গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী❣️💫
লেখিকাঃ- konika islam (sanju)
পর্বঃ13
রাত বারোটা বেজে বইটা রেখে আফরিন মাত্রই ঘুমাতে যাবে আর তখনই তার ফোনটা বেজে উঠে। দেখে আদিত্য কল দিয়েছে। কারণ প্রাইভেট নাম্বার। কিন্তু আফরিন ফোনটা না তুলে নিজের বিছানা ঠিক করতে লাগলো। তখনই একটা মেজেস আসে। আফরিন কৌতুহল বসতো ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আদিত্য মেসেজ দিয়েছে। মেসেজে লেখা
—– ফোন ধরে বেলকনিতে আসো নয়তো আমি বাসায় চলে আসবো। আফরিন ফোন হাতে দৌড়ে বেলকনিতে যায় দেখে আদিত্য বাইকে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে এক হাতে রেড বুল অন্য হাতে ফোন। ইশারায় আদিত্য বলে আফরিনকে ফোন ধরতে। আফরিন এতটুকু সময় বুঝতে পেরেছে আদিত্যকে যদি এখন ক্ষেপায় তো তার খবর আছে। আর সেটার শিরোনাম হবে এমন রাত ১২ টায় আফরিন ভার্সিটি পুরায়া মেয়েকে বাসা থেকে তুলে নিয় গেলো তার ভার্সিটিতে পড়া এক সিনিয়র। প্রথম রিং হওয়ার সাথে সাথে আফরিন ফোন রিসিভ করে। আদিত্য বলে
—- প্রথম বার ফোন ধরলে না কেন? আফরিন বলে
—- সরি আমি ভেবেছিলাম রং নাম্বার হয়তো। আদিত্য কিছু সময় চুপ থেকে বলে
—- প্রথম বার তাই কিছু বললাম না। নেক্সট টাইম এমন কিছু করলে। আফরিন সাথে সাথে বলে
—- খবর আছে তাই তো? আদিত্য মুচকি হাসি দিয়ে বলে
—- হুমমমম। রাতে খেয়েছ,? আফরিন বলে
—- না,,, আমি রাতে খাই না। আদিত্য রেগে বলে
—- না খেতে খেতে কেমন হয়েছে দেখতে একদম এলিয়েন এর মতো। আফরিন রেগে গিয়ে বলে
—- এত দরদ কেন? ১ মাস কই ছিল এই দরদ। দেখেন আজকে আপনি যা করছেন মোটেও ভালো করেননি। আমার সব ফ্রেন্ড কে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছেন। আদিত্য শান্ত কন্ঠে বলে
—- সব ফ্রেন্ডকে না ছেলে ফ্রেন্ডদের। জানি বলবে বিশ্বাস নেই। সেটা না নতুন করে কেয়ার করতে শিখছি তো তাই। আর কোনো দরকার হলে আমি তো আছি। তোমার উপর বিশ্বাস আমার সেই প্রথম থেকেই কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে আর পারি না। ভয় হয় খুব,,,,, যদি হারিয়ে যাও। আফরিন বলে
—- তাহলে কি হবে!! আপনার এমবি টাকা বেশি যাবে। ইউটিউব নেটফিলিক্সে টাকা খরচ করে নাটক দেখতে হবে। আদিত্য কিছু সময় চুপ থেকে বলে
—- আচ্ছা ঘুমাতে যাও। আর কালকে সাদা কালারের ড্রেস পরে আসবে। আফরিন বলে
,—- পারবো না। আদিত্য ডেভিল হাসি দিয়ে বলে
—- সেটা তুমি ভালো জানো কি করবে। আচ্ছা গুড নাইট ভালো থেকে। কালকে সকালে দেখা হচ্ছে। আচ্ছা একটা ফ্লাইং কিস দাও তো। আফরিন বলে
—- অসভ্য একটা। এই বলে আফরিন রুমে চলে যায়। আদিত্য খুশি মনে বাইক নিয়ে বেরিয়ে যায়।
——-
রাত ১ টা ৩০ মিনিটে আদিত্য বাসায় আসে। ড্রয়িং রুমে অন্ধকার লাইট জ্বালানোর সাথে সাথে আদি দেখতে পায় তার মা খাবার টেবিলে চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে পরেছে। এটা যেন এক আরেক রকম ভালোবাসা। আদিত্যর বোনটাও তখন বোতল হাতে নিচে নামে আর আদিত্য কে দেখে বলে
—- তুই একটা বিয়ে করলেই তো পারিস। আমার বুড়ো মাটাকে কষ্ট দেওয়ার কি আছে। আদিত্যর আম্মুর ঘুম ভেঙে যায় সে দেখে আদি দাড়িয়ে আছে। সামনে তার মেয়ে আয়শা। আদিত্য হাসি দিয়ে বলে
—- তোকে আগে বিদায় করবো তারপর। আম্মু তুমি ঘুমাও গিয়ে। আমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিব। আদিত্যর মা বলে
—- তুই তো এখন সেহেরী খাবি। আমি বসছি ১০ মিনিট সময়। খুদা লাগছে জলদি। আদিত্য বলে
— যাচ্ছি,, আর তুমি একটু অপেক্ষা করো। আয়শা বলে
