তুই হবি আমার পর্ব-১৩

0
1766

#তুই_হবি_আমার??
#DîYã_MôÑî
#পর্ব__১৩

৬মাস পর,,
আজও রোজকে বা রোজের বডি খুজে পায়নি কেউ। মেঘ আজও বিশ্বাস করে রোজ আছে। ওর আসেপাশেই আছে। সেদিনের পর থেকে মেঘ কুহুর সম্পর্কটাও তিক্তকায় ঘিরে যায়। মেঘ হয়ে ওঠে আগের মতো রাগি আর একরোখা সাইকো। রোজের কথামতো মেয়েদের যারা অপমান করে তাদের কঠিন শাস্তি দেয় মেঘ। নাহ মেঘ না মাফিয়া রোদ।

আলিজা কলির বিয়েটা জোর করে দেয় মেঘ। তাকে যে রোজকে দেওয়া কথা রাখতে হবে। নিভি আর নীলয় এখন মেঘের ফার্ম হাউজে থাকে। কাল রওশন আর ঈশার বিয়ে। তাই সব ব্যবস্থা ঠিকভাবে করার জন্য অভিকে তুলে এনেছে মেঘ।

অভি : কে তুমি? আর এভাবে তুলে এনেছো কেন.? আমাকে যেতে হবে। ঈশার বিয়ে হয়ে যাবে। রোজও চলে গেলো ঈশাও

মেঘ : ঈশা ম্যাডামের বিয়ে স্যারের সাথে হবে। এটা রোজের দায়িত্ব ছিলো যা আমি পুরণ করবো। সেদিন তোমার আর রোজের সমস্ত কথা আমি সিসিটিভি ফুটেজে দেখেছি। তোমার জন্য রোজ হাত কেটেছিলো ইচ্ছা করছে তোমার হাতটা কেটে ফেলি। কিন্তু সে শুভকাজটা স্যারদের বিয়ের পর।

অভি : আমার কি দোষ? রোজই তো সেদিন সব বললো আমি তো ওকে বিশ্বাস করে

মেঘ : রোজ কেন বলেছে..? কেন বলেছে হ্যা..? শুধুমাত্র ওর বোন আর বন্ধুকে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য। তোমার জন্য রোজকে সবাই ভুল বুঝেছে। স্যারদের সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। আর আমার রোজকে পেতে হয়েছে বিনাঅপরাধে শাস্তি। তোমার হাতের একটা একটা পশমও জালিয়ে দেবে এই রোদ। তোমার এমন অবস্থা করবো যে তুমি নিজেই নিজের মৃত্যু চাইবে। তোমার মনে হবে কেন এখনো বেঁচে আছো।

অভি : প্লিজ ছেড়ে দাও আমাকে। আমি আর কখনো ঈশাদের জীবনে ঢুকবো না। ইনফ্যাক্ট কারোর জীবনে ঢুকবো না।

মেঘ : গার্ডস ওকে উল্টো ঝুলিয়ে ইচ্ছামতো মারো। আর যেখানে যেখানে কেটে যাবে সেখানে লঙ্কার গুড়ো ছিটিয়ে দাও। আজকের মতো এটুকুই ওর রুটিন।

গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো মেঘ। সোজা শপিংমলে এসে রওশনের জন্য শপিং করতে লাগলো। কিছুক্ষনের মধ্যে রওশন আর ঈশাও আসলো।

মেঘ : স্যার দেখুন তো কোনগুলো আপনার পছন্দের..? যা যা পছন্দের সব নিন। ম্যাডাম আপনিও কিনুন।

রওশন : এখনো পাগলামি কেন করো মেঘ.? ওটা এক্সিডেন্ট ছিলো। তোমাকেও মানতে হবে রোজ আর নেই। নিজের জীবনটা এভাবে নষ্ট করছো কেন.?

মেঘ : আমার রোজ বেঁচে আছে। আমার ওপর শুধু রেগে আছে তাই সামনে আসছে না। একদিন রোজ ঠিক আসবে আমার কাছে। আমি তো ওর সব কথা শুনছি। সবকিছু করছি।

ঈশা : তুমি কি শুধুই একজন স্টুডেন্ট মেঘ.? রোজকে যারা অপমান করেছে,, খারাপ কথা বলেছে তাদের সবার বিক্ষিপ্ত লাশ পাওয়া গেছে। আর সেই লাশ পাওয়ার আগের দিন তোমায় প্রতিবারই রোজের এক্সিডেন্ট যেখানে হয়েছে সেখানে থাকতে দেখা গেছে। এসবের পেছনে তুমি নেই তো.? এতোকিছু কেন করছো আমাদের জন্য.?

