তুই তারারে ভিনদেশী ২ পর্ব-০২

0
710

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী(সিজন-২)

লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)

part:02


শাড়ি পরতে পারো না তো পরতে যাও কেন? শরীরের অর্ধেক দেখাই যাচ্ছে…. এইসব আমাদের বাসায় চলে না মাইন্ড ইট। যাও গিয়ে অন্য কিছু পরে নিচে যাও। ছেলেরা কিভাবে তাকিয়ে ছিল ধারণা আছে।

আফরিন রেগে বলে

” আমাকে নিয়ে আপনার এতো কি? আমি শাড়িই পরব আর ছেলেরা তাকিয়ে ছিল থাকতেই পারে সেটা তাদের ব্যপার আমি বলিনি তাকিয়ে থাকতে। আর এই সব অসভ্যতামির মানে কি?

আদিত্য আফরিনকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে

” এটা তোমার বাসা না এটা আমার বাসা, আর আমাদের পরিবারে এইসব এলাও করেনা।

আফরিন বলে

” আপু আমাকে শাড়ি পরতে বলেছিল কারণ সবাই শাড়ি পরবে, এতে আমার কোনো দোষ নেই। আর আসল কথা হচ্ছে আপনার ম্যান্টালিটি কতটা চিপ তার পরিচয় দিলেন।

আদিত্য রেগে আফরিনকে একটা চড় বসিয়ে দেয় আর বলে।

” ম্যান্টালেটি তো তোমার চিপ নয়তো কেউ বলার পর ভুল ঠিক না করে আবার মুখে মুখে তর্ক করছ। রাস্তার মেয়ের ম্যান্টালিটি তো তেমনই থাকবে। যত যাইহোক লবণ কখনো চিনি হয় না । তোমাকে যদি নিচে যেতে দেখেছি আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

আফরিন সেখানেই বসে পরে কাঁদতে কাঁদতে। বিকেলের দিকে ফারিন ওরা বাসায় আসার সময় আফরিনকে নিয়ে আসে। কারণ আজ আদিত্যর মা-বাবার বিবাহ বার্ষিকি ছিল। আফরিনের মাকে আসতে বললে সে বলে আফরিনকে নিয়ে যেতে, একা বাসা তারপর শরীরটাও ভালে ছিল না।

_________

পার্টির জন্য আফরিন একটা গাউন চয়েস করলেও ফারিন বলে শাড়ি পরতে কারণ বাসার সবাই শাড়ি পরবে। আফরিনও পরে কিন্তু চুলে খোঁপা করার ফলে বেক সাইড অনেকটাই দেখা যাচ্ছিল । আর পরে তো জানোই।

আফরিন গেস্ট রুমে এসে দরজা লাগিয়ে বিছানয় বালিশে মুখ গুজে কান্না করতে লাগে। সব কথা মেনে নিতে পারলেও রাস্তার মেয়ে কথাটা আফরিন মানতে পারেনি। আফরিন ফারিনের আপন বোন না হলেও কখনোই তাকে সেটা বুঝতে দেওয়া হয়নি বা কেউ বলেনি। কিন্তু আজকে আদিত্যর প্রতিটা কথা হৃদয়ে কাটার মতো বিঁধে গিয়েছে।

আফরিনের যখন ৪ মাস হবে তখন আফরিনকে বাসায় নিয়ে আসে ফারিনের বাবা। তখন ফারিনের ৫বছর বছর। আফরিনকে পেয়ে ফারিনও অনেক খুশি সাথে ফারিনের মা বাবও। অফিস থেকে আসার সময় আফরিনকে রাস্তার পাশে কান্না করতে দেখে। আফরিনের মুখে এতটাই মায়া ছিল সেখানে তাকে ফেলে রাখে আসা সম্ভব ছিল না।

