেও একটা ভালোলাগা কাজ করছিল। সে আজ বহুদিন পর নিজের স্বামীর সাথে একরুমে এক বিছানাতে ঘুমাতে পারছে।এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কিছুই হতে পারে না।অরিন রোহানের বুকের উপর মাথা রেখে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।

তারিফা আর আয়াশের রুমে এক্সট্রা কোনো সোফা বা খাট না থাকাতে দু জনকে এক বিছানাতে ঘুমাতে হচ্ছে। অনেক রাত হয়ে গেছে আর খুব ক্লান্ত। তাই তারা আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে।



চলবে….

#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_২৩

খুব সকালে ওদের সবার ঘুম ভেঙ্গে যায় প্রচুর কোলাহলের শব্দ শুনে।তবুও আয়াশ মাথার উপর বালিশ চাপা দিয়ে শুয়ে থাকে।কিন্তু বাহিরে কিসের এতো হট্টোগোল তা দেখতে সোজা বিছানা থেকে নেমে চোখ কচলাতে কচলাতে দরজা খুলে বাহিরে এসে দেখে পুরোবাড়ি ভর্তি মানুষে।তারিফা জানে এবাড়িতে দাদীমা আর কাজের মানুষ থাকে। তাহলে এতো মানুষের আনাগোনা কেনো?

মনের মাঝে অনেক প্রশ্নেরা উঁকিবুকি শুরু করে দিয়েছে তারিফার।তারিফা চুপচাপ দোতলা থেকে নেমে বাড়ির বাহিরে চলে আসে।বাহির এসে চারপাশে দেখে তো ওর মাথার উপর বাঁশের বাগান ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা।

বাড়ির চারপাশে ডেকোরেশনের কাজ চলছে।
সব মানুষেরা নানারকম কাজে ব্যস্ত।তারিফা কিছুই বুঝতে পারছিল না।তখন তারিফার পাশ দিয়ে একজন ফুলের ঝুড়ি নিয়ে যাচ্ছিল তখন তাকে জিজ্ঞাস করে,”আচ্ছা এই বাড়িটা এতো সুন্দর বিয়ে বাড়ির মতো করে সাজানো হচ্ছে কেনো?”

লোকটা অবাক হয়ে তারিফার পা থেকে মাথা অবধি দেখে বলে,”দেখে তো মনে হয় না আমাদের গ্রামের।এই বাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে আছেন!মনে হচ্ছে রাতে এবাড়িতে ছিলেন।যে বাড়িতে ছিলেন সেই বাড়ির খবর জানেন না আজব মহিলা। বলে সে চলে যায়।”

তারিফা সেখানে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে।শালা লোকটা আমার প্রশ্নের উওর না দিয়ে আরো প্রশ্ন করে চলে গেলে।আজব গ্রামের বাড়িতে আসছি।

তখন পাশ দিয়ে দু জন মহিলা কথা বলতে বলতে যাচ্ছিল! যে এই বাড়ির নাতি ছেলের বিয়ে।তাই জন্য তো পুরোবাড়ি লাইটিং করছে!বাড়ির ভেতরে ফুল দিয়ে সাজাচ্ছে। সে যে যাই বলুক খান বাড়ির নাতিছেলের বিয়ে হবে আর সাত গ্রামের মানুষ জানবে না তা কখনো হয় না।

তারিফা বিয়ের কথা শুনে ভেবে নেয় আয়াশ কে এখানে আবার বিয়ে দিতে আনছে তার শ্বশুর মশাই। আজ আমি আয়াশের জান কবজ করে ছাড়বো আমাকে ধোঁকা দেওয়া।দৌড়ে বাড়ির ভেতর যাবার সময় এক বয়স্ক মহিলার সাথে সে ধাক্কা খায়।মহিলার দিকে খেয়াল না করেই সে দুঃখিত বলে চলে যাচ্ছিল।
তখন বয়স্ক মহিলা তারিফার হাত ধরে বলে,”তা মা জননী এতো তাড়াতাড়ি করে কোথায় যাচ্ছেন?”

