ডিভোর্স
লেখকঃ আবু সাঈদ সরকার
পর্বঃ ২১
স্নেহাঃ হঠাৎ সে সময় একটা আওয়াজে শরীরটা ভয়ে কাপতে শুরু করলো….
।
এত রাতে কে দরজার কলিং বেলটা বাজাচ্ছে নিশ্চয়ই ওই শয়তান জানোয়ার লোক গুলোই….
।
যাই হয়ে যাক আমি কোনো মতেই দরজা খুলবো না প্রায় ৫ মিনিট ধরে কলিং বেলটা বাজিয়ে যাচ্ছে…
।
তবুও নিচে কোনো ভাবেই নামবো না…
।
যখন চিৎকার করতে শুরু করলো তখন স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারছিলাম লোকটা আমাদের বাসার গাড়ির ড্রাইভার…
।
তবুও একশো বার চিন্তা করে দেখলাম যাবো কী না..
।
শেষে ভয়ে ভয়ে নিচে এসে দরজাটা খুলতেই…
।
।
ড্রাইভারঃ ম্যাডাম মাফ করবেন এত রাতে আপনাদের ঘুমটা নষ্ট করলাম স্যার এর ফোনে অনেক বার কল করলাম কিন্তু ফোন টা বন্ধ আপনারো ফোনে দুবার দিচ্ছিলাম কিন্তু আপনারো ফোন বন্ধ তাই বাধ্য হয়ে এত রাতে আসতে হলো….
।
।
স্নেহাঃ ও আচ্ছা বলেন এত রাতে কীসের প্রয়োজন হলো…
।
ড্রাইভারঃ ম্যাডাম আমার বউ এর ডেলিভারি কালকে তাই কয়েকটা দিন ছুটি নিবো আমাকে আজকেই গ্রামে যেতে হবে আপনি তো জানেন এ সময় ওর পাশে থাকাটা আমার কতটা জরুরি…
।
।
স্নেহাঃ আচ্ছা ১ মাস ছুটি দিলাম খুশি তো…
।
ড্রাইভারঃ জ্বী ম্যাডাম….
।
স্নেহাঃ দরজাটা বন্ধ করতে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনি…
।
ড্রাইভারঃ ম্যাডাম আরেকটা কথা..
।
স্নেহাঃ বলুন…
।
ড্রাইভারঃ ম্যাডাম না মানে ইয়ে মানে এ মাসের জন্য যদি কিছু টাকা দিতেন খুব উপকার হতো পকেটে এ টাকাও নেই ?
।
।
স্নেহাঃ আমার কাছেই তো একটা টাকাও নেই তাহলে ড্রাইভার কে দিবো কী ওর নাকি আবার বউ এর কাল ডেলিভারি ধুর ভালো লাগে না এসব ( মনে মনে )
।
।
স্নেহাঃ আচ্ছা সব টাকা তো ব্যাংক এ এতো রাতে টাকা কোথায় পাবো আপনি এক কাজ করেন আমার কানের দুল গুলো রাখেন ( কান থেকে সোনার দুল গুলো খুলে দিয়ে )
।
।
ড্রাইভারঃ ম্যাডাম আপনি এটা কী করছেন আমি নিতে পারবো না…
।
স্নেহাঃ কেনো…
।
ড্রাইভারঃ স্যার রাগ করবে জানলে…
।
স্নেহাঃ আমি দিচ্ছি তো রাগ করবে না নিয়ে যান…
।
।
ড্রাইভারঃ নিতে না চাইলেও নিতে হলো…
।
আল্লাহ আপনার ভালো করবেন বলেই চলে আসলাম…
।
।
স্নেহাঃ যা ছিলো সব শেষ এখন কাউকে দেওয়ার মতো আর কিছুই নেই…
।
।
তার পর দরজাটা ভালো ভাবে বন্ধ করে দিলাম…
।
।
।
।
অপর দিকে…
।
জঙ্গলটা প্রতিটা কোনায় কোনায় খুজেও কোথায় পেলাম না ছেলেটাকে…
।
কোথায় উদ্ধাও হয়ে গেলো হাঠতে হাঠতে হঠাৎ একটা ঝোপের আড়ালে মানুষের রক্ত লেগে আছে ঘাস গুলোতে আর..
