#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#তীব্রস্রোত
#পর্ব ১০
.
.
খুব সুন্দর ভাবেই সুপ্তির দিন গুলো কাটতে লাগল। হাসি ঠাট্টা আনন্দে, আজ সুপ্রিয়ার মেয়ের চুল ফেলানো আর আকিকার অনুষ্ঠান এক সাথে রাখা হয়েছে। সকাল থেকেই খুব আনন্দ উল্লাস হচ্ছে বাড়িতে, সুপ্তি তার বোনের মেয়েকে কোলে নিয়ে সোপার উপর বসে ছিলো, মেয়েকে ঘুম পারানোর চেষ্টা করছে। তখনই হঠাৎ কেউ এসে সুপ্তির দু-গালে হাত ছোয়ালো, সুপ্তি পেছন দিকে ফিরে দেখল #তীব্রস্রোত দু-জনেই ছিলো, সুপ্তি ঘুরতেই ওরা দু’জন উঠে পালালো সুপ্তি কিছুই বুঝতে পারলো না, এভাবে কেনো পালালো ওরা? সুপ্তি আবার বসে নিজের কাজে মন দিলো। হঠাৎ ফারাবী এলো বসার রুমে সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল।
…..আরে সুপ্তি তুমি গাল পরিষ্কার করছ না কেনো?
….কেনো দুলাভাই গালে কী আছে?
সুপ্তির কথা শুনে ফারাবী ফোনের ক্যামেরা অন করে একটা ছবি তুলে সুপ্তিকে দেখাল, যা দেখা মাত্রই সুপ্তির মাথা গরম হয়ে গেল। সুপ্তি রাগে ফুসতে ফুসতে বলে উঠল।
…..দুলাভাই দেখছেন আপনার দুই গুনধর ভাই কী অবস্থা করেছে আমার চেহারার?
…..ওরা করেছে?
…..হ্যা
সুপ্তি সব বলল ফারাবী কে, যা শুনে ফারাবী হাসতে লাগল। সুপ্তির দু গালে ওরা জরি মাখিয়ে দিয়েছিল, যার জন্য সুপ্তির প্রচুর রাগ হচ্ছে। এগুলো স্কিনের জন্য কতটা ক্ষতিকারক তা কী ওরা জানে না?
….আপনি হাসছেন? আমার কিন্তু খুব রাগ হচ্ছে।
…..আচ্ছা শোনো আমি যা বলছি।
ফারাবী এসে সুপ্তির কানে কানে কিছু একটা বলে দিলো যা শুনে সুপ্তি হেঁসে উঠল আর বলল।
…..এবার বুঝাব মজা, সুপ্তি কী জিনিস। ধন্যবাদ দুলাভাই।
সুপ্তি হাসতে হাসতে উঠে সুপ্রিয়ার কাছে গিয়ে বেবিকে দিয়ে এলো। এরপর সব প্ল্যানিং করে সব রেডি করে নিলো। সুপ্তি চুপি চুপি একে একে ওদের দুজনের রুমে গিয়ে ফারাবীর সাহায্য নিয়ে কিছু একটা করে এলো। সব গুছিয়ে রেখে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ওরা দু’জন চলে এলো। ওরা দু’জন বাহিরে এসে হাসতে হাসতে শেষ।
…..এখন বুঝবে মজা, কী বলেন দুলাভাই?
…..হ্যা।
….আচ্ছা দুলাভাই একটা কথা বলেন তো।
…..কী কথা?
…..আপনি আপনার ভাইদের সঙ্গে না গিয়ে আমার সঙ্গে কেনো?
