তুমিময় আসক্তি ২ পর্ব-১২+১৩

0
368

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“১২”

–” রুদ্র আর দোলা কাছাকাছি চলে আসছে। ওদের চাইলেও দূরে করা সম্ভব না এখন। তুমি বলেছিলে দোলা আমার হবে। তুমি দোলাকে আমার কাছে নিয়ে এসে দেবে! কিন্তু কি করলে তুমি? দোলা কবে হবে আমার? রুদ্র কখনোই দোলাকে ছাড়বে না রেগে বলে কথাগুলো সামির।
– সামনে থাকা ব্যক্তিটি সামিরের কথায় মুচকি হাসে। তাই দেখে সামির আরো রেগে যায়।
– আমার কথায় তোমার হাসি পাচ্ছে। আমার অনুভূতি নিয়ে মজা করছো তুমি? আমারই ভুল ছিলো তোমাকে ভরসা করা। তুমি কোনো কাজের নও এটা আমার আগেই ভাবা উচিত ছিলো। সামিরের কথায় ব্যক্তিটি ভীষণ রেগে যায় এবার। ক্রোধান্বিত হয়ে লাল বর্ণ চোখে তাকায় সামিরের দিকে।
– শাট আপ সামির। কি বাজে বকছো? আমি যখন বলেছি দোলা তোমার হবে মানে দোলা তোমার হবে। আমাকে ভরসা করা ছাড়া তোমার কাছে দ্বিতীয় কোনো অপশন নেই খুব ভালো করে জানো সেটা তুমি।
– ও আচ্ছা। তুমি যখন বুঝেই গিয়েছো তাহলে কেনো দোলাকে এনে দিচ্ছো না আমার কাছে। আর কতদিন আমি ওই রুদ্রকে টলারেট করব দোলার সাথে। ও দোলাকে ভালো থাকতে দেয়না৷ কিভাবে অত্যাচার করে জানো না তুমি? দেখো আমি আর পারছি না এইভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে৷ যদি তুমি কিছু না করো তবে এবার আমি আমার কাজ করবো। দোলাকে নিয়ে আসবো আমার কাছে সে -যেভাবেই হোক।
– শব্দ করে হেসে উঠে ব্যক্তিটি। তাই দেখে সামির ভ্রু কুচকে তাকায়।
– তোমার কি মনে হয় সামির! তুমি বলবে আর দোলা সুড়সুড় করে তোমার কাছে চলে আসবে? তাছাড়া কেনো আসবে দোলা তোমার কথায়? তুমি দোলাকে ভালোবাসো কিন্তু দোলা তোমাকে নয়৷ দোলা তোমাকে জাস্ট ফ্রেন্ড ভাবে এর বাইরে কিছু নয়। হয়তো ভুলে গিয়েছো তুমি দৃঢ় কন্ঠে বলে ব্যক্তিটি। সামির অসহায় চোখে তাকায়।
– শুনো সামির! সময় চলে এসেছে দোলাকে রুদ্রর থেকে আলাদা করার। রুদ্র দোলাকে ছাড়বে না কিন্তু দোলা! সে অনায়েসে রুদ্রকে ছেড়ে চলে আসবে। আর সে রাস্তাটা প্রশস্ত করতে হবে আমাদের। দোলা রুদ্রকে কখনোই ভালোবাসেনি। হয়তো রুদ্রকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে কোনো কারণে। কিন্তু রুদ্রর প্রতি দোলার এতটুকু মায়া,ভালোবাসা কাজ করে না৷ আর সেটাও রুদ্রর জন্য। আমাদের এখন দোলাকে এটা বোঝাতে হবে রুদ্র তার জন্য কখনোই ঠিক ছিলো না। রুদ্র ভালো মানুষ নয়। শুনো সামির! আমি তোমাকে যা বলেছি তাই করো এবার। দোলাকে সবটা জানাও। প্রমাণ গুলো দেখাও। তাহলে দোলা রুদ্রকে আরও আরও ঘৃণা করবে। রুদ্রর মুখও দেখতে চাইবে না। আর তখন রুদ্র আর দোলা আলাদা হয়ে যাবে। আর তুমি দোলাকে খুব সহজে পেয়ে যাবে আর আমার কাজও স্বার্থক হাসি রেখে বলে ব্যক্তিটি। সামির গভীর ভাবনায় পড়ে যায়।

— বিকেলের দিকে! রুদ্র বারান্দায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। রুদ্র আজ সারাদিন বাড়িতেই আছে। ঘরে বসেই অফিসের কাজ করেছে। দোলা আজ রুদ্রকে এড়িয়ে এড়িয়ে চলেছে। রুদ্র কথা বলতে চাইলেও দোলা পাত্তা দেয়না রুদ্রকে। রুদ্রর প্রতি রাগ,ক্রোধ কোনোটাই কমেনি দোলার। রুদ্র হতাশ হয় দোলার বিহেভে। দোলার যে রুদ্রর প্রতি এক পাহাড় সমান অভিমান জমা হয়েছে সেটা রুদ্র উপলব্ধি করতে পারে। দোলা আজ খুব একটা দরকার ছাড়া ঘরেও আসেনি। বিকেলের দিকে রুদ্রর কফিটাও একজন সার্ভেন্ট দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। রুদ্র কফির মগে চুমুক দেয় আর ল্যাপটপে কাজ করে। এমন সময় রুদ্রর মনে পড়ে গতরাতের ওই ছায়ার কথায়৷ যেটা রুদ্রকে দেখে সরে গিয়েছিলো। রুদ্র প্রথমে মনের ভুল ভাবলেও এখন সেটা ভুল মনে হয়না তার কাছে। রুদ্র কৌতুহলী হয়ে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ চেক করে গতরাতের। রুদ্রর বাড়ি সম্পুর্ণ সিসি ক্যামেরা দ্বারা সুরক্ষিত আছে। তাই রুদ্র সহজেই জানতে পারবে গতরাতে তার দেখা ভুল ছিলো নাকি সঠিক।

