তিক্ততার সম্পর্ক পর্ব-১৮

0
1784

#তিক্ততার_সম্পর্ক
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ১৮

ইয়াদ ঘুম থেকে উঠে বেডে বসতেই সোফায় চোখ গেলো। ইমা বসে আছে চোখদুটো লাল টকটকে হয়ে গেছে। ইয়াদ ভ্রু কুচকে তাকালো ইমার দিকে।

এই মেয়ে তুমি সারারাত না ঘুমিয়ে বসে ছিলে নাকি ?

ইয়াদের কথায় ইমা চমকে উঠলো। সারারাত টেনশনে ঘুমই আসেনি ইমার। মাথায় একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে কী চলছে এই বাড়িতে ?

ইমা আনমনে বলে উঠলো, বাবা আপনাকে আর ইশান ভাইকে আলাদা চোখে দেখে কেনো ?

ইয়াদ চমকে উঠে বললো, হোয়াট,,, ?

ইমা ব্যস্ত স্বরে বললো, না না কিছু না।

ইমা উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফজরের আযান হয়েছে একটু আগেই। ইয়াদ ইমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে এই মেয়ের কী হলো সেটা বুঝতে পারছে না ইয়াদ। ইমা ওয়াশরুম থেকে বের হলে ইয়াদ গেলো। নামাজ শেষে ইমা চলে গেলো কিচেনের দিকে। আজ থেকে রান্না সেই করবে ঠিক করেছে। এই বাড়িতে তার কাজ করার মতো কিছুই নেই। প্রত্যেকটা কাজের জন্য আলাদা আলাদা সার্ভেন্ট আছে তবে কোকের রান্না ইমার কাছে হোটেলের খাবারের মতো লাগে, একদম ভালো লাগে না। সকালে অবশ্য ব্রেড, বাটার, ডিমের অমলেট, ফ্রুটস জুস, ফ্রুটস ছাড়া কিছু খেতে দেখে না এদের। ইমার এসব খাবার বিরক্ত লাগে। দু তিন খেয়েই বিরক্ত হয়ে গেছে সারা বছর এরা কীভাবে খায় সেটা ভেবে পায় না ইমা। ইমা ব্রেকফাস্ট তৈরি করতে শুরু করে দিলো, ইয়াদ এক্সারসাইজ শেষে শাওয়ার নিয়ে রুমে এসে ভ্রু কুঁচকালো, সাইড টেবিলে তার ধোঁয়া উঠা গরম কফি, বেডের ওপর তার প্রয়োজনই সব জিনিস গুছিয়ে রাখা আর কিছুই খুঁজতে হবে না যাওয়ার সময়। ইয়াদ এসব দেখে খুশী হওয়ার বদলে রেগে গেলো।

ইয়াদ রাগে গিজগিজ করতে করতে বললো, কী প্রমাণ করতে চাইছে মেয়েটা, সে আমার স্ত্রী ?

ইমা সব কাজ শেষ করে ইয়াদের আর কিছু লাগবে কিনা দেখার জন্য রুমে এলো। রুমে এসে ইমা অবাক হয়ে গেলো কারণ ইয়াদ তার রাখা কোনো জিনিস ধরেনি। কাবার্ড থেকে অন্যগুলো বের করে পরে নিয়েছে। ইমা বেডে যেভাবে রেখেছিলো সব সেভাবেই আছে।

ইমা অবাক হয়ে বললো, আমি তো সব গুছিয়ে রেখেছি আপনি,,,

ইমা আর কিছু বলার আগেই ইয়াদ ইমাকে এক ঝটকায় কাবার্ডের সাথে চেপে ধরে বললো, কী প্রমাণ করতে চাইছো তুমি ? এসব করে, নিজেকে আমার স্ত্রী প্রমাণ করতে চাইছো ?