তারিফা বলে,”আমার ঘরে মানুষেরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে সেই আগুন নেভাতে যাচ্ছে। আপনার সাথে পড়ে কথা বলবো বলে চলে যায়।”

রুমে এসে সোজা তারিফা আয়াশের মাথার চুল ধরে টানাটানি শুরু করে দেয়।আয়াশ বলে,”এই মেয়ে এই ভুতুড়ে বাড়িতে আসতে না আসতেই তোমাকে ভুতে ধরছে?”

তারিফা রাগে কান্নারত অবস্থায় বলে,”আমাকে ধোঁকা দিয়ে আরেকটা বিয়ে করতে এই বাড়িতে নিয়ে আসছেন।আপনার সাহস তো কম না।আমি জীবিত থাকতে আরেকটা বিয়ের আয়োজন করছেন আপনি?”

আয়াশ এবার তারিফা কে এক টান দিয়ে বিছানার ফেলে দু হাত ধরে রেখে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,”আমি হাজারটা বিয়ে করবো পারলে আমাকে আটকা।”

তারিফা এবার এ্যা এ্যা ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করে দেয়।এমন সময় ওদের রুমের দরজাতে নক পড়ে।বাহিরের থেকে বলে তাদের নিচে খাবার জন্য ডাকা হচ্ছে।আয়াশ তারিফা কে ছেড়ে দিয়ে সোজা বাথরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।এদিকে তারিফা কান্নাকাটি করে নিজের চেহারার অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে।

আয়াশ বাথরুম থেকে বেড়িয়ে তোয়ালেটা তারিফার মুখের উপর ছুড়ে দিয়ে বলে যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো নয়তো খবর আছে।পাশে নদী আছে তোমাকে খুন করে নদীতে ভাসিয়ে দিবো।

তারিফা চুপচাপ বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা সুন্দর থ্রিপিস পড়ে রুমে এসে দেখে আয়াশ দাঁড়িয়ে আছে।এরপর নিরবে আয়াশ কে অনুসরণ করে নিচে ড্রাইনিং রুমে চলে আসে।

তারিফা এসে দেখে এখানে পরিবারের সবাই এক সাথে মেঝেতে বসে আছে।রোহান অরিন অনেক আগেই এখানে এসেছে।

আরিফুল খান তারিফা কে দেখিয়ে তার মা মরিয়ম খান কে বলে,”মা এটা তোমার নাতিবউ। ”

তারিফা সামনে তাকিয়ে দেখে সকালের সেই মহিলা!শরীরে বয়সটা বেড়ে গেছে কিন্তু মাশাআল্লাহ চেহারাতে এখনো অনেক সুন্দর। তার সামনে গিয়ে সালাম করে।

মরিয়ম খান তারিফা কে তার পাশে বসিয়ে বলে,”মাশাআল্লাহ আমার নাতিবৌ তো সেই সুন্দরি হয়েছে।”

আয়াশ পেছন থেকে তার দাদীমা কে জড়িয়ে ধরে বলে,”বউটা যতোই সুন্দরি হোক না কেনো!এই মরিয়ম খানের সামনে কারো রুপের তুলনা করা যাবে না।”

মরিয়ম খান রেগে বলে,”থাক দাদুভাইয় এখন এতো মিথ্যা ভালোবাসা দেখানোর দরকার নেই।এতোদিন বিয়ে করেছ আজ এসেছো বউ নিয়ে এই বাড়িতে।এই বুড়িকে যে কারো মনে পড়ে না তা খুব ভালো করে জানি।”

এমন সময় সেখানে আরেটা পুরুষ কন্ঠ বলে ওঠে,”মাশাআল্লাহ এখানে দেখছি হুরপরিদের মেলা বসেছে।মাই ডিয়ার ডার্লিং এর পাশে ঐ হুরপরি কে?”