— সিসি ক্যামেরা ফুটেজ অন করতেই রুদ্রর চোখ কপালে উঠে যায়। কারণ তার মনের ভুল ছিলো না।সত্যি কেউ একজন এসেছিলো সেখানে। তবে যে এসেছিলো তার মুখ ঢাকা ছিলো একটা কালো চাদরে। একটু পর রুদ্র খেয়াল করে দোলাও বের হয় সে রাতে। এটা দেখে রুদ্র চমকানো চোখে তাকিয়ে থাকে ল্যাপটপের দিকে।
– দোলা এত রাতে বাইরে গিয়েছিলো! কিন্তু কেনো? তাহলে কি ওই লোকটা দোলার কাছে এসেছিলো? দোলা কি কোনো ভাবে চিনে এই ব্যক্তিটিকে? রুদ্র ভাবনা চিন্তা ছেড়ে আবারও ল্যাপটপে চোখ রাখে।
– দোলা সদর দরজা থেকে বের হয়ে বাইরে যেতেই সব কালো হয়ে আসে৷ রুদ্র আর কিছু দেখতে পাইনা। যার মানে কেউ ইচ্ছে করে সেখানকার সিসি ক্যামেরাটা আড়াল করেছে। যার ফলে ওইখানের আর কিছু রেকর্ড হয়নি সিসি ক্যামেরা ফুটেজে।

– রুদ্রর মধ্যে আবার রাগ,ক্রোধ, জেদ হিংস্রতা দেখা দেয়। দোলার প্রতি সন্দেহ বেড়ে যায়। রাগে চোখ মুখ লালাভ হয়ে আসে।
– তার মানে দোলা ইচ্ছে করে নিচে ছিলো রাতে। যাতে এই ব্যক্তিটির সাথে দেখা করতে পারে। কিন্তু কে এই ব্যক্তি? রুদ্র আবারও দেখে ফুটেজটা। রুদ্র বোঝার চেষ্টা করে কে হতে পারে এই ব্যক্তিটি। রুদ্র ওই ব্যক্তিটির হাতের দিকে খেয়াল করে দেখে সামিরের ঘড়ি মতো একটা ঘড়ি পড়া এই ব্যক্তিটির হাতে। রুদ্র চমকে উঠে। রুদ্র জুম করে দেখে এটা সামিরেরই ঘড়ি। আর ব্যক্তিটিও সামির। রুদ্র ক্রোধান্বিত স্বরে দোলাকে ডাকে। দোলা রত্না চৌধুরীর সাথে গল্প করছিলো নিচে৷ হঠাৎ রুদ্রর এমন চিৎকার করে ডাকে ঘাবড়ে যায়৷
– রুদ্র ঘরের মধ্যে এসে পায়চারি করছে আর দোলার আসার অপেক্ষা করছে।
– রুদ্রর ডাকে দোলা ঘরে আসে বিরক্ত নিয়ে। দোলা ঘরে আসতেই রুদ্র রাগী লুক নিয়ে তাকায় দোলার দিকে। দোলা বিস্ময় নিয়ে তাকায় রুদ্রর দিকে। হঠাৎ এমন বিহেভের মানে বুঝতে পারে না দোলা।
— কি হয়েছে? ডাকলেন কেনো আমায়? অভিমানী স্বরে বলে দোলা।
– গতরাতে কে এসেছিলো? কোনো রকম ভণিতা ছাড়াই বলে রুদ্র। দোলা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে কে এসেছিলো মানে? কার কথা বলছেন?
– কার কথা বলছি বুঝতে পারছো না? বাকি বুঝেও বুঝতে চাইছো না? তুমি ইচ্ছে করে গতরাতে নিচে ছিলে যাতে তুমি ওই ছেলেটার সাথে দেখা করতে পারো। রুদ্র সামিরের নাম নেয় না। কারণ সে চাই দোলা নিজ মুখে বলুক সামিরের কথা।

– কি যা-তা বলছেন রুদ্র। কোন ছেলে! কিসের ছেলে? আর কোথা থেকে আসলো। দেখুন আপনি আমাকে বারবার মিথ্যা অপবাদ দিতে পারেন না। যখন যা ইচ্ছে হবে তাই বলে দোষারোপ করবেন না। আপনার যদি এতই সমস্যা থাকে আমাকে নিয়ে তাহলে কেনো রেখেছেন এই বাড়িতে৷ তাড়িয়ে দিন আমায়। বের করে দিন। মুক্ত করে দিন আমায়। তাহলে অন্তত আমাকে নিয়ে আপনাকে আর ভাবতে হবে না আর আমিও এই নরক থেকে মুক্তি পাবো। রুদ্র কথায় দোলার আবারও রাগ হয়৷ অভিমান গুলো এখন তিক্ততায় স্থান নিয়েছে।

