টিপ টিপ বৃষ্টিতে পর্ব-০৮

0
347

#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ঐশী সবার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে মৌ এর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তোর ওই বজ্জাত কাকা কি আর এসেছে।..?
মৌ তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,’ সে তো বেঁচে গেছে। ‘
ঐশীঃ এভাবে উনাকে ছেড়ে দিলে হবে না। তোর নিজের ও সম্পত্তির অর্ধেক অধিকার আছে। ওই বেটাকে তো এমন হাল করবো মা মা বলে এসে তোর পায়ে পরবে।
মৌঃ আমি একটা বাসা নিতে চাচ্ছি।
দীপ্তিঃ কেনো আমাদের বাসায় সমস্যা কি..?
মৌঃ কোনো সমস্যা না দীপ্তি। কিন্তু আমি অন্য কারো উপর আর বোঝা হয়ে থাকতে চাই না৷
দীপ্তিঃ মৌ তুই আমাদের বোনের মতো। তাই না দীপ..? আর আম্মু আব্বু ও তোকে খুব পছন্দ করে। প্লিজ কোথাও যাওয়ার কথা ভুলেও মাথায় আনবি না।

বোন বলার সাথে সাথে দীপের মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে। এই মেয়েকে সে জীবনেও বোন ভাবতে পারবে না৷ ভালোবাসার মানুষ বোন হয় কিভাবে!

মৌঃ ঠিক আছে তাহলে আমি মাস শেষে টাকা দিয়ে থাকবো।

দীপঃ বেশি পকপক না করে চুপ থাক। বাসায় গিয়ে আম্মুর সামনে এই কথা বলিস। আম্মুর হাতের জাদু দেখবি।

সবার ঝগড়া থামলো শান্তর ফোনের রিংটোনে।

অথৈ উঁকি দিয়ে দেখে ১৪নাম্বার গার্লফ্রেন্ড লেখা।

বিরক্ত হয়ে অথৈ বললো,’ তোর কি একটু বিরক্ত লাগে না। এত এত মেয়ের লগে কথা বলছ কেমনে..?
শান্তঃ তুই যদি বুঝতি আজ এমন এতিমের মতো একা থাকা লাগে না। বলে ফোন কানে দিয়ে নিজের পথে চলে গেলো।
অথৈ হা করে তাকিয়ে আছে। সে বললো কি আর এই বেয়াদব ছেলে উত্তর দিলো কি।

ওরা সবাই মিলে ক্লাসে চলে গেলো। প্রথম, দ্বিতীয় ক্লাস ভালোই গেলো। তৃতীয় ক্লাসে যখন শুভ আসলো অথৈ আবার বলে উঠলো, ‘ আমার ক্রাশটা কে আজকে চকলেট বয় লাগছে। ‘

পিছন থেকে একটা মেয়ে ফিসফিস করে বললো, ‘ ওফ্ফ খুব কিউট লাগছে আজকে। কে বলবে এটা স্যার মনতো চায় টুপ করে খেয়ে ফেলি।’

আরেক জন বললো,’ ডাইনী একদম চোখ দিবি না এটা আমার জান, আমি এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি উনার জন্য। আব্বুকে বলে খুব তারাতারি বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো। আমার মতো এত কিউট, সুন্দর সব দিক দিয়ে পারফেক্ট মেয়েকে তো কখনো স্যার ফিরিয়ে দিবে না।

আরেক জন বললো, ‘ চুপ থাক স্যার আসছে। আর নিসন্দেহে স্যার তোকে বিয়ে করতে রাজি হবে। ভার্সিটির সব থেকে সুন্দরী মেয়ে বলে কথা।

এইসব কথা শুনে ঐশীর মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এতক্ষন ফুরফুরে থাকা মেয়েটা এখন একদম চুপ হয়ে গেছে। মনটা নিমিষেই বিষিয়ে গেছে। সত্যি কি শুভ স্যার ওকে ডিভোর্স দিয়ে রুপার মতো সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করে নিবে।

অথৈ রেগে বলে উঠলো,’ স্যার যদি ওর মতো বেয়াদব, অহংকারী মেয়েকে বিয়ে করে তাহলে আমি গোলাপি বিষ খেয়ে সুইসাইড করমু কখনো স্যারের বিয়েতে যামু না।

দীপ্তিঃ তুই না স্যারের বাচ্চার মা হবি। তাহলে বিয়েতে যাবি না মানে..? তুই স্যারকে বিয়ে না করে বাচ্চার মা!!! ছি!ছি!ছি অথৈ।

অথৈঃ দীপ্তির বাচ্চা এটা কখন বললাম আমি। আগে বউ তারপর বাচ্চার মা।

দীপ্তিঃ তাহলে কি আরেক বিয়ে করাবি। মানে সতীনের সংসার!!

মৌঃ আল্লাহ রস্তে একটু চুপ করে সামনে তাকা। স্যার এই নিয়ে অনেক বার এইদিকে তাকিয়েছে। আরেক বার ঠিক ক্লাস থেকে বের করে দিবে।

সবাই এবার চুপ করে সামনে তাকালো। অথৈ তো হা করে শুভর দিকে তাকিয়ে আছে।

ঐশী মন খারাপ করে বইয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে

শুভ পড়া বুঝানোর ফাঁকে ফাঁকে বার বার ঐশীর দিকে তাকাচ্ছে। আশার সময় তো ভালো ছিলো এখন আবার কি হলো..??

