তুই যে আমারই পর্ব-১৪+১৫

0
5333

#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 14

আজিফা দেখলো আঁখি ওয়াশরুমে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে। কোনো সেন্স নেই।
এভাবে উপর থেকে আজিফার গগন কাঁপানো চিৎকার শুনে আয়াজ আর রোজিনা চৌধুরী দৌড়ে উপরে গেলেন। আর গিয়ে যা দেখলো, রোজিনা আম্মু বলে বলে আঁখির কাছে গেলো। আর আয়াজ সেতো আঁখির মাথাটা চেপে ধরে আছে যেখানে কেটে গিয়েছে সেখানে। আর বারবার ডাকতে থাকে। কিন্তু আঁখির তো কোনো সাড়াশব্দ নেই।
এদিকে আজিফা দ্রুত ডক্টরকে ফোন করে উঠে। এরপর ডক্টর এসে আঁখিকে ড্রেসিং করিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর যখন আঁখির জ্ঞান ফিরে আসে,
-আয়াজ গম্ভীর গলায় বলে উঠলো, এসব কি করে হলো?
-আঁখি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, আআসলে ওয়াশরুমে যযযখন সসাওয়ার নেই, ততখন মুখে সসাবান লাগানোর পর হঠাৎ করেই হাত থেকে পপিচলে সাবানটা নিচে পরে যায়। আমি হাতরে খুঁজতে যেতেই সাবানের উপর পা পপরে নিচে পরে যায়। এএরপপর আআর কিছুই মনে নেই।
-ইউ স্টুপিড গার্ল মনতো চাচ্ছে চটকে গালের চাপাটি ফেটে ফেলতে রাগী গলায় বলে উঠলো আয়াজ। হুঁশ জ্ঞান বলতে কিছুই নেই।

-আমি নিচু করে চুপ করে আছি।
-এরপর রোজিনা চৌধুরী বললেন হয়েছে চুপ। আর কোনো কথা না। ভুল মানুষেরি হয়। মেয়েটাকে এতো বকা দেওয়ার কিছুই নেই। ডক্টর যে মেডিসিন গুলো দিয়ে গেছে ওগুলোতো ভরা পেটে খেতে হবে।
-আজিফা যাতো নিজ থেকে খাবার নিয়ে আয়। আমি খাইয়ে দিচ্ছি। এরপর আজিফা গিয়ে খাবার আনলো। রোজিনা চৌধুরী খুব সুন্দর করে খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন খাওয়াতে যাবে অমনি আঁখি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো। কারণ সামনে আয়াজ দাঁড়িয়ে আছে। আর সে মেডিসিন খাবে না। তাই ভয়ে কোনো কূল কিনারা না পেয়ে কেঁদেই দিলো। আর তাই আয়াজ বলল,

–আম্মু তুমি যাও। ব্যাপারটা আমি দেখছি। বলতেই রোজিনা চৌধুরী চলে গেলেন। আর আয়াজ এসে মেডিসিনের পাতা থেকে একটা একটা করে মেডিসিন ছিঁড়তে লাগলো। ছিঁড়েই পানির গ্লাস নিয়ে আঁখির সামনে ধরলো।
-আর বলল নে হা কর।
-কিন্তু আঁখি হা করছেই না।
-আয়াজ এভাবে আঁখিকে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখে আয়াজ আঁখির মুখ চেপে ধরে খাওয়াতে যাবে, অমনি আঁখি হাতের ঝাপটা দিয়ে আয়াজের হাত থেকে মেডিসিন সব ফেলে দিলো।
-আয়াজ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। কতোবড় বেয়াদব মেয়ে আমার সাথে বেয়াদবি করছে।
-আয়াজ রাগী গলায় দাঁতে দাঁত চেপে বলতে থাকে তোর এতো বড়ো সাহস তুই আমার সাথে বেয়াদবি করিস। এর পরিণাম যে কতোটা ভয়াবহ হতে পারে তুই জানিস?
-আমি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছি। এটা আমি কি করলাম। কিন্তু আমি মেডিসিন খাবোই না। যা হবার হবে মনে মনে এসব আওড়াতে থাকে।
-আয়াজ এবার একটা বেত নিলো, নিয়ে বলল এবার যদি না খেয়েছিস তো সত্যি সত্যি মাইর দিবো।
-আমি এবারও চুপ।
-আয়াজ মেডিসিন আমার সামনে ধরে রইলো। আমার কোনো রেসপন্স না পেয়ে বলল কি হলো?
-খাবো না আমি
-কত্তো বড় ফাযিল দেখেছিস। এর তোর আমাকে ভয় করছে না বলেই বেত দিয়ে হাতের উপর একটা বারি মারলাম
-এবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম।
-কি খাবিনা?
-আমি মাথা এদিক ওদিক নাড়িয়ে না বললাম।
-তাই? বলেই হাত দিয়ে আঁখির কোমড়টা টেনে ধরলাম। আর টান দিয়ে একদম বুকের সাথে মিশিয়ে নিলাম।
-কি করতে যাচ্ছেন উনি। আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম।
-আয়াজ শয়তানি হাসি দিয়ে আরেকহাত দিয়ে আঁখির গালের উপর রাখলো আর স্লাইড করতে করতে বলল খাবি না? বলেই গালের উপর চুমু খেলো। খাবি? আঁখির চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললাম।
-হহহুম হুমম খাবো খাবো ভয়ে ভয়ে বললাম।
-গুড!
এরপর মেডিসিন গুলো খেয়ে নিলাম।

এদিকে ইফাজ ফোন করতেই আজিফাকে ইফাজ জিজ্ঞেস করলো, আরে কি হয়েছে?
-আর বলোনা। আঁখি ওয়াশরুমে সাবানের পিচলা খেয়ে পড়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলেছে। এখন ডক্টর এসে চেক-আপ করেই গেলো।
-কি বলো এসব?
-হুমম
-মেয়েটাও নাহ। আচ্ছা যাইহোক যেটা বলার জন্য ফোন করলাম?
-কী
-কী আর? আমাদের বিয়ে ফিক্সড। আব্বু মেনে নিয়েছে। সবার আগে নিউজ টা তোমাকেই দিলাম টুনটুনির মা।
-কথাটা শুনেই যেনো আজিফা লজ্জা পেয়ে গেলো। তাই কট করে লাইন কেটে দিলো।
-ওদিকে ইফাজ মুচকি হেসে ফোনটা রেখে দিলো।

অনিলা চৌধুরী রোজিনা চৌধুরীকে ফোন করে বিষয়টা জানালেন। আর বললেন আয়াজকে জানিয়ে ভালো একটা দিন ঠিক করে এনগেজমেন্টা সেরে ফেলার কথা বলেছেন।

রাতে
রোজিনা চৌধুরী বললেন তো আয়াজ কবে ডেট দিবি ভেবেছিস কিছু?
-হুম আম্মু নেক্সট উইকে শুক্রবার হলে মনে হয় ভালো হয়। আরো আগে দিতাম, বাট তোমা আদরীনিতো কাজ একটা করে রেখেছে। সবাই তখন জিজ্ঞেস করতে থাকবে।
-থামবি তুই।

পরের দিন সবাই আজিফার এনগেজমেন্টের শপিং করতে বেরিয়েছে। শুধু আঁখি যেতে পারছে না। আর আঁখিকে একা ফেলেও যেতে পারছে না। তাই আয়াজ বলল
-তোমরা যাও আমি থাকছি আঁখির সাথে।
-আলতাফ বললেন তুমি যখন বাসায় থাকছো আরতো কোনো টেনশন নেই।
-হুমম আব্বু।
দেন সবাই শপিংয়ে চলে যায়।