– তুমি তো চাও আমি তোমাকে মুক্ত করে দিই। আর সেই জন্য তুমি ইচ্ছে করে এইগুলো করছো তাই না?
– রুদ্রর কথায় দোলা ভ্রু কুচকে তাকায়। রুদ্রর কোনো কথার মানেই বুঝতে পারছে না সে।
— আমি সবটা দেখেছি দোলা। তাই তুমি চাইলেও কিছু আড়াল করতে পারবে না আমার থেকে।
– তাহলে নতুন করে আমার থেকে আবার কি জানতে চান আপনি? সব যখন আপনি জানেন! আপনি দেখেছেন তাহলে কেনো আমাকে জিজ্ঞেস করছেন। আপনার কাছে নিশ্চয় প্রমাণ আছে আমার বিরুদ্ধে? তাহলে এখনো দাঁড়িয়ে কেনো আছেন আপনি। আসুক আমাকে শাস্তি দিন। গায়ে হাত তুলুন আমার। যেটা আপনি সর্বদা করেন। ক্ষোভ নিয়ে বলে দোলা। রুদ্র বিস্মিত চোখে তাকায় দোলার দিকে।
– দোলার চোখে পানি৷ যেটা দোলা যথা সাধ্য চেষ্টা করছে আড়াল করার রুদ্রর থেকে। কিন্তু রুদ্র ঠিক দেখে নেয় দোলার সে কষ্টস্রোতের ধারা।
– রুদ্রর মনটা হীনো হয়ে আসে। আহত চোখে তাকায় দোলার দিকে। দোলা মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকায়।
– দোলা! কোমল কন্ঠস্বর রুদ্রর। দোলা এরপরও তাকায় না রুদ্রর দিকে।
– সত্যি তুমি জানো না গতরাতে কি হয়েছিলো? কে এসেছিলো? রুদ্রর কথায় দোলার মধ্যে ক্ষোভটা আরো বৃদ্ধি পায়। ইচ্ছে করছে না রুদ্রর কোনো কথার জবাব দিতে।
– কি হলো উত্তর দাও? আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তোমায়। গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্র।
আমার আপনাকে কিছু বলার নেই আর না কিছু বলতে চাই। যা ইচ্ছে ভাবুন আপনি। আমি আর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইনা আপনার কাছে। কারণ এতে কোনো লাভ নেই। যার মধ্যে বিন্দু পরিমাণ বিশ্বাস নেই তার কাছে রচনা দিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করলেও সে কখনোই বুঝবে না৷ সেই এক সূচনায় আবদ্ধ থাকবে। কথাগুলো বলতেই দোলার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে দুঃখের বিষাদমাখা অশ্রুকণা।

— রুদ্র নড়েচড়ে উঠে দোলার কথায়। নিজের মধ্যে রাগ,ক্রোধ সরিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
– এটা আমি কি করছি? আবারও দোলাকে ভুল বুঝছি? অবিশ্বাস করছি আমি। কিন্তু আমি তো কথা দিয়েছি আর কোনো রকম অবিশ্বাস আমি দোলাকে করবো না। আচ্ছা সত্যি দোলা জানে না গতরাতে কে এসেছিলো? তাহলে দোলা বাইরে কেনো গিয়েছিলো ওই সময়। উফফ সব কিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আমাকে আরো ভালো ভাবে জানতে হবে সব। মাথা গরম করলে চলবে না। আমাকে মাফ চাইতে হবে দোলার কাছে। আমি আবারও দোলাকে হার্ট করলাম। সরি দোলাপাখি। আইম রেলি ভেরি সরি মনে মনেই আওড়াই কথাগুলো রুদ্র।
– রুদ্র দোলার দিকে এগিয়ে গিয়ে দোলার দুই গালে হাত রাখে আলতো স্পর্শে। দোলা নিজেকে সরিয়ে নিয়ে আসতে চাই রুদ্রর থেকে কিন্তু রুদ্রর ভালোবাসা জড়ানো স্পর্শ উপেক্ষা করতে পারে না।
– আমি আবারও তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম দোলাপাখি। আমি এমনটা করতে চাইনি তোমার সাথে। আসলে ওই গতরাতে! থেমে যায় রুদ্র। দোলা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
– কি গতরাতে? বলুন।
– রুদ্র হাত নামিয়ে নেয় দোলার গাল থেকে। করুণ চাহনি রেখে বলে কিছুনা৷ তুমি এখন যেতো পারো৷ আমার কিছু কাজ আছে বেরোতে হবে কথাটা বলে রুদ্র বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
– দোলা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। আর ভাবতে থাকে রুদ্রর কথাগুলো। কি হলো হঠাৎ রুদ্রর? এইতো রেগে ছিলেন উনি আবার সব নরমাল। আচ্ছা উনি কোন ছেলের কথা বলছিলেন? তখন দোলার মনে পড়ে গতরাতের কথা। যখন সে দরজায় কারো নক করা দেখে দরজা খুলে বাইরে যায়।
আসলে দোলা রাতে সত্যি বাইরে গিয়েছিলো তবে কারো সাথে দেখা করতে নয়৷ বরং কে দরজায় নক দিয়েছে সেটা দেখতে। গতরাতে দোলা যখন ঘরে আসবে কি আসবে না এই নিয়ে দোটানায় ছিলো। তখন হঠাৎ সদর দরজায় কেউ একজন করঘাত করে। দোলা ভ্রু কুচকে তাকায় সেদিকে। কারণ মেইন গেটে দারোয়ান আছে। সেখানে থেকে এসে সদর দরজায় আবার কে নক করবে। এইটা তো সব সময় খোলা থাকে৷ আবার ভেজানো থাকে অনেক সময়। গতরাতেও তাই ছিলো। আর তখনই কেউ নক করে
দোলা দরজা খুলে দেখে কেউ নেই সেখানে। দোলা একটু না অনেকটাই অবাক হয় তাতে। কারণ তার স্পষ্ট মনে আছে কেউ করঘাত করেছে দরজায়। কিন্তু এখানে কেউ নেই। দোলা বাইরে বেরিয়ে দেখে একটু৷ এরপর কাউকে না দেখতে পেয়ে আবার ফিরে আসে। আর ঠিক সে সময়টা সিসি ক্যামেরায় আবদ্ধ হয়ে যায়।

— দোলা আর কিছু ভাবতে পারে না৷ তার আর ভালোও লাগছে না এইসব। রুদ্র কেনো এমন? কেনো উদ্ভুত আচরণ এইগুলো দোলাকে খুব করে ভাবায়৷। দোলার খেয়াল আসে ওই বন্দি ঘরটার কথা। দোলার বিশ্বাস তার সব প্রশ্নের উত্তর ওই ঘরে আছে৷ আর সেটা দোলাকে উন্মোচন করতেই হবে।
— আচ্ছা আমি কি এখন একবার গিয়ে দেখবো ওই ঘরটা। কিন্তু ওই ঘর তো তালা বন্ধ হয়ে। চাবিটা নিশ্চয় ওই গন্ডারের কাছে আছে।
– উনি কি চাবি সাথে রাখবেন সব সময়? নিশ্চয় না। তাহলে চাবিটা ঘরে কোথাও আছে নিশ্চয়। আমাকে খুঁজে দেখতে হবে। উনার আলমারিটা দেখলে আমি পেতে পারি। দোলা চাবি খোঁজার জন্য রুদ্রর আলমারির কাছে যায়।

