তিক্ততার সম্পর্ক পর্ব-০৯

0
1765

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ০৯ ||বোনাস+ স্পেশাল পর্ব||

ইমার মা মেয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তবে মেয়েটা তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। ইমার মার চোখ টলমল করছে পানিতে। মনে হয় এই তো সেদিন মেয়েটার জন্ম হলো। ছোট ছোট আঙ্গুল দিয়ে তার আঙ্গুলটা আঁকড়ে ধরতো। ইমার বাবা ইমার দিকে তাকিয়ে বলতো আমার মিষ্টি মা টা একদম আমার মতো হয়েছে দেখতে। মেয়েকে আকাশের চাঁদ মনে করতো ইমার বাবা। সেই মেয়ের আজ বিয়ে ৷ মানুষটা বেঁচে থাকলে আজ কতোই না খুশি হতো। সুখের স্মৃতি হাতড়ে চোখ থেকে টপ করে পানি গড়িয়ে পড়লো ইমার মা তাহেরা বেগমের। মেয়ের ভালোর জন্য ভালোবাসার মানুষটাকে ভুলে বিয়ে করলো অন্য একজনকে আর আজ সেই মেয়ের চোখে সবচেয়ে বড় অপরাধী সে। মা মেয়ের মাঝে মায়া মমতার সম্পর্ক মুছে সেখানে তৈরি হয়েছে যন্ত্রণাদায়ক #তিক্ততার_সম্পর্ক। কিন্তু এমনটা তো চায়নি তাহেরা বেগম, সবই নিয়তির খেলা। দ্বিতীয় স্বামীর বাড়িতে সে খুব ভালো আছে এমনটা নয় তবে সেটা কাউকে বলতে পারে না তাহেরা। সে ঘরে একটা ছেলে আছে তাহেরার। তবে সে ছাড়া কেউ আসেনি ইমার বিয়েতে।

ইমার মা গিয়ে ছাহেরা বেগমকে জিজ্ঞেস করলো, ছেলে কে, কী করে ?

তাতে ছাহেরা বেগম বলে, তোর মেয়ের রাজ কপাল এতো বড় ঘরে বিয়ে হচ্ছে। রানীর মতো পায়ের ওপর পা তুলে খেতে পারবে সারাজীবন।

তাহেরা মলিন হেঁসে বললো, আমার মেয়েকে আমি মানুষ করিনি তবে এটুকু জানি তার টাকার লোভ নেই। ছোটবেলা থেকে ভালোবাসা পায়নি মেয়েটা তাই ভালোবসার বড্ড কাঙাল। ছেলে কেমন সেটা জানতে পারলে খুশি হতাম।

ছাহেরা মুখ ভেংচি কেটে বিড়বিড় করে বললো, এখন মেয়ের জন্য দরদ একেবারে উতলে পরছে।

তাহেরা স্পষ্ট শুনতে পেলো বড় বোনের তাচ্ছিল্যের সুরে বলা কথা তাতে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

ছাহেরা মনে মনে বললো, ছেলে যদি ভালোই হতো তাহলে এতবড় বাড়িতে নিজের মেয়ে না দিয়ে তোর মেয়ে দিতাম নাকি। হোক বয়সে একটু বড় তাতে কী হয়েছে তবু কথাকেই দিতাম। কিন্তু ছেলে তো মেয়ে জাতিকেই সয্য করতে পারে না দুচোখে। তোর মেয়ের কপালে কী আছে আল্লাহ মালুম। তাহেরা তুই সেদিন যদি আমার ভালোবাসা কেঁড়ে না নিতি তাহলে আজ না তোর জীবন এমন হতো আর না তোর মেয়ে এমন #তিক্ততার_সম্পর্ক বয়ে বেড়াতো। তোকে বলেছিলাম আমার ভালোবাসা কেঁড়ে নিয়ে সুখে থাকতে পারবি না তুই।