এদিকে আমার রুমে একা বসে থাকতে ভালো লাগছে না। আয়াজ এসে বলল নিচে আয়।
আমিও নিচে গেলাম। কিন্তু বাসায় থাকতে মন চাচ্ছে না। খালি মন চাই বাইরে যায়। খেলতে যাওয়ার জন্য মনটা ভিষণ আকুপাকু করছে। তাই বারবার বাসার মেইন গেইটের দিকে তাকাচ্ছি। ব্যাপারটা আয়াজ বুঝতে পেরে তাই বলল বাইরে বেরিয়েছিসতো পা কেটে দু টুকরো করবো।

কি আর করা! চুপচাপ বসে টিভি দেখছি। বাট কতক্ষণ দেখবো।
তখন দেখলাম আয়াজ এক বাটি নুডুলস করে এনেছে। আর বলল নে খা। সকালে কি খেয়েছিস না খেয়েছিস। নে হা কর?
-আআআপনি বানিয়েছেন?
-কোনো সন্দেহ?
-নননাহ।
এরপর আয়াজ নুডুলস খাইয়ে দিতে লাগলো। খেতে খেতে আঁখি বলল
-আআপনিও খান।
-নাহ তুই খা।
-এরপর আঁখি নিজেই নুডলস কাঁটা চামচে তুলে আয়াজের মুখের সামনে ধরে।
-আয়াজ মুচকি হেসে তার প্রিয়তমার হাতে খেয়ে নেয়।

দুপুরে রান্নার সময় আয়াজ রান্না করতে যায়। আঁখিও এভাবে বসে থাকতে ভালো লাগছে না। তাই সে উঠে আয়াজের কাছে এলো।
-কিরে উঠে এলি যে?
-আআআসলে ভালো লাগছিলো না তাই।
-ওহ
-ককী ররান্না করছেন।
-মুরগি, ডিম দিয়ে টমেটো ভাজি, সুঁটকির জোল, আর আমার ফেবারিট গরুর মাংস।
-আআমিও হেল্প ককরি।
-পারিস কিছু?
-নাহ!
-তবে?
-টট্রাই করতে দোষ কী?
-তাই?
-জ্বী
-আচ্ছা আয়। পেঁয়াজ আর টমেটো গুলো কেটে দে!
আমিও গিয়ে কাটতে লাগলাম। আর কাটা শেষে বললাম
-হয়ে গেছে।
-বাহ গুড!
-বলছিলাম কি গগরুর মাংসটা আমি রান্না করি? হ্যাঁ জানি পারি না। আআপনি হেল্প করবেন।
-আচ্ছা আয়।
এরপর আঁখি আয়াজ যা যা বলছে তা তা দিচ্ছে আর নাড়াচাড়া করছে। মাংস কষানোর সময় যখন লুসনি দিয়ে হাড়ি ধরে কাঠি দিয়ে নাড়তে থাকে। তখন আয়াজ অপলকভাবে আঁখির দিকে তাকিয়ে থাকে। কারণ তখন আঁখিকে একদন পাকা গিন্নীর মতো লাগছিল। আর আয়াজ যেনো একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায়।

তাই আস্তে আস্তে আঁখির পিছনে গিয়ে শক্ত করে কোমড় জড়িয়ে ধরে। আর থুতনিটা ঘারের উপর রেখে ঠোঁট বুলাতে লাগলাম আর কিছুক্ষণ পর পর চুমু দিতে লাগলাম।
-আঁখি আয়াজের স্পর্শে বারবার কেঁপে কেঁপে ওঠছে।
-কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে সসসুড়সুড়ি লাগছে।
-লাগুক! তাতে আমার কী?
-প্লিজ
-আও…..হঠাৎ আঁখির মৃদু চিৎকারে আয়াজ ঘোর থেকে ফিরে আসে। আর ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?
-ফুটছে?
-কি?
-এই যে মাংসের পানি। ছছছিটা পরলো এএইযে হাতে।
এরপর আর কিছু না বলেই রান্না শেষ করলো। এরপর আঁখিকে ফ্রেশ করে দিয়ে নিজে ফ্রেশ হয়ে সালাত আদায় করে নিলো।
ডাইনিং বসে এক প্লেটে খাবার বেড়ে নিয়ে। আঁখিকেও খাওয়াচ্ছে নিজেও খাচ্ছে। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে যে যার যার রুমে চলে গেলো।

