তীব্র প্রেমের নেশা পর্ব-১১+১২

0
313

#তীব্র_প্রেমের_নেশা (১১)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
__________________

ফোন হাতে নিয়েই কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো আমার। হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম বিছানায়। জিনিয়া কি বেঁচে আছে? কিন্তু এটা কিভাবে হবে? ‘ও’ তো আমার সামনেই সেদিন! মাথা ঘুরিয়ে উঠলো যেনো৷ আমার ভাবনার মধ্যেই তীব্র শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসলো। আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে চুল মুছতে মুছতেই বললেন,

‘সত্যি সত্যি শ্বাস আটকে গেছে নাকি প্রানেশা? এখনই এমন করলে চলবে! আরো কত কিছু দেখার আছে এখনো।’

আমি উনার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। উনি চুল মুছা শেষ করে চুপচাপ এসে আমার থেকে ফোন নিয়ে একপাশে রেখে শুয়ে পড়লেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ঘুমাও!’

কিন্তু আমার চোখ থেকে ঘুম যেনো হাওয়া হয়ে গেছে। তীব্রর কথা অনুযায়ী জিনিয়া বেঁচে আছে। তবে কি আমি এতোদিন ভুল করেছি! তীব্রকে এতো এতো অপমান করেছি শুধু জিনিয়ার জন্য। তার ভালোবেসে করা স্পর্শ গুলো নোং’রা বলেছি। বি’ষাক্ত বলেছি। তীব্র কি এজন্য আমাকে বলতো আমি সত্যিটা জানলে নিজেকে ঘৃ’ণা করবো! তীব্রকে হারিয়ে ফেলবো! শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেনো হিম শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। কেঁপে উঠলাম কিছুক্ষণ। নিজের অজান্তেই কি কি করে বসেছি তা ভাবতেই মাথা জ্যাম হয়ে গেলো। বসে রইলাম ওভাবেই। অনেকটা সময় পর যখন সাহস করে তীব্রর মুখের দিকে তাকালাম তখন তার ঘুমন্ত মুখটাই চোখে পড়লো। মানুষটা এতটুকু সময়েই ঘুমিয়ে গেছে। এতদুর জার্নি করে নিশ্চয় ভীষণ ক্লান্ত! আমি আস্তে করে শুয়ে পড়লাম। নীরব হয়ে তার মুখের দিকে শুধু তাকিয়েই রইলাম। পরপর কয়েকবার ঢোক গিললাম। প্রথমদিন থেকে তার এখন পর্যন্ত বলা প্রত্যেকটা কথায় যেনো পরপর মনে পড়লো। বুকের বাম পাশে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করলাম। এ ব্যাথা কি তীব্রকে হারানোর ভয়ে নাকি অজানা কোনো সত্যর মুখোমুখি হওয়ার ভয়!
___
লিভিং রুমে সবার মাঝখানে বসে আছি। চরপাশ থেকে কয়েকজোড়া চোখ আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। উনাদের এমন দৃষ্টিতে বেশ অস্বস্তি বোধ করলাম। ফাঁকা ঢোক গিললাম কয়েকবার। ছোট মামী, বড় খালা, ছোট খালা, বড় খালার মেয়ে হামিদা আপু আর হাফিজা, ছোট খালার ছেলে রাসেল আর সজীব, মিলি, তিহা, মুন্না, বিপ্লব সবাই আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। একেই তো জিনিয়ার বিষয়টা নিয়ে আমার ভাবনার শেষ নেই তারওপর এদের এমন দৃষ্টিতে আমার জান যায় যায় অবস্থা। আমার ভাবনার মাঝেই ছোট মামি চকচকে চোখ নিয়ে বললেন,

‘মাশাল্লাহ। আপা বউ তো মাশাল্লাহ খুবই সুন্দর আর তীব্রর সাথেও কিন্তু মানিয়েছে খুব।’

উনার কথায় বড় খালা, ছোট খালা এবং বাকি সবাইও তাল মেলালো। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম আমার শ্বাশুড়ি, বড় মামি আর তানহার মুখটা জ্বলে উঠলো। এত প্রশংসা তাদের মোটেও সহ্য হলো না। আমি মাথা নিচু করে ঠোঁট চেপে হাসলাম। তিহা আগুনে ঘি ঢালার মতো করে বললো,

‘হ্যাঁ ছোট মামি ঠিক বলছেন। আমার ভাইয়া আর ভাবি বেষ্ট।’