ইমার বাবা ছিলো ইমার খালা ছাহেরা বেগমের প্রিয় বন্ধু। ছাহেরা বেগম ভালোবাসতেন ইমরুল আবিয়াতকে (ইমার বাবা) ছাহেরা বেগমের বাড়িতে যাতায়াত ছিলো ইমরুলের। ছাহেরা ইমরুলকে ভালোবাসতো আর ইমরুল ভালোবাসতো ইমার মা তাহেরা বেগমকে। ছাহেরা ইমরুলকে ভালোবাসার কথা জানাবে তার আগেই ইমরুল ছাহেরাকে বলে সে তার ছোটবোন তাহেরাকে ভালোবাসে। সেদিন রাগে দুঃখে বিনা কারণে ছাহেরা অনেক মেরেছিলো তাহেরাকে কিন্তু কিছু জানায়নি ইমরুলের বিষয়ে। ধীরে ধীরে তাহেরাও বুঝে যায় ইমরুল তাকে ভালোবাসে আর সেও ইমরুলকে ভালোবেসে ফেলে। এটা জানতে পেরে ছাহেরা তার বাবাকে গিয়ে বলে সে ইমরুলকে বিয়ে করতে চায় কিন্তু এতে আরো উল্টো ফল হয়৷ ছাহেরার বাবা তাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয় আরমানের বাবা আমিনুল মাহমুদের কাছে। সেদিন থেকে ছাহেরা ইমরুল আর তাহেরার ওপর রাগ পুষে রেখেছিলো। তাহেরা বুঝতে পারে তার বাবা ইমরুলকে মেনে নিবে না তাই ছাহেরার বিয়ের পাঁচবছর পর তার বিয়ের কথা উঠলে সে ইমরুলের সাথে পালিয়ে যায়। বিয়ের তিন বছর পর জন্ম হয়ে ইমার। তাহেরার ছিলো সুখের সংসার বাবা মেনে না নিলেও খারাপ ছিলো না তারা। কিন্তু ইমার যখন দুই বছর বয়স এক ঝড়ো হাওয়া সব এলোমেলো করে দেয়। ইমরুলের মৃত্যু খুন ছিলো নাকি এক্সিডেন্ট তা আজও ধুয়াশায় রয়ে গেছে। ইমরুলের মৃত্যুর পর তাহেরা বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু এখানে আসতেই তার ওপর আবার বিয়ের করার চাপ দেওয়া হয় আর তার মূলে ছিলো ছাহেরা বেগম।
|| লেখনীতে তাহমিনা তমা ||

তাহেরার আজও কানে বাজে ছাহেরার সেই কথা, একজনকে ভালোবেসে অন্যজনের সাথে সংসার করা কতটা যন্ত্রণাদায়ক সেটা তোকে আমি বুঝিয়ে ছাড়বো তাহেরা।

কী ভয়ংকর ছিলো সেই কথা মনে হলে তাহেরার আজও গায়ের লোম কাটা দিয়ে উঠে। তাহেরার বাবা একসময় তাহেরাকে হুমকি দেয় মেয়ের দিকে তাকিয়ে বিয়ে করতে চাইছে না তো ? মেয়েকে এমন জায়গায় পাঠাবে আর কখনো মেয়ের মুখও দেখবে না তাহেরা। ভালোবাসার শেষ চিহ্ন বাঁচিয়ে রাখতে তাহেরা সেদিন নিজেকে বিসর্জন দিয়েছিলো। বেঁচে থেকেও ভেতর থেকে মরে গিয়েছিলো। সে সত্যি বুঝেছিলো একজনকে ভালোবেসে অন্যজনের সাথে সংসার করা কতটা যন্ত্রণাদায়ক। যে মেয়ের জন্য এতো কিছু করলো সেই মেয়ের কাছে আজ অপরাধী তাহেরা।

মণিমা,,,,,

কারো ডাকে অতীত বিচরণ থেকে বের হয়ে আসে তাহেরা। পাশে তাকিয়ে কথাকে দেখতে পায়। বুক চিঁড়ে বেরিয়ে আসে দীর্ঘ শ্বাস। নিজের মেয়ের মুখে একবার মা ডাকও আজ ভাগ্য হয় না তাহেরার।

মণিমা তাহের(ইমার সৎ ভাই) ভাইয়া আসেনি আর আঙ্কেল কোথায় ?

