#তিলকপুরের_মিঞা_বাড়ি
Sumon Al-Farabi
#১০তম_পর্ব
– ভূত কে কিভাবে ধরবে ভাই! এই খু*নগুলো তো ভুত করছিলো।
– তুই কি পাগল হইলি! ভুত কখনো খু*ন করতে পারে! তুই কখনো ভুত দেখেছিস!
– না।
– আমিও দেখি নি। তারমানে এইসব কাজ কোনো না কোনো মানুষই করছে। এখন চল তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখি কার এত্তো বড় কলিজা হয়েছে আমাদের দিকে নজর দেয়।
– একে কি করবি!
– সাথে করে নিয়ে চল। বেচারা অসুস্থ মানুষ।
একটা বাইকে তিনজন যাচ্ছি। আমি মাঝে বসে আছি। কিন্তু মাথায় একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে “কে এই খু*নি! যে ধরা পড়েছে! ” পরক্ষনেই আবার চিন্তা করছি যাচ্ছিই তো গেলেই সব জানতে পারবো।
কিছুক্ষণের মাঝেই পৌঁছে গেলাম। রাইয়ান এবং তার বন্ধু নেমেই হনহন করে থানার ভিতরে চলে গেলো। আমি নেমে ধীরে ধীরে হেঁটে ভিতরের দিকে গেলাম। রাইয়ান থানায় ঢুকেই জোরে জোরে অকথ্য ভাষায় গালি দিচ্ছে আর বলছে সেই খু*নি কোথায়!
আমজাদ স্যার পিছনে থেকে এসে আমার কাঁধে হাত রাখতেই আমি পিছনে ফিরলাম – তুমি ঐখানে গিয়ে বসো।
আমজাদ স্যারকে দেখে রাইয়ান কিছুটা নিরব হয়ে গেলো।
– কি হয়েছে! এতো চেচামেচি কিসের!
– কোথায় সেই খু*নি।
– আমি ও তো মাত্র আসলাম। খু*নিকে ধরেছে সেখানে থাকা গার্ড।
একজন পুলিশ কে জিজ্ঞেস করা হলো খু*নি কোথায়!
– স্যার আপনার কেবিনে হাত বেঁধে মাথায় কাপড় দিয়ে ঢেকে বসিয়ে রেখেছি।
আমজাদ স্যার এবং আমরা তিনজন স্যারের কেবিনে আসলাম । এতক্ষণ আমাদের সবারই ধারণা ছিলো খু*নি একজন পুরুষ কিন্তু ভিতরে আসার পর সকলের ধারণা পাল্টে যায়। সবাই একসাথেই বলে উঠে – একটা মেয়ে মানুষ!
আমরা সবাই ভিতরে আসার পর মহিলা পুলিশ সেই মেয়েটার মুখে থেকে কাপড় সরিয়ে দিতেই রাইয়ান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো- তুই! তুই কিভাবে!
রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে এটা বুঝতে পারলাম যে মেয়েটাকে ধরা হয়েছে সে তার অনেক কাছের।
রাইয়ানের বন্ধু বললো- এটা হতে পারে না। এ কিভাবে এতো গুলো খু*ন করতে পারে!
আমজাদ স্যার বললো- এনাকেই চুপিচুপি মিঞা বাড়িতে ঢুকে গত যে খু*ন হয় তার লা*শ যেখানে পাওয়া যায় সেখানে কিছু খুঁজতে সময় পাওয়া গেছে।
রাইয়ান এবার কিছুটা চড়াও হয়ে বললো- আপনি জানেন আপনি কাকে নিয়ে কি বলছেন! ও আমার বোন। আমার মায়ের পেটের বোন।
আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। আমজাদ স্যার ও থ হয়ে দাঁড়িয়ে একবার মেয়েটার দিকে দেখছে একবার আমার দিকে একবার রাইয়ানের দিকে।
রাইয়ান এখন যে কথাটা বললো সেটা শোনার জন্য আমরা কেউ মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
রাইয়ান অনেক চেষ্টা করলো ওর বোনকে সেখানে থেকে রাতেই ছাড়িয়ে নিতে কিন্তু আমজাদ স্যার একেবারেই না করে দিয়েছেন। আমজাদ স্যারের ভাষ্য – এই মামলাটা অনেক গভীর। তাছাড়া উনাকে যখন ঐ বাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছে তবে নিশ্চয়ই ঐ বাড়ির সাথে উনার কোনো সম্পর্ক আছে। এছাড়াও আপনাদের দুজনের নিরাপত্তার বিষয়টা ও তো আমাকে দেখতে হবে। আজ উনাকে যদি আমি ছেড়ে দেই কাল যদি আপনি কিংবা আপনার বন্ধুর কারো লা*শ মিঞা বাড়ির আশেপাশে পাওয়া যায় তখন দোষারোপ তো আমাকেই করবেন। তাই উনি আমাদের হেফাজতে থাকবে।
– কিন্তু স্যার আমাদের বাড়ির মেয়ে। বিষয় টা জানাজানি হলে মানুষ কি বলবে!
