#তুই__আমার
#লেখাঃ সাফিয়া_জান্নাত_মুন
#পর্ব ১৮
———-
তো ভাই তুমি কন্যা সন্তানের পিতা হয়ে গেলে?
হুম, আজ সত্যি মনে হচ্ছে জীবনে সবচেয়ে বড় মুহূর্ত এটা।
উফ আমার তো ভাবতে খুশিতে মন নেচে উঠছে এখন একটা ছোট বাচ্চা আমাদের বাড়িটায় তার ছোঁয়া আন্দনে ভরিয়ে দিবে।
আচ্ছা,মেঘা ওর হাত পা তো অনেক ছোট ছোট হবে আমি কি নিতে পারবো??
ভাই সত্যি বলতে প্রথম প্রথম ভয় হবে যদি কিছুই হয়ে যায় পরে তুমি বাবা হওয়ার দায়িত্ব টা ঠিক ভাবে পালন করতে পারবা।
হুম তুই দেখিস আমি বেষ্ট পাপ্পা হয়ে দেখাবো।
!
!
কিছুইক্ষন পর মিশুকে কেবিনে দেওয়া হলো সাথে নতুন বেবি কেউও।
কেবিনের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো কবির আর মেঘা।
মিশুর সাথে থাকা নার্স টা মুচকি হেসে বললো,,
আপনাদের মধ্য সর্বপ্রথম কে নিবে বেবি কে?
আমি বেবির বাবা নার্স আমি নিবো প্রথমে।
নার্স কবিরের কাছে এগিয়ে গিয়ে বেবিকে তার কোলে দিলো কবির অনেক সাবধানে বেবিকে নিলো এতো ছোট ছোট হাত পা যদি কিছুই হয়ে যায়।
কবির বাচ্চা কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছে।
মেঘা মিশুর পাশে বসতেই মিশু মেঘার হাত ধরে নিলো,,মেঘা হালকা শুকনো হাসি হেসে বললো তো আমার ছোট মিশু টা আজ মা হয়ে গেছে।
হুম এখন আর আমায় ছোটো বলা চলে??আমার এখন একটা মেয়ে আছে বুঝো ব্যাপার টা।
মিশু।
কি?
তুই ও গম্ভীর গম্ভীর কথা বলা শিখে গেছিস।
বলেই এক সাথে হেসে উঠলো দুইবোন।
কবির এসে বললো,, এখন বেবি কার কাছে যাবে কার কাছে খালামনির কাছে
কবির বেবিকে মেঘার কোলে তুলে দিলো।
মেঘা বেবিকে কোলে এক ধ্যনে বেবির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,,তোমাদের বেবি কে একদম কাব্যর মতো দেখা যায়। দেখো ওর ফেস টা ওর চোখ জোড়া।
মেঘার কথায় মিশু কবির তাদের বাচ্চার দিকে তাকিয়ে দেখলো আসলে মেঘার কথার ঠিক সত্যি তাদের মেয়ের চেহারার সাথে কাব্যর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
মেঘার চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়লো। মেঘা বেবিকে মিশুর কোলে দিয়ে বললো,
তোমাদের এখন একা সময় কাটানো উচিৎ আমি আসি।
আপু তুই।
থাক মিশু পড়ে কথা হবে।
মেঘা বা হাত দিয়ে চোখের পানি টুকু মুঝে বেরিয়ে গেলো।
ড্রাইভার ড্রাইভ করছে,
মেঘা পিছনোর সিটে বসে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে আছে। চোখ বন্ধ থাকলেও তার চোখ দিয়ে পানি ঠিক বয়ে যাচ্ছে।
!
!
!
!
মিশু বেবিকে কোলে নিয়ে আছে পাশে কবির বসে আছে।
জানো মিশু এই কয়বছরে সব কেন জানি এলোমেলো হয়ে গেছে। কোনো কিছুই ঠিক নেই।
হুম আপু কিভাবে সহ্য করছে বলতো?