আয়াশ উঠে বলে,”ডার্লিং এর উপর তো অনেক আগে থেকে ভাগ বসিয়ে আছিস এখন আবার আমার বউয়ের দিকে নজর দিতে আসবি না বুঝলি। ”

ছেলেটা বলে,”ওহ আচ্ছা! এটা আমার ভাবী!আরে তুই সামনে থেকে সর ভাবীর পাশে তার দেবর কে ভালো মানাবে।”

আয়াশ রাগী দৃষ্টিতে তার চাচাত ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি করে তারিফার পাশে বসে পড়ে।

মরিয়ম খান বলে,”এসো আয়াজ দাদুভাইয় আমার অপরপাশে জায়গা ফাকা আছে তুমি সেখানে বসো।কয়েকদিন পর তোমার পাশে নতুন বউ থাকবে।”

তারিফা কিছুই বুঝতে পারছে না এখানে কি হচ্ছে। তাই সে একবার আয়াশ তো আরেকবার আয়াজের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে।

তারিফার এমন অবাক দৃষ্টি দেখে মরিয়ম খান বলে ওঠে,নাতবৌ এবাড়িতে যে এতো আয়োজন দেখছো সব কিছু আমার আয়াজ দাদুভাইয়ের বিয়ের আয়োজন।

আয়াজের বিয়ের কথা শুনে তারিফার বুকের উপর থেকে বিশাল বড় কষ্টের পাহাড় সরে যায়।

আয়াশ তারিফার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতে থাকে তা দেখে তারিফা বুঝতেই পারে ঐ বিয়ের কার্ডটা আসলে আয়াজের বিয়ের ছিলো।আর সাকালে সে ঐ মহিলারদের কথা শুনে ভুল বুঝেছিল।

তারিফা সকালে যে ব্যবহার করেছে তারপর আর আয়াশের দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছে না।তাই চুপচাপ মাথা নিচু করে খাবার খেতে শুরু করে।

তখন মরিয়ম খান মমতা খানের দিকে কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কর্কশ কন্ঠে বলে ওঠে,”বউমা তুমি বাড়ির বড় ছেলে!আয়াজের বাবা মা কেউ নেই!ওর বিয়ের সব আয়োজনের দায়িত্ব তোমাদের তারপর ও তোমরা সবাই মেহমান হয়ে এবাড়িতে আসলে?”

মমতা খান নিচু কন্ঠে বলে,”দুঃখিত আম্মা! ”

মরিয়ম খান বলে,”রাখো তোমার দুঃখিত! ছেলে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর ও তাদের সাথে করে এবাড়িতে আসার প্রয়োজন মনে করো নাই তুমি।তোমার আর কি হবে?তুমিও শাশুড়ি হয়েছো তাও এখনো ঘটে বুদ্ধি আসে নাই তোমার।”

তারিফা আস্তে করে দাদীমা কে বলে,”দাদীমা আপনি চিন্তা করবেন না!আমরা সবাই চলে এসেছি তো!আয়াজ ভাইয়ের বিয়ের সব কাজ আমরাই দেখাশোনা করবো।আপনাকে অভিযোগ করার কেনো সুযোগ দিবো না ইনশাআল্লাহ! ”

দাদীমা বলে,”তা নাতবৌ তোমার নাম কি?”

আয়াশ তাড়াতাড়ি করে বলে,”দাদীমা ওর নাম তারিফা!”

মরিয়ম খান বলে,”কি নাম তাড়ি টারি এসব ছাড়া আর কিছু নাই।”

তারিফা মুচকি হেসে বলে,”আছে তো!”

আয়াশ ভ্রু কুঁচকে তারিফার দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার আরো নাম আছে? আমি তো জানি না!”

তারিফা কন্ঠটা সুন্দর করে বলে,”মিসেস আয়াশ খান!”

আয়াজ পাশে থেকে জোড়ে বলে ওঠে বাহ বাহ এই না খান বাড়ির বউ।

আয়াশ আয়াজ কে বলে,”এই তোর দুদিন পর বিয়ে তুই নিজের বউয়ের চিন্তা কর। আমার বউয়ের প্রশংসা করতে হবে না।”

তারিফা আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনি কি আয়াজ ভাই কে হিংসা করছে?সে আমার এতো প্রশংসা করছে তাই?”

