তারে ভালোবাসি বলে পর্ব-০৩

0
509

#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ০৩
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

অয়ন মেয়েটির কাছে আসতে শুনতে পেলো মেয়েটি এক নাগাড়ে বলে যাচ্ছে।

— প্লিজ আমাকে একটু সাহায্য করুন। আমাকে রক্ষা করুন।

কথাটা শেষ করতেই মেয়েটা সেন্সলেস হয়ে যায়। মেয়েটার মাথা থেকে প্রচুর পরিমাণে রক্ত বের হচ্ছে। অয়ন কি করবে বা কি করা উচিত? ভেবে পাচ্ছে না। আশ পাশ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নেয় সে। না কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এদিকে বেশি ব্লেডিং হলে বিপদ আছে। এখানে অপেক্ষা করার থেকে মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভালো হয়। অয়ন আর কিছু না ভেবে দ্রুত মেয়েটিকে কোলে তুলে নেয়। অয়ন কোনো মতে মেয়েটিকে গাড়িতে তুললো। অতঃপর গাড়ি পুনরায় স্টার্ট করে বেরিয়ে পরলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে। বেশি দূরে না। মেয়েটিকে সব থেকে কাছের একটা হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো। গাড়ি থেকে নেমে অয়ন ডক্টরের কাছে ছুটে চলে এলো। অয়ন ডক্টরের নিকট এসে বলতে লাগলো

— ডক্টর প্লিজ সাহায্য করুন আমায়। আমার সাথে চলুন। একটা ইমার্জেন্সি আছে।

অয়নের কথাতে এক মূহুর্ত দেরি করলো না ডক্টর। ডক্টর মেয়েটিকে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় আর অয়নকে কিছু ফর্মালেটি পূরণ করতে বলে। অয়ন রিসিপশনে যেতেই ওখানে থাকা একজন অয়নকে প্রশ্ন করে

— পেসেন্ট আপনার কি হয়? আর ওনার নাম কি

— জ্বি, আমি জানি না।

অপরিচিত বললে কোনো ঝামেলা হতে পারে। কিন্তু কি বলবো? ভাই বলবো! না এটা কেমন যেনো হয়ে যায় না। তা হলে কি বলা যায়? আর ওনার নাম কি? কি নাম বলি এখন!
অয়নকে চিহ্নিত দেখে উনি বললেন

— আপনার স্ত্রী! সমস্যা নেই ভয় পাবেন না। উনি ঠিক হয়ে যাবে।

অয়ন তার কথার বিপরীতে কোনো কথা বললো না। উনি অয়নকে আরও জ্বিগাসা করলো

— কি করে উনি আঘাত পেয়েছে?

— ঐ আসলে এক্সিডেন্ট হয়ে…

— ওয়াট? এক্সিডেন্ট হয়েছে! পুলিশ ডায়রি করেছেন?

রিসিপশনে বসে থাকা সুন্দরী বালিকাটি এক্সিডেন্টের কথা শুনে মিনিটের মধ্যেই হাইপার হয়ে যায়। অয়ন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বলল

— আরে না ওসব কিছু না। ও মাথা ঘুরে পরে গেছে। এতোটুকুই।

— সত্যিই বলছেন তো!

— জ্বি। আমি মিথ্যা বলবো কেনো?

— আচ্ছা। ওনার কি এর আগে কখন ও এমন হয়েছিলো?

— তা জানি না আমি।

— মানে? জানেন কি আপনি? আপনার স্ত্রীর নাম জানেন না। এর আগে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা তাও জানেন না। এতোটা কেয়ারলেস কি করে হতে পারে কেউ। ইমপসিবল

— জ্বি আমি দুঃখিত। পরবর্তী বার আগে থেকেই সব জেনে রাখবো।

— জ্বি

অয়ন কিছু কাগজে সাইন করে দিলো। অতঃপর এগিয়ে যেতে লাগলো অপারেশন থিয়েটারের দিকে। পিছন থেকে অয়নকে আবারও ডাকলো রিসিপশনে বসে থাকা সুঁই সুন্দরী রমণী। অয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল

— জ্বি আমায় বলছেন?

— জ্বি আপনাকে বলছি। এদিকে আসুন একটু।

— হুম বলেন।

— নিজের স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা দেখান অবিরাম। যত ঝগড়া হোক না কেনো কখনও প্রিয় মানুষের থেকে দূরে যাবেন না। আপনি যা যা দিবেন তা তা সব ফেরত পাবেন। সেটা ভালোবাসা হোক বা অবহেলা।

— জ্বি আমি জানি।

— হুম

* কি দিন কাল আসলো? মানুষ আমাকে জ্ঞান দিচ্ছে। নট ব্যাড। তবে আমি যে তাদের থেকেও বেশি জানি সেটা তারা বোঝে না কেনো? তবে যাই বলি না কেনো! উনি কিন্তু ভূল কিছু বলেনি। আজ আমরা যাদের বিশ্বাস নিয়ে খেলছি। যাদেরকে প্রচুর পরিমাণে অবহেলা করছি। যাদের মনটাকে নিয়ে আমরা গেইম খেলতে পছন্দ করি। একটা সময় আমরা নিজেরাই ভাগ্যের কাছে হেরে যাবো। এই সব কিছুই ফিরে পাবো অন্য কারো কাছ থেকে। একটা কথা আমাদের মনে রাখা উচিত প্রকৃতি কিন্তু কাউকে ছাড় দেয় না। যার চোখের জল আনতে আমাদের ভালো লাগে একটা সময় আমাদের চোখের জল অন্য কারো কাছে বিরক্তির কারণ হবে।

