তার শহরের মায়া পর্ব-০৮

0
775

#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_৮
#Writer_Liza_moni

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে গাড়ি ছুটে চলছে।ডান পাশে গাড়ি ফিরাতে গেলে অনু গিয়ে তুর্যর কাঁধের সাথে বারি খাচ্ছে। ভীষণ বিরক্ত লাগছে অনুর।

তুর্য কানে হেডফোন লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে বাসের সিটের সাথে মাথা হেলিয়ে বসে আছে। মুখ তার কথা বলতে চাচ্ছে কিন্তু এখন অনু কে বিরক্ত করা যাবে না।

পরে দেখা যাবে বাসের মধ্যে চিল্লিয়ে আমাকে গন ধোলাই খাওয়াবে।তাই আপাতত কথা না বলাই ভালো।

এই যে এই,,,কানে হেডফোন থাকায় অনুর ডাক শুনলো না তূর্য।

তুর্যর কোনো রেসপন্স না পেয়ে অনু তার দিকে তাকায়। তুর্যর কানের দিকে চোখ পড়তেই ভ্রু কুঁচকে অনু।

এইটার জন্য শুনতে পাচ্ছে না। দুনিয়া উলটে গেলে ও শুনবে না।অনু বা হাত দিয়ে তুর্যর কাঁধে এক ঘুষি দিল।

অনু হাতটাকে ডলতে ডলতে বললো
বাপরে কি শক্ত। আমার হাত গেছে।

তুর্য চোখ মেলে অনুর দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকায়।

বলতেছি ঐ যে লাস্টের একটা সিট খালি আছে ঐখানে গিয়ে বসেন।বার বার আপনার গায়ের উপর পড়তে আমার ভাল্লাগে না।

কী বলছেন শুনতে পাইনি।

অনু তুর্যর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে কান থেকে হেডফোন টা টেনে খুলে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো
পেছনে একটা সিট খালি আছে।

তো?

তো সেখানে গিয়ে বসেন।

কেনো ? আমি এতো কষ্ট করে সেই সকালে এসে স্টশনে বসে ৫০ টাকা বেশি দিয়ে এই সামনের সিট নিয়েছি পেছনের সিটে বসার জন্য? আমার হাড্ডি ভাঙ্গার বুদ্ধি করেন?

আপনি এখানে বসছেন বলে আমার সমস্যা হচ্ছে। কথা টা বলার সাথে সাথেই অনু গিয়ে তুর্যর গায়ে পরলো।কারন বাস ডানে মোড় নিচ্ছিলো।

দেখছেন শুধু আপনার জন্য বার বার আপনার গায়ে গিয়ে পড়তে হচ্ছে।

যাহ বাবা আমি আবার কী করছি?গাড়ি ডানে মোড় নিলো তাই আপনি আমার কাঁধের সাথে বারি খাইছেন এতে কী আমার দোষ?

আপনারি তো সব দোষ। আপনি যদি এখানে না বসতেন তাহলে আমি কি বার বার আপনার গায়ের সাথে বারি খেতাম? শরীর তো না যেন কঠিন পাথর।

মিস অনু শুনেন আপনার যদি এতই সমস্যা হয় তাহলে আপনি গিয়ে বসেন। আমার তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

অনু মাথা টা হালকা উঁচু করে পেছনে তাকিয়ে দেখে সেখানে সব ছেলেরা বসে আছে।
তুর্য ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে ৪ টা ছেলে কে দেখে মুচকি হাসলো।
অনু মুখটাকে গম্ভীর করে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলো।

কী যান না কেন পেছনের সিটে? একবার বসলে মজা বুঝতেন। গাড়ির ঝাঁকুনি কাকে বলে।

অনু তুর্যর দিকে মুখ গম্ভীর করে এক পলক তাকিয়ে আবার জানালার বাইরে নজর দিল।

পাহাড়ি রাস্তা পার করে তিন ঘণ্টা পর বাস এসে ফেনীতে পৌঁছেছে।
এক সাইড করে বাস থামিয়ে ড্রাইবার সবাইকে ১০ মিনিটের বিরতি দিয়েছে। কিছু খেয়ে নেওয়ার জন্য।

তুর্য বসা থেকে উঠে অনুর উদ্দেশ্যে বললো কি খাবেন?

সকালে বারি থেকে কিছু না খেয়েই বেরিয়ে আসছে অনু।কারন সকাল ৬ টার দিকে তার খাইতে ইচ্ছা করেনি।আর ক্ষিদা ও ছিল না।
এখন অনেক বেলা হয়ে গেছে।প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে।

কী হলো কিছু বলছেন না যে?কি খাবেন?