….কারণ খুব সহজ শালিকা, ওরা দু’জন, আর তুমি একা, এখন তোমার সাথে না থেকে আমি যদি ওদের সাথে চলে যাই তবে তো তুমি একা হয়ে যাবে। আর তুমি এখন আমাদের বাড়িতে আছো তাই তোমার সাহায্যের প্রয়োজন তো পড়বেই তাই আমি তোমার পাশে আছি।
…..এই না হলে সুপ্তির দুলাভাই? (হাত জাগিয়ে)
….হ্যা অবশ্যই।
ওরা দু’জন নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে দেখল স্রোত তার রুমে যেতে নিয়েছে সুপ্তি বসার রুমে বসে সেদিকে খেয়াল রাখছে, যদি অন্য কেউ চলে যায় তাই। স্রোত রুমের দরজা শুধু খুলতে যাবে এর মধ্যে স্রোত কে তার আব্বু ডাক দিলো, যা দেখে সুপ্তি চোখ কপাল গুছিয়ে নিলো। স্রোতের আব্বু স্রোত কে ডেকে তার সাথে নিয়ে গেল।
প্রায় ৩০ মিনিট পড়ে সুপ্তি কারো চিৎকার শুনে সেদিকে তাকাল, দেখল তীব্র তার রুমের দরজার সোজাসুজি দাড়িয়ে আছে ভেজা কাক হয়ে, যা দেখে সুপ্তি একটু জোরেই হেঁসে উঠল। তীব্র সুপ্তির হাসি শুনে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল সুপ্তি হাঁসছে, সুপ্তি তীব্র কে তাকাতে দেখে নিজের হাসির উপর কনট্রোল করার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাট পারছে না। তীব্র রেগে গিয়ে দরজা খুব জোরেই আঁটকে নিলো, ওরা দরজার উপরে পানির একটা ছোট বালতি রেখেছিল যার মধ্যে জরি, আর কেরাসিন তেল দিয়ে, দরজা খোলার সাথে সাথেই যা দিয়ে নেয়ে উঠল তীব্র। যা দেখে সুপ্তি ছুটে গিয়ে ফারাবীর সাথে সব বলছে আর হাসছে, ফারাবীর সুপ্তিকে হাসতে দেখে খুব ভালো লাগছে। সে এর আগে সুপ্তিকে এত খুশি হতে দেখেনি কখনো।
ফারাবী বেশ কিছুক্ষণ পরে স্রোত কে বলে কয়ে শাওয়ার নিতে পাঠাল, কারণ মেয়ের চুল ফেলানো শেষ, সব কাজ ও হয়ে গেছে, তাই সবাই এখন রেডি হতে যাবে।
…..ভাইয়া আর একটু পড়ে যাচ্ছি।
…..আরে আমি এদিকটা দেখে নিচ্ছি, মেহেমান চলে আসবে যা তুই রেডি হয়ে আয় গিয়ে।
ফারাবীর কথায় স্রোত যেতে নিলো যা দেখে তীব্র এগিয়ে এলো স্রোতের কাছে।
…..কী রে তোর গা থেকে কেরোসিনের গন্ধ আসছে, শাওয়ার নিস নি নাকি?
…..ভাই কেরোসিনের গন্ধ কী আর এত জলদি যায়? দু-বার গোসল করলাম বডি ওয়াশ দিয়ে তারপর ও গন্ধ যাচ্ছে না। কীসের জন্য যে বেয়াইন কে রাগাতে গেলাম বুঝতে পারছি না।
…..হুম তাই এখন তো আমারও রুমে যেতে ভয় করছে।
…..হ্যা তাই বলতে আসছি, তুই বরং আমার রুমে চলে যা, তোর রুম ওভাবে বন্ধই থাকুক।
…..তবে ড্রেস?