ইমা ভয় না পেয়ে নির্লিপ্ত ভাব নিয়ে বললো, আমার তো কিছু প্রমাণ করার নেই। আপনি মানেন আর না মানেন পবিত্র কালেমা পরে বিয়ে করেছেন আমাকে। আমি আপনার স্ত্রী এটা প্রমাণ করার কিছু নেই। সারা দেশের মানুষ জানে আর সেটা আপনারাই জানিয়েছেন।

ইয়াদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো, তুমি আমার স্ত্রী সারা দেশের মানুষের কাছে কিন্তু আমার কাছে না। তাই সারা দেশের মানুষের কাছে আমার স্ত্রী হয়ে থাকো আমার কাছে স্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করো না সেটা তোমার জন্য ভালো হবে না।

ইমা আবার বললো, আমার সাথে আজ পর্যন্ত কী ভালো হয়েছে সেটা আমি খুঁজে পাই না। আপনি আর কী খারাপ করবেন ?

ইমা নিজের হাতের পুড়া দাগ দেখিয়ে বললো, এতোটা খারাপ করবেন ?

ইয়াদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে পেছনে ঘুরে পিঠের শাড়ীর আচল সরিয়ে মারের কালো কালো দাগ দেখিয়ে বললো, না কী এতোটা খারাপ করবেন ?

ইয়াদ ইমার পিঠ দেখে আঁতকে উঠলো। কারণ শাড়ী আর ব্লাউজ ছাড়া শরীরের যতটুকু জায়গা ফাঁকা আছে সব জায়গায় কালো কালো দাগ। দেখে মনে হচ্ছে দাগগুলো বেশ পুরনো আবার কিছু নতুন। ইয়াদ কিছুই বুঝতে পারছে না এই মেয়ের শরীরে এসব দাগ কিসের।

ইমা ধরা গলায় বললো, ছোট ছোট ভুলের পুরষ্কার স্বরূপ এই দাগগুলো উপহার দিয়েছিলো আমার মণি। সবার সামনে যতটা অত্যাচার করতো সবার চোখের আড়ালে করতো তার থেকেও কয়েকগুন বেশি। আপনি আর কী করবেন এর থেকে বেশি করতে চাইলে বড়জোর খুন করতে পারবেন আর তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আপনার যদি আমাকে খুন করে শান্তি হয় তাহলে আমাকে বলবেন হাঁসি মুখে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে যাবো জীবন দেওয়ার জন্য।

ইয়াদ কী বলবে বুঝতে পারছে না। মারের দাগগুলো কালো হয়ে গেছে অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ায় দাগগুলো যেতে হয়তো আরো অনেকটা সময় লাগবে। কিন্তু ইয়াদ এটা ভেবে পাচ্ছে না তার থেকেও খারাপ মানুষ পৃথিবীতে আছে। এটা ভেবে ইয়াদ নিজেই আবার হাঁসলো তাদের থেকে খারাপ মানুষ তো তার চোখের সামনে এই বাড়িতেই বাস করছে এক ছাদের নিচে।

ইয়াদকে চুপ থাকতে দেখে ইমা বললো, কী হলো চুপ করে গেলেন কেনো ?

ইয়াদ নিজের কাজ করতে করতে বললো, তোমার সাথে এমনটা করার কারণ ?

ইমা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, জানি না তবে নানু বলতো মণির রাগ ছিলো আমার বাবা মায়ের উপর আর তার প্রতিশোধ আমার উপর নিয়েছে। আর উসিলা স্বরুপ ছিলো আরমান ভাইয়া।

ইয়াদ আরমানের নাম শুনে ইমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো। কারণ এই নামে ইমাদের পরিবারে কেউ আছে বলে শুনেনি। বিয়ের সময় কথাকে ছাড়া কাউকে দেখেওনি।

ইয়াদ বললো, আরমান কে ?

ইমা ইয়াদের প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। ইয়াদ এমনই তাকে সহ্য করতে পারে না এখন যদি আরমানের বিষয়ে সব শুনে সন্দেহ করে ইমাকে। সেই ভয়ে ইমা কিছু বলছে না।

ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো, কী হলো কথা বলছো না কেনো, আরমান কে ?