—- সব আদর তোমার ছেলের জন্য আমাকে তো চৌ রাস্তার মোড় থেকে কুড়িয়ে নিয়ে আসছো। আদিত্য বলে
—- আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তোকে হেদায়েত দান করছে। সত্যিটা বুঝার তৌফিক দিয়েছে। আম্মু দাঁড়াও আসছি। বলেই আদিত্য চলে যায়। আয়শা বলে
—- তোমার ছেলটা সবসময় এমন করে ধূর। বলেই চলে যায়
______________
লুকিয়ে লুকিয়ে ভার্সিটিতে ঢুকছে আফরিন,,, যে করেই হোক আদিত্যর সামনে আসা যাবে না। যাই হোক এখন কোনো মতে ক্লাস অব্দি পৌছুতে পারলেই হলো। আফরিন যেই না ক্লাসে ঢুকতে যাবে তখনই অহনা বলে।
—– আফরিন তুই আজ এভাবে কেন? আফরিন রেগে গিয়ে ধুম করে একটা মারে অহনার পিঠে, অন্যা বলে
—- আমি চুপ আমি কিছু বলি নাই। অহনা বলে
—- বিশ্বাস কর এই আমি কিছু জানতাম না,,, অন্যাই বলছে যে ঐদেখ আফরিন। আফরিন রেগে অন্যার দিকে তেড়ে গেলে অন্যা বলে
—- আদিত্য ভাইয়া। আফরিন ভয়ে জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে
—- আম্মুগো আমি শেষ। বলেই পিছনে তাকায় দেখে আদিত্য নেই। সামনে তাকাতেই দেখে অহনা আর অন্যা ভাগছে। নিচে নামছে। আফরিনও বলে
—- দাড়া না তোদের পাই। সেও নিচে নামতে লাগে। অহনা আর অন্যা সোজা মাঠ পেরিয়ে কেন্টিনে চলে যায়। আফরিন অন্যা আর অহনার সাথে গিয়ে বসে পরে অবশ্য আগে মেরেছে দুইজন কে। আফরিন পানি খেতে খেতে বলে
—– ঐ ছেমরি,,, তোরা কি মনে করিস আমি ঐ এনাকন্ডার তালগাছটাকে ভয় পাই? অহনা বলে
—- আফরিন চুপ। আফরিন বলে
—– কি চুপ হ্যা? দুইটা ধমক দিলে এনাকন্ডা থেকে ব্যাঙে রুপান্তরিত হবে। তাকে কে ভয় পায়। আমি এই আফরিন!! কখনোই না আমি কাউকে ভয় পাই না আর ঐ আদিত্য কে তো নাই। এখন আসছে দরদ দেখাতে এত দিন কই ছিল। আর তোরা!!! যখন আমি ভুল করছি কেমন হয়ে-গিয়েছিলি আর এখন এই এনকন্ডার পক্ষে। ছিঃ ছিঃ তোদের বন্ধু বলতে আমার লজ্জা করছে। অন্যা বলে
—- তোর লজ্জা শরমের মায়রে বাপ,, পিছে তাকা। আফরিন বলে
—- পিছে আবার কোন ভূতততত,,,,, আম্মু বাঁচাও । আফরিন পিছনে তাকাতেই দেখে আদিত্য দাড়িয়ে আছে সাথে তার দুই বন্ধু। মানে তিনটা সুপার গ্লু সবসময় এক সাথে। আদিত্য আহান আর কৌশাল আড্ডা দিচ্ছিল ভার্সিটির করিডোররে তখনই আদিত্যর নজর যায় মাঠে। সাদা ড্রেস পরা এক পরীর দিকে। আফরিনকে দেখে আদিত্য যেমন খুশি হয় ঠিক এখন রাগও লাগছে আবার হাসিও আসছে। আফরিন আদিত্যকে দেখে দাড়িয়ে যায়। অন্যা বলে
—- কৌশাল চলো আমরা যাই,,,, । অহনা বলে
—- আরে না আমরা দেখবো না আফরিন আদিত্য ভাইয়াকে কিভাবে এনাকন্ডা থেকে ব্যাঙ বানায়।
একটা প্রবাদ আছে যখন হাতি কাদায় পরে পিঁপড়াও লাথি মারে। আফরিন অহনার দিকে রাগি চোখে তাকায় কিন্তু অহনার এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই সে একটা হাসি দেয়। আদিত্য বলে
—- তা মিসেস,, আদিত্য মাহমুদ আপনি কি যেন বলছিলেন। আফরিন বলে
— আমি কখন আপনাকে বিয়ে করলাম। আদিত্য হাই তুলতে তুলতে বললো
—- করতে কতক্ষণ। আফরিন বলে
—– নাক্কো,নেভার,, কাভি নেহি। নিজের ভালে পাগলেও বুঝে। আমার মনে এত সুখ নাই যে আপনাকে বিয়ে করে দিনরাত খাবারের জায়গায় বকা খেতে হবে। এই খাদ্য আমি কোনো দিন খেতে পারবো না। আদিত্য চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলে
—- তুমি আমার জন্য কি সেটা তুমি নিজেও জানো না। আফরিন বলে
—– হ্যা জানি তো। রাগ দেখানোর জায়গা। আহান বলে
—– সবাই চুপ শুনো। কালকে চলো ঘুরতে যাই কোথাও বাইকে করে। অহনা বলে
—- কোথায় যাবে?? আদিত্য বলে
— গ্রামের দিকে?…..
চলবে।