তিক্ততার সম্পর্ক পর্ব-১০

0
1768

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ১০

আরমানের নিজেকে পাথর ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না। এক পা আগাতে বা পিছাতে পারছে না সে।

আরমান নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো, আমি তো ইমাকে কখনো ভালোবাসিনি। তাহলে কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে বুকের বা পাশটায় ? গলাও কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে কেনো হচ্ছে এমন ? ইমা তো আমার কাছে শুধু মাত্র একটা জেদ ছিলো। তবে কী এটা হেরে যাওয়ার কষ্ট নাকি প্রিয় কিছু হারিয়ে যাওয়ার কষ্ট, কোনটা ?

স্যার আমার দেরি হইতাছে ভাড়াটা দেন।

ট্যাক্সি ড্রাইভারের বিরক্তি ভড়া কণ্ঠে বলা কথায় আরমানের হুশ ফেরে। কাঁপা হাতে নিজের প্যান্টের পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে গাড়ি ভাড়া দিলে সে চলে যায়। আরমান ওয়ালেটটা নিজের পকেটে রেখে হাতটা সামনে এনে ধরলে অবাক হয়ে যায়। আরমানের হাতটা বিরামহীন কাঁপছে। আরমান ধীর পায়ে গেট ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো। সারা বাড়ি নানা রকম আলোয় ঝলমল করছে। আরমানের রেগে যাওয়া উচিত ছিলো, উচিত ছিলো সব ধ্বংস করে দেওয়া। কিন্তু তার একটুও রাগ হচ্ছে না বরং মনে হচ্ছে বুকের উপর কেউ পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে ৷ সেটা দেখে সে নিজেই অবাক হয়ে গেলো। ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই তাকে দেখে কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো মিস্টার আমিনুল মাহমুদ আর তার স্ত্রী ছাহেরা বেগমের। এই সময়ে ছেলেকে তারা একদমই আশা করেননি। এতো মেহমানের সামনে যদি সিনক্রিয়েট করে তাহলে তারা তাকে সামলাতে পারবে না। মিসেস ছাহেরা বেগম ভয়ে বারবার ঢোক গিলছে ছেলের সামনে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না তার। আরমান চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সবাই উপস্থিত এখানে। বরের দিকে তাকালে তাকে চিনতে একটুও কষ্ট হলো না আরমানের। দেশের বিজনেস আইকন আবরার হামিদ ইয়াদ আর তার পাশে বসে আছে আরমানের স্টুডেন্ট ইশান হামিদ। কাজি সাহেব কবুল বলতে বললে ইয়াদ গম্ভীর গলায় কবুল বলে দেয় তারপর রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দেয়।

সাইন করতে করতে ইয়াদ মুচকি হেঁসে মনে মনে বলে, Welcome to hell Mrs Abrar Hamid Yad.

বিয়ে পড়ানো সম্পন্ন হলে সবাই মোনাজাত ধরলে আরমান সেদিকে একবার দেখে পা বাড়ালো ইমার রুমের দিকে। দরজা ঢেলে ভেতরে ঢুকতেই রুমের সবাই মোনাজাত শেষ করে তাকালো আরমানের দিকে। আরমানকে দেখে ইমার কলিজা শুকিয়ে গেলো। অন্যদিকে আরমানকে দেখে চোখ বড়বড় করে ফেললো ইয়ানা। একবার আরমানের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার ইমার দিকে তাকাচ্ছে।

ইয়ামা ভাবছে, আরমান স্যার এখানে আর ইমা ভাবির দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো ?

নামটা উচ্চারণ করে থেমে যায় ইয়ানা বড়বড় চোখ করে তাকায় ইমার দিকে। আরমানের ভয়ে ইমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে।

ইয়ানা অবাক চোখে ইমার দিকে তাকিয়ে ভাবলো, তবে কী এই সেই ইমা ? আমি কী তাহলে কোনো ভুল করতাম ভাইয়ার সাথে ইমার বিয়ে দিয়ে। কিন্তু ভুল কেনো হবে আরমান স্যার বা ইমা কেউ তো কাউকে ভালোবাসে না তাহলে ভুল কেনো হবে ? তবে স্যারের দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে স্যার ইমাকে ভালোবাসে আর ইমার দৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে ভয়।

ইয়ানা দুজনের দৃষ্টি দেখে দোটানায় পড়ে গেলো। তবে আরমানের চোখে ইমার জন্য ভালোবাসা দেখে ইয়ানার কেনো যেনো ভালো লাগছে না কষ্ট হচ্ছে ইয়ানার।

কথা আরমানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো, ভাইয়া তোমার তো আরো দুদিন পরে আসার কথা ছিলো আজ চলে এলে যে ?

আরমান থমথমে গলায় বললো, ভুল সময়ে চলে এসেছি মনে হয়। তাই না রে কথা ?

কথা অবাক হয়ে বললো, কী বলছো ?

আরমান আর কিছু না বলে ইমার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

ইয়ানা বললো, ভাবি আরমান স্যার তোমাদের বাড়িতে কেনো ?

ইমা প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলো আরমানকে দেখে তাই ইয়ানার প্রশ্নে চমকে উঠলো কিন্তু উত্তর দিতে পারলো না।

তা দেখে কথা বললো, এটা আরমান ভাইয়ার বাড়ি তাই সে এখানে।

ইয়ানা অবাক হয়ে বললো, মানে ?

কথা ইয়ানার পাশে গিয়ে বসে বললো, মানে হচ্ছে আরমান ভাইয়া আমার আপন বড় ভাই আর ইমা আপু খালাতো ভাই।

কথাটা শুনে রিকু ছাড়া সবাই অবাক হয়ে গেলো। তারা বুঝতে পারছে না ইমা আরমানের খালাতো বোন সেটা ভার্সিটিতে হাইড কেনো করেছে ?

ইমা চুপচাপ বসে আছে। আরমান তাকে কোনো রকম অপমান না করে চুপচাপ চলে গেলো ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না ইমার। কারণটা খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো ইমা

হ্যালো গাইস।

ইশান রুমে ঢুকে সবাইকে হ্যালো বললে সবাই তার দিকে তাকায়। ইশান কথাকে দেখে অবাক হয়ে যায় তবে কথার তেমন রিয়াকশন নেই সে ইশানের দিকে তাকাচ্ছেও না। কারণটা ইশান বুঝতে পারলো না।

ইশান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো, ভাইয়া তোকে ডাকছে আপু।

ইয়ানা বললো, আমাকে কেনো ডাকছে ?

ইশান বললো, তুই এসে থেকে যে ভাবির কাছে বসেছিস আর উঠিসই নি। ভাইয়া কিছু বলবে হয়তো তোকে চল।

ইয়ানা কথা না বাড়িয়ে রুমের বাইরে চলে গেলো আর ইশান কথার দিকে একবার তাকিয়ে সে নিজেও চলে গেলো।

ইয়ানা ইয়াদের পাশে গিয়ে বসে বললো, ভাইয়া তুমি আমাকে ডাকছিলে ?

ইয়াদ থমথমে গলায় বললো, এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি পারিস যাওয়ার ব্যবস্থা কর আমি উঠে চলে গেলে সেটা নিশ্চয় ভালো হবে না।

ইয়ানা অবাক হয়ে বললো, ভাইয়া এটা কেমন কথা কেবল বিয়ে শেষ হলো এখনই,,,,,?

ইয়াদ রেগে বললো, দেখ ইয়ানা বিয়ে করতে বলেছিস বিয়ে করেছি। ভাবি চেয়েছিস পেয়ে গেছিস এখন আমি যেটা বলছি সেটা কর নাহলে আমি একাই চলে যাচ্ছি তোরা পরে আসিস।

ইয়ানা বললো, ওকে ওকে রাগ করো না আমি দেখছি কী করা যায়।

ইয়াদ বসে বসে রাগে ফুসফুস করছে। শুধু নিজের বোনের দিকে তাকিয়ে এসব মেনে নিচ্ছে ইয়াদ নাহলে কখন এখান থেকে উঠে চলে যেতো।

সবার থেকে বিদায় নিয়ে ইমা গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে কথা আর ইয়ানা। গাড়িতে উঠার আগে কথাকে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিরবে চোখের পানি ফেললো ইমা আড়চোখে তাকালো দূরে দাঁড়িয়ে থাকা নিজের জন্মদায়িনী মায়ের দিকে। ইমার মা আর নানু ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে আর ছাহেরা বেগমের ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি। আরমান নিজের রুমের বেলকনি থেকে দাঁড়িয়ে সব দেখছে। যন্ত্রণাটা এতোক্ষণে যেনো আরো তীব্র রুপ ধারণ করলো। মনে হচ্ছে বুকের ভেতর থেকে হৃদপিণ্ড যেনো কেউ টেনে ছিঁড়ে বার করে নিচ্ছে। আরমানের চোখ ঝাপসা হয়ে এলে আরমান চোখ হাত দিয়ে বুঝতে পারলো চোখ ভিজে গেছে পানিতে। আরমান হাতটা সামনে এনে হাতে লাগা পানির দিকে অবাক হয়ে তাকালো।