ইমা আমতা আমতা করে বললো, আমার খালাতো ভাই আরমান ||লেখনীতে তাহমিনা তমা||

ইয়াদ বললো, তো সে কী করেছে ?

ইমা অস্থির হয়ে বললো, ক,,,কিছু না আপনি নিচে আসুন তাড়াতাড়ি, সবাই হয়তো অপেক্ষা করছে।

ইমা শাড়ীর আঁচল ভালো করে গায়ে জড়িয়ে রুমের বাইরে চলে গেলো ইয়াদ সেদিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ ইয়াদের হুঁশ হলো সে এতোক্ষন মেয়েটার সাথে এতো ভালো করে কথা বলেছে আর তার রাগও হয়নি। ইয়াদ যেনো নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না। রাগটা এখন ইয়াদের একটা রোগে পরিণত হয়েছে। কারো সামান্য কথায়ও সে ভয়ংকর রেগে যায়। তবে কী ইয়াদ তার রোগের মেডিসিন পেয়ে গেলো। ইয়াদ চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে চলে গেলো। নিচে গিয়ে ইয়াদের চোখ চড়কগাছ। টেবিল ভর্তি নানা আইটেমের খাবার সাজানো, প্রতিদিনের মতো বোরিং খাবারগুলো আজ দেখা যাচ্ছে না। ইয়াদের বুঝতে বাকি রইলো না এসব কিছু ইমা করেছে। ইয়াদ রাগে কটমট করে ইমার দিকে তাকালো। সে কেনো এই মুখোশধারী মানুষগুলোর জন্য এতো কষ্ট করে রান্না করেছে সেই রাগে ইয়াদ ফেটে পরছে। এদের পিছনে বাধ্য হয়ে এতো বছর ধরে নিজের দাদার কষ্টের টাকার অন্ন ধ্বংস করছে এটাই তো বেশি।

ইয়াদ না খেয়ে ইমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, এখনই রুমে এসো।

কথাটা বলে ইয়াদ কিছু না বলে হনহনিয়ে আবার রুমে চলো গেলো। এদিকে ইয়াদের কথা শুনে ইমা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইয়ানা আর ইশান মুচকি মুচকি হাঁসছে আর রুবিনা আর ইয়াসির অবাক হয়ে ইয়াদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের চোখে বিষ্ময়, তবে কী তারা খুব তাড়াতাড়ি ইমাকে দিয়ে নিজেদের কাজ হাসিল করতে পারবে সেটা ভাবছে তারা ?

ইয়ানা দু্ষ্টুমি করে বললো, যাও যাও ভাবি তোমাকে ডাকছে তো ভাইয়া ||লেখনীতে তাহমিনা তমা||

ইমা ভয়ে ভয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো কারণ ইমা ভালো করেই জানে ইয়াদ তাকে ভালোবাসার জন্য রুমে ডাকেনি। আবার হয়তো রেগে গেছে কিছু নিয়ে তাই এভাবে ডেকেছে।

ইমা রুমে গিয়ে কাঁপা গলায় বললো, কী হয়েছে ?

ইয়াদ ইমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, তোমাকে কিচেনে যেতে করে বলেছে ?

ইমা আমতা আমতা করে বললো, না মানে আমি নিজে থেকেই গিয়েছি।

ইয়াদ আগের ভঙ্গিতে বললো, এই বাড়িতে কোনো কাজে হাত লাগাবে না। প্রত্যেকটা কাজের জন্য সার্ভেন্ট রাখা আছে।

ইমা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, আচ্ছা আমার কোনো কিছুই কী আপনার ভালো লাগে না ? আমি যায় করি আপনি তাতেই রেগে জান। আমার ভুল কোথায় আমি সেটাই বুঝতে পারছি না এখন পর্যন্ত।

ইয়াদ রহস্যময় হেঁসে বললো, আমাকে বিয়ে করা তোমার সবচেয়ে বড় ভুল, বুঝতে পেরেছো মিসেস ইসমাত আবিয়াত ইমা আর এই ভুলের মাশুল তোমাকে সারা জীবন দিতে হবে।

