তারে ভালোবাসি বলে পর্ব-০৮

0
331

#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ০৮
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন ফ্রেশ হয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ওয়াসরুম থেকে বেরোতেই দেখতে পেলো অনু তার রুমে বসে আছে। অনু অয়নের উন্মুক্ত বুকের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জিম করা সিক্স প্যাক বডি অয়নের। বুক থেকে কোমর উবদি প্রতিটি ভাজ স্পষ্ট। অনু বেশ সাছন্দে কর্নপাত করে আছে অয়নের পানে। অনুকে নিজের রুমে দেখে অয়নের যে বেশ বিরক্ত হলো তা তার চেহারায় স্পষ্ট পতিয়মান। অনু যে তার দিকে লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তা অয়নের চোখের আড়াল হলো না। অয়ন টাওয়ালটা কাঁধে উপর রেখে অনুর দিকে বিষ্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো

— এতো রাতে আমার রুমে কেনো?

— কেনো আমি কি আসতে পারি না?

— না না তা কেনো হবে? অবশ্যই আসতে পারেন তবে রাত করে এটা কিন্তু ঠিক বলে আমার মনে হচ্ছে না।

— কোনটা ঠিক আর কোনটা ভূল তা আমার জানার প্রয়োজন নেই। বাই দ্যা ওয়েহ। আমি একটা কথা বলতে এসেছি।

— জ্বি বলুন।

অনু বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলল

— কাল থেকে আমি অফিসে যেতে চাই। যদি আপনি অনুমতি দেন তো!

— অফিরের কাজ আপনি ঠিক মতো পারবেন তো?

— অবশ্যই পারবো। আর যদি না পারি তো তুমি আছো তো।

— আমি বলতে, সব সময় তো আমি অফিসে যাই না। ইচ্ছে হলে যাই না হলে নাই।

— আমার জন্য রোজ যেতে হবে। পারবেন না?

— উমমমমম। আচ্ছা তা যাওয়া যায়।

— হুম। ডিনার করতে যাবেন না?

— হ্যাঁ

— চলুন তা হলে!

— আপনি যান আমি আসছি।

— এক সাথে গেলে কি খুব ভূল হয়ে যাবে?

— না তা হয় না। আচ্ছা আপনি বসুন আমি জামা পরে যাচ্ছি।

— হুম

* অয়ন টাওয়াল রেখে টিশার্ট পরে নিলো। অনু অয়নের দিকে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল

— আপনার ফিগার টা কিন্তু মারাক্তক ডেয়ারিং। যে কোনো মেয়েকে আকর্ষন করতে যথেষ্ট। আর এমনিতেও সব মেয়ে একজন বলিষ্ঠ, সুদর্শন পুরুষ কামনা করে। আপনার ভিতর সব গুলো বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।

অনুর অৎভূত কথা শুনে অয়ন কিছুটা থ মেরে গেলো। কৌতুহলী চোখ নিয়ে প্রশ্ন করলো

— মানে? আপনি কি সব বাজে কথা বলছেন!

— বাজে কথা কোথায় বললাম? সত্যিই বলেছি।

— আচ্ছা ঠিক আছে। ধন্যবাদ। এখন আমরা যাই?

— হুম। আচ্ছা আমরা কি আপনি থেকে তুমিতে যেতে পারি? আপনি শব্দটা পর পর লাগছে ভিশন।

— আপনার ইচ্ছে বলতে পারেন।

— শুধু আমি বলবো?