আরমান বিড়বিড় করে বলে উঠলো, আমি তো ইমাকে ভালোবাসি না তাহলে আমার কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে ওকে অন্যকারো হতে দেখে। তবে কী প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ভালোবেসে ফেলেছি ওকে ? কিন্তু ও তো এখন অন্যকারো স্ত্রী এখন আর আমার বিন্দু মাত্র অধিকার নেই ওর উপর।

কথাগুলো ভাবতেই আরমানের চোখ থেকে শ্রাবণ ধারা বয়ে যেতে লাগলো। আরমান তাকিয়ে দেখলো ইমা গাড়িতে উঠে গেলো। আজ ইমাকে দেখতে পরীর মতো লাগছে একেবারে লাল টুকটুকে বউ।

আরমান আর দাঁড়াতে পারলো না বেলকনিতে নিজের রুমে এসে বেডে শুয়ে পাড়লো। এসে ফ্রেশও হয়নি সেভাবেই আছে। এখন একটা সিগারেট না হলে থাকা সম্ভব নয়। আরমান হন্তদন্ত হয়ে খোঁজে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে একের পর এক সিগারেট শেষ করতে লাগলো আর না চাইতেও চোখের নদী ঠিক বয়ে চলেছে।

১৪.
ইমা আসার সময় কান্না না করলেও এখন গাড়ি চলতে শুরু করলে তার প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। এই বাড়িতে এতোগুলো বছর কাটিয়েছে সে, কত তিক্ততার অভিজ্ঞতা এই বাড়ির আনাচে কানাচে জড়িয়ে আছে সাথে আছে গুটি কয়েক সুখের স্মৃতি। কথা আর নানু ছাড়া সুখের স্মৃতিতে আর কারো অস্তিত্ব খোঁজে পায় না ইমা।

নাক টানার আওয়াজে বিরক্ত হয়ে ইয়াদ ফোন থেকে চোখ সরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখলো তার সয্য বিবাহিতা স্ত্রী কাঁদছে। লম্বা ঘোমটা টানা তাই মুখ দেখা যাচ্ছে না। ইয়াদের ইচ্ছে করছে এখানে নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে কিন্তু এখন সেটা সম্ভব না আর মেয়েটার সাথে একটা কথা বলারও বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই ইয়াদের তাই কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে লাগলে সিটে হেলান দিয়ে। ইমারও হেলদোল নেই পাশের মানুষটা কী করছে তা নিয়ে। সে বাইরের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে ব্যস্ত। ইমা ভেবেছিলো তার বর তাকে কিছু বলে অন্তত সান্ত্বনা দিবে সে আড়চোখে পাশে তাকিয়ে দেখতে পেলো ইয়াদ সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। আজ সত্যি ইয়াদকে অনেক বেশি হান্ডসাম লাগছে দেখতে। ইমা লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো ইয়াদের থেকে। বিশ মিনিটের মধ্যে ইয়াদদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো। ইমা অবাক চোখে তাকালো বাড়িটার দিকে। এটা তার কাছে বাড়ি নয় বরং রাজপ্রাসাদ মনে হচ্ছে। ইমা ভয়ে এক ঢোক গিলে নিলো এতবড় বাড়িতে সে মানিয়ে নেবে কেমন করে ? আর এতোবড় বাড়ির মানুষগুলো কেমন হবে সে নিয়েও ভয় পাচ্ছে। গেইট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে গাড়ি থামতেই ইয়াদ এক সেকেন্ড ওয়েট না করে গাড়ির দরজা খোলে বের হয়ে গেলো। ইমা তার দিকে অবাক চোখে তাকালো সারা রাস্তা একটা শব্দ উচ্চারণ করেনি এখন আবার এমন করে চলে গেলো।

ইমা ভাবছে, উনি নিজের ইচ্ছেতে বিয়েটা করেছে তো নাকি কোনো চাপে পরে করেছে।

কথাটা ভাবতেই ইমা অজানা ভয়ে কেঁপে উঠলো। যদি ইয়াদ তাকে বাধ্য হয়ে বিয়ে করে থাকে তাহলে তার কাঁপালে যে ভালো কিছু অপেক্ষা করছে না ইমা সেটা ভালোই বুঝতে পারছে।

