তীব্রস্রোত পর্ব-০৩

0
125

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#তীব্রস্রোত
#পর্ব ৩
.
.
সুপ্তি ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরে দরজা নক করল। তার আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো। সুপ্তি তার মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসি দিতে গিয়ে দেখল, তার মায়ের চোখ মুখ ফুলে আছে বোঝা যাচ্ছে সে এতক্ষণ হয়ত কাঁদছিল। তাই সুপ্তি কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেল।

দুপুরে খেতে বসে সুপ্তি খেয়াল করে দেখল তার মা খাবারের প্লেটে হাত বুলাচ্ছে বেশি খাচ্ছে কম। সুপ্তি এই কয়েক দিন ধরেই খেয়াল করছে তার মা ঠিক করে খাচ্ছে না। বুঝতে পারছে সুপ্তি তার মা সুপ্রিয়ার কথা ভেবে খেতে পারছে না।

রাতে সুপ্তির পড়তে পড়তে একটু রাত হয়ে গেল। সুপ্তির খুব পানির পিপাসা লাগল, তাই সুপ্তি পানির জগ ধরে খালি পেয়ে, জগ হাতে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যেতে নিলো, রুম থেকে বের হতেই সুপ্তি দেখল, তার বাবা-মায়ের রুমে আলো জ্বলছে। আর কথার শব্দও আসছে কিছুটা। সে সেদিকে খেয়াল না দিয়ে পানি নিতে চলে গেল। পানি নিয়ে রুমে প্রবেশ করবে তখন তার মায়ের কান্নার শব্দ কানে এলো, তাই পানির জগ রেখে বাবা-মায়ের রুমের দিকে এগিয়ে গেল। দরজার কাছে যেতেই শুনতে পেল।

……আমি কখনো ভাবিনি আমার মেয়ে এমন একটা কাজ করবে। তুমি জানো সুপ্তির আম্মু, আজ মিস্টার জাফর (বরের বাবা) আমাকে অনেক কিছু বলে অপমান করল, যা নয় তাই বলল। আমি কখনো ভাবিনি আমাদের মেয়েদের জন্য আমাদের এভাবে ছোট হতে হবে। ওর যদি এই বিয়েতে মত না থাকত ও তো আগেই বলে আমাদের সাবধান করতে পারত। আমার নিজেকে এতটা ছোট কখনো মনে হয়নি। আজ মিস্টার জাফরের কাছে অপমানিত হয়ে বুঝতে পারছি, আমি কতটা বোকা ছিলাম, যে নিজের মেয়েদের কে নিয়ে গর্ভ করতাম। সবাই কে বলতাম আমার মেয়েরা এমন, আমার মেয়েরা অমন নয়, খুব ভালো আমার মেয়েরা। আজ সবাই আমার দিকে আঙুল তুলবে, আমার এখন বাড়ি থেকে বের হতেও লজ্জা লাগে। আমার মনে হয় আমি নিজেকে শেষ করে দেই, এমন ভাবে আমি কখনো ভাবিনি, যে আমার মেয়ে আমার মাথা চিরতরে সবার সামনে নিচু করে দিয়ে যাবে।

…….তুমি ওভাবে বলো না প্লিজ, তুমি ছাড়া আমাদের কে আছে? সুপ্তির আর আমার কথাও তো একটু ভাবো। আমরা কী করব? কোথায় যাবো তোমাকে ছাড়া?

……হ্যা এটা ভেবেই তো বেঁচে আছি, না হয় যেদিন সুপ্রিয়া গিয়েছে সেদিনই কিছু একটা করে নিতাম। তবে কী জানো সুপ্তির আম্মু?

……কীহ?

……সুপ্তিও যদি কখনো এমন কিছু করে, তবে হয়ত সেদিন আমি আর নিজেকে সামলাতে পারব না। সেদিনই আমার জীবনের শেষ দিন হবে।

……সুপ্তির আব্বু এগুলো কী বলছ তুমি?

……হ্যা গোঁ আমি ঠিকই বলছি।

সুপ্তি তার মা-বাবার কথা শুনে চমকে উঠল। সুপ্তি মুখ চেপে নিজের রুমে চলে গেল, দরজা আঁটকে দিয়ে সুপ্তি কান্না করতে রইল। সুপ্তির মনে হচ্ছে তার উচিৎ হয়নি সুপ্রিয়ার সঙ্গ দেওয়া। আজ সত্যি যদি তার বাবা কিছু একটা করে ফেলত? তবে সে নিজেকে কখনই ক্ষমা করতে পারত না। সুপ্তি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলল, সুপ্তির মনে হচ্ছে আজ।

সুপ্তি কান্না করতে করতে এক পর্যায় ঘুমিয়ে পড়ল। এভাবেই দিন গুলো ওদের যেতে শুরু করল। সুপ্তি প্রয়োজন ছাড়া কখনই সুপ্রিয়াকে ফোন দেয়নি। সুপ্রিয়ার ইচ্ছে হলে মাঝে মধ্যে ফোন দেয়, সুপ্তি, সুপ্রিয়ার প্রশ্ন অনুযায়ী কথা বলে ফোন কেটে দেয়। এভাবেই বেশ কিছুদিন চলে গেল। প্রায় এক মাস।

সুপ্তি ইউনিভার্সিটি থেকে বের হতে নিলো হটাৎ দেখল গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সুপ্রিয়া, সুপ্রিয়াকে দেখে সুপ্তি এগিয়ে এলো।

…….কী রে তুই এখানে?

…….হ্যা তুই কেমন আছিস?

……আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তা তোর খবর কী?

….. হ্যা আছি আমিও ভালো। আম্মু আব্বু কেমন আছেন?

……যেমনটা থাকার কথা তেমনই আছে। যাক তাদের কথা না হয় তুই নাই জানলি, তুই বল তোর শশুড় বাড়িতে সবাই তোকে মেনে নিয়েছেন?

……হ্যা দু-দিন হয়েছে আমরা এখানে এসেছি। ফুপি শাশুড়ি এসে আমাদের উঠিয়ে দিয়ে গেছেন আমার শশুড় বাড়িতে।

……ওহ আচ্ছা। শোন আমার না দেরি হচ্ছে আম্মু টেনশন করবে আমি আসছি রে।

……সুপ্তি চলে যাচ্ছিস আর একটু কথা বলি?

……না রে আপু আমি তোকে আর সময় দিতে পারছি না আম্মু না খেয়ে বসে থাকবে আমার জন্য, আমার এখন যেতেই হবে।

……হুম, আমার জন্যেও আম্মু এক সময় বসে থাকত তাইনা?

……(হালকা হেঁসে) হুম থাকত বাট এখন যেহেতু তোর সেই ভালোবাসা ভালো লাগেনি তাই এখন আর থাকে না, কিন্তু এখন তোর হাসবেন্ড নিশ্চয়ই তোর অপেক্ষা করছে।

…….নাহ ও অফিসে গেছে।

……ওহ আচ্ছা, তবে যখন সময় পাবে তখন অপেক্ষা করবে, আচ্ছা আপু আমি আসছি রে। আল্লাহর রহমতে ভালো থাকিস কেমন।

এই বলে সুপ্তি তারাহুরো করে রিকশায় চড়ে বসল। কারণ তার আম্মু এখন তার জন্য অপেক্ষা করছে।

সুপ্তি দরজায় কলিং বেল দিতেই তার আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো, সুপ্তি হেঁসে তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল।

……আই লাভ ইউ আম্মু, অনেক মিস করেছি তোমাকে।

……হয়েছে এত ভালোবাসা দেখাতে হবে না। পুরো ১৫ মিনিট দেরি করেছিস, এতক্ষণ কোথায় ছিলি?

…….ওই একজন চেনা আপু কথা বলছিল, আসতে চাইছিলাম বাট জোর করে ধরে রেখেছিল স্যরি আম্মু দেরি করার জন্য।

……একজন আপু?

