তুমিময় অসুখ পর্ব-০১

0
5659

#তুমিময়_অসুখ
#পর্ব-১
#লেখা-ইশরাত জাহান ফারিয়া

—“বিয়ে করবি নাকি করবি না সেটা তুই ঠিক কর।না করলে আমি কি করবো জানিস?এক্ষুনি তোকে তুলে নিয়ে যাবো।”

—‘”আপনি এমন করছেন কেন ভাইয়া?আপনি কি কিছু উল্টোপাল্টা খেয়ে এসেছেন?”

“উনি রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, হুম খেয়ে এসেছি।আমি শুনেছি তুই নাকি আমাকে বিয়ে করতে চাস না?ফুপ্পি বললো তো।তুই নাকি বলেছিস আমি সুন্দর,তুই বাজে দেখতে তাই আমার সাথে তোকে মানাবে না ব্লা ব্লা ব্লা!”

“আমি উনার ভয়ংকর আগ্নেয়গিরির ভয়াবহ রুপ দেখে চুপসে গেলাম।কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না।উনি আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললেন, সেই জন্য।শুধু সেইজন্য আমি আমি ড্রিংকস করে এসেছি।আমি কতোটা কষ্ট পেয়েছি জানিস তুই?সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে সবাইকে নিয়ে তোর কাছে এসেছি আর তুই আমাকে রিফিউজ করার সাহস দেখালি?”

“আমি এবার উনার চিৎকার করে বলা কথা শুনে কেঁদে দিলাম।হাতের কব্জিতে চেপে ধরার কারণে হাত লাল হয়ে গিয়েছে।উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন।ঠাস করে দরজা লাগিয়ে আমার রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে গেলেন।আর আমি কাঁদছে কাঁদতে ভাবতে লাগলাম,কাল বিকেলের কথা!”

“ফ্ল্যাশব্যাক,কাল বিকেল!”

—“এই মেয়ে তুই কি আমার বউ?এই বাসায় আমার বউ থাকে।”

“মেইন দরজা খুলে কোনো ছেলের গম্ভীরমুখে বলা কথাটা শুনে আমি অবাক হয়ে তাকালাম। দেখলাম,লম্বাচওড়া-ফর্সা একটা ছেলে আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি রাগ লাগলো।কারণ এর আগে আমি কখনো এত সুন্দর ছেলে দেখিনি আর তার উপর এই অচেনা ছেলে প্রথম দেখাতেই তুই তুই করছে যা আমি পছন্দ করিনা আবার বউও ডাকছে।তাই আমি কিছু না বলে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম।তাঁর প্রশ্নের উত্তর দিলাম না।”

“নিজের প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে লোকটা বোধহয় রেগে গেলো।আমাকে ধমকে বললো,এই মেয়ে!কি বলছি শুনতে পাচ্ছিস না?কথা কি কানে যাচ্ছে না?”

“আমি ধমক শুনে কেঁপে উঠলাম।তোতলাতে তোতলাতে কোনোমত বললাম,আ…আমি জানি না!”

—“এটা বলতে এতো সময় লাগছে তোর?হাউ ফানি!তো তুই কি এই বাসায় কাজ করিস?”

“আমি চমকে উঠে বললাম,না না।আমি এই বাসার মেয়ে!”

“বলেই দৌড়ে চলে আসতে চাইলাম বাসার ভেতরে। কিন্তু লোকটা পথ আটকে দাঁড়ালো।সন্দিহান গলায় জিজ্ঞেস করলো,তোর নাম কি?”

“আমি মাথা নিচু করে মাথায় ঘোমটা দিতে দিতে বললাম,আনাইরা ইশতি ইরাম!”

“সামনে দাঁড়ানো লোকটা অনেক লম্বা।আমার কথা বোধহয় উনি শুনতে পাননি।তাই মাথা নিচু করে আমার মুখের সামনে এনে বললো,শুনতে পাইনি।আবার বল!”

“আমি এবার একটু জোরেই বললাম,আমার নাম ইরাম!”

“ছেলেটা চমকে উঠলো।হঠাৎ বাঁকা হেসে আমার দিকে এগুতে এগুতে বললো,তুই-ই ইরাম?আমার ছোট্ট বউ,আই কান্ট বিলিভ দিস!”

“এতক্ষণে আমার হুঁশ হলো।আমি চমকে উঠে বললাম,কিসব আবোলতাবোল বলছেন?আমি আপনার বউ হতে যাবো কোন দুঃখে?আজব!”