এসব চিন্তার মাঝেই ইয়ানা এসে বললো, চলো ভাবি তোমাকে ভেতরে নিয়ে যাই।

ইমা চমকে তাকালো ইয়ানার দিকে। মেয়েটা বয়সে তার সমান হবে কিংবা বড়। সেই প্রথম থেকে তাকে ভাবি ভাবি কেনো বলছে ইমা সেটা বুঝতে পারছে না। নতুন বউ বেশি কথা বললে খারাপ বলবে তাই জিজ্ঞেসও করতে পারছে না। ইমা চিন্তা ভাবনা সাইডে রেখে ইয়ানার সাথে ভেতরে গেলো তার দৃষ্টি নিচের দিকে। রুবিনা কবির ছেলের বউকে হাসি মুখে বরণ করে ঘরে তুললো। ইমার দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি দিচ্ছে সে। ইমাকে ড্রয়িংরুমে সোফায় বসিয়ে দেওয়া হলো। সবাই নতুন বউ দেখতে ব্যস্ত। এদিকে ইয়াদ নিজের রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে শাওয়ার নিতে চলে গেলো। শাওয়ার নিলো অনেকটা সময় নিয়ে যাতে মাথাটা একটু ঠান্ডা হয়। শাওয়ার শেষে বের হলে নিজের রুমের দিকে খেয়াল করলো ইয়াদ। তখন মাথা গরম ছিলো তাই কোনোদিকে না তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে গিয়েছিলো। এখন সারা রুমে একবার চোখ বুলিয়ে রহস্যময় হাসলো ইয়াদ।

আজকের রাতটা তোমার জন্য দিয়ে গেলাম মিসেস আবরার হামিদ ইয়াদ। আগামীকাল সকাল থেকে শুরু হবে তোমার নতুন জীবন। যে জীবনে না তুমি কখনো শান্তি পাবেন আর না পাবে কখনো মুক্তি।

ইয়াদ একটা কালো জিন্স প্যান্ট আর ধূসর রঙের টিশার্ট পরে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো গাড়ির চাবি নিয়ে আর সবাইকে উপেক্ষা করে বের হয়ে গেলো বাসা থেকে। ইমাকে বড্ড ক্লান্ত লাগছে দেখতে তাই ইয়ানা তাকে নিয়ে ইয়াদের রুমে চলে এলো। ওয়াশরুম দেখিয়ে দিয়ে বললো ফ্রেশ হয়ে নিতে। ইয়াদের রুমে ইয়ানা আর মিসেস রুবিনা ছাড়া এই প্রথম অন্য কোনো নারীর পা পড়লো। ইয়ানা ইমাকে রেখে চলে গেলো। ইয়ানা চলে যেতেই ইমা রুমটা দেখতে লাগলো ঘুরে ঘুরে। অনেকটা বড় এই রুম, বেডটা নানা রঙের ফুল দিয়ে সাজানো, বেডের পাশে একটা সাইড টেবিল আর তারপর বড একটা সোফা, বেডের অন্যপাশে ড্রেসিংটেবিল, একটা বড় কাবার্ড আর বুক সেলফ, অন্যদিকে দুটো দরজা একটা ওয়াশরুমের অন্যটা ইমার মনে হলো হয়তো বেলকনির হবে। সারা রুম জুড়ে ফুলের সুভাষ ম-ম করছে। সেই সুভাষ ইমার মনে অন্য এক অনুভূতির সূচনা করছে। একটু ভালোলাগা, কিছু কৌতূহল আর অনেকটা ভয়।

এ কী ভাবি তুমি এখনো ফ্রেশ হতে যাওনি ?

ইয়ানার কথায় ইমা ঘুরে তাকালো দরজার দিকে থতমত খেয়ে বললো, না মানে রুমটা,,,,

ইয়ানা বললো, এখন থেকে এখানেই থাকতে তাই রুম পরেও দেখতে পাবে এখন ফ্রেশ হয়ে আসো আর আমি খাবার নিয়ে এসেছি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিবে কেমন ?

