#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 34
সকাল প্রায় দশটা বাজে। ঘড়ির ঢংঢং আওয়াজে আয়াজের ঘুম ভাঙ্গে। চোখ মেলেই আঁখির দিকে নজর পরলো। দেখলো এখনো ঘুমাচ্ছে। তাই মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে ডাকতে লাগে।
-আঁখি! আঁখি! এই বাবুনি।
-ঘুমুঘুমু আওয়াজে চোখ বন্ধ অবস্থায় আঁখি বলে উঠে হুমম।
-উঠবি না?
-হুমম।
-চোখ খোল?
-হুম
-কি হুম?
-আরো ঘুমাবো?
-অনেক বেলা হয়েছে যে।
আঁখি একটু একটু করে চোখ মেলে আলসেমি ঝারতে লাগে। আবার আয়াজের বুকে মুখ গুঁজে দেয়। ঘুমের রেশটা এখনো কাটেনি।
– কি হলো?
-উমমম। অ..নেক পঁচা আ..পনি। ঘুমের ঘোরেই বলতে লাগে।
-কেন? কি করেছি আমি?
-পঁচা কা..জ করেছেন। এএ..ত্তো গুলো ব্যথা পে..য়েছি।
-বেশি ব্যথা লেগেছে আমার বাবুনিটার।
-হুম অনেক। আর ঘুমাবো না আপনার সাথে। আমি খালামনিকে স..ব বলে দিবো।
-ছিহ! এগুলো হাসবেন্ড ওয়াইফের ব্যপার। কাউকে বলতে হয়না সোনা!
-হাসবেন্ড ওয়াইফ বুঝি এমন পঁচা কাজ করে।
-হুম করেতো। কিন্তু এগুলোকে পঁচা কাজ বলেনা বাবুনি। আমাদেরতো বিয়ে হয়েছে। হালাল অধিকার আছে আমাদের। যারা বিয়ের আগে এসবে জড়ায় তাদেরকে বলে পঁচা কাজ।
-তাহলে সব হাসবেন্ড ওয়াইফ এমন করে?
-হুম।
-তাহলেতো অনেক ব্যথা পাবো কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল।
-না সোনা লাগবেনা। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। আমিকি আমার কলিজাকে ব্যথা দিতে পারি। হুম? বলেই নাকের সাথে নাক ঘষে দিলো।
-আঁখি আর কিছু না বলে চুপটি করে আছে।
শুয়ে থাকলে হবে উঠতে হবেতো। এরপর আয়াজ উঠে আঁখিকে চাদরসহ পেঁচিয়ে কোলে করে ওয়াশরুমে নিয়ে যেতে থাকে। সাওয়ার অন করতেই আঁখি বলে উঠে
-একি এটা অন করছেন কেন?
-সাওয়ার নিতে হবে না?
-নাহ। এত্তো সকাল সকাল সাওয়ার নিবোনা।
-নিতে হবে এন্ড প্রতিদিন।
-কেন?
-আয়াজ আঁখির কানে ফিসফিস করে কিছু একটা বলে যা শুনে আঁখির চোখদুটো ছানাবড়া হয়ে যায়।
-মানে?
-মানে যা শুনছিস তা। বলেই আঁখিকে সুন্দর করে ফ্রেশ করে দিয়ে রুমে নিয়ে আসে। সুন্দর করে একটা শাড়ী পরিয়ে দেয়। যেহেতু বাসায় অনেক গেস্ট তাই নতুন বউ শাড়ী ছাড়া নানারকম কথা বলবে। আয়ানার সামনে বসিয়ে আয়াজ খুব সুন্দর করে আঁখিকে সাঁজিয়ে দেয়। ডেস্ক থেকে একটা পেইন কিলার খাইয়ে দেয়।
-আচ্ছা আআপনাকে একটা ককথা বলি?
-হুমম শিওর?
-আআপনি রাতে আমার সাথে ওমন করেছেন কেন?