মেঘ : ম্যাডাম আমার দম আটকে আসছে। এই দায়িত্ব শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমার মুক্তি নেই। আমার জন্য রোজ আপনাদের সামনে আসছে না। নাহলে ও নিজেই সবটা করতো। দেখবেন ও ঠিক আসবে। ঠিক আসবে।

একা একা বিরবির করতে করতে চলে গেলো মেঘ। ঈশা রওশনের হাত চেপে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো,,

ঈশা : আমাদের রোজের সাথে কেন এমন হলো.?মেঘও কেমন পাগল হয়ে গেছে। সারাদিন পাগলামি করে। আমার মনে হয় মেঘের জন্য কাউকে প্রয়োজন,, কতদিন আর এভাবে কষ্ট পাবে ছেলেটা.?

রওশন : তোমার মনে হয় রওশন অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকাবে.? পছন্দ তো অনেক দুরে। আর বিয়ের চিন্তা মাথাতেও এনো না। ও যদি জানে আমরা এসব ভাবছি তাহলে আরো বেশি পাগলামি করবে।

ঈশা : তাহলে কি করতে বলছো.? ছেলেটা শুধুমাত্র রোজের দায়িত্ব পালনে আমাদের জন্য যা যা করেছে সেসবের জন্য অন্ততো এইটুকু তো করবো।

রওশন : জানিনা। এমন অবস্থায় কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। ওদিকে কুশান আংকেলেরও সেকেন্ড টাইম হার্ট এট্যাক হলো । পরিবারের কারোর মেন্টালি সিচুয়েশন ভালো না। এদিকে মেঘের এমন পাগলামি। আজ রোজের ওপরই খুব রাগ হচ্ছে। কেন চলে গেলো আমাদের ছেড়ে।

???
#In_India
খাঁন ভিলায় সম্রাট খাঁন তার আদুরে বোনের সামনে কান ধরে উঠবস করছে। আর তার সামনে দাড়িয়ে খিলখিল করে হাসছে সাদিয়া খাঁন। সম্রাটের ছোট বোন।

সম্রাট কলকাতার বেস্ট হার্ট সার্জন। সাদিয়া এখনো পড়াশোনা করছে পাশাপাশি গান গায়।

সাদিয়া : আর কখনো লুকিয়ে সুম্পির( সুমি চৌধুরি সম্রাটের গার্লফ্রেন্ড) সাথে দেখা করতে যাবে.? আমাকে না জানিয়ে লং ড্রাইভে যাবে.?

সম্রাট : আর যাবো না। এরপর থেকে তোকেও পার্মিশন দিবো যেতে। এবার তো ছেড়ে দে আমাকে। আর কত কান ধরে উঠবস করবো.?

সাদিয়া : যতক্ষন আমি বলবো আমার দাভাই ততক্ষন কান ধরে উঠবস করবে। আমাকে কোথাও যেতে দাও না আর নিজে প্রেমসহ ঘুরে বেড়াও এটা তো ঠিকনা।

সম্রাট : মাফ করে দে প্লিজ। আর পারছি না। না জানি হসপিটালে কোনো ক্রিটিক্যাল কেস আছে নাকি। দেরি হয়ে যাচ্ছে তো বোন।

সাদিয়া : অকে এবারের মতো মাফ করে দিলাম।কিন্তু নেক্সট টাইম মাফ করবো না। মনে থাকবে.?

সম্রাট : থাকবে।
সাদিয়া : এবার জলদি গাড়ির চাবি দাও। আমার একটা শো আছে। লাইভ টেলিকাস্ট হবে বিকাল ৪টায় টিভিতে দেখো।

সম্রাট : তোর রেকর্ডিং সামনে আর এখন তুই মাঠেঘাটে গান গাইবি.?
সাদিয়া : দাভাইইই চুপপপপপ। রেকর্ডিং এর অনেক বাকি এখন একটু এদিক ওদিক গাইলে সমস্যা নাই। প্লিজ দাভাই পার্মিশন দাও।

সম্রাট : ঠিক আছে। সুমিকে সাথে নিয়ে যাস্।
সাদিয়া : তোমার বউ যদি চুরি হয়ে যায়.? তখন.?তখন তো বিয়ের আগে বিধবা হয়ে যাবে। সো আমি একাই যাবো।