ডাইনিং এ বসে তীব্র জুস খাচ্ছিলেন। তিহার কথায় তিনি বিষম খেলেন। তানহা ছুটে গিয়ে পানি ধরলেন তার সামনে। কটমট করে উঠলাম আমি। এরমধ্যেই কেউ একজন বললো,

‘আমার তানহার থেকে সুন্দরী না কিন্তু! তানহা আর তীব্রকেই বেশি মানায়।’

একথা শুনে সেদিকে তাকালাম। একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেশভূষা ভালোই মডার্ণ। আমি তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতেই তানহা ছুটে গিয়ে ‘আপু’ বলে জড়িয়ে ধরে। মিলি নাক মুখ কুঁচকে বলে,

‘আমার এই বড় বোনটাই এই মেজো বোনটারে ন’ষ্ট করে ফেললো একদম। একটারও লজ্জা শরম নাই। অন্যের জামাই নিয়ে টানাটানি! ফা’ল’তু কাজ।’

ওর কথা শুনে হাসি পেলেও নিজেকে সামলে নিলাম। ছোট মামি সবাইকে তাড়িয়ে দিলেন। যে যার মতো উঠে চলে গেলো। তীব্র এতক্ষণ বসে বেশ মজা নিচ্ছিলেন। কিন্তু সবাই যেতেই সে নিজেও বুক টান টান করে উঠে দাড়ালেন। তারপর চুপচাপ সিড়ি ডিঙিয়ে চলে গেলেন। উনার পিছু পিছু তানহা আর ওর বোনও চলে গেলো। সম্ভবত এটাই শোভা। ওরই কয়েকদিন পর বিয়ে। আমি নিজেও তীব্রর পিছু যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই ছোট মামি হাত ধরে আটকে দিলেন। আমার তো তীব্রর সাথে কথা আছে কিন্তু! ছোট মামির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই তিনি চোখ গরম করে বললেন,

‘না খেয়ে কোথায় যাচ্ছো? আগে খেয়ে নাও আসো!’

আমি কিছু বলার আগেই ছোট মামি হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলেন। খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘সবটা খেয়ে শেষ করো। আমি এখানেই আছি কিন্তু!’

আমি ড্যাবড্যাব করে তাকালাম ছোট মামির দিকে। সে অদ্ভুত ভাবে হেঁসে বললো, ‘কি দেখো? খাও আগে!’

বলেই মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলালেন। ভীষণ কান্না পেয়ে গেলো। ফাঁকা ঢোক গিলে একটু খানি খাবার মুখে দিলাম। সত্যি বলতে এর আগে কখনো আমাকে কেউ এতো যত্ন করে খাওয়ায়নি আর না এতো যত্ন করে মাথায় হাত রেখেছে! যখন ভীষণ কান্না করতাম তখন পলি এভাবে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতো। অনেকদিন পর কারো থেকে ‘মা মা’ গন্ধ পেলাম। ভাবতেই চোখের কোণ ভিজে আসে। মুহুর্তেই গলায় খাবার আটকে যায়। ছোট মামি দ্রুত পিঠে হাত বুলিয়ে পানি খাওয়ায়। আমি কোনো রকমে কান্নাটা গিলে নিলাম। ছোট মামি পাশেই চেয়াট টেনে বসলেন। থুতনীতে হাত রেখে মুখটা উচু করে বললেন,

‘কি হয়েছে মা? চোখ মুখ এমন লাগছে কেনো? মন খারাপ? মনে হচ্ছে কান্না করছো! তীব্র কিছু বলেছে?’

আমি ঠোঁট কামড়ে মাথা দুদিকে নাড়ালাম। ছোট মামি প্লেট নিজের দিকে নিয়ে খাবার আমার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘খাওয়ার সময় চোখের পানি ফেলতে নেই। ধীরে সুস্থে বলো কি হয়ছে!’

আমি কোনো রকমে বললাম, ‘আসলে আমার মা নেই তো। তাই কখনো কেউ এতো যত্ন করে খাওয়ায়নি, মাথায় হাতও রাখেনি। তার কথা খুব মনে পড়ে গেছে।’

ছোট মামির হাত থেমে গেলো। তিনি একহাত দিয়ে জাপ্টে ধরলেন আমাকে। আমি উনার বুকে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে উঠলাম। ছোট মামি ভাঙা ভাঙা ভাবে বললেন,

‘খাবার সময় একদম কাঁদবে না মেয়ে। আর মা নেই মানে কি! আমি আছি, তোমার শ্বাশুড়ি আছে। তোমার দুই দুইটা মা থাকা স্বত্বেও বলো মা নেই! একদম হাড়গোড় ভে’ঙে দেবো।’

