তুই তারারে ভিনদেশী পর্ব-১৬

0
731

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী❣️💫

লেখিকাঃ- konika islam (sanju)

পর্বঃ16

আফরিন বলে
—- সবাই চুপ,, কোনো কথা হবে না। সেদিন আফরিনরা তাদের বাসায় ফিরতে পারেনি রাস্তা অনেক ঝড় শুরু হয়। তখন আদিত্য গাড়ি নিয়ে সোজা যায় তাদের বাংলো বাড়িতে। আদিত্যদের এই বাড়িতে তেমন আশা হয় না। যখন ফুল ফ্যামেলি পিকনিক করে তখন আর নয়তো মাঝে মাঝে বন্ধু দের সাথে এখানে আসতো। আর আদিত্য এখানে আসলে এই রোড টায় নিশ্চিত যেতো। তাই আজ ওদের নিয়ে এসেছে। আদিত্যের গাড়ি দেখেই দারোয়ান দুজন দৌড়ে এসে গেট খুলে দেয়। খুব নিষ্ঠার সাথে কাজ করে তারা। বাড়িটার দেখাশুনা থেকে সব করে। আদিত্য তাদের ফোন দিয়ে বলে চাচা আমারা আসছি একটু গেটটা খুলে দিয়ে যেয়। তারাতাদের কাজ করেই নিজ বাসার দিকে রওনা দেয় কারণ তাদের বাসা বেশি দূরে না ৫ মিনিট। সবাই একসাথে ভিতরে ঢুকে যায়। আদিত্য গেরেজে কার পার্ক করে ভিতরে আসে। যার ফলে সে অনেকটা ভিজে গিয়েছে।

—- আদিত্য বলে তোমারা সবাই একসাথে বসে গল্প কর। আর কৌশাল একটু কফি বানা প্লিজ। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। বলেই উপরের দিকে পা বারায়। কৌশাল আর আহান যায় কফি বানাতে। আহনা আর কৌশালও বেশ কয়েকবার এখানে এসেছে আদিত্যর সাথে । অহনা আর অন্যা বলে

—- আফরিন চল বাসাটা ঘুরে দেখি। আফরিন বলে

—- দেখ আম্মু টেনশন করবে আমি তো বলেই আসেনি আর ব্যাগটাও গাড়িতে ফেলে রেখে এসেছি। অহনা বলে

—- প্যারা নিসনা। আমি বলে দিয়েছি। আর কৌশাল ভাইয়া সাথে আছে তাই আর কেউ টেনশন করবে না। আফরিনও কিছু বলেনা সবাই নিজের কাজে ব্যস্ত। আফরিন ওরা বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। বেশ সৌখিন আসবা পত্র দিয়ে সাজানো বাসার প্রতিটা কোনা। আহান, কৌশাল কিছু সময় পরই সবাইকে ডাকে

—- কফি রেডি চলে আসো। সবাই উপস্থিত থাকলেও আদি নেই। তখনই কৌশাল বলে

—- আফরিন যাও আদিত্যকে ডেকে নিয়ে আসো। আফরিন বলে

—- ভাইয়া আমি তো চিনিনা। কোন রুমে সে!! আহান বলে

—-+ উপরে গিয়ে সোজা ডান দিকে যাবে ২য় রুমটাই আদিত্যর। আফরিন উপরের দিকে পা বারায়।।। দরজার সামনে দাড়িয়ে আফরিন ভাবছে যাবে কি না। দরজায় ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথে দরজাটা খুলে যায়। আফরিন রুমে প্রবেশ করে দেখে আদিত্য নেই। হয়তো এখনো শাওয়ার নিয়ে বের হয়নি। কিন্তু আফরিনের চোখ আটকে যায় দেওয়ালে টাঙানো আদির একটা ছবির দিকে। গিটার হাতে আরে সেই ভবন ভুলানো হাসি। আফরিন হাত দিয়ে ছবিটা স্পর্শ করে তখনই তার কানের কাছে কেউ এসে শুকনো কাশি দেয়

—- এমমমম এমমমম। আফরিন ভ্যাবাচেকা খেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে আদিত্য। পরনে আকাশী রঙের শার্ট। শার্টের উপরের ২টা বোতাম খোলা
সাদা জিন্স।সকালে রেড কালারের শার্ট পরেছিল হয়তো এখানে এসে বদলে নিয়েছে,, । চুলগুলো ভিজে একাকার। আদিত্য কে দেখে একটা সেই লেভেলের ক্রাশ খেয়েছে আফরিন (সাথে আমি নিজেও) । আদিত্য আফরিনকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে

—- মিস,, আমি তোমারই এভাবে দেখার কি আছে। আফরিনের হুশ আসতেই,, আদিত্যকে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে

—- নিচে আসুন কফি রেডি,, হয়তো ঠান্ডাও হয়ে গেছে। আফরিন চলে যেতে চাইলে আদিত্য আফরিনের হাত ধরে ফেলে। আফরিনের হার্ট বিট বেরে গিয়েছে। আফরিন ধীরে ধীরে আদিত্যর দিকে তাকায়। আদিত্য নিজের হাতের তোয়ালেটা আফরিনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে। নিজে গিয়ে বিছানায় বসে পরে। আর বলে

—- আমার চুলগুলো মুছে দাও। আফরিন বলে

—- আমি পারবো না, আপনি করেনিন । আদিত্য বলে

— সোজা কোথায় কাজ হবে না। আর সাথে সাথে উঠে আফরিনের হাত ধরে এসে নিজের সামনে দাড় করায় আর নিজে বেডে বসে পরে আর বলে

—- এবার মুছে দাও। এবারও আফরিন না করলে। আদিত্য আফরিনেকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আর কমড়ে হালকা হাত রেখে বলে

—- এবার দিবা নয়তো ছাড়ছি না। আফরিন ভালো করেই জানে এখন সে কাজটা না করা অব্দি আদিত্য আফরিনকে ছাড়বে না। তাই সে কাঁপা কাঁপা হাতে আদিত্যর চুল গুলো মুছতে লাগে। । মুছা শেষ হলে
আফরিন বলে

—– শেষ। আদিত্য উঠে দাড়িয়ে বলে

— বাহ বেশ ভালো চুল মুছতে পারতো । আফরিন তার ভ্রু জোড়া কুচকে বলে

—- এখন নিচে চলেন। আদিত্য আর আফরিন একসাথে নিচে নামছে। তা দেখে অন্যা বলে

—- আর নিচে নামতে হবে না। কফি আমরা খেয়ে নিয়েছি ঠান্ডা করে কি লাভ!! তোরা উপরেই থাক। আফরিন আদিত্যর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে একটু জোড়েই বলে

—- সব আপনার জন্য,,,, হয়েছে বলেছিলাম। আদিত্য একটা ধমক দিয়ে বলে

—- আমার সাথে আরেকবার উঁচু স্বরে কথা বলবা আর চোখ রাঙাবা তো মাথায় তুলে আছাড় মারবো। ম্যানারলেস।

বলেই আদিত্য আফরিনের আগে নিচে নেমে আসে আর সোজা কিচেনের দিকে চলে যায়। আফরিন ব্যাপারটায় অনেক কষ্ট পেয়েছে হাজার হোক নিজের কাছের কেউ একটু জোড়ে কথা বললেই কান্না আসে। অন্যা অহনা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আফরিনকে আনতে যায়। আফরিন নিচে এসে চুপচাপ হয়ে যায় একদম। অন্যদিকে আদিত্য কিচেনে গিয়ে ঠান্ডা পানি খাচ্ছে কিন্তু জিদ কাজ করছে তার মাঝে। আহান আর কৌশাল আদিত্যর কাছে গিয়ে বলে

—- এভাবে রিয়েক্ট করাটা কি খুব জরুরি ছিল? আর তুই জানিসনা আফরিন কেমন? আদিত্য রাগী চোখে তাকিয়ে বলে

—- সব সময় সব জায়গায় এই রাগ চলে না। আহান বলে

—- ভুলটা তোরই। হয়তো তুই কিছু করছিস যার জন্য আফরিন তোকে দোষ দিয়েছে।

আদিত্য কিছু বলে না চুপচাপ ড্রয়িং রুমে চলে আসে কৌশাল আর আহানের সাথে। আফরিন অহনা আর অন্যার মাঝে মাথা নিচু করে বসে আছে। অহনা অন্যা অনেক কথা বললেও আফরিন কোনো কথা বলছেনা। কান্নাটা খুব কষ্টে আটকে রেখেছে। আদিত্য গিয়ে অন্যা আর অহনা কে ইশারায় বলে চুপ থাকতে। আদিত্য এবারও একটু রুড ভবেই বলে

—- এখানে এমন কিছু হয়নি যে থ মেরে বসে থাকতে হবে। এমন নাটক সবার সামনে চললেও আমার সামনে চলবে না। এখানে জি-বাংলা অথবা ইস্টার জলসার নাটকের অডিশন চলছে না। আফরিন আর এবার পারবে না। তাই সে এবার বসা থেকে উঠে দাড়ায় যেই না আদিত্যকে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে। তখনই আদিত্য আফরিনকে হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দেয়। দেখে আফরিনের চোখ দিয়ে পানি পরছে। আদিত্য মনে মনে বলে