…..হ্যা তাও ঠিক। আচ্ছা তবে যা কিন্তু একটু সাবধানে যাস।
…..হ্যা তাই, তুই চল আমার সাথে।
…..আরে না আমার তো কাজ আছে আব্বু নিশ্চয়ই খুঁজছে আমাকে, তুই যা বরং।
এই বলে তীব্র ভয় পেয়ে চলে গেল। আর স্রোত ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেল। স্রোত দূরে দাঁড়িয়েই দরজা ঠেলে দিলো, দরজা খুলে গেল বাট কিছু পড়ে নি যা দেখে স্রোত হাফ ছেড়ে বাঁচলো। স্রোত রুমে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে শাওয়ার নিতে ওয়াশ রুমে ঢুকলো, লাইটের সুইজ টিপে দেখল লাইট জলছে না, স্রোতের মনে হচ্ছে ফিউজ হয়ে গেছে লাইট, স্রোত ফোনের টর্চ জ্বেলে শাওয়ারটা নিয়ে নিলো। টাওয়াল দিয়ে গায়ের পানি গুলো মুছে রুমে এসে ড্রয়ার থেকে একটা ড্রেস নিতে এলো তখনি চোখ পড়ল ড্রয়ারের আয়নার দিকে যার জন্য স্রোত একটা ভয়ংকর চিৎকার দিয়ে উঠল, কারণ স্রোতের সারা গায়ে কালি লাগানো ছিলো, চেহারায় হাতে পায়ে ফুল বডিতে। স্রোতের চিৎকার শুনে সুপ্তি মুখ চেপে হাসতে রইল। কারণ সুপ্তি স্রোতের টাওয়ালের ভেতর তেলের সাথে কালি মিলিয়ে লাগিয়ে রেখে আসছিল যার জন্য ভালো লাইট খুলে ফিউজ লাইট লাগিয়ে রেখে ছিলো যাতে স্রোত কালি গুলো দেখতে না পায়।
সুপ্তি ছুটে গিয়ে ফারাবীর হাতের সাথে হাত মিলিয়ে তালি দিয়ে খিলখিল করে হেঁসে উঠল।
…..ধন্যবাদ দুলাভাই এত সুন্দর আইডিয়া দেওয়ার জন্য।
….মোস্ট ওয়েলকাম শালিকা।
বেশ কিছুক্ষণ পড়ে যে যার যার মতো করে কাজ করছিল, এমন সময় স্রোত রুম থেকে বের হয়ে আসলো, স্রোত কে দেখে তীব্র ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করল।
…..কীরে তোকে চেহারা এমন কালো কালো দেখা যাচ্ছে কেনো? মনে হচ্ছে কিছুর হালকা দাগ পড়েছে।
…..আর বলিস না ভাই, আমি যদি তখন তোর কথা শুনে তোর রুমে চলে যেতাম তবেই হয়ত ভালো হতো।
…..কেনো কী হয়েছে?
…..দু-বার বডি ওয়াশ দিয়ে ঘষে ঘষে গোসল করলাম, কিন্তু এই দাগ গেল না, কী দাগ বসিয়ে গেল বেয়াইন আমার সারা অঙ্গে যা সাবান দিয়েও যায় নাকো তোলা।
সুপ্তি ওদের দু’জন কে প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থায় দেখে দূর থেকেই মুখ চেপে হাসতে রইল।
…..কীরে এভাবে হাঁসছিস কেনো?
…..কিছু না আপু এমনিতেই। কেনো জানো আজ খুব হাঁসি পাচ্ছে।
এই বলে সুপ্তি খিলখিল করে হেঁসে উঠল। যা দেখে সুপ্রিয়া ভাবতে লাগল, তার বোন নিশ্চিত পাগল হয়ে গেছে, না হয় শুধু শুধু কারো হাসি পায়, তাও এই ভাবে হাসে কেউ?
