তিলকপুরের মিঞা বাড়ি পর্ব-০৯

0
92

#তিলকপুরের_মিঞা_বাড়ি
Sumon Al-Farabi
#৯ম_পর্ব
কিছুক্ষণ পর স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললো- তোমার মুখ এমন শুকনো শুকনো দেখাচ্ছে কেন!
– হঠাৎ মাথা ধরছে।
– চা খাবে?
– হ্যাঁ, চা খেলে কিছুটা কমতে পারে।

একটা টং দোকানের সামনে রিকশা এনে থামালো। স্যার নেমে চার আর সিগারেটের জন্য বললো। আমি তখনও রিকশাতেই বসে আছি। আমার হাতে প্রথমে সিগারেটটা ধরিয়ে দিয়ে এরপর যখন চা দিলো তখন স্যার জিজ্ঞেস করলো- আচ্ছা সুমন তোমার কি মনে হয়!
চা’য়ে একটা চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- কোন বিষয়ে স্যার!
– গত যে খু*ন টা হলো সেটা কিভাবে হয়েছে!
– আমি কিভাবে জানবো স্যার! তাছাড়া আপনি তো পোস্ট*মর্টেম রিপোর্ট ও দেখিনি যে বলতে পারবো।
– তুমি সেদিন বলেছিলে যে ঐ লোকটাও ওদের দলে ছিলো। কিন্তু কিভাবে হতে পারে? তোমার কেন মনে হলো এমনটা?
– স্যার আপনি হরর মুভিতে দেখেন নি! মৃ*ত মানুষের আত্মা সবাইকে ঠিক সেভাবেই হ*ত্যা করে যেভাবে তাকে হ*ত্যা করা হয়।
– তার সাথে এটার কি সম্পর্ক?
– হাসনাহেনার শরীর এসিড*দগ্ধ করা হয়েছিলো এমনটা তো আপনি নিজেই বলেছিলেন।
– হ্যাঁ।
– দেখুন হাসনাহেনা এসিড*দগ্ধ হয় কিন্তু সে প্রতিশোধটা অগ্নি*দগ্ধ করে নেয়। খুবই সাধারণ একটা লজিক। ঐ মানুষকে কিভাবে মা*রা হয়েছে সেটা আমি জানি না। তবে এতটুকু বলতে পারি তার মৃ*ত্যু ঐ জলন্ত লোহার অংশ বিশেষ এর জন্য হয়েছে।
আমজাদ স্যার কি যেন ভাবছে আর চা’য়ে চুমুক দিচ্ছে। চা প্রায় শেষের দিকে। এর মাঝেই বাইকে করে দুজন লোক এসে আমাদের সামনে থামলো। একজন চেয়ারম্যান এর ছেলে কিন্তু অন্য জন আমার অজানা।
চেয়ারম্যানের ছেলে নেমেই আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো- তুমিই সুমন তাই না!
– হ্যাঁ।
– শরীরের কি অবস্থা এখন?
– মোটামুটি।
পিছনে বসে ছিলেন যিনি উনি আড় চোখের তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।
– সুমন তুমি এখানে বসো আমি এদের সাথে একটু কথা বলবো।
আমজাদ স্যার আমাকে কথাগুলো বলে সেখানে রেখে রাইয়ান এবং অন্য লোকটার সাথে ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগিয়ে গেলো।
কিন্তু কি এমন কথা হতে পারে যা আমার সামনে বলা যাবে না!
উনারা একটু দূরে চলে যেতেই দোকানদার মামা আমায় জিজ্ঞেস করলো- এই বদ পোলাগো লগে স্যারে কি কথা কয়!
– আমি কিভাবে জানবো বলুন! আপনি ও যেখানে আমি ও তো সেখানেই। আমায় একটা গোল্ডলিফ দিন। একটু কষ্ট করে এগিয়ে দিন নামতে পারবো না।

দোকানদার মামা বের হয়ে এসে সিগারেট আর লাইটার টা আমার হাতে দিয়ে বললো- পোলাগুলা খুব খারাপ। আমার বন্ধুর পরিবারটারে একবারে শেষ কইরা দিছে।
– আপনার বন্ধুর পরিবার মানে?
– ঐ যে মিঞা বাড়ির। ও আমার বন্ধু আছিলো। খুব ভালো মানুষ আছিলো। কখনো কারো সাথে দুই কতা হয় নাই। কিন্তু এই জা*নোয়ার গুলা…
কথা গুলা বলতে বলতেই লোকটা হাত দিয়ে চোখ মুছলো। -আমার নাতনীও হাসনার সাথে পড়ছিলো। ওরা একসাথেই স্কুল কলেজ যাইতো।
– আপনার নাতনী কোথায়!
– ঐ ঘটনার পর আমার নাতনীটারে নিয়া খুব চিন্তা হইছিলো এই জন্য ওর বিয়া দিয়া দিছি। এখন খুব ভালো আছে।
– ওহ আচ্ছা।
দোকানদার আমায় আরও কিছু বলতো হয়তো কিন্তু ততক্ষণে স্যার আসায় উনি চলে গেলো।
রাইয়ান এসে আমায় জিজ্ঞেস করলো- দোকানদারের সাথে কি এতো গল্প করছিলে!
– সিগারেট দিতে এসেছিলো। আমি হাটতে পারবো না তো তাই।
– সমস্যা নেই আজ হাঁটা চলা দৌড় সব শিখে যাবা।
আমি অবাক দৃষ্টিতে স্যারের দিকে তাকালাম। স্যার আমায় আশ্বস্ত করার জন্য রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো- তোমার সাথে যা ডিল হয়েছে সেটা যেন মনে থাকে। ওর শরীরে একটা ফুলের আঘাত ও যেন না লাগে। ও কিন্তু আমার গেস্ট।