আয়াজ এবার একটা মুচকি হাসি দিয়ে স্বামী স্ত্রীর পুরো বিষয়টা খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়।
-আঁখি চোখ বড় করে আয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে?
-ওমন ভুতের মতো চোখ করে কোনো লাভ নেই। দ্যাটস ট্রু। কিছুই করার নাই। বলেই আঁখির নাকটা টেনে দিয়ে বেলকনিতে জামাকাপড় শুকাতে দিতে চলে যায়।
আঁখি কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে গুটিগুটি পায়ে নিচে চলে যায়। হাঁটতে ভিষণ কষ্ট হচ্ছে। তাও সহ্য করে নিচ্ছে। আয়াজের বলা প্রত্যেকটা কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছে। স্বামী স্ত্রীর ব্যপার কাউকে বলা ঠিকনা। কথাটা যেনো ভালোভাবেই মাথায় গেঁথে নিয়েছে। আর আঁখির ছোট থেকে একটা কোয়ালিটি আছে, তা হচ্ছে আয়াজের প্রত্যেকটা কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা। অবশ্য এগুলো আয়াজের ভয়ে করতো। কিন্তু এটা এখন অভ্যেসে পরিণত হয়ে গেছে।
নিচে নামতেই রোজিনা চৌধুরী বললেন আরে মামনি এসেছিস? আয় বস নাস্তা করবি। আঁখি টেবিলে বসতেই দেখলো আয়াজও আসছে। এসেই আঁখির পাশে চেয়ার টেনে বসলো। দুজনে বসে নাস্তা করে নিচ্ছে। আর আয়াজ টুকিটাকি কথা বলছে।
নাস্তা শেষ করেই আঁখি উপরে চলে এলো। এসেই খাটে বসে বসে ঝিমাচ্ছে। ওই মুহূর্তে আয়াজ আসার পায়ের শব্দ শুনতেই আঁখি চোখ মেলে তাকালো। আয়াজ দেখলো মেয়েটা ঘুমুঘুমু চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। আর কত মায়া লাগাবিরে। এভাবে তাকাসনারে। বুকে গিয়ে লাগে। বলেই আঁখির সামনে বসলো। আর বলল
-বেশি ঘুম পাচ্ছে।
-হুম..
-এতো ঘুম কেমনে আসে। একরাতেই এই অবস্থা। এখনোতো পুরো জীবনটায় বাকী রয়ে গেলো। আঁখির যেনো এসব কথা মাথায় ডুকছেনা। তার এখন শুধু একটায় জিনিস মনে হচ্ছে তা হলো সে আপাতত ঘুমাতে পারলেই চলবে। আয়াজ আঁখির অবস্থা দেখে আর কিছু বললনা। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আঁখি আরামসে একটা ঘুম দিলো। আঁখি ঘুমিয়ে পড়তেই আয়াজ কাঁথাটা টেনে দিয়ে দরজাটা অফ করে নিচে আসলো।
নিচে এসে বাবার সাথে রিসিপশনের খরচাপাতির ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করছে। রোজিনা চৌধুরী এই ফাঁকে চা দিয়ে গেলো। দুপুর হতেই আয়াজ উপরে যেতেই আজিফার সাথে দেখা হয়।
-কিরে ভাইয়া আঁখি কই? ওকে কোথাও দেখছি না যে?
-রুমেই আছে। ঘুমাচ্ছে। কেন কোনো দরকার?
-নাহ দেখছি না যে তাই বললাম।
-ওহ। বলেই আয়াজ উপরে চলে আসলো। এসেই দেখে মেয়ে বেঘোরো ঘুম। তাই আয়াজ আস্তে আস্তে ডাকতে লাগে।
আয়াজের ডাক শুনেই চোখ মেলে বলে
-কী?
-আযান দিয়েছে। নামায পরতে হবেনা?