কাঁদতে কাঁদতেই হেঁসে ফেললাম। অনেকটা সময় পর স্বাভাবিক হতেই তিনি আমাকে সবটুকু খাইয়ে দিলেন। ঘড়ির কাঁটায় তখন অলরেডি ৩ টা বাজে। ছোট মামি আমাকে খাওয়ানো শেষ করে বললেন,

‘শোনো কারো কথায় কান দেবে না! তীব্রর সাথে তোমার বিয়েটা ভাগ্যে ছিলো তাই হয়েছে। কে কি বললো! কার সাথে কাকে মানালো এসব কখনোই ভাববে না। শুধু এটুকুই মনে রাখবে তুমি আর তীব্র একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ আছো। তোমরা দুজন একে অপরের পরিপূরক তাই অন্যের কথায় কান দিয়ে নিজেদের মধ্যে অশান্তি করবে না।’

আমি মাথা নাড়ালাম। ছোট মামি রুমে যেতে বললে চুপচাপ চলে আসলাম। তীব্র তখন পায়ের ওপর পা দিয়ে ল্যাপটপে কিছু করতে ব্যস্ত। আমি ধীর পায়ে তার সামনে গেলাম। সে দেখেও না দেখার ভান করে বসে রইলো। আমি নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করলাম,

‘জিনিয়া কি সত্যিই বেঁচে আছে?’

উনি ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে বললেন, ‘তোমার কি মনে হয়!’

‘আমার মনে হওয়া না হওয়া দিয়ে তো কিছু যায় আসে না তাই না! আপনি বলুন জিনিয়া বেঁচে আছে?’

‘ফটো দেখে তো তাই মনে হলো। বাকিটা তুমি সামনাসামনি দেখা করে জেনে নিও কেমন!’

উনাার কথায় চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম। উনি উঠে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলেন। আমি সেদিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকলাম। উনি বের হলেন একেবারে রেডি হয়ে। আমাকে কিছু না বলে নিজের পার্স, ঘড়ি, ফোন নিয়ে চলে যেতে নিলে জিজ্ঞেস করলাম,

‘কোথায় যাচ্ছেন?’

উনার সহজ জবাব, ‘কাজ আছে।’

আর কিছু না বলেই বেড়িয়ে গেলেন। আমি সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। জীবনটা একদম গোলকধাঁধার মতো হয়ে গেছে।
_________

রাত ১ টা বাজে অথচ তীব্রর পাত্তা নেই। সেই যে গেছে এখনও ফেরেনি৷ আমি পুরো বিকেল থেকে শুরু করে রাত ১০ টা পর্যন্ত তিহা, মিলি, মুন্না, বিপ্লব, হাফিজা ওদের সাথেই ছিলাম৷ এরপর রুমে চলে এসেছি। উনাকে কতবার কলও করেছি। প্রথম কয়েকবার কল গেলেও পরে ফোন সুইচড অফই দেখালেন। পুরো বাড়ির মানুষ ঘুমে কাঁদা অথচ টেনশনে আমার মাথার শিরা উপশিরাও যেনো ব্যাথা করছে। লোকটা গেলো কোথায়! কোনো বিপদে পড়েনি তো আবার! নতুন জায়গার কিছুই তো মনে হয় চিনে না জানে না। আবার নানুবাড়ির সুবিধার্থে হয়তো চিনতেও পারে। কিন্তু সে এখনো কেনো ফিরছে না! মাথা হ্যাং হয়ে গেলো যেনো। আমার ভাবনার মাঝেই দরজায় কড়া পড়লো। আমি ছুটে গিয়ে দরজা খুলতেই আঁতকে উঠলাম। এলোমেলো, বিধ্বস্ত অবস্থায় তীব্রকে দেখে আত্মা কেঁপে উঠলো। তীব্র কোনো শব্দ না করে এলোমেলো ভাবে রুমে ঢুকে পড়লেন। আমি দরজা আটকে কাঁপা কাঁপা হাতে উনাকে ধরলাম। উনি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। চোখদুটো তে যেনো রক্ত জমে গেছে। সেই রক্তচক্ষুর দিকে তাকিয়ে থাকাার মতো দুঃসাহস বোধহয় আমার নেই৷ ফাঁকা ঢোক গিলে ভাঙা ভাঙা ভাবে বললাম,

‘আপনার এমন বিধ্বস্ত অবস্থা কেনো? কি হয়েছে তীব্র?’