……হ্যা আম্মু। আম্মু খুব ক্ষুধা পেয়েছে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

……হুম যা।

সুপ্তি ফ্রেশ হতে চলে গেল। সুপ্তির আম্মু খাবার বাড়তে গেল।

সন্ধ্যার সময় সুপ্তি ও তার আব্বু আম্মু ড্রইং রুমে বসে চা হাতে হাঁসা হাসি করে কথা বলছিল, এর মধ্যে হটাৎ কলিং বেল বেজে উঠল। তাই সুপ্তি গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে দেখল এক মধ্যবয়সী আঙ্কেল। তাকে দেখে সুপ্তি জিজ্ঞেস করল।

…….জ্বি কাউকে খুঁজছেন?

……হ্যা এটা কী শামিম রায়হান চৌধুরীর বাড়ি?

……জ্বি হ্যা।

……উনি কী বাসায় আছেন?

……জ্বি হ্যা আব্বু বাসায় আছে।

…….তুমি তার ছোট মেয়ে?

……জ্বি।

……আমি কী ভেতরে আসতে পারি?

……জ্বি আসেন।

……কীরে কে আসছে?

……আব্বু এই যে। (হাত দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে)

সুপ্তির আব্বু লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখল, বড় বড় দাড়িতে ফর্সা মতো তার বয়সী এক লোক কে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে, বলে উঠল।

……জ্বি কে আপনি?

……তুই শামিম না

……জ্বি হ্যা, কিন্তু আপনি?

……আমি আজাদ, আমাকে চিনতে পারছিস না?

……আজাদ? কোন আজাদ?

……আরে আমি তোর কলেজ ফ্রেন্ড আজাদ।

সুপ্তির আব্বু লোকটা কে ভালো করে দেখল, হ্যা তার চেনা চেনা মনে হচ্ছে, বাট এত বড় দাড়িতে তার চেহারা ডেকে গেছে, যার জন্য প্রথমে খেয়াল করে নি। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে হ্যা এটা তার অনেক পুরানো এক ফ্রেন্ড আজাদ, কলেজ জীবনে কতই না দুষ্টুমি করেছে দুজনে মিলে, কিন্তু ব্যস্ততার খাতিরে কারো সাথে কারো যোগাযোগ না হওয়ায় দুজন দুই প্রান্তে রয়ে গিয়েছিল আজ এত বছর পড়ে দুজনের দেখা হলো, শামিম সাহেব ছুটে গিয়ে তার বন্ধু আজাদ রহমান কে জড়িয়ে ধরল।

……আজ কতটা বছর পড়ে দেখা, তুই কেমন আছিস বন্ধু?

……আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুই কেমন আছিস?

……আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

……আয় বস, কিন্তু তুই এখানে কীভাবে?

……আসলে আমি একটা কারণে আসছি এখানে। আর সাথে তোর নাম শুনেই একটু সন্দেহ হয়েছিল, কিন্তু ভাবলাম গিয়ে দেখি, শামিম রায়হান চৌধুরী নামে তো আমার ও এক বন্ধু ছিলো, যদি মিলে যায় গিয়ে দেখি, তাই চলে এলাম।

…….খুব ভালো করেছিস। সুপ্তির আম্মু ও আমার ছোট বেলার বন্ধু, খাবারের ব্যবস্থা করো। আমার বন্ধু প্রথম আমার বাড়িতে এলো, যাও।

……আসসালামু আলাইকুম।

……ওয়ালাইকুম আসসালাম। না না ভাবী এত ব্যস্ত হবেন না আমি একটু কথা বলি আগে পড়ে খাওয়া দাওয়া হবে। বসেন ভাবী।

…..আম্মু তুমি বসে কথা বলো আমি চা করে নিয়ে আসছি।

এই বলে সুপ্তি রান্নাঘরে চলে গেল। আর বাকি সবাই কথা বলতে বসে পড়ল।

……আচ্ছা তুই একা কেনো এলি ভাবী, বাচ্চাদের নিয়ে আসলি না কেনো?