কথাটা বলে ইয়াদ রুম থেকে বের হয়ে যেতে গেলে ইমা বলে উঠলো, ঠিক আছে আমার ভুলের মাশুল আমি সারাজীবন দিবো তার আগে এটা বলুন বাড়ির কোনো কাজ না করলে কী করবো আমি সারাদিন। আপনি অফিসে থাকেন, আপু ভার্সিটি চলে যায়, মা সারাদিন কোথায় থাকে তাকে,,,,,

ইমা কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই ইয়াদ গাল বেয়ে ধরলো ইমার।

রক্তলাল চোখে তাকিয়ে বললো, খবরদার ঐ মহিলাকে যেনো আর কখনো আমার সামনে মা ডাকতে না দেখি তোমাকে।

ইমা ঐ অবস্থায় থেকেই বললো, তাহলে কী বলবো, আপনার মতো নাম ধরে ডাকবো ?

ইয়াদ দাঁত কিটমিট করে বললো, দরকার হলে তাই বলবে কিন্তু মা বলবে না।

ইমা ইয়াদের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো, ইয়ানা আপু, ইশান ভাই উনারাও তো মা বলে ডাকে তাহলে,,

ইয়াদ বললো, ইশান কী বললো তাতে আমার এক বিন্দু কিছু আসে যায় না। তবে ইয়ানা মা বলা তো দূর, ঘৃণায় ঐ মহিলার দিকে তাকাবেও না আর সেটা খুব তাড়াতাড়ি হবে।

ইয়াদ ইমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। ইমা নিজের গালে হাত বুলাতে লাগলো। ইয়াদের হাত লোহার মতো শক্ত ইমার গাল ব্যাথা হয়ে গেছে।

ইয়াদ হঠাৎ বললো, করার কিছু পাও না তুমি তাই না ? তোমার পড়াশোনা শেষ ? গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে ফেলেছো ?

ইমা অবাক হয়ে বললো, আমার তো অনার্সই কমপ্লিট হয়নি আবার গ্রাজুয়েশন ?

ইয়াদ বললো, নিজেকে আবরার হামিদ ইয়াদের স্ত্রী দাবি করো অথচ তার সাথে দাঁড়ানোর শিক্ষাগত যোগ্যতাও নেই। আবার তুমি কাজ খুঁজছ সারাদিন কী করবে ?

ইমার চোখ খুশিতে চকচক করে উঠলো, আমাকে পড়তে দিবেন ?

ইয়াদ গম্ভীর গলায় বললো, কেউ বলবে আবরার হামিদ ইয়াদের স্ত্রী আন্ডারগ্রাজুয়েট সেটা আমারই অপমানজনক তাই ইয়ানার সাথে ভার্সিটি চলে যেও আজ থেকে।

ইয়াদ চলে গেলে ইমাও সাথে গেলো। খাবার খেয়ে সবাই ইমার রান্নার প্রশংসা করলো। ইয়াদ কিছু না বলে চুপচাপ খেয়েছে শুধু। খাওয়া শেষে যে যার কাজে চলে গেলো।