তীব্র যেনো আমার প্রশ্নে জ্বলে উঠলেন। তার শার্টের কোণা থেকে আমার হাত সরিয়ে হুট করেই ঠাস করে থা’প্প’ড় বসিয়ে দিলেন। মুহুর্তেই জ্বলে উঠলো গাল। মাথা ঘুরিয়ে উঠলো। পিটপিট করে তার দিকে তাকালাম। তার ভ’য়ং’কর দৃষ্টি দেখে গলা শুকিয়ে গেলো। উনি রেগে আমার গাল চেপে ধরে বললেন,

‘হাউ ডিয়ার ইউ? কোন সাহসে তুই ফারদিনের সাথে যোগাযোগ করেছিস? কোন সাহসে তুই ওর সাথে দেখা করতে গেছিস? এতো সাহস তোকে কে দিয়েছে?’

উনার রাগী কন্ঠে চমকে উঠলাম আমি। উনি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন। নিজের ভারসাম্য রক্ষা করে অবাক চোখে তার দিকে তাকালাম। ব্যাথা ভুলে গেলাম নিমিষেই। তীব্র জেনে গেছে যে আমি ফারদিন ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেছিলাম! এতো কিছু করেও উনার থেকে বিষয়টা লুকাতে পারলাম না! আর জানলো তো জানলো তাও ২ দিন পরই! আমি নিজেকে সামলে কোনো রকমে তীব্রর কাছে এগিয়ে বললাম,

‘তীব্র আ-আমি…’

‘স্টপ! জাস্ট স্টপ। আর একটাও মিথ্যা কথা বলবে না।’

আমি চুপ মে’রে গেলাম। উনি পুরো সত্যি না জেনে ভুল বুঝলেন আমাকে! আমাদের মধ্যেই কেনো বার বার এতো ভুল বুঝাবুঝি তৈরী হয়! ফাঁকা ঢোক গিললাম। দৃষ্টি এদিক ওদিক করলাম। সেদিন ফারদিন ভাই আমাকে ডেকেছিলো দেখা করার জন্য কিন্তু তাতে আমি না করে দিতেই সে আমাকে যা তা বলেছিলো, অনেকগুলো থ্রেটও দিয়েছিলো। আমি জানি তার সম্পর্কে। শুধু শুধু তো আর তাকে ভয় পাই না। সে সময়ে তীব্রও কথা বলতেন না আমার সাথে তাই তাকে জানানো হয়নি। আর ফারদিন ভাইয়ের সাথে দেখা করেছি শুনলে রেগে যাবে ভেবে আরো বলিনি। কিন্তু ওই ছোট্ট বিষয়টা এতদুর এভাবে গড়াবে বুঝলে তখনই তীব্রকে সবটা বলে দিতাম। গালের ব্যাথায় আর তীব্রর ব্যবহারে চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়ালো। তীব্র নিজেকে শান্ত করতে পারলেন কি না জানি না। কিছুক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়ে থেকেই জিজ্ঞেস করলেন,

‘তোমার বাবা-মা কিভাবে মা’রা গেছে তার কিছু জানো?’

আমি কন্ঠ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে ছোট্ট করে বললাম, ‘শুনেছিলাম এক্সিডেন্টে মা’রা গেছে। এরবেশি কিছু জানি না।’

তীব্র আর কিছু না বলে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে গেলেন। দরজা বন্ধ করতে করতে বললেন, ‘ফারদিনের সাথে দেখা করে যে ভুলটা করেছো তার মাশুল না দিতে হয় আবার!’

তার ঠান্ডা গলার বাণীতে চমকে গেলাম। জ্ঞানশূণ্য হয়ে বসে রইলাম অনেকটা সময়। তীব্র ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়লেন। এবং আমাকেও আদেশ বাণী জুড়ে দিয়ে বললেন, ‘লাইট অফ করে এসে শুয়ে পড়ো।’

আমি চুপচাপ লাইট অফ করে জিরো বাল্ব অন করে শুয়ে পড়লাম। তীব্রর দৃষ্টি তখনো আমার দিকে। আমি তার দিকে না তাকিয়েই উল্টো পাশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। তখনো চোখ বাঁধ মানেনি। চুপচাপ নিজের মতো বর্ষণ করে যাচ্ছে। অনেকটা সময় পর তীব্র নীরবতার এই পরিবেশকে ছাপিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বললেন,

‘সরি প্রাণ!’

আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলাম। উনার অস্পষ্ট স্বরের সরি তে আরো বেশি কান্না পেলো। কিছু মানুষ হয় না যারা কান্নার সময় আদুরে কন্ঠে কিছু শুনলে বা যে কষ্ট দিয়েছে তার মুখ থেকে সরি শুনলেই কান্নার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়! আমিও তাদের মধ্যেই পড়ি। তীব্র বোধহয় জানতেন আমি ঘুমাইনি। তাই সে একদম পাশ ঘেঁষে আসলেন। একহাতে জড়িয়ে নিয়ে নাক মুখ ডুবিয়ে দিলেন ঘাড়ে। মুহুর্তেই কেঁপে উঠলাম। কাঁধে তরল কিছুর ঠান্ডা ছোঁয়া পেলাম। উনি কাঁদছে! বেশ অবাক হলাম। তীব্র ভাঙা ভাঙা ভাবে বললেন,

‘আ’ম সরি প্রাণ। আমি তোমাকে আ’ঘাত করতে চাইনি। এজন্যই তো এতো দেড়ি করে বাসায় ফিরলাম কিন্তু বুঝতে পারিনি তুমি আমার অপেক্ষায় জেগে থাকবে। তোমাকে দেখতেই রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো আর রাগের বসে তোমাকে আ’ঘাত করে ফেলেছি।’

উনার কথায় ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলাম। কিছুটা সময় ওভাবে থাকতেই তীব্র আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন। আমি তখনো চোখ বন্ধ করেই আছি। উনি আমার চোখ মুছিয়ে চোখের পাতায় পরপর দুটো চুমু খেলেন। আমি শক্ত করে আঁকড়ে ধরলাম উনার টি-শার্ট। উনি কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলেন। তার গভীর চুম্বনে আরো একবার কেঁপে উঠলাম। উনি মুহুর্তেই যেনো উন্মাদ হয়ে উঠলেন। পরপর পুরো মুখে পাগলের মতো চুমু দিতে শুরু করলেন। উনার একটা হাত গিয়ে ঠেকলো উদরে। মুহুর্তেই পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। উনার টি-শার্ট আঁকড়ে ধরে রাখা হাতটা আরো শক্ত হলো। এরপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। উনার হাতের ছোঁয়া দৃঢ় হলো। একেকটা ছোঁয়া যেনো হৃদয় কাঁপানো।

চলবে..

#তীব্র_প্রেমের_নেশা (১২)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
________________

বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কাল থেকে শোভার বিয়ের সব অনুষ্ঠান শুরু হবে। তীব্র বেশির ভাগ টাইমই বাহিরে থাকে। তার নাকি কতশত কাজ! সেদিন রাতের পর আর আমাদের ঠিকমতো কোনো কথা-ই হয়নি। সেই রাতের কথা ভাবলেই আমার হৃদপিন্ড লাফাতে শুরু করে। শ্বাস আটকে যায় নিমিষেই। লজ্জায় নিজেকে আড়াল করে নিই সবসময়। সেদিন রাতে যতটুকু যা হয়েছে তার পুরোটাই যে ঝোকের মধ্যে হয়ে গেছে তা আমি আর তীব্র হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি পরেরদিন। দুজনের কেউই বুঝতে পারিনি এমনটা হবে! তীব্র এরপরের দুদিন গম্ভীর মুখে ছিলো যেনো সে বড়সড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছে৷ তার ওই মুখের দিকে তাকালেই যেনো বুকের বাম পাশে চিনচিনে ব্যাথা শুরু হয়। গত ৩ দিন থেকে তীব্র ঠিকমতো বাড়িতে থাকে না কিন্তু নানাভাই স্পষ্ট বলে দিয়েছেন আজ থেকে যেনো তীব্র বাড়িতেই থাকে। আর তীব্রও তা মেনে নিয়েছে। আজ ছোটরা সবাই শপিং এ যাবে। শোভার বিয়ে নিয়ে সবার উত্তেজনা থাকলেও আমি আর তীব্রই সবটা থেকে দুরে দুরে থাকছি। বড় মামা, বড় মামি, শোভা বা তানহা কেউই আমাকে তেমন একটা পছন্দ করে না তাই আমার এসবে জড়ানো ঠিক হবে বলে মনে হয়নি কিন্তু ছোট মামি, বড় খালা, ছোট খালা, মিলি, তিহা সবার জোড়াজুড়িতে বিয়েতে না মেতেও উপায় নেই। সবার হাতে হাতে টুকটাক সব কাজ করে যাচ্ছি আমি নিজেও। এসব ভাবতে ভাবতেই রেডি হয়ে নিলাম। পার্পল কালারের একটা শাড়ি পড়ে চুলগুলো বেঁধে নিয়েছি৷ তিহার পাগলামিতেই এসব। শাড়ির আঁচল ঠিকমতো টেনে নিতেই দরজা ঠেলে রুমে আসে তীব্র। আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড পলক না ফেলে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। গলা পরিষ্কার করে বলে,

‘হঠাৎ এতো সাজ?’