ক্লাস শেষে সবগুলো বসে আছে ক্যান্টিনে।

শান্তঃ ঐশী সত্যি করে বল। শুভ স্যারের সাথে তোর কি চলছে..??

দীপঃ হুম আমিও ভেবে ছিলাম জিজ্ঞেস করবো। স্যার বার বার আজকে তোর দিকে তাকিয়ে ছিলো।

অথৈঃ কিইই! ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো। মন খারাপ করে বললো আমি তো ভেবে ছিলাম..

শান্তঃ কি ভাবছোস তোর দিকে তাকিয়ে আছিলো।

অথৈঃ তোরে বলছি আমি। বেশি কথা কছ ক্যা।

ঐশী ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু বলছে না ওর মন একদম ভালো নেই।

মৌ বলে উঠলো, ‘ আজকে ঐশী আমাদের ট্রিট দিবে।’

দীপ্তিঃ কিসের..??

মৌঃ বিয়ে করে নিলো কিন্তু আমাদের ট্রিট কই..?

শান্তঃ একদম মনের কথা বলছোস। ঐশী জিজুর পক্ষ থেকে আমাদের ট্রিট দিবি আজকে। আর জিজুর পিক দেখা।

ঐশী দুঃখী দুঃখী মুখ করে বললো,’ কি বলবো দুস্ত আমার জামাই একটা কিপটা। আমাকে গাড়ি ভাড়া টাও দেয় না। দেখ আমার পার্স একদম খালি। আমি যখন একটা জব নিবো তখন তোদের ট্রিট দিবো।

ওর কথা শুনে সবাই ধরে নিয়েছে ও সত্যি বলছে।

অথৈঃ তোরা হানিমুনে যাবি না..?
ঐশীঃ একটা নিরামিষ বর জুটছে কপালে। আবার হানিমুনে। সে তো ভালো করে লজ্জায় হাতটাই ধরে না।
অথৈঃ তোর জামাইর পিক দেখা। না হলে আমাদের সাথে দেখা করা।
ঐশীঃ কোনো ছবি তো নাই । আর দেখা করাবো কিভাবে সে তো ছুটি পায় না বাসায় আসতে।
শান্তঃ বাসায় আসে না..?
ঐশীঃ না..
মৌঃ কিইইই বাসর রাতে কি দিয়ে ছিলো..?
ঐশীঃ বাসর রাতে তো জামাই আসেনি।
দীপঃ মানে…?
ঐশীঃ জামাই রুমে আসেনি।
শান্তঃ তোর জামাইর কি কোনো সমস্যা আছে না-কি..? এতো সুন্দর বউ থাকতে নিরামিষ থাকে কেমনে। সমস্যা থাকলে বল আমার জানাশোনা খুব ভালো একটা ডাক্তার আছে। কয়েক দিনেই ঠিক হয়ে যাবে।

পিছনে খুকখুক করে কেশে উঠলো শুভ।

ওরা পিছনে ফিরে শুভকে দেখে, এক একটা আরেকটার দিকে তাকিয়ে আছে। স্যার কি সব শুনে ফেলেছে??

ঐশী ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। বলার সময় বলে দিলো এখন তো ভয় হচ্ছে শুভ কি ওদের কতা সব শুনে ফেলেছে। আবার নিজেই ভাবলো শুনলেই কি ও তো আর মিথ্যা কিছু বলেনি।

শুভ কাউকে কিছু না বলে ঐশীর সামনে গিয়ে বললো,’ জলদি গাড়িতে গিয়ে বসো।’ বলেই চলে গেলো।

সব ক’টা গোল গোল চোখ করে ঐশীর দিকে তাকিয়ে আছে।

ওরা কিছু বলার আগেই ঐশী নিজের বেগ নিয়ে দিলো দৌড়।

ওরা ও ওর পিছু পিছু গেলো।

শান্ত বলে উঠলো, ‘ এই মেয়ে নিশ্চয়ই আমাদের কাছে কিছু লুকাচ্ছে।’
দীপ্তিঃ একদম ঠিক বলেছিস। আজ তো ওকে বলতেই হবে। শুভ স্যারের সাথে ওর সম্পর্ক কি..??

ঐশী ওদের কাছ থেকে বাঁচার জন্য সিঁড়ি দিয়ে তারাহুরো করে নামতে গিয়ে পড়ে যেতে নিয়ে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।কিন্তু অনেক সময় হয়ে যাওয়ার পরও যখন ও শরীরে ব্যাথা অনুভব করতে পারে না তখন চোখ খুলে দেখে সামনে আদিত্য।
আদিত্য ওর হাত ধরে এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

পিছনে অথৈ রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদিত্যের দিকে। এই ছেলে ওই দিন শুধু শুধু ওর গালে পর পর দুইটা থাপ্পড় মেরেছে।

রেগে অথৈ এসে আদিত্য কে বলে এই বেয়াদব, অসভ্য খাইস্টা কোনখানের খাইস্টা ছেলে। ওই দিন শুধু শুরু আমার গালে থাপ্পড় মারছোস আজ যদি আমি তোর গালে না মারি আমার নাম ও অথৈ না। বলেই আদিত্যের দিকে এগিয়ে যেতে আদিত্য অথৈকে দেখে ঘাবড়ে যায়। এই মেয়ে এখানে কি করছে। অথৈ গিয়ে আদিত্যর গালে থাপ্পড় মারতে গেলে আদিত্য ঐশীর হাত ছেড়ে দেয়। আর ঐশী এক চিৎকার দিয়ে বলে “আমি শেষ। আমার আর চার বাচ্চার মা হওয়া হলো না”
কিন্তু ভাগ্য ভালো সে এভারো বেঁচে যায়।

ঐশীর মনে হচ্ছে সে হাওয়ায় উড়ছে মুখটা উপরে করে শুভকে দেখে ভয়ে ভয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে অথৈ আর আদিত্য ঝগড়া বন্ধ করে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। বাকি গুলোর ও একি অবস্থা। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো আর কেউ দেখেছে কি-না। না আশেপাশে কেউ নেই।
ঐশীঃ স্যার আমাকে নামিয়ে দেন।
শুভ ঐশীকে কিছু না বলে আদিত্যকে বললো,’ যদি ভালো করে শেষ অবদ্ধি ধরে না রাখতে পারো এমন ক্ষনস্থায়ি হাত ধরতে চাওয়া কি দরকার।’

সবাই ফ্যাল ফ্যাল করে শুভর দিকে তাকিয়ে আছে। আদিত্য মাথা নিচু করে রেখেছে। সে শুভকে খুব ভয় পায়।

শুভ ঐশীকে কোল থেকে না নামিয়ে। কোলে নিয়েই হাঁটা শুরু করলো গাড়ির উদ্দেশ্যে।

অথৈঃ আহ্হ আমার ক্রাশটা। ইসস আমাকেও যদি কোনো দিন এভাবে কোলে নিতো।

আদিত্য শুভ আর ঐশী থেকে চোখ সরিয়ে অথৈর দিকে তাকালো।
আদিত্য অথৈকে বেয়াদব মেয়ে বলে চলে গেলো।

অথৈ তো রেগে আদিত্য কে বকা দেওয়া শুরু করলো,’ তোর থেকে ভালো আছি অসভ্য ছেলে৷ ওই দিন আমাকে আর আজকে আমার ফ্রেন্ড কে মারার প্লেন করে ছিলো। রা*ক্ষ*স ছেলে।তোর গালে যদি আমি সুপার গ্লু না লাগিয়েছি আমার নাম ও অথৈ না।

মৌঃ এটা কি হলো? স্যার ওকে প্রথম গাড়ি করে নিয়ে আসছে আবার নিয়ে যাচ্ছে ও। আবার এখন তো একদম কোলে। যেই স্যার আমাদের একদম দেখতে পারে না।

দীপ্তিঃ এমন তো নয় স্যার ঐশীর প্রেমে পড়েছে..?

শান্ত দীপ্তির মাতায় গাট্টা মেরে বললো,’ তোর মতো গাধার মাথায় আর কি আসবো মফিজের বউ।’

দীপ্তিঃ শান্তর বাচ্চা একদম বাজে নামে ডাকবি না।

শান্তঃ বিয়াইত্তা মাইয়ার প্রেমে পড়ে কেমনে গাধা..? হয়তো বার বার পরে যাচ্ছিলো তাই কোলে নিছে।

ঐশীঃ আমাকে নামান বলছি।
শুভঃ চুপচাপ বসে থাকো। না হলে সত্যি ফেলে দিবো। তারপর আর চার বাচ্চার মা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না।

ঐশীঃ আপনি একটা বাজে লোক। মানুষ এখন কি ভাববে..?
শুভঃ যখন আদিত্য ধরে তখন মনে হয় না মানুষ কি ভাববে। আদিত্য থেকে দূরে থাকবে। বলে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও বসে গেলো৷ সিট বেল্ট লাগিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

ঐশী মনে মনে ভাবছে কাল ভার্সিটিতে আসলে কি হবে..? ওদের কি বলবে, এই লোক তো নিজেই নিষেধ করলো কাউকে বিয়ের কথা না বলতে। এখন ওদের কি বলে বুঝাবে!!

শুভ হঠাৎ বলে উঠলো,’ তুমি বিবাহিত মেয়ে হয়ে এই গুলো কি পড়ো। সব সময় শাড়ি পড়ে থাকবে। যেনো দেখতে বিবাহিত মনে হয়।
ঐশীঃ এখন কি বিবাহিত মনে হচ্ছে না..?
শুভ ঐশীর দিকে তাকালো। ঐশী ও তাকিয়ে আছে উত্তরের আশায়। শুভ কিছু না বলে চোখ সরিয়ে নিলো। নিঃশব্দে নীরবে মুচকি হাসলো। যেটা ঐশীর নজরে পরলো না।

চলবে….

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।