— রাস্তার পাশে রিকসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে তানিয়া। বিকেলের দিকে বের হয় তানিয়া একটা ফ্রেন্ডের বাড়ি যাবে বলে। তার থেকে একটা নোট নেওয়ার জন্য বের হয় তানিয়া৷ তানিয়া আজ ইচ্ছে করে গাড়ি নিয়ে আসে না। তার খুব ইচ্ছে করে রিকসায় চেপে যেতে। অনেক দিন হয়েছে রিকসায় ঘোরা হয়নি তার। তানিয়া কাজ শেষ করে এখন বাড়ি ফিরছে। আর তার জন্যই রিকসার অপেক্ষা করছে। সেখানে হঠাৎ আবির্ভাব হয় সজল। ওইদিক দিয়ে যাচ্ছি সে। আর তানিয়াকে দেখে থমকে যায়। প্রত্যাশাই ছিলো না তানিয়ার সাথে দেখা হবে তার এইভাবে। সজল গাড়ি নিয়ে এসে থামে তানিয়ার সামনে। হুট করে বড় গাড়ি সামনে আসায় তানিয়া কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। তানিয়া কৌতুহল কাটাতেই সজল বেরিয়ে আসে গাড়ি থেকে। তানিয়ার কপালে আপনাআপনি একটা ভাঁজ পড়ে।

আরে আপনি এখানে? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। বেশ উৎসাহিত হয়ে উল্লাসিত কন্ঠে বলে সজল। তানিয়া চোখ মুখ কুচকে বলে অবিশ্বাসের কি আছে এখানে? হ্যাঁ আমি তো আছি আপনার সামনে গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে।
– না মানে!সে যাই হোক। আপনি এখানে এই সময়? কোনো দরকারে এসেছিলেন বুঝি?
– নাহ!এমনই হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছি। খুব শখ জেগেছিলো তো ব্যঙ্গ করে বলে তানিয়া। সজলের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
আপনি রাগ করছেন মিস তানিয়া?
– জ্বি-না৷ তবে বিরক্ত হচ্ছি এটা নিশ্চিত। তানিয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে রিকসা খোঁজার ছলে কথাটা বলে।
– ওহ! তবে আমি তো আপনার বিরক্তর কারণ হতে চাইনা। মুখটা মলিন করে বলে সজল। তানিয়া চমকে উঠে ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে এমা! কথাটা আমি আপনাকে বলিনি। আসলে কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি এখানে তবে একটাও রিকসার দেখা মিলছে না। তাই সেই বিরক্তর কথা বলেছি। আপনাকে একদম নয় ভাইয়া। দাঁত কেলিয়ে বলে তানিয়া। এইদিকে সজল হযবরল লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে তানিয়ার দিকে। উত্তেজিত কন্ঠে বলে ভাইয়া? কে ভাইয়া? সহজ আশাহত হয় তানিয়ার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে।

– চলবে….

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“১৩”

— সজল অসহায় একটা ফেস করে বলে ভাইয়া? তানিয়া সজলের অবস্থা’টা বুঝতে পেরে ঠোঁট চেপে ধরে হেসে বলে, কোনো সমস্যা ভাইয়া? আবারও ভাইয়া ডাকে সজল পারে তো কেঁদে দেবে।
– কিসের ভাইয়া হ্যাঁ? আমি আপনার কোন জনমের ভাই লাগি শুনি কিছুটা উত্তেজনা পূর্বক বলে সজল।
– এই জনমের! এই কিছু দিনের আলাপে। মানে ভাবির ভাই তো আমারও ভাই হয় তাই-না? তাছাড়া আপনি এত রেগে যাচ্ছেন কেনো বুঝলাম না? তানিয়ার কথায় সজল হকচকিয়ে উঠে আমতাআমতা করে বলে ক-কই রেগে যাচ্ছি৷ যাই হোক আসুন আপনাকে পৌছে দিই। বাড়ি ফিরবেন নিশ্চয় আপনি?
– তানিয়া সজলের সাথে যাওয়ার মনস্থির করে। কারণ রিকসা আদো পাবে কি-না সন্দেহ। তানিয়া যাওয়ার জন্য হ্যাঁ বলতেও গিয়ে বলে না৷ সজলকে না করে দেয়।
– আপনি চলে যান! আমি একটু বাদে চলে যাবো। আমার একটা কাজের কথা মনে পড়ে গেছে। তানিয়ার কথায় সজল ভ্রু কুচকে বলে আপনি এই-না বললেন রিকসা খুঁজছেন বাড়ি ফেরার জন্য।
– জ্বি বলেছিলাম কিন্তু এখন আমার একটা কাজ আছে। আপনি যান বলে তানিয়া সামনে এগিয়ে যায়। হঠাৎ কি হলো তানিয়ার সজল এটা ভেবেই অবাক হয়৷ এরপর সজল গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে।
– আসলে তানিয়া দোলার কথা ভেবেই সজলের সাথে যায়না। সেদিন দোলার সাথে যে অত্যাচারটা হয়েছে সেটা তানিয়া আর হোক চাইনা। সজল যদি তাকে পৌছে দেয় তাহলে সৌজন্যের খাতিরে ভেতরে আসতে বলতে হবে আর যদি সজল সত্যি তানিয়ার কথায় ভেতরে যায়। তখন রুদ্র দেখে আবার রাগারাগি করবে। তাই তানিয়া আর কোনো রিস্ক নিতে চাইনা।