উনার কথায় ভ্রুদ্বয় কিঞ্চিত কুঁচকে গেলো। নিজের দিকে ভালো করে তাকালাম। এরপর বললাম, ‘সাজ কোথায়? সবাই শপিং এ যাবে বলে তিহা শাড়ি হাতে ধরিয়ে গেলো যেনো এটাই পড়ি।’

তীব্র মাথা তুলে তাকালেন আমার দিকে। চোখে মুখে গম্ভীরতা স্পষ্ট হয়ে গেলো। গুরুগম্ভীর কন্ঠে আওড়ালেন, ‘শপিং এ যাবে শাড়ি পড়ে? বোরকা কি হয়েছে তোমার?’

‘বোরকা তো আছে। তিহা ব…’

‘তিহা যায় বলুক তুমি এখনই শাড়ি চেঞ্জ করে বোরকা পড়ো নয়তো শপিংএ যাওয়ার দরকার নেই।’

আমি ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘এতো কষ্ট করে শাড়ি পড়ে আবার চেঞ্জ করবো!’

‘আমাকে জিজ্ঞেস করে শাড়ি পড়ছো? এখন চুপচাপ চেঞ্জ করে বোরকা পড়ে হিজাব পড়ে নাও।’

গাল ফুলালাম আমি। কাবাড থেকে বোরকা বের করে তা নিয়ে তীব্রকে পাশ কাটিয়ে আসার সময় তীব্রর বিড়বিড় করা কয়েকটা বাক্য কানে আসে,
‘আমার বউকে আমি একা দেখবো বাকি সবার থেকে আড়ালে রাখবো। তাই শাড়ি পড়ে কোনোমতেই বের হতে দিবো না মানে না।’

যদিও উনাকে পাশ কাটিয়ে চলে এসেছি কিন্তু উনার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। মস্তিষ্ক পর্যন্ত কথাগুলো যেতেই ঠোঁট প্রসারিত হয়ে গেলো। ঠোঁট কামড়ে হেঁসে কয়েক পল তার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ ওয়াশরুমে ঢুকলাম।

আমাকে বোরকা পড়ে দেখে তিহা গাল ফুলালো। ওকে কতকিছু বুঝিয়ে শেষে শপিং এ যাওয়া হলো। যার যার মতো শপিং করলেও আমি আটকা পড়ে আছি তীব্রের কাছে। না সে নিজে শপিং করতেছে আর না আমাকে করতে দিচ্ছে। সবাইকে ভেতরে পাঠিয়ে এক হাতে আমার হাত চেপে আরেক হাতে নিজের ফোন স্ক্রল করছে। এভাবে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো! বিরক্তিতে আমার ইচ্ছে করছিলো লোকটার গলা টি’পে দেই কিন্তু সে ইচ্ছে দমিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

‘নিজে তো যাচ্ছেন-ই না আবার আমাকেও যেতে দিচ্ছেন না। আপনি না গেলে অন্তত আমারে যায়তে দেন। আর যদি শপিং না-ই করানোর হয় তাইলে আনলেন-ই বা কেন?’

তীব্র ফোনে মনোযোগ দিয়েই বললেন, ‘আমি কখন বললাম আমি তোমাকে শপিং করাবো না? বাড়িতে বিয়ে যখন তখন তোমাকেও শপিং অবশ্যই করাবো।’

‘তো এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শপিং করবো!’

তীব্র ফোন রেখে আমার দিকে তাকালেন। নিকাবের ওপর দিয়ে গাল টি’পে বললেন, ‘বাহ আমার বউয়ের তো দেখছি ভালোই রাগ! তাশজিদ শেখ তীব্রর বউ হয়ে এতো অধৈর্য হলে চলে? একদমই না।’

বলেই একটা টেডি স্মাইল দিলেন। আমি হা করে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। এই লোকটাকে কেনো বিয়ে করেছিলাম আমি! শপিং করাবো বলে পার্কিং এড়িয়াতে দাঁড়িয়ে আছে! নিজেই নিজের কপাল চাপড়ালাম। বিড়বিড় করে নিজেই নিজেকে বললাম,

‘পড়েছো কি’প্টার হাতে এবার তোমার শপিং জলভাতে।’

তীব্র মুহুর্তেই তাকালেন আমার দিকে। তার তাকানো দেখে খানিকটা চমকালাম। উনি ঠোঁট গোল করে বললেন, ‘আরেহ বাহ! তুমি দেখছি কবিতাও বানাতে পারো। গ্রেট গ্রেট।’

জিভ কামড়ালাম। লোকটা শুনে ফেলেছে! তীব্র ফোন নিয়ে টাইম দেখে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে হাঁটা লাগালেন। গম্ভীর স্বরে বললেন, ‘ওদের সাথে গেলে তানহা আর শোভা তোমাকে খোঁ’চা মে’রে কথা বলতো। আর আমার এতোও অকাল আসেনি যে সামান্য শপিং এর জন্য আমার বউকে যে কেউ যা তা বলবে আর আমি শুনবো! তাই তুমি আর আমি একসাথে যাবো কিন্তু একটু দেড়ি করে। আর ওদের যা রঙঢঙ তাতে তুমি আর আমি যদি লাস্ট ১০ মিনিটেও যাই তবুও ওদের শপিং করা হবে না।’

আমি পিটপিট করে তাকালাম। মুচকি হেঁসে তীব্রর পায়ে পা মিলিয়ে শপিং মলে ঢুকলাম। সব শপিং তীব্রর পছন্দ মতোই নিলাম। লেহেঙ্গা, শাড়ি, জুতো শেষ করে এবার পালা জুয়েলারির। দুজনে জুয়েলারি শপে ঢুকতেই চোখ আটকে গেলো একটা পেনডেন্ট এ। ভীষণ পছন্দ হলেও আমি তীব্রকে তা বললাম না। শাড়ি আর লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং করেই সব গহণা নিলাম। সবশেষে যখন তীব্র বিল পেমেন্ট করতে গেছে তখন চোখ পড়লো দরজার বাহিরে। মুখটা জিনিয়ার মতো মনে হতেই যেনো শক খেলাম। সব শপিং সেখানেই ফেলে ছুট লাগালাম দরজার দিকে। দরজা থেকে বাহিরে এসে আশে পাশে কিছুটা দৌড়ানোর পরও জিনিয়াকে আর দেখলাম না। ভীড়ের মাঝে যেনো হারিয়ে গেলো সহজেই। আমি কনফিউজড হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। সত্যিই কি জিনিয়াকে দেখেছি! নাকি চোখের ভুল! এরমধ্যেই তীব্র দৌড়ে আসে। তড়িঘড়ি করে আমাকে ধরে বলে,

‘পাগল নাকি? এভাবে কেউ ছুটে আসে! আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছি জানো? কি হয়েছে? এমন করে ছুটে আসলে কেনো?’

আমি রোবটের মতো হাত দিয়ে সামনে ঈশারা করে বললাম, ‘জিনিয়া!’

তীব্র চমকে তাকায় সেদিকে কিন্তু জিনিয়াকে না দেখে বলে, ‘কোথায় দেখেছো? এখানে!’

আমি মাথা নাড়লাম। উনি আমাকে ছেড়ে রেলিং য়ের কাছে গিয়ে পুরোটা পর্যবেক্ষণ করলেন। কিন্তু জিনিয়াকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসলেন। আমি তীব্রর শার্টের এক কোণা চেপে ধরে বললাম,

‘জিনিয়া সত্যিই বেঁচে আছে তীব্র? তাহলে সেদিন!’

তীব্র গম্ভীর হয়ে গেলেন। নিজের শার্টের কোণা ছাড়িয়ে নিয়ে আমার এক হাত চেপে হাঁটা লাগালেন। গম্ভীর গলায় বললেন, ‘বাড়ি চলো!’

জুয়েলারি দোকান থেকে সব ব্যাগ নিয়ে চলে আসলাম। মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে জিনিয়ার মুখ। ‘ও’ যদি সত্যিই বেঁচে থাকে তাহলে সেদিন মা’রা গেলো কে? কেনোই বা সেদিন সব দোষ তীব্রকে দিয়েছিলো! জিনিয়া বেঁচে থাকলে কেনো জানালো না আমাকে? আন্টি তো বলেছিলেন জিনিয়াকে দাফন করানো হয়েছে তাহলে জিনিয়া বেঁচে আছে কিভাবে! এতো এতো প্রশ্নের দরুণ মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো। পরপর কয়েকটা ঢোক গিললাম। তীব্র চিন্তিত মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ঠিক আছো প্রাণ? শরীর খারাপ লাগছে?’