এদিকে বিকেল হতেই বাড়ির সবাই শপিং করে আসলো। আর এক এক করে খুলে দেখাতে লাগলো। প্রায় সবার জন্য শপিং কমবেশি করেছে।
আঁখির জন্য খুব সুন্দর একটা গাউন কিনলো। আর আজিফা তো নববধূ। তাই তার ড্রেসটা সবার থেকে ডিফরেন্ট তো হবেই। সবার ভালোই কেনাকাটা হয়েছে।

রোজিনা চৌধুরী আঁখিকে বললেন, কিরে জামা পছন্দ হয়েছে।
-হুম খালামনি খুব
আচ্ছা আয়াজ…..
চলবে

#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 15
আচ্ছা আয়াজ ইফাজ তোদের ছেলেদের জন্য শপিং করা হয়নি। আজকে শুধু মেয়েদের শপিং হয়েছে। তোরা কালকে গিয়ে শপিং করে আসবি।
-আচ্ছা আম্মু।

আম্মু আমার কিছু ফ্রেন্ডস আসবে বিদেশ থেকে। কারণ তারা অনেকদিন ধরে আসতে চাচ্ছে। বাট কোনো না কোনো কারণে আসতে পারছে না। আজিফার বিয়ের খবর শুনে এখন যেনো আসার জন্য উতলা হয়ে আছে সবাই। আর তাছাড়া আমারও অফিসের তেমন প্রেশার নেই। ওরাও ফ্রী আছে। আমি বললাম ওদেরকে আসার জন্য।
-ভালো করছিস। তা কবে আসবে?
-এইতো আগামী পরশু।
-আচ্ছা

এরমাঝে সময়গুলো কেটে যায়। সকালে আয়াজ এয়ারপোর্টে যাচ্ছে ওর ফ্রেন্ডসদের রিসিভ করতে।
ওরা চারজন আসছে। আদনান, ফাহিম, শিহাব আর টিনা। টিনা মেয়েটা একটু ছেঁচড়া টাইপ। ভিষণ গায়ে পড়া স্বভাব। সবাইকে বলে বেড়ায় আয়াজ তার বয়ফ্রেন্ড। কিন্তু আয়াজ তাকে বিন্দু মাত্রই ও পাত্তা দেয়না। কিন্তু কিছু চাইলেও বলতে পারেনা। কারণ কিছু বললেই ন্যাকামি শুরু হয়ে যায়।

এয়ারপোর্টে গিয়েই সবাইকে হাগ করলো। আর টিনা, সেতো আয়াজকে দেখা মাত্রই
–hey baby! How are you? How did you leave me alone and come to the country? Didn’t you feel a little bad? You know how much I miss you! Don’t you remember me? বলেই আয়াজকে হাগ করে আছে।
-এদিকে আদনান, ফাহিম, শিহাব মুখ চেপে মুচকি মুচকি হাসছে। এদের হাসি দেখে আয়াজ যেনো রাগে ফায়ার হয়ে যাচ্ছে। চোখ গরম করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
-এরপর আয়াজ কোনোরকম টিনাকে ছাড়ালো। আর মুখে কৃত্রিম হাসি দিয়ে বললো
-হুমম ভালো। যাওয়ার সময় আদনানকে দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে বললো, এই আপদটাকে কে আনতে বলেছে?
-আর আমরা এনেছি নাকি। তোরনা জিএফ দুষ্টু হেসে।
-তোরেই আমি
-আরে আরে থাম! আমাদের কি দোষ? নিজইতো যেচে এসেছে।
-আয়াজ কিছু না বলে নাক ফুলিয়ে সামনে হাঁটা দিলো।

বাসায় আসতে আঁখি দেখলো আয়াজ ভাইয়া সহ সব ফ্রেন্ডসরা বাসায় ঢুকেছে। কিন্তু এই ঢংকিটা কে? এভাবে আয়াজ ভাইয়ার সাথে লেপটে আছে কেন? আর আয়াজ ভাইয়াকে দেখো কি সুন্দর ঘষাঘষি করছে। করবে নাইবা কেন? মেয়ে দেখলেতো লুচুগিরি শুরু হয়ে যায়।

-টিনা এসে রোজিনা চৌধুরীর সামনে একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, hello anti.. কেমন আছেন?
-খালামনি একবার হাতের দিকে তাকাচ্ছে তো আবার টিনার দিকে তাকাচ্ছে। কোনোরকম মুখে হাসি ঝুলিয়ে ভালো আছি বলেই পাশ কেটে আয়াজদের ফ্রেন্ডসদের কাছে গেলো।
-টিনা যেনো ব্যাপারটা ইনসাল্ট ফিল করলো। তাই মনে মনে বলছে, আমাকে ইনসাল্ট। যতসব আনকালচার গাইয়া কোনেকার।

রোজিনা চৌধুরী যেতেই আয়াজের বন্ধুরা পা ধরে সালাম করলো।
আরে বাবারা থাক।
-ভালো আছেন?
-হ্যাঁ বাবা ভালো আছি? তোমরা কেমন আছো? আসতে কোনো অসুবিধে হয়নিতো?
-নাহ আন্টি।
-আচ্ছা যাও তোমরা ফ্রেশ হয়ে আসো।

উপরে যেতেই টিনার আঁখিকে চোখে পড়লো? আর আায়াজকে নাক ছিটকে বলল, who is she?
-আয়াজ কিছু বলতে যাবে তার আগেই আঁখি বলে উঠলো,
-আমি আয়াজ ভাইয়ার খালাতো বোন। মানে বোন আরকি বলেই হিহিহি করে হাসতে লাগলাম
-আর আয়াজ চোখ বড় বড় করে আঁখির দিকে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে রাগে ফুঁসছে।
-আমি আর কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে রুমের দিকে হাঁটা দিলাম। আর মনে মনে বলছি দেখ কেমন লাগে। ঢলাঢলি কর ভালো করে।

রাতে আঁখি লিভিং রুমে বসে বসে কার্টুন দেখছে আর আপেল খাচ্ছে। হঠাৎ ছুরি দিয়ে আপেল কাটতে হাতের উপর পোজ পরে যায়। যার জন্য হাত থেকে রক্ত পরছে অনেক। আঁখি হাতটা লুকিয়ে ফেলেছে। আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে কেউ আছে কিনা। যদি আয়াজ ভাইয়া দেখে আমি শিওর থাপ্পড় খাবো। তাই উঠতে যাবো অমনি দেখলাম আয়াজ ভাইয়া শার্টের হাতা ঠিক করে নিচে নামছে। আমি দ্রুত হাতটা ওরনার ভিতর লুকিয়ে ফেলেছি। আয়াজ নিচে নেমেই আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আমি মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম।
-কিরে কি হয়েছে?
-ককই কিছু নাতো।
-তাইলে এভাবে ঘামছিস কেন?
-গগরম লাগছে
-এই শীতে কিসের গরম?
ততক্ষণে এদিকে আয়াজ ফ্রেন্ডসরা আর পরিবারে সবাই এসে দাঁড়িয়েছে।
-আমার ভয়ে বুক ঢিপঢিপ করছে।
আমি হাতটা শক্ত করে মুটি করে রক্ত নিচে পরতে বাঁধা দিচ্ছি। কিন্তু কতক্ষণ আটকে রাখবো? ঠিকি নুয়ে পড়ছে। হাতটি আড়ালে তাকাই এখনো কেউ দেখেনি।

নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক করে উপরে চলে যেতে লাগলাম। সবাই হয়তো কিছুটা অবাক ও হয়েছে বটে। আমি দ্রুত চলে যেতে লাগলাম।
ফাহিম হঠাৎ নোটিশ করলো। একি ফ্লোরে রক্ত কোথা থেকে।
শুনেই আমি থমকে গেলাম ভয়ে যেনো বাকি সিড়ি ক্রস করতে পারছি না। তাও চলে যেতে লাগলাম।
এদিকে আয়াজ রক্তের জায়গা নোটিশ করলো। আর ওইদিকে তো এতক্ষণ আঁখি দাড়িয়ে ছিলো। দিলাম ডাক আঁখি!

ডাক শুনেই থেমে গেছি। আয়াজ এসে আমাকে বলল ওখানে ব্লাড কই থেকে আসলো।
-ককোনখানে? না জানার ভান করে।
-ঠাডিয়ে চর মারলে সব মনে পড়ে যাবে। হাত কেনো লুকিয়ে আছিস?
-ককই?
-দেখাতো
-আমি না দেখিয়ে দৌড়ে উপরে চলে যেতে লাগলাম। অমনি আয়াজ খপ করে আমার হাত ধরে টান দিলো। আর দেখলো আমার হাত রক্তে ভরে গেছে।
-হোয়াট দা হেল! এসব কি করে?
-এএএকটুতো।
-এটা একটু মন হচ্ছে। রক্ত বন্ধ পর্যন্ত হচ্ছে না। না জানি কতোটা ক্ষত হয়েছে। কিভাবে কাটলো?
-আআআপেল কাটতে গিয়ে।
-তোরেতো বলেই আয়াজ হাত উঠালো চড় মারার জন্য। কিন্তু আবার হাত নামিয়ে তরজোর করে ফাস্টএইড বক্স আনতে বলে আজিফাকে। আর আয়াজ আঁখির হাত হাতটা ক্ষত স্থানে চেপে ধরে রাখে।

কেউ একজন ওদের এসব দেখে সাপের মতো ফুঁসতে থাকে। সে আর কেউ নয়। টিনা!
-রাগে যেনো পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। আসছি পর্যন্ত মেয়েটাকে নিয়ে আদিক্ষেতার যেনো শেষ নেই। এই মেয়েটাকেও দেখো? উফফ ঢং যেনো উতলে উতলে পরছে। নাহ আর সহ্য হচ্ছে না। এই মেয়েকে যদি শায়েস্তা করতে না পারি তাহলে আমার নামও টিনা না।

এদিকে
আয়াজ হাতটা বেন্ডেজ করে দিলো। আর বলল যদি নেক্সট টাইম আর কোনো অঘটন গঠিয়েছিস তো তবে তখনই বুঝবি আমি তোর কি হাল করি। লাস্ট ওয়ারনিং মাইন্ড ইট।
কথাটা বলেই আয়াজ চলে যায়।
এরমধ্যে বেশ কয়েকদিন কেটে যায়। আয়াজরাও সবাই শপিং শেষ করে ফেলে।

পরেরদিন আজিফার ইংগেজমেন্ট। তাই সকাল থেকেই তোরজোর চলছে ভিষণ। আয়াজ যেনো একটুও টাইম পাচ্ছে না। ভিষণ দৌড়ের উপর আছে।
বিকেল হতেই সব মেয়েরা পার্লারে চলে গেছে।

গাউনটাতে আঁখিকে একদম ছোট বারবি ডলের মতো লাগছে। হালকা অর্নামেন্টস যেনো মেয়েটাকে অমায়িক লাগছে। আজিফাকেও অসম্ভব সুন্দর লাগছে। রূপ যেনো নুয়ে নুয়ে পড়ছে। বাড়ির মেইন গেইটে প্রবেশ করতেই সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আর আয়াজ সেতো যেনো নিজের মাঝে নেই। প্রিয়তমার উপর থেকে চোখ যেনো পড়ছেই না। এ নজরে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে বলে প্রিয়তমাকে আজ যেনো অনেক বেশিই সুন্দর লাগছে। কাজল টানা চোখ ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক অসাধারণ।
ইফাজেরও একি অবস্থা।

এদিকে টিনার যেনো রাগে শরীরে আগুন জ্বলছে। কারণ আয়াজ আঁখির দিকে ওভাবে তাকিয়ে আছে তাই। তাই সে…
চলবে