আয়াশ বলে মোটেই না।

দাদীমা বলে,”এই তোমরা থামো,,দেখো তো নাতিজামাই কতো ভদ্র একদম চুপচাপ বসে তোমাদের তামাসা দেখছে। ”

এরপরে আর কেউ কোনো কথা বলে না।নাস্তা কমপ্লিট করে সবাই রুম থেকে বেড়িয়ে যায় দাদীমা তারিফা কে বলে,”তুমি এবাড়ির বউ!এটা বিয়ের বাড়ি!তোমার বউদের মতো সেজেগুজে ড্রেস আপ করে থাকলে ভালো হয়।”

তারিফা বুঝতে পারে দাদীমা তাকে কি বলতে চাইছে।

এভাবে সেদিন কেটে যায়।সে দিন তারিফা নিজে থেকেই বাড়ির সবার সাথে পরিচিত হয়।রাতে তারিফা রুমের বাহিরে আসতেই আয়াশ ওর হাত ধরে বাড়ির বাহিরে বাগানে নিয়ে চলে আসে।সেখানে আগে থেকেই ওদের অনেক ভাইবোন উপস্থিত ছিলো।সব কাজিনেরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিল।আয়াশ তারিফা কে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

তারিফার আনকমপ্লিট লাগছিল সেখানে! সে আয়াশ কে তাদের সাথে আড্ডা দিতে বলে বাড়ির ভেতরে চলে আসে।রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ে।আয়াশ রাতে কখন এসেছে তা তারিফা জানে না।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে একটা সুতির শাড়ি পড়ে মাথায় সুন্দর করে হিজাব বেধে কোমরে শাড়ি গুঁজে বাহিরে বেড়িয়ে পড়ে।
কারণ সে যে এ বংশের বড় নাতিছেলের বউ !
তার তো বিয়ে বাড়িতে মেহমানের মতো চুপচাপ বসে থাকা মানাই না।কিছু সময়ের মধ্যেই তারিফা সব মানুষের সাথে খুব ফ্রি হয়ে যায়।বাড়ির মানুষের মতো ফ্রি হয়ে সব আত্মীয় স্বজনের খেদমত করতে থাকে।

মমতা খান তার ছেলের বউ মরিয়ম খান বলে,”দেখো বউমা তুমি এবাড়ির বড় বউ!সেও বড় বউ!
সে নতুন তারপর ও দুদিনে সে সবার সাথে ফ্রি হয়ে গেছে।”

মমতা খান বলে,”যে মেয়ের জন্মের ঠিক নেই!বাবা মায়ের পরিচয় নেই!সেই মেয়েকে নিয়ে আদিখ্যেতা আপনি করেন আমার করার ইচ্ছা নেই।”

মরিয়ম খান তার ছেলের বউয়ের মুখে এমন কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে থাকে।শেষে কিনা এমন মেয়ে তার বাড়ির?
এটা তো মেনে নেওয়া যায় না।


চলবে….

#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Angel_Frozen_Nishi_khatun
#পর্ব_২৪

কথায় আছে ঝড়ের আগে প্রকৃতি খুব শান্ত থাকে!তারিফা জীবনটাও ঠিক তেমন কাটছিল চুপচাপ নিরবতায় ঘেরা। তারিফা জানে না তার জন্য ঝড় আড়ালে বসে আছে সয়ম সুযোগের অপেক্ষাতে।

এদিকে তারিফা আয়াজের গায়ে হলুদের আয়োজনে খুব ব্যস্ত।অরিন ও তার ভাবীর হাতে হাতে সব কাজে সাহায্য করতে থাকে।অরিন তারিফার কাছে থেকে কাচা হলুদ বাটা শেখে। রোহান বাটার সময় সেখানে বসে একটু হলুদ নিয়ে অরিন মুখে মাখিয়ে দেয়।

অরিন ভাবী ভাবী করে তারিফা কে ডেকে রোহানের নামে বিচার দিতে শুরু করে।অরিন বলে,”দেখো ভাবী রোহান আমাকে হলুদ মাখিয়ে দিচ্ছে এতে আমার স্কিন খারাপ হয়ে যাব না বলো?”