অয়ন এইবার একটু হেসে বলল

— উহু আমিও বলবো। চলো এখন খিদে পেয়েছে।

— হ্যাঁ, চলো।

✒️ অয়ন আর অনু দুজন মিলে খাবার টেবিলে চলে আসে। অয়ন খাবার খাচ্ছে আর অনুর বলা কথা গুলো কল্পনা করছে। আনমনে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করছে অয়ন। আচ্ছা অনু এমন অদ্ভূত কথা বলছে কেনো? ওর প্রতিটা কথায় এক রহস্য বিদ্যমান। ওর কথার ধরন ভিশন অসস্থিতে ফেলছে আমায়। কি চায় মেয়েটা? ওর চোখে কেনো আমি ভালোবাসা দেখতে পাই? আমি যা ভাবছি তা কি সত্যি? আমি তো ওকে বন্ধুর মতো ট্রিট করি। আচ্ছা আমি কোনো ভূল করে ফেলছি নাতো? ঈশার থেকে দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে আমার। কিন্তু এখন আর ঈশার কথা কেনো মনে পরে না আমার? আগেও তো ঈশার সাথে আমার ঝগড়া হতো। আমি নিজে থেকেই আবার কথা বলতাম। কিন্তু এখন কেনো সেই ইচ্ছা আমার হয় না। আমি অনুর কাছে থাকলে কেনো ঈশার কথা ভাবতে পারি না? তবে কি আমি বদলে গেছি? ছিঃ ছিঃ এসব কি ভাবছি আমি? ঈশা আমার ভালোবাসা। ঈশা আমাকে ভালোবাসে। মান অভিমান সব সম্পর্কে থাকে। তাই বলে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হতে হবে নাকি? এভাবে যদি ঈশার থেকে দূরে থাকি তবে একটা সময় ঈশাও আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে। এটা কখনো হতে দেওয়া চলবে না। আমি ওকে চাই আর চাই মানে চাই‌। হয়তো অপমান করবে ঈশা। কিন্তু সমস্যা নাই। কাল আমকে জানতেই হবে কেনো ঈশা আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে? কি ভূল আমার? যদি ঈশা কোনো উত্তর না দিতে পারে তবে বিকল্প পথ অনুসরণ করতে হবে। যা আমি চাই না। তবে বাধ্য হলে কিছু করার নাই। আর অনুর সাথে মেলামেশা কমাতে হবে। আমি চাই না ঈশা আর আমার মাঝে কোনো প্রকার দূরত্ব তৈরি হোক।

অয়ন নিশ্চুপ হয়ে কথা গুলো ভাবছে। অয়নের ভাবনার অবকাশ ঘটলো অনুর কন্ঠ শুনে। অনু অয়নকে বলতে লাগলো

— কবিদের মতো কি অয়ন চৌধুরী ভাবতে ভালোবাসে?

অয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল

— না তেমন কিছু না ঐ আরকি!

— যা মনে চলছে তা প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই। চোখের ভাষা বোঝার ক্ষমতা আছে আমার।

— তাই নাকি?

— হুম

— তো বলো তো কি ভাবছি আমি?

— যদি বলি আমায় নিয়ে!

— হুম আংশিক ভাবে সত্যি।

অয়নের কথা শুনে অনু বাঁকা হাসলো। অয়ন খাবার শেষ করে নিজের রুমে চলে আসে।

✒️ ঈশা অয়নের দেয়া কিছু স্মৃতি বুকে নিয়ে কেঁদে চলেছে অবিরাম। প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলার কষ্ট প্রকাশ করার মতো নয়। খুব কি দামি ছিলো তার ইচ্ছে? অয়ন কি তার হতে পারতো না? যদি তার নাই হবে তবে কেনো তার প্রতি দূর্বলতা কাজ করছে তার। কেনো তার কথা ভূলে থাকতে পারছে না সে? কথা গুলো মনে উঠতেই আঁতকে উঠে ঈশা। একটা মানুষকে কতটা ভালোবাসলে তার অপমান সহ্য করা যায়? কতটা ভালোবাসলে তাকে ভালো রাখতে পারা যায়? তার উদাহরন ঈশা। ভালোবাসা কি রূপ আর টাকা দিয়ে বিচার করা হয়? অনু আমার থেকে কেনো এতো সুন্দরী হলো? বিধাতা কেনো অয়নকে আমার থেকে আলাদা করে দিলো? আমার ভালো থাকাটা কি বিধাতা চায় না? হাজারটা অভিযোগ জমে আছে ঈশার বুকে।

— ঈশা চল খাবার টেবিলে। আর কত কাঁদবি তুই?

