তার শহরের মায়া পর্ব-০৭

0
801

#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_৭
#Writer_Liza_moni

জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তুর্য। মনটা তার হঠাৎ করে খারাপ হয়ে গেছে। ঘড়ির কাঁটা ৩ টা ছুঁই ছুঁই। ঘুম আসছে না।
কিছুক্ষণ আকাশের দিকে চুপ করে আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। কাল সকালে এখান থেকে চলে যাবে।তাই মনটা হালকা খারাপ হয়ে গেছে।

.
সকালে
আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় অনুর। কাল রাতে খুব ভালো ঘুম হয়েছে তার। আড়মোরা ভেঙ্গে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।বা হাত টা একটু নাড়তেই হাতের তালুতে একটু টান টান অনুভব করলো।

হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো কাটা জায়গা টা অনেক টা শুকিয়ে গেছে।মলম লাগানোর জন্য বুঝতে পারলো না অনু যে কেউ তার হাতে ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছে।মলমটা শুকিয়ে হাতের সাথে মিশে গেছে।

অনু ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।
অযু করে বের হয়ে নামাজ পড়ে নিলো।

ঘুমের ঔষধ খাওয়ার অভ্যাস নেই তার। কাল রাতে খাওয়ার ফলে মাথা টা কেমন ঝিমঝিম করছে। বিছানায় আবার ও শুয়ে পড়ল সে।

নয় টার দিকে তুর্য আর জুঁই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার জন্য তৈরি হয়।অনু রুমেই ছিল। সকালের নাস্তা টা ও করেনি সে।
জুঁই অনুর রুমে এসে বললো
অনু আপু আমরা চলে যাচ্ছি।(লেখনিতে লিজা মনি)

অনু শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো। জুঁই কে জড়িয়ে ধরে বললো
আবার আসি ও।

তোমাদের খুব মিস করবো।

আমি ও ।

তুর্য জুঁই কে ডাকার জন্য অনুর রুমের দরজার সামনে দাঁড়ায়।
কীরে জুঁই আয়।১০ টার দিকে আমার কাজ আছে।

আচ্ছা অনু আপু আসি। ভালো থেকো।

আচ্ছা।
জুঁই রুম থেকে বের হয়ে গেলে তুর্য অনুর উদ্দেশ্যে বললো

শুনেন মিস সব সময় হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করবেন। এই ভাবে মন খারাপ করে থাকার কি আছে?সবার বোনেরি এক দিন বিয়ে হয়ে যাবে। আপনার ও হবে। এতে এতো মন খারাপ করার কিছু নেই।বাইরে একটু বের হয়ে হাওয়া খাইয়েন। তাহলে ভালো লাগবে। বাইরের এতো সুন্দর প্রকৃতি কে উপভোগ না করে সারাক্ষণ রুমের মধ্যে বন্ধি হয়ে থাকলে মানুষের মন এমনিতেই খারাপ হয়ে যায়।(লিজা মনি)
আর সরি। আপনাকে এতো দিন অনেক বেশি বিরক্ত করেছি।এর জন্য দুঃখিত।
আসি। ভালো থাকুন।
তুর্য আর অনুর উত্তরের অপেক্ষা করলো না।চলে গেল।

অনু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুম থেকে বের হওয়ার সময় কি যেনো ভেবে আর বের হলো না।

তুর্য আর জুঁই সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
.
১১টার দিকে অনু রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে একটা চেয়ারে টেনে বসে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো
আম্মু ক্ষুদা লাগছে খাইতে দাও।

মা রান্না ঘর থেকে চিল্লিয়ে বললো
তোর ও আবার ক্ষুদা লাগে?সারা দিন রুমে দরজা বন্ধ করে রাখলেই তো পারিস।

তুমি এমন করে বললা যেনো আমি মানুষ না। কোনো রোবট। আমার যেনো ক্ষুদা লাগতেই পারে না।

মা এক প্লেট গরম ভাত এনে অনুর সামনে রাখলেন।
নে খা।

অনু হাত ধুয়ে খাওয়া শুরু করে দিল।মা পাশে দাঁড়িয়ে অনু কে পর্যবেক্ষণ করছেন। এই কয়েক দিনে মেয়েটার চেহারার অবস্থা নাজেহাল।

মা অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিগ্যেস করলেন
তোর কী হয়েছে মা? তুই তো আগে এমন ছিলি না। তোর সব কিছু টাইম টু টাইম লাগতো।আর সেই তুই এমন অগোছালো হয়ে গেছিস কেন?