তাহেরা শান্ত গলায় বললো, আসেনি তারা আর আসবেও না।

কথা মন খারাপ করে বললো, ওহ্।

তাহেরা বললো, কথা আরমান কোথায় তাকে দেখছি না যে ?

কথা বললো, ভাইয়া ভার্সিটির ট্যুরে গেছে আরও দুদিন পর আসবে।

তাহেরা অবাক হয়ে বললো, বাড়িতে বিয়ে আর আরমান বাড়িতে নেই। তোর মা তো ছেলেকে বাদ দিয়ে এক কাপ চা ও খায়না তাহলে তাকে বাদ দিয়ে এতোবড় আয়োজন ?

কথা চিন্তিত হয়ে বললো, সেই হিসাবটা আমিও মেলাতে পারছি না মণিমা আর মা তো ইমা আপুকে সয্যই করতে পারে না তাহলে এতো ঘুমধাম করে তার বিয়ে দিচ্ছে। তাও মাত্র দুদিনের মধ্যে এসব আয়োজন করলো। কোথাও একটা গড়বড় আছে বুঝলে মণিমা।

কথার কাছ থেকে এসব শুনে তাহেরার বুক কেঁপে উঠলো। যাই হোক আল্লাহ যেনো তার মেয়ের নতুন জীবনটা সুখে ভড়িয়ে দেয় সেই দোয়া করতে লাগলো তাহেরা।

দূর থেকে নিজের মাকে দেখে যাচ্ছে ইমা। যতই রাগ অভিমান থাকুক মা তো মাই। ইমার ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে তার গায়ের মা মা গন্ধটা অনুভব করতে৷ কবে মা মা গন্ধটা নাকে এসেছিলো ইমা ভুলতে বসেছে। কিন্তু বুকের বা পাশটায় অভিমানের পরিমাণ এতোই বেশি সেগুলো একপাশে রেখে ইমা ছুটে যেতে পারছে না তার মায়ের কাছে। দূর থেকে দেখেই তৃষ্ণা মেটাতে চেষ্টা করছে ইমা।

১৩.
সকাল থেকে রুমের দরজা লক করে বসে আছে ইয়াদ তার বিশ্বাসই হচ্ছে না সে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। বাড়ি ভর্তি মেহমান গিজগিজ করছে তাদের আরো বেশী অসহ্য লাগছে ইয়াদের কাছে। সকালে ইয়ানা এসে ব্রেকফাস্ট দিয়ে গিয়েছিলো সেটা খেয়ে আর রুম থেকে বের হয়নি। জীবনের ৩০ বছর পার করে এসেছে মেয়েদের থেকে দূরে থেকে আর আজ থেকে তাকে ২৪ ঘণ্টা একটা মেয়েকে সয্য করতে হবে সেটা ভাবতেই রাগ লাগছে ইয়াদের। আরও এক উটকো ঝামেলা আজ আরো বেশী মনে পড়ছে সেই মায়াবী চোখ জোড়া। ইয়াদ নিজের হবু বউ সম্পর্কে কিছুই জানে না তার অবশ্য জানার কোনো ইচ্ছেও নেই। শুধুমাত্র বোনের আবদার পূরণ করতে রাজি হয়েছে ইয়াদ। সব মিলিয়ে একটা বিশ্রি সময় পার করছে ইয়াদ।

ইয়ানা দরজায় নক করে বললো, ভাইয়া দরজা খোল দেখ কারা এসেছে।

ইয়াদ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতেই এক ঝাক ছেলে ইয়াদকে জড়িয়ে ধরলো। টাল সামলাতে না পেরে সবগুলোকে নিয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো ইয়াদ। ইয়ানার তো এদের কান্ডকারখানা দেখে হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।

ইয়াদের বন্ধু জোহান বলে উঠলো, মামা তুমি নাকি জীবনে কোনো মেয়ের ছায়াও মাড়াবে না তাহলে আজ কী ছেলে বিয়ে করছো নাকি ?

ইয়াদ ওদের সবাইকে ঠেলে ওপর থেকে সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, তোরা কোথা থেকে এলি ?

আরেক বন্ধু সাকিব বললো, তুই বিয়ের ইনভাইট না করলে কী হবে আমাদের মিষ্টি বোন ইয়ানা আমাদের সবাইকে ইনভাইট করেছে। ইনভাইট করেছে এটা ভুল বললাম শুধু জানিয়েছে তোর বিয়ে আজ আমরাও নিজ দ্বায়িত্বে চলে এসেছি।

সাকিবের কথায় সবাই হেঁসে দিলো তবে হাঁসি নেই ইয়াদের মুখে। প্রান প্রিয় বন্ধু গুলো আজ বিরক্ত লাগছে ইয়াদের কাছে তবে সেটা প্রকাশ করলো না ইয়াদ, চুপচাপ ওদের হাসি মজা সয্য করছে।

ইয়াদের বন্ধুরা মিলে ইয়াদকে জোর করে রেডি করিয়ে দিলো আর তারপর সবাই রওনা হলো কনের বাড়ির উদ্দেশ্যে। বর এসেছে শব্দ কানে আসতেই ইমার হার্টবিট বেড়ে গেলো। সিঁদুর লাল কালার একটা বেনারসি পড়েছে ইমা সাথে গোল্ডেন কালার হিজাব, ভাড়ি ভাড়ি স্বর্নের গহনা, মুখে গাড়ো মেকআপ। দুধে আলতা গায়ের রঙের সাথে টকটকে লাল বেনারসিটা যেনো একটু বেশি সুন্দরী করে তুলেছে ইমাকে। ইমা তার বরকে দেখতে কেমন হবে চোখ বন্ধ করে কল্পনা করতে চাইলে ইয়াদের টমেটোর মতো লাল মুখ ভেসে উঠলো ইমার চোখের সামনে। এমনটা কেনো হলো তার উত্তর জানা নেই ইমার। ইয়াদের মুখটা ভেসে উঠতেই ইমা চোখ খোলে ফেললো পাশে রাখা পানির গ্লাসের সব পানি ঢকঢক করে সবটা খেয়ে নিলো। সবাই চলে গেলো বর দেখতে। আবরার হামিদ ইয়াদ মেয়েদের থেকে অন্তত দশ হাত দুরত্ব বজায় রাখে সেখানে আজ তার আশেপাশে মেয়েরা গিজগিজ করছে আর তাতে সে চরমভাবে বিরক্ত। কোথাও গেলে গার্ড নেয় না ইয়াদ কারণ সে নিজের আত্নরক্ষা নিজেই করতে পারে কিন্তু বিয়ে করতে এসেছে গার্ড নিয়ে। যাতে তাকে মানুষের ভিড় থেকে বাঁচাতে পারে।

ইমার ফেন্ড রিকু বললো, দোস্ত তুই বস আমি দুলাভাইয়ের একটা পিক তুলেই চলে আসবো।

ইমা কাঁপা গলায় বললো, যাবি আর আসবি একদম লেইট করবি না বলে দিলাম।

রিকু বললো, প্রমিস একদম লেট করবো না।

রিকু চলে গেলে ইমা একা বসে রইলো। কেনো জানি খুব ভয় করছে ইমার। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে ইমা সেদিকে তাকালো কে এসেছে দেখার জন্য। দরজার দিকে তাকিয়ে ইমা থমকে গেলো কারণ তার মা দাঁড়িয়ে আছে সামনে। ইমা মুখ ফিরিয়ে নিলো সেদিক থেকে। ইমার মা চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লে তাড়াতাড়ি মুছে নিলে।

ইমার পাশে বসে বললো, মাশাআল্লাহ আমার মেয়েকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।

ইমা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, আপনার মেয়ে?