“উনি আমাকে হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরলেন।আমি আচমকা ফ্রিজড হয়ে গেলাম।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কোনো ছেলে যে আমায় জড়িয়ে ধরে রেখেছে এটা যদি আমার বাসার কেউ জানতে পারে,তাহলে আমি শেষ।সেজন্য ছেলেটাকে ঠেলে সরাতে চাইলাম,কিন্তু পারলাম না।কিছুক্ষণ পর উনি নিজেই আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার কপালে চুমু দিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে পড়ে ফুপ্পা আব্বু,ফুপ্পি আম্মু বলে চেঁচাতে লাগলেন।আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।এর মধ্যেই উনার সাথে সাথে আরও বেশ ক’জন বাসার ভেতরে ঢুকে পড়লো।আমি পর্দার একপাশে সরে দাঁড়িয়ে দেখলাম,একটা মহিলা,একটা লোক,দুটো মেয়ে,দুটো ছেলে।আর তাঁদের পরপরই একটা অতি বৃদ্ধা মহিলা আর আরও একটা মাঝবয়েসী মহিলা আসলো।ততক্ষণে এই লম্বু লোকের চিৎকারে আমার আব্বু-আম্মু সহ বাসার সবাই ড্রইংরুমে হাজির।এই উটকো ঝামেলাওয়ালা একগাদা লোকজন দেখে আব্বু আর আম্মুর খুশির অন্ত যেন রইলো না।সবাইকে সোফায় বসালো।একেকজনের খুশি দেখার মতো বিষয়।”

“আর এদিকে হ্যাবলার মতো আমি ভাবতে লাগলাম এসব কি হচ্ছে?হঠাৎ করে এই ছেলে দলবল নিয়ে কি আমাদের বাসায় ডাকাতি করতে এসে আমার ফ্যামিলি মেম্বারদের কি কালো জাদু করে বশ করেছে নাকি?কিন্তু দেখে তো বেশ ভদ্র হাসিখুশি পরিবার মনে হচ্ছে!”

“আম্মুর গলা শুনতে পেলাম।আব্বু আম্মুকে বললো,আমার মেয়েজামাইকে শরবত এনে দাও ফাতেমা!”

“এ কথা শুনে লম্বু ছেলেটা বললো,আরে এসব পরে হবে। আমি টায়ার্ড না,ইনফেক্ট কেউই টায়ার্ড না আমরা।এখন তোমরা এখানে বসো আর আড্ডা দাও!ইনফেক্ট এতো বছর পর ভাই-বোনের দেখা বলে কথা!আব্বু তুমি তোমার বোনের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার চান্স পেয়ে গেলে!”

“আম্মু এ কথা শুনে ছেলেটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,হবু মেয়ের জামাই বলে কথা।আমি কি খালিমুখে বসিয়ে রাখতে পারি তোকে?আমার কি সাধ আহ্লাদ নেই?”

“আম্মুর কথা শুনে উনি কিছু একটা ভাবলেন।তারপর বললেন,রাইট রাইট!ঠিক আছে যাও।তোমার হাতের শরবত খেয়ে দেখি কেমন মজা!”

“আম্মু হেসে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন।আর আমি পর্দার ফাঁকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই একদল লোকের অদ্ভুত কান্ড দেখছিলাম।সবাই মিলে সোফায় বসে হৈচৈ জুড়ে দিয়েছে।মেয়ে দুটো লম্বা লোকটাকে বললো,ভাইয়া ইরাম কোথায় দেখতে পাচ্ছি না তো!”

—“দেখিসনি তোরা?আমি কিন্তু এসেই দেখে ফেলেছি।আমার বউ তো সেই হট।দরজা তো ও-ই খুলেছে।আমি জড়িয়ে ধরাতে লজ্জ্বা পেয়ে পালিয়ে গিয়েছে।”

“বৃদ্ধা মহিলাটি উনার উদ্দেশ্যে বললেন,দাদুভাই এটা কি তোমার অস্ট্রেলিয়া পেয়েছো যে বাসায় এসেই জড়িয়ে ধরবে?এরা হচ্ছে বাঙালি মেয়ে।লজ্জ্বাই ওদের ভূষণ।তুমি কিন্তু কাজটা ঠিক করোনি।”

“উনি হালকা হেসে চোখ টিপে বললেন,বাট দাদুমা!আমার হটি বউকে লজ্জ্বা পেলে ঠিক তোমার মতো লাগে!যাই লজ্জ্বাবতীকে খুঁজে নিয়ে আসি।”