সহ্য করার ক্ষমতা ওর মধ্য তৈরি হয়ে গেছে এখন ও চাইলেও সহ্য না করে কিছুই করতে পারবে না।
একের পর এক ঝড় এসে আপুর জীবন টা তছনছ করে দিচ্ছে এভাবে আর কতো?
আমি জানি না মিশু কিন্তু শেষটা ভালো হবে।
মিশু কবিরের বুকে মাথা রাখলো। আর তাদের মেয়ে দিকে তাকিয়ে ভুলে থাকার চেষ্টা করছে সবকিছুই।
!
!
!
!
মেঘা গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতর ঢুকতে আয়েশা খালামনির সাথে দেখা হলো তাকে দেখে মেঘা এক দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে সোফায় গিয়ে বসলো
মেঘার মাথায় হাত দিয়ে আয়েশা বেগম বললো কি হয়েছে মা??
কিছুই না খালামনি। (কান্নারতো স্বরে)
বলবি না??
খালামনি কাব্য তো আমায় এতো ভালোবাসে তো আমায় কিভাবে ভুলে যেতে পারে ও বলো কিভাবে?
কাব্য তো এক মাস আগে হুস ফিরে পেলো এতোবড় একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে ওর সাথে, তুই ও কি সব ভুলে গেছিস?
আমি ভুলে গেছি বলছো এখনো ও মনে পড়ে সেই দিনের কথা টা
সেইদিন,,,,,,,,,
আয়েশা তোর এতো বড় সাহস তুই আমার দিকে বন্ধুক তাক করিস এর শাস্তি তোকে পেতে হবে কিন্তু তুই আমার একটা উপকার করেছিস ওদের পালাতে দিয়ে এখন কি হবে বল আমার লোকেরা ওদের গাড়িকে ধাক্কা দিবো মেঘার মা বাবার মৃত্যু যেভাবে হয়েছে ওর মৃত্যু সেভাবেই হবে। বিকট শব্দ করে হেসে উঠলো শরীফ চৌধুরী
আয়েশা বেগমের দিকে ঘুরে দারাতে,
নিজের অস্ত্র ফেলে দিন পুলিশ আপনাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে।
শরফী চৌধুরী ঘুরে একজন পুলিশ অফিসার কে গুলি করতে তাকে পাকরাও করে ধরলো পুলিশ সেই মুহুর্ত থাকে গ্রেফতার করে নিলো
কবির এসে বললো,,
আজ তোমাকে নিজের বাবা ভাবতে ঘৃণা হচ্ছে আমার অফিসার নিয়ে যান এই লোকটাকে।
আয়েশা বেগম দৌড়ে এসে কবিররের পাশে দারালো, চল আমাদের কাব্য আর মেঘাকে বাঁচাতে হবে।
রোড সাইডে গাড়ি এক্সিডেন্ট করে উল্টে পড়ে আছে। মেঘা আর কাব্য কে রক্তাক্ত অবস্থায় হসপিটালে নেওয়া হয়। কাব্যর মাথায় অনেক আঘাত পেয়েছে তার উপর গুলি লেগে রক্ত পরেছে প্রচুর। কাব্য অবস্থা ক্রিটিকাল ছিলো মেঘার চেয়ে।
মেঘা ৭ মাস হসপিটালে ছিলো। ধীরে ধীরে মেঘা যখন চেতনা ফিরে পেলো,
মেঘার মুখে অক্সিজেন মার্কস। চারিদিকে ঘুরে ঝাপসা চোখে সবকিছুই দেখার চেষ্টা করছে মেঘা।
মাথা ব্যাথায় সে ঠিকভাবে মাথা তুলতে পারছে না
কাব্য এর কথা মাথায় আসতে মেঘা সব শক্তি নিয়ে উঠে বসলো।
নিজের হাতে সুচ বিধানো লাইন গুলো টেনে খুলে ফেললো।
মেঘা নেমে এসে ট্যালোমলো করে হেটে আসছে দরজার দিকে দুইজন নার্স মেঘাকে শক্ত করে ধরে নিলো।
প্লিজ আমায় ছাড়ুন আমার হাজবেন্ড এর কাছে যেতে দিন আমায়।
