তার শহরের মায়া পর্ব-০৬

0
832

#তার_শহরের_মায়া😍
#পার্ট_৬
#writer_Liza_moni

বিকেলে অনুদের এলাকাটা ঘুরে দেখার জন্যে তৈরি হলো সবাই।সবাই বলতে তুর্য, মাহির,তনু আর জুঁই।অনু যাবে না বলে অনেক বার বারন করেছে তাকে না জোর করতে।

আরে বেয়াইন আপনার এলাকায় যদি আপনি না যান তাহলে কেমনে হবে বলুন তো?

আজব তো মশাই এতো বার বলতেছি যাবো না তারপর ও এতো জোর করছেন কেন?

অনু মা তুই এতো গুলো দিন পর বাড়িতে আসলি ওদের সাথে গিয়ে একটু ঘুরে আয়।মন ভালো থাকবে।

কী এমন ক্ষতি হবে বল তো অনু?আপু ও তো যাচ্ছি।

এখন যদি না যাই তাহলে এক এক জন এক এক কথা শুনাবে। আজাইরা।অনু বিরক্ত হয়ে সবার সাথে চলে গেল জায়গা টা ঘুরে দেখতে।

খাগড়াছড়ি মানেই পাহাড় পর্বত। এতো সুন্দর জায়গাটা বলে বোঝানো যাবে না। রাতে বৃষ্টি পড়ায় মাটি হালকা ভিজে আছে এখন ও।
বাইরে এসে অনুর মন সতেজ হয়ে গেল।আপন মনেই হাসতে লাগলো সে। বাতাসে অনুর খোলা চুল গুলো উড়ছে। মাহির আর তনু আগে আগে হাঁটছে। জুঁই অনুর পাশে হাঁটছে। তুর্য অনুর একটু পেছনে ছিল।সে ও চুপ করে অনুর পাশে পাশে হাঁটছে।অনু ঘাড় ঘুরিয়ে চুল গুলো কে সামনে আনতে গেলে তুর্যর মুখে বারি খায়। তুর্য সেখানেই দাঁড়িয়ে যায়। বুকের মাঝে ধক করে উঠে তার।অনু জুঁই এর সাথে কথা বলতে বলতে সামনে এগিয়ে যায়। তুর্য বা হাত দিয়ে মাথার চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে মুচকি হেসে আবার অনুর পাশে গিয়ে হাঁটতে থাকে।

সামনে একটা পাহাড় দেখে সেখানে উঠার জন্য অনুর মন টানছে।

আপনি আমার সাথে দৌড়ে এই পাহাড়ের উপর উঠতে পারবেন না বেয়াইন সাহেবা।

তুর্যর কথায় অনু তার দিকে তাকিয়ে বললো আপনি আমার সাথে পারবেন তো এই পাহাড়ে দৌড়ে উঠতে?

ওকে বাজি?

বাজি শব্দ টা শুনে অনুর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।এই ফালতু শব্দ টা আমার সামনে আর কখনো উচ্চারণ করবেন না।

তুর্য মুখটাকে বাংলার পাঁচ করে সামনে এগিয়ে গেল।

অনু আপু বাজি শব্দটায় কী আছে?

কিছু না জুঁই।

মাহির আর তনু হাসতে হাসতে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো।অনু তুর্য আর জুঁই ওদের পিছনে ফেলে সামনে চলে গেল।

অনু জুঁই এর মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে বলতে হাঁটছে। সামনে একটা গর্ততে অনুর পা পড়ার আগেই তুর্য অনুর হাত ধরে টান মারে।যার ফলে অনু তুর্যর বুকের উপর গিয়ে পড়ে। তুর্য অনু কে সহ মাটিতেই পড়ে যায়।

মাহিরের চোখ সে দিকে পড়তেই ও সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো। তনু দৌড়ে গিয়ে অনুকে ধরলো।অনু হাত ঝাড়তে ঝাড়তে তুর্যর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো আমার হাত ধরে টান দিলেন কেন আপনি?

