# তুই_আমার_কাব্য 🍂
#Writer: Anha Ahmed
#Part: 16
.
🍁
.
শুনশান রাস্তা। মাঝে মাঝে কয়েকটা গাড়ি যাচ্ছে। এক পা এক পা করে সামনের লোক এগোচ্ছে আর এক পা করে মেঘলা পেছাচ্ছে। শয়তানি বিশ্বজয়ী হাসি তার মুখে। মনে হচ্ছে যেনো শত জনমের অপেক্ষার পর এমন একটা দিন সে বরস্বরূপ পেয়েছে। মেঘলা কন্ঠনালী আদোও আছে কিনা তা এই মূহুর্তে সে ভুলে গেছে কেননা তা দিয়ে কোনো আওয়াজ সে বের করতে পারছে না। হাত পা মারাত্মক রকমের ভাইব্রেসন মুডে আছে। মেঘলার চোখ বেয়ে অনবরত পানি বেরিয়ে যাচ্ছে। মুখের কথাগুলো অশ্রু হয়ে চোখ দিয়ে বেড়িয়ে আসছে। ভয়ার্থ চোখ কিন্তু ভাষা করুণ নিয়ে আকুতি মিনতি চালিয়ে যাচ্ছে তা ছেড়ে দেওয়ার। কিন্তু লোকটা যে তার চোখের এই করুণ ভাষা না বুঝে ভয়ের কারণ বুঝে বিষাদীয় সুখ অনুভর করছে। মেঘলা সুযোগ বুঝে পেছন ঘুরে দৌড় দিতে যাবে তখনই লোকটা হাত বাড়িয়ে মেঘলার ওড়নাটা টেনে হাতে পেচিয়ে নিতে থাকে। মেঘলার গলার সাথে টান লেগে মেঘলা ওড়না ধরে থেমে যায়। মেঘলার কন্ঠনালী যেনো ধীরে ধীরে জাগ্রত হতে থাকে। সেইটার আভাস পেয়ে মেঘলা মিনতি সুরে বলে,
– দ দ দয়া কককরে ছেড়ে দিইইইন আআআমায়।
অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে সাথে সাথে বলে,
– কি করে ছেড়ে দেই বলো তো বেবি তোমায়? কতদিন মানে কতদিন পড়ে এমন সুযোগ এলো। কি করে হাত ছাড়া করবো আমি? এতোটা বোকা ভেবো না। আর তোমার জন্য যা যা পোহিয়েছি তার শোধ তোলার জন্যই তো বেঁচে আছি। আর সেই সুযোগ যখন পেয়েছি তখন কি এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া যায় বলো?
– মা মা মানে? ক ক কি করতে চা আআ চ্ছেন?
– কুল বেবি। কি মনে করছো তোমার সাথে উল্টা পাল্টা কিছু করবো? নো নো নো। এরকমটা আমি করতে পারি বলো? তুমি এই বিশ্বাস করো আমায়? যদি এরকম ভাবো তাহলে বরবো একদম ঠিক ভেবেছো। কতটা চেনো তুমি আমায়। এর থেকে বেশি তো আমার ফ্রেন্ডরাও চেনে না আমায়।
মেঘলার আত্মা এই যেনো উড়ে যায় যায়। ওড়নাটা ছাড়ানোর চেষ্টা এখনো অব্যাহত রেখে চলেছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। মেঘলা আশে পাশে তাকিয়ে দেখতে পেলো মানুষের আনাগোনা খুবই কম আর যাদের আছে তারা যেনো ফিরেও চাচ্ছে না। কি অদ্ভুত তাই না! মানুষের বিপদে মানুষ এগিয়ে আসে না। মানবিকতার কতটা অধপতন ঘটলে মানুষ এরকম আচরণ করে। যাই হোক এখন যা করতে হবে মেঘলার একাই করতে হবে সেইটা মেঘলা বুঝে গেছে। তাই নিজেকে ধীরে ধীরে শক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে নিজেকে কন্ট্রোলে রাখা খুবই কষ্টকর ব্যপার। তবুো মেঘলা হাল না ছেড়ে কঠিন গলায় বলে,