মেহেমানরা সব একে একে এসে বাচ্চাকে দেখে দোয়া করে খাবার খেয়ে চলে যেতে লাগল। সুপ্তি একটু দূরে দাঁড়িয়ে তার মায়ের কাঁধে মাথা রেখে সব কিছু দেখছিল।
…..সুপ্তি মা সব কিছু গুছিয়ে নে আজ কিন্তু আমাদের সাথে যাবি।
…..হ্যা আম্মু সব গুছিয়ে রাখাই আছে, অনুষ্ঠান শেষ হলেই আমরা চলে যাবো, কতদিন ধরে অন্যের বাড়িতে রয়েছি, এখন আর ভালো লাগছে না।
…..হুম চলে যাবো।
তখন সন্ধ্যা ৬টা বাজে তাই সুপ্তির আম্মু সুপ্তি কে চোখের ইশারা দিতেই সুপ্তি গেস্ট রুমে গিয়ে সব গুছানো শুরু করে দিলো।
সুপ্তি কাপড় চোপড় নিয়ে বসার রুমে চলে এলো যা দেখে সুপ্রিয়া বলে উঠল।
…..কী রে তুই কোথায় যাচ্ছিস?
…..কোথায় মানে? যেখানে যাওয়ার ও সেখানেই যাচ্ছে।
…..না মানে আম্মু আমরা সবাই মিলে রাতে পিকনিক খাবো ভাবছিলাম।
…..পিকনিক খেতে হবে না, কত গুলো দিন হয়েছে সুপ্তি এখানে পড়ে আছে, মানুষ শুনলেও কী বলে এগুলো? সুপ্রিয়া তুই এসব বলে ওকে আর এখানে রাখার চেষ্টা করিস না। আমি আর ওকে রেখে যাচ্ছি না। (আস্তে আস্তে কথা গুলো বলল)
…..আরে ভাবী সুপ্তি কে আপনার রেখে যেতে হবে না আজ আপনারা কেউ কোথাও যাচ্ছেন না। সবাই এখানেই থাকবেন।
….না না ভাই সাহেব এই কথা বলবেন না, বাসাটা একদম খালি।
…..তাতে কী ভাড়াটিয়ারা তো আছে, গেইটে দারোয়ান আছে। কিচ্ছু হবে না ইন’শা’আল্লাহ। আজ কেউ কোথাও যাচ্ছেন না ভাবী।
……আজাদ দ্যাখ এসব কথা বলে কোনো লাব নেই, আমার কাজ আছে যেতেই হবে।
…..তোর কাজ থাকলে তুই যা, মেয়ে আর ভাবী কোথাও যাবে না এই আমি বলে দিচ্ছি।
…..দ্যাখ।
…..আর কিছু দেখতে চাইছি না। মামনি যাও ব্যাগ গিয়ে রেখে আসো, আজ তোমার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না।
সুপ্তির বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রুমে গিয়ে ব্যাগ রেখে আসলো।
সন্ধ্যা ৭টার দিকেই সবাই ছাদে উঠল, সব গুছিয়ে নেওয়ার জন্য। রাতে পিকনিক খাবে সবাই মিলে। ইট দিয়ে চুলা বানানো হলো, কাঠ এনে পাশে রাখা হয়েছে। মেনুতে রয়েছে ভুনা খিচুড়ি আর গরুর কলিজা ভুনা। যার জন্য সব রেডি করে নিলো।
কিছুক্ষণ পরেই খিচুড়ি চড়িয়ে দিয়ে একটু গান বাজনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবাই গোল করে ছাদে বসে এটা ওটা খেলতে ব্যস্ত। মুরুব্বিরা আগুনের কাছে বসে রান্না করছেন, আর ওরা খেলছে।
সবাই হাসাহাসি করছিল চুলায় রান্না হচ্ছিল মুরুব্বিরাও ওদের সাথে জয়েন্ট করেছে খেলাধুলায়। আগুন নিবে যাওয়ার কারণে সুপ্তি উঠে গেল আগুন ধরিয়ে দিতে সুপ্তি আগুন ধরিয়ে দিয়ে চুলার পাশে পানি রেখেই একটু চা করে নিলো সবার জন্য, এই হালকা ঠান্ডায় ছাদে বসে রাতের আপসা আলোতে গরম গরম রং চা খাওয়ার মজাই আলাদা। তাই সুপ্তি চা বানিয়ে সাথে মুড়ি নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই হঠাৎ করে কেউ সুপ্তির ওড়না ধরে টান দিয়ে নিয়ে গেল। সুপ্তি কিছু বলতে যাবে পাশ ঘুরে এর মধ্যে দেখল সুপ্তির ওড়নায় আগুন লাগানো ছিলো যা তীব্র নিভাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, সুপ্তির আম্মু এসে তার গায়ের চাদড় দিয়ে মেয়েকে ঢেকে দিলেন।
…..তুই ঠিক আছিস?