তাহেরা চুপ করে গেলো ইমার প্রশ্নে। উত্তর দেওয়ার মুখ তার নেই। ইমার মা একটা গিফট বক্স বের করে ইমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, এটা তোর জন্য, আমার দেওয়া বলে ফিরিয়ে দিস না তোর বাবারও স্মৃতি জড়িয়ে আছে এতে।

বাবার কথা শুনে ইমা ফিরিয়ে দিতে পারলো না বক্সটা হাতে নিলো। ইমার খুব ইচ্ছে করছিলো মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কিন্তু ঐ যে অভিমান ঠিক বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো। তাহেরারও ইচ্ছে করছিলো মেয়েটাকে একবার বুকে টেনে নিতে কিন্তু সেই অধিকার তার আছে কিনা বুঝতে পারলো না।

ইমার মাথায় হাত রেখে বললো, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি জীবন যতটা দুঃখ তোকে দিয়েছে তার থেকে হাজার গুন সুখ যেনো তোর ভাগ্যে জুড়ে দেয়। একটা কথা মনে রাখিস মা পৃথিবীটা বড্ড কঠিন এখানে কারো অধিকার কেউ হাতে তুলে দেয় না নিজের অধিকার নিজেকে আদায় করে নিতে হয়। জীবনে কখনো কঠিন সময়ের সম্মুখীন হলে আল্লাহ তাআ’লাকে শরণ করবি। তিনি ছাড়া আমাদের সাহায্য করার আর কেউ নেই। মন থেকে খুব বেশি দুর্বল হয়ে পরলে জায়নামাজে দাড়িয়ে যাবি আল্লাহর কাছে ধর্য্য প্রার্থনা করবি।

এটুকু বলে দম নিয়ে আবার বললো, ভালো থাকিস মা। একদিন হয়তো এই অপরাধী মাকে বুঝতে পারবি সেদিনের অপেক্ষায় থাকলাম।

কথাগুলো বলে ধীর পায়ে বের হয়ে গেলো তাহেরা আর সেদিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো ইমা। জীবনটা এমন বিচিত্র কেনো হয় এর উত্তর কী আছে কারো কাছে ? ইমা ঝাপসা চোখে বুঝতে পারলো দরজা দিয়ে ঝড়ের গতিতে কেউ প্রবেশ করে ওর সামনে এসে বসলো।

রিকু এক্সাইটমেন্টের জন্য কথা বলতে পারছে না বর দেখে তার চোখ কপালে উঠে গেছে তাও হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, ইমা তোর বর কে জানিস ?

ইমা চোখ মুছে চিন্তিত গলায় বললো, কে ?

রিকু আরো বেশী এক্সাইটেড হয়ে বললো, আবরার হামিদ ইয়াদ নাম শুনেছিস ? হামিদ গ্রুপ অব কোম্পানির নিউ এমডি বিজনেস জগতের প্রিন্স বলা হয় যাকে আর মেয়েদের হার্টথ্রব।

ইমা চোখ বড়বড় করে বললো, কীহ্ ,,,,,,?

রিকু বললো, হ্যাঁ রে আর আজ যা লাগছে না দেখতে পুরো আগুন। মেয়েগুলো মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। কিন্তু তোর কপালে কী আছে আল্লাহ জানে কারণ উনি মে,,,,,,

আসবো ভাবি ?