— দোলা পুরো আলমারি খুঁজে হয়রান। কিন্তু কোনো রকম চাবি সে পাইনা৷ হতাশ হয়ে বিছানায় এসে বসে দোলা৷ ইচ্ছে করছে কেঁদে দিতে বিরক্ততে৷ এতখন খোঁজার পর ফলাফল শূণ্য। খারাপ লাগারই কথা। অনেক আশা নিয়ে দোলা চাবিটা খুঁজতে ছিলো। কিন্তু চাবিটা কোথায় থাকতে পারে? তাহলে কি রুদ্রর কাছে? রুদ্র কি নিজের সাথে নিয়ে বেড়ায় চাবি? সব কিছু ভেবে মাথা ফেটে যাচ্ছে দোলার। দোলা এবার ভাবে চাবি বাদে কীভাবে তালাটা খোলা যায় কিন্তু কেউ বুঝতে পারবে না। দোলা উঠে আলমারিটা আবারও ঠিকঠাক করে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

— আমি কিছু বুঝতে পারছি না। কি হচ্ছে আমার সাথে৷ আমার মনে হয় কেউ ইচ্ছে করে আমার আর দোলার সম্পর্কটা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তাই দোলাকে নিয়ে আমার মধ্যে সন্দেহ প্রবেশ করিয়ে দোলার উপর অত্যাচারী হতে বাধ্য করে। আর আমি বোকার মতো দোলার উপর.. কথাটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুদ্র। রাজ রুদ্রর কথায় খুশি হয়ে বলে তাহলে তুই বুঝতে পেরেছিস রুদ্র! যে দোলা ভুল ছিলো না। তুই শুধু শুধুই মেয়েটার উপর নির্যাতন করিস। আমি তো আগে থেকেই জানতাম দোলার কোন দোষ নেই। দোলা তেমন মেয়েই নয়। রাজের কথায় রুদ্র সন্ধিহান চোখে তাকিয়ে বলে আগে থেকে জানিস মানে?
– রাজ ঘাবড়ে যায় রুদ্রর কথায়। তোতলানো স্বরে বলে তুই আবার সন্দেহ করছিস দোলাকে সেই সাথে আমাকেও। রুদ্র দৃষ্টি স্বাভাবিক করে বলে আচ্ছা তুই থাক আমি যায় এখন। কাল অফিসে দেখা হচ্ছে৷ আর শুন কাল আমাদের প্রডাক্ট ডেলিভারি হবে। ওইখানে তোকে থাকতে হবে। সবটা ভালো ভাবে বুঝে নিয়ে গাড়িতে উঠাবি ওকে। রুদ্রর কথায় রাজ মুচকি হেসে ওকে বলে। রুদ্র চলে আসে সেখানে থেকে।

— রাতে! দোলা রাতের খাবার রেডি করে ঘরে আসে রুদ্রকে খাওয়ার জন্য ডাকতে। রুদ্র একটা ফাইল নিয়ে কাজ করছিলো বসে। দোলা খাবারের জন্য ডাকলে রুদ্র সাথে সাথেই উঠে চলে যায়। রুদ্র যেতেই দোলা রুদ্রর প্যান্টের পকেট চেক করে। চাবিটা খোঁজার উদ্দেশ্য। কিন্তু দোলা এবারও হতাশ। দোলা ওয়ালেট চেক করেও কিছু পাইনা। ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুখটা মলিন করে বলে গন্ডার’টা রেখেছে কোথায় চাবিটা।
— তুমি আমার ওয়ালেট ধরে কি করছো? হুট করে বলে উঠে রুদ্র৷ আচমকা রুদ্রর কথায় দোলা লাফিয়ে উঠে ভয়ে। হাত থেকে ওয়ালেট’টা পড়ে যায়। দোলা একবার ওয়ালেট আরেকবার রুদ্রর দিকে তাকায়। রুদ্র কৌতুহলী হয়ে তাকিয়ে থাকে দোলার দিকে। রুদ্র তার ফোন টা নেওয়ার জন্য ফিরে আসে আবার। একটা জরুরি ফোন আসার কথা আছে৷ তাই রুদ্র ফোনটা কাছে রাখে।
— দোলা এবার হাসার চেষ্টা করে ওয়ালেট’টা তুলে। ভয়ে হাত-পা কাঁপছে দোলা। কি বলবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।
– কি হলো উত্তর দাও? রুদ্রর গম্ভীর কন্ঠে দোলা আরো ভড়কে যায়।
– আচ্ছা তুমি কি কোনো ভাবে টাকা পয়সা খুঁজছিলে। আই মিন! আছে না বউরা স্বামীর পকেট কাটে অনেক সময় টাকার জন্য। তুমিও কি তেমন ভাবে আমার… ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে বলে রুদ্র। ঠোঁটের কোণে তার দুষ্টামি হাসি।
– রুদ্রর কথায় দোলা কি রিয়াকশন দেবে সেটাই ভুলে গেছে। শুধু ফ্যালফ্যালে চোখে তাকিয়ে থাকে রুদ্রর আর ভেতর ভেতর ফুঁসে উঠে।
– কি হলো বলো। তুমিও নিশ্চয় সেই-সব বউদের মতো স্বামীর টাকা মেরে দেওয়ার ধান্দায় ছিলে?
– দেখুন ভালো হবে না কিন্তু। আমি মোটেও তেমন ধরনের মেয়ে নয় প্রতিবাদী স্বরে বলে দোলা।
– হ্যাঁ জানি তো! তুমি তেমন মেয়ে নও তবে বউ তো। আর বউদের স্বভাব এমন। দোলা করুণ একটা চাহনি রাখে।
– তো এবার বলো তুমি আমার ওয়ালেট ধরে কি করছিলে? রুদ্রর কথায় দোলা ঘাবড়ে যায় আবার। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে দুই হাত মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে। রুদ্র দোলার চোখের দিকে তাকায় একবার তো একবার হাতের দিকে তাকায়।
– তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি কিছু একটা চুরি করতে গিয়ে রামধরা খেয়েছো মুচকি হেসে বলে রুদ্র।
— ছিহ! কি সব ভাষা। আমি কিছু চুরি করিনি। আমি তো ওই দেখছিলাম আপনার পকেটে একশো ‘টাকা আছে নাকি৷ একদমে কথাটা বলে থামে দোলা।।কিন্তু রুদ্রর হজম হয়না দোলার কথাটা। তাই রসগোল্লার ন্যায় চোখ করে তাকিয়ে বলে সিরিয়াসলি দোলা!তুমি রুদ্রনীল চৌধুরীর ওয়ালেটে মাত্র একশো টাকা খুঁজছিলে?
– তো আপনার কি মনে হয় আমি লাখ টাকা নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম।
– তা হয়তো করোনি। আর যদি ওইটা করতে তাহলে ঠিক ছিলো। অস্বাভাবিক কিছু হতো না। রুদ্রর কথাটা বুঝতে পারে না দোলা। তাই ভ্রু কুচকে বলে মানে?

— মানে খুবই সিম্পল! তুমি আমার ওয়ালেটে একশো টাকা পাবে ভাবলে কি করে। রুদ্রনীল চৌধুরীর এতো করুণ দিনও আসেনি যে ওয়ালেটে একশো টাকা রাখবে।
– অমনি শুরু হয়ে গেলো লাটসাহেবের লাটসাহেবগিরি। নেহাতই ধরা পড়েছি তাই মিথ্যা বলতে হলো। নাহলে ওই সব টাকায় দোলার যায়-আসে না হু ভেংচি কেটে মনে মনে বলে দোলা।
— এ্যানি ওয়ে! তুমি একশো ‘টাকা কি করবে? সিরিয়াস মুডে বলে রুদ্র। দোলা একের পর এক রুদ্রর প্রশ্নে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
– দরকার ছিলো তাই। আমাকে তো কোনো টাকা পয়সা দিয়ে রাখেন না আপনি৷ একটু বিষ খাওয়ার ইচ্ছে হলেও সেটা আপনাকে বলা লাগবে তাও নিজে নিয়ে আসতে পারবো না। কথাটা অভিমান নিয়ে বলে দোলা।
– দোলা! চিৎকার করে উঠে রুদ্র। দোলা চমকে যাওয়া চোখে তাকায়।
– কি বাজে কথা বলছো। নেক্সট টাইম যেনো আমি তোমার মুখে এইসব বাজে কথা না শুনি। ভীষণ রেগে গেছে রুদ্র দোলার কথায়। যার ফলে অনেকটা রিয়াক্ট করে উঠে সে। দোলা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। এই সামান্য কথায় রুদ্র এতটা রেগে যাবে ভাবিনি দোলা।
– আমার যা কিছু আছে সবই তোমার। তুমি আর আমি আলাদা নয় এটা এতদিনে নিশ্চয় বুঝে গিয়েছো।।তোমার টাকার দরকার আমাকে বলতে পারতে। আমি তোমায় কি না করতাম। আচ্ছা ওয়েট কথাটা বলে রুদ্র ড্রয়ার থেকে চেকবই বের করে সাইন করে দোলার হাতে দেয়। দোলা বিমুঢ় দৃষ্টিতে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে থাকে।
– এখানে সাইন করে দিলাম। তোমার ইচ্ছে মতো এমাউন্ট বসিয়ে নিও।
– আমাকে টাকার গরম দেখাচ্ছেন আপনি? দোলার কথায় রুদ্র থমকে যায়। হাসার চেষ্টা করে বলে এইভাবে বলছো কেনো দোলা৷ এটা তোমারও টাকা। হ্যাঁ মানছি আমি তোমাকে সেইভাবে টাকা পয়সা দিই না। যখন যেটা প্রয়োজন আমি নিজে নিয়ে এসে দিই। তাই বলে তোমার যে টাকার দরকার হতে পারে এটা আমার ভাবা উচিত ছিলো। আজ তুমি সেটা জানিয়ে দিলে তাই আমি এটা তোমায় দিলাম দ্যাটস অল।
— লাগবে না আমার কোনো টাকা। আপনার টাকা আপনার কাছে রেখে দিন। আর যাই হোক আমি কখনো কারো কাছে হাত পাতবো না। এই শিক্ষা আমার বাবা আমাকে দেয়নি কখনো কথাট বলে দোলা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়৷ রুদ্র কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ দোলার কি হলো সেটাই বুঝতে পারে না।

— পরের দিন! দোলা তার ঘরে ছিলো। তানিয়া আজ একাই ভার্সিটি যায়৷ দোলার শরীরটা দুদিন ভালো যাচ্ছে না৷ কিন্তু এটা দোলা কাউকে জানায় না। হঠাৎ হঠাৎ মাথাঘোরানো আবার মাঝে মাঝে বমিও আসছে। হঠাৎ করে এমন সমস্যা হওয়ার কারণ দোলা খুঁজে পাইনা৷ দোলা ভাবে হয়তো অতিরিক্ত চিন্তা আর শরীর দুর্বল হওয়ার কারণে এমন হচ্ছে। কিছুদিন গেলে ঠিক হয়ে যাবে। আর এইসব যদি রুদ্রর কানে যায় তাহলে রুদ্র বেশি বাড়াবাড়ি করবে যেটা দোলার একটু ভালো লাগবে না। দোলা ইচ্ছে করে ভার্সিটি যায়না আজ। রুদ্র কিছুক্ষণ আগে অফিসে বেরিয়ে গেছে। তানিয়াও নেই বাড়িতে। দোলার একা একা ভালো লাগছে না৷ তাই দোলা অপেক্ষার নামে একটা গল্পের বই হাতে নিয়ে পড়তে থাকে। সেখানে বিভিন্ন লেখক লেখিকার ছোট ছোট গল্প আছে।

– এর মধ্যে একজন সার্ভেন্ট আসে রুমে।
– দোলা ভাবি আপনারে আম্মাজান ডাকতাছে নিচে। সার্ভেন্টের কথায় দোলা বই বন্ধ করে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। রুম থেকে বের হয়ে উপর থেকে নিচে তাকাতেই দোলার চোখ দুটো চকচক করে উঠে খুশিতে। চোখের কোণে ভেসে উঠে আনন্দঅশ্রু । ঠোঁটের হাসিটা গাঢ় করে উচ্চকণ্ঠে বাবা বলে খুশিতে। দোলার ডাকে রাশেদ মিয়া হাসি মুখে উপরে তাকায় সাথে আছে রোকনও। ভাই আর বাবাকে একসাথে দেখে দোলা খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। ছুটে নিচে নামতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে যেতে নেয় দোলা।
– আপু চিৎকার করে উঠে রোকন সাথে সবাই ভয় পেয়ে যায় ভীষণ। প্রচন্ড রকম অবাক হয়ে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে। দোলা নিজেকে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করে সিঁড়ির সাথে রেলিং ধরে। দোলা নিজেও ভীষণ ভয় পেয়ে যায় এতে। হাঁপাতে থাকে ভয়ে।
– রোকন ছুটে এসে দোলাকে ধরে বলে কি করছিস আপু পড়ে যেতিস তো এখনই। কি একটা কান্ড বাধাতে বসেছিলি বলতো।
– রোকনের কথায় দোলা ঠোঁট এলিয়ে হেসে রোকনের মাথায় হাত রেখে বলে কেমন আছিস ভাই? তোরা এখানে? আমি না সত্যি ভাবতে পারছি না।

— রোকন দোলাকে নিয়ে নিচে যায়। দোলা নিচে যেতেই রাশেদ মিয়া মেয়েকে বুকের সাথে আগলে নেয়।
– সাবধানে চলাফেরা করবি তো। আর একটু হলে কি একটা বিপত্তি হতো। আমার তো প্রাণটাই ছুটে যাচ্ছিলো রে মা। রাশেদ মিয়ার কথায় দোলা মুচকি হেসে বলে সরি বাবা৷ আমি তোমাদের দেখে ভীষণ এক্সাইটেড হয়ে উঠি। বুঝতে পারিনি এমন হবে।
— বাবাকে দেখে খুশি হয়ে এমন বিপদ বয়ে আনে কেউ পাগলী মেয়ে রত্না চৌধুরী বলে হেসে।
– বাবা কেমন আছো তুমি? তোমার শরীর ভালো আছে তো? তোমার পেশার ঠিক আছে৷ ঔষুধ খাচ্ছো তো ঠিক ভাবে? দোলার হাজার টা প্রশ্ন।
– রাশেদ মিয়া আর রত্না চৌধুরী শুধু হাসে দোলার কান্ডে৷
– আপু তুই বাবাকে নিয়ে একদম চিন্তা করিস না। বাবাকে আমি সব ঔষুধ সময় মতো খাওয়ায় আর রুদ্র দুলাভাই তো নিজে বাবার জন্য ঔষুধ নিয়ে গেছে একগাদা। বলেছে শেষ হলে যেনো আমরা তাকে জানায়। জানিস আপু আমার জন্য অনেক চকলেট আর খাতা কলম নিয়ে গেছে দুলাভাই। রোকনের কথায় দোলা ভ্রু কুচকে বলে কি বলছিস এইসব? উনি এইসব নিয়ে গেছেন মানে?

– হ্যাঁ রে দোলা মা রোকন ঠিকই বলছে। কাল রুদ্র বাবাজি সন্ধ্যায় আমাদের ওইখানে যায়। আমি সেই সময় আমার ওষুধ নিয়ে আসার জন্য বের হচ্ছিলাম। হঠাৎ রুদ্রকে আমার বাড়িতে দেখে অবাক হয় ভীষণ। পরে রুদ্র আমার থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে আমার জন্য ওষুধ আর রোকনের জন্য ওইসব নিয়ে আসে। দোলা যেনো ছোটোখাটো একটা শকের মধ্যে পার করে কথাগুলো। রুদ্র এইসব করেছে ভাবতেই পারছে না।
– এরপর রুদ্র বাবাজি বলে আমাদের এখানে আসতে আজ৷ যদি আজ না আসি এখানে তাহলে নাকি সে রাগ করবে অনেক। তাছাড়া তোকে দেখার লোভটা আর সামলাতে পারলাম না রে মা। তাই চলে আসলাম সকাল সকাল।
– খুব ভালো করেছো বাবা। আমারও ভীষণ তোমার কথা মনে পড়ছিলো। অনেক মিস করছিলাম তোমাকে।
– যেই দেখেছেন জামাই আসার অনুমতি দিয়েছে আর সাথে সাথে চলে এসেছেন৷ তা জামাই বাড়ি এসেছেন কি নিয়ে এসেছেন দেখি। এই প্রথম জামাইয়ের বাড়ি পা রাখলেন খালি হাতে নিশ্চয় আসেননি। ব্যঙ্গ করে কথাগুলো বলতে বলতে আসে জেসমিন চৌধুরী। তার কথায় দোলা মুখটা মলিন করে তাকায়। রাশেদ মিয়া, রোকনের মুখটা ছোট হয়ে আসে। রত্না চৌধুরী বিরক্তমাখা চোখে তাকায় জেসমিন চৌধুরীর দিকে।

— আমি গরিব মানুষ বেশি কিছু নিয়ে আসার সামর্থ্য আমার নেই৷ সাধ্যের মধ্যে এই মিষ্টি গুলো নিয়ে এসেছি হাসার চেষ্টা করে বলে রাশেদ মিয়া।
– বাদ দেন তো ভাইজান। আপনি যে এসেছেন এতেই আমি অনেক খুশি। রুদ্র আর দোলার বিয়ে হয়েছে অনেক দিন হলো। কিন্তু আপনি এতদিন পর আমাদের বাড়ি আসছেন। আপনার উপর রাগ থাকলেও সেটা এখন আর নেই আপনাকে দেখার পর। মেয়েকে কোন ঘরে বিয়ে দিয়েছেন! সেখানে এসে কেমন আছে মেয়ে দেখা লাগবে না। হেসে বলে রত্না চৌধুরী।
– কেনো নিশ্চিন্তে আছে বুঝতে পারছো না ভাবি। জানে তো বড়লোক বাড়িতে গছিয়েছে মেয়েকে। সেখানে আর যাই হোক মেয়ে কষ্টে থাকবে না। জীবনে এত বড় বাড়ি, এত ভালো ভালো খাবার এত টাকা পয়সা চোখে দেখেছে নাকি। এদের মতো ছোটলোক গুলো খুবই চালাক হয়। সেটা তুমি না জানলেও আমি জানি বুঝেছো।
– আপনি কিভাবে জানেন ফুপি? আপনিও কি আমাদের মতো ছোটলোকের কাতারে নাম লিখিয়েছেন। নয়তো এইসব কথা তো আপনার জানার কথা নয়৷ কই মা তো এইসব জানে না জেসমিন চৌধুরীর কথায় ঠেস দিয়ে বলে উঠে দোলা। দোলার কথায় জেসমিন চৌধুরী তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।

– তোমার এত বড় সাহস! আমাকে এইসব কথা বলার সাহস কে দিয়েছে তোমায় শুনি। তুমি জানো আমার বাবার কত সম্পত্তি আছে। কত বড় ঘরের মেয়ে আমি আর তুমি আমাকে তোমাদের মতো ছোটলোকদের সাথে তুলনা করছো। ইচ্ছে করছে ঠাঁটিয়ে দুটো চড় বসিয়ে দিই তোমার গালে। তাহলে বড় বড় কথা বেরিয়ে যাবে। জেসমিন চৌধুরী থামতেই দোলা কিছু বলার জন্য উদ্যোগ নেয় তখন রাশেদ মিয়া দোলার হাত ধরে থামিয়ে দেয়। রাশেদ মিয়ার অনেক খারাপ লাগে জেসমিন চৌধুরীর কথাগুলো। রোকনও মন খারাপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

– জেসমিন! কি হচ্ছে এইসব? তুমি উনাদের সাথে এইভাবে কথা বলছো কেনো? তাছাড়া উনারা আমার বাড়ির মেহমান। উনাদের সম্মান বজায় রাখা আমাদের দায়িত্ব। তুমি যদি সম্মান দিতে না পারো তো অসম্মান করো না৷ যাও এখানে থেকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলে রত্না চৌধুরী।
– ভাবি তুমি আমাকে এই ছোটলোক গুলার জন্য এইভাবে অপমান করলে। ন্যাকা কান্না জুড়ে বলে জেসমিন চৌধুরী। আসলে এটা আমার বাড়ির নয়তো তাই যা ইচ্ছে তাই বলে অপমান করো। আজ যদি ভাইজান বেঁচে থাকতো তাহলে নিশ্চয় তোমরা আমাকে এইভাবে অপমান করতে পারতে না৷
– অপমানের পথ তুমি নিজে তৈরি করেছো জেসু। এখন অন্যের দোষ দিয়ে আর কি হবে৷ যে যেমন তার সাথে তো তেমনটাই হবে। তোমার কোনো অধিকার নেই দোলার বাবার সাথে এমন ভাবে কথা বলার। কিন্তু তুমি বলেছো। তাই এইগুলো তোমারও প্রাপ্য তানভীর আহমেদ বলতে বলতে আসে। তানভীর আহমেদের কথায় জেসমিন চৌধুরী চোখ পাকিয়ে তাকায়। কিন্তু এতে তানভীর আহমেদের একটু হেলদোল হয়না।

– রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ঘরে চলে যায় জেসমিন চৌধুরী।
– আমার বউয়ের কথায় কিছু মনে করবেন। আসলে ও একটু এমনি। তবে আমরা কিন্তু বেশ খুশি হয়েছি আপনাদের দেখে৷ আচ্ছা আপনারা দাঁড়িয়ে কেনো। বসুন না৷ দুই বিয়াই মিলে জমিয়ে আড্ড দেবো আজ।
– আমি আবার বাদ যাবো কেনো তানভীর। এতদিন পর বিয়াই কে পেয়েছি খোসগল্প তো হবেই তানভীর আহমেদের কথার বিপরীতে বলে রত্না চৌধুরী। তার কথায় সবাই হেসে উঠে একসাথে।
– আচ্ছা তোমরা গল্প করো আমি রান্নার ব্যবস্থা করি। তার আগে তোমাদের জন্য চা পাঠিয়ে দিই গদগদ কন্ঠে বলে দোলা।
– সে আর বলতে রে দোলা মা। চা ছাড়া আড্ডা জমে নাকি। তানভীর আহমেদের কথায় দোলা হেসে রান্নাঘরে যায়। রোকনও বোনের পিছু পিছু যায় কথা বলার জন্য। তবে দোলার মধ্যে আজ একরাশ ভালোলাগা। রুদ্রর প্রতি যতটা রাগ,ঘৃণা ছিলো সব কিছু আপাতত মলিন হয়ে আসে। সেখানে জমা হয় ভালো লাগা কিছুটা শ্রদ্ধা। কিন্তু রুদ্র হঠাৎ এত পরিবর্তন কীভাবে হলো দোলা বুঝতে পারে না। আর যাই হোক একটা ধন্যবাদ রুদ্রর প্রাপ্য দোলার থেকে আর দোলা সেটা রুদ্রকে দেবে। সব কিছু ভেবে দোলা চুলায় চায়ের পানি বসায়।

চলবে….

– ❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌ আস্তে আস্তে রহস্য উন্মোচন হবে। পরবর্তী পর্ব গুলো সব রহস্য খোলসা হতে থাকবে৷ ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।