মায়ের কথায় অনুর গলায় খাবার আটকে যায়। পৃথিবীতে সবার চোখে নিজের কষ্ট আড়াল করতে পারলে ও মায়ের চোখে কোনো দিন ও আড়াল করা যায় না।

অনু এক গ্লাস পানি খেয়ে মুচকি হেসে বললো
এমনিতেই আম্মু। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা তো তাই একটু টেনশনে আছি।

মা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন
আমার সাথে ও তুই মিথ্যা বলতে আসিস। আমি জানি তোর অন্য কিছু একটা হয়েছে। আমার অনু কখনো পরিক্ষা কে ভয় পেতো না।আর এই অনু কে এখন আমি চিনতেই পারি না।

তুমি যা ভাবছো তা নয় আম্মু।

আমাকে শিখাতে আসিস না। তোর বয়স টা আমি ও পার করে আসছি।শুন সব মানুষ কিন্তু জীবনে থাকার জন্য আসে না। কিছু কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের জীবনটাকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য ও আসে। মানুষ পরিবর্তনশীল।সবাই একটা সময় না একটা সময় ঠিকই পরিবর্তন হয়। তুই ও তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শিখ। নিজেকে পরিবর্তন করতে শিখ। নিজেকে এমন করে প্রতিষ্ঠিত কর আজ যারা তোকে আঘাত দিয়ে চলে গেছে তারা একদিন তোকে দেখে আফসোস করে।

অনু মন দিয়ে মায়ের সব কথা শুনছে।হাত দিয়ে প্লেটের ভাত গুলো নাড়ছে শুধু খাচ্ছে না। এই একটা মানুষ যাকে কিছু বলতে হয় না।(লিজা মনি)নিজে থেকেই সব কিছু বুঝে যায়।আর সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখায়।তাই বুঝি এই মা নামক মানুষটার এতো সম্মান দিয়েছেন মহান আল্লাহ তায়ালা নিজে।

ভুল কারো জন্য নিজের জীবন নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। ভুল সবাই করে। মানুষ মানেই ভুল। কাল তো ঢাকায় চলে যাবি?

হুম।

ঢাকায় গিয়ে মন দিয়ে পড়ালেখা করবি।পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে হবে। নিজেকে গড়তে হবে। তোর জীবনের এখন ও অনেক কিছু বাকি। খেয়ে নে। এই ভাবে নিজের ক্ষতি করে কোনো লাভ নেই। একটা কথা সব সময় মনে রাখবি
জীবনের আঘাত গুলোই জীবন কে সুন্দর করে গড়ে তোলার রাস্তা দেখিয়ে দেয়। প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়। মানিয়ে নিতে শিখ বুঝলি মেয়ে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করতে হবে।

মা আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলেন।অনু খাবার টা খেয়ে প্লেট ধুয়ে রেখে রুমে আসলো। (লিজা মনি)কাল সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবে সে।তনু অনেক করে বলে ছিল তাদের সাথে যাওয়ার জন্য। কিন্তু অনু রাজি হয়নি।

রুমে এসে নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিতে লাগলো। দরকারি সব কিছু খুঁজে বের করে ব্যাগ গুছিয়ে নিলো।
তার পর বিছানায় বসে মোবাইল এর দিকে চোখ পড়তেই অনু মোবাইল হাতে নিয়ে ভাবলো

অনেক দিন তো ফেসবুকে যাওয়া হয় না।দেখি একটু ঘুরে আসি।ডাটা অন করতেই মেসেঞ্জারে টুং টুং শব্দে মেসেজ আসতে থাকে। একটা মেসেজ চোখে পড়তেই অনু তাচ্ছিল্যা হাসলো।