তারিফা মুচকি হেসে বলে,”আরে বোকা মেয়ে স্বামী ভালোবাসবে হলুদ রং এ রাঙ্গিয়ে দিচ্ছে এটা তো অনেক বড় পাওয়া। ”

রোহান হলুদ হাতে নিয়ে বলে,”জানো বোকা বউ এই হলুদে কতো গুণাগুণ আছে।আগের যুগের মেয়েদের রুপচর্চায় এই হলুদ ব্যবহার করা হতো।
হলুদ ও দুধের মিশ্রণ ত্বকের ক্ষতি করে এমন উপাদানের বিরুদ্ধে কাজ করে ত্বককে সুস্থ রাখে।
কাঁচাদুধের সঙ্গে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে মুখ ও গলায় লাগাতে হবে তাহলে আমার সুন্দর বউয়ের রং আরো সুন্দর হবে।হলুদ ত্বকের ভেতরের আর্দ্রতা রক্ষা করে উজ্জ্বল ত্বক ফুটিয়ে তুলতে হলুদ সাহায্য করে।”

অরিন বলে,”থাক আমার স্বাধের বর!আপনি এখন এই হলুদের উপর পিএইচডি করিয়েন না।”

তারিফা রোহান কে বলে,”রোহান অরিন কে কাজ করতে দাও!তুমি যাও রেডি হয়ে এসো।”

এদিকে বিকালে আয়াজের জন্য হলুদের আসরে সব কিছু রেডি করে তারা ঘরে আসে রেডি হতে।

অরিন লাল পাড়ে হলুদ শাড়ি পড়ে,ফুল হাতা ব্লাউজ, সাথে হালকা লালচে কালারের হিজাব।হিজাবের উপর দিয়ে অরিন ফুলের সব অলংকার পড়েছে।
সাথে হালকা মেকআপ করছিল আয়নার সামনে।

তখন রোহান অরিন কে পেছনে থেকে এসে জড়িয়ে ধরে ওর কাধের উপর থুতনি রেখে আয়ান দিকে তাকিয়ে বলে,”মাশা আল্লাহ আমার বউকে তো খুব সুন্দর লাগছে।এখন যদি তোমাকে অন্য কেউ পছন্দ করে সাথে নিয়ে চলে যায় তখন আমি কি করবো?”

অরিন বলে,”এই অরিন খান রোহানের!তাই অরিনের দেহে প্রাণ থাকতে স্বপ্নেও কেউ রোহানের কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না।”

রোহান বলে,”অরিন একটা কথা জানো আমার বউ লজ্জা পেলে তাকে এতো বেশি মায়াবী লাগে তোমাকে কি বলবো বলো!”

অরিন বলে,”দেখতে হবে না বউটি কার!মিস্টার রোহানের বউ যে আমি।”

লজ্জাবতী হয়ে পেছন ফিরে রোহান কে দেখে সে আজ হিমুর বেসে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।রোহানের ফর্শা শরীরে হলুদ পাঞ্জাবীতে রাজকুমারের মতো লাগছে।আলিঙ্গনাবদ্ধ করে রাখে অরিন।রোহান ও অরিন কে তার বুকের সাথে আদর-যত্নের জড়িয়ে রাখে।

এদিকে তারিফা রুমে এসে একটা সবুজ পাড়ে হলুদ শাড়ি পড়ে!সবুজ চুড়িদার হাতার ব্লাউজ।সাথে গোল্ডেন হিজাব, হিজাবের সাথে সুন্দর কিছু হিজাব পিন লাগিয়ে নেয়।হিজাবের উপর দিয়ে সে গলায় ফুলের তৈরি একটা একটা হার পড়ে।সিম্পল সাজে মাশাআল্লাহ তাকে অনেক সুন্দর লাগছে।তারিফা বারবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরেফিরে নিজেকে দেখত থাকে।

আয়াশ হঠাৎ করে রুমে এসে তারিফার এমন কান্ড দেখে হাসতে থাকে।তারিফা কে রাগানোর জন্য বলে,”এতোই যখন পর্দা করতে ভালোবাসো তখন কষ্ট করে সাজগোজ না করে বোরখা পড়ে নিলেই পারো।”

