তুই যে আমারই পর্ব-০৪

0
5261

#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 4

হ্যালো পুলিশ অফিসার, আপনাকে একটা নাম্বার দিচ্ছি। ওটা ট্রাক করে দেখুন। এই মূহুর্তে একটা কল আসছে। জ্বি মিঃ আয়াজ আপনি আমাদের পুরো ঘটনা খুলে বলুন? তারপর আয়াজ সবকিছু তাদেরকে খুলে বলল। ওকে মিঃ আয়াজ আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কিছুক্ষণ পর যখন পুলিশ অফিসার কল করে জানালো যে, নাম্বারটা নাকি বন্ধ হয়ে আছে। কোনো লোকেশন পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে গুন্ডা গুলো সব বসে বসে তাস খেলছে আর ড্রিংকস করছে। আঁখির চিল্লানিতে যেন তারা যেন ভিষণ বিরক্ত। এই ছেমরি চুপ থাকতে বলি নাই? বস এই মেয়ে মনে হয় থামবে না। তারচেয়ে বরং মুখটা বেঁধে দেওয়ায় ভালো। হুম তাই কর। এরপর একটা লোক এসে মুখে একটা কাপড় বেঁধে দেয়। আর ওরা ওদের মতো পূর্বের ন্যায় ফিরে যায়। রাত তখন গভীর। আমি দীর্ঘক্ষণ মুচরামুচরি করার ফলে ডান হাতের বাঁধনটা কিছুটা লুস হয়ে যায়, আমি একটু গায়ের বল প্রয়োগ করে টান দিতে হাতের বাঁধন থেকে খুলে চলে আসে। এবার আমি ডান হাত দিয়ে বাম হাত খুলে ফেলি। মুখের বাঁধন ও খুলে চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখি গুন্ডা গুলো ঘুমাচ্ছে। আমি মনে মনে ভাবলাম এই সুযোগে আমাকে পালাতে হবে। আমি আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে দরজার পাশে গেলাম। আস্তে করে দরজাটা খুলে বের হয়ে যেতেই পায়ের সাথে কিছু একটার মধ্যে বেঁধে নিচে পড়ে গেলাম। আর উপর থেকে স্টিল জাতীয় কি একটা ধুম করে পরলো। যার বিকট আওয়াজে ঐই লোকগুলো জেগে গেলো। আর আমাকে পালাতে দেখে তাদের চেহারায় যেনো হিংস্রতা ফুটে উঠেছে। আমি আর কিছু না ভেবে কোনো রকম উঠে দৌড়োতে লাগলাম। কিন্তু বেশিদূর এগোতে পারলাম না। খপ করে আমাকে ধরে ফেললো। আবার আমাকে ওই গোডাউনে নিয়ে নিচে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো

আর পাশ থেকে একটা চাবুক নিয়ে হাতে পেঁচিয়ে বলতে লাগলো এতো সাহস, আমার আস্তানা থেকে পালাতে চেয়েছিস। এর শাস্তি তো তোকে পেতে হবে। বলেই চাবুকটা দিয়ে বেদোরোম বারি দিতে লাগলো। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আর পালাবো না। আমাকে আর মারবেন না। কিন্তু তাদের যেন কোনো হুসি নেই। মেরে রক্তাক্ত করে হাত পা বেঁধে নিচে ফেলে রাখলো। আমি নিতর হয়ে পড়ে আছি। নড়ার শক্তি টুকুও নেই। একসময় ওই অবস্থাতেই জ্ঞান হারালাম।

স্যার আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আছে। তারপর পুলিশ অফিসার কে সে তার প্লানটি খুলে বলল। বাহ্ গুড আইডিয়া। ওকে কালকে রেডি থেকো।

পরেরদিন, আয়াজ ও পুলিশ অফিসার সহ তাদের বলা যায়গাটিতে চলে গেলো। সেই জায়গায় আয়াজ টাকা নিয়ে দাড়িয়ে রইলো। হঠাৎ আয়াজের ফোনে একটা মেসেজ আসলো। আর মেসেজটিতে লিখা ছিলো, আমাদের লোক পাঠাচ্ছি টাকাটা ওর হাতে তুলে দিন। আর ***** জায়গায় থেকে মেয়েটাকে নিয়ে যাও। খবরদার কোনো চালাকি করার চেষ্টা করবেন না।

আয়াজ টাকাটা লোকটার হাতে তুলে দিয়ে, তাদের সেন্ড করা লোকেশনে চলে যায়। আর পুলিশ অফিসার তাদের গ্যাং নিয়ে অপারেশন শুরু করে দেয়। যে লোকটা টাকা নিয়ে চলে যায় পুলিশ সেই লোকটাকে ফলো করতে থাকে। আর গায়ে সিভিল থাকায় লোকটা আর ডাউট করতে পারে নি। পুলিশ ওদের আস্তানায় পৌঁছে চারদিকে তাদেরকে গিরে ফেলে। আর পুলিশ তাদের কাজে সক্ষম ও হয়। আর আয়াজ তাদের যে টাকাটা দিলো ওগুলো জালনোট ছিলো।

আয়াজ সেখানে গিয়ে দেখে আঁখি মাটিতে রক্তাক্ত অবাস্থায় নিতর হয়ে পড়ে আছে। আয়াজ দৌড়ে গিয়ে আঁখিকে বুকে নিয়ে ডাকতে থাকে। কিন্তু আঁখির কোনো হুস নেই। প্রাণপাখিটার এই অবস্থা দেখে অজান্তেই চোখ বেয়ে পানি পরতে থাকে। আর চোখে মুখে হিংস্রতা ফুটে ওঠে। আয়াজ আর দেরি না করে আঁখিকে কোলে উঠিয়ে নিলো। আর হসপিটালে চলে গেলো। ডক্টর এসে আঁখিকে ভিতরে নিয়ে গেলো। আর আয়াজ?

সে তো আর নিজের মধ্যে নেই। সে থানায় গিয়ে লোক গুলোকে এমন পিটুনি পিটিয়েছে। শুধু শরীর থেকে আত্মা টা বের হয়ে যাওয়া বাকি ছিলো। পুলিশ এসে না থামালে হয়তো লোক গুলো মেরেই ফেলতো।

ডক্টর ভিতর থেকে বের হয়ে আসতে আজিফা দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, আমার বোনের কি অবস্থা। জ্বি আলহামদুলিল্লাহ আগের থেকে বেটার কিছুটা। তবে এখনো জ্ঞান ফেরেনি। ঘন্টা কানেক পরেই ফিরবে।

রোজিনা চৌধুরী আর নুরী রহমান যেনো সস্থির নিশ্বাস ফেললো। সবাই ভিতরে গিয়ে আঁখিকে দেখে আসলো। আর হাসান রহমান মেয়ের পাশে বসে আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আয়াজ এসে দরজার পাশে দাড়াতে সবাই ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেলো। আয়াজ গিয়ে আঁখির মাথার পাশে বসলো। আর হাতটি কোলে নিয়ে একটা চুমু দিলো।

আর বলতে লাগলো আমাকে ক্ষমা করে দিস তুই। আজকে আমার ভুলের কারণে তোর এই অবস্থা। চিন্তা করিস না যারা তোর এই অবস্থা করেছে তাদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করেছি আমি। বলেই আঁখির কপালে চুমু দিলাম। আর আঁখির হাত ধরে ওভাবেই বসে ছিলাম।

সকালে জ্ঞান ফিরে দেখলাম। কেউ একজন আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। আমাকে নড়ে-চড়ে ওঠতে দেখে ভাইয়া বলে উঠলো কেমন লাগছে এখন? ভালো ভাইয়া, বলেই উঠতে চাইলেই ব্যথায় আহ্। আয়াজ ভাইয়া অস্থির হয়ে বলে উঠলো আরে উঠছিস কেনো? অসহায় চোখে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া বুঝতে পারলো, আমি কিছু বলতে চাচ্ছি। আয়াজ ভাইয়া নরম গলায় বলল, কি হয়েছে? ভাইয়া অনেক ক্ষিদে পেয়েছে? আসলে পুরো একদিনেরও বেশি না খেয়ে আছি। ক্ষিদে পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়?

ভাইয়া হন্তদন্ত হয়ে বলল, ওয়েট আমি এক্ষুনি খাবার নিয়ে আসছি…..আয়াজ খাবার নিয়ে এসে আমাকে খাইয়ে দেয়। এরপর ভাইয়া মেডিসিন নিয়ে আমাকে খাওয়াতে আসতেই, শুরু হয়ে গেলো ঝামেলা। কারণ মেডিসিন আমার দুই চোখের শত্রু। দুনিয়ার সব কাজ করতে রাজি কিন্তু মেডিসিন খেতে নয়। ভাইয়া ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে উঠলো, দেখ আঁখি এমন করে না। লক্ষীটি আমার খেয়ে নে। নয়তো তাড়াতাড়ি সুস্থ হবি না।

কে শোনে কার কথা। একটাই জিদ খাবোনা মানে খাবো না। আয়াজ এবার আর না পেরে এক হাতে মুখ চেপে ধরলো আর অন্য হাতে মেডিসিন গুলো মুখে পুরে দিলো। পানির গ্লাস নিয়ে মুখের উপর দিয়ে চেপে ধরে রাখলো। এবার আমি পরলাম গ্যাড়াকলে। আর না পেরে পানি খেয়ে নিলাম। আর গটগট করে ওষুধ গুলো পেটে চলে গেলো। আমি মুখ ফুলিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। আয়াজ ভাইয়া মুচকি হেসে বলল গুড।

কয়েকদিন পর হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয় আঁখিকে। বাসায় আসার পর সবার সেবাযত্ন প্রায় অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠে। ওই ঘটনার পর থেকে আয়াজ আঁখির প্রতি আরো অনেক সিরিয়াস হয়ে যায়। এক সেকেন্ড এর জন্যেও যেন এখন আর একা ছাড়ে না। তাইতো, মেলায় যাওয়ার কারণে এতো রেগে গিয়েছিল।
দেওয়াল ঘড়ির ঢংঢং আওয়াজে ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসলাম। আর গিয়ে শুয়ে পরলাম।
চলবে