…..হ্যা সুপ্তি তুমি ঠিক আছো?
….হুম।
তীব্র আগুন নিভাতে গিয়ে তার হাত কিছুটা পুরে গেল, স্রোত গিয়ে ক্রিম এনে তীব্রর হাতে লাগিয়ে দিলো।
….কত বড় একটা বিপদ গেল আজ। আলহামদুলিল্লাহ কারো কোনো ক্ষতি হয়নি।
সুপ্তি তার আম্মুর পাশে বসে আছে চুপটি করে, সুপ্তি বার বার তীব্রর দিকে দেখছে। তীব্র সবার কথায় মুচকি হাসছে।
সবাই ভালোয় ভালোয় খাবার খেয়ে নিচে গিয়ে যার যার রুমে শুয়ে পড়ল।
সকালে তারাহুরো করে বের হলো সুপ্তি তার বোনের শশুড় বাড়ি থেকে, হঠাৎ একটা ফোন এলো এখনি ইউনিভার্সিটিতে যেতে হবে তাই। সকাল সকাল যার জন্য রাস্তায় রিকশা গাড়ী তেমন একটা নেই বলতেই বলা যায়। মেইন রাস্তা হলে তাও কয়েকটা পেত বাট এখানে মানুষ ভর্তি রিকশা ছাড়া খালি রিকশার বড্ড অভাব। সুপ্তির ৩০ মিনিটের ভেতর পৌঁছাতে হবে, রাস্তা ২০ মিনিটের, অল রেডি ৫ মিনিট চলে গেছে সুপ্তি বারবার ঘড়ি দেখছে, একটু এগিয়ে যেতেই একটা খালি রিকশা হঠাৎ করে দেখতে পেয়ে সুপ্তি তারাহুরো করে উঠে বসে পড়ল।
রিকশা চলতে শুরু করে দিলো, সুপ্তির মনে হচ্ছে আজ লেট হবে, কারণ দেরি হচ্ছে আজ রিকশা চলতে ও। রিকশা ওয়ালা কে সুপ্তি বার বার তাগিদ দিচ্ছে কিন্তু রিকশা খুব ধীর গতিতে চলছে।
…..চাচা একটু তারাতাড়ি চালান না। আমার দেরি হচ্ছে।
সুপ্তি ভেবেছিল আজ ইউনিভার্সিটিতে যাবে না, তাই বড়দের সাথে বের হয়নি। কিন্তু স্যার হঠাৎ করে ফোন দিয়ে বলল জরুরি ক্লাস আছে। তাই তার কিছু করার ছিলনা বের হতেই হলো। সুপ্তি তার আম্মু কে বাসায় চলে যেতে বলে সে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রহনা হলো, এক সাথেই আসতো বাট সুপ্তির আম্মুর রেডি হতে কিছুটা সময় লাগবে, তাই সুপ্তি একাই বেরিয়ে পড়ল।
রিকশা চলতে ছিলো চাচাও রিকশা খুব জোরেই চালাতে শুরু করে দিলো। এর মধ্যে বাম দিক থেকে একটা বাইক চলে এলো যার জন্য রিকশা গিয়ে সোজা বাইকের সাথে ধাক্কা খেয়ে সুপ্তি গিয়ে ছিটকে রাস্তায় পড়ল বাইকটাও কাত হয়ে পড়ল, যার জন্য দুজনেই ব্যথা পেলো, চারিদিক থেকে মানুষ ছুটে আসলো, সুপ্তি হাতে অনেকটা ব্যথা পেলো, অনেকটা ছিলেও গিয়েছে। সুপ্তি উঠে হাত ধরে বসে রইল, চারিদিক থেকে মানুষ এসে বাইকের লোকটা কে ধরলো সেও পায়ে অনেকটা ব্যথা পেয়েছে। সবাই রিকশা ওয়ালাকে, ও বাইকের লোকটা কে বকাবকি করছিল, ভাগ্যিস সুপ্তি যেখানে পড়েছে সেখানে বালু জমা করা ছিলো, তাও হাতে তো অনেকটাই ব্যাথা পেয়েছে।