খাবো না কিছু। মুখ গম্ভীর করে উত্তর দিল অনু।

তুর্য আর কিছু না বলে বাস থেকে নেমে যায়। তার ও ক্ষিদা লাগছে খুব।
তুর্য বাস থেকে নেমে অনুর জানলার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

শেষ বার জিজ্ঞেস করছি কী খাবেন? নির্ঘাত ভাইয়ের শালী বলে এতো বার জিজ্ঞেস করছি। না হলে আপনাকে এতো বার জিজ্ঞেস করতে আমার বয়েই গেছে।

আমি নিজে গিয়ে কিনে আনতে পারি হুঁ।

হ্যাঁ নামুন না বাস থেকে। তার পর কোনো পকেট মার আপনার সিটে রাখা ব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেলে বসে বসে কান্দিয়েন।
বলে তুর্য হাঁটতে থাকে।

একটু শুনুন,,,

অনুর ডাকে তুর্য পেছনে ফিরে তাকায়।

হুম বলুন।

অনু ব্যাগ থেকে ২০০ টাকা বের করে তুর্যর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো
আমার জন্য একটা বার্গার সস সহ,চার প্যাকেট তেঁতুলের চাটনি,১টা পানির বোতল,সেন্টার ফ্রুট,আর একটা দই নিয়ে আসিয়েন।

তূর্য অনুর হাতের টাকা গুলোর দিকে তাকিয়ে বললো
আমি ফকির না। আপনাকে এই সব কিছু কিনে দেওয়ার টাকা আমার কাছে আছে। আপনার টাকা আপনার নিজের কাছে রাখুন বলেই তূর্য চলে গেল দোকানের ভেতরে।

ভাব দেখলে বাঁচি না ঢং। আমার কি ঠেকা পড়ছে যে উনার টাকার কিনা কিছু খামু? আগে কিনে নিয়ে আসুক তার পর টাকা দিয়ে দিলেই হবে।

কিছুক্ষণ পর তূর্য অনুর বলা সব কিছু কিনে নিয়ে এসে অনুর হাতে দিল।

অনু জিনিস গুলো নিয়ে তূর্যর দিকে টাকা বারিয়ে দিল।

তূর্যর মেজাজ গেল বিগড়ে।
আপনাকে বলছি না আমার টাকা চাই না।তার পর ও এতো বার সাধচ্ছেন কেন বলুন তো?

দেখুন আমার কাছে টাকা থাকা সত্ত্বেও কেন আমি আপনার টাকায় খাবো?

ট্রিট দিলাম মনে করেন। ভাইয়ের শালী হিসেবে।

তূর্য আর অনুর কথার মাঝে ড্রাইবার এসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। তূর্য সিটে বসতে বসতে বললো আমি জানি আপনি ঘাড় তেরা‌। আপনার ঘাড়ের রগ জন্ম থেকেই বাঁকানো। টাকা গুলো আপনার কাছেই রাখুন আমার প্রয়োজন হলে নিয়ে নিবো।

অনু আর মুখে কিছু বললো না। মনে মনে বললো
আমার ঘাড়ের রগ বাঁকানো শালা খবিস।

তূর্য নিজের জন্য ও একটা বার্গার কিনে নিয়ে এসেছিল। এখন বসে বসে সেটাই সাবার করছে।

তূর্যর খাওয়া দেখে অনুর পেটের ক্ষুধা আর ও বেশি বেড়ে গেছে।তাই সেও বার্গার খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।

তূর্যর খাওয়া শেষ হলে অনুর উদ্দেশ্যে বলে
পানি কি দেওয়া যাবে? আসলে আমি আমার জন্য আনতে ভুলে গেছিলাম।

অনু ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে তূর্যর হাতে দিয়ে বললো
তিন ঢোকের বেশি খাবেন না। মুখ যেনো না লাগে।

আপনার স্কুলের স্বভাব তো দেখি এখন ও যায়নি।অথচ সামনে অনার্সের পরিক্ষা দিবেন।
যা বলছি তাই করেন। এতো কথা বলেন কেন?

তূর্য তিন ঢোক পানি গিলে বোতলটা অনুর হাতে দিল।অনু বোতলে পানির পরিমাণ দেখে দাঁত কটমট করে তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো তিন ঢোক গিলতে বলছিলাম।চার ভাগের তিন ভাগ না।

আমি তো তিন ঢোকি খাইছি। বেশি না।
সত্যি বলতেছি।

অনু মুখ ফুলিয়ে বাকি পানি খেয়ে নিল। অসভ্য লোক একটা।

তূর্য আবার ও কানে হেডফোন লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে সিটে মাথা হেলিয়ে দিল।অনু সেন্টার ফ্রুট একটা মুখে পুরে জানলার বাইরে তাকিয়ে ব্যাস্ত নগরী দেখছে।

কিছুক্ষণ পর তূর্য কিছু একটা মনে করে অনুর দিকে তাকিয়ে কান থেকে হেডফোন খুলে অনুর উদ্দেশ্যে বললো
আচ্ছা আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে?