তুর্য মাটি থেকে উঠে শার্টের ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে ভ্রু কুঁচকে বললো
সামনে তাকিয়ে দেখেন। আরেকটু হলেই গর্তে পড়ে নাক মুখ ফাটাতেন।

পড়লে পড়তাম তাতে আপনার কী?আর আপনারা ছেলেরা আমার থেকে দূরে থাকবেন। আপনাদের দেখলেই আমার রাগে গা জ্বলে উঠে। ফালতু ছেলে।সুযোগ পাইলেই মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়ার ধান্দা।

এই ভাবে বলছিস কেন তুই অনু? তুর্য তো তোর ভালোর জন্যই হাত ধরলো।

চুপ কর তুই।সব ছেলেই এক। বাটপার।

তুর্য মুচকি হেসে বললো
কথাটা একদম ঠিক বলেননি আপনি। দুনিয়ার সব মেয়েরা যেমন এক না ঠিক তেমনি সব ছেলেরা ও এক না।
সবাই বাটপারি করে না।

মাহির যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো স্তব্দ হয়ে। একটু আগের ঘটনায় কেন জানি তার কলিজায় ছেত করে উঠলো।

অনু রেগে বাড়ির পথেই হাটা ধরলো।
তুই কি করে বুঝবি মন ভাঙ্গার যন্ত্রনা? আমার ভালোবাসার মানুষকে কেড়ে নিয়ে ভালোই তো আছিস। শুধু আমার ভালো থাকাটাই কেড়ে নিছোস। বিশ্বাস ভাঙ্গে একজন।আর সেই বিশ্বাস উঠে যায় সবার উপর থেকে।
অনু মাহির কে পাশ কাটিয়ে যাবার সময় তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে হেঁটে চলে গেল।

তুর্যর খুব খারাপ লাগছে অনুর ব্যবহারে।তারা আর সামনে না এগিয়ে বাড়ির পথেই হাঁটা ধরলো।
.
অনু বাড়িতে এসে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো।রাগ হচ্ছে তার খুব। মাহির কে ইচ্ছে করছে খুন করে ফেলতে। তনু কে ও কেন জানি সহ্য হচ্ছে না অনুর।

আমার জীবন নষ্ট করে ওরা সুখে ঘর করবে কেন? কেন? কেন? কেন?
রাগের মাথায় অনু টেবিলের উপর রাখা একটা কাঁচের গ্লাস নিয়ে ফ্লোরে ছুরে মারলো।কাঁচ গুলো ভেঙ্গে সারা রুমে ছড়িয়ে পড়ে।তনু অনুর রুমে ঢুকার সময় একটা কাঁচের টুকরো তার পায়ে গেঁথে যায়।
আহ করে তনু চিল্লিয়ে উঠে।

অনু দরজার সামনে তাকিয়ে ফ্লোরে রক্ত দেখে শান্ত হয়। তনুর কাছে এগিয়ে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে টান দিয়ে তনুর পা থেকে কাঁচ টা বের করে নেয়।

তনুর চিৎকার শুনে মাহির ছুটে আসে। তনুর পা থেকে রক্ত ঝরতে দেখে তনু কে কোলে নিয়ে তনুর রুমে চলে গেল।
মা এসে অনুর উদ্দেশ্যে বলল
দিন দিন কী অসভ্য হচ্ছিস তুই? তনুর পা কতো টা কেটে গেছে দেখেছিস?