* অয়ন একটা বাঁকা হাসি দিলো রিসিপশন থেকে বেরিয়ে। কারণ হচ্ছে ঈশা। ঈশার পছন্দ, অপছন্দ সব কিছু অয়নের খুব আগে থেকেই আয়ত্ত করা। বলতে গেলে ঈশার সব কিছুই তার রপ্ত করা প্রায়। অয়নের হাসির কারন কেয়ারলেস শব্দটা। ঈশাকে কতটা কেয়ার সে করে তা শুধু মাত্র ঈশাই জানে। অয়ন অপারেশন থিয়েটারের সামনে একটা টুলে বসলো। ভিতরে অপারেশন চলছে। আল্লাহ জানে কি হয়। মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে অয়ন যে খুব বিপদে পরে যাবে তা অয়ন খুব ভালো করেই জানে। শুধু বিপদ কেনো? অয়ন কখনও কারো খারাপ হোক তা চায় না।

— আল্লাহ জেনো তাকে সুস্থতা দান করে।

মনে মনে প্রার্থনা করলো অয়ন। অতঃপর পকেট থেকে ফোনটা বের করলো। ঈশার কথা খুব মনে পরছে। কল করে কথা বলতে হবে। ঈশার মায়াবী কন্ঠ শোনার জন্য তার হৃদয়ের ব্যাকূলতা নতুন নয়। অয়ন ঈশার ফোন নাম্বারে ডায়েল করলো। ওপার থেকে একজন ভদ্র মহিলা বলছে

— নাম্বারটি ব্যস্ত আছে।

অয়ন চরম বিরক্ত হলো। এই সময় কার সাথে কথা বলছে ও? ওর কি কোনো কান্ডজ্ঞান নেই যে আমি কল করতে পারি? আজব মানুষ একটা। ভিশন বিরক্তি নিয়ে বসে আছে অয়ন। কিছু সময় যেতেই অপারেশন শেষ হলো। মেয়েটিকে কেবিনে সিফ্ট করা হলো। অয়ন কেবিনে চলে আসে। ডক্টর জানায় অপারেশন শেষ তবে মেয়েটি কোঅপারেট করছে না। কোনো রিসপন্স নাই মেয়েটার। এই মেয়েটি বাঁচার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলেছে কোনো কারনে। অয়ন একটু অবাক হলো ডক্টরের কথা শুনে। কি কারণ হতে পারে? মে কারণে এই মেয়েটার বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলেছে? শেষ বার মেয়েটি বলেছিলো তাকে সাহায্য করার কথা। এর মানে কি?

✒️ অয়ন কেবিনে এসে মেয়েটির পাশে বসলো। মেয়েটাকে দেখে তার মনে হচ্ছে খুব ভালো পরিবারের একটা মেয়ে। কিন্তু এই মেয়ের কাছে তেমন কিছুই নাই যা দেখে ওর পরিবারের কাউকে খবর দিতে পারবো। এদিকে রাত অনেক হয়ে গেছে। আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে। একা রেখেও যেতে পারছি না। কি করি আমি?

* অয়ন কিছু আর ভাবলো না। মেয়েটির পাশে চুপ করে বসে আছে সে। কখন জ্ঞান ফিরবে তার অপেক্ষা করছে অয়ন। কিছু সময় যেতেই অয়নের ফোনে কল চলে আসে। অয়ন ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ঈশা কল করেছে। অয়ন কলটা রিসিভ করতেই

— হ্যালো কল করেছেন কেনো?

— অভিমান করে আছো?

— সেটা আপনার না জানলেও চলবে

— হুম

— হুম কি?

— ব্যস্ত ছিলে কেনো? কার সাথে কথা বলছিলে?

— আপনাকে কেনো বলবো? আমি তো রাস্তার মেয়ে। নিশ্চয়ই কোনো ছেলের সাথে কথা বলছি।

— উফফফফ ঈশা প্লিজ স্টপ ইট। আমি রাগের মাথায় কথা গুলো বলেছি।

— আপনি রাগের মাথায় কথা গুলো বলেছেন। রাগের মাথায় আমাকে এতোটা নিচে নামিয়েছেন যে নিজের কাছে আমি ছোট হয়ে গেছি। আপনি

— চুপ। শোনো ঝগড়া করার মুড নাই আমার। ঐ ছবি গুলো আমাকে বাধ্য করেছে ওসব বলতে।

— বিশ্বাস নাই তো আপনার। এটাই তার প্রমান।

— হয়েছে! করি না বিশ্বাস। কল কাট করো এখনি

* অয়ন রাগে গজগজ করতে করতে কলটা কেটে দিলো। অসহ্য। প্রিয়জনের সাথে অন্য কাউকে সহ্য হয় না আমার। হ্যাঁ আমি সন্দেহ করি তাকে। তার মানে তার প্রতি আমার বিশ্বাস নাই। এটাই তো? সন্দেহ এই জন্যই করি কারন ভয় হয় যদি তাকে হারিয়ে ফেলি। বুঝে না এই মেয়েটা।

ফোনটা পকেটে রেখে অয়ন বসে আছে হঠাৎ করে…………….

#চলবে……………