টিপ টিপ বৃষ্টিতে পর্ব-০৭

0
371

#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আধঘন্টা কানে ধরে উঠ বস করে, এখন এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে,দুই হাতে কানে ধরে ঐশী।

শুভ বিছানায় বসে ঐশীর দিকে তাকিয়ে আছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।

ঐশীর রাগে মেজাজ তুঙ্গে উঠে থাকলেও উপরে খুব শান্ত দেখাচ্ছে। সে কিছুতেই এখন শুভর সাথে রাগ দেখাতে চায় না। রাগ দেখালে উল্টো সে ফেঁসে যাবে।

ঐশী মিন মিন করে বললো ভাইয়া..

শুভ চোখ গরম করে তাকাতেই কানে হাত দিয়ে বললো, ‘ সরি স্যার পা খুব ব্যাথা করছে। বলেই ন্যাকা স্বরে কান্না শুরু করলো। ‘

শুভ মোবাইল সামনে আনতেই ঐশী আবার আগের মতো সুজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। পেটেও খুব খিদে লেগেছে। পেটের ভেতর মনে হচ্ছে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে।কাঁদো কাঁদো মুখ করে শুভর দিকে তাকিয়ে আছে।

শুভর হয়তো মায়া হয়েছে তাই আজকের জন্য ঐশীকে ছেড়ে দিয়েছে।

ঐশী কোনো রকম পা টেনে টেনে ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল সেরে বের হয়ে নিচে গেলো খাবার খেতে।

শুভ ঐশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে ভিডিও টা প্রথমে দেখেই হেসে উঠলো।

ঐশী যখন গাছ বেয়ে বারান্দায় উঠেছিলো শুভ সব কিছু মোবাইলে ভিডিও করে নেয়। ঐশী সামনে ফিরেই দেখে শুভ মোবাইল ওর দিকে করে তাকিয়ে আছে।

ঐশী শুভকে দেখে ভয় পেয়ে যায়।

শুভ একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,’ এই ভিডিও আমি এখন গিয়ে ফুপিমণি কে দেখাচ্ছি।’

এই কথা শুনে ভয়ে ঐশী বলা শুরু করলো,’ প্লিজ না ভাইয়া।’

শুভঃ কানে ধরো।
ঐশীঃ কিইই..??
শুভঃ কানে ধরবে না-কি আমি…..
ঐশীঃ ধরছি ধরছি। বলেই কানে ধরে মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে।
শুভঃ এবার উঠ বস করো।
ঐশীঃ না!!..
শুভঃ ওকে তাহলে আমি গিয়ে বলছি তুমি এত রাতে একটা ছেলের সাথে বাসায় গাছ বেয়ে এসেছো।
ঐশীঃ আরে ভাইয়া আমার উঠ বস করতে খুব ভালো লাগে। এই দেখুন করতেছি।
শুভ রেগে বললো,’ উঠ বস করে সাথে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। এটা ভাইয়া ডাকার শাস্তি।’

ঐশী মুখে কিছু বললো না। এমনি তেই এত কিছুর পর সে খুব ক্লান্ত। কানে ধরে উঠ বস করা শুরু করলো।

ঐশীর মুখটা বার বার মনে পরছে আর শুভ হেঁসেই যাচ্ছে। এই প্রথম ঐশীকে শাস্তি দিয়েছে সে।

ঐশী খাওয়া শেষ করে রুমে এসে দেখে শুভ ঘুমিয়ে গেছে। নিচে গিয়ে যে কতরকমের মিথ্যা কথা বলতে হয়েছে।

ঐশী চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে এখন যদি শুভর পাশে শুয়ে পড়ে তাহলে কি শুভ ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে। এই সব ভাবতে ভাবতে নজর গেলো টেবিলের উপর রাখা একটা কাগজের উপর। কাগজটা হাতে নিয়ে দেখে লিখা,

“নিচে বিছানা করে শুয়ে পড়ো। বিছানায় শুয়ার কথা কল্পনাতেও ভেবোনা। তাহলে ভিডিও সবাইকে দেখিয়ে দিবো।”

লেখাটা পড়ে রাগে কাগজটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে শুভর উপর ফেলতে নিয়ে নিচে ফেলে চলে গেলো। দরজার সামনে গিয়ে কিছু মনে হতেই খুশিতে নাচতে নাচতে শুভর সামনে এসে বিছানায় বালিশের নিচে উঁকি মারলো। মোবাইল শুভর মাথার কাছে খুশিতে হাত বাড়িয়ে দিলো। কিন্তু নাগালে আসছে না। একটু ঝুঁকে নেওয়ার চেষ্টা করলো মোবাইলটা হাতে নিয়ে আরেকটু ঝুঁকতেই শুভর মুখটা দেখে থমকে গেলো কিছু সময় তাকিয়ে রইলো শ্যামবর্ন মুখটার দিকে। শুভর থেকে মুখ ফিরিয়ে মোবাইলের লক খুলার চেষ্টা করলো। শুভর নাম দিয়ে দেখলো আরো কত ভাবে চেষ্টা করলো কিন্তু কাজ হলো না। রাগে শুভর উপর ঝুঁকে মোবাইল রাখতে গিয়ে শুভ নড়ে উঠতেই গিয়ে শুভর উপর পরলো। শুভর ঘুম ভেঙে গেলো চোখ খুলেই মুখের সামনে ঐশীর মুখ দেখে অবাক হয়ে গেলো।

শুভ চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে ঐশীর মুখে হাত দিয়ে বললো, ‘ তুমি এখানে কেনো..?? ‘

ঐশী তারাতাড়ি শুভর উপর থেকে সরে দাঁড়ালো।

ঐশীঃ স..সরি স্যার। আস..সলে আমি যাওয়ার সময় পিছল খেয়ে আপনার উপর পড়ে গেছি। বলেই এক দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

শুভ এখনো হা করে তাকিয়ে আছে ঐশীর যাওয়ার দিকে। এই মেয়ে কি বলে গেলো। কি হলো.??

