তুই তারারে ভিনদেশী পর্ব-১৭

0
736

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী❣️💫

লেখিকাঃ- konika islam (sanju)

পর্বঃ17

সকাল সকাল আফরিনরা বেড়িয়ে পরে আজ আর ভার্সিটি যাবে না। ঢাকা গিয়ে সোজা যে যার বাসায়। কিন্তু আদিত্যর যেন বিরক্তির শেষ নেই। কারণ আজ বৃহস্পতিবার আর কাল শুক্রবার।শুক্রবার মানেই ভার্সিটি ওফ। তার মনে হচ্ছে কেলেন্ডার থেকে এই শুক্রবার নামক দিনটা হাওয়া করে দিলে ভালো হতো। কিছু একটা তো করতে হবে। রাস্তায় একটা রেস্টুরেন্টে তারা সবাই নাশতা করে নেয়। আফরিন বাসায় ফিরতে ফিরতে দুপুর,, গিয়ে দেখে তার মা রান্না ঘরে। আর সে গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে

—- আম্মু,,,,, কি রান্না করবে আজকে? আফরিনের মা মেয়েকে পেয়ে হাসি দিয়ে বলে

—- তোর পছন্দের খাবার,,, কাচ্চি। আচ্ছা শুন কাল হঠাৎ করে যে ঘুরার প্লানিং করলি? আফরিন বলে

—- আগেই ছিল আমি বলতে ভুলে গিয়েছিলাম সরি আম্মু। আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি কেমন? আফরিনের আম্মু সম্মতি জানালে আফরিন নিজের রুমে চলে আসে।

____________

বিকেলে অফিস থেকে শাওয়ান, তার বাবা আর অনু স্কুল থেকে ফিরে সবাই একসাথে জমিয়ে আড্ডা দেয়। আফরিন ভুলেই গিয়েছিল আদিত্যর কথা। নিজের ফ্যামেলির সাথে সময় কাটাতে গেলে কখন যে সময় চলে যায় সেট বলা মুশকিল। সন্ধ্যার দিকে আফরিন নিজের রুমে যায়। পরক্ষণেই তার মনে পরে ফোন করেতো কাউকে জানানো হয়নি ,,, সে বাসায় পৌঁছে গিয়েছে। তাই ফোনটা বের করে ব্যাগ থেকে দেখে ২০০+ মিসকল,,,,, আফরিন বলে আল্লাহগো বাঁচাও। আবার সাথে সাথে ফোনটা বেজে উঠে আফরিন ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে

—– এই মেয়ে মন কোথায় থাকে? কমনসেন্স বলতে কিছু নেই,, ম্যানারলেস। দিব কানের নিচে একটা। কতবার কল দিয়েছি হিসাব আছে? একবার ফোন ধরলে কি হয়? মাহাভারত অসুদ্ধ হয়ে যাবে?? নাকি সোনামী,ইয়াশ,নারগীস,পারভিন,আয়লা সব একসাথে আসবে। ডেমিট কথা বলো না কেন বোবা হয়ে গিয়েছ!! আফরিন ভয়ে শেষ একটা ঢুক গিলে বলে

—- আসলে ইয়ে মানে!! আদিত্য ধমক দিয়ে বলে

—- আমি আসল নকল জানতে চাইনি!! ফোন কেন ধরনি এইটা বল। আফরিন ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বলে

—- আসলে ফ্যামেলির সাথে সবাই একসাথে বসে গল্প করছিলাম তো তাই আর খেয়াল ছিল না। আসলে আপন জনদের সাথে থাকলে যা হয় আরকি। আদিত্য বলে

—- হ্যা সেটাই আমি তো আর তোমার কেউ না,,, আমার কথা কেন ভাববে.। আফরিন একটু অভিমানী শুরে বলে

—- বারে,,, যত দোষ এই নন্দ ঘোষের। আর আমি কি বলেছি নাকি আপনি আমার কিছু লাগেন না। আদিত্যর মুখে নিমেষেই এক চিলতি হাসি ফুটে উঠে আর বলে

—- আচ্ছা তাই বুঝি। আমি তোমার কি হই তাহলে? আফরিন দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে

—- আদিত্য ভইয়য়য়য়য়য়া,,,, নামক দত্য। আদিত্য রেগে বলে

— ইউ আর ইম্পসিবল। আফরিন একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে

— কালকে দেখা করতে পারবেন। আদিত্য বলে

— কোথায়? আফরিন বলে

—- ধানমন্ডির লেকে,,, এখন বায় কালকে দেখা হবে,, আর হে পান্ঞ্জাবি পরে আসবেন আর সবাইকে বলে দিয়েন৷ টাটা বায় বায় লাভ ইউ উমম। বলেই আফরিন থেমে যায়। আর সাথে সাথে ফোন কেটে দেয়।। ওপাশ আদিত্য কিছু সময় চুপ থেকে হাসি দিয়ে বলে

—- লাভ ইউ টু,, ইস্টুপিট। তখনই কৌশাল পিছন থেকে বলে

— কি হয়েছে আদিত্য,, কথা হলো নাকি? আদিত্য বলে

—- কালকে মেডাম সবাইকে নিয়ে ধানমন্ডি লেকে যেতে বলছে আর পান্ঞ্জাবি পরে যেতে বলছে। আহান বলে

—- তো কি করবি??আদিত্য বিরক্ত হয়ে বলে

—- কি করব মানে অবশ্যই যাবো। আহান চিন্তিত হয়ে বলে

—- আলফাজ কিন্তু হসপিটালে আর নেই বাসায় ফিরছে,,, আর ধানমন্ডি এরিয়াটা আলফাজের। আদিত্য বলে

