#তুমি_আছো_তাই
#পর্ব_১০
#লেখিকা_তাসনিম
“শুনেন আমাদের বিয়ের দিন আপনি যখন আমাকে নিতে আসবেন, তখন ঘোড়ার পিঠে করে আসবেন”
“কিহহ,এটা কি বললা,গাড়ি রেখে আমি ঘোড়ার পিঠে করে আসবো,ঘোড়া যদি আমাকে ফেলে দেয়”
“আরেহহ ফেলবে কেন,শুনেন ফেলবা সিনেমা তে এমনই হয়,আমি কিছু জানি না আপনি ঘোড়ায় করেই আসবেন”
“আচ্ছা চলো এখন ওদিকে সবাই শপিং করছে তোমার শপিং তো মেইন তুমি যদি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘোড়ার আলাপ করো তাহলে কে শপিং করবে”
“আমিই করবো চলেন”
আজকে দুই পরিবার ওদের বিয়ের শপিং করতে এসেছে,বিয়ের শাড়ি জুয়েলারি কেনা শেষ,রিসিপশনের জন্য দেখা হচ্ছে এখন।কেনাকাটা শেষ হতে হতে রাত হয়ে যায়,সবাই একসাথে ডিনার করে বাসার উদ্দেশ্য বের হয়,শাকিল অনুকে বলে
“যান ম্যাডাম, আর দুইদিন তারপর পার্মানেন্টলি আমার বাসায়”
“আপনিও বাসায় গিয়ে আপনার ওই অগোছালো রুম কে গুছিয়ে নেন,আমি এসে অগোছালো রুমে ঢুকবো না”
“উহমম,ওই রুম তুমি নিজে এসে সাজাবে,তোমার যেভাবে সাজাতে ইচ্ছে হবে ঠিক সেভাবে সাজাবে”
“হুমম,তা অবশ্য ঠিক”
“অনু,চলো রাত হয়ে গেছে তো”
“হ্যাঁ মা আসছি,আসি”
“হুমম”
সবাই সবার বাসায় চলে এলো,দুদিন পর থেকে অনুষ্ঠান শুরু হলো।
সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ ছেলে মেয়ের একসাথেই গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে, অনু কে লেমন কালার শাড়ি পড়ানো হয়েছে, সাথে ফ্লোরাল জুয়েলারি। শাকিলও লেমন কালার পাঞ্জাবি পড়ে আগেই স্টেজে বসে, অনু কে নিয়ে আসা হলে শাকিল চট করে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়,অনু ওর সামনে এসে দাঁড়ালে ও বুকের বা পাশে হাত রেখে বললো,
“এতো সুন্দর মুহূর্ত রেখে আমরা পরী কে রেখে আমি মুর্খের মতো কোথায় যাওয়া ধরে ছিলাম”
“হয়েছে ভাই আমরাও তো সেটায় বলি তোর মাথায় সমস্যা এখন ভাবি কে বসা তোর পাশে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে”
অনু আর শাকিল পাশাপাশি বসলো,সবাই ছবি তুলছিল,শাকিল মাঝেমধ্যে কিছু বলছিল অনুকে যা শুনে অনু লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিল,একটু পরে হলুদ লাগানো শুরু হলো,শাকিলকে ওর বন্ধুরা একদম ভূত বানিয়ে দিয়েছে, অনু টিস্যু দিয়ে ক্লিন করে দিচ্ছিল,তখন শাকিলের বন্ধু রা বললো,
“বাহ ভাবি বাহ,এখনই এতো কেয়ার”
“এখন কেয়ার করবে না তো কবে করবে”
“না উনি তাকাতে পারছিলেন না তো এজন্য”
“হুমম না তাকালে পরে আপনাকে দেখবে কেমনে”
অনু লজ্জায় পড়ে গেল, সবাই হাসতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর অনুকে মেহেদী লাগানো শুরু হলো। শাকিল তখন ওর বন্ধু দের সাথে কথা বলছিল।
আনিকা এসে বললো,
“মেহেদীর রং যত লাল হবে বুঝবি জামাইয়ের ভালোবাসা তত বেশি হবে বুঝলি”
“আমার জামাই আমাকে এমনি ভালোবাসে”
“হুমম হুমম এখনি জামাইয়ের হয়ে কথা বলা শিখে গেছিস”
“উফফ আপু তুইও না”
“তোমার আপু তো এমনই সারাদিন পিছনে লাগা শুধু”
“কি বললা তুমি রায়হান”
“ভাইয়া তো ঠিকই বলেছে”
“আমি তো ঠিকই বলি সবসময়,তাই না শাকিল”.
“মোটেও না ভাইয়া আনিকা আপু সবসময় ঠিক বলে”
“দেখেছিস তোরা কেউ আমার পাশে না থাকলেও আমার ভাই আমার পাশে আছে”
“অলওয়েজ আপু তোমার ভাই তোমার পাশে আছে”
“হ্যাঁ ভাই চলো কিছু খেয়েছো তুমি,চলো খাবে,আর হ্যাঁ এই যে মি.রায়হান বাসায় যাবেন না আপনি দেখে নিব”
“লে হালুয়া, এই অনু”
“ভাইয়া প্যারা নাই চিল,আপু কিছুই করতে পারবে না,কিন্তু ভাইয়া ক্ষুধা তো আমারও লেগেছে, এই আপনি একলা খেতে চলে যাচ্ছেন”
“আপু অনু ও তো খাবে”
“তাহলে ওর হাতে মেহেদী লাগাবে কে,ওর মেহেদী লাগানো হোক তারপর খাবে ও,তুমি চলো খেয়ে নিবে”
আনিকা শাকিলকে নিয়ে খাওয়ার জন্য চলে গেল,অনু রায়হান বসে কথা বলছিল আর অনুর হাতে মেহেদী লাগানো হচ্ছিল, কিছুক্ষণ পর শাকিল প্লেটে কাচ্চি নিয়ে আসলো,অনুর সামনে বসে বললো,
“খাবে”
“কিভাবে খাবো,আপনার জন্য হাতে মেহেদী লাগাচ্ছি”
“হুম হাত না ব্যবহার করেও খাওয়া যায়”
“কিভাবে”
“হা করো”
শাকিল অনুকে খাইয়ে দিতে লাগলো,আফজাল সাহেব দূর থেকে ওদের দেখছিল,শাকিল অনেক যত্ন করে অনুকে খাওয়াচ্ছে, উনি মনে মনে খুশি হলেন যে উনি কোনো ভুল ডিসিশন নেয় নি,ওনার মেয়ে ভালো থাকবে শাকিলের সাথে,রেহানা বেগম পিছন থেকে বললেন,
“দেখেছেন, শাকিল কতো খেয়াল রাখে আমাদের মেয়ের নিজে না খেয়ে ওর জন্য খাবার নিয়ে এসেছে, আনিকা কে জিজ্ঞেস করলাম ও খেয়েছে কিনা আনিকা বললো শাকিল অনু কে না খাইয়ে খাবে না বলেছে”
“হুমম,সবসময় এরকম আগলে রাখলেই হয় আমাদের মেয়েকে”
“রাখবে ইনশাআল্লাহ, আমরা হতাশ হবো না,আপনি খেয়েছেন”
“নাহ,শাহেদ ওদিকে একটু কাজ করছে ওর কাজ শেষ হলে খাবো,তোমরা খেয়ে নেও”
“না না আপনাদের রেখে আমরা খাবো না”
“আনিকা আর রায়হান খেয়েছে”
“হ্যাঁ,ওদের খাওয়া শেষ”
“আচ্ছা ঠিক আছে”
অনুর খাওয়া শেষ হলে শাকিল বললো,
“বিয়ের পরে আমাকে খাইয়ে দিতে হবে প্রতিদিন,বুঝতে পেরেছেন ম্যাডাম”
“দিলাম,সমস্যা কি আমার দশ টা পাঁচ টা একটা মাত্র জামাই৷ তাকে খাওয়ায় দিবো না তো কাকে খাওয়ায় দিবো”
“মনে থাকে যেন”
“এখন আপনি খেয়ে নেন”
“হুমম এই যে মেহেদী আপু একটু তাড়াতাড়ি করেন,এতোক্ষণ বসে থাকতে থাকতে আমার বউ ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে”
“হ্যাঁ ভাইয়া তাড়াতাড়ি করছি”
মেহেদী লাগানো শেষ হলে অনু শাকিলকে দেখালো,শাকিল মুগ্ধ দৃষ্টিতে মেহেদী টা দেখে অনু দিকে তাকালো
“ইচ্ছে করে না এ চোখের পলক ফেলতে, শুধু তোমাকেই দেখতে ইচ্ছে করে”
“আপনি এতো বাংলা কোথায় শিখলেন,আগে তো শুধু ইংলিশ বুলি ছুড়তেন”
“আমার জন্ম এখানে,আমি বাংলা জানবো না”
“তাও বিলিতি হাওয়ায় আপনার বাংলা বলার অভ্যাস অনেক টাই চলে গিয়েছিল, এখন আবার ফিরে আসছে”
“হ্যাঁ হ্যাঁ,তোমার এ কমল হাতে শুধু আমার এ নামটিই মানায় জানো তুমি”
“কেউ না জানুক আমি তো জানি”
“তোমাকে তো জানতেই হবে”
#চলবে
(ভুল ক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)