********

বিথী সোফায় ঘুমিয়ে আছে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশ বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।

বিথী ভাবছে কত সুন্দর ছিলো সেই দিন গুলো। যখন বিথী বাহিরে যেতো আকাশ হাতে ফুল নিয়ে ওর পিছু পিছু ঘুরতো। ভালোবাসি ভালোবাসি বলে একটু পর পর মেসেজ পাঠাতো। এইগুলো দেখে দেখে বিথী নিঃশব্দে নিরবে দূরে লুকিয়ে আকাশ কে দেখতো আর হাসতো। ইচ্ছে করে ওর পিছনে পিছনে আকাশকে ঘুরাতো।কত সুন্দর ছিলো সেই দিন গুলো ভাবতেই চোখের কোনে পানি জমে গেলো। আজ তিন দিন সে এই আকাশ কে চিনতে পারছে না। কথায় কথায় ওর গায়ে হাত তুলা, ওর সাথে বাজে ব্যাবহার করা, এইতো সেই ছেলে না যেই ছেলে ওকে না দেখলে পাগলের মতো হয়ে যেতো। আসলে ছেলেরা সবাই এক নিজের কাজ হাসিল করার আগ অবদ্ধি মেয়েটার পায়ে ধরতে রাজি কিন্তু নিজের কাজ হয়ে গেলে মেয়েটিকে ডাস্টবিনের ময়লা টিসুর মতো ছুড়ে ফেলতে দুই বার ভাববে না। নিজের পেটে হাত দিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো বিথী। আজ এই ভুল পথে পা না দিলে ওর জীবন অন্য রকম হতো।

***

সকালের নাস্তা খেয়ে শুভ আর ঐশী এক সাথে বের হয়ে গেলো ভার্সিটির উদ্দেশ্য।

শুভ আর ঐশীকে এক সাথে গাড়ি থেকে বের হতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অনেকে।

ঐশী শুভর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে কিছু বলতে গেলে শুভ কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায়।
ঐশী রাগে গজগজ করতে করতে সামনে তাকিয়ে দেখে সি সি ক্যামেরা সব ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
ঐশী জোর পূর্বক হাসি ঝুলিয়ে বললো,’ কেমন আছিস সবাই..??’

শান্তঃ আগে বল শুভ স্যার তো আমাদের কাউকে একদম পছন্দ করে না। তাহলে তোকে আজ সাথে করে নিজের গাড়িতে নিয়ে আশার মানে কি..??

অথৈঃ ইসস তুই তো লাক্কি ঐশী আমার ক্রাশ এর সাথে যদি কখনো আমি এক গাড়িতে করে আসতে পারতাম।যাক জিজুর সাথে তোর গাড়িতে ঘুরা শেষ।
ঐশীঃ জিজু!!
অথৈঃ আমার হবু জামাই তোর কি হয়..?
ঐশীঃ হবু জামাই কই পাইলি..?
অথৈ লাজুক হেসে বললো, ‘ আমি মনে মনে শুভ স্যারকেই বিয়ে করবো ভেবে নিয়েছি।
ঐশীঃ উনি যদি বিয়ে করে নেয়। যদি বউ থাকে..?
অথৈঃ তাও সতীনের সংসার করবো। আর স্যার বিয়ে করলে আমরা জানতাম সবাই তাই না..?
ঐশীঃ এমন তো হতে পারে স্যার দ্বিতীয় বিয়ে করবে না।উনি উনার বউকে খুব ভালোবাসে। আর এমন কি কথা আছে উনি কাউকে না জানিয়ে ও বিয়ে করতে পারে।
দীপঃ চুপ করবি তোরা!! আজাইরা পেঁচাল তোর মতো পেত্নীকে বিয়ে করতে স্যার বইসা রইছে।
অথৈঃ একদম পেত্নী বলবি না দীপের বাচ্চা।
দীপঃ লুচ্চা মাইয়া।
অথৈঃ তুই চুপ!! একশো বার লুচ্চা হবো। তোর কি.?? আর তুই দেখিস কয়েকদিন পর আমি এই স্যারের বাচ্চার মা হয়ে তোদের দেখিয়ে দিবো। একটু ভাব নিয়ে বললো।

শান্তঃ ছি… কি অশ্লীল কথা।
অথৈঃ অশ্লীল এর কি বললাম ভাই। আর ঐশী বল স্যার তোকে কি মনে করে সাথে নিয়ে আসলো.??

ঐশী রেগে অথৈর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর স্বামী হয়ে সে এখনো বাচ্চার মা হওয়ার কথা কল্পনাতেও আনেনি কিন্তু এই লুচ্চা মেয়ে তো… ছি।কিন্তু এখন কি বলবে..? যদি বলে স্যার ওর স্বামী নিশ্চিত এক একটা হার্ট অ্যাটাক করবে, তাহলে কি বলবে…?

চলবে…

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।