—- এইরে ডোসটা বেশি হয়ে গেলো না, আদিত্য একবার ভুল করছিস এবার ভুল করলে তোর দফা রফা করে দিবে। তারপর সে আফরিনের মুখটা উঁচু করলে আফরিন আদিত্যার হাতটা সরিয়ে দেয়। আর এইসব ভিডিও করছে কৌশাল নিজের ফোনে। (কারণ কি সেটা সে পরে বলবো)। আদিত্য আফরিনের চোখের পানিটা মুছে দিয়ে গালে হাত রেখে বলে

—- ধূর পাগলী এভাবে কেউ কাঁদে? এখন তো একটু বকতেও পারবো না নয়তো এমন বাচ্চাদের মতো ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিবে। আফরিন এবার আর পারলো না সত্যি বাচ্চাদের মতো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগে। আদিত্য সাথে সাথে আফরিনকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিয়ে মাথায় হাতবুলাতে বুলাতে বলে

—- আরে আমার বাচ্চা কান্না করে না। আদিত্য এমন কিছু বলতে পারে সেটা ছিল সবার ধারণার বাইরে। আফরিন আদিত্যর হাতে মারতে মারতে বলে

—- ছাড়ুন আপনি আর আমার সাথে কথা বলবেন না। অনেক খারাপ আপনি। আদিত্য বলে

—- অহহহহ বেইবি তুমি লক্ষ্মী না,, সোনা তুমি কান্না করো না কান্না থামাও তোমাকে অনেক গুলো চকলেট আর বারবিডল কিনে দিব। আদিত্যর কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। আফরিন আদিত্যকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চোখ মুছে (যদিও লাভ নেই সেই পানি পরছেই)নাক টানতে টানতে বলে

— এই আমি কি বাচ্চা নাকি। আদিত্য আফরিনের গাল গুলো টেনে দিয়ে বলে

—- হ্যা গো হ্যা তুমি তো বাচ্চাই নয়তো এভাবে কেউ কাঁদে? আফরিন বলে

—- বারে বকলে বুঝি সবাই হাসে।? আর কৌশাল ভাইয়া তুমি কি করছ এইগুলো? অন্যা কৌশাল কে ঘুসি মেরে বলে

—- দেখছ আদিত্য ভাইয়া এমন এরোগেন্ট থেকে আফরিনের জন্য কেমন কত কিউট হয়ে যায় আর তুমি? রাগ করলে বলো বাসায় এসে তুলে নিয়ে যাবা। অহনা বলে

—- তোরা রাগ করলে তো মানায় যাই করে। আর আমি রাগ করলে সে উল্টো রেগে তান্ডব শুরু করে। আহান বলে

—- তো কি করব,, তুমি সহজে মানো!! নূরি পাথার একটা। অহনা ভেংচি কেটে অন্য৷ দিকে তাকায়

আদিত্য আফরিনের গালে হাত রেখে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে

—- সরি একটু বেশি বকে ফেলেছি। আফরিন আড় চোখে তাকিয়ে বলে

—- সমস্যা নেই আদিত্য ভাই,,,,য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়া। বেশ টেনে আদিত্য বলে

—- তোমাকে তো!!? আফরিন বলে

—- আরেক বার বকা দিবেন প্রতিরাতে বেলকনির দরজা বন্ধ করে ঘুমাবো আর রাতে ফোনও ধরবো না। সকালে ভার্সিটি বাবা দিয়ে আসবে আর আম্মু নিয়ে আসবে,, আর ক্লাস থেকে বেরও হবো না। এখন ইচ্ছা আপনার আদিত্য ভাইয়য়য়য়য়া (টেনে) আদিত্য নিজের চুলগুলো টেনে বলে

—- ওকে ফাইন কিছু না বললাম,,, আর তুৃমি এই ভাইয়া ভাইয়া ডাকা বন্ধ কর। প্লিজ। আফরিন বলে

—- কেন আদিত্য ভাইয়য়য়য়য়্যয়য়া!!? আদিত্য অহনা আর অন্যা কে উদ্দেশ্য করে বলে

— তোমাদের বান্ধবীকে চুপ করতে বলো নয়তো। আফরিন বলে

—- নয়তো কি রাগ দেখালে ঐযে। আদিত্য রেগে বলে

—- আল্লাহ তুমি আমাকে রক্ষা কর। আর সবাই একসাথে হেসে দেয়।

চলবে।