২২.
দেখতে দেখতে কেটে গেলো অনেকগুলো দিন। ইয়াদ আর ইমার সম্পর্কের তেমন একটা উন্নতি হয়নি। তবে ইয়াদ ইমার সাথে কথা বলে প্রয়োজন মতো, রেগে গেলে আবার আগের মতোই গলা চেপে ধরে বা হাত মুচড়ে ধরে। ইমা অবশ্য প্রচুর বিরক্ত করে ইয়াদকে। ইয়াদের রাগকে ভয় পেলেও ইয়াদের কপাল কুঁচকে তাকানো খুব ভালো লাগে ইমার। নিজের অজান্তে কখন ইয়াদকে এতেটা ভালোবেসে ফেলেছে ইমা বুঝতেই পারেনি। ইয়ানার সাথে রেগুলার ভার্সিটি যায় ইমা তবে আরমানকে যথা সম্ভব এড়িয়ে চলে, মন দিয়ে পড়াশোনা করে। ইয়াদকে মাঝে মাঝে বাঁধ্য করে তাকে পড়াশোনায় সাহায্য করতে, হঠাৎ করে ইমার সাথে ইয়াদের এমন নরমাল ব্যবহার করারও একটা কারণ আছে। যেটা হয়তো সঠিক সময়ে জানতে পারবে ইমা। এদিকে রহস্য উদঘাটনের যথাসাধ্য চেষ্টা করছে ইমা কিন্তু যখনই মনে হয় সব রহস্য উদঘাটনের একদম নিকটে তখনই এমন কিছু সামনে আসে যাতে আবার সব এলোমেলো হয়ে যায়। ইমার সন্দেহের তালিকায় আছে ইয়াসির হামিদ। ইমার মনে হয় এই একজন ব্যাক্তি সব রহস্যের মূল কিন্তু তার বিরুদ্ধে কিছু খুঁজে পায় না ইমা। এদিকে ইশান প্রতিনিয়ত কথাকে বিরক্ত করার নতুন ওয়ে খুঁজে চলেছে। কথা ইমার সাথে কয়েকবার দেখা করতে এসেছিলো কলেজ থেকে ফেরার সময়, প্রত্যেক বারই ইশানের জালাতন সহ্য করতে হয়েছে তাকে।

ইমা বেডে বসে নিজের পড়া দেখছিলো আর ইয়াদ অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে।

ইমার পুরোনো মডেলের ফোনটা বেজে উঠলে ইমা বইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকেই ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলো, আসসালামু আলাইকুম কে বলছেন ?

ইয়াদ ইমাকে ফোন রিসিভ করতে দেখে একবার ঘুরে তাকালো ইমার দিকে। ইমার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে ইয়াদের আনইজি লাগে নিজের খোলস থেকে বের হতে পারে না চেষ্টা করেও। তাই যতটা প্রয়োজন ততটাই কথা বলে। ফোনে ওপাশের কথা শুনে ইমা মা বলে চিৎকার করে উঠলো। হাত থেকে ফোনটা পরে গেলো। ইমা পাগলের মতো হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।

ইয়াদ দ্রুত পায়ে ইমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে, এভাবে পাগলের মতো কাঁদছো কেনো তুমি ?

ইমা কাঁদতে কাঁদতে বললো, আমার মা,,,,

বাকিটা বলার আগেই আবার কাঁদতে লাগলো, ইয়াদ বিরক্ত হয়ে ইমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে ইমার ফোনটা নিজের কানে নিলো।

হ্যালো কে বলছেন ?

ভেজা গলায় কথা বললো, ভাইয়া আমি কথা।

ইয়াদ কথাকে চেনে কয়েকবার বাসায় এসেছিলো আর বিয়েতেও পরিচয় দিয়েছিলো।

ইয়াদ শান্ত গলায় বললো, কী হয়েছে কথা ? ইমা এভাবে কাঁদছে কেনো কী বলেছো ?

উত্তরে কথা যা বললো তাতে ইয়াদ বরফের মতো জমে গেলো। অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো ইমার দিকে।

ইমা ইয়াদের শার্টের হাতা আঁকড়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো, আমি মায়ের কাছে যাবো প্লিজ আমাকে নিয়ে চলুন। আপনি যা বলবেন তাই শুনবো। আপনাকে কখনো বিরক্ত করবো না। একদম চুপচাপ থাকবো একটা কথাও বলবো না আর কখনো। তবু আমাকে আমার মায়ের কাছে নিয়ে চলুন দয়া করে।

আজ কেনো যেনো ইয়াদের খুব কষ্ট হতে লাগলো ইমার কান্না দেখে। বুকের বা পাশটায় চিনচিনে ব্যথা অনুভব হতে লাগলো। ইমার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বললো, কান্না করো না প্লিজ, আমি নিয়ে যাবো তোমাকে এখনই।

চলবে,,,,