অনু কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে বসে পড়লো।মা আর কিছু না বলে তনুর রুমে চলে গেল।

উফফ কি করে ফেলছি আমি এটা? তনু আপু তো জানেই না মাহির আর আমার কোনো সম্পর্ক ছিল। রাগের মাথায় কিযে করছি উফফফ।অনু মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইল।

মাহির তনুর পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে তনু কে বিছানায় শুয়ে দিল।
তনু ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে। মাথায় তার ঘুরছে অন্য চিন্তা। সামান্য কারণে অনু রাগ করেনি।অনু কখনো এতো অল্প কিছু তে এতো রেগে যায় না। আমার বিয়ের দিন থেকেই অনুকে কেমন জানি গোল মেলে লাগছে।কিছুতো একটা হয়েছে অনুর।
.
অনু বসা থেকে উঠে ফ্লোর থেকে একটা একটা করে কাঁচের টুকরো উঠাতে লাগলো। একটা কাঁচের টুকরোর সাথে তার হাত লেগে বেশ খানিকটা কেটে যায়।
অনু পাত্তা দিলো না।

বাহির থেকে এসে রুমে যাওয়ার সময় তুর্যর চোখ পড়লো অনুর রুমের দিকে।অনুর হাত যে কেটে গেছে তা স্পষ্ট দেখতে পেল। কিন্তু কিছুই বললো না।কারন কিছু বলার বা করার অধিকার তার নেই।

অনু কাঁচ গুলো তুলে ডাস্টবিনে ফেলে দিল। হাতের রক্ত গুলো মুছে নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল।ভাল্লাগছে না তার। নিজেকে যত শক্ত করতে চাচ্ছে তত মাহিরের সামনে পড়লে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
নিজেকে শক্ত করতে হলে মাহিরের থেকে অনেক অনেক দূরে থাকতে হবে।

রাত ১০ টার দিকে মাহির তনু আর মাহিরের আব্বু আম্মু ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তুর্য আর জুঁই আজ রাতে অনুদের বাসায় থাকবে। সকালে বাবা মায়ের সাথে এসে ছিল জুঁই।অনুর মা আর যেতে দেয়নি।

তনু চলে যাবার সময় অনু তার সাথে এক শব্দ ও কথা বলেনি। চুপ করে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
.
রাত তখন প্রায় ২টা। সবাই ঘুমিয়ে গেছে।হাত থেকে অনেক রক্ত ঝরায় শরীর হালকা দূর্বল লাগে অনুর। এতো দিন রাত জাগায় চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। বাবার রুম থেকে একটা ঘুমের ঔষধ চুরি করে সেটা খেয়ে নেয় সে। না হলে আজ রাত ও তার নির্ঘুম কাটবে‌। বিছানায় শুতেই ঘুম চলে আসে অনুর। দরজা বন্ধ করতে ভুলে যায় সে।

তুর্য সন্ধ্যার দিকে ফার্মেসি থেকে ব্যান্ডেজ আর মলম কিনে নিয়ে এসেছিল।হাত কেটে যাওয়ার পর ও যে মেয়েটা সে দিকে পাত্তা দিবে না তা খুব ভালো করেই জানা হয়ে গেছে এই কয় দিনে।

তুর্য চোরের মত চার দিকে উঁকি দিয়ে অনুর রুমের দরজা খোলা আছে কিনা দেখতে থাকে। দরজা খোলা দেখতে পেয়ে তুর্য যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলো।

ধীর পায়ে অনুর রুমে ঢুকে দরজাটা হালকা টেনে দেয়। গোলাপি রঙের ড্রিম লাইটের আলোয় আবছা অনুর ঘুমন্ত মুখটা দেখে খুব মায়া হয় তার।

অনুর কেটে যাওয়া হাতটা আলতো করে ধরে মলম লাগিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ করতে গিয়ে মনে পড়লো অনু যদি সকালে উঠে হাতে ব্যান্ডেজ দেখতে পায় তাহলে বাড়ি মাথায় তুলবে। তার থেকে ভালো শুধু ঔষধ টা লাগানো থাক।
তুর্য উঠে আসার সময় অনু নড়েচড়ে উঠলো তা দেখে তুর্য এক ঢোক গিলে আস্তে আস্তে অনুর রুম ত্যাগ করলো।

চলবে,,, 🍁