অন্য দিকে সবাই পার্টিতে উপস্থিত থাকলেও আফরিনকে দেখতে না পেরে ফারিন উপরের দিকে যাবে তখনই আদিত্যকে দেখে ফারিন বলে

” আদিত্য আফরিনকে দেখছ? আদিত্য বলে

“” হুমম মাথা ব্যাথা করছে তাই ও রেস্ট নিচ্ছে আর ডিসটার্ব করতে বারণ করেছে তুমি নিচে যাওতো।

ফারিনও কোনো কথা বারায় না। কিন্তু আদিত্যের এখন খারাপ লাগছে বেশি না অনেক বেশি করে ফেলেছে৷ কেন যে আফরিনকে অন্যর সাথে বা তার আশেপাশে কাউকে দেখলে তার মাথা গরম হয়ে যায়।

রাত ২টা সেই কখন পার্টি শেষ হয়ে গিয়েছে ।
খুব ইচ্ছে করছে আফরিনকে গিয়ে একবার সরি বলতে, কিন্তু ইগো হ্যা ইগোর জন্যই সেটা বাঁধা হয়ে আছে আর এতো রাত সব মিলিয়ে ভাবে সকালে সরি বলে দিবে আফরিনকে।

__________

সকালে সবাই একসাথে নাশতা করছে তখনই আফরিন নিচে নামে। কাঁধে কলেজ ব্যাগ হাতে ফোন চোখ মুখ ফুলে গেছে। আদিত্য আফরিনকে দেখে এখন নিজেকে মারতে ইচ্ছে করছে। একটু ভালোভাবে বললেই হয়তো শুনতো। এতটা রুড হয়ে বলাটা উচিত হয়নি। ফারিন বলে

” কিরে তুই এখনই ব্যাগ নিয়ে নামছিস? আর শুনলাম কালকে নাকি তোর মাথা ব্যাথা ছিল এখন কি অবস্থা ?

আদিত্যর মা বলে
জানিস কেক কাটার সময় তুই ছিলিনা তোকে তোর আঙ্কেল কত খুঁজেছে।

“ফারিনের হাসবেন্ড বলে

আমাদের একটু বললেই পারতে। আফরিন বলে

” তোমরা এনজয় করেছ এটাই অনেক এখন আমার যেতে হবে।

আদিত্যর বাবা বলে

“সবে সকাল হয়েছে, এখনই? কিছু মুখেতো দিবে ছোট মামুনি। আদিত্যর সাথে না হয় একসাথে ভার্সিটি গেলে।

আফরিন বলে

” না আঙ্কেল আজ একটা ইমপোর্টেন্ট ক্লাস আছে। এখন যেতে হবে। আপি নিজের খেয়াল রাখিস। আমি আসি।

আর কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে সোজা চলে যায় ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। আদিত্য বেশ বুঝতে পারছে আফরিন তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে আদিত্য খাবার ছেড়ে উঠে যায়। সবাই অবাক হলেও কেউ কিছু বলেনা৷ কারণ আদিত্য সচরাচর এমন করে না।

_____________

ভার্সিটি পৌঁছে অন্যা কে কল দিতেই ২০ মিনিটের মাঝে অন্যা চলে আসে কারণ ওর বাসা এখান থেকে বেস কাছে। ক্যান্টিন থেকে হালকা করে কিছু খেয়ে লাইব্রেরীতে বসে নোট করতে লাগে আফরিন আর অন্যা ফোন টিপছে। হঠাৎ করেই অন্যা বলে

” হারামি তোকে আমি, বলেই উঠে দাড়ায় আর লাইব্রেরি থেকে যেতে চাইলে আফরিন বলে

” কোথায় যাচ্ছিস? অন্যা দাঁত চেপে চেপে বলে

” ঐ কৌশালকে টাইট দিতে আসছি এখানেই থাকিস। আফরিন মুচকি হাসে।কারণ আফরিন জানে কৌশাল অন্যাকে লাইক করে।

