টিপ টিপ বৃষ্টিতে পর্ব-০৯

0
363

#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_৯
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে শাশুড়ীর রুমে গিয়ে দেখলো উনার শরীর ভালো না। রান্না করতে পারেনি। বাসার কাজের মেয়েটাও আজকে আসতে পারেনি। ঐশীর শাশুড়ী রান্না করার জন্য উঠতে নিলে ঐশী শুইয়ে বলে আপনি রেস্ট করুন আমি রান্না করবো।

~ তোমার নানু শাশুড়ী আর সোনিয়া চলে গেছে ৩-৪দিন পর আসবে।

এই কথা শুনে মনে মনে ঐশী খুব খুশি হয়। এই কুটনি মহিলা আর সোনিয়া কে ওর সয্য হয় না।
খুশিতে কোমর ঢুলাতে ঢুলাতে নিজের রুমে গেলো মোবাইল চার্জ দিয়ে আবার ঢুলাতে ঢুলাতে বেরিয়ে আসলো।
পুরোটা কাহিনি শুভ দু’তলা থেকে দেখলো।

শুভর রুম আর ওর আম্মুর রুম পাশাপাশি কিন্তু ঐশীর রুম নিচে। শুভর রুম থেকে ঐশীর রুম দেখা যায়।

ঐশী ওড়না কোমরে পেঁচিয়ে ইউটিউব থেকে রান্না দেখে রান্না শুরু করলো।

পেয়াজ কাটতে গিয়ে কান্না করতে করতে চোখ লাল, মরিচ কাটতে গিয়ে হাত জ্বালা শুরু। লবনের জায়গায় চিনি, মরিচ গুঁড়োর জায়গায় হলুদ গুঁড়ো। সব উল্টো পাল্টো রান্না।
এদিকে গরমে ওর অবস্থা খুব খারাপ।
কাপড়ের দিকে তাকিয়ে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো। হলুদ তরকারিতে দেওয়ার সময় ওর সাদা কাপড়েও অনেকটা পড়ে গিয়ে ছিলো। হঠাৎ চোখে কি যেনো পরলো হাত চোখে দেওয়ার সাথে সাথে চোখ জ্বালাপুড়া শুরু করলো। ওর মনে পরলো ও তো এই হাত দিয়ে মরিচ কেটে ছিলো। চোখ প্রচুর জ্বালা করছে, চোখ দিয়ে পানিও পরছে। ঐশী এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না ..

শুভ পানি খাওয়ার জন্য নিচে এসে ছিলো। হঠাৎ রান্না ঘরে কিছু পরে যাওয়ার আওয়াজ শুনে আসতে আসতে করে এগিয়ে গেলো দরজায় গিয়ে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখলো ঐশী এক হাতে চোখ কচলাচ্ছে অন্য হাতে নিচ থেকে কিসের যেনো বৈয়ম তুলছে।
শুভ ভালো করে ঐশীর নিচ থেকে উপর পর্যন্ত দেখলো। তারপর হুঁ হুঁ করে হেঁসে উঠলো।

ঐশী গাল ফুলিয়ে শুভর দিকে তাকালো।
শুভ রান্না ঘরের অবস্থা দেখে হা করে পুরো রান্না ঘরে চোখ বুলালো।
শুভ অবাক হয়ে বললো,’ রান্না ঘরের এই অবস্থা কেনো..?? তুমি এখানে কি করছো..??’
ঐশী রেগে বললো,’ ডান্স করছি দেখছেন না..’
শুভঃ আমি তো ভেবে ছিলাম হলি খেলছো।’
ঐশীঃ আপনি এখান থেকে যান তো। আমাকে বিরক্ত না করে নিজের কাজে যান।
শুভঃ তুমি এখানে কি কাজ করছো..?
ঐশী অবাক হয়ে বললো,’ রান্না ঘরে মানুষ কি করে। বিশেষ করে একটা বিবাহিত মেয়ে রান্না ঘরে কি করে আপনি এটাও জানেন না!!
শুভঃ একটা মেয়ে,বিবাহিত মেয়ে রান্না ঘরে কি করে জানি৷ কিন্তু তুমি কি রান্না করতে পারো..?? কখনো রান্না ঘরে গিয়েছো??
ঐশী ভাব নিয়ে বলে উঠলো,’ আপনার কি মনে হয় এখন আর আগের যুগ আছে। এখন মেয়েরা আমার মতো ডিজিটাল বুঝেছেন।’
শুভ চোখ ছোটো ছোটো করে বললো,’কিছুই বুঝিনি। ‘

ঐশী চোখ মুখ কুঁচকে বললো,’ আপনাকে ভার্সিটির লেকচার কে বানিয়েছে বলেন তো।’
শুভঃ তুমি আমাকে অপমান করছো..??
ঐশী একটা বোকা বোকা হাসি দিয়ে বললো, ‘ নাহ্ আমি তো আপনার প্রশংসা করছি।’
শুভঃ কাপড়ের এই অবস্থা কেনো..?
ঐশীঃ মরিচ পরে গেছে।
শুভঃ কিইইই!! কিন্তু এটা তো দেখতে হলুদের মতো লাগছে। শেফালী খালা কোথায়..?
ঐশীঃ আন্টি তো আজকে আসেনি আর আম্মুর শরীর ভালো না।
শুভঃ তাই তুমি রান্না করতে চলে এসেছো..??
ঐশী খুশি হয়ে বললো,’ হুম, আজ থেকে আমি রান্না করবো।’
শুভঃ খুব ভালো। কিন্তু মনে তো হয় না এর আগে রান্না করেছো…
ঐশীঃ এর আগে কি আমার আর কোনো বিয়ে হয়েছে যে রান্না করবো।
শুভঃ কেনো বিয়ের আগে কি মেয়েরা রান্না করে না..?
ঐশীঃ হয়তো করে তবে আমি করিনি।
শুভঃ এখন কি রান্না করলে..?
ঐশীঃ নাম তো জানিনা।
শুভঃ কিইইই!! নিজে রান্না করেছো নিজেই নাম জানোনা..??
ঐশী কিছু একটা মনে হতেই তারাতারি তরকারির ঢাকনা তুললো।
ঐশীঃ গেলো তো পুড়ে…
শুভঃ পুড়ে গেছে..??
ঐশীঃ একটু।
শুভঃ পানি দাও।
ঐশী একটা বড় মগ দিয়ে পর পর পাঁচ মগ পানি দিয়ে দিলো।
শুভ চোখ বড় বড় করে বললো,’ এটা কি ছিলো..??
ঐশীঃ তরকারি..
শুভ ঐশীকে সরিয়ে নিজে এগিয়ে গেলো তারকারি দেখে ওর বুঝা হয়ে গেছে এটা কোনো মানুষের খাবার না। তরকারি থেকে পানি বেশি আর রং টাও কেমন।
শুভঃ লবন দেখে নাও।
ঐশীঃ আপনি দেখে বলুন না প্লিজ।
শুভ ঐশীর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমার একটা খুব জরুরি কাজ মনে পরে গেছে তুমি একটা কাজ করো লবন দেখতে হবে না। দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব ভালো হয়েছে। ‘
ঐশী খুশি হয়ে বললো,’সত্যি ‘
শুভঃ হুম। এখন গিয়ে গোসল করে নাও। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে কারো সাথে যুদ্ধ করে এসেছো খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
ঐশী মন খারাপ করে বললো,’ ঠিক বলেছেন রান্না করা কোনো যুদ্ধ থেকে কম কিসে। কিন্তু রান্না ঘরটা কিভাবে ঠিক করবো..?
শুভর ঐশীকে দেখে খুব মায়া হলো তাই বললো,’ তুমি চলে যাও আমি ঠিক করছি।’
ঐশী খুশি হয়ে বললো,’ ধন্যবাদ স্যার…’
শুভঃ যাও…

ঐশী রুমে গিয়ে খুশি খুশি একঘন্টা লাগিয়ে গোসল করে বের হয়ে একটা ঘুম দিলো। ওর আর শুভর কথা মনে নেই। ওতো শুভকে রান্না ঘর পরিস্কার করতে দিয়ে এসে ছিলো।

ঐশীর ঘুম ভাঙে পূর্ণার ডাকে।
ঐশী চোখ পিটপিট করে তাকালো পূর্ণার দিকে। পূর্ণাকে দেখে আবার চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে গেলো।
পূর্ণা ঐশীকে তুলতে ওর মুখে পানি ছিটা দিলো।
ঐশী বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো।
ঐশীঃ কি হয়েছে পূর্ণা..?
পূর্ণাঃ সরি ভাবিপু। আসলে অনেক সময় হলো তুমি ঘুমিয়েছো। তাই ডাকলাম।
ঐশী কিছু না বলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। এসে দেখে পূর্ণা বসে আছে।
ঐশী আবার বলে উঠলো,’ কিছু বলবি পূর্ণা…
পূর্ণাঃ আপু চলো না ফুচকা,আইসক্রিম খেয়ে আসি। বাসায় ভালো লাগছে না।
ঐশীঃ কয়টা বাজে..?
পূর্ণাঃ সন্ধ্যা ৭টা।
ঐশীঃ কি! আমি এত সময় কিভাবে ঘুমালাম।
পূর্ণাঃ আমি তোমাকে ডাকতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু ভাইয়া নিষেধ করায় আর ডাকিনি।
ঐশীঃ শুভ ভাইয়া..?
পূর্ণাঃ হুম…..

ঐশী মনে মনে ভাবছে এই বেটা দিন দিন কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে। সবার সামনে ভালো সাজার কতো কিছু করছে। এই দিকে বউটাকে নিজের ঘরে একটু জায়গা দিচ্ছে না, নিরামিষ বর আমার কপালে কেমনে পরলো আল্লাহ।

পূর্ণা মন খারাপ করে বললো,’ যাবে না …?
ঐশীঃ আগে রেডি হয়ে নেই।
পূর্ণা খুশিতে জড়িয়ে ধরলো ঐশীকে।

ঐশী আর পূর্ণা দাঁড়িয়ে আছে ফুচকার দোকানের সামনে।

ঐশীঃ মামা দুই প্লেট ফুচকা দেন।

দুই প্লেট দুই প্লেট করতে করতে একজনের চার প্লেট করে ফুচকা খাওয়া শেষ।

ঐশী আবার বললো,’ মামা এবার একদম জ্বাল করে দুই প্লেট ফুচকা দেন।

পূর্ণা বলে উঠলো,’ আপু তুমি তো জ্বাল খেতে পারো না। শুধু এক প্লেট আমার জন্য নাও আর তোমার জন্য জ্বাল ছাড়া।

ঐশীঃ পূর্ণা ফুচকা খেলে জ্বাল না খেলে একদম মন ভরে না বলে এক প্লেট পূর্ণার হাতে দিয়ে নিজেও এক প্লেট নিলো।

পূর্না একটা ফুচকা খেয়ে আবারও ঐশীকে নিষেধ করলো কিন্তু ঐশী ওর কথা না শুনে একের পর একটা ফুচকা খেতে শুরু করলো।

পূর্ণা হা করে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছে। আজ বাড়িতে গেলে ওর ভাই ওর অবস্থা কি করবে সেটাই ভাবছে।

ঐশী পর পর ছয়টা ফুচকা খেয়ে থামলো। ওর মনে হচ্ছে মাথা বনবন করছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। এবার সে পানি পানি বলে কান্না শুরু করলো।
ঐশীর অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেলো পূর্ণা। বার বার নিষেধ করার পর ও ঐশী খেয়েছে।
পূর্না ফুচকাওয়ালার কাছে পানি চাইলো। উনি বললো পানি নেই। পাশে দোকান আছে নিয়ে আশার জন্য।
পূর্ণা এক দৌড়ে দোকানের দিকে গেলো।

ঐশী চোখ মুখ খিঁচে কান্না করছে। ওর পাশে কেউ বসে হেঁসে পানির বোতল এগিয়ে দিলো।

ঐশী নিজের পাশে আদিত্য কে দেখে কিছু বললো না। তারাতারি পানি খেয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিলো।

আদিত্যঃ ঠিক আছেন আপনি…??
ঐশীঃ আমাকে এমন অবস্থায় দেখে আপনার কি মনে হচ্ছে..?
আদিত্যঃ মনে হচ্ছে আপনি ঠিক নেই।
ঐশীঃ যখন বুঝতেই পারছেন আমি ঠিক নেই তাহলে জিজ্ঞেস করার কারন টা বুঝলাম না।
ঐশীর কথা শুনে আদিত্য চুপ হয়ে গেলো।
ঐশী আবার বলে উঠলো, ‘ আপনি এখানে..?
আদিত্যঃ খালামুনিকে দেখতে আসলাম। রাস্তায় আপনাকে দেখে এগিয়ে আসলাম।
ঐশীঃ ওহ্ ভালো।
তখনি পূর্ণা পানির বোতল নিয়ে ঐশীর কাছে আসলো। এসে দেখে আদিত্য কে।
পূর্ণাঃ ভাইয়া তুমি..?
আদিত্য আরো অনেক কথা বলে তারপর সবাই নিজেদের বাড়িতে চলে আসে।

আদিত্য আর ঐশীকে একসাথে বাড়িতে আসতে দেখে শুভর মেজাজ যায় খারাপ হয়ে। এই মেয়েকে নিষেধ করার পরও কেনো আদিত্যের সাথে… .

আদিত্য কে দেখে ওর খালামুনি খুব খুশি হয়।
আদিত্য গিয়ে শুভর সাথেও অনেক কথা বলে আসে।

সবাই বসে আছে খাবার টেবিলে। আজ রান্না ঐশী করেছে শুনে আদিত্য তো অনেক খুশি সবার আগে আগে এসে টেবিলে বসে পড়ে।

ঐশী এক এক করে সব কিছু ওদের সামনে এনে দেয়।

পূর্ণা খুব খুশি এই প্রথম ঐশীর হাতের রান্না করা খাবার খাবে। সব খাবারের পিক তুলছে আর ঐশীর আম্মুর মোবাইলে, বিথীর মোবাইলে পাঠিয়ে দিয়েছে। আদিত্য ও পিক তুলে নিয়েছে প্রিয় মানুষটির হাতের প্রথম খাবার বলে কথা।

শুভ একটা চেয়ারে বসে বসে সবার কাহিনী দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।

চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।