তিক্ততার সম্পর্ক পর্ব-১৭

0
1774

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ১৭

স্যার বারো বছর ধরে আপনি যাদের খুঁজছেন তাদের একজনের খোঁজ পেয়েছি স্যার।

ইয়াদ অবাক হয়ে বললো, Whattt,,,,?

ইয়েস স্যার সে এখন তার গ্রামের বাড়িতে আছে আর আপনি এদেশ থেকে যাওয়ার পরপরই উনি ঢাকা থেকে চলে গিয়েছিলেন। কারণ উনাকেও খুনের চেষ্টা করা হয়েছিলো।

ইয়াদ বিষ্ময়কর কণ্ঠে বললো, বাট হুয়াই ? উনি আমাকে সব জানিয়ে দিয়েছে সেটা তো আমি আর উনি ছাড়া কেউ জানতো না তাহলে কেনো ? আর এদের আচরণেও তো মনে হয় না এরা জানে যে আমি সব সত্যি জেনে গেছি।

জাম্বী অস্থির গলায় বলে, না না স্যার সেজন্য খুন করতে চায়নি। এরা এখনো জানে না আপনি সব জেনে গেছেন। এরা উনাকে খুন করতে চেয়েছিলো যাতে ফিউচারে উনি আপনাকে কিছু বলতে না পারেন।

ইয়াদ গম্ভীর গলায় বললো, ঠিক আছে তুমি সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করো বাট খেয়াল রেখো তুমি আর আমি ছাড়া এই বিষয়ে যেনো কেউ কিছু জানতে না পারে। একবার উনাকে হাতে পেলে বাকি দুজনের হদিসও পাওয়া যাবে।

জাম্বী বললো, ঠিক আছে স্যার।

ফোন রেখে ইয়াদ চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলো। আজ বারোটা বছর ধরে তিনজন মানুষকে হন্নে হয়ে খুঁজছে ইয়াদ। একবার তাদের পেয়ে গেলে তার অতীত একদম পরিষ্কার হয়ে যাবে তার কাছে। মাথায় আঘাত আর এক বছর কোমায় থাকার জন্য তার মন থেকে মুছে গেছে অনেক স্মৃতি। স্বপ্নটাও কখনো স্পষ্ট হয় না চোখের সামনে। এই তিনজনই পারবে তার জীবনের সব রহস্য উদঘাটন করতে। ইয়াদ কল করে রনিতকে কেবিনে আসতে বললো।

আজকের রুটিন কী কী রনিত ?

স্যার আজ তেমন কেনো কাজ নেই যা কাজ সব অফিসের মধ্যেই তবে একবার কনস্ট্রাকশন সাইটে যেতে হবে সব ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা দেখতে।

ইয়াদ বললো, রনিত আমি একটা দরকারী কাজে ঢাকার বাইরে যাচ্ছি আজ এদিকটা সামলে নাও।

রনিত একটু চিন্তা করে বললো, কিন্তু স্যার অফিসের কোনো কাজ তো নেই ঢাকার বাইরে, যেটা আছে সেটা আরো দশদিন পরে।

ইয়াদ রাগী গলায় বললো, রনিত এখন কী আমার সব কাজের কৈফত তোমাকে দিতে হবে ?

রনিত দাঁত দিয়ে জিহ্বা কেটে বললো, সরি স্যার ভুল হয়ে গেছে।

ইয়াদ বিরক্ত হয়ে বললো, তোমার মুখ দিয়ে ঠিক কথা আবার কখন বের হয়। আমি আগামীকাল ঠিক সময়ে অফিস চলে আসবো তুমি এদিকটা দেখো আর হ্যাঁ আমার কথা মিস্টার ডি কে (ইয়াসির) জানতে চাইলে বলবে অফিসের কাজে বাইরে গেছে।

রনিত মাথা নাড়িয়ে বললো, ঠিক আছে স্যার।

ইয়াদ চেয়ারের পেছন থেকে ব্লেজারটা নিয়ে গায়ে পড়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়ে গেলো। রাস্তায় জাম্বী দাঁড়িয়ে ছিলো তাকেও তুলে নিলো।

ঠিকানা খুঁজে পেতে কষ্ট হবে না ?

জাম্বী হেঁসে বললো, স্যার আপনি মনে হয় ভুলে গেছেন জাম্বী কখনো হাফ কাজ করে না। ওখানে আমি লোক লাগিয়ে দিয়েছি আমরা গেলেই বাড়ি দেখিয়ে দেবে।

জাম্বী ড্রাইভ করছে আর ইয়াদ পাশে বসে আছে চিন্তা করছে সামনে কী অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো ময়মনসিংহ শহরে পৌঁছাতে। সেখান থেকে আরো অনেক ভিতরে যেতে হবে। শহরে পৌঁছাতেই তাদের সাথে আরো একটা গাড়ি যোগ হলো। ইয়াদের গাড়ি সেই গাড়িটাকে ফলো করছে কেবল। কিছুক্ষণের মধ্যে শহর ছেড়ে সবুজে ঘেরা গ্রামে প্রবেশ করলো ইয়াদের গাড়ি দুপাশে সবুজ ফসলের ক্ষেত আর মাঝে পিচঢালা রাস্তা। অনেকটা সময় পর একটা ছোট বাজারের মতো জায়গায় গাড়ি এসে থামলে সবাই নেমে পরে। সামনের কাঁচা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে হবে তাই সবাই সেদিকে পা বাড়ালো। প্রায় দশ মিনিট হাঁটতেই পুরনো একটা দুতলা বাড়ির সামনে এসে থামলো ইয়াদ। বাড়িটার রঙ উঠে গেছে মাঝে মাঝে শেওলা পরেছে। পশ্চিম আকাশে তখন সূর্যটা হেলে পড়েছে তাই বাড়িটাকে অনেকটা ভূতুড়ে মনে হচ্ছে। বাড়িটা দেখে ইয়াদ ভ্রু কুঁচকালো এই বাড়িতে কেউ থাকে বলে ইয়াদের মনে হচ্ছে না। তবে কী ভুল জায়গায় এসে পরেছে সেটাই চিন্তা করতে লাগলো।

২১.
ড্রয়িংরুমের ঘড়ির টুং শব্দ বলে দিচ্ছে বারোটা বেজে গেছে। ইমা না শান্তিতে বসতে পারছে আর না শুতে পারছে। এতো রাত হয়ে গেছে ইয়াদের খোঁজ নেই কোনো। চিন্তায় ইমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। ইয়ানা কল দিয়েছিলো ইয়াদের ফোন বন্ধ, রনিতের ফোন বিজি বলছে এক ঘন্টা আগে থেকে, অফিসে কল দিয়ে জানতে পারে ইয়াদ দুপুরেই বের হয়ে গেছে অফিস থেকে তারপর আর যায়নি অফিসে। ফার্মহাউসের কেয়ারটেকার জানিয়েছে ইয়াদ সেখানে যায়নি মুলত সেই জন্য ইমার প্রচন্ড টেনশন হচ্ছে কোথায় গেলো ইয়াদ ? এমনি সারাদিন ইমা ইয়াদের অতীত জানার ক্লো খুজতে ব্যস্ত ছিলো এখন আবার ইয়াদের চিন্তায় মাথা ব্যাথা শুধু হয়ে গেছে ইমার। একটু আগে ইয়ানা নিজের রুমে চলে গেছে ইমারকে চিন্তা না করতে বলে। ইয়ানা নিজের রুমে বসে আছে তার মাথায় ঘুরছে অন্য চিন্তা। আজ ভার্সিটিতে আরমানকে দেখে শুধু ইয়ানা নয় পুরো ভার্সিটি অবাক হয়ে গেছে। কোনো ক্লাসে কাউকে কিছু বলেনি চুপচাপ ক্লাস করিয়ে বের হয়ে গেছে। আজ যতবার আরমানকে দেখেছে ততবারই ইয়ানার কাছে তাকে বিষন্ন লেগেছে। আরমান হয়তো সত্যি ইমাকে ভালোবাসে এমন ভাবনায় ইয়ানার অপরাধবোধ হচ্ছে কেনো জোর করলো ইয়াদকে বিয়ে করার জন্য। ইয়ানার আরমানের জন্য খারাপ লাগছে হয়তো সব সত্যি জানলে খারাপ লাগবে না বরং ঘৃণা করবে আরমানকে।

একটা বাজতে আর দশ মিনিট হয়েছে ঘড়িতে, ইয়াদ গাড়ি নিয়ে বাসায় ঢুকলো। নিজেকে আজ অভাগা মনে হচ্ছে ইয়াদের কাছে, রাগের থেকে অনেক বেশি হচ্ছে চাপা কষ্ট। তার জীবনেই এসব কেনো হলো ? তার জীবনটা হতে পারতো বাকি সবার মতো হাসিখুশি আর স্বাভাবিক। হ্যা হতে পারতো যদি তার বাবা মানুষ চিনতে ভুল না করতো তাহলে সব স্বাভাবিক হতো। ইয়াদ নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে মেইন ডোরের তালা খুলে ভেতরে গিয়ে মেইন ডোর লক করে ঘুরতেই ডাইনিং টেবিলে ইমাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখলো।

কপাল কুঁচকে নিজে নিজেই বললো, এই মেয়ের কী ঘুমানোর জায়গার অভাব পরেছে যে ডাইনিং টেবিলে ঘুমিয়ে আছে ?

ইয়াদ ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো মেয়েটার কাছে টেবিলে দু’হাতে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে। মাথায় ঘোমটা টানা, মুখের উপর ছোট ছোট চুলগুলো লেপ্টে আছে। নিষ্পাপ মুখটা দেখে মনে হচ্ছে শত মায়া ভড় করেছে ঐ মুখে। ইয়াদ ডাকতে গিয়ে থেমে গেলো তাকিয়ে থাকলো মুখটার দিকে।

ইয়াদ আনমনে বললো, জানি না কেনো তোমাকে বড্ড বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। তোমার মুখের দিকে তাকালে মনে হয় তুমি কখনোই ঐ মহিলার মতো নিকৃষ্ট হতে পারবে না। কিন্তু মন আর মস্তিষ্কের যুদ্ধে বারবার মনটা হেরে গিয়ে মস্তিষ্ক জিতে যায়। মস্তিষ্ক বলে দেয় বিশ্বাস ভাঙার কষ্ট সহ্য করতে পারবি না ইয়াদ। কাউকে বিশ্বাস করিস না, কখনো না।

ইয়াদ না চাইতেও ইমাকে ডাকতে লাগলো। সকালে ইমাকে এখানে ঘুমাতে দেখলে রুবিনা কবির কী ভাববে সেটা মনে করে।

ইয়াদ কঠিন গলায় বললো, এই মেয়ে উঠো, এটা কী ঘুমানোর জায়গা ?

ইয়াদ কয়েকটা ডাক দিলো কিন্তু ইমার কোনো হুঁশ নেই, সে ঘুমে কাদা। ইয়াদ বাধ্য হয়ে ইমার কাঁধে হালকা ধাক্কা দিলো। ইয়াদের হালকা স্পর্শে ইমা ঘুমের মধ্যে কেঁপে উঠলো। ইয়াদের মনেও অদ্ভুত শিহরণ খেলে গেলো। এই পর্যন্ত ইয়াদ যতবার ইমাকে স্পর্শ করেছে প্রচন্ড রেগে করেছে এই প্রথম স্বাভাবিক মস্তিষ্কে স্পর্শ করায় হয়তো এমন শিহরণ খেলে গেলো মনে। পরের বার ধাক্কা দিতে ইয়াদের হাত কাঁপছিলো, যেটা ইয়াদের কাছে অদ্ভুত লেগেছে। স্পর্শ করতে গিয়ে হাত গুটিয়ে নিলো ইয়াদ। টেবিলে থাপ্পড় মারলো একটু জোরে। তাতে ইমা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো আর আশেপাশে তাকাতে লাগলো।

ইয়াদকে দেখতে পেয়ে ব্যস্ত হয়ে বললো, আ,,আপনি ?

ইয়াদ শান্ত গলায় বললো, হ্যাঁ আমি, এটা কী তোমার ঘুমানো জায়গা ? রুমে ঘুমানোর জায়গার অভাব পরেছে ?

ইমা অস্থির গলায় বললো, আ,,আমি ঘুমচ্ছিলাম না আপনার জন্য ওয়েট করতে করতে কখন চোখ লেগে গেছে বুঝতে পারিনি।

ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, আমার জন্য ওয়েট করতে কে বলেছে তোমাকে ?

ইয়াদের কথায় ইমা ইতস্তত হয়ে তাকালো ইয়াদের দিকে কিন্তু ইয়াদকে দেখে তার খারাপ লাগতে শুরু করলো। অনেক বেশি ক্লান্ত লাগছে আজ ইয়াদকে। মুখটা শুকিয়ে গেছে হয়তো সারাদিনে পেটে কিছু পরেনি।

ইমা ইয়াদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে প্রশ্ন করলো, আপনি সারাদিনে কিছু খেয়েছেন ?

ইমার পাল্টা প্রশ্নে ইয়াদ অবাক না হয়ে পারলো না। এই মেয়ে মুখ দেখেই কীভাবে বুঝে গেলো ইয়াদ সারাদিনে কিছু খায়নি সেটা বুঝতে পারছে না ইয়াদ। ইয়াদের জীবনটা খুব অগোছালো ভাবে চলছে। সকালের ব্রেকফাস্ট যেদিন বাড়ি থেকে করে যায় সেদিন করা হয় নাহলে বাকি থেকে যায়। মাঝে মাঝেই কাজ করতে করতে কখন লান্সের সময় পেড়িয়ে বিকেল হয়ে যায় ইয়াদের হুঁশ থাকে না। তার রাগের জন্য রনিত মনে করিয়ে দিতেও ভয় পায়। তারপর বাড়ি ফিরে দেখে সবাই ঘুমিয়ে গেছে তাই তার ডিনারটাও করা হয় না বেশির ভাগ সময়। আগে ইয়ানা দু একদিন বসে ছিলো ইয়াদ অনেক রাত করে ফিরে বলে ওকে ওয়েট করতে মানা করে দিয়েছে।

ইয়াদের ভাবনার মাঝেই ইমা বলে উঠলো, আপনি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি আপনার জন্য খাবার গরম করে দিচ্ছি।

ইয়াদ কিছু বলার আগেই ইমা কিচেনের দিকে চলে গেলো আর ইয়াদ নিজের রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হলো। বেডে বসতেই আরো বেশী ক্লান্ত লাগছে এখন। তার ইচ্ছে করছে না আবার নিচে গিয়ে খাবার খেতে। ইয়াদ ঠিক করলো নিচে যাবে না তাই শুয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিতেই ইমা খাবারের ট্রে নিয়ে রুমে ঢুকলো।

সাইড টেবিলে ট্রে রেখে ইমা বললো, আপনাকে দেখে বেশি ক্লান্ত লাগছে তাই খাবারটা রুমেই নিয়ে এলাম আপনি খেয়ে তারপর ঘুমান।

সকালে ব্রেকফাস্টের পর আর কিছু পেটে পরেনি তাই প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছিলো ইয়াদের। কথা না বাড়িয়ে খাবার নিয়ে খেতে লাগলো ইমা ইয়াদের দিকে একবার তাকিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো যাতে ইয়াদ তাকে দেখে আনইজি ফিল না করে। ইয়াদের পেটটা ভরে এলে তখন ইমার কথা মনে পড়লো আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ইমা নেই। বেলকনির দিকে তাকিয়ে দেখে রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াদের বড্ড ইচ্ছে করছে মেয়েটা খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করতে কিন্তু নিজের ইগোর জন্য পারছে না। ইয়াদের মনে হচ্ছে সে যদি ইমাকে জিজ্ঞেস করে সে খেয়েছে কিনা তাহলে ইমা মনে করবে ইয়াদ তার প্রতি দূর্বল হয়ে গেছে। এমন উদ্ভট চিন্তা করে ইয়াদ ইমাকে কিছু বললো না। খাওয়া শেষে ইয়াদ ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে এসে শুয়ে পড়লো। অনেক সময় পার হয়ে গেলে ইমা রুমে এসে দেখে ইয়াদ ঘুমিয়ে পড়েছে। ইমা খুব করে চাইছিলো ইয়াদ তাকে জিজ্ঞেস করুক সে খেয়েছে কিনা। পরক্ষণে মনে পরলো ইয়াদ তার হাতের খাবার খেয়েছে এতেই সে খুশী। একটু মুচকি হেঁসে ট্রে নিয়ে নিচে চলে গেলো রাখতে। ইমা নিচ থেকে উপরে আসার সময় শশুর শাশুড়ীর রুমের সামনে এসে থমকে গেলো কারণ এতো রাতে ভেতর থেকে কথা কাটাকাটির শব্দ আসছে। ইমা ভাবলো কারো রুমে আড়ি পেতে কিছু শোনা ঠিক না তাই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই নিজের নাম শুনে থমকে গেলো।

রুবিনা কবির রেগে বললো, এই ইমা অনাথ একটা মেয়ে। এমন একটা চালচুলোহীন মেয়েকে তুমি আমার ছেলের জন্য কীভাবে পছন্দ করলে দিসার ?

ইমা বিড়বিড় করে বললো, দিসার কে শশুর মশাইয়ের নাম তো ইয়াসির ?

ইমা অবাক হয়ে আরো কৌতূহল নিয়ে শুনতে লাগলো। আরো বেশী অবাক হলো দিসার হিসাবে যখন তার শশুর মশাইয়ের গলার আওয়াজ শুনতে পেলো তখন।

দিসার বিরক্ত হয়ে বললো, দিসার দিসার করো না তো রুবিনা দেয়ালেরও কান আছে কেউ শুনতে পেলে সন্দেহ করবে আর তোমার ছেলের জন্য এমন মেয়ে কেনো পছন্দ করেছি সেটা আবার তুমি জিজ্ঞেস করছো ? তোমার বদরাগী ছেলের বাজে ব্যবহার কোনো ভালো পরিবারের মেয়ে সহ্য করে এখানে পরে থাকবে ? এই মেয়ের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই তাই ইয়াদ ওকে যতোই অত্যাচার করুক সে কোথাও যেতে পারবে না আর আমাদের কাজ হলেই হয়েছে ইয়াদের বউ কে হলো সেটা দিয়ে আমাদের কী প্রয়োজন ? নাকি শেষ সময়ে এসে নিজের ছেলের জন্য তোমার ভালোবাসা উতলে পরছে রুবিনা ?

রুবিনা রেগে বললো, দেখো ইশান আর ইয়াদ তোমার কাছে আলাদা হলেও আমার কাছে এক। কারণ দুজনকেই আমি দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধরে প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করে জন্ম দিয়েছি।

দিসার মানে কথিত ইয়াসির রেগে বললো, দেখো রুবিনা তীরে এসে তরী ডুবিয়ে দিও না। তুমি শুধু ইয়াদের বউকে হাতে রাখার চেষ্টা করো তুমি ভালো করেই জানো ঐ মেয়ের সাহায্য ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারবো না।

রুবিনা রেগে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো আর ইয়াসির নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। এদিকে ইমা পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে এরা তাকে নিয়ে কোনো জঘন্য খেলা খেলার জন্যই ইয়াদের সাথে বিয়ে দিয়েছে। এদের প্রত্যেকটা কথা রহস্যে মুড়ানো। ইয়াদ আর ইশান ইয়াসির হামিদের কাছে আলাদা হবে কেনো সেটা ইমা কিছুতেই বুঝতে পারছে না। উনারা দুজনেই তো উনার সন্তান তাহলে এসব কী বলছে ? ইমা হাজারটা চিন্তা নিয়ে রুমে গেলো সে কিছুতেই কোনো হিসাব মিলাতে পারছে না। কী চলছে তার চোখের আড়ালে এই বাড়িতে ?

চলবে,,,,