……আসলে আমি তো শিওর ছিলাম না। যদি তুই না হয়ে অন্য কেউ হতো তবে সবাইকে নিয়ে এসে কী করতাম। তবে হ্যা আমি যখন আসছি তবে ছেলেরাও চলে আসবে।

…..ছেলেরাও মানে? তোর কয়টা ছেলে?

……আমার ৩ ছেলে।

……৩ ছেলে? মেয়ে নেই?

……মেয়ে নেই বলতে না, এখন তোর মেয়েই তো আমার মেয়ে তাই না?

……তা ঠিক আছে।

……আসলে ছোট দুই ছেলে জমজ ছিলো।

……ওহ আচ্ছা। তা ছেলেরা কী করে?

…….বড় ছেলে বিয়ে করেছে, এখন আমার ব্যাবসা সামলায়। ছোট দুই ছেলে পড়াশোনা করছে।

……ওহ খুব ভালো।

……আমি আসলে এখানে একটা কারণে আসছি, হয়ত তুই রাগ করতে পারিস কথাটা শুনে, কিন্তু না এসেও পারলাম না।

…….তাই? কিন্তু এত দূর যখন আসছিস তবে বল আগে শুনি, তারপর না হয় ভাববো রাগ করব নাকি করব না।

…….আসলে তোর তো দুই মেয়ে তাইনা? আমি সেখান থেকে একটা মেয়েকে চাইতে আসছি তোর থেকে।

……আমার? নাহ আমার তো এক মেয়ে, তুই দেখলি তো সুপ্তিকে?

…….হুম বাট সুপ্রিয়া?

…….এই নামে আমার কোনো মেয়ে নেই।

…….তুই চাইলেই কী সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলতে পারবি?

……তুই কী তাকে নিয়েই কথা বলতে এসেছিস? তবে থাক এত দিন পড়ে এসেছিস এই কথা বলে সময়টা নষ্ট করিস না বন্ধু।

…….দ্যাখ আমি আগেই তো বললাম তুই রাগ করবি, থাক যাই হোক আমি সুপ্রিয়ার বিষয় একটু কথা বলতে চাইছি প্লিজ বলতে দে আমায়।

…….হুম বল।

……শুনেছি সুপ্রিয়া কাউকে ভালোবেসে বাড়ি থেকে চলে গেছে?

……(চুপ করে রইল)

…….তুই কী খুঁজে দেখেছিস ছেলেটা কে? কী তার পরিচয়?

…….প্রয়োজন পড়ে নি, যে মেয়ে আমাদের কথা ভাব্বার সময় পায়নি, সে মেয়ের কথা ভাবার সময় আমিও পাইনি। সে যখন গেছে বুঝে শুনেই তো গেছে। তাই আমার জানার আর ইচ্ছে হয়নি।

……কিন্তু সে তো তোর মেয়েকে নিয়ে মে”রেও ফেলতে পারত?

……আমার মেয়ে যেদিন এই বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিল সেদিনই আমার জন্য ম”রে গেছে।

……এটা তোর রাগের কথা।

…….মোটেই না, এটাই বাস্তবতা।

…….আচ্ছা যাই হোক, যদি বলি তোর বড় মেয়ে সুপ্রিয়া এখন আমার বাড়ির বড় বউ। তবেও কী তুই রাগ করে থাকবি?

শামিম সাহেব তার বন্ধুর কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে রইল।

…….হ্যা তোর বড় মেয়ে আমার বাড়ির বড় বউ, আমিও তাদের প্রথমে মেনে নেই নি, কিন্তু ছেলে মেয়ে যতই ভুল করুক না কেনো ফেলে তো আর দেওয়া যায়না, আজ না হয় কাল মেনে নিতেই হয়, এটাই বাস্তবতা।

……ওহ তুই তবে তোর বড় বউয়ের জন্য সুপারিশ করতে এসেছিস?

…….যা ভাবার ইচ্ছে ভাবতে পারিস। তবে আমি বলছি কী যা হয়েছে তা ভুলে তো আর যেতে পারব না। তবে হ্যা ছোট ভেবে মাফ করে দে ওদের। কই তোরা এদিকে আয়।

এই কথা বলতেই সুপ্রিয়া এগিয়ে আসলো সাথে ফারাবী ও আসলো। সুপ্রিয়া এসে দাঁড়াতেই সুপ্রিয়ার আব্বু আম্মু উঠে দাঁড়িয়ে গেল, সুপ্রিয়া এগিয়ে এসে তার আব্বুর পা ধরার জন্য বসে পড়তেই শামিম সাহেব সরে দাঁড়াল। যা দেখে সুপ্রিয়া কান্না করে বলে উঠল।

…….প্লিজ আব্বু ক্ষমা করে দাও আমাকে। আমি জানি অনেক বড় ভুল করেছি আমি, আব্বু প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমাকে। আম্মু প্লিজ আব্বুকে বুঝিয়ে বলো না?

দুজনেই চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলো শামিম সাহেব অন্য দিকে ঘুরে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। সুপ্তি, সুপ্রিয়ার কান্না শুনে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসলো, দেখল তার বোন তার মা বাবার সামনে বসে কান্না করছিল। আজাদ রহমান তার বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে বলে উঠল।

……বন্ধু দ্যাখ ছোট মানুষ ওরা, আবেগের বসে একটা ভুল করে ফেলেছে, এখন আমরা ও যদি রাগ করে থাকি আর একটা ভুল করি, তবে কী করে হবে বল? আমরা তো বড় আমরা না হয় একটু ক্ষমা করে দেই, কারণ ওদের যখন এই পৃথিবীতে আমরা নিয়ে এসেছি ঠিক তখন থেকেই ওদের হাঁসি খুশিতে রাখার জন্য কতই না চেষ্টা করেছি, একটু অসুস্থ হলে না ঘুমিয়েই রাত পার করে দিয়েছি, কান্না করলে সব কাজ রেখে নাওয়া খাওয়া রেখে ওদের পেছন পেছন ছুটছি, পারলে ওদের সাথে কান্নাও করেছি, আর আজ এইটুকু ভুলের জন্য ক্ষমা করতে পারব না? ওরা না হয় আমাদের মন থেকে ভালোবাসতে পারেনি, কিন্তু আমরা তো ওদের মন থেকেই ভালোবেসেছি। ওদের হয়ত সেই দিন গুলো মনে নেই, কিন্তু আমাদের তো আছে? প্লিজ বন্ধু ওদের জন্য না হোক আজ আমার জন্য না হয় ওদের ক্ষমা করে দে। ওরাও একদিন বুঝবে আমাদের কষ্টটা কোথায় ছিলো যখন ওরা বাবা মা হবে। তাই ক্ষমা করে দে ওদের।

সুপ্রিয়া তার আব্বু আম্মুর সামনে এসে হাত জোর করে দাঁড়িয়ে গেল।

…….প্লিজ আব্বু আম্মু আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ প্লিজ।

…….হুম আমি তোমার জন্য তোমাকে ক্ষমা করছি না, শুধু আমার বন্ধুর জন্য তোমাকে মেনে নিচ্ছি কারণ এত বছর পড়ে সে আমার কাছে এসেছে, সেও আমার মতই অভাগা তাই তার ইচ্ছেতে, শুধু তার কথা রাখছি।

এই বলে শামিম সাহেব তার রুমে চলে গেলেন। মন থেকে ক্ষমা করাটা কী এতই সহজ? সে আজ শুধু তার বন্ধুর জন্য সব মেনে নিলো, কারণ এখন যদি সে মেনে না নেয় তবে তার বন্ধুকে অপমান করা হবে, তাই বন্ধুকে অপমান করতে চায়না সে। তাই মেনে নিলো সব মুখ বুঝে।

সুপ্রিয়া তার মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করল কিছুক্ষণ এরপর বোনকে। সবার সাথে কথা বলল, সবাই রাতের খাবার এক সাথে খেলো, এরপর সব কিছু অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে সুপ্রিয়া তার হাসবেন্ড আর শশুড়ের সাথে চলে গেল।



চলবে……..।