তুই তারারে ভিনদেশী পর্ব-০৩

0
653

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী(সিজন-২)

লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)

part:03

হঠাৎ করেই কেউ হাতে হেঁচকা টান দিয়ে ফাঁকা ক্লাস রুমে নিয়ে আসে। রুমটা সম্পূর্ণ অন্ধকার, হঠাৎ করে লাইট ওন হওয়াতে সামনে তাকিয়ে দেখি আদিত্য।

আজ আমাদের ক্লাস নেই। ক্লাসে টিচারের মাধ্যমে জানতি পারি আজ ক্লিনডে তাই ক্লাস হবে না। কিন্তু স্যার কে আমার ডাস্ট অ্যালার্জির কথা বলে বেঁচে যাই। অহনা আর অন্যা কে বলি চুপিচুপি কোনো ভাবে যেন লাইব্রেরিতে চলে আসে। এতো আগে বাসায় গিয়েও বা করব টাকি?

আমি কিছু না বলে তার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে সে আমার হাত ধরে। মেজাজটা বিগরে যায় মনতো চাচ্ছে, রোস্ট করে চিকেন টোস্ট বানিয়ে হসপিটালের বেডে ফেলে আসি। নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি, আর সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে। একসময় ক্লান্ত হয়ে চুপ করে যাই। তখনই একটা ডেভিল হাসি দিয়ে বলে

” এনার্জি শেষ? লেবু পানি খাবে?? খাবার অর্ডার করব??

রেগে মনে হচ্ছে কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলি

” আপনি জানেন আপনি একটা অসম্ভব রকম অসহ্য, বেয়াদব খারাপ একটা মানুষ।

সে আমার হাতটা আরো জোরে চাপ দিয়ে ধরে বলে

” তুমি আজকে জানলে? আচ্ছা শুনো কালকের জন্য আমি সরি। আমার সেভাবে রিয়েক্ট করা উচিত হয়নি।

তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বললাম

” আপনাদের মতো বড় ঘরের ছেলেদের মুখে আমাদের মতো রাস্তার মেয়েদের জন্য সরি বড্ডই বেমানান। আর রাস্তার মেয়ের হাত ধরেছেন নোংরা হয়ে যাবে না হাতটা আপনার? হাতটা স্যানিটাইজ করে নিয়েন।

উনি রেগে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে

” আসলে ভুলটাই আমার, যে যেটা পাওয়ার যোগ্য না তাকে সেটা দিতে গিয়েছিলাম। মানুষ ভুল করেছে সরি বলেছে কাহিনি শেষ!!

আমি রুম থেকে বের হতে হতে বলি

” আপনার এই রাগ আর ইগোর জন্য একদিন সব হারাবেন। সেদিন হয়তো চাইলেও সব ঠিক হবে না নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে শিখুন মি.আদিত্য।

আদিত্য বলে

” তোমার থেকে এট লিস্ট আমার শিখতে হবে না যে আমার কি শিখা উচিত আর কি না।

আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম

” আমার থেকে শিখতে বলিনি যার থেকে ইচ্ছে তার থেকেই শিখুন।

বলেই চলে গেলাম লাইব্রেরিতে।

_____________

অন্যা সেই কখন পালিয়েছে হয়তো এতটা সময় আফরিন আর অন্যা হয়তো গল্প শুরু করে দিয়েছে।
এইসব ভাবছে আর লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছে কিন্তু হঠাৎই চোখ আটকে যায় আহানের সাথে একটা মেয়েকে দেখে। আহান দুই পাশে দেওয়ালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে আর কিছু নিয়ে কথা বলছে। মেয়েটা আহানের গলা ধরে আছে । অহনা এবার না পেরে কেঁদেই ফেলে। ধীর পায়ে আলতো হাতে গিয়ে আহানের কাঁধে হাত রাখে। আহান পিছনে ফিরে অহনা কে দেখেই চমকে উঠে। মেয়েটা আহানকে ছেড়ে দেয় । অহনা বলে

” ডিস্টার্ব করলাম বুঝি? আর করব না। বলেই চলে যেতে চাইলে আহান এসে অহনার হাত ধরে বলে

” তুমি যেমন টা ভাবছ তেমনটা না!! অহনা এক ঝটকায় নিজের হাত ছড়িয়ে আহানের কর্লার ধরে বলে

“” তেমনা না তো কি আহান? তোমাকে কত মেয়ের সাথে দেখেছি সব তোমার কাজেন নয়তো ভালে ফ্রেন্ড সব মেনে নিয়েছি কিন্তু আজ!! এখন আর সম্ভব না। তুৃমি আমাকে কি মনে কর? তোমার জন্য কত ছেলেকে রিজেক্ট করেছি। আর তুমি?

আহান বলে

” আমাকে একটু সময় দাও একটু কথা তো নলতে দাও। আর তোমার ব্যবহারে মনে হয়না তুমি আমাকে ভালোবাসো। সবসময় সন্দেহ এইটা ঐটা

অহনা কাঁদতে কাঁদতে বলে

জানোতো আহান একটা সময় পরে কারো প্রতি তীব্র মায়া কাজ করলেও তাকে বলা হয় না-
“তোমাকে আমার প্রয়োজন”

কাউকে প্রচণ্ড ভালো লাগলেও তাকে জানানো হয় না-
“তুমি মানুষটা আমার খুব পছন্দের”

কাউকে খুব করে চাইলেও তাকে একবারের জন্যও মুখ ফুটে বলা হয় না-
“আমার সাথে আজীবন থেকে যাও না,প্লিজ.”