-উমম ঘুমাবো।
-আঁখি! একটু চওড়া গলায় বলল। কিন্তু আঁখির কোনো হেলদুল নেই। সে দিব্যিই ঘুমুচ্ছে। আয়াজ তাই বাধ্য হয়ে ওয়াশরুম থেকে পানি এনে মুখের উপর হালকা হালকা ছিটা দিতে লাগলো। আঁখির এবার প্রচুর বিরক্ত এবং মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তাই রাগ করে ধপ করে উঠে বসলো। আঁখি উঠে বসতেই আয়াজ মুচকি হেসে আঁখিকে কোলে করে বাথরুমে নিয়ে যায়। এবং সুন্দর করে মুখ হাত ধুয়ে মুছে দেয়।
রুমে এসেই একটু কড়া গলায় বলে উঠে নামায আদায় করেনে। মসজিদ থেকে এসে যেনো না শুনি এখনো নামায আদায় হয়নি বলেই চলে যায়। আয়াজ চলে যেতেই আঁখি নামায আদায় করতে বসে গেলো। নামায শেষ করেই নিচে চলে গেলো। গিয়ে খালামনির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আর টুকিটাকি হেল্প করছে।
আয়াজও মসজিদ থেকে এসে দেখে সবাই নিচে। এরপর সবাই লাঞ্চ করতে বসে গেলো। লাঞ্চ সেরেই আঁখি আজিফা আর আরিফার সাথে ওদের রুমে গেলো আর সবাই মিলে গল্প করতে লাগলো। গল্পের মাঝেই আরিপু বলে উঠলো এই লুডু খেলবি?
-সবাই সাথে সাথেই হ্যাঁ বলে উঠে। এরপর তিনজনই সাপ লুডু খেলতে লাগে। আয়াজ যাওয়ার সময় এদেরকে নোটিশ করে একটু তাকিয়েই তারপর রুমে চলে গেলো।
রাতেই সবাই ডিনার করেই যে যার যার রুমে চলে গেলাম। আঁখি রুমে এসেই শাড়ী চেঞ্জ করে প্লাজু আর গেঞ্জি পরে নেয়। আহা শান্তি। এসব শাড়ী মাড়ী ঘুমানো যায়। আয়াজও আর কিছু বলেনি। ওয়াশরুম থেকে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে এসে রুমের লাইটটা অফ করে দিয়ে আঁখিকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো
চলবে
#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা।
part 35
এর মধ্যে রিসিপশন ও খুব ভালো ভাবে শেষ হয়ে যায়। আয়াজ আর আঁখির সংসারটাও বেশ ভালোই চলছে। রাগ দুষ্টুমি খুনসুটি সব কিছুতে ভালোই চলছে। এর মধ্যে কবে যে দুইটা মাস পার হয়ে গিয়ছে কেউ টেরই পায়নি।
রাতেরবেলা আঁখি মনটা খারাপ করে বসে আছে। আয়াজ অফিস থেকে এসে দেখে তার পুচকুটা মুড অফ করে বসে আছে।
-কিরে আমার বউটার কি হয়েছে। এমন মুড অফ যে?
-তখনই আঁখি বলল আর কিছুদিন পরই আমার রেজাল্ট দিবে তাই অনেক টেনশন হচ্ছে।
-দূর পাগলী মেয়ে কিচ্ছু হবে না। এই নিয়ে এতো মন খারাপের কি আছে। দেখবি আমার বাবুনিটার ভালোই জিপিএ আসবে।
-তাই যেন হয়।
-তাই হবে। বলেই ঠোঁটের উপর আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আর আঁখিও নিচে নেমে গেলো আয়াজের জন্য লেবুর পানি আনতে। আঁখি আয়াজের হাতে গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে ভিজা টাওয়েলটা বেলকনিতে শুকাতে দিতে গেলো। আয়াজ দেখছে তার মায়াপরীকে। বড্ড গৃহীনি গৃহীনি লাগছে। পানিটা মুখে দিতেই একটা মুচকি হাসি দিলো। কিন্তু মাথায় আবার চিন্তার চাপ পড়লো। কারণ আয়াজ বেশকিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছে মেয়েটা কিছুই খেতে পারছেনা। খেলেই বমি করে দেয়। মাথায় যেনো চিন্তা ভর করেছে। আচ্ছা আমি যা ভাবছি তা যদি সত্যি হয়। ও মাই গড এই অল্প বয়সে না না। বাট আমিতো যথেষ্ট প্রটেকশন নিয়েছে । তাহলে কি ফুলসজ্জার রাতেই। শিট! এতোটা কেয়ারলেস কিভাবে হলাম আমি। বাচ্চা মেয়েটা, উফফ আর ভাবতে পারছিনা। এরমধ্যে আয়াজ আঁখিকে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করে
-আঁখি এদিকে আয়তো।
-হুম কিছু বলবেন।
-তোর পিরিয়ড লাস্ট ডেটতো মেবি ২৫ তারিখ ছিলো। তাইনা?
-হুমম! তো কি হয়েছে?
-আজতো ১২ তারিখ হতে চললো। এবার যেনো আয়াজের সব জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো। টেনশনে মাথাটা ঝিম ঝিম করছে।
-কি হয়েছে আপনার?
-কই কিছুনাতো। বলেই আঁখিকে টান দিয়ে কোলে নিয়ে নিলো। তারপর আলতো হাতে পেটটা জড়িয়ে ধরলো আর গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।
-আচ্ছা শুনুননা।
-বল?
-আমি যদি রেজাল্টে ভালো করি আমাকে কিন্তু কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। বিয়ের পর আপনি কোথাও নিয়ে যাননি। এই যে আপনার সাথে এত্তো গুলো রাগ হয়েছে।
-তাই?
-হুমম
-আয় সব রাগ ভাঙ্গিয়ে দেয়। বলেই আঁখিকে নিয়ে ভালোবাসার আদিম খেলায় মেতে উঠেছে।
সকালে
আঁখি আয়াজের প্রয়োজনীয় সকল জিনিস এগিয়ে দিচ্ছে। আয়াজ রেডি হয়ে আঁখিকে কোমড় জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দিয়ে দিলো। আর বলল সাবধানে চলাফেরা করবি। আর আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবো। দৌড়াদৌড়ি একদম করবি না। লক্ষী মেয়ের মতো থাকবি। আমি কিন্তু ফোন দিয়ে খবরাখবর সব নিবো। যদি শুনেছি তো লাফালাফি করছিস এসেই কানের নিচে লাগাবো। মনে থাকবে?
-আঁখি ঘার কাঁদ করে সম্মতি জানালো। আয়াজ গালে চুমু দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।
আঁখি নিচে খালামনির সাথে দাঁড়িয়ে রান্নাঘরে টুকটাক কাজ করছে। কিন্তু কিচেনে কেমন যেনো অস্বস্তি লাগছে। তাই তাড়াতাড়ি করে কাজগুলো শেষ করে দিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে ফেনটা চালু করে বসলাম। এতোক্ষণ যেনো ধম বন্ধ হয়ে আসছিলো।
-দুপুরে খেতে বসেছি ঠিকি। কিন্তু কিছুই মুখে রুচি লাগছেনা বরং মুখে দিলেই যেনো মনে হয় নাড়ি ভুড়িসহ সব বেড়িয়ে আসবে।
-কি হলো কিছুই খাচ্ছিসনা কেন? কি হয়েছে?
-এইতো মামনি খাচ্ছি। বলেই একটু লেবু চিপে খাওয়ার ট্রাই করছি।
রাতে আয়াজ বাসায় ফিরলো। বাসায় ফিরেই ফ্রেশ হয়ে দেখলো আঁখি এসেছে। হাতে সেই লেবু পানি। আয়াজ হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে আঁখির হাতে প্রেগন্যান্সির কিটটা ধরিয়ে দিলো।
-কি এটা?
-কিছুনা। বলেই আয়াজ আঁখিকে ওটা দিয়ে শিখিয়ে দিলো কিভাবে ইউজ করতে হয়। আঁখিও বাধ্য মেয়ের মতো তাই করে কিটটা এনে আয়াজের হাতে দেয়। আয়াজ কিটটা দেখে খুশিতে জল চিকচিক করছে। কিন্তু কেন জানি খুশিটা উদ্ভোদন করতে পারছেনা।
আঁখি অবুঝের মতো আয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে। আর জিজ্ঞেস করছে কি এটা? আয়াজ আঁখিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আর কোলে নিয়ে ঘুরাতে থাকে। আরে আরে কি হয়েছে। এমন করছেন কেন?
-তুই জানিস আজকে আমি কতোটা হ্যাপি।
-কেন?
-কজ আজকে আমি তুই আমাকে অনেক বড় একটা গিফট দিয়েছিস।
-আঁখি আবালের মতো তাকিয়ে আছে। আয়াজের দিকে।
-তারপর আয়াজ কোল থেকে নামিয়ে মাথাটা পেটের কাছে নিয়ে গিয়ে একটা চুমু দিলো। আর বলল এখানে আমার প্রিন্সেস আছে।
-প প প্রিন্সেস?
-হুম
-সসসত্যি?
-হ্যাঁরে পাগলী। খুশিতে চোখ থেকে পানি পরছে। আআয়াজ এখানে বাবু আছে।
-আমাদের বাবু। আমার ছোট্ট সোনা মা টা যে এখানে আছে। এই ছোট্ট পেটটাতে যে একটু একটু করে বড় হচ্ছে
-আমাকে মাম্মাম বলে ডাকবে তাইনা।
-হুম মুখটা ছোট করে বলল আয়াজ।
-আঁখি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো। আআপনি খুশি হননি?
-কে বলেছে আমি খুশি হয়নি। আমি অনেক খুশি। কিন্তু?
-কিন্তু কি?
-তুই অনেক ছোট। এই বয়সে বেবি তোর শরীরের জন্য পারফেক্ট না।
-কে বলেছে? দেখবেন আল্লাহ ঠিকই আমাদের বেবি সুস্থ ভাবে পৃথিবীতে আনবে। কোনো কিচ্ছু হবেনা। আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখুন।
-হুম তাই যেন হয়। তোদের কিছু হলে যে আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো। তোরাইতো আমার সব। বলেই আঁখিকে জড়িয়ে ধরলো।
পুরো বাড়িতে যেনো খুশির আমেজ পড়ে গিয়েছে। আলতাফ চৌধুরী খুশিতে মিষ্টি বিলানো শুরু করে দিয়েছে। আর সাথে সবার ফ্রীতে উপদেশতো আছেই এটা করবিনা ওটা করবিনা। দুষ্টুমি কম করবি।
রাতেই আয়াজ খাবার সব উপরে নিয়ে চলে গিয়েছে। কারণ আয়াজ খুব ভালো করেই জানে নিচে থাকলে এই মেয়েকে খাওয়ানো যাবেনা। তাই রুমে এসেই খাবার মেখে খাইয়ে দিতে লাগলো। কিন্তু দুই একটা মুখে দিতেই আর খাবোনা বলে বলে চেঁচাচ্ছে। কিন্তু আয়াজতো নাচরবান্দা। না খেয়ে কই যায় দেখি।
-তাই চোখ লাল করে বলল। চুপ কোনো কথানা। চুপচাপ সব খাবার শেষ করবি। নয়তো মার খাবি কিন্তু।
আঁখি মুখটাকে বাংলার পাঁচের মতো করে খাবারটা মুখে নিলো ঠিকি। কিন্তু চিবোচ্ছে না। মুখে নিয়ে বসে আছে। আয়াজ এবার সত্যি একটা বেত নিয়ে এসে জোরে আঁখির পাশে বেডের উপর বারি মেরে রাগী গলায় বলে বলল
-কি হলো।খাবার মুখে পুরে বসে আছিস কেন? নইলে কিন্তু বেতের বারি একটাও মিস যাবেনা। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় অনন্তত মার খাসনা। নয়তো মেরে পিটিয়ে খাওয়ানো আমার জন্য কোনো ব্যাপারনা। আমার বাচ্চার চুল পরিমাণ অযত্ন আমি সহ্য করবো না। আঁখিও ভয়ে খেতে লাগলো। খাবার ফ্রুটস মেডিসিন সব খাইয়ে আয়াজ নিজের খাবারটাও শেষ করে নিলো। দেন আঁখিকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
এভাবে বকে ধমকে খাওয়ানো। নিয়মমতো এক্সারসাইজ করানো। চেকআপ করানো টাইম অনুযায়ী ঘুমানো সবকিছুই বেশ চলছে। এরমধ্যেই আঁখির রেজাল্টের ডেটটা ও চলে আসলো। আঁখি তখন দুমাসের প্রাগন্যান্ট। রেজাল্ট দিন আয়াজ আঁখির রেজাল্ট দেখলো। আ পেয়েছে। অর্থাৎ ৪.৯০। কিছুটার জন্য +মিস গিয়েছে। এই জন্যেই আঁখির মনটা খারাপ হয়ে আছে। তাই আয়াজ এসে বলল
-আরে ধুর পাগলী এটার জন্য এতো মন খারাপ করার কি আছে। এভাবে মন খারাপ করে রাখলে আমাদের বেবিরও কিন্তু মন খারাপ হবে। দেখবি এইচএসসি তে আরো অনেক ভালো রেজাল্ট করবি।
-সত্যি?
-হুম। ভাবছিলাম আমার বাবুনিটাকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আসি? কি বলিস?
-সত্যি আমরা ঘুরতে যাবো?
-আঁখি খুশিতে আয়াজকে জড়িয়ে ধরলো।
বিকেলে খুব সুন্দর করে রেডি হয়ে আয়াজ আর আঁখি দুইজনেই ঘুরতে বের হয়। তারা একটা নদীর পাড়ে যায়। খোলা বাতাস, নদীর সৌন্দর্য পরিবেশটা যেনো অসাধারণ। বসে বসে দুজনে বাদাম খেতে থাকে আর নানারকমের গল্প করতে থাকে। আয়াজ বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিচ্ছে আঁখিকে। আর আঁখি খাচ্ছে আর বকবক করছে। এই মেয়ে যেনো আজকে কথার ফুলঝুরি খুলেছে। সারাজীবনের কথা মনে হয় আজকেই বলে ফেলবে। আয়াজও কিছু বলছে না। মনোযোগ দিয়ে আঁখির কথাগুলো শুনছে। বেবি কে নিয়ে কি করবে কি নাম রাখবে কি জামা পরাবে হাজার রকমের কথা। আয়াজ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তার প্রিয়তমার দিকে। ভাবছে পিচ্চিটা বুঝি সত্যি সত্যি বড় হয়ে গেলো। নিজেই এখন নিজের খাবার খেতে পারেনা সে নাকি আরো একটা পিচ্চি জন্ম দিবে। পিচ্চি টা নাকি মা হবে। আমার বাচ্চার মা। দুই দুইটা পিচ্চি আমার মন্দ হবেনা। আনমনেই কথা গুলো ভেবে হাসছে।
সন্ধ্যা নেমে আসতেই তারা গাড়ি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। আয়াজ গাড়ি চালাচ্ছে। আর আঁখি চকলেট খাচ্ছে বসে বসে। আয়াজ তাকিয়ে দেখলো। অসম্ভব কিউট লাগছে। পুরাই বাচ্চা। ওদিকে তাকাতে তাকাতে কখন যে সামনে ট্রাক এসে পড়েছে আয়াজ যেনো টেরই পায়নি। দ্রুত ট্রাককে অভার টেক করতে যায়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। আয়াজ একলাফ দিয়ে আঁখির সিটে গিয়ে পড়ে যাতে নিজের জীবন গেলেও আঁখির যেনো কিছুই নাহয়। ট্রাক এসেই ধাম করেই মেরে দেয়।
আআআআআআআআআআআআআআ
চলবে