সম্রাট : বোন শোন,,, বোন,,, বোনন..
সাদিয়া কিছু না শুনেই গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। আপাতত উদ্দেশ্য কলেজ। এদিকে সম্রাটও মাথায় চিন্তা নিয়ে হসপিটালের দিকে রওনা দেয়।

???
কলেজ গেট দিয়ে ঢুকছে সাদিয়ার গাড়ি। কলেজের সব ছেলেরা সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সাদিয়া অদ্ভুদভাবে তাকানোতে ইরিটেটিং বোধ করতে লাগলো। ও গাড়ি পার্ক করে জিন্সের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাটতে লাগলো। হঠাৎ ছুটে আসলো সুমি,,

সুমি : বেবি তোর এতো লেট হলো কেন..? জানিস আজ কি হয়েছে.? আরীব,,, আরীব।

সাদিয়া : কে আরীব.?
সাদিয়ার কথায় সুমির মুখটা চুপসে গেলো। আরীব হলো একজন সুপাস্টার। বলতে গেলে বর্তমানের হিটস্টার। আর সাদিয়া ওকে চেনে না। সুমির মন চাচ্ছে পাঁচতলার ছাদ থেকে টুপ করে লাফ দিতে।

সুমি : বেবি আরীব মাহমুদ। নামকরা নায়ক ভুলে গেছিস নাকি.? কলেজের ফাংশনে এসেছিলো চিফ গেস্ট হয়ে।

সাদিয়া : ওহ। মনে পড়ছে। তো কি হইছে ওই ভাবওয়ালা বলদের.? ( সুমি অসহায় চোখে তাকাতেই সাদিয়া বলে উঠলো।) সরি উনি তো তোমাদের সবার ক্রাশ,,,ভুলে গেছিলাম। তো কি হয়েছে তোমাদের ক্রাশের।

সুমি : ও তোকে ভালোবাসে। একটু আগেই এনাউন্স করলো এই ক্যাম্পাসে দাড়িয়ে। আসলে তোর ক্লাস কোনটা, কার কাছে জিজ্ঞাসা করবে,, যার কাছে করবে সে আদৌও জানে কিনা.? তাই মাইক নিয়ে তোর খোজ করেছে।

সাদিয়া : সিরিয়াসলি.? ওয়াও। কি নিউজ শুনালে,, বমি পাচ্ছে এবার।
সুমি : কি.?

সাদিয়া : ক্রাশ ক্রাশ বলে না চিল্লিয়ে চারপাশে দেখো ভীর জমে গেছে। গমর লাগছে বমি পাচ্ছে। ডিসগাস্টিং।

সুমি কাধ ঘুরিয়ে দেখলো সবাই ওদের ঘিরে দাড়িয়ে আছে। সাদিয়া চোখ মোটা করে তাকাতেই সবাই ভয়ে যে যার কাজে চলে যায়।

সুমি : তুই খুশি হস নি.?
সাদিয়া : বাংলাদেশের নায়ক ইন্ডিয়াতে এসে প্রেমে পড়েছে ভালো কথা। কিন্তু রিজেক্ট সহ্য করার ক্ষমতা আছে তো.?

সুমি : রিজেক্ট করবি.? কতো কিউট একটা ছেলে।
সাদিয়া : ভালেবাসা নামক ফালতু ইমোশন আমার নেই। আর এসব স্টার ফারদের লাইফে থাকার ইন্টারেস্টও নাই। সো বাই। আমার কাজ আছে।

সুমি : সত্যিই রিফিউজ করবি.?
সাদিয়া : তোমার জন্য কথা বলবো.? বিয়ে করবা ওকে..

সুমি :ও রাজি হলে আমার সমস্যা নাই।
সাদিয়া : এই আরীব সব মেয়েদের মাথা চিবায় খাইছে। অসহ্য। এবার আসছে আমার মাথা খেতে।

ওদের কথার মাঝে আরীব এসে হাজির। সুমি মুখটা রসগোল্লার মতো করে ড্যাবড্যাবিয়ে আরীবের দিকে তাকিয়ে আছে।

আরীব : কোথায় ছিলে.? জানো তোমাকে খুজতে কতটা সময় লেগেছে,,,
সাদিয়া : খুজতে বলছে কে.? আর এতো বড় স্টার এমন গেয়ো টাইপের বিহেভ করছেন কেন সেটাই বুঝতে পারছি না। মতলব কি.?