কৌশাল অন্যার একটা পিক নিয়ে সেটাকে এডিট করে মোটু পাতলুর গাসিটা রামের চেহারার জায়গায় লাগিয়ে দিয়েছে, আর কেপশন লেখা। ওরি বাবা।

কথা শেষ করে কৌশালের কাছে যায় । আমি মন দিয়ে নোট তৈরি করছি ।কিছুসময় পর কেউ আমার সামনে এসে বসে । আমি মাথা নিচু করে আড়চোখে তাকিয়ে দেখি অদিত্য । খুব রেগে আছে । রাগে নাক ফুলছে।বার বার হাত কচলাচ্ছে । আমি দেখেও না দেখার ভান করে বসে রইলাম । উনি গম্ভীর গলায় বললেন,

– “লাইব্রেরি তে ইম্পরট্যান্ট ক্লাস হচ্ছে ? টিচার কই ? দেখছি না তো । ”

আমি জানি উনি রাগে আর ক্ষোভে এসব বলছে । আমি চুপ করে আছি । উনি আবার বললেন ,

– “আমার সাথে ভার্সিটি তে আসলে আমি নিশ্চিত তোমাকে খেয়ে ফেলতাম না !
এসবের কারণ কি ? ”

আমি এবারো চুপ । উনি টেবিলে জোড়ে বারি মেরে বললেন ,

– “কথা কানে যাচ্ছেনা ? আমি জানতে চাইছি এসবের কারণ কি ? ”

আমি খাতার দিকে চোখ রেখে শান্ত স্বরে বললাম ,

– “সকাল সকাল আপনার মুখ দেখার আমার কোনো ইচ্ছে নেই । আর তাছাড়া একটা রাস্তার মেয়ের কিছু করাতে আদিত্য রহমানের গায়ে লাগে আজব না । আর আমি সবকিছুতে আপনাকে কৈফিয়ত দিতেও বাধ্য নই । ”

উনি বেশ কিছুক্ষণ শান্ত থেকে হুট করে আমার সামনের সব বই খাতা টেবিল থেকে ফেলে দেয় । আমার খুব রাগ উঠে। কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রাখলাম । বই খাতা গুলো তুলে গুছিয়ে খুব স্বাভাবিক স্বরে বললাম,

– “আপনার মত অসভ্য লোক থেকে এরচেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না । ”

কথাটা শেষ করে এক সেকেন্ড ও সেখানে দাড়াই না । দ্রুত পায়ে চলে আসি । উনার সাথে ঝামেলা করার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নেই । আদিত্য পিছন থেকে ডাকলেও আমার কোনো ইচ্ছে নেই তার সাথে কথা বলার।

সামনে এগুতেই দেখি অহনা আর অন্যা আসছে।

আমাকে দেখে অহনা হাসতে হাসতে এসে জড়িয়ে ধরে বলে

” জানিস কি হয়েছে? আমি বললাম কি

অহনা বলে

কৌশাল ভাইয়াকে অন্যা বলে

____________

“আপনার সাহসতো কমনা আমার পিক এখনই ডিলিট করুন বলছি।

কৌশাল বলে

” এনিমেশন কে এনিমেশন বানিয়েছি সমস্যা কি তাতে? অন্যা বলে

” পিক ডিলেট করেন নয়তো আপনাকে হিরো আলম বানিয়ে এই ভার্সিটির ছাঁদ থেকে আছাড় দিয়ে মেরে ফেলব। কৌশাল ভাইয়া বলে

” মশা নাকি হাতিকে আছাড় দিবে। আমাদের অন্যা কি কম সে বলে

” আলহামদুলিল্লাহ হাতি নিজে শিকার করেছে সে হাতি। পিক যেন ডিলিট হয়ে যায়। সাথে আহানও ছিল সেও মজা করেছে।

আমি ওদের কথা শুনে হালকা হাসি ..

চলবে

ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে