তার শহরের মায়া ২ পর্ব-১৮

0
618

#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_১৮
#Writer_Liza_moni

পশ্চিমাকাশে সূর্য অস্ত গিয়েছে। সন্ধ্যার আকাশ লাল, কমলা নীলের মিশ্রনে ছেয়ে গেছে। শহরের প্রত্যেকের ফ্লাটে আলো জ্বলে উঠলো। গাড়ির হর্নে মুখরিত চার পাশ।রাস্তার পাশের রেস্তোরাঁ গুলোয় ও মানুষের হইচই।সবাই সবার মতো ব্যস্ত।বাড়ি ফেরার তাড়া অনেক এর। রাত নেমে আসছে বলে কথা।কাক গুলো কর্কশ গলায় কা কা করে উড়ে যাচ্ছে নিজ ঠিকানায়।চার দিক থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে ওঠে। এইদিকে রাস্তায় আবার জ্যাম বাঁধলো। তূর্য আর অনু বাইকে বসে অপেক্ষা করছে জ্যাম ছাড়ার। পাঁচ মিনিট আগেই অনু তূর্যদের বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। তূর্যর মা তো অনু কে আজ কিছুতেই যেতে দিতে চাইছিলেন না। মেয়েটাকে বড্ড মনে ধরেছে তার। তিনি বুঝে উঠলেন না,এত মিষ্টি একটা মেয়ে কে কী করে উনার ছেলে ইগনোর করে?
অনু কে কত করে সাধলো আজ তার কাছে থেকে যেতে।মা বাবা কে ফোন করে কথা বলবেন তিনি। তার এই কথা শুনে অনু বসা থেকে উঠে অসহায় দৃষ্টিতে তূর্যর দিকে তাকাচ্ছিলো।ভুলি ভালিয়ে অনেক কষ্টে তূর্য তার মাকে ম্যানেজ করে।
না থাকলে নাই, অন্তত ডিনার টুকু করে বাড়ি ফিরলে খুশি হতেন তিনি।
তূর্যর জন্য আজ কত গুলো মিথ্যা কথা বলতে হলো অনু কে।ডিনারের কথা শুনেই অনু বলে ছিল,
তার মা বাবা তাকে ছাড়া খায় না। মিসেস তৃনা মানতে নারাজ। বেশি রাত করে মেসে ফেরা যাবে না। কী থেকে কী ভাববে মানুষ তা ভাবতেই খারাপ লাগে অনুর।না হলে এত বলার পর ও অন্তত ডিনার না করে সে আসতো না। জুঁই নামক মেয়েটাকে বেশ লেগেছে অনুর।সেতো মনে মনে ভেবেই ফেলেছিল। তার যদি একটা ভাই থাকতো তাহলে জুঁই কে তার সাথে বিয়ে দিয়ে দিত।বেশ মিশুক প্রকৃতির মেয়েটা।অল্প সময়ের মধ্যে কেমন আপন করে নিয়েছিল।কী সুন্দর করে ডাক ছিল মেঘ আপু করে।

জ্যাম ছেড়ে দিলো। তূর্য বাইক চালানো তে মন দিল। দুই জনের মধ্যেই নিরবতা বিরাজ করছে।কেউ কোন কথা বলেনি বাইকে উঠার পর। নিরবতা ভেঙ্গে অনুই বললো,

আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

তূর্য ছোট্ট করে উত্তর দিলো, হুম,,

আপনার বড় ভাই আর আব্বু কে তো দেখলাম না।
তূর্য অনুর কথা শুনে দুষ্টুমি করে হেসে বললো, আমার বড় ভাই কে কেন মিস পরমানু?প্রেম টেম করবেন নাকি? অবশ্য আমার ভাইয়া সিঙ্গেল আছে।মেয়ে দেখা হচ্ছে বিয়ের জন্য। আপনি যদি চান তাহলে আমি আপনার কথা আমার মাকে বলবো।

তূর্যর কথা শুনে অনু রেগে গিয়ে ওর পিঠে একটা কিল মেরে বললো,
আমি কী এই সব কথা জিজ্ঞেস করেছি আপনাকে?এত নেগেটিভ ভাবে নিলেন কেন আমার কথা?

পজেটিভ কথায় আমার এলার্জি আছে তো তাই।

শুনেন আমি এমনিতেই জিজ্ঞেস করেছিলাম। দেখি নাই বলে।দেখলে তো আর জিজ্ঞেস করতাম না।

কেন?দেখলে কী সোজা গিয়ে আমার ভাইকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিতেন নাকি?

আপনার সাথে কথা বলাটাই বেকার। বিরক্ত হয়ে কথাটা বলে রাস্তার দিকে তাকালো অনু।
তূর্য ঠোঁট কামড়ে হাসলো।মেয়েটা কে রাগীয়ে দিতে পারলে কেমন যেন ভালো লাগা কাজ করে মনের ভেতর। কিছুক্ষণ পর তূর্য আবার নিজ থেকেই বললো,
আব্বু তখন সামনের একটা টং দোকানে তার বয়সি মানুষদের সাথে বসে চা খাচ্ছিলেন।আর ভাইয়া অফিসে ছিল।ভাইয়া অফিস থেকে রাত করেই বাড়ি ফেরে।

এখন আর আমি এসব শুনতে চাইনি।মুখ বাঁকিয়ে বললো অনু।

হুঁ আপনি তখন শুনতে চেয়ে ছিলেন তাই এখন শুনিয়ে দিয়েছি।হি হি হি। একটু ফান করে ছিলাম তখন।এত রেগে যান কেন বলুন তো?

মেসের সামনে চলে আসছি।থামুন এখানে,,,
তূর্য বাইক থামাতেই অনু বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালো।তার পর তূর্যর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো, আমার রাগ আছে তাই রেগে যাই।আর এমন কথাটা আমার পছন্দ হয়নি।

তূর্য হাসলো। ঠোঁটের কোণে হাঁসি রেখেই আবার ও বললো, আমার ভাইয়া কিন্তু অনেক জোশ।দেখতে বেশ সুন্দর। কোঁকড়ানো চুল গুলোর জন্য দেখতে আরো কিউট লাগে।

এই শুনেন,
আমি আপনার কাছে আপনার ভাই দেখতে কেমন তাঁর বর্ণনা শুনতে চাইনি। ঝগড়া করার মুড নাই।তাই ঝগড়া করলাম না।আসছি,,
অনু মেসের গেটের ভেতরে ঢুকতে যাবে এমন সময় আবার ও পেছনে ফিরে তাকালো।
তূর্য ততক্ষণে বাইক স্টার্ট দিয়ে দিয়েছে।

অনু নরম গলায় তূর্য কে ডাকলো,
শুনুন,,
তূর্য প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে অনুর দিকে ইশারা করলো কী হয়েছে?

অনু মুচকি হেসে বললো, সাবধানে যাবেন। বেশি জোরে বাইক চালাবেন না। বেশি জোরে বাইক চালালে দেখা যাবে কোন দিন পটল তুলতে চলে গেছেন।

মরে যাওয়ার জন্য কী দোয়া করছেন নাকি? এমন দোয়া করবেন না। এখন ও বউ এর মুখটা দেখি নাই।

বিয়ে পাগল ছেলে। মুচকি হেসে অনু ভেতরে চলে গেল। তূর্য ও বাইক ঘুরিয়ে চললো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে।
.
.
মেসে এসে অনু ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসলো।চারটে সিঙাড়া আর দুই কাপ চা নিয়ে রিয়ানা ও বসলো অনুর সামনে।অনু মোবাইল হাতে নিয়ে মুচকি হেসে রিয়ানার দিকে তাকালো।রিয়ানা অনুর হাতে এক কাপ চা ধরিয়ে দিয়ে সিঙাড়ায় কামড় বসাতে বসাতে বললো কত দিন ধরে চলছে এই সব?আর বয় ফ্রেন্ড কে কী কেউ আপনি আপনি বলে? ছেলেটা ও দেখলাম তোমাকে আপনি আপনি করে বলছে। ওহ বুঝেছি নতুন নতুন তো তাই।আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

অনু বুঝতে না পেরে বললো,মানে?কী বলো এই সব?

মানে বুঝো না খুকি। আমাকে বললে কী আমি তোমার ঐ হ্যান্ডসাম কে কেড়ে নিতাম নাকি?

ওহ আচ্ছা। তুমি তূর্যর কথা বলছো।আরে ও সব কিছু না।we are just friend…

আচ্ছা তাই নাকি? বিশ্বাস হচ্ছে না।
তোমাকে ঐ দিন বলছিলাম না যে, আমি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম আর একটা ছেলে আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেলো।এটা সেই ছেলে।

ওহ আচ্ছা। বুঝতে পারছি।তা আজ হঠাৎ ওই ছেলের সাথে ওর বাড়িতে গিয়েছিলে কেন?

অনু চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে রিয়ানা কে সব বললো।অনুর কাছে পুরো কাহিনী শুনে রিয়ানা হাসলো।হাসি থামিয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে বললো,
ছেলেটা কিন্তু দেখতে আসলেই সুন্দর।চাপ দাঁড়ির জন্য আরো বেশি হ্যান্ডসাম লাগে।

নজর দিও না।অন্যের আমানত।

হুম।আমানত আবার খেয়ানত হবে।কার জামাই হবে আল্লাহ জানেন।

অনু মুচকি হেসে চায়ের কাপ রেখে মাকে ফোন করলো। দুই বার রিং হতেই ওপাশ থেকে মায়ের কন্ঠ শুনতে পেয়ে মনটা কেমন চঞ্চল হয়ে উঠল অনুর। কিছু দিন ধরে বাড়িতে তেমন সময় দেওয়া হয় না। ফোন করা হয় না।মা বাবা করলে ও দুই চারটা কথা বলে আবার কল কেটে দিতো।

কেমন আছো আম্মু?

এই তো ভালো। তুই কেমন আছিস? এখন ভালো। কিন্তু গতকাল ভালো ছিলাম না।

সেকি কেন?
কী হয়েছে তোর? শরীর ঠিক আছে তো? নিশ্চয়ই খাওয়া দাওয়া করিস না। আইস্ক্রিম খাইছিস তুই?গলা ব্যাথা করছিলো?

আরে আম্মু এত বেশি বুঝো কেন? আমাকে তো বলতে দিবা নাকি?

আচ্ছা বল। আমি চুপ করলাম।যদি খারাপ কিছু শুনি তাহলে ঢাকায় গিয়ে তোকে ঠাসস ঠাসস করে চড় দিবো দেখিস।

ওহ মেরি মা,, চুপ যাও না।আমাকে বলতে দাও।

আচ্ছা বল,,
তারপর অনু রক্ত শুন্যতার কথা এবং ডাক্তার যা যা বলছে সব কিছু বললো মাকে।অনুর সব কথা শুনে তো মিসেস আফরোজা রেগে বোম। তিনি পারছেন না অনু কে ঠাঁটিয়ে কয়কটা চড় মারতে।

তোর দোষেই তোর এমন হইছে।খাবি না ঘুমাবি না। এমন তো হবেই।শাক সবজি খায় না।ফলের আশে পাশে ও তো যাস না।ঠিক মতো খাবার খাইতে তোর আলসেমি।জোর করে ও তোকে এক গ্লাস এর অর্ধেক পানি ছাড়া বেশি পানি খাওয়ানো যায় না।শরীরে ভিটামিন বলতে কিছু আছে?
কোন মেয়ে টা তোর মতো এর চিকন আমাকে বল তো?দেখা তো আমাকে?

ঐ যে আমাদের বাড়ির পাশের মাঠটার শেষ প্রান্তে যে গ্রামটা আছে না? সেখানের একটা মেয়ে আছে তুমি তো চিনবা,জোনাকি নাম মেয়েটার।ও তো আমার থেকে ও চিকন।

গাল ফাটাই ফেলবো তোর।খালি আমি হাতের কাছে পাই।মুখে মুখে তর্ক কর শিখে গেছিস তাই না?

এই যা,,মুখে মুখে তর্ক করলাম কখন? তুমি নিজেই তো বললে আমার থেকে ও চিকন একটা মেয়ে কে তোমাকে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য।

তোকে তো আমি,,

অনু তড়িগড়ি করে কল কেটে দিয়ে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে রিয়ানার দিকে তাকিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,,
মায়ে রা এমন কেন?

চলবে,,,,,