ম্যাম আপনি এখনো সুস্থ না আপনি প্লিজ রেস্ট নিন।
কি বলছেন আপনি আমি আমার হাজবেন্ডের কাছে যাবো আমি কাব্যর কাছে যাবো।
না ম্যাম আপনি এভাবে যেতে পারেন না।
আপনি বুঝতে পারছেন না আমি আমার কাব্যর কাছে যাবো।
নার্সরা বাধ্য হয়ে ডাক্তার এর পারমিশন নিয়ে মেঘাকে কাব্যর কাছে নিয়ে যায়।
কাব্য পাশে বসিয়ে দিয়ে নার্সরা চলে যায়।
কাব্য বেডে শুয়ে আছে। চুল গুলো কপালে পড়ে আছে অবশ্য মাথায় সাদা গজের ব্যান্ডেজ, হাতে সুচ বিধানো স্যালাইন আর রক্তের পাম লাইন।
মেঘা কাব্যর দিকে এক ধ্যনে তাকিয়ে আছে কাব্যর হাত টা ধরে বসে আছে মেঘা।
মেঘা আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠলো। ডাক্তার জানান কাব্য সুস্থ হতে অনেক টাইম লাগতে পারে ১ বছরে ঠিক হয়ে যেতে পারে আবার ৫ বছরে সুস্থ হতে পারে। মেঘা কাব্যর পাশে থেকে যন্ত করে। মেঘার বিশ্বাস কাব্য ঠিক হয়ে যাবে।
এসবের মধ্য মেঘা জানতে পারে তোর ছোট বোন প্যাগনেন্ট। এত দিনের মধ্য এই একটা সুসংবাদ ছিলো তার জীবনে।
মেঘার দায়িত্ব এর মধ্য মিশু ও পড়ে। মিশু কাব্য দুইজনের প্রতি কেয়ার মেঘা নিয়েছে। প্রতিটা দিন প্রতিটা সময় শুধু কাব্যর জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করতে থাকে।
এইতো ঠিক একমাস আগে,,
কাব্যর জ্ঞান ফিরার কথা শুনে মেঘা দৌড়ে আসে হস্পিটালে
মেঘার পিছে আয়েশা বেগম আর কবির ও এসেছিলো।
মেঘা দৌড় এসে কাব্যর হাত চেপে ধরলো,
আপনি ঠিক হয়ে গেছেন আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
কাব্য ভ্রু কুচক্রে মেঘার দিকে তাকাতে মেঘার অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
কাব্য মেঘার হাত থেকে নিজের হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, কে আপনি?? এভাবে আমার হাত ধরতে আপনার লজ্জা লাগছে না?
মেঘা কাব্যর কথায় আকাশ থেকে পড়লো।
কাব্য আবার বললো,,ভাই এই মেয়েটা কে?? এখানে কি করছে? আয়েশা খালামনি তুমি জানো না আমি অচেনা মানুষ জনদের এল্যাও করি না।
মেঘা বাধ্য হয়ে চলে গেলো।
মেঘাকে ডাক্তার জানান কাব্য আগের সব কিছুই ভুলে গেছে এখন যদি কোনোভাবে মনে পড়ে তো ভালো নাহোয় প্লিজ কেউ জোর করে চেষ্টা করতে যাবেন না এতে পেশেন্ট এর ক্ষতি হতে পারে।
মেঘার সব কিছুই এলোমেলো হয়ে গেছিলো। কিভাবে কাব্য তাকে ভুলে যেতে পারে এক প্রশ্ন ক্ষত বিক্ষত করে চলেছে মেঘাকে প্রতিনিয়ত।
বর্তমান সময়_______________
মেঘা আয়েশা বেগমের সাথে কথা শেষ করে নিজের রুমের দিকে গেলো।
বড্ড ক্লান্ত লাগছে তার তাই শাওয়ার নেওয়ার জন্য ওয়াশরুমে গেলো।
হঠাৎ করে,,,,,,
চলবে______________