—- সেটা ব্যাপার না। আমরা একাই পারবো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে,,, আফরিনদের নিয়ে। আহান বলে

—- শুন আমারাও আমাদের গ্রুপের সবাইকে নিয়ে যাবো। যার যার মতো মানে ছদ্মবেশে থাকবে । আদিত্য কিছু বলে না। কিন্তু এটা সে ভালো করেই জানে আলফাজ দমে যাওয়ার পাত্র মটেও না।

__________

পরনে গাঢ় কালো রঙের শাড়ি। হাত ভরতি চুড়ি। চোখে গাঢ় কাজল আর লাল রঙে রাঙানো ঠোঁট। হালকা স্মোকিং আই, মুখে মেকাপ। চুলগুলো খুলা। বাহ বেশ ভালোই লাগছে আফরিনকে মন্দ লাগছে না। অহনা আর অন্যা কম কিসে তারাও সেম। তিনজনই এক সাথে বের হয় বাসা থেকে। সুন্দর একটা পরিবেশ বিরাজমান করছে। আজ হয়তো শুরু হবে নতুন করে নতুন অধ্যায়ের শুরু। হয়তো সব রাগ অভিমান দূরে সরিয়ে এক হয়ে যাবে এক জোড়া মন। এইসব ভাবছে আর হাটছে। আফরিনের মনে হচ্ছে কেউ তাদের ফলো করছে। অহনাকে উদ্দেশ্য করে আফরিন বলে

—- অহনা মনে হচ্ছে না কে যেন পিছু নিয়েছে। অহনা বলে

—- শাড়ি পরেছিস হয়তো তাই। সামনে আগাতেই দেখে আদিত্য, কৌশাল আর আহান বাইকে হেলেন দিয়ে বসে আছে। আদিত্যরাও কালো পান্ঞ্জাবি পরেছে সাদা পাজামা। কৌশাল অহনাকে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় কালো শাড়ি পরে বের হতে দেখেছে আর তাই সেও সবাইকে বলেছে কালো পরতে। বেশ সুন্দর লাগছে। আফরিনকে দেখে আদিত্য বাইকের উপরে রাখা ফুলগুলো নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে আফরিনের দিকে। অহনা আর অন্যা চলে যায় সাইডে কৌশাল আর আহানের এইদিকেই আসতে লাগে। আদিত্য আফরিনের সামনে ফুল গুলো নিয়ে হাটু গেড়ে বসে পরে। আর বলে

—– মানুষ বলে, প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেছি। আমি কথাটি নিছকই উপমা ভাবতাম, আজ মানি কথাটি সত্য হয়ে যায় যখন প্রথম দেখার সেই মেয়েটি তোমার মতো কোনো পরী হয়। প্রথম দেখাতেই তুমি আমার পৃথিবীকে উল্টাপাল্টা করে দিয়েছো। নাটোরের বনলতা সেন কেও হার মানায় তোমার সৌন্দর্য, স্বর্গের কোনো হুর যেনো মর্তে নেমে এসেছে। প্রথম দেখাতেই তোমার প্রেমে পড়েছি, তুমি এখন আমার কল্পনা বাস্তব সবটা জুড়ে আছো। তোমাকে সামনাসামনি বলতে পারিনি, তাই এখন বলছি ভালোবাসি তোমায়।বিধাতা নাকি জোড়ায় জোড়ায় নারী পুরুষ সৃষ্টি করেছে, তোমাকে দেখে আমার মনে হয় তুমি শুধু আমার জন্যই বিধাতার হাতে সৃষ্টি হয়েছো। তোমার সৌন্দর্য, সুমধুর কন্ঠ আমায় পাগল করেছে। তোমার হাতটি ধরে সারাজীবন চলার অনুমতি পেতে পারি?তোমার ওই মায়াবী মুখখানি আমার সর্বনাশ করেছে, ঠিকমতো ঘুমাতে দেয় না। কোনো কিছুতেই আর মন বসে না, শুধু বারবার তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করে। আমি তোমার প্রেমে পাগল হয়ে গেছি, ভালোবাসি তোমায়। তুমি কি আমায় ভালোবাসায় ভরিয়ে দিবে?আমি এখন আগের মত ঠিক গুছিয়ে কথা বলতে পারি না, তুমি আমাকে অগোছালো করে দিয়েছো। মন যেন এখন আর আমার কাছে থাকে না, তুমি চুরি করে নিয়েছো। তোমাকে দেখলেই হৃদযন্ত্রটি অস্থির হয়ে উঠে। জানি না কত টুকো ভালোবাসি কিন্তু খুব বাসি!! ভুলটাকি ক্ষমা করা যায় না।

আফরিন ফুলগুলো হাতে নিয়ে বলে

—- ভালোবাসার সংজ্ঞা আমার জানা নেই। যদি কাউকে দেখার জন্য বারবার মন আনচান করার নাম ভালোবাসা হয়, তবে আমি আপনাকে ভালোবাসি। যদি শয়নে স্বপনে তাঁকে নিয়েই হৃদয় মাঝে ছবি আঁকানোর নাম ভালোবাসা হয় তবে আমি আপনাকে ভালোবাসি। যদি অনুমতি পাই সারাজীবন ভালবাসতে চাই। আদিত্য যেন নিজের উত্তর পেয়ে গেলো। আদিত্য উঠে দাড়িয়ে আফরিনকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে । আহান কৌশাল সবাই একসাথে হাত তালি দেয়। হঠাৎ করে কেউ আফরিনের মাথায় মোটা রড দিয়ে বাড়ি দিতে………

চলবে

ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে।