তুমিময় আসক্তি পর্ব-৪৩

0
832

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“৪৩”(এক্সট্রা পার্ট )

–” তোমার কোথাও লাগেনি তো? ঘোর লাগা কন্ঠে বলে উঠে রুদ্র। দোলা মায়াবী দৃষ্টিতে রুদ্রকে খুব কাছ থেকে দেখছে। এর মাঝে দোলার নাকে বিশ্রী একটা গন্ধ লাগে। নাক মুখ ছিটকে দোলা মাথাটা পেছনে হেলানোর চেষ্টা করে। রুদ্র ভ্রু কুচকে দোলার দিকে তাকিয়ে আছে৷ কাছে থেকে দোলাকে আরো সুন্দর আর আকর্ষণীয় লাগছে রুদ্রর কাছে।

– আপনি ড্রিংক করেছেন? কৌতুহল নিয়ে বলে দোলা। দোলার কথায় রুদ্র ঝটপট উঠে যায় দোলার উপর থেকে। রুদ্র উঠতেই দোলা উঠে ওড়না ঠিক করতে থাকে।
— কি হলো বলুন? আপনি ড্রিংক করেছেন কেনো?
– হ্যাঁ আমি ড্রিংক করেছি। বেশ করেছি তাতে তোমার কি? আমার যা খুশি তাই করবো। আমি তো তোমার কেউ না। তাই যা করি না কেনো তাতে কি যায় আসে? কথাটা হেলতে দুলতে বলে রুদ্র। কথা শেষ করতেই পড়ে যেতে যায় আবার। দোলা ধরে নেয় রুদ্রকে।
– ছাড়ো আমাকে। ধরবে না একদম। তেজী কন্ঠে বলে রুদ্র। দোলা বিমুঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রুদ্রর কথায়।

— কারো সাহায্য লাগবে না আমার। তুমি তো চলে যাবে আমাকে ছেড়ে। কি লাভ মায়া বাড়িয়ে। যাও না যাও। কাউকে লাগবে না আমার। আমি একাই নিজেকে সামলাতে পারি। একাই তো থাকতে হবে কথাগুলো বলতে বলতে রুদ্র সামনে এগুই। কিন্তু বেশিদুর যেতে পারে না রুদ্র। দু কদম এগুতেই হুমড়ি খেয়ে পড়তে যায় আবার। দোলা ছুটে এসে ধরে আবার। ছলছল চোখে রুদ্রর দিকে তাকায় দোলা৷ ঠোঁট দুটি কামড়ে ধরে কান্না আটকানো বৃথা চেষ্টা। রুদ্রর কথা গুলো খুব বাজে ভাবে আঘাত করছে দোলাকে।
– দেখুন আমি.. দোলাকে শেষ করতে না দিয়ে রুদ্র নুয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে হ্যাঁ জানি৷ তোমার ডিভোর্স চাই। মুক্তি চাও আমার থেকে। হ্যাঁ দিয়ে দেবো। জোর করে তো আর কাউকে রাখা যায় না। চাইনা রাখতে জোর করে। চলে যাও তুমি। আমার থেকে অনেক দূরে যাও। আমি তো তোমাকে কখনো ভালো রাখতে পারিনি। শান্তি দেয়নি৷ আমার কাছে কেনো থাকবে? অভিমানী স্বরে বলে রুদ্র। কিন্তু কথা গুলো বলতে গিয়ে তার গলা ধরে আসছিলো কান্নাতে।

— দোলা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা৷ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। এক হাতে রুদ্রকে ধরে আরেক হাতে ওড়নার একপাশ শক্ত করে ধরে চোখের পানি ফেলছে। রুদ্রর ভীষণ খারাপ লাগছে দোলার চোখে পানি দেখে। নেশার ঘোরে থেকেও দোলার কান্না ভীষণ ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে সে। হয়তো প্রিয় মানুষ বলে। কিংবা ভালবাসা টান একে বলে।

— দোলা রুদ্রকে ছেড়ে চলে আসতে গেলে রুদ্র দোলার একহাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নেয়। দোলা রুদ্রর বুকে এসে পড়ে। খোলা চুল দোলার পুরো মুখ জুড়ে বিচরণ করে। মাদক চাহনি নিয়ে রুদ্র দোলার সে এলোমেলো চুলের মাঝে থেকে দোলার মুখ দেখছে। অনেক দারুণ লাগছে দোলাকে এইভাবে। কান্নার ফলে নাক লাল টকটকে হয়ে আছে। রুদ্রর ইচ্ছে করে টুপ করে গিলে ফেলতে দোলার নাকটাকে। এত সুন্দর লাগছে দেখতে দোলাকে এই মুহূর্তে এইভাবে যা রুদ্র প্রকাশ করতে পারে না।

-” দোলা তো অবাক চাহনি নিয়ে তাকিয়ে। চোখ মুখে উপচে পড়া কৌতুহলের ভীড়। রুদ্রর সাথে আষ্টেপৃষ্টে থাকায় এক অন্য রকম অনুভূতির সঞ্চালন।
– কোথায় যাচ্ছো আমাকে রেখে? নেশাতুর কন্ঠে বলে রুদ্র৷ রুদ্রর মাদক কন্ঠের কথায় দোলা যেনো কেঁপে উঠে। পরম আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসে তার। রুদ্র ফু দিয়ে দোলার সামনে থাকা সব চুল গুলো সরানোর চেষ্টা করে। রুদ্রর এমন কাজে দোলা আরো শক্ত করে চোখ বন্ধ করে রাখে সাথে দুইহাতের মুঠোয় ওড়নার দুই অংশ শক্ত করে ধরে। রুদ্র মুচকি হাসে দোলার কান্ডে।

–” এত সুন্দর কেনো তুমি? কেনো এত মায়া তোমার মধ্যে? রুদ্র বলা প্রতিটি কথা দোলার মধ্যে শিহরণ জাগিয়ে তোলে। চট করে চোখ খুলে বড় বড় চোখে রুদ্রকে দেখে।

– এত সহজ আমাকে ছেড়ে যাওয়া? আমার থেকে দূরে থাকা। তুমি বললে আর আমি তোমাকে ছেড়ে দিলাম? ছাড়ার জন্য তো ধরেনি এই হাত দুটো। দোলার দুই হাত ধরে বলে রুদ্র। দোলা যেনো আস্তে আস্তে শকের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। একের পর এক ঝটকা দোলা নিতে পারছে না। দোলা জানে রুদ্র নেশায় আছে তাই এমন করছে। সজ্ঞানে থাকলে হয়তো করতো না। কিন্তু যেগুলো বলছে সেগুলো কি নেশার ঘোরে বলা কথা নাকি সত্যি মনের কথা? দোলা কৌতুহল দমিয়ে রুদ্রকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে যায় আবার।

— I love You Dola. I love u very much. হঠাৎ রুদ্রর মুখে ভালবাসার কথা শুনে একদম জমে যায় দোলা৷ থেমে যায় তার সঞ্চালিত হওয়া অনুভূতি’রা। চলন্ত শ্বাস প্রশ্বাস যেনো থেমে যায় কিছু সময়ের জন্য। চোখে তার খুশির অশ্রু টলমল। পুরো শরীর যেনো একটা কাঁপুনি দিয়ে উঠে দোলার। আনন্দে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে যেনো দোলা। এক কথায় দোলা বাকরুদ্ধ হয়ে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্র কথাটা বলে মুচকি হাসি মুখে ঝুলিয়ে রেখেছে।

— কি বললেন আপনি? আরেকবার বলুন? কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে দোলা। রুদ্র এবার দোলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে! আমি আমার পিচ্চি বউ’টাকে অনেক ভালোবাসি। তার হাসি মুখ, কান্নারত মুখ, রাগী লুক, অভিমানী দৃষ্টি দুষ্টু হাসি সব কিছুকে আমি ভীষণ ভাবে ভালবাসি। অনেক ভালবাসি আমি তোমাকে দোলা। রুদ্রর মুখে এতবার ভালবাসার কথা শুনে দোলা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। রুদ্রকে দুইহাতে শক্ত করে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। এটা কোনো দুঃখের কান্না নয়৷ অনেক অনেক খুশির কান্না। দীর্ঘ দিনের জমে থাকা অপুর্ণ আশা পুরণের কান্না। প্রিয় মানুষটার থেকে ভালবাসি কথাটা শুনে আবেগপ্রবণ হয়ে কান্না।

— আপনি সত্যি বলছেন ছোট সাহেব। আপনি আমাকে ভালবাসেন? আমাকে আর দূরে সরিয়ে দেবেন না তো? রাতের আঁধারের সাথে আপনার ভালবাসাটাও বিলীন হয়ে যাবে না তো দিনের আলোতে? নেশা কেটে গেলে ভুলে যাবেন না তো সব? বলুন না ছোট সাহেব? সত্যি আমাকে ভালবেসে যাবেন এইভাবে। জ্ঞানহীন বা সজ্ঞানে আমাকে ভালবাসবেন বলুন না ছোট সাহেব। দোলা পাগলের মতো বলতে থাকে কথা গুলো। রুদ্র যেনো খুব করে উপভোগ করছে দোলার ছটফটানি। মুগ্ধকর চাহনিতে মাদকতার আনন্দ তার মধ্যে।

–” চুপ করে থাকবেন না ছোট সাহেব। উত্তর দিন। ভালবাসবেন তো সারাজিবন। আমিও যে আপনাকে ভালবাসি ভীষণ। আপনি ছাড়া আমার ভালবাসা অস্তিত্বহীন। আমার মন প্রাণ জুড়ে শুধুই আপনি। জানেন কতদিন অপেক্ষা করেছি এই একটা কথা শোনার জন্য। আপনার মুখে ভালবাসি কথাটা শুনব বলে কত প্রহর গুনেছি। অবশেষে আমার ইচ্ছেটা পূরণ হলো। আমি সত্যি অনেক খুশি আজ। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সকল সুখ এসে আমার কাছে ধরা দিয়েছে। আমাদের সন্তান আমাদের ভালবাসার সাক্ষী হয়ে থাকছে এর থেকে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না আমার কাছে। দোলা মন উজাড় করে কান্না করছে আজ। সকল আক্ষেপ, দুঃখ, কষ্ট গ্লানি আজ এই কান্নার মধ্যদিয়ে ধুয়ে দিতে চাই দোলা।

— রুদ্র দোলাকে চমকে দিয়ে কোলে তুলে নেয়। দোলা চরম অবাক হয়ে রুদ্রর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকায়।
– কি..কি করছেন ছোট সাহেব। নামান আমাকে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে দোলা। চোখ মুখে তার বিষ্ময় ভীষণ।
রুদ্র মৃদু হেসে দোলাকে শুয়ে দেয় খাটে৷ তারপর সেও দোলার উপর শুয়ে পড়ে। দোলার বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করছে। অজানা ভয় গ্লাস করছে ক্রমশ। সাথে আছে একরাশ লজ্জা।

-; হুস আঙ্গুল দিয়ে ইশারায় চুপ করতে বলে রুদ্র। দোলা ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে থাকে। রুদ্র ঠিক কি করতে চাইছে দোলা বুঝে উঠে না। রুদ্রর মুখটা দোলার কাছাকাছি নিয়ে আসতে লাগলে দোলা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে সাথে রুদ্রকে শক্ত করে চেপে ধরে। বেশ কিছুখন দোলা চোখ বন্ধ করে থাকার পর রুদ্রর কোনো সাড়াশব্দ পায়না। তাই কৌতুহল নিয়ে চোখ খুলতে রুদ্র উচ্চ স্বরে হেসে উঠে। এতে দোলা মুখটা গোমড়া করে অন্যদিকে তাকায়৷ রুদ্র দোলার ঘাড়ে মুখ ডোবায়। দোলা কেঁপে উঠে রুদ্রকে আরো শক্ত করে ধরে।
— তোমাকে খুব করে ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে আজ দোলা রাণী। অনেক আদর করতে ইচ্ছে করছে তোমায়৷ রুদ্রর ফিসফিস করে বলা কথা দোলাকে উন্মাদ করে দেয়। লজ্জায় আবৃত করে রাখে দোলাকে৷ মুচকি হেসে একহাতে মুখ ঢাকে৷ আর রুদ্র এখনো দোলার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে আছে৷ মিনিট দুই যেতে দোলা রুদ্রর কোনো ভাঁজ না পেয়ে মাথা তুলে দেখে রুদ্র ঘুমিয়ে পড়েছে৷ রুদ্র এতখন অনেক কষ্টে চোখ খুলে রেখেছিলো৷