মাহির তাকে মেসেজ পাঠিয়েছে।
“অনু আমি সত্যিই দুঃখিত। তোমার সাথে এমন অন্যায় টা আমি না করলেই পারতাম। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি এটা যে এতো ভয়াবহ হয়ে যাবে। আমি হয়তো তোমাকে বুঝতে পারিনি। তুমি তো আমাকে বুঝতে। আমি তনু কে সত্যি ভালোবাসি। এই কয় দিনে আমি তা বুঝেছি তনু কে ছাড়া আমার এক মুহূর্তও চলবে না। আমাদের মাঝে যা হয়েছে তা ভুলে যাও। তনু কে কখনো এই সব জানতে দি ও না প্লিজ।(লিজা মনি)যদি আমাকে ভালোবাসো তাহলে কখনো আমার সুখ নষ্ট করার চেষ্টা করো না প্লিজ। পারলে আমাকে মাফ করে দিও।”

অনু মাহিরের মেসেজের রিপ্লাই না দিয়ে ওরে ব্লক করে দিল।

চাইলেই বলতে পারি অনেক কিছু। ভুলে যাওয়া এতো সহজ নয়।মায়া কাটানো এতো সহজ বিষয় না।মে কারো মায়ায় একবার আটকে গেছে সেই বুঝবে এই মায়া জিনিস টা কতো খারাপ।

তনুরা ঢাকায় পৌঁছে মায়ের কাছে কল দিল।মা কল রিসিভ করে তনুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দিলেন।

তনু অনুর সাথে কথা বলতে চেয়ে ছিল কিন্তু অনু কাজের বাহানা দিয়ে কথা বলে নি। তনুর সাথে কথা বলতে গেলেই তনু মাহিরের প্রশংসা শুরু করে দিবে।মা অনুর একদম সহ্য হয় না।তাই তনু কে এভয়েড করার চেষ্টায় আছে অনু।

রিফা অনুকে অনেক গুলো কল টেক্সট দেওয়ার পর ও অনু রিপ্লাই করেনি।বরং রিফা কে ব্লক করে রেখেছে।অনু সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমন ঠকবাজ ফ্রেন্ডদের সাথে কোনো সম্পর্কই আর রাখবে না সে।
যাদের সে এতো কাছের মানুষ মনে করতো আসলে তারাই মে এতো বড় ধোঁকা দিবে ভুলে ও ভাবেনি সে।

পরেরদিন সকাল ৬ টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় অনু। বাসের মধ্যে জানালার পাশে না বসলে হয় না তার।তাই জানালার পাশের সিট টিকেট কেটে নিলো সে।

বাসে উঠে নিজের সিটে অন্য একটা ছেলেকে দেখে মেজাজ বিগড়ে গেলো তার। ছেলেটা জানালার ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে কিছু একটা করছে।তাই তার মুখ দেখা যাচ্ছে না।

এই যে ভাইয়া এই সিটটা আমার।কাইন্ডলি আপনি যদি আপনার সিটে গিয়ে বসতেন আর আমার সিট আমাকে দিতেন তাহলে খুব উপকার হতো।

ছেলেটা জানালা থেকে মাথা বের করে অনুর দিকে তাকাতেই অনুর চোখ গুলো বেশ বড় হয়ে গেল।
সে অবাক হয়ে বললো
আপনি এখানে কি করেন?

ছেলেটা ও অবাক হয়ে বললো আমি তো ঢাকায় যাচ্ছি একটা কাজে। আপনি ও কি ঢাকায় যাচ্ছেন নাকি?

হুম আমার ভার্সিটি তে পরিক্ষা আছে তাই যাচ্ছি।

ওহ তাহলে তো ভালোই হলো দুজনে একসাথে যেতে পারবো।

এখন আমার সিট থেকে সরুন।

তুর্য উঠে এসে অনু কে অনুর সিটে বসতে দিল।অনুর পাশের সিট টাই তুর্যর।অনু সিটে বসে যাওয়ার পর তুর্য অনুর পাশে বসতে গেলে অনু চিল্লিয়ে বলে

এই এই ভাই আপনি আমার পাশে বসছেন কেন?

ভাই ডেকে দিলো তো সব শেষ করে হায় কপাল।বিড়বিড় করে বললো তুর্য।
পকেট থেকে টিকেট বের করে অনুর দিকে বারিয়ে দিয়ে বললো এই যে চোখ খুলে হাতে নিয়ে ভালো করে দেখেন। আপনার পাশের সিট টাই আমার।

অনু বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করে বললো আবার এক ঝামেলা।সারা রাস্তায় কানের কাছে বক বক করে যাবে।উফ ভাল্লাগে না।

চলবে,,, 🍁