ইমা বললো, আমার খিদে নেই।

ইয়ানা গম্ভীর গলায় বললো, দেখো ভাবি সম্পর্কে তুমি আমার থেকে বড় হলেও বয়সে আমার এক বছরের ছোট তুমি। তাই আমার কথা শুনতে হবে তোমাকে আর তাছাড়া আমি হলাম আমার ভাইয়ার প্রাণ তাই আমার কথা না শুনলে ভাইয়া তোমাকে আস্ত রাখবে না।

ইয়ানার কথা শুনে ইমা বুঝতে পারলো ইয়ানা ইয়াদের বোন তবে ইয়ানার হুমকিতে ইমা ভয়ে ঢোক গিললো। আর তা দেখে ইয়ানা হা হা করে হেঁসে উঠলো আর ইমা অবাক হয়ে তাকালো।

ইয়ানা বললো, ভাবি তুমি একটু বেশি সহজসরল কিন্তু সেটা হলে যে এই বাড়িতে মানিয়ে নেওয়া তোমার কষ্ট হয়ে পড়বে। আজ আর কিছু বলে ভয় পাইয়ে দিবো না আগামীকাল অনেক গল্প করবো এখন তুমি ফ্রেশ হয়ে এসে খেয়ে নাও ভাইয়া আসলে আমি রুমে পাঠিয়ে দিবো।

ইয়ানার শেষের কথা শুনে ইমার অদ্ভুত শিহরণ খেলে গেলো সারা গায়ে। ইয়ানা চলে গেছে দেখে ইমা নিজের লাগেজ থেকে একটা নরমাল শাড়ী বের করলো মেজেন্ডা কালারের। শাওয়ার নিয়ে শাড়ীটা পড়ে নিলো ইমা। রুমে এসে দেখে ইয়াদ এখনো আসেনি তাই খাবার মুখে দিলো। খাওয়া শেষে ইমা উঠে দাঁড়ালো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত বারোটা বাজে। ইমার ভয় করতে শুরু করলো একটু পরই হয়তো ইয়াদ রুমে আসবে কী হবে তখন কে জানে। আবার কোন পরিস্থিতিতে পরবে ইমা সেটা ভাবছে। কেমন হবে ইয়াদ সেটা ভাবতে ভাবতেই সোফায় ফেলে রাখা ইয়াদের বরের পোশাক দেখতে পেলো ইমা। এগিয়ে গিয়ে হাতে নিতেই একটা মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে এসে লাগলো। ঘ্রাণটা ভালো করে নেওয়ার জন্য ইমা শেরওয়ানিটা নাকের কাছে নিলো। মুগ্ধ করা একটা সুভাষ শেরওয়ানিতে। ঘ্রাণটা ভালো করে নিতেই ইমার সারা শরীর কাটা দিয়ে উঠলো। পরক্ষণে মুচকি হেঁসে উঠলো সে। বড্ড ক্লান্ত লাগছে তাই শেরওয়ানিটা আগের জায়গায় রেখে বেডে গিয়ে বসলো। অপেক্ষা করতে লাগলো ইয়াদের কখন আসবে কে জানে। এদিকে ইমার ঘুমও পাচ্ছে খুব করে।

১৫.
আরমান এখনো রুমের দরজা বন্ধ করে শুয়ে আছে। সিগারেটের প্যাকেট অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে তবু সেভাবেই শুয়ে আছে। চোখের সামনে ভাসছে ইমার বধুবেশ। আরমান উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছে তার কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে। ইমাকে তো সে শুধু চেয়েছিলো বন্ধুদের সামনে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য। ইমাকে নিজের করে বন্ধুদের উচিত জবাব দিতে চেয়েছিলো। সে পরিকল্পনা নষ্ট হওয়ার জন্য আরমানের রাগ করা মানায় প্রচন্ড রাগে সব ধ্বংস করে দেওয়া মানায়। কিন্তু ইমাকে হারিয়ে বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রণা করা একদমই মানায় না আরমানের, একদমই না।

দরজা ঢেলে রুমে এলো ছাহেরা বেগম। ভয়ে হাত-পা কাঁপছে তার কী উত্তর দিবে মনে মনে আরো একবার আওড়ে নিলো। ছাহেরা বেগম রুমের লাইট অন করে দেখে ছেলে বেডে শুয়ে আছে কপালে হাত দিয়ে সটানভাবে। ফ্লোরে পড়ে আছে গুটি কয়েক সিগারেটের শেষাংশ।

ছাহেরা বেগম বললো, কখন এসেছিস এখনো ফ্রেশ না হয়ে এভাবে শুয়ে আছিস কেনো তুই ?

আরমান মায়ের গলা শুনে শান্ত গলায় বললো, এমনটা কেনো করলে মা ?

এই কথা টুকুই ছাহেরা বেগমের প্রেসার বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো।

চলবে,,,,,