তারে ভালোবাসি বলে পর্ব-০৯

0
315

#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ০৯
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন গাড়ি থেকে নামতেই দেখতে পেলো অনু অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অনু অয়নের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল

— পালিয়ে বেড়াচ্ছো আমার থেকে?

— মানে? পালাবো কেনো?

— মজা করলাম। আমাকে সাথে নিয়ে এলেনা কেনো?

— এমনি। আসলে আজ একটু তারাতাড়ি এসেছি তো তাই একাই চলে এলাম।

— ওহহহহ। আচ্ছা চলো তাহলে।

— হুম

* অয়ন অনুকে পিছনে রেখে অফিসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অয়ন ভাবছে এই মেয়েকে আসলে চায় টা কি? আচ্ছা অনু ততটা অসহায় নিজেকে দেখাচ্ছে আসলে কি ও এতোটাই অসহায়? নাকি ওর বাহিরে এক আর ভিতরে আরেক? মানে হলো চারিদিকে ওর বিপদ থাকা সত্ত্বেও একা একা অফিসে চলে এলো। এটাকি ছিলো? ওর সরলতা নাকি কোনো উদ্দেশ্য?

অনু অয়নের পিছন পিছন এগোচ্ছে আর মনে মনে হাসছে। অয়ন চৌধুরী নিজেকে কতটা চালাক ভাবো তুমি? ঈশাকে নিয়ে উড়তে চাও? উড়ো দেখি কতটা উড়তে তুমি পারো। আনমনে কথা গুলো ভাবছে অনু। অনুর ঠোঁটে এক রহস্যময় হাসির ছাপ।

অয়ন নিজের চেম্বারে এসে কিছু কাজ শেষ করে নিলো। অনু অয়নের চেম্বারেই বসে আছে। অয়ন অনুকে কিছু কাজ বুঝিয়ে দিলো।

— আচ্ছা অনু বুঝতে পেরেছো তুমি?

— আমি সব কিছু অল্পতেই বুঝতে পারি। আর সময় মতো সবাইকে সবটা বুঝিয়েও দিতে পারি।

অয়ন একটু অবাক হলো কথাটা শুনে। অয়ন বলল

— মানে?

— কাজের কথা বলছি আমি

বাঁকা হেঁসে বলল অনু। অয়ন তেমন কিছু মনে করলো না। অয়ন চেয়ারের উপর থেকে নিজের ব্লাক কালারের ব্লেজারটা হাতে ভাঁজ করে নিয়ে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আচ্ছা তুমি এদিকটা একটু ম্যানেজ করো আমি কিছু সময়ের জন্য বাহিরে যাচ্ছি।

অনু প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অয়নকে বলল

— কোথায় যাচ্ছো তুমি?

— একটা জরুরী কাজে।

— বার বার অপমানিত হতে ভালো লাগে তোমার?

অয়ন কথাটা শুনে একটু থমকে যায়। কয়েক সেকেন্ড পরে মৃদু কন্ঠে বলল অয়ন

— ভালো লাগে বলতে ভালোবাসি তারে। সে যাই করুক নো প্রবলেম। আসছি আমি

— হুম

✒️ অয়ন অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। অনু অয়নের চলে যাওয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অয়ন পার্কিং লট থেকে গাড়ি নিয়ে সোজা চলে যেতে লাগলো ঈশার বাড়ির দিকে। আজ ঈশার থেকে সব সত্যি জানতে হবে আমায়। কেনো আমাকে কষ্ট দিচ্ছে সে? আর আজকেও যদি অপমান করে আমায়! তবে আমি এমন কিছু করতে বাধ্য হবো যা ঈশা কোনো দিন কল্পনাও করেনি হয়তো।
কিছু দূর ড্রাইভ করতেই অয়নের চোখে পরলো ফুলের দোকান। অয়ন গাড়িটা সাইডে রেখে ফুলের দোকান থেকে কয়েক গুচ্ছ তাজা ফুল নিয়ে নিলো। ভালোবাসায় শেষ বলতে কোনো শব্দ নেই। ভালোবাসা হৃদয়ানুভূতি যা যখন ইচ্ছে তখন, যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে প্রকাশ করা যায়। অয়ন ফুল গুচ্ছ নিয়ে চলে আসে ঈশার বাড়ির সামনে। বাড়ির সামনে গাড়িটা আসতেই অয়ন দেখতে পেলো ঈশা তার গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পোশাক দেখে মনে হচ্ছে কোথায় যাবে সে। অয়ন গাড়ি থেকে নামতেই ঈশা অয়নকে দেখতে পেলো। রাগে ও ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলো ঈশা। অয়ন তা বুঝতে পেরে বাঁকা হাসি দিলো। একপা একপা করে ঈশার দিকে এগিয়ে আসছে অয়ন। ঈশা অয়নের থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে। অয়নকে এগিয়ে আসতে দেখে ঈশা প্রদান পরিত্যাগ করার চেষ্টা করলো। অয়ন এতো সহজে তো ঈশাকে ছাড়বে না। ঈশার হাত ধরে একটা হেঁচকা টান দিয়ে ঈশাকে নিজের সঙ্গে জরিয়ে নিলো। ঈশা কিছু বুঝতে পারছে না‌। অয়ন ঈশার কপালের উপর উড়ে আশা চুল গুলো সরিয়ে কানের পিছনে গুজে দিলো। ঈশা অয়নের চোখ বরাবর তাকিয়ে আছে। ঈশার মায়াবী দৃষ্টি অয়নকে জোগাচ্ছে মনের ভিতরে থাকা তার জন্য সুপ্ত অনুভূতি। অয়ন মৃদু কন্ঠে ঈশাকে বলল

— আমাকে সহ্য হয় না এখন আর? ভূল গুলো কি ক্ষমা করে কাছে টেনে নেয়া যায় না আমায়?

ঈশা নিশ্চুপ। চোখের নিচের কালো দাগ প্রকাশ করছে ঈশার অতিবাহিত দিন গুলো কতটা যন্ত্রনার ছিলো। অয়ন ঈশাকে নিশ্চুপ দেখে আবারও বলতে লাগলো

— চোখের নিচে কালো দাগ কি করে হলো? অনিয়ম শুরু করে দিয়েছো?

ঈশা কান্না ভেজা কন্ঠে বলল

— না। এমনি হয়ে গেছে। আপনি এখানে এসেছেন কেনো? আমাকে ছাড়ুন। আপনার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।

— এতো সহজেই কি সব সম্পর্ক শেষ করা যায়? আচ্ছা আমার অপরাধ কি? কি জন্য এমন করছো তুমি? ভালোবাসি তোমায়। কেনো বুঝতে চাও না?

— ছিঃ ঐ মুখে ভালোবাসার কথা বলতে লজ্জা করে না আপনার? একজনকে ভালবাসার স্বপ্ন দেখিয়ে অন্য জনকে বিয়ে করা ভালোবাসা? আমার কাছে কেনো আসেন আপনি? আপনার স্ত্রী কি আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারে না? তাই তো এখানে আসেন আমার কাছে আসেন। সরি মিস্টার অয়ন চৌধুরী এটা কোনো পতিতালয় না আর আমি কোনো প……..

— ঠাসসসসসসস, ঠাসসসসসস। যা মুখে আসে তাই বলতে ইচ্ছে করে?

থাপ্পড়ের শব্দে পুরো পরিবেশটা কেঁপে উঠলো। অয়ন অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে। ঈশা মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলছে। অয়ন রাগি কন্ঠে ঈশাকে বলল

— আমি কাকে বিয়ে করেছি?

ঈশা নিশ্চুপ

— উত্তর দিতে বলেছি।

— কি হবে উত্তর দিয়ে? সত্যিই তো আর মিথ্যে হবে না। আমি নিজের চোখে দেখেছি হাসপাতালের অপারেশন ফর্মালেটির কাগজে স্বামী হিসেবে আপনার স্বাক্ষর। এখন কি বলবেন ঐ সব মিথ্যে ছিলো?

— ঐ সব তবে কি সত্যি ছিলো?

— মানে?

— মানে হলো কিছু না। চলো আমার সাথে।

কথা শেষ করেতেই ইশারা হাত ধরে অয়ন। অয়নের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ঈশা বলল

— কোথায়? কোথাও যাবো না আমি।

— ওমা কেনো যাবে না? আমার ওয়াইফের সাথে পরিচিত হবে না তুমি?

— না হবো না। ইচ্ছে নেই আমার।

— আমার আছে তাও অনেক ইচ্ছে।

— আপনার থাকুক বা না থাকুক তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না। আপনি চলে যান আমার সামনে থেকে সহ্য হয় না আপনাকে।

— হবে হবে সব সহ্য হবে। যেতে না চাইলে জোর করে তুলে নিয়ে যাবো। আর আমি কি কি করতে পারি তা আমার থেকে তুমি ভালো জানো। সো ঈশা প্লিজ বাধ্য করো না আমায়।

— আমি যাবো না তো যাবো না। আপনার মা ইচ্ছে হয় করতে পারেন।

— ওকে

— এই কি করছেন এসব? অয়ন প্লিজ ছাড়ো আমায়! প্লিজ

— সরি মিস এখন ছেড়ে দিলে আপনার কোমর ভেঙ্গে যেতে পারে। তাই সম্ভব হলো না।

* অয়ন ঈশাকে কোলে তুলে নিলো। অয়ন যে এমনটা করবে তা ঈশা আগে থেকেই জানতো তবে ভাবেনি অয়ন আজ ও এমন করবে। অয়ন ঈশাকে গাড়িতে কোনো মতে তুললো। জোর করে কি সহজে কাউকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়? যায় না। অয়ন ঈশাকে গাড়িতে তুলে গাড়ি স্টার্ট করলো। ঈশা অয়নকে চিৎকার করে বলছে

— এই অয়ন চৌধুরী আমাকে গাড়ি থেকে নামাও বলছি। তা না হলে আমি চাৎকার করবো।

— করো চিৎকার সমস্যা নাই।

— আমি কিন্তু গাড়ি থেকে ঝাঁপ দিবো!

— দাও তাতেও সমস্যা নাই। গাড়ি লক করা আছে। সো আমাকে ভয় দেখিয়ে তুমি পার পাবে না।

— কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়?

— আপাতত অফিসে যাচ্ছি। পরে না হয় আমার রুমেই যেও। ঠিক আছে?

— সত্যি তোমাকে বলার মতো আমার আর কোনো ভাষা নেই। আমার উপর জোর করবে? করো। ভালোবাসার সাজা আমার পাওয়া উচিৎ।

* অয়ন ঈশার কথার কোনো জবাব দিলো না। ঈশার দিকে একবার তাকিয়ে ড্রাইভিং এ ফোকাস করলো। ঈশার গাল ফুলে গেছে। থাপ্পড় বসিয়ে দেয়া উচিৎ হয়নি। কিন্তু কি করবো? ও তো নিজেকে অনেক ছোট করে ফেলছে। যা আমি সহ্য করতে পারি না। ঈশা নিশ্চুপ হয়ে আছে।

✒️ গাড়িটা অফিসের সামনে পার্ক করে অয়ন ঈশার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো তার চেম্বারে। ঈশা মেতে চাইছে না। অয়ন ঈশার দিকে মায়াবী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

— এখন কি চাও সবার সামনে কোলে তুলে নিয়ে যাই?

— অয়ন বাড়াবাড়ি করো না প্লিজ। আমার কোনো অভিযোগ নেই। তুমি সুখে থেকো আর কিছু চাই না আমি।

— আমার সুখে থাকার কেন্দ্র বিন্দু তুমি। চলো প্লিজ

* ঈশা আর কিছু বলল না। চেম্বারের এসে অয়ন দেখতে পেলো অনু তার পার্সোনাল ল্যাপ্টপ নিয়ে কিছু একটা করছে। অয়ন সেদিকে খেয়াল করলো না। অয়ন অনুকে বলল

— অনু দেখো কাকে নিয়ে এসেছি?

অনু অয়নের উপস্থিতে একটু চমকে উঠে। অনু আমতো আমতো করে বলতে লাগলো

— ততুমি কখন এলে?

— এই তো এখনি আর দেখো সাথে করে কাকে নিয়ে এসেছি!

— কাকে?

অয়ন ইশারা হাত ধরে বলল

— আমার লাইফলাইন কে। জানো অনু ঈশা তোমাকে আর আমাকে নিয়ে কি সব উল্টা পাল্টা ভেবে বসে আছে। শোনো ঈশা অনু আমার শুধু মাত্র বন্ধু। এই সম্পর্ক ছাড়া আর কোনো সম্পর্ক আমাদের নেই। ওর সাথে আমার পরিচয়……

* একে একে অনুর বিষয়ে সব কথা অয়ন ঈশাকে খুলে বলে। ঈশা অবাক চোখে অয়নের কথা গুলো শুনছে। মনে মনে ঈশা নিজেকে দোষ দিচ্ছে। অয়ন তাকে নিয়ে তেই ভূলটা করেছিলো আজ ঈশাও সেই একি ভূল করলো। অয়ন সব কথা শেষ করে ঈশার দিকে একটু ঝুঁকে বললো

— আমি খারাপ। বিশ্বাস করি না তোমায়। তাই দিব্বকে নিয়ে তোমায় সন্দেহ করেছি। তবে তুমি কি করলে?

— অয়ন…

— উহু চুপ করো। কোনো‌ কথা আমি আর শুনতে চাই না। আমাকে শুধু এটুকু বলো যে অফিসে যদি নিয়মিত আসি আমি তবে কি আমার বাচ্চার মা হবে?

* অয়নের কথা শুনে ঈশার ছলছল চোখে লজ্জা উঁকি দিলো। মাথাটা একটু নিচু করে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে ঈশা। অয়ন একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ঈশাকে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে নেয়। অয়ন বলছে ঈশাকে

— এতোটা খারাপ আমি না হুম যে ২য় নারী পেলেই আমার ভালোবাসা হারিয়ে যাবে। আমি একে আসক্ত।

ঈশা অয়নের পিঠের উপর নিজের হাত জোড়া রেখে বলল

— ক্ষমা করে দাও আমায়। আমি আসলে বুঝতে পারিনি। ভেবেছি তুমি আমায় ঠকিয়েছো। তাই তোমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছি আমি।

— উহু আর বলতে হবে ন কিছু। আমার থেকে দূরে থেকে নিজেকে কতটা কষ্ট দিয়েছো তুমি তা আমার জানা আছে। তোমার কষ্টের থেকে আমার কষ্টটা সামান্য।

— হুম।

* অয়ন আর ঈশাকে এক সাথে দেখে অনুর বুকটা ফেটে যাচ্ছে প্রায়। অনু সহ্য করতে পারছে না ঈশাকে। প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছে ঈশার উপর। তবে অনু নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করছে। অনু অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— হয়েছে তো অফিসে এসব রোমান্স এলাউ না।

অয়ন ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে ঈশার গালে জোড়া স্পর্শ করে বলল

— এখন কি বাসায় যাবে? নাকি বিকেলে আমার সাথে‌ যাবে?

— বিকেলে মানে? বিকেলে তোমার সাথে কোথায় যাবো আমি?

— তোমার বাড়িতে যাবো বিকেলে।

— কেনো কেনো?

— বিয়ে নিয়ে বাবা মা কিছু আলোচনা করতে চায়। তাই আরকি!

— মানে? আমাকে তো তুমি আগে কিছু বলো নি?

— বলার কোনো পরিস্থিতি ছিলো কি? এখন বললাম তো।

— আমি এখনি বাসায় যাবো‌।

— ওকে।

অয়ন ঈশাকে নিয়ে অফিস থেকে চলে গেলো। অনুর চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে অয়ন আর ঈশাকে এক সাথে দেখে তার সহ্য হচ্ছে না। অয়ন বেরিয়ে যেতেই অনু তার‌ ফোন থেকে একটা কল করলো।

* অয়ন ড্রাইভ করছে আর কিছু সময় পর পর ঈশার দিকে তাকাচ্ছে। ঈশা বক বক‌ করছে। কিন্তু অয়নের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। হঠাৎ করে অয়ন………………

#চলবে………………