সুপ্তিকে আর বাইক ওয়ালা কে সবাই মিলে হসপিটালে নিয়ে গেল। সুপ্তির হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলো। সুপ্তি তড়িঘড়ি করে বের হচ্ছিল ঠিক তখনই ডক্টর শাহীন এসে সুপ্তির সামনে পড়ল।
…..সুপ্তি মামনি তুমি এখানে?
…..আঙ্কেল ওই আসলে ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে, প্লিজ আব্বুকে কিছু বলবেন না এখনি এই বিষয়।
…..বাট, আচ্ছা বেশি লাগেনি তো?
…..নাহ আঙ্কেল শুধু হাতেই লেগেছে।
…..কোথায় দেখি।
ডক্টর শাহীন সুপ্তির হাত ভালো করে দেখে বলল।
…..এখন কোথায় যাচ্ছ তুমি?
…..আঙ্কেল ভার্সিটিতে যাচ্ছিলাম।
…..আচ্ছা চলো আমি এগিয়ে দিয়ে আশি, এমন অবস্থায় তোমাকে একা ছাড়তে পারি না আমি।
…..আঙ্কেল আমি চলে যাবো।
…..উঁহু তোমার প্রতি আমার একটা দ্বায়িত্ব আছে মামনি, চলো।
এই বলে ডক্টর শাহীন সুপ্তিকে গাড়িতে করে ভার্সিটি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসলো। সুপ্তি গেইটের সামনে নেমে আঙ্কেল কে আল্লাহ হাফিজ বলে ভেতরে চলে গেল।
ক্লাস শেষ করে সুপ্তি সোজা তাদের বাসায় গিয়ে পৌঁছাল, দরজায় বেল দিতেই সুপ্তির আম্মু এসে দরজা খুলে দিয়ে সুপ্তির হাতে ব্যান্ডেজ দেখে ভয় পেয়ে গেল।
…..কী রে সুপ্তি কী হয়েছে তোর?
…..আম্মু তেমন কিছু না, ওই হাতে একটু লেগেছে।
…..হাতে কীভাবে লাগছে?
…..আম্মু তুমি টেনশন করো না তো, ওই সামান্য লাগছে।
…..সামান্য হলে এতটা ব্যান্ডেজ করা কেনো?
…..ওই ওনাদের কাছে ছোট ব্যান্ডেজ ছিলো না বিঁধায় বড় ব্যান্ডেজ দিয়ে দিলো। আমি তো বললাম তাদের আমার আম্মু টেনশন করবে, কিন্তু তারা শুনলো কই?
…..একটা থাপ্পড় মারবো মিথ্যে কথা বলছিস কেনো?
…..আসলে আম্মু…..।
এরপর সুপ্তি তার আম্মুকে সব কিছু বলল, তার আম্মু তো সেই টেনশন করছে যদি মেয়ের কিছু হয়ে যেত? কত্তবড় একটা বিপদ থেকে তার মেয়ে আজ বাঁচলো।
।
।
।
চলবে……..।