তারিফা বলে,”আরে এতো সময় পর একটা ভালো বুদ্ধি দিয়েছেন!হুদাই কাজে আমি ফাউল সময় নষ্ট করছি সেজেগুজে।বোরখা পড়ে চুপচাপ পুরো অনুষ্ঠান ইনজয় করতে পারবো।”

আয়াশ বলে,”থাক ম্যাডাম আপনার কষ্ট করে বোরখা পড়তে হবে না।এমনিতে অনেক পর্দানশীল আপনি।এর বেশি পর্দার দরকার নেই।”

তারিফা বলে,”আপনার বউ!ইচ্ছাও আপনার। ”

এবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল গুলো ঠিকঠাক করতে থাকে।তখন তারিফা একভাবে আয়াশের দিকে তাকিয়ে থাকে।

আয়াশ বলে,”দেখুন ম্যাডাম আমার মতো সুন্দর ছেলের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না।আপনার ঐ চোখের চাহনি তে কেমন জেনো নেশা কাজ করে।আপনি মায়াবী যাদু জানেন।”

তারিফা বলে,”যে না চেহারা, কুত্তাই দিবো পাহাড় বলে চলে যায়।”

আয়াশ তারিফার মুখে এমন কথা শুনে একদম হ্যাঁ হয়ে থাকে।আল্লাহ গো এই বউ কি বলে গেলো?

এদিকে বাড়ির সব মেয়েরা বাড়ির আঙ্গিনা তে বসে আছে।অন্যদিকে আয়াজের গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠান হচ্ছে।
এই খান বাড়ির নিয়ম এটা, যে ছেলের গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠানে শুধু ছেলেরা থাকবে,আর মেয়ের অনুষ্ঠানে মেয়েরা,ছেলের মা,চাচি, বোন,নানি,দাদী এনারা চাইলে ছেলের গাঁয়ে হলুদ ছোঁয়াই দিয়ে আসতে পারবে।
অন্য মহিলাদের কোনো অগ্রাধিকার নেই।”

তারিফারা দূরে থেকে পুরো অনুষ্ঠান দেখতে পাচ্ছে।
সব ছেলেরা মিলে নিজেদের মনের মতো করে ইনজয় করছে।আয়াশ তো পুরো হলুদের বাটি উল্টিয়ে ঢুবিয়ে দেয় আয়াজ কে।
এরপর আয়াজের সব বন্ধুরা মিলে বেচারা কে স্টেজের উপর গরু ধোঁয়ানোর মতো করে গোছল করিয়ে দেয়।

আয়াজ বেচারা চেঞ্জড করে এসে দাদীমা কে বলে,”আহা দাদীমা কোথায় সুন্দরি ভাবী গোছল করিয়ে দিবে!সে গুড়ে বালি!বন্ধুরা তো রামধোলাই করলো গোছলের নামে।”

আয়াশ এসে আয়াজের কাধের উপর মাথা রেখে বলে,”তোর সে আশার মুখে ছাই!এ বাড়ির কোনো ছেলের বিয়ের গোছলে মেয়েরা এলাউ না।”

তারিফা তখন বলে,”আলহামদুলিল্লাহ্‌!এই নিয়ম টা আমার অনেক ভালো লাগছে।অযথা কোনো ননমারহাম পুরুষের গাঁয়ে তো হাত দিতে হয় না।
এতে তার থেকে দূরে এবং পর্দা হয়ে যায়।”

আয়াজ বলে,”ভাবী এই বাড়ির নিয়মের কিছুই জানো না।সব নিয়মকানুন জানলে আলহামদুলিল্লাহ্‌ আর বলতে না।কাল বিয়ের সময় জানতে পারবে কেমন নিয়মকানুন সব।”

মরিয়ম খান বলে,”এতো নিয়মকানুন তারিফার না জানলেও চলবে বুঝলে।”

আয়াশ বলে,”কেনো?এ বাড়ির বড় বউদের তো সব নিয়মকানুন জানতে হয় এবং পালন করতে হয়।তাহলে তারিফা কেনো বুঝবে না?”