– তবুও আমি উনাকে ছাড়তে পারবো না।
– তাহলে বিষয় টা যাতে পাঁচ কান না হয় সেই ব্যাবস্থা করুন।
– সেটা আমি কিভাবে করবো! এমনিতেও আপনাদের উপর কথা বলার মতো সাহস কারো নেই।
– স্যার আমার একটা অনুরোধ রাখুন।
– কি অনুরোধ!
– আপনি দয়া করে ওকে থানায় না রেখে আপনার বাসায় রাখুন। তাহলে মানুষ একটু কম জানাজানি হবে।
– এটা আইনের মধ্যে পড়ে না। আপনার বোন যদি সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায়। তখন আমি কি জবাব দিবো।
– দরকার পড়লে আপনি ওকে বেঁধে রাখবেন। তবুও আপনার বাসায় রাখুন। আমি চাই না আমার এতো আদরের বোনটার নামে কোনো বদনাম ছড়িয়ে যাক।
আমি এতোক্ষণ ধরে উনাদের কথাই শুনছি আর মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছি। মেয়েটা কোনো কথা বলছে না। নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করার বিন্দু মাত্র চেষ্টা করছে না। তার সামনে এতো কিছু কথা হচ্ছে কিন্তু সে! কোনো খেয়াল নেই তার সেদিকে। শুধু নিজ মনে কেঁদে যাচ্ছে।
আমজাদ স্যার কি যেন ভাবছেন। রাইয়ান স্যারের দিকে চেয়ে আছে। আমি তখন স্যার কে বললাম – স্যার, একবার উনাকে জিজ্ঞেস করে নিলে ভালো হতো না উনি কেন গিয়েছিলেন সেখানে! তখন থেকে তো উনাকে একটা কথাও বলতে শুনলাম না। নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করার একটা সুযোগ তো উনাকে দিবেন।
আমার কথায় রাইয়ানের চোখে উজ্জ্বল আভা ফুটলো। সে তার বোনকে জিজ্ঞেস করলো- কেন গিয়েছিলি সেখানে বল! স্যার কে সত্যি সত্যি সব বল স্যার তোকে ছেড়ে দিবে।
সব থেকে অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে তাকে এতো করে জিজ্ঞেস করেও তার মুখ থেকে একটা কথা বের করা যাচ্ছে না। তবে মাঝে মাঝে তার চাহনিতে তার নিরপরাধ ভাবটা খুব করে বোঝা যাচ্ছে ।
– স্যার আপনি চাইলে উনাকে আপনার বাসায় রাখতেই পারেন। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে না উনি পালানোর কোনো চেষ্টা করবে।
– ঐ ছেলপটা একদম ঠিক বলেছে স্যার। আমার বোন পালানোর চেষ্টা করবে না। যদি করেও তবে আমি নিজে খুঁজে বের করে আবার আপনার বাসায় দিয়ে আসবো। দরকার পড়লে আমার লোক সারাদিন রাত আপনার বাসার সামনে পাহাড়া দিবে।
– সেটার দরকার হবে না। আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।
থানার সবাই কে বিষয় টা খুব গোপন রাখতে বলে স্যার আমি এবং মেয়েটা একটা অটোতে করে বাসার দিকে যাচ্ছি।
– বুঝলে সুমন, নিজের বাড়ির মেয়ে রাজকন্যা অন্য বাড়ির মেয়ে ভোগের কন্যা। এটাই হচ্ছে আমাদের সমাজের কিছু বিত্তবান শ্রেণির মানসিকতা। তারা মনে করে পুরুষের কোনো সম্মান হয় না পুরুষ যা খুশি করতে পারে। কিন্তু নারী করলে সম্মানহানী হবে। তাই তাদের পুরুষরা খু*ন রে*পড সব করতে পারে। নারী সামন্য সন্দেহ তালিকায় থাকলেই কলিজার পানি শুকিয়ে যায়। এই মেয়েকে আমি এমন ভাবে ফাসিয়ে দিবো যে অন্যের বোনের জীবন নিয়ে খেলার স্বাদ মিটে যাবে।
আমি স্যারের কথায় মনোযোগ না দিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি। আটোর ভিতরের নিভু নিভু আলোয় একটু একটু করে তার ফেইসটা বোঝা যাচ্ছে।
– স্যার, উনার হাতটা খুলে দিন। হাতে কড়া থাকায় উনি ব্যাথা পাচ্ছে।
আমজাদ স্যার বড় বড় চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকালো।
To be continue….