– কি করবি হ্যা? প্রতিশোধ নিবি? কিছুই করতে পারবি না। বেশ করেছিলাম গতবার পুলিশে দিয়ে। কিন্তু ভুল হয়েছে আমার। পুলিশের কাছে না তুলে তোকে মালাকুল মউত এর দেখা পাইয়ে দেওয়া উচিৎ ছিলো। তোর মতো নিকৃষ্ট জন্তুকে এই সমাজে রেখে সমাজকে ভয়ংকর জঙ্গলে পরিণত করা থেকে বাঁচানো উচিৎ।
মেঘলার কথা শুনে ছেলেটা ভয়ংকর রেগে গিয়ে এক ঝাটকায় ওড়না গায়ে থেকে নামিয়ে দেয়। মেঘলা এবার বেশ ঘাবড়ে যায় আর হঠাৎ করে এতো জোড়ে টান দেয়ায় মেঘলা টাল সামলাতে না পেরে সামনের দিকে পরে যায় আর গলায় ওড়নার টান গেলে ছিলে যায়। এতে বেশ ব্যথা পায়। ব্যাথা কুকিয়ে ওঠে মেঘলা। ছেলেটা মেঘলার দিকে আরেকটা পা এগুতে যাবে তার আগেই বাতাসের বেগে কেউ একজন এসে ছেলেটার পায়ে এমন ভাবে লাথি পারে যে ছেলেটা মুখ থুবড়ে একদম মেঘলার সামনে পড়ে যায়। মেইন রোডে মুখ থুবড়ে পড়ায় ছেলেটির মুখ দিয়ে রক্ত বেড়িয়ে যায়। আকষ্মিকভাবে এমন হওয়ায় মেঘলা ওঠে বসে পড়ে। ছেলেটির পড়ে থাকার দিকে তাকিয়ে থেকে ওপরে তাকাতেই চোখে খুশির ঝিলিক দেখা দিলো। আনন্দে চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এলো। চোখে মুখে আগুনের লাভা নিয়েও কাব্য খুবই শান্তভাবে মেঘলার কাছে এসে ওকে দু হাত দিয়ে পরম যত্নে তুলে একহাত দিয়ে জড়িয়ে নিলো। মেঘলার অগোছালো চুল আর চাউনিতে অগোছালো হয়ে যাচ্ছে কাব্য। দাঁতের সাথে দাঁত লেগে যাচ্ছে। ছেলেটিকে পড়ে থাকা দেখে বেশ কিছু পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো একসাথে দৌড়ে এসে কাব্যকে এ্যাটাক করতে গেলে কাব্য ঠিক একইরকমভাবে মেঘলাকে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। আস্তে করে পকেট থেকে একটা স্প্রে বের করে ওরা কাছে আসতেই সবার সামনে এক হাত দিয়ে স্প্রে করে আরেক হাত দিয়ে মেঘলার মাথা নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। মেঘলা একদমই বাকহীন ব্যাক্তির ন্যায় তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু দেখে গেলো। পেটে চিন চিন ব্যাথা অনুভব করছে কেনো জানি না। পেটে হাত দিয়ে বুক থেকে মাথাটা সামান্য তুলে হাত তুলে চোখ ঘোলাটে হয়ে এলো। একহাত দিয়ে কাব্যর শার্টি খামচে ধরার সাথে সাথে ওপর হাত নিস্তেজ হয়ে পড়ে গেলো। মেঘলার সারা শরীর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যায়। কাব্য বুঝতে পারে মেঘলার শরীর ছেড়ে দিচ্ছে। মেঘলার দিকে তাকাতেই অগ্নি চোখে চিন্তা ভর করে এলো। কাব্য বসে পড়ে মেঘলার মাথা বুকের সাথে ঠেকিয়ে ব্যস্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