“বলেই উঠে দাঁড়ালো।আমি দেখলাম লোকটা ভীষণ সুন্দর।ইন করা অফ-হোয়াইট শার্ট আর কালো প্যান্টে উনাকে কি চমৎকার লাগছে।উনাকে আমার এদিকে এগিয়ে আসতে দেখেই আমি একদৌড়ে রান্নাঘরে আম্মুর কাছে চলে গেলাম।”

“আমি ইরাম।বাবা মায়ের আদরের মেয়ে।তবে ভাইয়া ইরাদ আর ছোট বোন ইলহামও আছে।এক্ষুনি দল বেঁধে যারা আমার বাসায় এলো,আমি মিন করছি ওরা আমার মামার পরিবার।আর লম্বা উনিই হয়তো আমার মামার ছেলে অভ্র আহমেদ ফারবিন। যার সাথে আব্বু-আম্মু আমার বিয়ের কথা বলেছিলো। মামাদের অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরার কথা ছিলো,তবে সেটা যে আজ।তা আমি জানিই না।আমি তো ভাবতেই পারছি না,আমার মতো একটা সাদাসিধা মেয়েকে এরা এতো পছন্দ করলো কেন?এমন হ্যান্ডসাম ছেলে তাদের আর তার সামনে আমি তো চুনোপুঁটি। নিজের দিকে তাকিয়ে আমার নিজেকে এই মুহূর্তে ফকিন্নি মনে হচ্ছে।ঢোলাঢালা একটা সালোয়ার আর লম্বা কামিজ আমার পরণে,আর যে জামাটা আজ পরেছি সেটাও আবার সাইড দিয়ে ছেঁড়া।ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখায় দেখা যাচ্ছেনা।রাগ হচ্ছে প্রচুর।অন্যদিন বাসায় ভালো কাপড়চোপড় পরে থাকি আর আজ?আজ বাসায় একগাদা মানুষ এসেছে আর আমি ফকিন্নির বেশ ধরে বসে আছি।ছিহ।”

“রান্নাঘরে ঢুকতেই আম্মু আমাকে বললো,কি তুই?এতক্ষণ কোথায় ছিলি?বাসায় তোর মামারা এসেছে আর তুই লাপাত্তা!”

—“তোমরা তো বলোনি যে,উনারা আজ আসবে।”

—“বলিনি এমনি।তোকে সারপ্রাইজড করতে চেয়েছিলাম।”

—“এটা কোনো সারপ্রাইজ আম্মু?শুনলাম আমাকে ওরা বউ বউ করে ডাকছে।আচ্ছা!তুমি বলো,মামাতো ভাইয়ের সাথে কিভাবে কারো বিয়ে হয়?”

“আম্মু আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালেন।বললেন,বেশি কথা না বলে আমাকে হেল্প কর,কাজে দেবে।”

—“ওহহ,আম্মু আমার একটা কাজ সেরে আসি।বলেই কাজ ফাঁকি দেবার মতলবে যে-ই না রান্নাঘর থেকে লাফিয়ে বেরুলাম,ঠিক তখনই কারো সামনে গিয়ে পড়লাম।”

“চোখ দুটো গোল গোল করে উপরে মুখ তুলে তাকাতেই,অভ্র ভাইয়াকে দেখতে পেলাম।উনি আমাকে দেখে বাঁকা হেসে আমার হাত ধরে টানতে টানতে ড্রইংরুমে বসা একদল লোকের সামনে নিয়ে যাবার জন্য পা বাড়ালেন।আর আমি ছেঁড়া জামার কথা মনে করে মনে মনে চুপসে গেলাম।হাঁটার ফলে এবার জামার ছেঁড়া দিকটা এবার সামনে এসে পড়লো।অভ্র ভাইয়ার চোখ আমার জামার দিকে।উনি দাঁড়িয়ে পড়লেন।ছেঁড়া অংশটা দিয়ে আমার ফর্সা পেটের তিলটা দেখা যাচ্ছে!উনি একদৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইলেন!আনমনে বলে উঠলেন,ইউ আর সো হট ইরাম….!আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম, জামার ছেঁড়া দিকটা ওড়না দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করতেই উনি হু হা করে হেসে বললেন,এটা আর ঢাকা যাবে না,তোর পেটের তিলটা কি সুন্দর রে ইরাম!চুমু খেতে ইচ্ছে করছে রে!”

চলবে