আরীব : এরোগ্যান্ট হলে সহ্য করতে পারবে তো মিস। আমার কোনো সমস্যা নেই। তুমি যেমনটা চাইবে আমি তেমন হতে পারবো।

সাদিয়া : তো এটাই আসল চেহারা। এতোক্ষন তো নটাংকবাজ আরীব ছিলেন। যাই হোক আমার পিছু নিয়ে লাভ নাই। আর আপনার মতো বড় স্টারের বউ হবারও শখ নেই আমার।

আরীব : কেন.? আমি কি দেখতে খারাপ নাকি ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড খারাপ? আমার বাবা একটা কলেজের প্রিন্সিপাল আমার ছোটবোন পড়াশুনা করছে। আর মা ডক্টর।

সাদিয়া : তাহলে তো বলতে হয় আপনার বউ এর একের ভেতর সব হওয়া উচিত। নাহলে মিলবে না। আর আমার এই রূপালী জগৎ ভালো লাগেনা।

আরীব : আচ্ছা এতো রেগে যাচ্ছো কেন.? আমরা বন্ধু হতে পারি না.?
সাদিয়া : অকে। বাট যাস্ট ফ্রেন্ড নাথিং এল্স।

আরীব : ( আল্লাহ আমার কপালে এই রাগি পেতনি ঠিক করে রাখলা.? আর মেয়ে পাওনি.? একে পটাতে পটাতেই তো বুড়ো হয়ে যাবো,, বিয়েশাদী করবো কবে.? ওদিকে মামনি দিনে ২৪বার বিয়ের কথা বলে। আমার মতো ইনোসেন্ট ছেলেকে এতো ঘোরাচ্ছো কেন.? ) ঠিক আছে বাই শুটিং এর সময় হয়ে গেছে। আমাকে যেতে হবে। কাল আসবা কলেজে.?

সাদিয়া : কেন ? না আসলে কি নতুন তামাশা করবেন.?
আরীব : তুমি কখনো ঠান্ডা মাথায় কথা বলতে পারো না.? কথায় কথায় রেগে যাও

সাদিয়া : হুম আসবো।

আরীব মুচকি হেসে চলে গেলো ওখান থেকে। সুমি রাগি চোখে সাদিয়ার দিকে তাকাতেই সাদিয়া ইয়ারফোন কানে ঢুকিয়ে গুনগুন করতে করতে চলে গেলো।

সুমি : এটা সত্যিই মেয়ে.? আরীবের মতো ছেলেকে বর থেকে ডিরেক্ট বন্ধু বানিয়ে দিলো.? এখন আবার নরমাল ভাবে গান গাইতে গাইতে চলে গেলো। মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি। ওর ভাইটা তো এতো নিরামিষ না তাহলে ও এমন হলো কেন আল্লাহই জানে।

???
আজ কুহুকে রাজ প্রপোজ করবে। ডেকোরেশন অলমোস্ট রেডি। কিন্তু কুহুর আসার নামই নেই। বিগত আধাঘন্টা ধরে রাজ রিসোর্টের সামনে পাইচারি করছে। ঠিক তখন বাইক নিয়ে আসলো কুহু। কুহুও আগে থেকেই আন্দাজ করেছিলো যে রাজ ওকে আজ প্রপোজ করবে। তাই গম্ভির ভাবে বাইক স্টান্ড করে ওর সামনে গেলো।

রাজ : এতো লেট হলো.?
কুহু : তোমাদের পুলিশ আর এজেন্টদের সামনে আসতে ভয় করে। প্রশ্ন করে মাথায় ডিম ভেজে উঠতে পারো।

রাজ : না মানে,,,
কুহু : মজা করছিলাম। চলো ভেতরে।

রাজ কুহুকে নিয়ে ভেতরে গেলো রিসোর্টের একটা সাইড পুরো বুক করেছে ও। আর সাইটটা সুন্দর করে বেলুন দিয়ে সাজিয়েছে। কুহু আড়চোখে রাজের দিকে তাকাচ্ছে। বেচারা ভয়ে ঘামছে। মনে হয়না আগে কখনো কোনো মেয়েকে ভালোবাসার কথা বলেছে,,, এতোদিন শুধু সবাইকে রিজেক্ট করে বেরিয়েছে,,, আজ ওর কি হবে সেটা নিয়েই দুশ্চিন্তা। কুহুকে চেয়ার এগিয়ে দিয়ে নিজেও বসলো কুহুর সামনে।

রাজ : আসলে তোমাকে একটা কথা বলার জন্য ডেকেছি। কিভাবে বলবো..?
কুহু : কি কথা.?