–” রুদ্রর কাজে দোলা অবাক হয় সাথে মৃদু হাসি আসে মুখে৷ এরপর রুদ্রকে ভালো ভাবে শুয়ে দিয়ে কিছুখন রুদ্রর ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে। রুদ্রর চুল গুলো নিয়ে এলোমেলো করে দেয় দোলা। এরপর আপন মনেই হেসে উঠে। কি করছে একা একা নিজেও জানে না দোলা। চুল গুলো আবারও গুছিয়ে দিয়ে রুদ্রর বুকে মাথা রাখে । অনেক শান্তি লাগছে আজ দোলার৷ রুদ্রর বুকে সব চেয়ে শান্তি স্থান মনে হচ্ছে তার। এখনো সব কিছু স্বপ্নের মতো লাগছে দোলার কাছে৷ যদিও জানে না কাল রুদ্রর ঘুম ভাঙার পর রিয়াকশন কি হবে তারপরও রুদ্রর বলা ভালবাসি কথাট যথেষ্ট দোলার জন্য।

–” আজকের সকালটা যেনো অন্য রকম। ঝলমলে রোদে মুখরিত সব কিছু৷ পাখিদের কিচিরমিচির শব্দটাও দ্বিগুণ হয়ে কানে আসছে রুদ্রর৷ দক্ষিণা হাওয়ার মাতাল করা অনুভূতি। রুদ্র চোখ খুলতেই আবার বন্ধ করে ফেলে চোখ। বুকের উপর ভারী অনুভব হওয়াতে আবারও চোখ খোলা তার৷ দোলা রুদ্রকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে বেবি ফেস করে। দোলাকে তার বুকে ঘুমাতে দেখে রুদ্র ভীষণ রকম অবাক হয়ে তাকায়। চমকানো চোখে দোলাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে৷ সকাল সকাল এমন একটা সারপ্রাইজ পাবে ভাবিনি রুদ্র৷ আপনাআপনি ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। দোলার ঘুমন্ত ফেস দেখে রুদ্রর মনে একটা ইচ্ছে জাগ্রত হয়৷ খুব করে লোভ হতে থাকে ইচ্ছেটা পূরণ করার৷ রুদ্র দেরি না করে দোলার কপালে একটা ভালবাসার পরশ ছুঁয়ে দেয়। এতে দোলা হাল্কা নড়েচড়ে উঠে। দোলাকে নড়ে উঠতে দেখে রুদ্র খানিকটা ভয় পেয়ে যায়।
–” Good morning. ঘুমন্ত কন্ঠে বলে উঠে দোলা৷ সদ্য ঘুম থেকে উঠা ভাঙা কন্ঠে বলা Good morning কথাটা রুদ্রকে যেনো ভেতর থেকে নাড়িয়ে দেয়। মাদকতায় ছড়িয়ে যায় চারিপাশ৷ তবে রুদ্র কনফিউজড ভীষণ ভাবে৷ কথাটা দোলা কি ঘুমের মধ্যে বলল তাকে নাকি সজ্ঞানে। রুদ্রর কনফিউশান দূর করতে দোলা চোখ খুলে মুচকি হেসে বলে ঘুম হলো তাহলে আপনার?
— রুদ্র বেচারা অনেক শকড৷ হঠাৎ দোলার এমন বিহেভ ঠিক হজম হচ্ছে না৷ এরপর রুদ্রর মনে হয় সে ঘরে আসলো কিভাবে? সে-তো লেকের পাশে ছিলো। তারপর রাজের কথা মাথায় আসতে সব বুঝে যায়৷ রুদ্র যে নেশা করেছিলো কাল এটাও মনে পড়ে ।

— তার মানে কি আমি কাল রাতে নেশার মধ্যে দোলাকে কিছু বলেছি। যার জন্য দোলা আর আমার মধ্যে সব ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু কি বলেছি আমি? আচ্ছা আমি আবার কোনো ভুল করে ফেলিনি তো কথাটা ভাবতেই রুদ্র নিজের দিকে তাকায় এরপর দোলার দিকে তাকায়। রুদ্র নিজেকে দেখে একটা স্বস্তি শ্বাস ছাড়ে। নাহ সব ঠিক আছে। কোনো ভুল করিনি এবার৷ এরপর রুদ্র কৌতুহলী হয়ে দোলার দিকে তাকায়। দোলা খুব ইঞ্জয় করছে রুদ্রকে এমন ভাবে দেখে৷ দোলা জানে রুদ্র দোটানায় আছে। তার কিছু মনে নেই।

–” চলবে…