— জানো মা বিধাতা আমার চোখে সারাজীবনের জন্য জল এনে দিয়েছে। আমি অয়নকে পছন্দ করি। ওকে ভালোবাসি এটা নিশ্চিত হয়ে আমি সবার প্রথমে তোমাদেরকে বলেছি।

— আমরা তো তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাইনি।

— হুম মা। যাওনি। আমি অয়নকে ভালোবেসে নিজের করে পেতে চেয়েছি। পরিবার যেনো বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায় আমার ভালোবাসায় সেই চেষ্টা করেছি আমি। কিন্তু কি লাভ হলো মা? আমার থেকেও সুন্দরী কাউকে পেয়ে অয়ন ভূলে গেলো আমায়?

— তুই কাঁদিসনা মা। আমরা অয়নের বাবা মা এর সাথে কথা বলছি।

ঈশার মা এর কথা শেষ হতেই ঈশা চিৎকার করে বলে উঠলো

— না মা। আমি আর চাই না কারো হাসির পাত্র হতে। অনেক নির্লজ্জের পরিচয় দিয়েছি আমি। আর না।

— এভাবে আর কত কষ্ট পাবি তুই?

— যতক্ষন বেঁচে থাকা যায়।

* ঈশার মা আর কি বলবে? উনি চলে গেলেন। ঈশা রুমের লাইটটা অফ করে শুয়ে আছে। আজকাল আলো সহ্য হয় না ঈশার। জীবন থেকেই তো আলো চলে গেছে। রুমের আলো জ্বলে আর কি লাভ হবে?
ঈশা লাইট অফ করে বিছানায় আসতেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। ঈশা চোখের পানি মুছে ভালো করে দৃষ্টিপাত করলো ফোনের দিকে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। ঈশা একটু অবাক হলো। কে কল করেছে তাকে? মনের মধ্যে সংকোচ দূর করে কলটা রিসিভ করে ঈশা। ওপার থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ ভেসে এলো ঈশার কানে।

— হ্যালো, ঈশা বলছেন?

— জ্বি, আপনি কে?

— আমি এক অপরিচিত মানুষ। একটা প্রশ্ন করতে কল করেছি।

— জ্বি বলুন।

— অয়নের সাথে আপনার সম্পর্ক কি?

— আপনাকে কেনো বলবো?

— না বললে পরে আপনাকে পস্তাতে হবে। অয়নের ভালো চাইলে যা জ্বিগাসা করা হয়েছে তার উত্তর দিন।

— অয়নের সাথে আমার আত্নার সম্পর্ক।

— তা হলে আত্নাটাকে বের করে ফেললে কেমন হয়?

— ওয়াট? কি বলছেন এসব? আপনি কে?

— শুভাকাঙ্ক্ষী। অয়নের থেকে দূরত্ব বজায় রাখলে অয়ন ভালো থাকবে। বাকিটা তোমার ইচ্ছে।

কলটা কেটে গেলো। ঈশার কান থেকে ফোনটা বিছানার উপর পরে গেলো। কে কল করেছে? অয়নের কোনো ক্ষতি হবে মানে কি? অয়নের থেকে দূরে থাকতে হবে? ওর থেকে তো দূরেই আছি। এখন হয়তো ভালো থাকবে ও।

* সকাল হতেই অয়ন ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। আজ আর অনু কে সাথে নিলো না। অফিসে গিয়ে কিছু কাজ করে তারপর ঈশার কাছে যেতে হবে। অয়ন অফিসে পৌঁছাতেই অবাক হয়ে যায়। একি দেখছে সে? অয়ন……………..

#চলবে…………….