আমি উত্তর দেওয়ার আগেই তিহারা সবাই চলে আসে। একে অপরের শপিংয়ের কথায় বলছিলো নিজেরা নিজেরা। তারপর যে যার মতো জায়গায় বসে পড়লো। তানহা আমাকে আর তীব্রকে গাড়ির মধ্যে দেখে ঠেস দিয়ে বলে,

‘তীব্র প্রানেশাকে শপিং করিয়ে দাওনি! দিবেই বা কেনো? যাকে বিয়েই করেছো একটা…’

তীব্র পেছনে তাকিয়ে চোখ গরম করে বললেন, ‘তোর না ভাবলেও চলবে আমি ওকে শপিং করিয়েছি কি না! নিজের চরকায় তেল দে।’

তানহার মুখটা একটুখানি হয়ে গেলো। শোভা জ্বলে উঠে বললো, ‘তীব্র ভাই তুমি এই মেয়েটার জন্য তানহার সাথে এমন ব্যবহার কেনো করো?’

এবার উত্তরটা তিহা-ই দিলো। হেঁসে বললো, ‘তোমার বোনকে বলো আমার ভাবির সাথে ঠিক করে কথা বলতে তাহলেই তো ভাইয়া আর কিছু বলে না। আর তাছাড়া আপু ভাবিকে ‘এই মেয়ে’ না বলে ভাবি ডাকতে শিখো কারণ ওটা তোমারও ভাবি হয়। তানহা আপু তোমারও কিন্তু ভাবিই হয়।’

তানহা আর শোভা জ্বলে ওঠে। তীব্র বাঁকা হেঁসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। ওদের এতো কথোপকথনে আমার বিন্দুমাত্র মাথা ব্যাথা নেই। আমার মন আর মস্তিষ্ক পুরোটাই এখনো পড়ে আছে জিনিয়ার কাছে। কি থেকে কি হয়েছে সবটা ভেবেই কুল কিনারা পাচ্ছি না।

আমার ভাবনার মাঝেই বাড়ি চলে আসলাম। বাড়িতে আসার পরও আমি বিষয়টা ভুলতে পারলাম না। তীব্র আমার অমনোযোগীতা খেয়াল করে বলে, ‘জিনিয়ার কথা ভাবছো?’

আমি তাকালাম উনার দিকে। খুঁটে খুঁটে দেখলাম উনাকে। চোখ দুটোর গভীরতা ভীষণ বেশি তাই তো কখনোই ওই চোখের দিকে তাকানোর সাহস পাই না। তাকালেই মনে হয় তারা আমাকে তাচ্ছিল্য করে বলছে, ‘যাকে ভালোবাসো তার চোখের ভাষা বুঝো না। তাকে বুঝো না। কত সহজেই ভুল বুঝে বসো! তুমি কি আদৌও এই মানুষটাকে ভালোবাসার যোগ্য! তুমি কি আদৌও এই চোখের ভাষা বুঝার যোগ্য!’ বিষয়গুলো ভাবতেই যেনো আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। তীব্র খানিকটা এগিয়ে আসে আমার কাছে। এলোমেলো হওয়া চুলগুলোকে কানের পৃষ্ঠে গুঁজে দিয়ে বলে,

‘এতো বেশি ভেবো না। যা হওয়ার তা হবেই। প্রকৃতি নিজেই সবটা তোমার সামনে এনে দিবে তাই এতো ভেবে শুধু শুধু নিজের মাথাটা এলোমেলো করো না। এমনিও তোমার মাথায় ম’গজের বদলে গো’বর রাখা।’

তীব্র ঠোঁট চেপে হাসলেন। আমি অপলক চেয়ে রইলাম তার হাসির দিকে। সে হয়তো আশা করেছিলো আমি রেগে যাবো কিন্তু হলো তার বিপরীত। রোবটের মতো তাকে হুট করেই জড়িয়ে ধরলাম। আনমনে বললাম,

‘যত সত্যর কাছে যাচ্ছি ততটাই আপনাকে করা ঘৃ’ণা গুলো আমার নিজের দিকে ফিরিয়ে আনছি। আপনার কথামতো সত্যিই আমার নিজের প্রতি ঘৃ’ণার সৃষ্টি হচ্ছে। আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন না তীব্র। আমি ভালোবাসি আপনাকে। কবে, কখন, কিভাবে জানা নেই শুধু জানি তীব্র প্রেমের নেশায় আমি ডুবে গেছি। প্রতি মুহুর্তে পু’ড়ে যাচ্ছি এই প্রেম নেশায়।’

চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)