তার শহরের মায়া পর্ব-০২

0
1155

#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_২
#writer_Liza_moni

আমাদের ঘর সাজানো শেষ।অনেক তো রাত হয়েছে।১২টা বাজে। এই বার তো নতুন ভাবিকে রুমে নিয়ে আসতে হবে।

হুম ঠিক বলেছিস জুঁই।
অনু আপু একটু যাও না তোমার বোনকে নিয়ে আসো।

অনু জোর পূর্বক হেসে বলল যাচ্ছি।

অনু তনুর কাছে গেল। বড়রা সবাই তনু কে ঘিরে রেখেছে। তনুর মুখে হাসির ঝিলিক বয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে বড়দের কথায় লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে তনু।

অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। জীবনটা এত বে রঙিন ছবির মতো লাগছে বলে বোঝানো যাবে না।কী যে কষ্ট নিজের প্রিয় মানুষটাকে অন্যের হতে দেখা।যে দেখেছে সেই বুঝবে এই কষ্ট।

অনু মুচকি হেসে বোনের পাশে গিয়ে বসলো।মাহিরের আম্মু অনুকে দেখে মুচকি হেসে বললো তনুর মতোই অনু দেখতে খুব মিষ্টি।

আন্টি সবাই বললো আপুকে এখন দুলাভাই এর রুমে নিয়ে যেতে। অনেক রাত হয়ে গেছে।

সেকি আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। মাথায় ছিল না একদম।তনু অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে।যাও যাও ওকে রুমে নিয়ে যাও।

অনু বোনের হাত ধরে বসা থেকে উঠতে সাহায্য করলো।
এতো ভারী লেহেঙ্গা, গয়না পরে তনুর অবস্থা নাজেহাল।

অনু তনু কে রুমে নিয়ে গেল।মাহিরের সব কাজিনরা তনু কে ঘিরে ধরলো। বিয়েতে মাহিরের সব কাজিন কে দেখলে ও রিফা কে কোথাও দেখতে পেল না অনু।

শুনো ভাবী আজকের রাতটা কিন্তু অন্য সব রাতের থেকে আলাদা।সব মেয়েই এই রাতের জন্য অপেক্ষা করে।

তনু মুচকি হেসে সবার দিকে তাকালো।অনুর দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলো এদের এখান থেকে নিয়ে যেতে,ড্রেস চেঞ্জ করবে অনেক গরম।

বোনের ইশারা বুঝতে পেরে অনু সবার উদ্দেশ্যে বলল আপুকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আমরা চলে যাই। অনেক রাত হয়ে গেছে।

অনু সহ তিন জন মেয়ে মিলে তনু কে বসিয়ে দিয়ে চলে গেল।সবাই এক এক করে চলে যেতে লাগল।অনু আসার সময় রুমটার দিকে এক পলক তাকালো। বোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।

১২টা ৪৫ এর দিকে মাহির রুমে গেলো। ড্রইং রুমের দেওয়ালের এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিল অনু। মাহির কে দেখে চোখ ভিজে ওঠে তার।অনু ছুটে ছাদে চলে গেলো। আকাশে আজ থালার মত চাঁদ দেখা যাচ্ছে। আকাশ আজ তারায় ভরা।

অনু ছাদের এক কোনায় রেলিং এর সাথে ঘেঁষে দাঁড়ালো। সারাদিনে সবার জন্য মন খুলে কাঁদতে পারিনি সে। একাকিত্ব এখন তাকে গ্রাস করেছে। ভীষণ একা লাগছে তার।