– মেঘাবতী! এই মেঘাবতী। কি হলো তোমার? কথা বলো। চোখটা খুলো। এভাবে চুপ করে থেকো না প্লিজ। চোখ খোলো। কথা বলো আমার সাথে। মেঘ! এই মেঘ ওঠো।
কাব্য হঠাৎ খেয়াল করে মেঘলার হাত লাল রঙে ভরা। হাতটা ধরে বুঝতে পারলো এটা রক্ত। মেঘলার হাতে রক্ত দেখে কাব্যর বুকটায় মোচর দিয়ে ওঠে। হাতটা ভালো ভাবে চেক করতে গিয়ে দেখে আকাশী রঙের জামাটা ভেদ করে পেটের সাইডে লাল রক্তটা ফুটে ওঠেছে। পেটের সাইডে মাঝারি সাইজের একটা কাঁচ ফুটে আছে যার জন্য এতো রক্ত পড়ছে। মেঘলার পেট থেকে রক্ত পড়া দেখে কাব্য যেনো এবার ফ্রিজড হয়ে গেলো। হাত পা যেনো ঠান্ডা হয়ে আসছে। কাঁচটা বের করতে গিয়েও যেনো পারছে না। কোনো কিছু না ভেবে কোলে তুলে নিয়ে সামনে একটা গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যেনো গাড়িটা থামতে বাধ্য হয়। কাব্য মেঘলাকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
একহাতে স্যালাইন আর আরেক হাতে ক্যানোলা পড়ে শুয়ে আছে মেঘলা। তার পাশে বসে আছে মেঘলার মা ও বড় বোন মেহের। বাকিরা বাহিরে বসে আছে। সকলের চোখে মুখে টেনশনের ছাপ স্পষ্ট। মেঘলার মা ওর বোন তো কেঁদে চোখফুলিয়ে রেখেছে। কিছুক্ষণ পরই ডাক্তার এসে জানালেন মেঘলাকে কড়া ডোজের ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে যাচ্ছে। ব্যাথাটা তাহলে কম বুঝবে। রাতের দিকে ওঠে যাবে। ততক্ষণে আবির আর আবিরের মা ও এসে পৌঁছিয়েছে। আবির সোজা কেবিনে ডুকে পড়ে। আবির ডাক্তারের সাথে কথা বলে মেঘলার মা ও বোনকে নিয়ে বাহিরে নিয়ে এলো রেস্টের জন্য। মেঘলার মাকে সামলাতে আবিরের মা এগিয়ে এলো। আবির মেঘলার কেবিনে মেঘলার কাছে গিয়ে বসে মেঘলার দবকে তাকাতেই ওর চোখে পানি ছলছল কর ওঠে। মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিতে গিয়েও কেনো যেনো ফিরে এসে চোখ মুছে চলে যায় বাহিরে।
সন্ধ্যা সাতটা। বাহিরে অধির আগ্রহে মেঘলার মা বাবা, আবিরের মা, আবির, মোহনা, মেহের, শুভ ও কাব্যর বাবা বসে আছে। মোহনাকে ধরে বসে আছে তনু। সবাই উপস্থিত শুধুমাত্র কাব্য ছাড়া। কিছুক্ষণ পরই মেঘলার কেবিনের আরেকটা দরজা দিয়ে ধীর পায়ে এসে আস্তে করে মেঘলার পাশে চেয়ার টান দিয়ে বসে। অগোছালো চুলগুলো কপাল জুড়ে আছে। সাদা মুখটা বিধ্বস্ত হয়ে মলিন হয়ে আছে। হাতে সাদা একটা রুমাল পেছানো। সেই হাত দিয়ে মেঘলার একহাত ধরে কাব্যর দুই হাতের মাঝখানে নিয়ে আলতো করে ধরে চুমু দিয়ে বলে,
– আমার কলিজা যারা ছেড়ার চেষ্টা করে তাদের কলিজা কি করে তাদের দেহে কলিজ আমি থাকতে দেই বলো? এক একটার কলিজা কেজি দরে বিক্রি করা হবে।
চলবে….. ❤