মরিয়ম খান বলে,”কার কতোটা জানার অধিকার আছে তা তোমাদের না জানলেও চলবে।”

অরিন আর রোহান চুপচাপ দাঁড়িয়ে সবটা শুনছিল। দাদীমা চলে যাবার পর অরিন বলে,”এখানে কোথাও কিছু একটা গণ্ডগোল আছে!নয়তো দাদীর ব্যবহার হঠাৎ এমন রুক্ষ হয়ে গেছে কেনো?”

রোহান বলে,”আরে দাদীর বয়স হয়েছে!বাড়ির এতো অনুষ্ঠানের পেশার যাচ্ছে তার উপর দিয়ে!সে তো একটু রুড বিহেভিয়ার করতেই পারে!'”

অরিন বলে,”তোমরা যে যাই বলো!আমার দাদীমা কে হাড়ে হাড়ে চিনি।সমস্যা অবশ্যই আছে।”

তারিফা বলে আচ্ছা বাদ দাও তো এসব চলো অনেক রাত হয়েছে সবাই ঘুমাতে যাবে।

সবাই চুপচাপ যে যার রুমে চলে যায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে অরিন সাজেগুজে ব্যস্ত।
আর তারিফা ভুতের মতো কাজ নিয়ে ব্যস্ত।
তারিফা কে পুরোবাড়ি সব মানুষের সুবিধা অসুবিধা দেখতে হচ্ছে!

এদিকে সকালে দাদীমা তারিফা কে বলে দিয়েছে বাড়ির বড় বউ দেবরের সাথে বরযাত্রী যেতে পারবে না।
এটা এবাড়ির নিয়ম।ননদ যেতে পারবে ভাবী কে আনতে।

সেই হিসাবে রোহান আর আয়াশ মিলে আয়াজ কে বর বেসে রেডি করে নিচে নিয়ে আসে।মমতা খান আয়াজের মুখ মিষ্টি করে ওর কাপলে চুমা দিয়ে হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেয়।

বরযাত্রী বেড়িয়ে যাবার পর বাড়ির সব কাজ গুছিয়ে নেয় কাজের মানুষদের সাথে করে।
সারাদিন সবাই মিলে পুরোবাড়ি পরিষ্কার করে গুছিয়ে সুন্দর করে রাখে।
দিন শেষে সন্ধ্যা বেলা নিজের দিকে তাকিয়ে তারিফা চমকে ওঠে।নিজের কোনো যত্ন নেই।
তাকে দেখে পুরো গৃহস্থ বাড়ির বউয়ের মতো লাগছে।
তারিফা গোছল করে একটা লাল রঙ্গের শাড়ি পড়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে দাদীমার কাছে যায়।
উনি তারিফার সাথে কোনো কথা বলেন না।
তারিফার বেপারটা কেমন যেনো লাগছিল।
তখন দাদীমা মমতা খান কে বলে নতুন বউয়ের বরণের সব ব্যবস্থা করে নাও।তোমাকে বউ বরণ করে বাড়ির ভেতর আনতে হবে।

বাড়িতে নতুন বউ নিয়ে সবাই চলে এসেছে।
নিচে হ-ই হুল্লোর শুরু হয়ে যায়।মমতা খান বউ বরণ করতে চলে যায়।মমতা খানের আশেপাশে সবাই নতুন বউ বরণ করা দেখার জন্য মৌমাছির মতো জড়ো হয়।
অবশেষে বাড়িতে নতুন বউয়ের গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।তারিফা দূরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিল।
কারণ দাদীমা তাকে বরণের অনুষ্ঠানে যেতে বারণ করেছে।

এমন সময় হঠাৎ করে সেখানে একজন ভুত ভুত বলে চিৎকার করে মেঝেতে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়।
তখন আয়াশ তারিফা পাশে দাঁড়িয়ে যায়!
তারিফা আয়াশ কে জড়িয়ে ধরে বলে,”সত্যি তাহলে আপনাদের এবাড়িতে ভুত আছে?”



চলবে…..