মনের অবস্থা শত খারাপ হলেও কাউকে বলা হয়না-
“আমার মনটা আজ খুব খারাপ” কিন্তু তোমাকে আমি বলি।

নিজের পক্ষে করা কঠিন কাজগুলোর দায়ভারে পিষ্ট হলেও জানানো হয়না-
“আমি আর সহ্য করতে পারছি না”

কষ্টের তীব্রতায় বুকফেটে কান্না আসলেও কাউকে বলা যায় না-
“আমার ভেতরটা না,ভেঙে-চুরে যাচ্ছে”

কারো জন্য বুকের ভেতর অনেক খানি ভালোবাসা লুকিয়ে রাখলেও তার সামনে আর প্রকাশ করা হয় না।আবার, কোন কারণে প্রচণ্ড কষ্ট হলেও ঠোঁটের কোণে মেকি হাসি দিয়ে সব কষ্টকে বুকের ভেতর
চেপে দেওয়া হয়।

আমরা হয়তো অনুভুতিকে প্রকাশ করা বন্ধ করে দেই।অথচ আমরা কিনা মনের ভেতরে প্রতিটা অনুভুতিই অনুভব করি।
আর সেসব অনুভুতিকে অপ্রকাশিত করে রাখার পেছনে থাকে অনেক তিক্ত কারণ। যেসব কারণে আমরা স্পষ্টভাবে জেনে যাই যে-

“সামনে মানুষটা বোঝার ভান করলেও, আসলে সে কিছুই বোঝে না। দিনশেষে নিজের বলে জানা, নিজের কথা বলা, নিজেকে বোঝার মতন বিশ্বস্ত মানুষটার বড্ড অভাব।”

তোমকে আমি ভালেবাসি তা আমর প্রত্যেকটা ব্যবহার বলে দেয়। তোমাকে অন্যের সাথে দেখতে পারিনা কারণ আমি চাই না তোমার পাশে অন্য কেউ আশুক। আজ থেকে তুমি মুক্ত। ভালো থেক। বলেই সোজা লাইব্রেরির দিকে চলে যায়।

সে মেয়েটা কাঁধে হাত রাখলে আহান মেয়েটার হাত সরিয়ে ফেলে। একটা ঝাড়ি দিয়ে বলে

” ইউ ইস্টুপিট ডাফার, গেট আউট। আরেক বার আমার আশেপাশে দেখলে জানে মেরে ফেলব

_____________

আফরিন আর অন্যা বসে বসে গল্প করছে আর নোট করছে। হঠাৎ করেই অহনাকে এভাবে কাঁদতে দেখে বলে

” কি হয়েছে? অহনা কেঁদেই যাচ্ছে। একসময় সব কিছু বললে আফরিন খেপে যায় আর বলে

” তুই আর ঐ আহানের আশেপাশেও যাবি না।

অন্যা বলে

” সব গুলি ছেলে একরকম এর জন্যই বলি ছেলেদের সাথে সিরিয়াস রিলেশনে যাবি না। আমার মতো থাকবি। Aow To welcome jaow to vir kam

আফরিন বলে

” তোর এখন যে বয়ফ্রেন্ড আছে এটা কত নাম্বার?! অন্যা বাঁকা হাসি দিয়ে দুই ভ্রু নাচিয়ে বলে

“২০ নাম্বার, এটা একটা ট্যালেন্ট যাহা সবাই পরে না। আর আফরিন অন্যা হেসে দেয়।

তখনই লাইব্রেরিতে আসে আদিত্য, কৌশাল আর আহান। আহানকে দেখে অহনা রেগে যায়। আহান অহনার সামনে এসে বসে কানে ধরে বলে

” আই এম সরি। আফরিন কিছু বলতে যাবে তার আগে আদিত্য বলে

” এখন ওদের বিরক্ত না করাই ভালো। আফরিন আর অন্যা কিছু না বলে বাইরে চলে আসে। কৌশাল অন্যা কে খেপানোর জন্য বলে

” অন্যা পানিবিহীন বন্যা। অন্যা বলে

” কৌশালের বাচ্চা আপনাকে আমি। কৌশাল বলে

” কি বিয়ে করবা? অন্যা বলে

” কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলব। কৌশাল বলে

” ওমা সব শেষে এই রাক্ষসী জুট লো। আমি অন্যাকে বলি।

” একটু চুপ করবি।

_____________________

আহান অহনার হাত ধরলে অহনা হাত ছাড়িয়ে নেয়। আহান অহনার হাত আবার ধরে চুমু খেয়ে বলে

” আমার জানটা রাগ করেছে? আমি তখন সেখান দিয়ে যাচ্ছিলাম তখনই ঐ মেয়েটা এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরে সাইডে নিয়ে আসে। আর তখন তুমি আসো। আর এতোদিন ভাবতাম তুমি হয়তো আমাকে ভালেবাসো না সব তোমার মোহ পাগলামি। কিন্তু না আজকে আমি বুঝে গিয়েছি আমার জানটা আমাকে কত ভালোবাসে।

অহনা আর চোখে তাকিয়ে বলে

” সত্যি তো? আহান বলে

” তিন সত্যি.। অহনা রেগে দাড়িয়ে বলে

” দাড়াও দেখাচ্ছি মজা এই মেয়েকে আমার বিএফের দিকে নজর। হারামি তোর চোখ তুলে আমি নুডলস করে খাওয়াবো৷

অহনা যেতে চাইলে আহান অহনার হাত ধরে কোপালে চুমু দিয়ে বলে

” লাগবে না, আমার তুমি হলেই চলবে।

অহনাও আহানকে হাগ করে। আহান ভাবছে মেয়েটার মাঝে কি রাগ নামের কোন সফটওয়্যার নেই? একটু বুঝালেই কি সুন্দর বুঝে যায়। সত্যি লাকি সে

চলবে।