।
দেখে তো মনে হচ্ছে কেউ বা কোনো জন্তু জানোয়ার টানতে টানতে নিয়ে গেছে সেই রক্তের দাগ এর পিছনে যেতে যেতে দেখলাম দাগ টা রাস্তা থেকেই শেষ হয়ে গেছে তার মানে এই খানে নিশ্চয়ই কেউ এসেছিলো কিন্তু কে….
।
আর এটা কীসের রক্তের চিহ্ন মানুষের নাকি কোনো জন্তু জানোয়ার এর…
।
কথাটা বস কে জানাতেই হবে…..
।
।
।
স্নেহাঃ দরজাটা লাগিয়ে উপরে এসে..
।
তোমার কী খুব কষ্ট হচ্ছে ?
।
।
সাঈদঃ কী বলবো কিছু বুঝতে পারছি না গলা থেকে আওয়াজ এ বেরোচ্ছে না…
।
স্নেহাঃ খুব খিদে লাগছে না আমি এখনি নিচ থেকে সুপ বানিয়ে নিয়ে আসতেছি….
।
।
নিচে এসে রান্না ঘরে ওনার জন্য সুপ রান্না করলাম…
।
তার পর সেটা নিয়ে উপরে চলে আসলাম…
।
।
ওনাকে উঠিয়ে বিছানায় হেলানি দিয়ে বসলাম…
।
।
এর পর চামুচ দিয়ে অধেক টা সুপ খাওয়ানোর পর আর অধেক টা কোনো ভাবেই খাওয়াতে পারলাম না…
।
।
।
সাঈদঃ স্নেহাও তো মনে হয় এ দুই দিন কিছু খায় নি কেমন শুকিয়ে গেছে নিজে না খেয়ে এখন আমাকে জোর করে খাওয়াচ্ছে…
।
।
স্নেহাঃ এত টুকু তো আছেই খেয়ে নাও না এটা…
।
।
এত করে খাওয়ানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু খাওয়াতে পারলাম আর কই সুপটা কোনো নষ্ট হবে অযথায় তাই বাকি সুপ টুকু আমিই খেয়ে নিলাম….
।
।
খাওয়া শেষে রাত প্রায় শেষ হয়ে এসেছে একটু পরে বাস চলবে আমাদের বাস করেই গ্রামে যেতে হবে…
।
।
কাপড় গুলো ঠিক মতো গুছিয়ে নিয়ে ওনার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম…
।
।
স্নেহাঃ তোমাকে নিয়ে আমি অনেক দুরে চলে যাবো যত দুর গেলে এই শয়তান লোক গুলো আমাদের খুঁজে পাবে না….
।
( প্রথম ভাবছিলাম বাবার বাসায় যাবো কিন্তু ওনি আমার উপর এখনো রেগে আছেন তাই কখনোই আমাদের মেনে নিবে না আমার খালার বাসা এখান থেকে অনেক দুরে তিনি নিশ্চয়ই না বলবেন না আমরা সেখানেই যাবো…)
।
।
রাত পেরিয়ে দিনের আলো ফুটেছে ওনাকে নিয়ে তো বাসে যাওয়া যাবে না ওনার শরীর এর যা অবস্থা কিন্তু তাহলে যাবো কীভাবে….
।
কিছুই মাথায় আসতেছে না….
।
ঠিক তখনি মনে আসলো আমার নামে ওনি যে রেস্টুরেন্ট টা কিনেছিলেন সেটার টাকা গুলো তো ম্যানেজারে কাছেই আছে আমি গেলেই দিয়ে দিবে দরজাটা বাইরে থেকে ভালো ভাবে বন্ধ করে দিয়ে হেটেই রেস্টুরেন্ট চলে আসলাম…
।
ম্যানেজারঃ ম্যাম আপনি এত সকাল বেলা…
।
স্নেহাঃ অনেক দিন হলো আসি নি তাই দেখতে আসলাম…
।
ম্যানেজাঃ ম্যাম বসেন না রহিম ম্যাম কে জুস দেয়
।
স্নেহাঃ থাক ও সবের কোনো প্রয়োজন নেই…
।
আমার কিছু টাকার প্রয়োজন…
।
ম্যানেজারঃ ম্যাম কত নিবেন সেটা যদি ক্লিয়ার করে বলতেন…
।
।
স্নেহাঃ কত টাকা একাউন্ট এ জামা রয়েছে…
।
ম্যানেজারঃ একাউন্ট চেক করার পর ম্যাম ১৩ লাখ এর মতো….