রিকুর আর পুরো কথা শেষ করা হলো না। রিকু আর ইমা দুজনেই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে কথার সাথে ইয়ানা দাঁড়িয়ে আছে। উত্তরের অপেক্ষা না করেই কথা তাকে নিয়ে রুমে ঢুকলো। ওরা মজা করছে আর ইমা চুপচাপ বসে ইয়াদের কথা ভাবছে। সেদিনের কথা মনে হতেই মুচকি হাঁসলো ইমা। তার মনে ইয়াদের জন্য পজিটিভ ধারণা তৈরি হয়েছিলো তাই মনে করছে ইয়াদকে সে যেমন দেখেছে ইয়াদ তেমনই। যখন ওর বিশ্বাসটা ভাঙবে কী হবে সেটা হয়তো এখন ভাবতেও পারছে না।

ইমার বেনারসির সাথে ম্যাচিং লাল টকটকে শেরওয়ানি, সাদা পাজামা, জেল দিয়ে সেট করা চুল, হাতে রোলেক্সের লেটেস্ট কালো রঙের ঘড়ি, পায়ে খয়েরী কালার বরের জুতা। দুজনের শপিং ইয়ানা করেছে। ইয়াদের দিক থেকে আজ চোখ ফেরানো দায় হয়ে গেছে। মাথার পাগড়ীটা শুরু থেকেই রনিতের হাতে রয়েছে।

ইয়াদ দাঁতে দাঁত চেপে রনিতকে ডেকে বললো, আমার পক্ষে বেশিক্ষণ এসব টলারেট করা সম্ভব নয় রনিত যা করার তাড়াতাড়ি করতে বলো।

রনিত দাঁত কেলিয়ে বললো, বিয়ে করার এতো তাড়া স্যার ? আগে বিয়ে তো দূর মেয়েদের নামই শুনতে পারতেন,,,,,ন,,,না।

ইয়াদের অগ্নি দৃষ্টি রনিতের দিকে পড়তেই রনিতের কথা আটকে গেলো থতমত খেয়ে বললো, স্যার আমি এখনই বলে আসছি।

ইমার রুমে সবাই ইমাকে নিয়ে মজা করছিলো একটু পরই কাজি সাহেব আরো বেশ কিছু মানুষ সেখানে গেলো। ইয়ানা তখনও সেখানেই ছিলো। বিয়ে পড়ানো শুরু হয়ে গেলো।

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে তাই এতো গুলি স্টুডেন্ট নিয়ে স্যারটা রিস্ক নিতে চায়নি। দুদিন পরে ফেরার কথা থাকলেও আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় দুদিন আগেই ঢাকা ফিরে এলো সবাই৷ ভার্সিটিতে কিছু কাজ ছিলো সেগুলো কমপ্লিট করে আরমান একটা ট্যাক্সি ডেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো৷ না চাইতেও ইমার জন্য শামুকের বেশ কিছু জিনিস কিনে এনেছে আরমান। কথার জন্য কেনার সময় কিছু জিনিস ইমার জন্য পছন্দ হয়ে যায় তাই নিয়েই এসেছে। এই প্রথম আরমান ইমার জন্য কিছু কিনেছে ইমা ব্যাপারটা কীভাবে নেবে সেটা চিন্তা করছে আরমান। বাড়ির সামনে এসে থমকে গেলো আরমান। পুরো বাড়ি সাজানো আর মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। ভুল ঠিকানায় এসেছে মনে করে আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো না ঠিকই তো আছে তাহলে বাড়িটা এভাবে সাজানোর মানে কী ? গেইটের সামনে চোখ যেতেই আরমানের পুরো দুনিয়া থমকে গেলো। সেখানে গোটা গোটা ইংরেজি অক্ষরে লেখা
WELCOME TO THE
Wedding
Ima and Iyad

লেখাটা পড়ে কেনো যেনো বুকের বা পাশটায় তীরের মতো আঘাত করলো। আরমানের পুরো দুনিয়া যেনো থমকে গেলো এক পলকে। ট্যাক্সি ড্রাইভার বারবার ভাড়া চাইছে সেটা যেনো আরমানের কানে আঘাত করলেও মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। পাথরের মর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে সে লেখার দিকে তাকিয়ে।

চলবে,,,,