ইচ্ছে করছে সব লন্ডভন্ড করে দিতে। মাহির কেমনে পারলো আমার সাথে এমন করতে? আমি তো ওরে সত্যি ভালোবেসেছি। নিজের চাইতে ও বেশি বিশ্বাস আমি ওরে করতাম।আর সেই মাহির আমাকে এতোটা ঠকালো? আমি কী করে ওরে সারা জীবন আমার বোনের সাথে দেখবো? আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মাহির তোরে তো আমি সত্যিই ভালোবাসি রে। কতো স্বপ্ন দেখিয়েছিলি এই রাত নিয়ে। একটা সুন্দর সংসার নিয়ে। বিয়ে নিয়ে।আজ তুই কেমনে পারলি আমাকে এতো কষ্ট দিতে? তোর আকাশে আজ সাত রঙের রং ধনু। আমার আকাশে কেন মেঘ জমালি? কেন মিথ্যা আশা দিলি? আমি মরে যাচ্ছি মাহির, আমি মরে যাচ্ছি। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে বুকের মাঝে।কলিজা টা ছিঁড়ে যাচ্ছে আমার মাহির।ইয়া আল্লাহ কী করবো আমি?
ছাদে বসে পড়লো অনু। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমার সব কিছু উলোট পালোট হয়ে গেছে।কেন করলা আমার সাথে এমন মাহির? কেন?
😭😭😭😭😭😭😭
.
মাহির রুমে ঢুকে তনু কে দেখলো বিছানায় বসে আছে। মাহির কে দেখে তনুর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে। মাহির তনুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো এই গরমের মধ্যে এতো ভারী জিনিস পরে থাকতে কষ্ট হচ্ছে না?

হুম একটু তো হচ্ছেই।

মাহির তনুর পাশে গিয়ে বসে তনুর এক হাত তার হাতে নিয়ে ঠোঁট দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দিল।

যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।বলেই মাহির উঠে বেলকনিতে চলে গেল।

তনু লাজুক হেসে বিছানা থেকে নেমে লাগিস থেকে একটা লাল রঙের শাড়ি নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল।

মাহির বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।অনুর সাথে প্রতারণা করতে তার ও ভালো লাগে নি। শুধু একটা চ্যালেন্জ , একটা বাজির জন্য সে একটা মেয়ের কাছে সারা জীবনের জন্য অপরাধী।
তনু কে মাহির ৫ বছর আগে নদীর পাড়ে দেখেছিলো।
মনের মাঝে সেদিনই জায়গা করে নিয়েছে তনু।

রিফার জন্মদিনে কাজিন দের সাথে বাজি ধরে অনুর পিছু নেয় মাহির। মাহির জানতো না অনু যে তনুর বোন। ওদের চেহারায় এতো টা ও মিল নেই।অনু যখন মাহির কে পাত্তা দিতে শুরু করে তখন থেকেই মাহির তার ইমোশন নিয়ে খেলতে শুরু করে।
রিফার কাজ থেকে অনুর সব পছন্দের জিনিস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয় মাহির।

সে দিন,,,
রিফার জন্মদিনে অন্য সব মেয়েদের মধ্যে সব চেয়ে সুন্দর মেয়েটি ছিল অনু।

রিফার বেস্ট ফ্রেন্ড টাকে দেখছোস মাহির? কোনো ছেলেকে সহজে পাত্তা দেয় না।

তাই নাকি রিফাত?
আমি যদি পটাতে পারি?

তাহলে তোর সেই নদীর পাড়ে দেখা মানুষটিকে খুঁজে বের করে দিবো।

সত্যি?

হুম সত্যি।

ওকে বাজি ধরলাম আমি যদি অনুর মন জয় করতে পারি তাহলে আমার সেই মানুষটি কে খুঁজে বের করে দিবি।

ঠিক আছে।

সেদিন থেকেই মাহির পিছু নেয় অনুর।আর অনু বোকার মতো ভুল মানুষকে ভালোবেসে ফেলে।
.
অনু কান্না করতে করতে চোখ লাল হয়ে গেছে।মাথা ও ব্যথা করছে প্রচুর।

মাহির বেলকনি থেকে রুমে এসে দেখে তনু চোখে কাজল দিচ্ছে। মাহির তনুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওয়াস রুমে চলে গেল।
অনু চোখে কাজল দিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। আকাশে এতো সুন্দর চাঁদ দেখে খুশিতে মন ভরে গেল তনুর। নতুন জীবনে যেন আজ চাঁদ তারা তাদের স্বাগত জানাচ্ছে।

মাহির ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে বেলকনিতে গিয়ে দেখে তনু আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।

মাহির তনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।এক হাত তনুর পেটে রাখতেই তনু কেঁপে উঠে।

কী করছেন ছাড়ুন।

ছাড়ার জন্য তো ধরিনি।
তনুর চুলে মুখ ডুবায় মাহির। ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দেয়। তনু কেঁপে উঠে। মাহির যেন নেশায় পড়ে যায়। তনুর নেশায়। মাহির তনু কে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।ডুব দেয় তারা তাদের ভালোবাসার সাগরে।অনুর কথা এখন আর মাহিরের মন মস্তিষ্কে নেই।