রাজ : I Love You.
কুহু চুপ করে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে। রাজ ভয়ে মাথা নিচু করে আছে। না জানি কি উত্তর দেবে কুহু। হঠাৎ কুহুর হাসির শব্দে মাথা তুললো রাজ। কুহু রাজের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে হাসছে। ওদিকে রাজের রাগ হচ্ছে ও কি জোক্স বলেছে যে এভাবে হাসছে কুহু.?

কুহু : এতো কঠিন শব্দটা কিভাবে বললে তুমি ..? আমি তো ভেবেছি বলতেই পারবে না। যাক বাবা অন্ততো বলতে তো পেরেছো,, এটাই অনেক। এবার চলো তোমার বাড়ি থেকে ঘুরে যাই। আর পাপার কাছে প্রস্তাব দিয়ো ঠিক আছে.?

রাজ : কিন্তু একটা কথা.?
কুহু : আবার কি.?

রাজ : রোজের কেসটা এখনো ক্লোজ হয়নি। ওটা এখনো আগের মতোই আছে। মেঘ কে বলেছো ব্যাপারটা.?

কুহু : মেঘের সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই। আর কেসটা ক্লোজ করে দাও। আমরা আমাদের মতো করে খুজবো।

রাজ : মেঘ পাগল হয়ে গেছে,,, এপর্যন্ত কতোগুলো খুন করেছে হিসাব রেখেছো.?

কুহু : ৯টা।
রাজ : আমি আর আরাভ অফিসিয়ালি হ্যান্ডেল করছি ঠিক আছে। কিন্তু ওর এখন মেন্টাল সাপোর্টের প্রয়োজন। তোমাকে ও নিজের বোনের মতো ভালোবাসে বিশ্বাস করে। তুমি অন্ততো ওর পাশে থাকো।

কুহু : আমার ভাই মেঘ অনেক আগেই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। এখন যে আছে সে রোদ। সাইকো মার্ডারার রোদ। যাকে রক্ষা করা আমার ডিউটি পাশে থাকা না।

[ এই ৬মাসে সবার জীবনের মতো রাজকুহুর জীবনও পাল্টে গেছে। রাজ একজন আন্ডারকভার এজেন্ট আরাভ রাজের ডিপার্টমেন্টেরই একজন। কিন্তু সেটা কেউই জানতো না। কুহু রাজকে নিজেদের রাস্তা থেকে সরানোর জন্য ওর এসিস্টেন্ট হয়ে জয়েন করে,, কিন্তু রাজ কুহুকে প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলে,, রাজ কুহুকে চারবছর ধরে ভালোবাসে,, মেঘের কাছ থেকে কুহুর ডিটেলস জানার সময় মেঘ সবটা ধরে ফেলে। তখন থেকেই মেঘ রাজ প্লানিং করে আরাভকে এজেন্ট বানায় আর কুহুকে একজন মাফিয়ার বন্ধু। সবকিছু প্লান মোতাবেকই চলছিলো মাঝ থেকে রোজের কেসটা সবাইকে একসুতায় জুরে দেয়। কুহু বুঝতে পারে যে সে রাজের প্রতি দূর্বল আর সেটার পরিনতি যদি মেঘরোজের মতো হয়য়.? সেজন্যই রাজকে নানাভাবে বুঝিয়েছে যে সেও রাজকে পছন্দ করে। যার এনকার্জেসের জন্য আজ রাজ কুহুকে প্রপোজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর কুহুও ব্যাপারটা তাড়াতাড়ি মেটানোর তাগিদে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু মেঘ ওর কি হবে.? ]

???
একটা স্কুলের অনুষ্ঠানে আজ গান গাইবে সাদিয়া। স্কুলটা প্রতিবন্ধীদের। সাদিয়া প্রায়ই এখানে আসে বাচ্চাদের সাথে গল্প করে,,গান গায়, নাচে, বাচ্চাদের জন্য গিফট আনে। স্কুলের পাবলিসিটির জন্যই আজ স্কুলটায় একটা ছোট ড্রামার আয়োজন করা হয়েছে। বাচ্চারাই করবে আর মিডিয়াতে সেটা টেলিকাস্ট হবে। সাদিয়াকেও গান গাওয়ার এবং থাকার জন্য ইনভাইট করেছেন হেডম্যাডাম।

সাদিয়া : ম্যাডাম তিনটা বাজে বাচ্চাদের রেডি করতে হবে না..?