এবার বুঝতে পারলাম এতক্ষণ তারা আমায় নিয়ে কোনো ডিল করলো। আমি স্যারের দিকে বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। স্যার এমনটা করবে এটা কখনো কল্পনাতেও ছিলো না।
স্যার হয়তো আমার দৃষ্টির ভাষা বুঝতে পারলো। উনি রিকশায় উঠে আমার পাশে বসলো- দেখো সুমন আমি জানি তুমি আমায় ভুল বুঝছো। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি যা করছি সেটাই ঠিক এবং এই পথেই তোমার ভালো হবে। ওদের সন্দেহ হচ্ছে এসব তুমি করছো। তাই ওরা তোমাকে ওদের হেফাজতে রাখবে কয়েকদিন। কিন্তু আমার সব কথা হয়েছে তোমার যত্নের কোনো কমতি হবে না।
– কিন্তু স্যার আপনি তো সব কিছুই জানেন!
– আমি জানি কিন্তু ওরা তো জানে না।
– এই অবস্থায় কিভাবে স্যার!
– সেখানে তোমার দেখাশোনা করার লোক থাকবে এই দুই তিন দিন।
সেখানে আর তেমন কিছু বললাম না। আমি বুঝতে পারছিলাম এখানে স্যার ও নিরুপায়। কারণ এদের পলিটিক্যাল পাওয়ার আছে। হয়তো স্যার যা করছে সেই সব আমার কথা ভেবেই করছে। তবে এতটুকু সিউর ছিলাম আমার কিছু শারীরিক এবং মানসিক টর্চার এর জন্য মানসিক এবং শারীরিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।

এখন রাত।
নির্জন একটা জায়গার মাঝে একটা বাড়িতে আমায় রাখা হয়েছে। সেখানে তেমন কোনো মানুষ নেই রাইয়ান এবং তার বন্ধু আর দুজন মানুষ। হয়তো তাদের গার্ড হবে।

এখানে আসার সাথে সাথে আমায় একটা চেয়ারে বসে বেঁধে দেওয়া হয় এবং আমার ফোন টা ও নিয়ে নেয়।
রাইয়ান একটা চেয়ার টেনে নিয়ে আমার সামনে এসে বসে – ঐ মেয়েটা তোর কে হয়!
– কোন মেয়ে?
– মিঞা বাড়ির মেয়েটা।
আমি সংক্ষেপে তাদের পুরো ঘটনা টা বললাম। পুরোটা শোনার পর রাইয়ানের সাথে থাকা ওর বন্ধু বললো- দেখেও তো মনে হচ্ছে না তুই একসাথে এত্তগুলা মানুষকে মা*রতে পারবি। কারণ আমাদের সব বন্ধু তোর থেকে অনেক বেশি শক্ত-সামর্থ্য। রাইয়ান, ওর কথা শুনে মনে হচ্ছে ও ঠিকই বলছে।
– আমার রাতের ঔষধ টা কি দিবেন!
– কিসের ঔষধ! আমরা কি তোকে জামাই আদর করার জন্য এখানে এনেছি নাকি?
তখন আমার ফোনটা বাজতে শুরু করলো। রাইয়ান বিরক্তিকর কন্ঠে বললো- তোর ফোনে আবার কে কল দেয়! এই ওর ফোনটা নিয়ে আয়।

একটা অপরিচিত নাম্বার। মোবাইলের স্কিন আমার দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলো- এটা কে!
– আমি চিনি না। অপরিচিত নাম্বার।
– তাহলে থাক রিসিভ করতে হবে না।

কিন্তু পরক্ষণেই আবার সেই একই নাম্বার থেকে রাইয়ানের ফোনে কল আসে।
– এই নাম্বার তো এখনই তোর ফোনে কল করলো! কিন্তু আমার নাম্বার পেলো কোথায়!
– হয়তো আমজাদ স্যার হতে পারে।

রাইয়ান ফোন রিসিভ করলো। ওপাশে থেকে স্যার বললো- খু*নি কে পেয়ে গেছি তুমি তাড়াতাড়ি সুমনকে নিয়ে থানায় চলে আসো।
ফোনটা কেটে রাইয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বললো- ও সব কিছুই ঠিক বলেছিলো। ঐ বাড়ির সাথে ওর কোনো সম্পর্ক নেই। খু*নি ধরা পড়েছে।

To be continue….