।
স্নেহাঃ আবাদত ৫ লাখ দেন বাকিটা একাউন্ট এ জামা রাখেন…
।
।
টাকাটা নিয়ে চলে আসলাম আসার সময় একটা মাইক্রো ভাড়া নিলাম….
।
এত সকাল বেলা ফোনের শোরুম খুলে তা আগে জানতাম না ফোনের শোরুমে গিয়ে একটা নতুন ফোন নিয়ে নিলাম…
।
।
তার পর বাসায় ফিরে এসে ওনাকে নিয়ে খালার বাসায় যাওয়ার জন্য রাওনা হয়ে গেলাম….
।
।
কয়েক ঘন্টা পর এই ধরেন ৫/৬ ঘন্টা পর খালার বাসায় চলে আসলাম…
।
খালাঃ দুপুর বেলা আবার কে আসলো…
।
ঘর থেকে বেড়োতেই…
।
আরে স্নেহা মা তুই…
।
স্নেহাঃ হ্যা খালা কেমন আছো…
।
স্নেহার খালাঃ ভালো রে মা হঠাৎ কী মনে করে আর তোর বাবার মুখে যা শুনছিলাম তা কী সত্যি…
।
স্নেহাঃ হুম তবে আজ বিপদে পড়েই এখানে আসছি তুমি নিশ্চয়ই ফিরিয়ে দিবা না…
।
।
স্নেহার খালাঃ কী বিপদ রে মা…
।
।
স্নেহাঃ অনেক বড় ঘটনা শট কাটে বলি তার পর খালাকে সব কিছু বললাম…
।
খালাঃ ভালো করেছিস এখানে এসে তোর জামাই রে নিয়ে ঘরে আয় আমি বিছানাটা ঠিক করে দেই…
।
।
স্নেহাঃ গাড়ির ড্রাইভার কে নিয়ে ওনাকে ধরে ঘরে এনে শুয়েই দেওয়ার পর…
।
কত টাকা ভাড়া হলো…
।
ড্রাইভারঃ ম্যাম ৫ হাজার…
।
।
স্নেহাঃ এই নেন….
।
।
স্নেহার খালাঃ এই ঘরে থাকতে তোদের কষ্ট হবে না শুনেছি তোর জামাই অনেক বড় লোক…
।
স্নেহাঃ না না কিছু হবে না আচ্ছা খালা এখানে ভালো ডাক্তার আছে…
।
খালাঃ আছে তো…
।
স্নেহাঃ একটু নিয়ে আসবা এখন ওনার শরীরটা ভালো নেই…
।
স্নেহার৷ খালাঃ তুই জামাইর লগে বস আমি ডাক্তার লইয়া আসতেছি….
।
।
স্নেহাঃ হুম….
।
।
কিছু খন ডাক্তার এসে ভালো ভাবে কেটে যাওয়া জায়গা গুলো ওয়াশ করে দিলেন…
।
তার পর ব্যান্ডেজ করে দিলেন…
।
।
ডাক্তারঃ যত দুর বুঝলাম ওনার শরীর টা প্রচুর দুর্বল দুধ ফল মূল রোজ খাওয়াবেন সাথে পুষ্টি কর খাবার…
।
।
স্নেহাঃ আচ্ছা…
।
স্নেহার খালাঃ মা রে আমার কী ওত গুলো টাকা আছে তোদের এসব খাওয়ানোর…
।
।
স্নেহাঃ খালা তুমিও না আমি আছি তো এই খানে দশ হাজার টাকা আছে বাজার থেকে ভালো মন্দ কিছু নিয়ে আসো….
।
খালাঃ এহন তো বাজার বসবো না জামাই দুপুরে কী খায়…
স্নেহাঃ তেমন কিছু না যা আছে তাই নিয়ে আসো…
।
।
চলবে…