তূর্যর কথায় অনুর বুকের মাঝে ধক করে উঠে।আগে যদি কেউ এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতো তাহলে অনু লাফিয়ে লাফিয়ে হ্যাঁ বলে দিতো।আর মাহিরের কেয়ারিং এর প্রশংসা করে যেতো।

আসলে মাহির এতো প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য না।এই যোগ্যতা তার নেই।যা ছিল সব লোক দেখানো।

অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
নেই।

কেন? এতো সুন্দর একটা মেয়ের বয় ফ্রেন্ড থাকবে না বিশ্বাস হচ্ছে না।

নেই মানে নেই। বিশ্বাস করবেন নাকি করবেন না সেটা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।

মানলাম আপনার এখন কোনো ভয় ফ্রেন্ড নেই। কিন্তু প্রাক্তন প্রেমিক কি নেই?

ছিল।

ওহ।ব্রেক আপ করছেন কেন? ছেড়ে দিয়েছেন?

ছেড়ে গেছে।

কিসের জন্য?

এতো কিছু জেনে আপনি কি করবেন?

না এমনি জানতে চাইলাম।

অনু আর কিছু বললো না। চুপ করে রইলো।

ঢাকায় গিয়ে কী নতুন ভাবির কাছে যাবেন?

অনু তূর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল
না। আমার মেসে আমি উঠবো। আপনি যাবেন নাকি?

এখান থেকে গিয়ে ওদের বাড়িতে যাবো।রাত থেকে সকালে নিজের ফ্ল্যাটে চলে যাবো।না হয় এখান থেকে গিয়ে রান্না করতে হবে।

ওহ ভালো। আচ্ছা আপনি কি কাজ করেন?

তূর্য মুচকি হেসে বললো তেমন কিছু না। অন্য একদিন বলবো।

অনু আর কিছু বললো না।

.
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তূর্য আর অনু ঢাকায় এসে পৌঁছায়।বাস থেকে নেমে তূর্য একটু সামনে এগিয়ে যায় কোনো সি এন জি পায় কিনা দেখতে।

অনু কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে পেছনে তাকিয়ে বললো এই সময় একা এখানে না দাঁড়িয়ে থাকলে কি হয় না? আমার সাথে আসলে কি আমি আপনাকে খেয়ে ফেলবো?

অনু মুখ ফুলিয়ে তূর্যর পেছনে পেছনে হাঁটতে থাকে। তূর্য একটু পিছিয়ে অনুর পাশে গিয়ে হাঁটতে থাকে।

আমার সাথে যখন এক গাড়িতেই আসছেন তখন আপনাকে নিরাপদ ভাবে আপনার গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার আমার দায়িত্ব।তাই পিছু পিছু না হেঁটে পাশাপাশি হাঁটেন।

একটু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ তূর্য একটা সি এন জি ভাড়া করে।

ভাইয়া মিরপুর যাবেন?

হ ভাই যামু।

কিন্তু আমি তো ধানমন্ডি ১১ এ যাবো।

ওহ আচ্ছা। ভাইয়া ধানমন্ডি যাবেন?

ভাড়া বেশি ৫০ টাকা বেশি দিতে হইবো।

আচ্ছা ঠিক আছে।এই যে মিস উঠুন।

অনু উঠে বসে। সাথে তূর্য ও।
.
ধানমন্ডি পৌঁছানোর পর তূর্য সি এন জি থেকে অনুর ব্যাগ বের করে দিয়ে মুচকি হেসে বললো
ভালো থাকবেন।আর একটু হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করবেন। নিজের খেয়াল রাখবেন আসি।
বলে তূর্য পেছনে ফিরে হাঁটা ধরলো।

অনু কিছু একটা ভেবে তূর্য কে ডাক দিল।

এই যে শুনুন,,,

তূর্য পেছনে ফিরে মুচকি হেসে বললো
হুম বলুন।

ধন্যবাদ।

তূর্য মুচকি হেসে বললো
ধন্যবাদের কিছু নেই। এই টা আমার কর্তব্য। আপনাকে নিরাপদ ভাবে পৌঁছে দেওয়া। ভালো থাকুন আল্লাহ হাফেজ।

চলবে,,,, 🍁