ম্যাডাম : ওহহ তুমি এসে গেছে.? দেখো না আজই আমাদের একজন ম্যাডাম বাড়ি চলে গেছে। তার রিলেটিভ অসুস্থ। আমরা আটজন মিলে এতো বাচ্চাদের সামলাতে পারছি না। সবাই কোনো না কোনো দুষ্টুমিতে মেতে উঠছে। স্থিরই হচ্ছে না।

সাদিয়া : তাহলে.? ৩:৩০টায় মিডিয়ার লোক আসবে। ওদের তো রেডি করতে হবে।

ম্যাডাম : একটাই উপায় আছে।
সাদিয়া : কি ম্যাডাম.?
ম্যাডাম : তুমি।

সাদিয়া : বুঝতে পেরেছি কিন্তু কস্টিউম.? ক্লাসে আছে মেবি আমি এখনই যাচ্চ্ছি। ডোন্ট ওয়ারি ম্যাডাম এভ্রিথিংক উইল বি ফাইন।

— Itti si hansi Itti si khushi,, Itna sa tokda chand ka… Khowaab ke tinku se chal banale aashiyan , x2
সাদিয়া জোকার সেজে বাচ্চাদের সাথে খেলতে লাগলো। মাঝে মাঝে লুকাচ্ছে আর বাচ্চারা ওকে খুজছে।

— Dabe dabe paawoon se,, Aye hole hole Zindegi… Honthon pe ungli chadha ke,, hum taale laga ke, chal gumsum tarane chupke chupke gaaye..
সাদিয়া জোকারের কস্টিউমের ওপর বাচ্চাদের কস্টিউম পড়ে বাচ্চাদের দেখাচ্ছে,,, বাচ্চারাও ওর দেখাদেখি জামা পড়ছে।

— Aadhi Adhi baat pe aja dil ki yeh zameen,,, Thoda sa tera sa hoga thodi mera bhi hoga Aapna yeh aashiyan.
ছোট ছোট বাচ্চাদের জামা খুলে জামা পড়িয়ে দিচ্ছে সাদিয়া। তারপর নাচের কিছু স্টেপ করে নাচটা মনে করিয়ে দিচ্ছে। নাচটা আগেই শিখে নিয়েছিলো ও।

— Itti sii……..Aashiyan.
বাচ্চাদের নিয়ে ম্যাডামদের কাছে লাইন দিয়ে গেলো সবাই।। তারপর সব ম্যাডামদের নিয়ে নাচতে লাগলো।
[ শ্রেয়া ঘোষালের গান। বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন।]

ম্যাডাম : থ্যাংকইউ সাদিয়া। তুমি না থাকলে ওদের এতো তাড়াতাড়ি গোছানো যেতো না। নাচের স্টেপগুলোও রিভিশন হয়ে গেলো।

সাদিয়া : আপনি কিন্তু এসব বলে আমাকে পর করে দিচ্ছেন,, ম্যাডাম। আমি এখানে আসি কেন.? আপনাদের জন্য,, বাচ্চাদের জন্যই তো। তাহলে ওদের জন্য এটুকু করেছি তাতে আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে রিতীমত অপমান করছেন।

ম্যাডাম : শোনো মেয়ের কথা,, আমি নাকি ওকে অপমান করছি। আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে আমি তোমাকে অপমান করবো.?

সাদিয়া : এ মাসের ডোনেশনটা দাভাই নিজে, কাল এসে দিয়ে যাবে। আজ আনতাম কিন্তু আমার পার্সটা বাড়িতেই ভুলে ফেলে এসেছি।

ম্যাডাম : কোনো ব্যাপার না মামনি। তুমি তোমরা আমাদের স্কুলের জন্য যতটা করো ততটা করেই বা কে.? এবার তুমি রেডি হয়ে নাও তোমাকেও তো গান গাইতে হবে।

সাদিয়া : ওহ হ্যা। আমি রেডি হতে যাচ্ছি। এদিকটা ততক্ষন সামলে নিন। আর আপনারা রেডি হবেন না.?

ম্যাডাম : তুমি আসলে আমরা যাবো। নাহহলে এদের সামলাবে কে.? এরা তো সব তোমার সৈনিক। তুমি বলতে অজ্ঞান।

সাদিয়া : অকে। আই উইল বি ব্যাক সুন।

চলবে,,