.
অনুর চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে। বুকের ভেতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে।
মাহির এখন অন্য কারো হয়ে গেছে। ভাবতেই পারছে না সে। কতো সুন্দর নিখুঁত অভিনয় ছিল তার।যারা কথা দেয় তারা সবাই কথা রাখে না। ওষুধের অতিরিক্ত ডোজ যেমন মৃত্যু ঘটায় ঠিক তেমনি কাউকে অতিরিক্ত ভালোবাসলে মৃত্যুর কাঠ গড়ায় এনে দাঁড় করায়।
আচ্ছা আত্মহত্যা কেন নিষিদ্ধ?এই যে আমার মতো জ্যান্ত লাশ গুলো কে কেনো কারো চোখে পড়ছে না? আমি তো তখনই মরে গেছি যখন আপুর বরের সাজে মাহির কে দেখেছি।

আমার মাহির আজ আমার আপুর জীবনটাকে হাজারো রঙে রঙিন করে দিচ্ছে। ছুঁয়ে দিচ্ছে সেই
হাত দিয়ে যেই হাত আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখবে বলে ছিল সারা জীবন।

আচ্ছা ও কি কখনো আমাকে একটু ও ভালোবাসেনি? কেন তার শহরের মায়ায় আমাকে জড়ালো কেন?এই মায়া যে বিষাক্ত। আমার ভালো থাকাটা কেরে নিয়ে ও কী সত্যিই ভালো থাকবে?

ইয়া আল্লাহ আমার বোনকে তুমি কষ্ট দিও না। আমার বোনের সাথে যেন আমার মতো কিছু না হয়। আমার বোনটাকে তুমি সুখে রেখো আল্লাহ।
.
সকালে তনুর চুলের পানিতে ঘুম ভাঙ্গে মাহিরের।
তনুর শাড়ির আঁচলটা টান দিয়ে মাহির তনুকে নিজের বুকের উপরে ফেলে দেয়। তনুর মুখে ফুঁ দিলে তনু কেঁপে উঠে। আলতো হাতে মাহির তনুর মুখের সামানের চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল
Thank you so much bou…
এতো মিষ্টি একটা সকাল উপহার দেয়ার জন্য।

তনু লাজুক হেসে উঠতে গেলে মাহির তার কোমর আরো জোরে টান দিয়ে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।

প্লিজ ছাড়ুন। উঠে গোসল করে আসেন। একটু পরেই বউ ভাতের আয়োজন করা হবে।

আরেকটু থাকো না এই ভাবে প্লিজ।

না এখন আপনার কোনো কথাই শুনবো না আমি। একটু পরেই পার্লারের মেয়েরা এসে সাজার জন্য ডাক দিবে।

এই পার্লারের মেয়ে গুলার চাকরি খেয়ে নিবো আমি।

মাহিরের কথায় হাসতে হাসতে শেষ তনু।

.
আরে বেয়াইন সাহেবা আপনি এতো সকালে ছাদে কী করেন?

কথা টা শুনে অনু পেছন ফিরে তাকায়।নীল পাঞ্জাবী গায়ে চাপ দাঁড়িওয়ালা এক সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। দাঁত ব্রাশ করতে করতে ছেলেটি এগিয়ে আসলো অনুর দিকে।

অনুর চোখের দিকে তাকিয়ে থমকে যায় ছেলেটা।
চোখ গুলো বেশ ফুলে আছে অনুর।লাল ও হয়ে আছে। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা সারা রাতজেগে ছিল এবং প্রচুর পরিমাণে কান্না করেছে।

ছেলেটা বিষ্মিত কন্ঠে বললো
আপনি সারা রাত জেগে কান্না করেছেন কেন?

ছেলেদেরকে দেখলেই এখন ভীষণ রাগ হচ্ছে অনুর।
অনু ঝাঁজালো গলায় বলে উঠলো

আপনাকে এত কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই আমি। আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা
করবেন।
অনু ছাদ থেকে গটগট করে নিচে নেমে আসে।

.
এই যা কী এমন বললাম যে এই ভাবে রেগে গেলো? ছেলেটা দাঁত ব্রাশ করতে করতে সে ও নিচে নেমে আসলো। মেয়েদের মন বোঝা এতো সহজ না যে সেটা আজ আরও একবার জানলাম।

চলবে,,, 🍁